নেশাক্ত ভালোবাসা পর্ব-৬৩+৬৪

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৩

আব্রাহাম সোজা ঘোড়ার বেগে ছুটছে সুপার শপে যাওয়ার জন্য। কারণ ইলা, দিয়া আর আইরাত সবাই সেখানেই আছে। তবে ড্রাইভ করা অবস্থায় আব্রাহামের ফোনে ফোন আসে। সে না দেখেই রাগে ফোন কেটে দেয়। যখন তৃতীয় বারের মতো ফোন বেজে ওঠে তখন আব্রাহাম বিরক্তি হয়েই ফোন রিসিভ করে। কানে তার ব্লুটুথ ছিলো। হ্যালো বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই ওপর পাশ থেকে দিয়া ঘাবড়িয়ে হাপাতে হাপাতে বলে ওঠে….

দিয়া;; হ হ্যা হ্যালো জিজু!

আব্রাহাম;; দিয়া আর ইউ ওকে? কি হয়েছে?

দিয়া;; জিজু অবস্থা খুব বেশি খারাপ।

আব্রাহাম;; হয়েছে কি আর আশেপাশে এতো চিল্লাপাল্লা কিসের?

দিয়া;; আইরাত নেই জিজু।

এক নিমিষেই আব্রাহাম তার গাড়ি থামিয়ে দেয়। হুট করেই এতো দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষেছে যে অল্পের জন্য আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়নি। চোখে মুখে ব্যাপক হয়রানির ছাপ নিয়ে আব্রাহাম আধো আধো গলায় বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; নেই মানে! আইরাতের কি হয়েছে? কোথায় ও?

দিয়া;; জিজু আমি জানি না। আমরা সবাই শপের ভেতরেই ছিলাম। কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়িতে উঠতে ধরেছিলাম। কিন্তু তখনই খেয়াল করি যে গাড়ির এক পাশের টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেছে। ড্রাইভার ঠিক করাচ্ছিলো ম্যাকানিক কে দিয়ে। এর মধ্যে আমরা সবাই কিছুটা দূর গিয়ে দাঁড়াই। কিন্তু এর মাঝে কি যে একটা হৈচৈ বেধে যায় যে আগুন লেগেছে। সাধারণত আমরা সবাই ভয় পেয়ে যাই। আইরাত কে নিয়ে আস্তে ধীরে আসছিলামই কিন্তু কোথা থেকে যেনো একটা গাড়ি এসে আইরাত কে তুলে নেয়।

আব্রাহাম;; তোম………

দিয়া;; না জোরজবরদস্তি করে নি। শুধু গান এনে আমাদের দিকে তাক করে ব্ল্যাকমেইল করে। আর আইরাত কে শুধু গাড়িতে উঠতে বলে। নইলে আমাদের সবাইকে গুলি করে দিবে এটা বলে। আইরাত আর অন্য কোন উপায় না পেয়ে উঠেই পরে গাড়িতে। আমাদের সবার সামনে আইরাত কে নিয়ে যায় জিজু কিন্ত আমরা কিছুই করতে পারিনা।

আব্রাহাম;; দাদি আর তুমি ঠিক আছো তো?

দিয়া;; না জিজু। আমি পরে গিয়ে মাথায় অনেক ব্যাথা পেয়েছি। আর দাদি ঠিকই আছে।

আব্রাহাম;; আসছি আমি।

আব্রাহাম ফোন টা নিয়ে পাশের সীটে ছুরে মারে রাগে। তার বুঝতে আর বাকি নেই যে কে এগুলো করিয়েছে। আশফাকের বলা কথাই তাহলে সত্যি হলো। মন চাইলে সব আগুন লাগিয়ে দিক। আইরত কে না জানি কোথায় নিয়ে গেছে! কি হালে আছে ও! ইশশশ অসহ্যকর আর ভাবা যায় না এইসব। আব্রাহামের রাগে সোজা কথা হাত-পা অবশ হয়ে গেছে। সে নিজেকে অনুভব করতেও পারছে না। মন চাইছে শুধু হাতে একটা চাকু বা ধারালো কোন অস্ত্র নিক আর তা দিয়ে শুধু মানুষ কে মেরে যাক। সে আবার হাওয়ার বেগে ছুটতে লাগে। সুপার শপে এসে পরলে দেখে দিয়া ইলা কে নিয়েই ব্যাস্ত। ইলা চিৎকার করে কাঁদছে। আব্রাহাম খেয়াল করে দেখে দিয়াও মাথায় কম ব্যাথা পায় নি। এমনকি তার মাথার পাশ দিয়ে রীতিমতো রক্ত ঝড়ছে। তাই নিজের ওরনা দিয়ে চেপে রেখেছে। আব্রাহাম কে দেখে দিয়া ছুটে যায়। গিয়েই হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।

আব্রাহাম;; দিয়া, দিয়া কান্না করো না। প্লিজ ঠিক থাকো। আর তোমার অবস্থা তো ভালো না। হস্পিটালে চলো এভাবে থাকলে পরে ভয়াবহ রুপ ধারণ করবে। অয়ন! অয়ন কে ফোন করেছো?

দিয়া;; অয়ন, কৌশল ভাইয়া সবাই কেই বলেছি। তারা আসছে।

বলতে না বলতেই অয়ন আর কৌশল এসে হাজির হয়ে যায়। অয়ন তো দিয়ার অবস্থা দেখে পাগল প্রায়।

আব্রাহাম;; দেখ এখন ইমোশনাল হওয়ার টাইম নেই। অয়ন তুই দ্রুত দিয়াকে হস্পিটালে নে। আর কৌশল তুই দাদি কে নিয়ে জলদি বাড়ি যা। আর বাক…….

তার মাঝেই ফোন বেজে ওঠে। হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার। রিসিভ করে। আর জানা মতেই ওপর পাশ থেকে আশফাকের অট্টহাসি। যা শুনেই পুরো মুখমণ্ডল লালচে বর্ণ ধারণ করে আব্রাহামের।

আশফাক;; আফসোস হচ্ছে?

আব্রাহাম;; অনেক বেশিই।

আশফাক;; নিজের ওপর তাই তো?

আব্রাহাম;; হুম

আশফাক;; আগেই বলেছিলাম আমি যে আমাকে নিজের বিজন্যাস পার্টনার বানিয়ে নিন। এতে তো আপনার আর লস হতো না তাই না।

আব্রাহাম;; আমার আফসোস হচ্ছে। প্রচন্ড রকমের আফসোস হচ্ছে। কিন্তু তা আমার ওপর না তোর ওপর, তোর কপালের ওপর।

আশফাক কিছু না বুঝে কপাল কুচকায়।

আব্রাহাম;; আমি জানি যে আমার আইরাত তোর কাছেই আছে। ওকে তুই-ই নিয়ে গেছিস নিজের সাথে।

আশফাক;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; দেখ তোর শত্রুতা, তোর জেদ যা কিছুই আছে সবই আমার সাথে। আমার বউ বা পরিবারের কোন লোকদের সাথে না। যদি আসলেই মানুষ হয়ে থাকিস তাহলে তুই ওদের কিছুই করবি না আর যদি কাপুরুষ হয়ে থাকিস তাহলে ক্ষতি বাকিদেরই আগে করবি।

আশফাক;; এতোটাও ভীতু নই আমি। আমার টার্গেট কি তা তো আপনি এই সময়ে বুঝেই গেছেন তাই না। চিন্তা করবেন না আমি জানি যে এখন যদি আমি একজন কে মারি তাহলে একজনের সাথে সাথে আরো দুজন অর্থাৎ তিনজন মরবে। আর বাকিরা আধামরা। আমি তা করবো না। শুধু আপনাকে এখানে আনার চেষ্টা। আমার দূর্বল জায়গায় আঘাত করা।

আব্রাহাম তাকিয়ে দেখে কৌশল দাদি কে গাড়িতে বসাচ্ছে। আব্রাহাম দ্রুত ইশারাতে কৌশল কে ডাক দেয়।

আব্রাহাম;; জানিস তো দূর্বল জায়গাই যখন শক্ত হয়ে যায় তখন তার পরিণাম খারাপই হয়।

আশফাক;; হাহাহাহাহা,, আমি যখন ইচ্ছে তখনই আপনার এক বিরাট মাপের ক্ষতি করে দিতে পারি।

আব্রাহাম;; ব্যাটা, তুই এক কাজ কর। তুই না তোর হাতে চুড়ি পরে বসে থাক।

আব্রাহামের কথা শুনতেই ফোনের ওপর পাশ থেকে আশফাক চিল্লিয়ে ওঠে রাগে।

আব্রাহাম;; আস্তে আস্তে। চুড়ি পড়তে কেনো বলেছি জানিস কারণ তুই নিসন্দেহে একটা কাপুরুষ তাই তো মেয়েদের আশ্রয় নিস। তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিস।

আশফাক;; হুমকি টা সত্যে পরিণত হলে কি হবে একবারও ভাবতে পারেন কি আপনি!

আব্রাহাম;; নিজের মরণ কে এভাবে নিজেই ডেকে আনিস না আশফাক।

আশফাক;; দেখা যাক কি হয়।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। কারণ এই আশফাকের কথা আর সহ্য হচ্ছে না তার। তবে এই কথা বলার মাঝেই আব্রাহাম একটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে তা হচ্ছে কৌশল কে ডাক দিয়ে এনে দ্রুত আশফাকের লোকেশন ট্রেক করে ফেলেছে। কেননা আব্রাহাম যখন আশফাকের সাথে ফোনে কথা বলছিলো তখন তো অবশ্যই তার ফোনের লোকেশন অন ছিলো। কথা বলার বাহানার ছলে আর উষ্কানি মূলক কথার জালে ফেলে তাকে। আর এই সুযোগেই তার লোকেশন ট্রেক করে নেয়। এখন আব্রাহাম অনায়াসেই জেনে যাবে যে এই ছুপা রুস্তাম কোথায় আছে বা কি করছে। এবার আব্রাহাম দ্রুত দিয়ার সাথে অয়ন কে হস্পিটালে দিয়ে আসতে বলে। আর ইলা কে বাড়ি। তারপর যে জায়গায় আব্রাহাম গিয়েছে সেখানে চলে আসতে বলে।

জেকেট টা নিজের ওপর থেকে ছুড়ে গাড়ির পেছন সীটে ফেলে শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে গিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সীটে বসে। মাথার ওপর যেনো কেউ জ্বলন্ত কয়লা রেখে দিয়েছে এমন ভাবে রাগ ধরে আছে আব্রাহামের। আজ আশফাক কে হাতের কাছে পেলে কি যে করবে সে আল্লাহ মালুম।


অন্যদিকে আইরাতের দম যেনো যায় যায় অবস্থা। অনেক অস্থিরতা কাজ করছে তার মাঝে। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে। মাথার পাশ দিয়ে ঘামের বিন্দু বেয়ে বেয়ে পরছে। জোরে জোরে দম নিচ্ছে। আস্তে আস্তে চোখের পাতা খুলে ফেলে। নিজেকে আবিষ্কার করে একটা এলোমেলো ধুলোযুক্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন রুমে। একটা চেয়ারের ওপর বসে আছে সে তবে তার হাত-পা বাধা না। সবকিছুই ঠিক আছে। শুধু বসে আছে সে। মাথার ঠিক ওপরেই একটা হলুদ রঙের বাতি আছে। সেটা জ্বলছে নিভু নিচু ভাবে। সেটাই পুরো ঘর কে আবছা আলোকিত করে রেখেছে। আইরাত সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝে ওঠে। তাকে নিশ্চিত অজ্ঞান করার মেডিসিন দিয়ে অজ্ঞান করে তারপর এখানে বসিয়ে রেখে গিয়েছে। সবার আগে আইরাতের হাতটা যায় নিজের পেটের ওপর। এক হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপালের ঘাম গুলো মুছে ফেলে আর ভার ভারি দম ছাড়ে। থেকে থেকেই কিছুটা কাশি দিয়ে ওঠছে। এক হাত পেটের নিচের অংশে ধরে চেয়ার থেকে আস্তে করে উঠে দাঁড়িয়ে পরে আইরাত। ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে গিয়ে রুমের দরজার কাছে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দরজাতে আস্তে করে বার কয়েক বারি দেয়।

আইরাত;; এখানে কি কেউ আছেন? দরজা খুলুন প্লিজ। আমার, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্লিজ কেউ দরজা খুলুন। কেউ কি আছেন?এখানে কি কেউ আছেন? প্লিজ একটা বার কেউ দরজা খুলে দিন।

বেশ কয়েক বার ডেকেও বাইরে থেকে কোন সাড়াশব্দ পায় না আইরাত। আব্রাহামের কথা খুব করে মনে পরছে। দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব না তাই সে গিয়ে আবার আগের চেয়ারে আস্তে করে বসে পরে। আশে পাশে কেমন অগোছালো প্রকৃতির সবকিছু। বেশ ভয়ও লাগতে শুরু করলো এবার আইরাতের। আইরাত আর না পেরে এক সময় হুহু করে কেঁদেই দেয়।

আশফাক আইরাত কে ধরে এনেছে তার নিজেরই এক বাড়িতে। তবে তা বেশ পুরনো। আশফাক নিজেই এই বাড়িতে এসেছে কমপক্ষে তিন-চার বছর পরে। নিজের ওই বাড়ির হলরুমে বসে বসে একের পর এক ঢকঢক করে মদ খেয়ে যাচ্ছে সে। আর আইরাত কে বন্ধ করে রেখেছে ওপরের এক রুমে। দীর্ঘদিন কেউ এই বাড়িতে না থাকার ফলে আর সেই সাথে পরিষ্কার না করার ফলে ধুলো-বালি সব জমে এক হয়ে গেছে।


আব্রাহাম এসে পরে আশফাকের বাড়ির সামনে। এসেই কপাল কুচকে তাকায়। এটাকে ভুতুড়ে বাড়ি বললেও কম হবে না। বাড়ির বাইরে বুলডগের মতো দু-দুটো কালো গার্ড দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কিছু না বলেই আবার নিজের গাড়িতে উঠে পরে। গাড়ি বেশটুকু পিছিয়ে নেয়। পিছিয়ে নিয়েই আবার হাওয়ার বেগে গাড়ি স্টার্টআপ দিয়ে সামনের দিকে ছুটতে লাগে। গাড়ি এতোই জোরে সামনে এগিয়েছে যে এই দুজন গার্ডের আর কিছু করার সাহস বা গাড়ির সামনেই যাওয়ার দমে ধরেনি। তারা সোজা সামনে থেকে সরে এসে পরে। আর আব্রাহাম বাড়ির মেইন গেট একদম ভেঙে চৌচির করে ভেতরে ঢোকেছে। গেইট আর আস্তো নেই। গগন কাপানো বিকট শব্দে বাড়ির ভেতরে আশফাকের হোস আসে। শব্দ টা এতোই জোরে হয়েছে যে তা আইরাতের কান অব্দিও পৌঁছে গেছে। তবে সে কিছু না বুঝে শুধু নিজের আশেপাশে তাকাতাকি করে। বাড়ির ভেতরে আরো আশফাকের কিছু চেলাটেলা ছিলো। তারা আব্রাহামের দিকে এগিয়ে গেলে আব্রাহাম রিভলবার বের করে সব কটা তাদের দেহে ঢুকিয়ে দেয়। আশেপাশে কোন দিকে তোয়াক্কা না করে একদম বাড়ির ভেতরে চলে যায়। হলরুমে এসে দেখে আশফাক মদ গিলতে ব্যাস্ত। তবে হলরুমে আসার আগে আব্রাহাম তার হাতে একটা লোহার লম্বাটে দন্ড নিয়ে আসে। যা মূলত বাড়ির গেইটেরই একটা অংশ ছিলো। আশফাক আব্রাহাম কে দেখে একটা শান্ত চাহনি দেয়।

আব্রাহাম;; আইরাত কোথায়?

আশফাক;; আরে আছে আছে। এতো হাইপার কেনো হচ্ছেন!

আব্রাহাম;; দেখ আমি নিজেকে খুব খুব খুব বেশি সংযত রেখেছি সেই জন্যই এখন অব্দি তুই নিঃশ্বাস নিতে পারছিস। আমি আমার আগের রুপ কে ফিরিয়ে আনতে চাই না। নয়তো তা মোটেও তোর জন্য সুবিধে জনক হবে না। এই বিজনেস পার্টনারশিপ নিয়ে যদি তোর সাথে আমার রেশারেশি হতো তাহলে তা মিটমাট করে নেওয়া যেতো কিন্তু এখন কথা আমার পরিবারের ওপর দিয়ে এসেছে। এনেছিস তুই। আমাকে বাধ্য করিস না আশফাক। সত্যি করে বল। আর শেষ বারের মতো জিজ্ঞেস করছি তোকে যে আমার আইরাত কোথায় আছে?

আশফাক;; আরে রিলেক্স মিস্টার আব্রাহাম চৌধুরী। আছে আপনার অনাগত সন্তান দের মা। কিছু হয়নি আপনার বউ এর। ঠিকই আছে এখনো মরে নি……………..

ব্যাস এইটুকু কথাই আশকাফের বলার সৌভাগ্য হয়। কেননা এইটা বলার সাথে সাথেই আব্রাহাম এক হিংস্র রকমের গর্জন দিয়ে তেড়ে এসে হাতে থাকা লোহার রড টা সোজা আশফাকের গলার শ্বাসনালি বরাবর ঢুকিয়ে দেয়। মূহুর্তেই পরিস্থিতি সব শান্ত আর আশফাক নিজেও। তার গলাতে লোহার দন্ড টা পুরো ঢুকিয়ে দিয়ে আব্রাহাম রাগে ফুসতে লাগে। তার কপালের রগগুলো কেমন ফুলে ওঠেছে। হাতের রগগুলোও জ্বলজ্বল করছে। দাঁত গুলো কটমট করে আশফাকের দিকে তাকিয়ে আছে। আশফাক এখন শান্ত কেননা আব্রাহামের করা আঘাতে সাথে সাথেই সে মরে গেছে। আব্রাহাম তো এখন পুরো পুরি অন্ধ, রাগে অন্ধ হয়ে গেছে এখন। লোহার দন্ড টা আশফাকের গলা থেকে টেনে তুলে আবার আগের মতোই শ্বাসনালিতে আঘাত করে। এভাবে আব্রাহামের হাতে যতো কোলায় বারেবার আঘাত করেই গিয়েছে। একটা সময় আশফাকের গলা-ঘাড়ের মাংশ, হাড়, রগ সব ছিড়ে যায়। ঠিক যেনো দেহ থেকে মুন্ডু ছিড়ে নিচে পরে যাওয়ার মতো বাজে, বিভৎস দৃশ্য। আব্রাহাম রডটা তুলে নিচে ছুরে মারে। রাগ কমেছে তার। আর এখন তাকে কমাতেই হবে কেননা আইরাতের সামনে তার এই অবস্থায় যাওয়া যাবে না। এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আব্রাহাম আশফাকের দিকে।

আব্রাহাম;; এর জন্যই সবসময় নিজের অকাদ অনুযায়ী মানুষের সাথে টক্কর নিতে হয়।

এটা বলে আব্রাহাম এসেই পরতো কিন্তু তার চোখ যায় আশফাকের পকেটের দিকে। একটা চাবির মতো কিছু ঝুলছে। তা হাতে নিয়ে দেখে একটা ০৮ নাম্বার রুমের চাবি। আব্রাহাম বুঝলো যে এটাই আইরাত যে রুমে আটকে আছে সেই রুমের চাবি। সিড়ি বেয়ে দ্রুত ওপরের রুম গুলোর দিকে এগিয়ে যায়। ১ ২ ৩ সব রুমই আসে তবে ৮ আর আসে না। আব্রাহাম তো খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কিন্তু পায় না। আব্রাহাম ভাবে এখানে আইরাত নেই তাই আবার নিচে চলে যেতে ধরে। আর ওদিকে আইরাতও বুঝে যে হয়তো এখানে কেউ একজন এসেছে। আইরাত তো আর এই বদ্ধ রুমে থাকতে পারছে না, দম যেনো এই গেলো চলে। তাই আইরাত বহু কষ্টে চিল্লিয়ে ওঠে “কেউ আছেন!” বলে। আব্রাহাম শুনতে পায় আইরাতের কন্ঠ। তা শুনেই যেনো অশান্ত বুকে একরাশ শান্তি এসে ভর করে। দ্রুত ছুটে যায়। দেখে ৬ নাম্বার রুমের শেষেই একটা মোড়ের মতো আসে আর তারপরেও ৭/৮ রুম আছে। ৮ নাম্বার রুম চাবি দিয়ে দিয়ে খুলে ফেলে। আর ভেতরে যেতেই দেখে আইরাত হাপিত্তেশ করছে। ঘেমে গেছে সে। জোরে দম ত্যাগ করছে শুধু। আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের কাছে যায়। তার চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে সরিয়ে দিয়ে মুখে অজস্র চুমু খেতে থাকে। পরিবেশ ভালো না আর এই জায়গা আইরাতের জন্য সেইফও না তা বুঝতে পেরে আব্রাহাম আইরাত কে আস্তে করে দাঁড় করিয়ে নেয়। তারপর ওপর থেকে নিচের দিকে সিড়ি বেয়ে নামতে শুরু করে। নেমে হলরুমে আসতেই আইরাতের চোখ কপালে উঠে যায়। কেননা হলরুমে শুধু রক্ত আর রক্ত। আইরাতের মাথা যেনো ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা। আইরাত যেই না নিজের মাথা ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকাতে যাবে তখনই আব্রাহাম নিজের একহাত দিয়ে তার চোখ গুলো ধরে আটকিয়ে দেয়। কারণ আইরাতের থেকে ঠিক কয়েক হাত পেছনেই আশফাকের ক্ষত-বিক্ষত নিথর দেহ টা চেয়ারের ওপর পরে রয়েছে। যা দেখা আইরাতের জন্য অবশ্যই মঙ্গল জনক হবে না। আইরাতকে নিয়ে হলরুম পেরিয়ে বাইরে এসে পরলে আব্রাহাম নিজের হাতটা তার চোখের ওপর থেকে সরিয়ে ফেলে। তবুও আইরাত খেয়াল করে দেখে কতোগুলো লোক মাটিতে পরে পরে ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। কিন্তু আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ওয়ালা ভাব নিয়ে বলে….

আব্রাহাম;; জাস্ট ইগনোর দ্যাম বেবিগার্ল।

আইরাত কে নিয়ে সোজা বাইরে এসে পরে। আর যেই গাড়ি দিয়ে আব্রাহাম এসেছে তা দিয়ে যাতায়াত করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ গাড়ির হুলিয়া আব্রাহাম গেইট ভেঙে পুরো পালটিয়ে দিয়েছে। তবুও আব্রাহাম ওই গাড়ির কাছে গিয়ে গাড়ির সামনের দরজা খুলে দেয়। সেখানে সীটের ওপর আইরাত কে বসিয়ে দেয়। তারপর একটা পানির বোতল বের করে আইরাতের চোখে-মুখে দিয়ে দেয়। এতোক্ষণে গিয়ে আইরাত যেনো একটু স্বস্থি পায়। তার মিনিট কয়েক পর অয়ন, কৌশল আর রাশেদ আসে গাড়ি নিয়ে। সাথে দিয়াও এসে পরে। দিয়ার মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ করা।

আইরাত;; জামাইজান!

আব্রাহাম;; হ্যাঁ জানপাখি।

আইরাত;; আমি বাড়ি যাবো। আমি আর নিতে পারছি না এইসব কিছু। খুব বেশি খারাপ লাগছে আমার।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কে বলেছিলো বাইরে আসতে। তুমি আমায় বলতে যে কি কি লাগবে আমি সেইসবের বন্যা ভাসিয়ে দিতাম। এই সময়ে কেউ বাইরে যায় বুঝো না তুমি জান!

আইরাত;; আমি কি জানতাম নাকি যে এমন কিছু একটা হবে।

আইরাতের ঝাড়ি ওয়ালা মুখ দেখে এতোকিছুর মাঝেও আব্রাহাম ফিক করে হেসে দেয়।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ তাও ঠিক।

রাশেদের কাছ থেকে গাড়ির চাবি নিয়ে নেয় আব্রাহাম। আর তাদের এইসব আধো মরা মানুষ কে নিয়ে যেতে বলে। যারা বেঁচে আছে তাদের হস্পিটালে নিয়ে যেতে বলে আর যারা মরে গেছে তাদের কবরস্থানে। অয়ন কে ভেতরে আশফাকের লাশের ব্যাপারে সবকিছুই আব্রাহাম বলে এসে পরে। বাকি টুকু সামলানো অয়ন আর রাশেদের ব্যাপার। গাড়ি দিয়ে আব্রাহাম-আইরাত, কৌশল আর দিয়া এসে পরে। পেছনের সীটে আইরাতের দুপাশে আব্রাহাম আর দিয়া বসে আছে আর সামনে ড্রাইভ করছে কৌশল। ভালোই ভালোই যাচ্ছিলো তারা সবাই কিন্তু এবার বাধে আরেক বিপত্তি। বেশ বড়ো বিপত্তি।

।#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#Season_2
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৪

গাড়ি দিয়ে যাচ্ছিলো সবাই। তবে যেতে যেতেই হঠাৎ করে আইরাত দিতে ওঠে এক গগন বিদারি চিৎকার। সবাই বেশ অবাক। আইরাতের চিৎকারে কৌশল ভরকে গিয়ে দ্রুত গাড়ির ব্রেক কষে দাঁড়ায়। দিয়া চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে। আব্রাহামও হাইপার হয়ে পরে। কিন্তু এদিকে তো আইরাতের নাজেহাল অবস্থা। এক হাত কোমড়ের পাশে রেখে আরেক হাত পেটের নিচের অংশে ধরে ব্যাথায় কুকড়ে ওঠে।

দিয়া;; আইরু, আইরু কি হলো?

আব্রাহাম;; লেবার পেইন উঠেছে। কৌশল দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করে হস্পিটালের দিকে নে।

কৌশল কোন রকমে মাথা দু’বার দুলিয়ে দ্রুত গাড়ি আবার স্টার্ট দেয়। আইরাতের একহাত আব্রাহাম ধরে রেখেছে। তার বুকে আইরাত নিজের মাথা এলিয়ে দিয়েছে। দরদর করে ঘেমে যাচ্ছে। আর দিয়া কোন রকমে আইরাত কে বুঝিয়ে যাচ্ছে। আইরাতের বাম হাতের তালু বারবার ঢলে যাচ্ছে।

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল প্লিজ একটু ধৈর্য ধরো। কিচ্ছু হবে না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। একটু সহ্য করো প্লিজ।

দিয়া;; কিন্তু জিজু ডেলিভারির ডেট তো আরো কয়েক দিন পর ছিলো তাই না!

আব্রাহাম;; অনেক সময় ডেলিভারি ডেটের আগে বা পরেও পেইন শুরু হয়।

আইরাত এবার আর না পেরে ঢুকরে কেঁদে দেয়। সব যেনো ছিড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়। আরেক দফা চিল্লিয়ে ওঠে। আব্রাহামের এখন আর সহ্য হচ্ছে না এই পরিস্থিতি। যেখানে আইরাত সামান্য একটু ব্যাথা পেলেই আব্রাহাম তাকে বাচ্চার মতো কেয়ার করতো সেখানে এখন আইরাত ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। আব্রাহাম শুধু কোন রকমে সামাল দিয়ে যাচ্ছে তাকে। মন যেনো আর শান্ত নেই। এক উত্থাল-পাতাল বয়ে যাচ্ছে।

আইরাত;; আব.. আ আব্রাহাম আম আমি আ আর পারছি নাহ। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।

আব্রাহাম;; জান আমার প্লিজ একটু সহ্য করো। এসে পরেছি আমরা। কিচ্ছু হবে না কারো। কৌশল জলদি যা।

কৌশলও কম জোরে গাড়ি ধাওয়া করছে না। কিন্তু তাড়াতাড়ি তে করা কাজই আসলে ভালো না। পথ যেনো আর ফুরাতেই চাচ্ছে না। তারও পনেরো কিংবা বিশ মিনিট পর গাড়ি এসে থামে হস্পিটালের সামনে। আব্রাহাম ফোন করে ডক্টর কে আগেই বলেছে যে লেবার পেইন শুরু হয়েছে আইরাতের। তাই ডক্টর সেই অনুযায়ীই সবকিছু ঠিক করে রেখেছে। গাড়ি থামলে আইরাত কে পেছন থেকে ধরে দিয়া। দিয়ার ওপর হালকা ভাবে হেলান দিয়ে চোখে বন্ধ করে এক প্রকার কাঁদছে আইরাত। আব্রাহাম দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে। গাড়ির দরজা খুলে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে…

আব্রাহাম;; বেবিগার্ল! হাত দাও আমার দিকে।

আইরাত;; ক ক কি কর করছেন কি আপনি?

আব্রাহাম;; হাত দাও। তুমি তো আর হাঁটতে পারবে না। হাত দাও।

আইরাত;; আব্রাহাম আম আমি য যেতে পারবো।

আব্রাহাম;; জানপাখি হাত দাও, এইটুকু তুমি হেঁটে যেতে পারবে না। হাত দাও আমায়। সময় কম।

আইরাত;; কিন্তু….

এই অসময়ে আইরাতের এমন না না আর শুনতে না পেরে আব্রাহাম তাকে দেয় এক ধমক। আইরাত কেঁপে ওঠে সাথে আরো কেঁদেও দেয়। একটা হাত আব্রাহামের হাতের ওপর রেখে আস্তে করে গাড়ি থেকে কিছুটা বাইরে বের হয়। তারপর আব্রাহাম ধীরে আইরাত কে কোলে তুলে নেয়। তবুও এতে আব্রাহামের মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা যায় না, সে আগের মতোই থাকে। দিয়াও গাড়ি থেকে নেমে ছুটে তাদের পিছু পিছু যেতে লাগে। হস্পিটালের ভেতর আব্রাহাম কে দেখা মাত্রই নার্স আর ডক্টর এগিয়ে যায়। একটা বেড এনে তাতে আইরাত কে শুইয়ে দেয়। একটা রুমে আইরাত কে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে আইরাতের ওয়াটার ব্রেক করে ফেলে। ব্যাথা যেনো তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। আইরাতের গায়ের জামা টা কোন রকমে খুলে একটা ঢিলা জামা পরিয়ে দেওয়া হয়। চুলগুলো গুটিয়ে এক করে একটা ব্লু কালার হেয়ার ব্যাগের ভেতরে বেধে দেয়৷ তারপর আবার সেই রুম থেকে আইরাত কে বেডে শুইয়ে বের করে আরেক রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। অর্থাৎ যেখানে মূলত ডেলিভারি হবে। যাওয়ার সময় আব্রাহাম সোজা আইরাতের বেডের কাছে এসে পরে। আইরাত তো শুধু ছটফট করে যাচ্ছে ব্যাথায়। তার হিতাহিত জ্ঞান নেই বললেই চলে। আব্রাহামের হাত সে এতো টাই শক্ত ভাবে ধরেছে যে ছাড়ার আর নামগন্ধ নেই। আব্রাহাম শুধু তাকে সাহস জোগানোর জন্য এটা ওটা বলে যাচ্ছে কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আব্রাহাম নিজেও অনেকটাই বেশি নারভাস। OT তে আইরাত কে ঢোকাতে যাবে কিন্তু আইরাত কোন ক্রমেই যেনো আব্রাহামের হাত ছাড়ে না। সে আব্রাহাম কে ছাড়া যাবেই না। তখন ডক্টর বলে ওঠেন….

ডক্টর;; স্যার প্লিজ আপনিও কেবিনের ভেতরে আসুন নয়তো ম্যাম পারবে না। প্লিজ স্যার আসুন।

অতঃপর আব্রাহাম নিজেও আইরাতের সাথে কেবিনে ঢুকে পরে। আইরাত কে পজিসন মোতাবেগ শোয়ানো হয়। ওয়াটার যেহেতু তার ব্রেক করেছে তাই ব্যাথা টা ক্রমেই ধীরে ধীরে বাড়ছে। আব্রাহাম ভয় পাচ্ছিলো এটা নিয়ে যে যদি আইরাতের কাটাছেঁড়া করতে হয়। কিন্তু ডক্টর সবকিছু দেখে বুঝলো যে কাটাছেঁড়া করতে হবে না অর্থাৎ সিজার করতে হবে না। নরমাল ভাবেই ডেলিভারি করা সম্ভব। আইরাতের মাথার কাছে আব্রাহাম তার এক হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে-প্রাণে আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে। দুপাশে দু-তিনজন নার্স এসে দাঁড়ায়। আর ডক্টর নিজের কাজ করতে লাগে। এদিকে আইরাত আব্রাহামের হাত ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।


বাড়ির প্রত্যেকটা লোক এসে হস্পিটালে হাজির। সবার মাঝে বেকুলতার ছাপ স্পষ্ট। অধীর আগ্রহে হস্পিটালের বাইরে দাঁড়িয়ে বা বসে রয়েছে সবাই। যখন আর এক বিন্দুও শক্তি আইরাতের মাঝে বাকি নেই,, চোখ যেনো তার নিভু নিভু তখন আব্রাহাম আইরাতের মাথার সাথে নিজের মাথা ঠেকিয়ে রেখে দেয়। তখনই একদম শান্ত পরিবেশের মাঝে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায়। পুরো হস্পিটাল কেঁদে কেঁদে মাথায় তুলে নিয়েছে। বাইরের সবাই শুধু কেবিনের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। একটা বাচ্চাকে নিয়ে টাওয়ালে মুড়িয়ে একজন নার্সের কাছে দিয়ে দেয়। সে বাচ্চাকে নিয়ে চলে যায়। পরমূহুর্তেই আরেকটা বাচ্চা কে আরেকজন নার্সের কাছে দিয়ে দেয়। আইরাতের এখনো তেমন কোন হুস নেই। প্রচন্ড দ্রুত গতিতে শ্বাস নিচ্ছে সে। বেশ ভালোই ব্লিডিং হয়েছে। তবে এতে আইরাতের ইনশাআল্লাহ কোন ক্ষতি হবে না। সব ঠিকই আছে আর এইটুকু তো হওয়ারই ছিলো। ডক্টর আইরাত কে ঠিক ঠাক করে দেয় একদম নিট এন্ড ক্লিন। অতঃপর হাত থেকে গ্লাপস আর মুখ থেকে মাস্ক খুলতে খুলতে বলে ওঠেন….

ডক্টর;; সব বাচ্চাই সুন্দর। আল্লাহ’র দেওয়া বিশেষ উপহার হয়। কিন্তু সত্যি বলতে কি এত্তো সুন্দর বাচ্চা আমি আমার ডক্টর লাইফে কখনোই দেখি নি এর আগে। অনেক অনেক কংগ্রেচুলেশন স্যার & ম্যাম আপনাদের টুইন বেবি হয়েছে। একজন ছেলে আর একজন মেয়ে।

আইরাত মুচকি হাসে। হালকা করে মাথা তুলে দেখে আব্রাহাম আইরাতের হাতটা অনেক শক্ত করে ধরে মাথার কাছে তার মাথা নামিয়ে রেখেছে। এর মাঝেই একজন নার্স আসে। আইরাত খেয়াল করে দেখে নার্সের কোলেই দুজন বাচ্চা। তবে নার্স টা দুজন বেবি কে একসাথে নিতে গিয়ে কেমন হিমশিম খাচ্ছে। ডক্টর দ্রুত একজন কে নিজের কোলে নিয়ে নেয়। উঠে বসার মতো অবস্থায় আইরাত নেই। কিন্তু এখন কি আর সেই খেয়াল আছে তার। আইরাত উঠে বসতে ধরলে আব্রাহাম তাকে ধরে তুলে বসিয়ে দেয়। পিঠের পেছনে একটা বালিশ দিয়ে দেয়। ছেলে-মেয়ে উভয় কেই আইরাতের কোলে দেওয়া হয়। দুপাশে দুজন কে নিয়ে বসে আছে আইরাত। মনে হচ্ছে এর থেকে বেশি সুখময় শান্তিময় সময় আর নেই। এখন এই সময় টুকু তাদের একা থাকতে দেওয়াই ভালো তাই নার্স আর ডক্টর বাইরে বের হয়ে পরে। মিনিট কয়েক পর বাকি সবাই কে কেবিনের ভেতরে যেতে বলে। আইরাত তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; জামাইজান!

আব্রাহাম;; হুম।

আইরাত;; আপনি খুশি নন!?

এবার আব্রাহাম চোখ তুলে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হঠাৎ তার চোখের কোণে পানি জড়ো হয়ে যায়। আইরাত অবাক হয়ে তাকায়। এবার আব্রাহাম আর ঠিক থাকতে পারে না। আব্রাহাম কেঁদে দেয়। আইরাত কে পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে।

আব্রাহাম;; খুশি রে আমার জানপাখি। আমি অনেক খুশি। একেবারে বাধভাঙ্গা খুশি আজ আমি। আমার বিশ্বাস হয় না। আমার কি আদৌ এতো টা সুখ পাওনা। আমার বলার ভাষা নেই। পৃথিবীর সবথেকে ভাগ্যবান আমি আজ।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহামের চোখে অশ্রুবিন্দু মুক্তোর ন্যায় ছলছল করছে আর মুখে ঝুলছে বিশাল মাপের হাসির রেখা। এবার আব্রাহাম বেবিদের দিকে তাকায়। আসলেই নবজাতক সুন্দর। দুধে-আলতা গায়ের রঙ। এত্তো গোলুমোলু। তাদের থাই, হাত আর গালগুলো বেশি মোটাসোটা। ঠোঁট গুলো এত্তো ছোট্ট আর গাঢ় গোলাপি। চোখের পাপড়ি গুলো কি যে কিউট। ঠোঁটের ঠিক ওপরেই ছোট্ট একটা বুচো নাক। মেয়ের চুলগুলো কালো আর ছেলের চুলগুলো হালকা ব্রাউন কালারের। দুজন এতোটাই দেখতে এক রকম যে এদের চেনার উপায় নেই যে কোনটা ছেলে আর কোনটা মেয়ে। আইরাত মেয়ে কে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে দেয়। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; আরে কি হলো তাকিয়ে আছেন কেনো? ধরুন।

আব্রাহাম আমতা আমতা করে বলে..

আব্রাহাম;; আব… না মানে আমি নিবো মানে যদি ব্যাথা পায়।

আইরাত;; পাবে না আপনি ধরুন।

এর মাঝেই মেয়ে কেঁদে দেয়। তার কান্না দেখে আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে কোলে নেয় তাকে আর সাথে সাথেই মেয়ের কান্না বন্ধ। আইরাত হেসে দেয়।

আইরাত;; হুমম আমার বুঝা শেষ, মেয়ে হবে বাপের পাগল।

নিজের কোলের দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলে বৃদ্ধ আঙুল চুষছে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা আমি না কিছু বুঝলাম না।

আইরাত;; কি?

আব্রাহাম;; বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথেই খাওয়ার জন্য কান্না করে আর এই দুজন কিছুই না। একজন আঙুল চুষছে আর একজন চুপ।

ছেলে মেয়ে দুজন কে একসাথে নিয়ে বসলে দুজনেই একসাথে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। জ্বলজ্বল করছে তাদের চোখগুলো।

আব্রাহাম;; তোমার মতোই হয়েছে।

আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; একদম গোলুমোলু।

ব্যাস এটা বলার সাথে সাথেই বাচ্চাদের কান্না শুরু। কানের পর্দা যেনো ফেটে গেলো। বুঝলো ক্ষিদে পেয়েছে। বাকিরা সবাই কেবিনে ঢুকে। এখন কমপক্ষে বাটিতে করেই দুখ নিয়ে খাওয়াতে হবে কেননা আইরাতের শরীর ভালো না আর সেই অবস্থায় সে নেই। সবাই তো বাচ্চাদের পেয়ে খুশিতে পাগল। এক্কেবারে দিশেহারা। আর আব্রাহাম ব্যাস্ত আইরাত কে নিয়ে। আইরাত এর টেক কেয়ার সে নিজেই করে। আজ না হলেও হয়তো আগামীকাল আইরাত কে হস্পিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে। আব্রাহাম-আইরাত বসে ছিলো। আইরাতের কোমড়ের এক সাইডে হাত রেখে দিয়েছে সে। সবাই কে বাচ্চাদের নিয়ে মাতামাতি করতে দেখে আব্রাহাম আইরাত তাদের মাথা একসাথে ঠেকিয়ে হাসিমুখে তাদের সবার দিকেই তাকিয়ে থাকে। এই গোটা পৃথিবীর সবথেকে বেশি সুখময় মূহুর্ত যেনো এটাই। শুরু হলো আজ থেকে আব্রাহাম-আইরাতের জীবনের আরেক নতুন ধাপ।





চলবে~`



চলবে`~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here