#হৃদ_মাঝারে_তুমি
#পর্ব_১৭
#Written_by_Mehebin_Nira (ছদ্মনামী)
নিরা এক দৌড়ে প্রিয়ার বাড়ি থেকে রাস্তায় চলে হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে গাড়ি খুঁজতে থাকে। ফোনের ওপাশ থেকে যেই কথা সে শুনেছে তাতে কষ্টের বদলে রাগে ক্ষোভে ভেতর টা ফেটে যাচ্ছে! নিরা এমন কিছুর ই ভয় পাচ্ছিলো আর আজ সেটি সত্যি সত্যি ঘটে ও গেলো! এর পেছনে যেই মানুষ টা দায়ী তাকে এবার তার যোগ্য জায়গায় টা দেখিয়েই ছাড়বে বলে নিজের কাছে পন করে! জরুরী প্রয়োজনের সময় কিছুই পাওয়া যায় না আজ তাই ঘটলো। রাস্তায় একটা গাড়ি ও না। হঠাৎ কোথা থেকে একটা সিএজির দেখা মিলে। নিরা সেটি ই নিয়ে নেয় এবং দ্রুত একটি হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। সারারাস্তা কাঁদতে কাঁদতে ই শেষ হয়। ড্রাইভার অবশ্য বার বার জিঙ্গেস করছিলো কি হয়েছে বলতে কিন্তু নিরা বলে না। আপন মনে কেঁদেই চলছিলো!
এদিকে প্রিয়া কে বিদায় দিয়ে আস্তে আস্তে বাড়ি টা একটু ফাঁকা হয়! আর তখন আশার মনে পড়ে নিরা তো তার সাথে নেই! গেলো কোথায় মেয়েটা? একে একে সব জায়গা খুঁজে ফেলে সে কিন্তু নিরা কে আর পায় না। বিষয় টা রাতুলের চক্ষু অগোচরে গেলো না।
‘কি হয়েছে আশা কোনো সমস্যা?’
‘আসলে তখন থেকে নিরা কে দেখছি না!’
‘কি বলো দেখছো না মানে?’
‘সত্যি আমি সব জায়গা খুঁজেছি কিন্তু পায় নি! আপনি কি নিরা কে দেখেছেন?’
পেছন থেকে কেউ একজন শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে বলে,
‘রাতুল কিভাবে ঐ মেয়েটার খবর রাখবে! তোর বান্ধবী সো তোর জানার কথা!’
‘ভাইয়া তুমি?’
‘হ্যাঁ রে তোদের কথা শুনছিলাম!’
‘তুমি কি নিরা কে দেখেছো?’
‘আরে এবার রাতুল কে ছেড়ে আমাকে প্রশ্ন করছিস? আমি কি করে জানবো?’
‘নিরা তো কোথায় গেলে আমাকে না বলে যাওয়ার কথা না। প্লিজ তোমরা ও একটু খুঁজে দেখো না!’
‘এহ আসছে ঐ মেয়ে কে খুঁজতে আমার বয়েই গেছে!’
আশা উশখুশ করছে। এদিকে আদ্রাজের হঠাৎ মনে পড়ে সে তো তখন নিরা কে দৌড়ে ছাঁদে যেতে দেখেছিলো। তাই সে বলে,
‘ছাঁদে আছে নিশ্চয়ই!’
রাতুল বলে,
‘ওয়েট ব্রো তুই কিভাবে জানিস?’
‘আরে প্রিয়া আপু কান্না করছিলো না তখন দেখেছিলাম ছাঁদের দিকে যাচ্ছে!’
‘বাব্বাহ ফলো ও করা হয় আজকাল!’
‘সেট আপ রাতুল!’
‘ওকে ওকে আই জাস্ট কিডিং ইউ! ডোন্ট বি সিরিয়াস!’
আশা বলে,
‘আমি ছাঁদে ও খুঁজছি ওখানে কেউ ই নাই!’
‘তাহলে আমি বলতে পারবো না! তুই খোঁজ আমি গেলাম! এই রাতুল চল তো!’
‘আরে নিরা কে…
‘আশা ঠিক খুঁজে নেবে!’
আদ্রাজ জোড় করে রাতুল কে নিয়ে আসে। তবে তার মন টা ছাঁদেই রয়ে যায়। তাইতো সে স্থির হয়ে বসতে পারছিলো না। ড্রয়িংরুমে টিভির সামনে বসেও উঠে দাঁড়ায় আদ্রাজ। রাতুল তা লক্ষ্য করে।
‘কিরে কোথায় যাচ্ছিস?’
‘এক্ষুনি আসছি!’
‘হু হু বুঝি তো! তলে তলে কতদূর বন্ধু?’
আদ্রাজ রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সোজা ছাঁদে চলে যায়। গোটা ছাঁদে একটা কাক ও নাই থাকতো মানুষ। কেমন নিরব নিস্তব্ধতায় ছেয়ে গেছে পরিবেশ টা। নিরা নেই দেখা যাচ্ছে তাও কেন যেনো আদ্রাজের মন সায় দিচ্ছে না তা মেনে নিতে। তাইতো সে আস্তে আস্তে হেঁটে ছাঁদের দক্ষিণ পাশ টায় যায়। এখানেও কেউ নেই। তাহলে তার এমন কেন মনে হচ্ছে যে নিরা আছে! মনের নাম মহাশয় যাহা বলিবে তাহা হয় কথাটা কি আদৌ সত্য নাকি পুরোপুরি বানোয়াট! বুঝতে চেষ্টা করলো আদ্রাজ ঠিক তখনি রিংটোনের টুংটাং শব্দ কানে আসে তার। কেউ নেই এখানে তাহলে ফোন কিভাবে আসলো? আদ্রাজ হকচকিয়ে এদিক ও ওদিক তাকায়। শব্দ যেদিক থেকে আসছে সেদিকে আসতে গেলে হুট করে শব্দ টা বন্ধ হয়ে যায়।
‘সিটট..!’
বলে বিরক্তি প্রকাশ করে আদ্রাজ। আবার ও রিংটোনের শব্দ কানে ভেসে আসে। এবার আর দেরি করা যাবে না তাই ঝটপট এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। শেষে ফোন টা কে পেলো ছাঁদের এক পড়ে থাকা অবস্থায়! আদ্রাজ ভাবছে এই ফোন টা কার? কেউ ভুলে ফেলে যায় নি তো?
আদ্রাজ সুইচড চেপে ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়ের স্থিরচিত্র তার দিকে এক গাল হেসে তাকিয়ে আছে। এটা যে নিরার ই ফোন তা আর বুঝতে বেশি সময় লাগলো না। তার মানে তার ধারণা ই ঠিক নিরা এসেছিলো ছাঁদে! কিন্তু নিরার ফোন ছাঁদে তো নিরা কোথায়?
নিরা দৌড়ে হসপিটালে ঢুকে। সিএনজি ভাড়া টাও দিতে ভুলে গেছে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে চলে গেছে হসপিটালের ভেতরে। সিএনজি চালক মেয়েটার কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পেরে আর ভাড়াটা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে বরং চলে গেলেন। কে জানে এই হসপিটালে মেয়েটার কে আছে? ভাড়া না নিতে পারায় সিএনজি চালকের বিন্দুমাত্র কষ্ট লাগে নি।
নিরা গিয়ে পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। তার প্রাণ তার পৃথিবী তার খালামনি হসপিটালে সেন্সলেস অবস্থায়! আর নিরা জানে খালামনির এই অবস্থার জন্য দায়ী তার খালামনির জামাই জহির। প্রচন্ড খারাপ এই মানুষ টা! নিরা হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়।
‘ডক্টর আমার খালামনি বাঁচবে তো? কিছু হবে না তো উনার? বলেন না ডক্টর!’
‘দেখুন আমরা কিছু বলতে পারছি না। রোগীর মাথায় আঘাত টা বেশ গাঢ় ভাবে লেগেছে! এতে রোগীর স্মৃতি শক্তি মুছে যেতে পারে!’
নিরা নির্বাক হয়ে যায়। নিরার প্রতিবেশী নিশি খালামনি কে হসপিটালে নিয়ে এসেছে। জহির জেসমিন কে মেরে পালিয়ে গিয়েছে। জহির প্রায়শই মাতাল অবস্থায় জেসমিন কে টাকার জন্য মারধর করে আজ ও তাই ঘটেছে। টাকা না পাওয়ায় রাগ সব জেসমিনের উপর উঠিতেছে সে! তবে জখম টা বেশ গভীর! ডক্টর রা বললো কিছু টাকা লাগবে। এই মুহূর্তে এতো টাকা কোথায় পাবে বুঝতে পারছে না নিরা। নিরার পাশেই নিশি দাঁড়িয়ে আছে। তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কি করা উচিত উনার! নিরা কান্নায় ভেঙ্গে পরে বলে,
‘আন্টি আমার খালামনির কিছু হবে না তো! আমার খালামনি আবার আগের মতো সুস্থ্য হয়ে যাবে তো! ও আন্টি বলেন না!’
নিরার কান্নায় তিনি ও কাঁদছেন! মেয়েটা বড্ড বেশি ই ভালোবাসে তার খালামনি কে! ভালোবাসার মানুষ গুলোর এমন করুণ অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না!
এদিকে আদ্রাজ দ্বিধায় পড়ে যায় নিরার ফোন টা একবার চ্যাক করবে কিনা! আবার ভাবছে একজনের ফোন অনুমতি না নিয়ে ইউজ করা মোটেও উচিত নয়! অনেক কিছু ভাবাভাবির পর ফোন টায় দেখলো আদ্রাজ। কোনো লক দেওয়া নেই! হাত দিয়ে নিচ থেকে টান দিতেই ফোন টা খুলে যায়। নিশি আন্টি দিয়ে সেইভ করা নাম্বার টা থেকে ২০ বার কল এসেছে। এতবার কই দেয়ার কি কারণ থাকতে পারে ভেবে পায় না সে। নিরার ফোন ঘাটতে ঘাটতে দেখলো কল রেকর্ডার এ্যাপস টাও আছে! আর দেরি না করে দ্রুত সেটি তে ঢুকে আদ্রার। আধঘন্টা আগের নিশি আন্টি নামে নাম্বার টার সাথে দু মিনিট কথা হয়েছিলো নিরার। সবার উপরে এই নাম্বার টার কল রেকর্ডিং আছে! সে সেটি ই অপেন করে! অতঃপর সব শুনে আদ্রাজ নিজেই শক্ড হয়ে যায়। হাসপাতালের নাম টা স্পষ্ট শুনলো আদ্রাজ। আর দেরি না করে দ্রুত সেই হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটতে থাকে! তার বিশ্বাস নিরা সেখানেই আছে! এমন একটা কল পাওয়ার পর কোনো মেয়ের ই হুঁশ থাকার কথা নয়!
তখনি হয়তো নিরা ফোন টা ভুলে ফেলে গেছে!
ডক্টর এর শুকনো মুখ দেখে ভয়ে আত্মা শুকিয়ে যায় নিরার। সে কাঁদতে কাঁদতে ডক্টরের সামনে হাত জোড় করে বলে,
‘প্লিজ ডক্টর আমার খালামনি কে বাঁচান। উনার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। আমি টাকার ব্যবস্থা করবো! আপনি শুধু আমার খালামনি কে আমার কাছে ফিরিয়ে দিন প্লিজ!’
কাঁদতে কাঁদতে অঝোরে চোখের জল ফেলছে নিরা। আর সেই দৃশ্য কেউ একজন পেছন থেকে দাঁড়িয়ে অবলোকন করলো! বিক্ষিপ্ত এক অনুভূতি খেলে গেলো নিজের মধ্যে! তবে কি মেয়েটির এই হৃদয়বিদারক কান্নায় তার মন ও কাঁদছে?
চলবে———————
[রি-চেক করা হয় নি! ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন!]