#পর্ব১১
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু।
–“দেখো রোজা আমি যা বলবো সেটা তোমার ভালোর জন্যই বলছি। তুমি তো বললে আদিলকে ডির্ভোস দিয়ে’ই দিয়েছো তাহলে আমি মনে করি এখন আদিল এর সাথে তোমার কোনোরকম যোগাযোগ না রাখাটাই উওম। আদিল বুঝুক যে ও হীরে রেখে কাচ কে বেছে নিয়েছে। কাচ যখন বেছে নিয়ে এবার কাচে লেগে হাত পা একটু কাটুক তাহলে তো বুঝবে হীরের মুল্য! আর আমি বা রওশন কেউই বলবে না তোমরা যে এখানে রয়েছো। আর এখানে থাকতেও তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। আশা করি তুমি এখন আমার কথাটা বুঝেছো”?
রোজাঃ হ্যাঁ আংকেল আমি সবটা বুঝেছি। আমিতো রওশন কেও বলেছিলাম একই কথা যাতে আপনারা কেউ আদিলকে আমাদের এখানে থাকার কথা না বলেন।
ব্যস তাহলে তো হয়েই গেলো। এবার তুমি নিশ্চিন্তে এখানে মেয়েদের নিয়ে থাকো।
ও বাড়িতে________
রিনিঃ দেখি খাবার কেমন হয়েছে? এই বলে রিনি পায়েস মুখে নিতেই পায়েসের বাটিটা ফেলে দিলো! এসব কি করেছো আদিল? পায়েসে এতো লবন দিয়েছো যে খাওয়াই যাচ্ছে না! চিনির বদলে বোধহয়ই লবনই দিয়েছো সব। আর দেখি সব্জি আর মাংস টা ওগুলো কেমন হয়েছে? একে একে সবগুলো টেস্ট করে সবকিছু মেঝেতে ফেলে দিলো রিনি!
আদিলঃ তুমি এগুলো কি করছো কি রিনি? আমি এই প্রথম তোমার জন্য রান্না করলাম আর তুমি এগুলো না খেয়ে ফেলে দিচ্ছো!
রিনিঃ খাওয়ার যোগ্য হলেতো খেতাম সেটা বুঝতে পারছো না তুমি? এসব কি রেধেছো তুমি? সব্জি পুড়ে গেছে আর চিকেনে তো এতো ঝাল দিয়েছো যে মনে হচ্ছে মরিচের গুঁড়া সব শেষ করে ফেলছো মনে হয়! তোমার কি মনে হয় এগুলো খেলে আমি সুস্থ থাকবো। না একটু পড়েই খাটে অজ্ঞান হয়ে যাবো তোমার এসব খাবার খেলে।
আদিলঃ তাহলে তুমি এক কাজ করো ফ্রিজে কিছু ফল রাখা আছে আপাততো সেগুলো খাও এখন। আমি বাইরে থেকে আবার আনছি। আর দেখছি কোনো কাজের মহিলা যদি পাওয়া যায়। ।
রিনিঃ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। তুমি তাড়াতাড়ি যাও বরং। আমার আর এসব বাজে খাবার সহ্য হচ্ছে না
_________________
আংকেল তুমি যদি এখন লুকোচুরি না খেলো তবে দেখো কি হয়?
রওশনঃ মামুনিরা দেখো পরে খেলবো বলেছি তো নাকি?
এখনি খেলো না আংকেল? একটু পড়ে মা পড়তে বসাবে।
বাচ্চাদের এই বার বার বলাটাকে অগ্রাহ্য করতে পারলো না রওশন তাই খেলতে লাগলো ওদের সাথে।
আংকেল তুমি একটু দাড়াও আমরা আম্মু কেও নিয়ে আসছি। তিনজনে মিলে খেললে ভালো হবে না, দাড়াও আম্মুসহ আমরা সবাই মিলে লুকোচুরি খেলবো।
বলতে দেরি হলো সেই সাথে সাথে মেয়েগুলোর যেতেও দেরি হলো না। সঙ্গে সঙ্গে রোজাকে নিয়ে হাজির! তাদের আবদার একটাই তারা এখন লুকোচুরি খেলবে সবাই মিলে। রোজাও মেয়েদের আবদার ফেলতে না পেরে খেলতে লাগলো ওদের সাথে।
প্রথমেই চোখ বেঁধে দেওয়া হলো আলোর। আলো রোজাকে ছুঁয়ে রোজার চোখ বেঁধে দেওয়া হলো। রোজা খেলতে খেলতে একসময় একটা গাছে বাড়ি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। সাথে সাথে রওশন রোজাকে কোলে নিয়ে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেয়। অনেক্ষন ডাকাডাকির ফলে যখন রোজার জ্ঞান ফিরলো না তখন রওশন ডাক্তারকে ফোন দিলো। ওদিকে মেয়েরাও ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। তারা ভাবছে হয়তো তাদের জন্যই মা আজকে ব্যাথা পেলো।
________________________
ওদিকে রিনি তার শাশুড়ি মায়ের সাথে ঝামেলা করছে! কারন ইদারা বেগম রিনির ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিচ্ছে?
রিনিঃ মা আপনার বয়স হয়েছে তো আপনার কি দরকার ছিলো আমার ফোনে হাত দেওয়ার? দিলেন তো ফোনটা ফেলে! না জানি কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেছে কিনা! মা আপনি ভালো করে শুনে রাখুন আপনি আর যখন তখন আমাদের রুমে আসবেন না। আপনার যা দরকার হবে সেটা আপনি আপনার মেয়েকে বলবেন ও করে দিবে।
ইদারা বেগমঃ এসব কি ধরনের কথা বার্তা বউমা? বলি ফোনটা তো আর আমি ইচ্ছে করে ফেলেনি। হাত থেকে পড়ে গেছে। এই কারনে তুমি আমাকে এতোগুলা কথা শোনাতে পারলে! কই রোজার তো কতো কিছু আমার কারনে নষ্ট হয়ে গেছিলো? ও’তো আমাকে তেমন কিছু বলে নি আর তুমি আমাকে এতোগুলা কথা শোনাচ্ছো!
রিনিঃ প্রথমতো আমি আপনার রোজা নই যে সব কিছু মেনে নিবো। আর দিত্বীয়তো আমি আপনাকে যেটা বলেছি সেটা যেনো মনে থাকে আপনার। আর বেশি কথা না বলে যেটা বলেছি সেটা মনে রাখবেন। আর হ্যাঁ শুনুন আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে একটু নুডুলস রান্না করে দিয়েন আমাকে। আপনার ছেলে সেই কখন গেছে বাজারে অথচ এখনো তার ফেরার নাম নেই!
–“রোজা থাকতে কখনো ইঁদারা বেগমকে রান্না ঘরেও যেতে হয়নি। এমনি কখনো ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি কারন রোজা সবকিছুই তাদের করে দিতো। ইঁদারা বেগম নিশ্চুপ ভাবে চলে গেলো রান্না ঘরে রান্না করতে। সে ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছে যে রিনি মোটেই রোজার মতন নয়। তাই কালবিলম্ব না করে সে নুডুলস বানাতে লাগলো”।
“নুডুলস বানানো শেষ করে রিনিকে কিছুটা দিয়ে আর বাকিটা নিজের জন্য তুলে রাখলো ইদারা বেগম”।
রিনিঃ বাহঃ শাশুড়ি অাম্মা আপনি তো রান্না টা বেশ ভালোই করতে পারেন দেখছি। নুডুলস টা তো অনেক মজা হয়েছে। তা এতো ভালো রান্না করতে পারেন অথচ রান্না করেন না কেনো আপনি?
ইদারা বেগমঃ আমার কি এখনো রান্না করার বয়স আছে বউমা? হাঁটুর ব্যাথায় দাড়াতে পারিনা ঠিকমতন। রোজাই তো সব কাজ করে দিতো। এখন রোজা নেই কি করবো বলো?
রিনিঃ দেখুন মা রোজা এটা করতো, রোজা ওটা করতো এব বলে আর কানের বারোটা বাজাবেন না তো। এতোই যখন ভালো ছিলো তখন গেলো কেনো এখান থেকে। আপনি আর বেশি কথা না বলে এখান থেকে যান তো।
–“ইদারা বেগম চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে তুলে রাখা নুডুলস টুকু খেতে লাগলো, আর ভাবছে রিনি এরকম ব্যাবহার করছে কেনো? রোজাতো এরকম ছিলো না! রোজা থাকতে তো তার সারাদিনে কতো কাজই করে দিতো, বাচ্চাদের সামলানো, ঘরের যাবতীয় সব কাজ একা করতো, আমারও সেবা যত্ন করে দিতো। আর রিনি কি রকম করে যেনো কথা বলে যেনো সেই সবকিছু”!
আদিলঃ রিনি দেখো এখন হোটেল থেকে খাবার এনেছি আজকের দিনটা চলে যাবে। কালকে একজন কে বলে রেখেছি সে এসে বাড়ির সব কাজ করেিয়ে যাবে। তুমি কিছু খেয়েছিলে?
রিনিঃ তাহলে ভালোই হলো কাজের লোক আসবে বাড়িতে। হ্যাঁ আমি নুডুলস খেয়েছি। এখন আমার একটু ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমুলাম।
–“আদিল এর খুব খারাপ লাগল রিনির এরকম ব্যাবহারে। আদিল সারাদিনে রিনির জন্য কতো পরিশ্রম করে রান্না করলো। রিনি সেটার দাম দিলো না। ও একবারো খেয়েছে কিনা সেটা পযর্ন্ত ও জিগেস করলো না। না চাইতেও তখন আদিল এর রোজার কর্ম গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। আদিল যখন যেটা আবদার করেছে রোজা সবকিছু হাসিমুখে করে দিয়েছে। কোনো কিছুতে মানা করতো না” ।
__________________________________
ডাক্তারঃ দেখুন আপনারা ওনাকে এই অবস্থায় এভাবে রেখেছেন কেনো? ওনার তো প্রপার ট্রিটমেন্ট নেওয়া দরকার। ওনার শরীর খুবই দুর্বল। এখন ওনাকে রেস্টে রাখতে হবে। আর খাওয়া দাওয়া ঠিকমতন করতে হবে। আর এখানে কিছু টেস্ট লেখা আছে। টেস্টগুলো করিয়ে নিবেন কালকের মধ্যে। আমি যা সন্দেহ করছি তা টেস্ট গুলো করালেই পরিষ্কার সবটা পরিষ্কার হবে।
রওশনঃ কিসের পরীক্ষা ডাক্তার? খুলে বলুন?
ডাক্তারঃ অনুমান করেছি মাএ। আপনি পরীক্ষাগুলো করে নিবেন কাল হাসপাতালে এসে তখন সবটা বলে দিবো আমি।
আচ্ছা ডক্টর আপনি তাহলে চলুন এবার। ধন্যবাদ আপনাকে।
#পর্ব১২
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
–“সকালবেলাই মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থেকেই রওশন এর সাথে রোজার কথা কাটাকাটি হচ্ছে রওশন বারবার বলছে রোজাকে হাসপাতালে যাওয়ার কথা কিন্তু রোজা যাবে না সেই নিয়েই দু’জনের তর্কাতর্কি চলছে”।
রোজাঃ আপনি কেনো বুঝতে পারছেন না রওশন ডাক্তার রা ওরম বলেই থাকে। তা বলে আমাকে সত্যি সত্যি হাসপাতালে যেতে হবে এমনতো নয় বলুন। আপনি আর আমাকে জোর করবেন না।
রওশনঃ কিছু না হলেও ডাক্তার যখন আপনাকে বলেছে যেতে হবে তো যেতেই হবে। দেখুন আপনি বুঝতে কেনো পারছেন না আপনার কিছু হলে বাচ্চাদের কি হবে? তাই বলছি অন্ততো মেয়েদের জন্যই চলুন।
–“রওশন এর কথার পৃষ্ঠে আর কথা না বাড়িয়ে রোজা চলে গেলো হাসপাতালে। সব পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ করার পর ডাক্তার বললেন”।
ডাক্তারঃ দেখুন রওশন ওনার পেটে একটা ছোট্ট টিউমার আছে। যেটা অপারেশন করালেই ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এই সপ্তাহের মধ্যেই অপারেশনটা করিয়ে ফেলুন।
রওশনঃ অপারেশন করালেই ঠিক হয়ে যাবে তো। তাহলে আমি কয়েকদিনের ভিতরেই রোজার অপারেশন টা করিয়ে ফেলবো। ধন্যবাদ আসছি।
–“অপারেশন এর কথা শুনে রোজার মাথায় যেনো বাজ পড়লো! রওশন তো বলে দিলো অপারেশন হয়ে যাবে। কিন্তু এখন এই টাকা কোথা থেকে আনবে রোজা! ওর কাছেতো অপারেশন করানোর মতন আর কোনো টাকা পয়সা নেই”।
–“রোজার চিন্তিত মুখ দেখে রওশন সবটা বুঝতে পারলো যে রোজা অপারেশন এর টাকা নিয়েই চিন্তা করছে। তাই সে বলে ওঠলো রোজাকে টাকা পয়সা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাবেন ওখানেই আব্বু আপনার অপারেশন করিয়ে দিবে। আর বিল এর ব্যবস্থা সেটা না হয় আব্বুই ম্যানেজ করে নিবে” । রোজা আর মানা করতে পারলো না কারন তার কাছে আর কোনো উপ্য় নেই আপাততো এটা মেনে নেওয়া ছাড়া”!
রওশনঃ আচ্ছা আমি তো আজকে ফ্রি আছি। যদি কিছু মনে না করতেন আমি আজকে বাচ্চাদের বাসায় নিয়ে যাই। বেশি সময়তো নেই ওদের ছুটি হতে এই কিছুক্ষণের ভিতরেই ছুটি হয়ে যাবে।
“আচ্ছা ঠিকআছে তাহলে অপেক্ষা করুন। মেয়েরা এক্ষুনি চলে আসবে স্কুল ছুটি হলে”।
স্কুল ছুটি হওয়ার পর……….
–“বাচ্চাগুলো যখনি দেখলো তার আম্মু এবং আংকেল দাড়িয়ে রয়েছে তখনি খুশিতে দু’জনে তাদের জরিয়ে ধরলো”।
মিষ্টিঃ আমি তো ভাবতেই পারছি না তোমরা এসেছো! কি মজা! চলোনা আজকে আমরা আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়িতে যাই।
“রোজা বাধ সাধলো এতে। সে স্পষ্ট মানা করে দিল। কিন্তু রওশন মেয়েদের কথা শুনে দোকান থেকে সঙ্গে সঙ্গেই চারটে আইসক্রিম নিয়ে এলো। তারপর তারা সবাই মিলে আইসক্রিম খেতে খেতে বাড়িতে যাচ্ছে”।
_________________________
রিনিঃ আদিল মেয়েটা তো এখনো এলো না বলো। কতো বেলা হয়ে গেছে আমি খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।
আদিলঃ দাড়াও চলে আসবে হয়তো কিছুক্ষণের ভিতরে ই।
পারুলঃ আমি চইলা আইছি সাহেব। একটু আইতে দেরি হইছে কিন্তু পরের বার আর এমন হইবো না। এবার আমারে রসুইঘর খান কো জায়গায় একটু কইয়া দেন আমু সব ব্যবস্থা কইরা দিতাছি।
–“পারুল রান্না হতে সব কিছু করতে লাগলো একে একে । এরই মধ্যে রিনির পার্সেল চলে এসেছে। সে এবার ও মহানন্দে খেতে বসেছে। কিন্তু পাশে যে আদিল দাড়িয়ে রয়েছে সেটা হয়তো তার খেয়ালই হয়নি”।
“রিনির এরকম ব্যবহার যেনো আদিল মেনে নিতে পারছে না। তার খুব কষ্ট হচ্ছে। রিনি একবারো জিগেস করার প্রয়োজন বোধ করলো না যে আদিল খেয়েছে কিনা! অথচ আদিল রিনির জন্য কতো রকম ব্যবস্থা করছে”।
_____________________
–“বাচ্চাদের নিয়ে বাড়িতে ফেরার পর। ফ্রেশ হয়ে সবাই খেতে বসতে লাগলো। খাবার মুখে দিয়ে তো করিম সাহেব, রওশন সবাই খাওয়াই অফ করে দিয়েছে। এতে রোজার ভয় হতে লাগলো যে সে আবার উল্টোপাল্টা কিছু করলো না তো”!
করিম সাহেবঃ রোজা এসব রান্না তুই করেছিস? এতো ভালো খাওয়ার আমি কোনোদিনও খাইনি বিশ্বাস কর! খুবই দারুন হয়েছে। এরপর থেকে রান্না টা তুইই করিস বাকি কাজকর্ম না হয় রহিমা করবে।
রওশনঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো তুমি। রোজা আপনার হাতের রান্নার কোনো জবাব নেই। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে রোজার হাতের রান্না যখন এতো ভালো। আমার রেস্টুরেন্টের কয়েকটা আইটেম কি রোজা রান্না করে দিলে তো আমার ব্যবসা টা একটু বড়ো হতো বলো?
করিম সাহেবঃ কি বলছিস তুই? এতে তো রোজার শরীর খারাপ হতে পারে। আমরা নিজেদের জন্য ওকে অসুবিধায় ফেলতে পারি না।
সঙ্গে সঙ্গে রোজা বলে ওঠলো,
“আপনি বেশি বলছেন আংকেল! রান্নাই তো করবো আর তো কিছু না বলুন? এতে আমার কোনো শরীর খারাপ হবে না। এমনি বসে বসে আর কতো সাহায্য নিবো বলুনতো আপনার থেকে? এর চেয়ে বরং আমি যদি রওশন এর রেস্টুরেন্টের কাজে একটু সাহায্য করতে পারি তাহলে আমিই খুশি হবো। আর বাচ্চারা তো অর্ধেক সময়ই স্কুলে থাকে। তখন আমি এমনিই অবসর থাকি। এই সময়টুকু কাজ লাগিয়ে যদি একটু রান্না করি তাহলে তো কিছুই হবে না। আর এমনিতেও কাজের মধ্যে থাকলে পুরনো অতীত ভুলা যাবে সহজে”।
–“রোজার এরকম ভাবে বলার ধরন দেখে আর করিম সাহেব মানা করলো না রোজাকে। সত্যি এটাই যে ওদের থেকে সাহায্য নিতে রোজার ও হয়তো খারাপ লাগে। তাই ও যদি রওশনের রেস্টুরেন্টে যদি একটু সাহায্য করে তাহলে ওর খারাপ লাগাটা কমবে। সব দিক দিয়ে বিবেচনা করে করিম সাহেব রোজাকে অনুমতি দিলেন”।
করিম সাহেবঃ তবে সবটাই তোমার অপারেশন হয়ে যাবার পর করবে তুমি। এর আগে কিছুতেই নয় ।
______________________
রওশনঃ দেখুন রোজা আপনি আমার কথাটি মন দিয়ে শুনুন। আমি বুঝতে পারছি আপনার এ বাড়িতে থাকা, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা সবকিছুই মেনে নিতে আপনার অসুবিধা হচ্ছে। এতো অসুবিধা রাখবেন না মনের ভিতরে। আমাকে আপনার বন্ধু মনে করতে পারেন তাহলে দেখবেন আস্তে আস্তে হয়তো সবটা সকজ হয়ে যাবে আপনার জন্য।
রোজাঃ হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক বলেছেন আপনি। তবে বন্ধু হতে কোনো অসুবিধা নেই।
_____________
–“শোনো রিনির মা, তোমার মেয়ে একটু বেশিই করছে আমার মনে হয় প্রথমে সে আমাদের ঠিক করা ছেলের সাথে বিয়ে না করে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে নাকি পালিয়ে গেলো। গেলোতো গেলোই সে বিয়েও টিকলো না তার! বছরের মাথায়ই আবার এ বাড়িতে ফিরে এলো কারন তার স্বামী নাকি ভালো না তাই! বলি এখন কোন স্বামী অসুবিধা করেছে তাকে হ্যাঁ?তারপরেও কতো উল্টাপাল্টা ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করেছে। সেখান থেকে সরিয়ে এনেছি! ক্ষমা করে দিয়েছিলাম তো। তাকে এ বাড়িতে থাকতে দিয়েছিলাম। যতোই হউক আমার মেয়ে সেজন্য। কিন্তু আজ প্রায় দু’বছর হতে চললো এখন কোথায় সে? আবার আগের মতন কাউকে কিছু না জানিয়ে সে বাড়ি থেকে চলে গেলো! এবার যদি আবার এ বাড়িতে আসে না দেখো কি অবস্থা করি ওর আমি। একবার ক্ষমা করেছি কিন্তু বারবার নয়”।
আছমা বেগমঃ কি বলি বলোতো? ও যে আমার নিজের পেটের সন্তান। ওর জন্য লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছি না বাইরে। প্রথমবার না হয় না বুঝে করেছে। কিন্তু এবারো একই কাজ করলো! এর আগে তো কতো ছেলেদের সাথে সম্পর্ক করেছে ছিহঃ!
“আছমা বেগম আর রফিক মিয়া তার মেয়ে সম্পর্কে এসব বলছিলেন। কিন্তু তারা হয়তো জানেন না এবার তার মেয়ে একটি মেয়ের সংসার ভেঙে নিজে সেখানে রাজত্ব করে বসেছে”!