এক কাপ ঠান্ডা কফি পর্ব -০৭+৮

#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ০৭

সাজুর চেয়ে দেখতে কোনো অংশেই কম নয় রাব্বি নামের এই খুনি। বরং শারীরিক শক্তিতে সে অনেকটা এগিয়ে আছে, যদিও সাজুর সঙ্গে হাতাহাতি করার কোনো পরিকল্পনা নেই রাব্বির।

লঞ্চ চাঁদপুর ঘাটে পৌঁছাতে এখনো কিছুটা সময় বাকি আছে। রাব্বি কেবিনে বসে নিজের হাতে কফি বানাতে লাগলো। কফি বানাতে গিয়ে তার মুখে সামান্য হাসি পেল, ঠান্ডা কফি। সাজু নামের ওই লোকটাও তার মতো ঠান্ডা কফি খেতে খুব পছন্দ করে।
কফি তৈরি করে কাপ হাতে নিয়ে সে আবারও বের হয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মৃদু ঢেউয়ের নদী আর অদুরে নদীর তীরে সবুজ প্রকৃতিকে রাতের আঁধারে কালো অন্ধকার দেখা যাচ্ছে। নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়লো রাব্বির, মা-বাবার সঙ্গে জীবনের শেষ ভ্রমণ করেছিলো লঞ্চে।

পটুয়াখালী জেলায় বসবাস করা রাব্বি তার মা-বাবার সঙ্গে লঞ্চে করে গিয়েছিল ঢাকায়। আর ঢাকায় যাবার কয়েকমাস পরে তার মা-বাবাকে নিজেদের বাসায় খুন করে সন্ত্রাসীরা।

ছোট্ট একটা পিছনে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে চাঁদপুরে নেমে গেল রাব্বি। ঘাট জুড়ে প্রচুর মানুষের বিশাল আনাগোনা। সেই ভিড়ের মধ্যেই রাব্বি চলে গেল স্টেশনে। সকাল ছাড়া ট্রেন পাওয়া যাবে না কিন্তু সকাল পর্যন্ত অপেক্ষাও করা অসম্ভব। রাব্বি তাই বিকল্প পদ্ধতি খুঁজে বের করতে লাগলো।

রাব্বির পরিকল্পনা হচ্ছে যেভাবেই হোক যদি সে এখান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডে যেতে পারে। তাহলে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে সে খুব সহজে পৌঁছাতে পারবে। আরেকটা পথ হচ্ছে এখান থেকে চাঁদপুরের মধ্যে একটা ফেরিঘাট আছে। ঘাটের নাম ” হরিণটানা ” ফেরিঘাট। হরিণটানা ঘাট দিয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের পরিবহন বাস পার হয়। তাই এখান থেকে যদি সে হরিণটানা যেতে পারে তাহলে সেখান থেকে সে চট্টগ্রামের বাসে উঠে যাবে।

দুটো পথেই যাবার সম্ভাবনা আছে কারণ এই সময় অনেক ট্রাক ফেরিঘাটে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ ঢাকা চট্টগ্রামের রোডেও যাবে তাই ভরসা নিয়ে সে দাঁড়িয়ে রইল।

কিছুক্ষণ পর সে একটা মাঝারি সাইজের কাভার ভ্যান দেখে সিগনাল দিল। ড্রাইভার সামান্য দুরে গিয়ে ব্রেক করলো, রাব্বি দৌড়ে তাদের কাছে চলে গেল৷

– কি চাই?

– ভাই আমি চট্টগ্রাম যাবো কিন্তু কোনো ব্যবস্থা করতে পারছি না। আপনারা কি আমাকে একটু সাহায্য করবেন?

– আমরা তো ঢাকা যাবো।

– কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম হয়ে যাবেন না?

– হ্যাঁ।

– তাহলে আমাকে সেখানে নামিয়ে দিলেই হবে আমি ওখান থেকে চট্টগ্রামের বাস পাবো। ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে সবসময় বাস পাওয়া যায়। আমি আপনাদের একহাজার টাকা দেবো তবুও প্লিজ হেল্প করুন।

ড্রাইভার রাজি হয়ে গেল, রাব্বি দ্রুত কভারভ্যানে উঠে গেল। গাড়ি রাতের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে চলতে আরম্ভ করলো, রাব্বি চোখ বন্ধ করে আগামীকাল কি কি করবে সেটা ভাবতে লাগলো।

কাভারভ্যানে উঠে রাব্বি জানতে পারলো দুদিন ধরে চাঁদপুরে বাস মালিক সমিতির অবরোধ চলছে। আর সে যেটাকে হরিণটানা ঘাট জানে সেটার নাম আসলে হরিয়ানা ঘাট।
★★★

সাজুর ভেবে দেখল কাজি সাহেবের বাড়িতে গিয়ে আপাতত তেমন কিছু জানার নেই। যা কিছু আছে সবটা ঢাকার সেই বাড়িতে, ওখান থেকে খুনির সূত্র বের করতে হবে। এরমধ্যে যদি বন্দী আব্দুল কাদের কিছু স্বীকার করে তাহলে আরও সহজ হবে। কিন্তু আসল খুনিকে পেতে হলে তাকে ঢাকা যেতে হবে এটা সে পুরোপুরি নিশ্চিত। তবে খুনির পিছনে কালপিট লুকিয়ে আছে সেটাও তার জানা রয়েছে।

দারোগা সাহেব কে বললো,

– স্যার আমি বাগেরহাট চলে যাচ্ছি। সেখান থেকে কাল সকালে উঠে ঢাকা চলে যাবো, আপনি বরং এদিকটা সুন্দর করে দেখবেন।

দারোগা যেন আকাশ থেকে পড়লো।

– একটু আগে আপনার উপর ওই লোকটা পিস্তল নিয়ে হামলা করেছে। এদের দলে আর কে কে কোথায় ওঁৎ পেতে আছে বলা যায় নাকি? এমন রাতের আঁধারে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। ভোরবেলা উঠে বাইক নিয়ে চলে যাবেন তাহলে সমস্যা হবে না।

– না স্যার, বাইক নিয়ে তো ঢাকায় যাওয়া যাবে না তাই না? বাগেরহাট এক আঙ্কেল আছেন তাদের বাসায় বাইক রেখে ভোরবেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে রওনা দেবো।

– আপনি নিজের নিরাপত্তার কথা বুঝতে পারছেন না কেন সাজু সাহেব?

– বুঝতে পারছি, দোয়া করবেন আমার কিছু হবে না ইন শা আল্লাহ।

সাজু বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। তার ধারণা আর কেউ আপাতত রাতের মধ্যে তাকে আক্রমণ করবে না। আব্দুল কাদেরের কথা যদি সত্যি হয় তাহলে বাগেরহাটে তাদের দলের কেউ নেই।
সুতরাং সাজু এখন সহজেই বাগেরহাট সদরে গিয়ে রাতটা কাটিয়ে দিতে পারবে৷

রাত প্রায় দুইটা। বারাকপুর পার হবার একটু পরে সাজুর মোবাইলে কল এলো। রাস্তার পাশে বাইক দাঁড় করিয়ে সাজু মোবাইল বের করে দেখে সকাল বেলা পুতুল নামের যে মেয়েটার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল সেই মেয়ে কল দিয়েছে। এতো রাতেও মেয়েটা জেগে আছে, সাজু খানিকটা অবাক হয়ে কলটা রিসিভ করলো।

– বিরক্ত করলাম সাজু ভাই?

– এতো রাতে কল দিলে বিরক্ত হওয়া মোটামুটি স্বাভাবিক ব্যাপার। আবার জিজ্ঞেস করছেন যে বিরক্ত কি না।

– স্যরি সাজু ভাই। মাত্র পড়ার টেবিল থেকে উঠে বিছানায় শুইলাম তাই আপনাকে কল করতে ইচ্ছে হলো।

এমন সময় পরপর তিনটা ট্রাক ও বিপরীত হতে একটা বাস চলে গেল। সবগুলো গাড়ি থেকেই হর্ন দেবার কারণে পুতুল সেই শব্দ শুনে বললো,

– আপনি কি রাস্তায় নাকি?

– হ্যাঁ। আর কিছু বলবেন?

– এতো রাতে আপনি রাস্তায় কেন?

– সেটা জানা কি খুব জরুরি?

– আপনার ক্ষেত্রে রাগ জিনিসটা মানায় না সাজু ভাই, আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে কল দিয়েছি।

– আমি ফ্রী হয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলি?

– ঠিক আছে।

এমন সময় সাজুর চোখ গেল বাইকের লুকিং গ্লাস এর মধ্যে। তার পিছনে একটা বাইকে কেউ একজন হাতে একটা ধারালো কিছু না এগিয়ে আসছে। মাত্র ৫/৭ সেকেন্ডের ব্যাপার। সাজু তার বাইকসহ রাস্তার পাশে কাত হয়ে পড়ে গেল, পিছন থেকে আসা বাইকটা ব্যর্থ হয়ে তাকে পেরিয়ে সামনে চলে গেল।

বাইক নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে সাজু সেখানেই কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল। রাস্তার দিকে তাকিয়ে শত্রুর আক্রমণের বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করলো। হঠাৎ করে মোবাইলে কল দেওয়া পুতুল নামের মেয়েটার কথা মনে পড়লো। কে এই মেয়ে? তাহলে কি মেয়েটাও খুনির সঙ্গে জড়িত আছে? নাহলে সে এমন সময় কল দিল কীভাবে।

মেয়েটার সঙ্গে কথা না বললে সাজু এতক্ষণে বহুদূর চলে যেতে পারতো। বাইক নিয়ে সাজু কাছেই একটা গলির মধ্যে ঢুকে গেল, আপাতত আশেপাশে কারো বাড়িতে আশ্রয় নিতে হবে। এখন মনে হচ্ছে দারোগা সাহেবের অনুরোধে মংলা থাকলেই ভালো হতো। সকাল বেলা পুতুল নামের মেয়েটার সঙ্গে দেখা হবার সময়ই তার নজরে পড়েছিল আব্দুল কাদের সাহেব। তারপর সে যখন মাহিশার সঙ্গে বিয়ে ঠিক হওয়া পাত্র আনিসুল ইসলামের বাসায় যায় সেখানে গিয়ে ও ওই মেয়ে হাজির। এটা কাকতালীয় কোনো বিষয় বলে মনে হচ্ছে না, নিশ্চয়ই একটা যোগসূত্র আছে যেটা সে গুরুত্ব দেয়নি।

একটা বাড়ির সামনে বাতি জ্বলছে। সাজু সেখানে গিয়ে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো, ভাগ্য ভালো তাই সহজেই ভিতর থেকে সাড়া পাওয়া গেল।
কিছুক্ষণ পর চল্লিশের উপরে বয়স হবে এমন এক লোক বেরিয়ে এলো।

– কে আপনি?

– আসসালামু আলাইকুম, আঙ্কেল আমার নাম সাজু। একটা বিপদে পড়ে আপনাদেরকে বিরক্ত করতে হচ্ছে।

– বলেন কি বিপদ?

সাজু সংক্ষিপ্ত করে সবটা বলে গেল। মিথ্যা কিছু বলার চেয়ে সত্যিটা বলাই তার কাছে উৎকৃষ্ট মনে হয়েছে। একটা মিথ্যা বলতে গেলে অনেকটা মিথ্যা কথা বলতে হয়। মানুষ প্রয়োজনের তুলনায় বিনা প্রয়োজনে মিথ্যা কথা বেশি বলে। সাজু সেরকম কিছু করলো না।

ভদ্রলোক প্রথম তাকিয়ে রইল। তারপর একটা হাসি দিয়ে বললো,

– আপনিই সাজু সাহেব? আমাদের জেলার কচুয়া উপজেলায় আপনার বাসা তাই না?

– জ্বি।

– ভিতরে আসুন, আমি আপনার বিষয়ে পত্রিকায় পড়েছিলাম তবে সেটা বেশ কয়েকমাস আগে খুলনার একটা মামলার বিষয়। ওইযে এক মহিলা খুন হয় কিন্তু বাসার সবাই জানে সে আত্মহত্যা করেছে। তারপর অনেক বছর পরে তার ছেলে বাবার প্রতি আক্রমণ করতে চায়। এরপর আপনি একটা খুঁজতে গিয়ে আরেকটা বেরিয়ে আসে।

– জ্বি, ছেলেটার নাম নয়ন।

– আমি তখন ভেবেছিলাম আমাদের বাগেরহাটে এমন একটা অল্পবয়সী গোয়েন্দা আছে। তারপর কিছুদিন পরে জানতে পারি আপনি অসুস্থ, সম্ভবত আপনার এক বন্ধুর মাধ্যমে জেনেছিলাম।

– কিন্তু আমার অসুস্থতার কথা কীভাবে?

– ওই সময় পিরোজপুরে একটা ছেলে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমি তাদের পরামর্শ দিলাম সাজু নামের লোকটার সঙ্গে দেখা করতে। তারা অনেক চেষ্টা করে আপনার ঠিকানা বের করে ঠিকই কিন্তু জানতে পারে আপনি দেশের বাইরে।

সাজু আর কথা বাড়ালো না। ভদ্রলোক তাকে রাতে থাকার জন্য মুহূর্তের মধ্যে ভালো একটা বিছানা ব্যবস্থা করে দিলেন। ৮/১০ বছর বয়সী একটা ছেলে সেখানে ঘুমিয়ে ছিল তাকে নিয়ে যাওয়া হলো অন্য ঘরে।

মনে মনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো সাজু। এরপর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে ঘুমের চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু মাথায় তখন পুতুল।
কে এই মেয়ে? সকাল বেলা মেয়েটার নাম্বার দিয়ে কিছু তথ্য বের করতে হবে।

চোখে ঘুম টলমল করছে। সাজু মোবাইল হাতে নিয়ে রামিশার কাছে একটা মেসেজ দিল।

” আমি সকালে ঢাকা রওনা দেবো, তুমি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে নামবে। Miss you to ”

সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই ললো,

– ঠিক আছে কিন্তু, আমি ঢাকায় কোন যায়গা যাবো?

– সাজু লিখলো, ঘুমাওনি?

– না, জেগে ছিলাম।

– আমি তোমাকে কল দিয়ে জানাবো কোথায় নামতে হবে।

– সাজু ভাই…

– শুনছি বলো।

– কালকে দুপুরের আগেই আপনার সঙ্গে দেখা হবে, এটা ভাবতে গেলে আমার লজ্জা করছে।

– কেন?

– খারাপ ব্যবহার করার জন্য।

– একটা কথা বলি রামু?

– বলেন।

– এসব নিয়ে কথা বলার আর দরকার নেই, যা হয়ে গেছে বাদ দাও। এখন ঘুমিয়ে পড়ো নাহলে সকালে উঠতে কষ্ট হবে।

★★★

গ্রীনলাইন পরিবহন, দামপাড়া, চট্টগ্রাম।
বাসের ভিতরে বসে আছে রামিশা। গতকাল রাতে সে খুলনার টিকিট কেটে রেখেছিল এখান থেকে কিন্তু সকালে উঠে সেটা পরিবর্তন করেছে। তার এক পরিচিত আঙ্কেলের মাধ্যমে খুলনা বদলে ঢাকার টিকিট নিতে হয়েছে।

গতকাল সিটটা ঠিক ছিল, এসি বাসে বামদিকে সিঙ্গেল সিট থাকে। রামিশা সেখানেই সিট বুকিং করেছিল কিন্তু এখন সকালে এসেই বামদিকে কোনো সিট ফাঁকা পেল না। ডানদিকে তা ও বেশ পিছনে সিট পাওয়া গেল। তার পাশের সিটে এক যুবক বসে আছে, চেহারা দেখে খারাপ মনে হচ্ছে না। কিন্তু কার মনের মধ্যে কি আছে সেটা তো কেউ বলতে পারে না।
বাসের ভিতরে ঘুমিয়ে গেলে যদি ভুল করে এই অপরিচিত লোকটার শরীরে স্পর্শ লেগে যায়? সেই ভয়ে সে সিঙ্গেল সিট নিতে চেয়েছে, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সারা পথ জেগে থাকতে হবে।
রাতে এমনিতেই দেরি করে ঘুমিয়েছে কারণ এসির ভেতরে আরামসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে যেতে পারবে।
তা আর হলো কোই?

লোকটার ভাবভঙ্গি বোঝার জন্য রামিশা নিজে তাকে বললো,

– আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

– ঢাকায়, আপনি?

– আমিও ঢাকায় যাবো। অনেকটা পথ একসঙ্গে যেতে হবে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে তাই না?

– কিন্তু আমি তো বাসের মধ্যে উঠলেই ঘুমিয়ে পড়ি, একটু পরে দেখবেন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি।

রামিশা মনে মনে বললো, ” জনমের মতো ঘুমিয়ে থাকিস ব্যাটা। ” তারপর মুখে বললো,

– আমার নাম রামিশা রামু।

– আমার নাম রবিউল ইসলাম।

ইচ্ছে করেই নিজের পুরো নামটা বললো না রাব্বি, তার পুরো নাম রবিউল ইসলাম রাব্বি। রামিশা বুঝতেই পারলো না তার সঙ্গে বসে থাকা রবিউল নামের এই লোকটাই তার পছন্দের সাজু ভাইকে খুন করার জন্য টাকা নিয়েছে। রামিশা বুঝতেই পারলো না লোকটার সঙ্গে রয়েছে একটা পিস্তল। আর ব্যাগের ভেতর বেহুশ করার ক্লোরোফোম, আর মনের মধ্যে রয়েছে তাকে কিডন্যাপ করে নিজের কাছে নেওয়া।

রবিউল নামে নিজেকে পরিচয় দিয়ে মনে মনে হাসতে লাগলো রাব্বি। আজকের মধ্যে হয়তো তার দ্বিতীয় কাজটা হয়ে যাবে চোখ বন্ধ করে রামিশাকে কীভাবে বাস থেকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায় সেটা আবারও ভাবতে লাগলো।

[ শুধু মনে রাখবেন, আপনাদের মন্তব্য আমার লেখার শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই যারা যারা গল্পটা পড়বেন সবাই মন্তব্য করতে চেষ্টা করবেন। ]
#এক_কাপ_ঠান্ডা_কফি
#পর্ব:- ০৮

সাজুর ছবিটি যিনি দিয়েছিল সে বলেছিল রামিশা নামের এক মেয়ের সঙ্গে সাজুর বেশ ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক আছে। এ কথা শুনেই রাব্বি রামিশার সব বিস্তারিত জেনে নেয়। বাসার ঠিকানা, কোথায় পড়াশোনা করে, কার সঙ্গে বেশি চলাফেরা সকল তথ্য যোগাড় করে।

রামিশা বাসা থেকে বের হবার পরই সে পিছনে পিছনে অনুসরণ করে। দামপাড়া কাউন্টারে এসে রামিশা তার টিকিট কনফার্ম করে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। কিন্তু রামিশা কাউন্টারে কথা বলার সময় যা যা বলে সবকিছু শুনে নেয় রাব্বি।

– রামিশা বলছিল, ভাইয়া পিছনে হলেও সমস্যা নেই কিন্তু একটা সিঙ্গেল সিট দিতে পারেন কিনা দেখুন না।

– আমি পারলে তো আপনার জন্য ব্যবস্থা করতাম আপু, আপনার আঙ্কেল যখন বলেছিল তখনই আমি চেষ্টা করছি। আপনি যদি খুলনার টিকিট পরিবর্তন না করতেন তাহলে তো সেটাই ভালো হতো। একই বাসে করে আপনি ঢাকায় নেমে যেতে পারতেন, সিটও সিঙ্গেল ছিল।

– সেটাই ভুল হয়ে গেছে, আসলে আমি যার কাছে যাবো সে হঠাৎ করে আজকে সকালে ঢাকায় আসবে। তাই আমিও ঢাকা যাবো।

– ওহ্ আচ্ছা বুঝতে পারছি। তবে আপনার পাশের সিটটা এখনো ফাঁকা আছে, আর দশ মিনিট পরে গাড়ি ছাড়বে। এরমধ্যে যদি কেউ না আসে তবে আপনি একাই ডাবল সিটে যেতে পারবেন।

রামিশা আর কাউন্টারের লোকটার কথা শুনে মুচকি হাসলো রাব্বি। তারমানে সাজু সাহেব ঢাকা আজকেই আসবে, আর তাই স্থান পরিবর্তন করতে বলে দিয়েছে।
রাব্বির মনে পড়ে গেল রামিশার পাশের সিট এখনো ফাঁকা। সে তখনই তাড়াতাড়ি করে ওই ফাঁকা সিটটা বুকিং দিল। তারপর টিকিট নিয়ে সেও রামিশার মতো অপেক্ষা করতে লাগলো।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা নাম্বারে ছোট্ট একটা মেসেজ লিখলো,

” সাজু আজকে সকালে ঢাকায় যাচ্ছে! ”

রাব্বি বসার সঙ্গে সঙ্গে রামিশা আবারও গিয়ে কাউন্টারে কথা বলে।

– আপু কিছু বলবেন?

– ভাইয়া আমি আমার পাশের সিটটাও বুকিং করতে চাই। ডাবল সিট নিয়ে যাবো, কারণ যদি কেউ উঠে যায়।

– আপু এইমাত্র তো ওই লোকটা আপনার পামের সিটটা বুকিং করে গেল।

রামিশা তখন হতাশ হয়ে রাব্বির দিকে বারবার আড় চোখে তাকিয়ে ছিল। বিশাল মাস্ক আর কালো চশমা দিয়ে আবৃত তার চেহারা রামিশা বুঝতে পারে নাই। রাব্বি চশমার আড়ালে চোখ দিয়ে রামিশার মুখ দেখে মুচকি হাসলো। কিন্তু তার সেই হাসিটা ও বাইরে থেকে দেখা গেল না।

বাস এখন এঁকে খান মোড় থেকে বিদায় নিয়ে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। ছোট্ট বক্সে ড্রাইভার ও সুপারভাইজারের নাম ঘোষণা করা হলো।

রামিশা তার মোবাইল বের করে অস্থিরতা দুর করার জন্য সাজুর নাম্বারে কল দিল। ঘড়িতে পৌনে নয়টা বেজে গেছে, সাজু এখন কি করছে সেটা জেনে নেওয়া যাক।

– সাজু ভাই।

– বলো।

– কি করছেন?

– তৈরি হচ্ছি, এখনই বের হবো। তুমি কি গাড়িতে উঠে গেছ?

– হ্যাঁ, সিটি গেট পার হলাম। কিন্তু আপনার এতো দেরি হচ্ছে কেন? আপনি নাকি ভোরবেলা রওনা দিয়ে বারোটার মধ্যে ঢাকা থাকবেন।

– অনেক ঝামেলা হয়েছে রামু। রাতে আমার উপর হামলা হয়েছিল, ভাগ্যের ছোঁয়ায় বেঁচে গেছি। তারপর রাতে এক অপরিচিত মানুষের বাড়িতে ছিলাম, সারারাত ঘুমাতে পারিনি।

– এখন আপনি কোন যায়গা?

– ঢাকা গিয়ে তোমাকে সবকিছু বলবো। আমি এখন এখান থেকে খুলনা শহরে যাবো তারপর সেখান থেকে টিকিট কেটে যশোর মাগুরার উপর দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট পার হয়ে ঢাকা যাবো।

– খুলনা থেকে কেন? আপনাদের বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাস পাওয়া যায় না?

– যায়, কিন্তু একটু সমস্যার জন্য এভাবে যেতে হবে। তোমাকে সব সামনাসামনি বলবো৷

– আচ্ছা ঠিক আছে।

– সিঙ্গেল সিট নাকি ডাবল?

– সকাল বেলা হঠাৎ করে টিকিট পরিবর্তন করে সিঙ্গেল সিট পাইনি। তাই ডাবল সিট নিতে হচ্ছে, পাশে একটা ছেলে ঠিক আপনার মতোই। তবে কানে হেডফোন লাগিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে বসে আছে।

– ঠিক আছে তুমি সাবধানে আসো তাহলে।

– ওকে, বায়।

রাব্বি এখনো হাসছে, তার কানে হেডফোন গুঁজে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেখানে কিছু বাজছে না। রামিশা যেন মনে করে লোকটা তার নিজের মতো ব্যস্ত তাই এই বুদ্ধি করেছে সে৷ কিন্তু সাজুর কথা তাকে ভাবাচ্ছে। রামিশা বলছিল খুলনা থেকে কেন যেতে হবে? তারমানে কি সাজু ভাই খুলনা থেকে বাসে উঠবে? বাহহ চমৎকার।
মোবাইল বের করে আরেকটা মেসেজ লিখলো রাব্বি।

★★★

সাজু ভাই সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠার পরে গতকাল রাতের সেই লোকটা তাকে বললো,

– আপনার মনে হয় বাগেরহাট থেকে ঢাকার বাসে ওঠা ঠিক হবে না। আপনি বরং আরেকটা কাজ করতে পারেন।

– কি কাজ?
অবাক হয়ে তাকালো সাজু ভাই।

– আমার ছেলে আপনাকে তার বাইকে করে খুলনা শহরে পৌঁছে দেবে। আপনি সেখান থেকে নিশ্চিন্তে চলে যেতে পারবেন। আমাদের বাড়ির পিছনে বাগানের মধ্য থেকে বের হয়ে মাঠ পেরিয়ে একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তা দিয়ে ভিতরে ভিতরে গিয়ে কাটাখালি থেকে বের হবেন। যদি আমার বাড়ির সামনে গতকাল রাতে আক্রমণ করা লোকগুলো থাকে তাহলে তারা বুঝতেই পারবে না আপনি চলে গেছেন।

সাজু রাজি হয়ে গেল। বিদায় নেবার সময় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বাগানের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে লাগলো। বড় বাগান তারপর পানের বাগান পেরিয়ে সে পৌঁছে গেল রাস্তায়।

খুলনা এসে এসে সে টিকিট নিলো। বাস এখনো আধা ঘণ্টা পরে ছাড়বে, তাই কাছেই একটা রেস্টুরেন্টে গেল। মাথা ঠান্ডা করার জন্য সেখানে বসে ” এক কাপ ঠান্ডা কফি ” পান করলো।

পুরো মামলা নিয়ে আবারও নতুন করে ভাবতে হবে তাকে। গতকাল রাতের আক্রমণ বিষয়টা নিয়ে সে বেশ চিন্তিত, রাব্বি নামের একটা ছেলে তার সঙ্গে কথা বলেছে। আব্দুল কাদের নামের লোকটার মোবাইলে কল না দিলে তাকে হয়তো পাওয়া যেত না। কিন্তু কে এই রাব্বি? তাকে দিয়ে কে করাচ্ছে এসব হত্যা, সেই ষড়যন্ত্রের শিকার সাজু নিজেও হতে যাচ্ছে। আশ্চর্য। কে?

সাজু দ্রুত বাসের দিকে এগিয়ে গেল। ভাবনার মধ্যে ডুবে গিয়ে সময় কখন পেরিয়ে গেছে তার মনেই ছিল না। রাস্তার পাশে হানিফ পরিবহনের ননএসি বাস দাঁড়িয়ে আছে। সাজু ভাই দ্রুত বাসে উঠে গেল, বাস ছেড়ে দিল।

সাজু পিছনে যাচ্ছিল হঠাৎ একটা মেয়ে কণ্ঠ শুনে চমকে গেল।

– সাজু ভাই আপনি?

কফি খেতে বসে মাস্ক খোলার পড়ে আর মুখে লাগানো হয়নি। বাড়ির ওই লোকটা পই পই করে বলে দিয়েছে মাস্ক পরে থাকবেন। কিন্তু সাজু এই মুহূর্তে অবাক হচ্ছে কারণ তাকে যে ডাক দিয়েছে সে হচ্ছে পুতুল। গতকালই যার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছে, আর কালকে রাতে আক্রমণে পড়ার সময় ঠিক যার সঙ্গে কথা হচ্ছিল।

– কোথায় যাচ্ছেন সাজু ভাই? ঢাকায়?

– হ্যাঁ আপনি?

– আমিও, মেডিকেল স্টুডেন্ট তো ঢাকায় একটা ভাইভা আছে আমার। কিন্তু আপনি…

– আমারও জরুরি কাজ আছে।

সাজু পিছনে চলে গেল। এখন সম্পুর্ন জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে তার মগজে। এই মেয়েটাকে কাল থেকে সে সন্দেহ করছে, আর আজকে সকালে সে এই পথে ঢাকা যাচ্ছে। সেটাও কি মেয়েটা জেনে তারপর তার পিছনে লেগেছে? কিন্তু কেন?
রাব্বির দলের কেউ?
কিন্তু সে যে এই পথে যাচ্ছে সেটা তো ওই বাড়ির মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। তবে রামিশার সঙ্গে বলেছিল খুলনা থেকে যাচ্ছে, তারমানে কি রামিশা সবকিছু বলে দিচ্ছে? কিন্তু কেন?

সাজুর হঠাৎ মনে পড়ে গেল, ঢাকার উত্তর বাড্ডা লাশ পাওয়া গেছে সেখানে সাজুর একটা ছবি ও পাওয়া গেছে। আর সেই ছবিটি রামিশার কাছে ছাড়া আর কারো কাছে নেই। তারপর গতকাল ও তার দুদিন আগে থেকে রামিশা অস্বাভাবিক আচরণ করেছে। কিন্তু আব্দুল কাদের গ্রেফতার হওয়ার পরই রামিশা স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। তারমানে কি রামিশা সবকিছু করেছে, তাকে নতুন করে বোকা বানাতে। কি…..

না না।
এমনও হতে পারে তারা দুজনেই চক্রান্তের মধ্যে পড়ে গেছে। কোনো একটা নিখুঁত মাথার বুদ্ধি হয়তো এর পিছনে কাজ করে যাচ্ছে। আর তাই যদি হয় তাহলে তো রামিশার পিছনেও এমন কিছু হবার কথা। সাজু যেমন অস্বাভাবিক বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে রামিশা তো সেটা নাও করতে পারে।

ঘড়ি দেখলো সাজু ভাই।
রামিশার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রায় দুই ঘন্টা আগে। তারমানে বাস কুমিল্লা রেস্টুরেন্টে যাত্রাবিরতি করার সময় হয়ে গেছে। সাজু সেই বাড়িতে বসে রামিশার সঙ্গে কথা বলেছিল, তারপর বাড়ি থেকে বের হয়েছে। খুলনা এসে আরও আধা ঘণ্টা ধরে বসে ছিল তাই দুই ঘন্টা পেরিয়ে গেল।

সাজু রামিশার নাম্বারে কল দিল।

★★★

সাজুর কল রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে কলটা গেল। রামিশা কলব্যাক করতে গিয়েও করলো না কারণ সাজু ভাই আবার হয়তো কল দেবে। কিন্তু কল নয় মেসেজ এসেছে।

– মেসেজে কথা বলো! তুমি এখন কোন যায়গা?

– রামিশা রিপ্লাই করলো, কুমিল্লার ভিতরে।

– যাত্রাবিরতি শেষ?

– না এখনো হোটেলে আসেনি।

অনেকক্ষণ ধরে মেসেজ আসছে না। রামিশা তখন বারবার স্ক্রিনে তাকাচ্ছে। অবশেষে লম্বা একটা মেসেজ এসেছে।

– মনোযোগ দিয়ে শোনো। তুমি রেস্টুরেন্টে নামার পরে আর ওই বাসে উঠবে না। ওয়াশরুমে গিয়ে নিজেকে সম্পুর্ন পরিবর্তন করে ফেলবে। যেহেতু আমার কাছে আসবে তাই ব্যাগের ভেতর নিশ্চয়ই জামাকাপড় আছে। বোরকা খুলে ব্যাগে রাখবে আর সুন্দর করে হিজাব বাঁধবে। আসল কথা হচ্ছে এমনভাবে পোশাক পরিবর্তন করবে যেন বাসের মধ্যে যারা আছে তারা দেখেও চিনতে না পারে।

– কিন্তু কেন সাজু ভাই?

– সবকিছু এখন বলবো না, তুমি নিজেকে পাল্টে হিজাব দিয়ে মাথা ঢেকে রাখবে। তারপর মাস্ক পরে বের হবে, আর ওই বাসে না উঠে লোকাল কোন সিএনজি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্বরোড আসবে। তারপর সেখান থেকে তিশা পরিবহনের গাড়িতে উঠবে।

রামিশা একটু ঘাবড়ে গেল। বাস এতক্ষণে হোটেলে পার্কিং করেছে। সবাই এক এক নেমে যাচ্ছে, তার পাশের লোকটাও নেমে সামনে চলে গেছে। রামিশা নিজের কাপড়ের ব্যাগটা নিয়ে নেমে গেল।
ওয়াশরুমে গিয়ে বোরকা খুলে ব্যাগে ঢোকালো। পরনের থ্রি-পিছ থাকলেই যথেষ্ট কিন্তু ওড়নাটা পরিবর্তন করতে হবে। হাতের মোবাইলের ব্যাক কভার খুলে ব্যাগে ভরে নিলো। ঠিক তখনই তার মনে হলো যে ব্যাগটা দেখে যদি কেউ চিনতে পারে তাহলে কি হবে?

রামিশা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পেল এক মহিলা ফ্লোর ক্লিন করছে। রামিশা তার ব্যাগ একটা সাইডে রেখে দ্রুত বেরিয়ে গেল। নিজেকে এখন অন্যরকম লাগছে, কেউ বুঝতেই পারবে না এই মেয়ে একটু আগে গ্রীণলাইন বাসের মধ্যে ছিল। রেস্টুরেন্টের বাইরে সাইডে একটা কাপড়ের দোকান পাওয়া গেল। সেখানে এখ কর্নারে দুটো ব্যাগ দেখে সে হাফ ছাড়লো। দ্রুত একটা ব্যাগ কিনে সেটা নিয়ে ভিতরে গেল। তারপর পুরাতন ব্যাগটা থেকে সবকিছু বের করে নতুন ব্যাগে ভরে নিলো।

অবশেষে নতুন এক মেয়ে হয়ে বেরিয়ে এলো। ব্যাগ পরিবর্তন করার বুদ্ধি তার নিজের, সাজু ভাই এটা তাকে বলে নাই। কিন্তু সে নিজের বুদ্ধিতে এমন একটা কাজ করেছে। সাজু ভাইয়ের সঙ্গে এই কথাটা সে ঠিকই বলবে।

বাস থেকে নেমেই রাব্বির মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার দলের একজন জানিয়েছে আব্দুল কাদেরকে নাকি খুন করার চেষ্টা করা হয়েছে। সকাল দশটার দিকে তাকে নিয়ে পুলিশের গাড়ি বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ষাট গম্বুজ মসজিদের সামনে গাড়ি হালকা স্লো করতেই কারা যেন বাইকে বসে গাড়ির মধ্যে গুলি করে। আব্দুল কাদের এখনো বেঁচে আছে কিন্তু তার অবস্থা বেশি ভালো নয়। আপাতত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

যিনি গতকাল রাতে রামিশার খুলনা যাবার মেসেজ দিয়েছিল সেই একই ব্যাক্তি আব্দুল কাদেরের আহতের ঘটনা জানিয়েছেন। রাব্বির সঙ্গে তার বেশ কিছু কথা কাটাকাটি হয়ে গেল,

– আমি জানি এটাও আপনি করিয়াছেন কারণ আপনি চান পুলিশের রিমান্ডে আব্দুল কাদের কারো কথা না বলুক। সেজন্য তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছেন।

– সেই লোকটা বললো, তুমি আপাতত রামিশাকে নিজের হাতে নেবার কাজটা করো। এদিকে কি হচ্ছে সেটা আমি সামলে নেবো।

রামিশা। হঠাৎ করে রাব্বির মনে পড়ে গেল যে বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে অনেক আগেই। সে মোবাইল রেখে দৌড়ে বাসের কাছে গেল, সবাই অপেক্ষা করছে।
সুপারভাইজার বললো,

– আরেকজন কোথায়?

– রাব্বি বললো, কার কথা বলছেন?

– আরে আপনার পাশের সিটের মেয়েটা।

– সে আসেনি?

– না, আপনার কাছে তার মোবাইল নাম্বার আছে?

– আমার কাছে কেন থাকবে। আমি তাকে চিনি না তাই না? তাছাড়া আপনার কাছে তার টিকিটের কপি আছে তো, নাম্বারে কল দেন৷

– রিসিভ করছে না ভাই।

– দেখি নাম্বারটা আমাকে দেন তো।

লোকটা নাম্বার দিল। বিরক্ত হয়ে তারা আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল। রেস্টুরেন্টের মধ্যে বক্সে গাড়ির নাম ও সবকিছু বলে বারবার ডাকা হলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না, অবশেষে রামিশাকে ছাড়াই রওনা দেবার প্রস্তুতি নিল।

– রাব্বি বললো, নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। আপনারা চলে যান আমি একটু খোঁজ করে দেখি পাওয়া যায় কিনা।

২০ মিনিটের পরিবর্তে ৫৫ মিনিট পরে গ্রীণলাইন পরিবহন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে গেল।

রাব্বির চট্ করে মাথার মধ্যে এলো যে রামিশা বাস থেকে নামার কিছুক্ষণ আগে মোবাইল রিসিভ করেছিল।
রিসিভ করে সে বলেছিল ” হ্যালো সাজু ভাই? ”
তারপর মোবাইল কান থেকে নামিয়ে কার সঙ্গে যেন মেসেজ করছিল।

রাব্বি বিস্মিত হলো। তারমানে কি সাজু ভাই বুঝে গেছে রাব্বি বাসের মধ্যে আছে। কিন্তু সেটা বা কীভাবে সম্ভব? একমাত্র সে যার হয়ে কাজটা করে সে ছাড়া কেউ জানে না। তাহলে সাজু ভাই কীভাবে জানবে বাসের রাব্বি আছে। রাব্বি দুটো বাসের চিপায় চলে গেল, দ্রুত নিজের পোশাক পরিবর্তন করে ফেললো।
সত্যি সত্যি যদি সাজু ভাই রামিশাকে সাবধান করে থাকে তাহলে রামিশা এখানেই আছে। কিন্তু তাকে দেখতে পেলে মেয়েটা সন্দেহ করতে পারে তাই হালকা পরিবর্তন করতে চায়।
নিজেকে কিছুটা পরিবর্তন করে রাব্বি হাঁটতে লাগলো চারিদিকে। সবদিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে রামিশাকে।

অনেকক্ষণ খুঁজে তারপর আফসোস করতে শুরু করে। সাজু ভাই দুরে থেকেও তার হাত থেকে ঠিকই রামিশাকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেল।

থমকে দাঁড়ালো রাব্বি। জুতা। তার সামনে থেকে একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে তার পায়ের জুতার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দিল রাব্বি।
ওয়াও, এই ব্যাপার।
রামিশা তার সবকিছু পরিবর্তন করতে পারলেও জুতা পরিবর্তন করতে পারে নাই। হয়তো তার স্মরণ ছিল না, বা ওদিকে তাকিয়ে কেউ তাকে চিনতে পারবে সে ভাবেনি।

রাব্বি মনে মনে বললো, ” এতো চেষ্টা করেও তোমার জানেমানকে রক্ষা করতে পারলে না সাজু ভাই। রাব্বির চোখে ফাঁকি দেওয়া এতটা সহজ নয় সাজু ভাই। ”

রাব্বি আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল রামিশার দিকে। কি করতে হবে সেটা দ্রুত ভেবে নিলো৷ এবার আর বেশ দেরি ঠিক হবে না।

[ কেমন হয়েছে নিশ্চয়ই জানাবেন। ]

বিঃদ্রঃ- গতকাল দেখলাম রাব্বি রামিশার সঙ্গে বাসে ওঠা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে গল্প তো সমাপ্ত নয়। আমি যদি সমাপ্ত করি তাহলে আপনাদের যদি কোন বিষয় খটকা লাগে সেটা বলবেন। পরবর্তীতে কি হবে সেটা তো অবশ্যই দেবো, কিন্তু সেটা তো কমেন্ট বক্সে দেবো না।

চলবে….

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।
চলবে…

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here