#কলঙ্কিনী
৬ষ্ঠ পর্ব
লেখনীতেঃ #রাফিজা_আখতার_সাথী
,
সারা তাড়াতাড়ি ঘরের ভিতরে এসে কাঁথা মুড়ি দিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকে। এমন একটা ভাব নিল যেন সে ঘুমিয়ে গেছে।
সারার মনে মনে রাগ আর খুশি দুইটাই হচ্ছে।
প্রিয়তম বেঁচে আছে এটা জেনে খুশি, বেঁচে আছে সেই কথা তাকে জানানো হয়নি কেন এটা জেনে রাগ হচ্ছে খুব।
মানুষ তো তার স্ত্রীর কাছে সব কথাই বলে। কিন্তু এই হতচ্ছাড়া লোকটা কেন বলে নি।
যদি সে পুলিশের কোন এজেন্ট এ হয় তাহলে তো মা কিংবা আমাকে কথাটি সে জানাতে পারতো।
তাৎক্ষণিকভাবে মনে পড়ে যায় আমান তো বেশি লেখাপড়া করিনি তাহলে সে পুলিশের চাকরি কিভাবে পেল?
ভাবতে ভাবতে মাথা বন্ধন করছে।
,
মিসেস রেহেনা এসে সারার পাশে বসতেই সারা একটু নড়ে নড়ে চড়ে উঠলো।
মুখের উপর থেকে কাথাটা সরিয়ে কপালে হাত দিয়ে দেখলো জ্বর আছে কেন কিনা!কারণ এই গরমে কারো কাথা মুড়ি দিয়ে থাকার কথা না।
কপালে হাত দিয়ে দেখলো সবকিছু স্বাভাবিক আছে।
,
ডাক দিলে সারার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে ভেবে মিসেস রেহেনা তাকে আর ডাকে না।
বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় সারা তাড়াতাড়ি গিয়ে ভিতর থেকে দরজাটার লক এটে দেয়।
সারার এখন খুব কান্না পাচ্ছে আমানের জন্য। দুইদিন আগেই জেনেছে লোকটা দুনিয়ায় নেই। তার খবর লুকাতে গিয়ে কত কি ঘটে গেলো, এসবের কিছু কি সে জানে?
,
বাথরুমের ভিতরে গিয়ে শাওয়ারটা ছেড়ে দিয়ে সারা ভিজতে থাকে আর অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে,
,
” কেন তুমি মরার নাটক করেছো? আমাকেও জানাওনি কেন? আমার তো ইচ্ছে হয় আমাদের বাবুটা পেটের ভিতরে থাকা অবস্থায়। তুমি আমাকে দেখাশোনা করবে, পেটে মাথা দিয়ে বাবুর সাথে কথা বলবে। কিন্তু না তুমি তোমার মত পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে আমার থেকে।
কেন করছ আমান? আমারও তো খুব ইচ্ছা হয় তোমার বুকে মাথা রেখে দিন গুলো কাটাই, তোমার সাথে খুনসুটি করে সময়গুলো পার করি।
সব সময় কি আর নিয়তির দোষ দিলে হয় বলো? দোষ তোমার।
কেন আমার সামনে আসছ না? কেন কেন কেন?
,
সকালে মিসেস রেহেনা অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে খাবার টেবিলে এসে দেখে সারা নেই। কর্মচারীদের জিজ্ঞাসা করতে তারা বলে, ‘সকাল থেকে তিনি এখনো ঘর থেকেই বের হননি।’
,
মিসেস রেহেনা সারার ঘরের দরজায় টোকা মেরে ডাক দেয়, কিন্তু কোন সাড়াশব্দ পায় না। ঘুমিয়ে থাকলেও ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার কথা।
মনের ভিতর একটু সন্দেহ হলো তাই নিজের ঘরের আলমারি থেকে চাবিটা এনে সারার ঘরের দরজাটা খোলে।
কিন্তু দরজা খুলে সারা কে ঘরের বিছানা বা বেলকুনি কোথাও দেখতে পায়না।
,
,
বাথরুম থেকে কুলকুল করে পানি পড়ার শব্দ কানে আসে। মিসেস রেহেনা ভাবে সারা হয়তো গোসল করছে, তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। ১০ মিনিট ২০মিনিট এভাবে এক ঘণ্টা পার হয়ে যায় এদিকে ডিউটি তে যাওয়ার টাইম হয়ে গেছে।
এখন বের হতেই হবে তাই মিসেস রেহেনা বাথরুমের দরজায় নক করতে থাকে, কিন্তু আগের মতই, কোন সাড়াশব্দ পায় না পানি পড়ার শব্দ ব্যতীত।
,
,
এবার ওনার মনের ভিতর খচখচ করতে থাকে সারার কোনো বিপদ হলো না তো? সারার কিছু হয়ে গেলে আমানকে কি জবাব দেবে?
,
একজন কর্মচারীকে ডেকে বাথরুমের দরজা ভেঙে দেখে সারা ফ্লোরে পড়ে আছে আর শাওয়ার চলেই যাচ্ছে। মিসেস রেহেনা দ্রুত শাওয়ার বন্ধ করে সারাকে তোলার চেষ্টা করে।
সারার গায়ে হাত ফিয়ে আতকে ওঠে রেহেনা। বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গেছে। দেহে যেন কোনো রকমে প্রাণ পাখিটা আছে একটু এদিক সেদিক হলেই উড়ে যাবে। দ্রুত সারাকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয় মিসেস রেহেনা।
,
,
সারা চোখ খুলেই সামনে আমানকে দেখতে পায়। স্যালাইনের সুচ বাম হাত দিয়ে টান দিয়ে বের করে দৌড়ে গিয়ে আমানের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে হুহু করে কেঁদে ওঠে।
,
আমান দুই হাতের আঁজলাই সারার মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে।
বলে,
-আমি চলে এসেছি সারা। আর কিচ্ছু হবেনা তোমার। জীবন চলে গেলেও কিছু হতে দেবো না।
,
সারাকে বেডে শুইয়ে দিয়ে ডক্টর কে ইশারা করে স্যালাইন টা আবার লাগিয়ে দিতে বলে।
,
এমনিতেই কিছুক্ষণ হলো সারার জ্ঞান ফিরেছে তার উপরে আমানকে দেখে নিজের কান্না কোনভাবেই থামাতে পারছে না। সারারাতের কান্না, এখনকার কান্না সব মিলিয়ে সারারা অবস্থা নাজেহাল।
,
আমান সারাকে শুয়ে দিয়ে একটু উঠতে নিলে দেখে একহাত দিয়ে সারা তার শার্ট টেনে ধরেছে।
তাই উঠতে গিয়েও আবার সারার পাশে বসে পড়লো।
,
সারা- কোথায় যাচ্ছো তুমি? তোমাকে আমি আর কোথাও যেতে দেবো না। আমার জীবন যতদিন আছে ততদিন আমার চোখের সামনে থাকবে। আমি মরে গেল……
,
আমান হাত দিয়ে সারার মুখ চেপে ধরে,
,
-এই জীবনে শুধু তোমার জন্যই সব সারা। তুমি না থাকলে আমান কিছুই না। খবরদার আর মরে যাওয়ার কথা বললে কিন্তু আমি এবার সত্যি সত্যি মারা যাবো।
,
আমানের কথা শুনে সারা ফুপিয়ে ওঠে।
,
আমান বুঝতে পারে সে ভুল কিছু বলেফেলেছে। তাই হাজার বার সরি বলল।
,
সারা- তোমার জন্য আমার কত কথা শোনা লেগেছে সবার কাছে, আমার ছোটো নেহা তার কাছে চড় খাওয়া লেগেছে। কত কষ্ট হয় জানো?
,
আমান-সারা তুমি হাইপার হইয়ো না। সব ঠিক হয়ে যাবে আমিতো চলে এসেছি। আর কোনো অপবাদ তোমার থাকবেনা।
,
,
সেই দিনই হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে সারাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আমান। যদিও এতো তাড়াতাড়ি এসব করারা ইচ্ছা ছিলো না আমানের কিন্তু মিসেস রেহেনা বলল যে, ওকে আর এতো কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। তাই সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি।
,
,
গাড়ি থেকে নেমে আমান সারাকে বলল একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি। এই রাতে এমন সুনশান জায়গায় আমান কোথায় যাবে? তাই সারা পিছু নিলো।
,
আমান তিনজন লোককে টাকার একটা বান্ডেল দিলো।
,
এরা তো সেই তিনজন যারা গত পরসু আমাকে তুলে নিয়ে গেছিলো। এরা তো আমার সাথে…….। আমান নিজেই তাহলে এসব করেছে? এটা করে ওর লাভ কি ছিলো? কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?
,
দ্রুত ওখান থেকে চলে এসে গাড়িতে বসে পড়ে সারা। এখন আমি চুপচাপ থাকবো আমানের এসব করার পিছনের রহস্য আমাদ জানতেই হবে….
,
,
,
,
চলবে
,
,
বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।