#’বাতাসা’❤
|পর্বঃ ১১|
বিষণ্ণতায় ঘেরা সন্ধ্যা। বিষণ্ণ মন নিয়ে বিছানায় বসে আছে দিশা। চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে। বিছানার চাদর কিছুক্ষণ পর পর খাঁমছে ধরছে সে। দরজায় মৃদু আঘাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দু’হাতে দু’চোখ ভালো ভাবে মুছে নিলো দিশা। চশমা পড়ে লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো। মুখে মেকি হাসি ফুটিয়ে দরজা খুলতে পা বাড়ালো। ভেবেছিল, হয়তো আব্বু, আম্মু অথবা ভাইয়া এসেছে। কিন্তু না, দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে জেন। যাকে দেখে মেকি হাসিটাও উবে গেল দিশার। ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো। কঠোর কণ্ঠে বললো, ‘কেন এসেছেন এখানে?’
জেন তড়িৎ গতিতে দিশার হাত দু’টো নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে নিলো। চোখে তারও পানি ছলছল করছে। দ্রুত করুণ গলায় বলে, ‘আমার সাথে এমন করছো কেন দিইইসা? আমার কষ্ট হচ্ছে। প্লীজ এমন করো না।’
নাক টেনে অন্যদিকে ফিরে তাকালো দিশা। আগের মতোই বললো, ‘কথা শেষ হলে যেতে পারেন।’
জেন মৃদু ধমকে বলে উঠল এবার, ‘দিইইসা? এমন করে কষ্ট দিচ্ছো কেন আমায়?’
‘আমার কি কষ্ট হচ্ছে না? আপনার থেকেও দ্বিগুণ হচ্ছে। আচ্ছা, আপনি এত নির্দয় হয়ে গেলেন কবে জেন? আমাকে রেখে লন্ডন যেতে পারবেন আপনি?’
‘আমি তো এখানে সারাজীবনের জন্য আসিনি দিইইসা। যেতে তো হবেই। আর শানও তো যাচ্ছে আমার সাথে। ছুটির দিনেও এখানে আসবো তোমার সাথে দেখা করতে। তাছাড়া ফোনেও তো আমাদের যোগাযোগ হবে।’
দিশা যেন বুঝতেই চাইলো না কথাগুলো। কেঁদে দিয়ে বললো, ‘আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না জেন। প্লীজ যাবেন না। গেলেও আর কয়েকটা দিন থাকুন।’
দিশার হাত আরো শক্ত করে ধরলো জেন। বললো, ‘এটা কিভাবে সম্ভব? ফ্লাইটের টিকেট কাটা হয়ে গেছে। বুঝার চেষ্টা করো। ওখানে গিয়ে প্রতিদিন তোমার সাথে ফোনে কথা বলব আমি।’
হাত ছাড়িয়ে নিলো দিশা। শক্ত চোখে তাকালো জেনের দিকে। শান্ত কণ্ঠে বললো, ‘তাহলে আপনি আর কিছু দিন থাকবেন না?’
জেন আবারো দিশার হাত ধরে ব্যগ্র কণ্ঠে বললো, ‘দেখো দিইইসা, বোঝার চেষ্টা করো। আচ্ছা, তুমি কি ভয় পাচ্ছো? দেখো, আমি কখনো ছাড়বো না তোমাকে। তোমার জন্য আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি। মনে প্রাণে পালন করছি। নামায পড়ছি। তোমাকে জীবনের থেকেও ভালোবাসি আমি। কিভাবে ছেড়ে যাবো তোমায়? বিশ্বাস করো, কখনো ছেড়ে যাবো না তোমাকে। ভয় নেই।’
দিশা শুনলো না। কানেই নিলো না কথাগুলো। এক ঝটকায় নিজের হাত ছাড়িয়ে দরজা বন্ধ করে ফেললো। দরজার সাথে ঠেশ দিয়ে ফ্লোরেই বসে পড়ল। সাথে সাথে দু’ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল জেনের চোখ থেকে। দরজায় আস্তে আস্তে আঘাত করে মিনতি করছে দিশার কাছে। যেন এমন না করে তার সাথে। একটু যেন হাসি-মুখে কথা বলে। হৃদয়ে পাথর নিয়ে দিশাও চুপ করে আছে। অভিমানে টুইটম্বর সে। জেন কি পারে না দু’টো দিন এখানে থাকতে? দিশার যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিভাবে জেনকে বিদায় দেবে সে? আদৌ কি পারবে?
______________
চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা