সঞ্চারিণী পর্ব -১৮+১৯

সঞ্চারিণী
আফনান লারা

১৮.
-‘শাওন ঠিকঠাক কাজ করে তো?নাকি সারাদিন ধরে ধরে ঝাড়ি দেয় সবাইকে?’

আন্টির কথায় মেধার খুব হাসি পেলো।যাকে বলে বুক ফাটা হাসি।কিন্তু শাওনের ভয়ে হাসিটাকে থামাতে গিয়ে একেবারে কাশি উঠে গেলো তার।তৃনা কাজ ফেলে এসে এক গ্লাস পানি দিয়ে গেলো ওকে।পানিটা খেয়ে মেধা বললো,’শাওন স্যার ঝাড়ি দেয়না’

শাওনের মা এবার জিজ্ঞেস করলেন মেধার বাসা কোথায়।কিসে চাকরি করে।

মেধা তার বাবার পরিচয় দিতেই উনি চিনে ফেললেন।একটু কাছে এসে উৎকণ্ঠা হয়ে বললেন,’তাহলে তুমি ফেরদৌস ভাইয়ের মেয়ে।বাহ বেশ ভালো।আমি তো ভাবতেও পারিনি তার মেয়ে তারই মতন এরকম সাহসী হবে।আসলে এসব চাকরি করা সবার সাধ্য না।উদ্যমী,
সাহসীরাই পারে দেশের জন্য লড়াই করে যেতে।আমি তো গর্ব করে বলি আমার শাওন ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসার।তোমার পরিবার ও নিশ্চয় তোমায় নিয়ে গর্ব করে।যাই হোক,তোমার বাবা -মাকে নিয়ে অবশ্যই আসবে আমাদের বাসায়।দাওয়াত দিলাম।আসতেই হবে তা নাহলে শাওনকে দিয়ে আনাবো’

-‘আসলে আন্টি,বাবা মা আর আমার ছোটবোন কাল সকালেই পটুয়াখালী চলে যাবে।বাবার ট্রান্সফার হয়েছে তো তাই।’

-‘সেকি!তুমিও যাবে নাকি?’

-‘নাহ।আমার তো যাওয়া সম্ভব না।মিঃ রেদোয়ানের কেস এখনও পেন্ডিং হয়ে আছে।’

-‘ওহ আচ্ছা।তো একা থাকবে কি করে?’

-“আমার ফুফাতো বোন এসে থাকবে।তাছাড়া একা থাকার অভ্যাস আছে আমার।আহামরি কিছুনা।’

শাওন রেডি হয়ে এসে দেখলো তৃনা আর ওর মা মিলে মেধাকে জমপেশ খাওয়াচ্ছে।মেধা শেষে কূল না পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।এক ছুটে শাওনের কাছে গিয়ে বললো,’খাওয়ানো উচিত উনাকে।উনার শরীর দেখেছেন?অপরাধী খুঁজতে খুঁজতে তার কি হালটাই না হলো’

তৃনা হেসে বললো,’শাওন নুডুলস দুচক্ষে দেখতে পারেনা।মিষ্টির ধারের কাছেও তাকে পাওয়া যায়না।মোট কথা এক্সট্রা মিষ্টি আর এক্সট্রা ওয়েলের তৈরি খাবার সে খায়না।

মেধা ভেঁংচি মারলো।সবাই দেখলেও শাওন দেখলো না।কারণ ওকে লুকিয়েই ভেঁংচি মেরেছে সে।তৃনা,আরিফাকে হাসতে দেখে শাওন যেইনা পেছনে তাকালো মেধা মুখ ঠিক করে থতমত খেয়ে বললো,’স্যার যাবেননা?দেরি হয়ে যাচ্ছে’

শাওন আর কথা বাড়ালোনা।চললো ওকে সাথে নিয়ে।কার গ্যারেজ থেকে বের করে আনার পর মেধা আজ আবারও শাওনের পাশের সিটটায় বসতে গিয়ে ওর থেকে ধমক খেলো।শেষে বিড়বিড় করে গালি দিয়ে পেছনের সিটে গিয়ে বসেছে সে।
শাওন সেই আগের মতন রশ্নিট সাথে কথা বলছিল।মেধা তার মাথাটাকে মাঝে বরাবর ঢুকিয়ে কয়েকবার চেক করলো কিন্তু কিছুই দেখলো না।শাওন গড়গড় করে কথা বলেই যাচ্ছে রশ্নির সাথে।মহাখালীতে এসে মেধা ফোন টিপা বাদ দিয়ে খেয়াল করলো শাওন ঝিমোচ্ছে।তা দেখে ওর চোখ কপালে উঠে গেছে।মাথা এগিয়ে এনে চেঁচিয়ে শাওনকে ঝাঁকিয়ে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললো সে।শাওন চোখ ঘঁষে বললো,’কি হয়েছে?’

-‘কি হয়েছে মানে?এমন জায়গায় এসে কেউ ঘুমায়?আপনি ড্রাইভিং করছেন এই মূহুর্তে, সেটা মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন?আপনি মরুন না আপনার অদৃশ্য প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে।কিন্তু আমার ক্ষতি ডেকে আনছেন কেন?স্যারকে বলবো আর কখনও যেন আপনার সঙ্গে আমাকে কাজ করতে না দেয়।যদি দেয় তো চাকরি ছেড়ে দেবো’

-“এই বিষয়ে স্যারের সাথে আমার ও কথা আছে। ঘুরে ফিরে তিনি সবসময় তোমাকে আমার সাথে রাখে এটা ঠিকনা।
আর আমি কখনও ড্রাইভ করার সময় ঘুমাইনা।কাল ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম বলেই হঠাৎ ঘুমে ধরলো’

-‘আজকে আপনার অফিসে আসা উচিত হয়নি।ছুটি নিয়ে নিতেন’

-‘আমার যত অসুখই হোক আমি ছুটি নেইনা।চুপচাপ বসে থাকো’

শাওন পকেট থেকে একটা চুইংগাম বের করে মুখে দিয়ে নড়েচড়ে বসলো।মেধা জানালায় হাত রেখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
-‘শাওনের এই অদৃশ্য প্রেমিকাটাকে দেখার খুব ইচ্ছে।তবে তার কাজকর্ম দেখা কিন্তু তাকে না দেখতে পাবার সাইন্সটা মাথায় ঢুকছেনা কিছুতেই।সে কি ইচ্ছে করেই নিজের থেকে আমার সামনে লুকিয়ে থাকছে নাকি তাকে দেখতে না পাবার পেছনে অন্য কারণ।যেহেতু শাওন স্যার বাদে আর পাঁচটা মানুষ তাকে দেখতে পায়না সেখানে আমি তার কাজ দেখতে পাই অথচ তাকে দেখতে পাইনা।আমার মনে হয় তাকে একদিন দেখতে পাবো।সেদিনের অপেক্ষায় আছি।আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্ন করবো?’

-‘না’

মেধার রাগ আরও বেড়ে গেলো।মুখের উপর না করার মানুষ একেবারে পছন্দ না তার।ইচ্ছে করছে সিটে একটা উষ্ঠা মেরে শ্যাওলা স্যারের নাক ফাটিয়ে দিতে।হাত মুঠো করে রাগ দমিয়ে নিলো সে।
রেদোয়ানের বাসা এসে গেছে।দরজা খুলে শাওনের আগেই চলে আসলো সে।শাওন একটু পরেই পৌঁছালো।আজকে রেদোয়ানের বাসার সামনের ভাঙ্গা লম্বা সরু কাঁচটা দেখছে সবাই।
সব কিছু বুঝতে পারলেও বাইরের এই আয়নাটা কেন ভাঙ্গা সেটা মাথায় ঢুকছেনা।রায়হান এসে কাগজ ধরিয়ে দিলো শাওনের হাতে।রেদোয়ানের ইনকাম ট্যাক্সের কাগজপত্র সব। তাতে যে অংক লেখা আছে, রেদোয়ানের ফুলদানি থেকে পাওয়া গুপ্তধন প্লাস করলে ইনকাম ট্যাক্স আরও বেশি হবার কথা।তার মানে সে ট্যাক্স দেওয়ার ভয়ে এত বড় ফুলদানি আনালো তারপর সেখানে লুকালো টাকা।বাহ!কি বুদ্ধি।এই বুদ্ধি নিয়ে শেষে কিনা মরলো।কি লাভ হলো?
যে ফুলদানিটা মিসিং সেটা এখনও পাওয়া গেলোনা।হিসেব মিলছেনা কিছুতেই।রেদোয়ানের বাসার ফ্রিজ থেকে সন্দেহ করার মতন কিছুই মিললো না।নিতু বমি করছে ওয়াশরুমে গিয়ে।রেদেয়ানের ফ্রিজে নাকি সব অক্টোপাস। অনেক মানুষেরই অক্টোপাস মাছ অনেক পছন্দের।কিন্তু নিতুর তার ঠিক উল্টো। দেশি মাছ ছাড়া বাহিরের কোনো মাছই সে খেতে পারেনা।খেতে পারা দূরে থাক, চোখের দেখা দেখলেও বমি এসে পড়ে ঠোঁটের দোরগোড়ায়।
মেধা ফ্রিজের সব ফলকে একটা ঝুঁড়িতে ঢেলে ছুরি দিয়ে একটা একটা করে কাটছে।এগুলোকেও পরীক্ষা করাতে পাঠাতে হবে।
শাওন ভাঙ্গা কাঁচটার সব হারানো অংশগুলো খুঁজছে নুহাশ আর রায়হানকে সাথে নিয়ে।
সাজিদ ওখান থেকে এসে মেধার সামনে বরাবর বসে বললো,’আপেল একটা খেয়ে দেখতে পারেন।আমি খেলাম।অনেক মিষ্টি’

মেধা চোখ তুলে সাজিদের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য করে হাসলো তারপর বললো,’এমন ও হতে পারে আপেল খেয়ে রেদোয়ান বা তার ওয়াইফ আশার মৃত্যু হয়েছে’

সাজিদ হাত ভাঁজ করে মাুখটা একটু এগিয়ে নিয়ে বললো,’উহু!তাদের শরীর রক্তাক্ত ছিল,ক্ষত ছিল।বিষক্রিয়া হতে পারেনা’

-‘যদি হয়?’

-‘হবেইনা।আমার এক্সপেরিয়েন্স আছে।এরকম কেস অনেক দেখেছি’

মেধা দাঁত কেলিয়ে বললো,’তাহলে তো বলতে পারবেন কে আসল খুনি?’

-“আমি জানি আসল খুনি কে?কিন্তু বলবোনা।কারণ আমি দেখতে চাই শাওন স্যার সঠিক মানুষটাকে খুঁজে বের করতে পারে কিনা।’

মেধা আপেলের টুকরো গুলোকে প্যাকেট করতে করতে বললো,’অনেক সময় নিজের বীরত্ব দেখিয়ে মনজয় করে নিতে হয়।
আমার মনে হয় আপনার কাছে এটা মোক্ষম সুযোগ’

-“শাওন স্যার খুঁজুক।তার দ্বারা যদি ভুল হয় তারপর নাহয় আমি সামনে দাঁড়াবো’

মেধা যেতে যেতে বললো,’ফ্লার্টিং করায় আপনার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে।ফ্লার্টিং করতে এমন কিছু মিথ্যে ব্যবহার করবেন যেটা কিনা প্রয়োজনে প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে পারেন।আপনাকে আমি দশে শূন্য দিলাম’

সাজিদ মাথার চুলগুলেকে এলোমেলো করতে করতে জিভে কামড় দিলো।মেধাকে দেখে এতক্ষণ বোঝার উপায় ছিল না যে সে সাজিদের ফ্লার্ট করা ধরে ফেলেছে সে।শাওন স্যার ঠিকই বলে।এই মেয়েটার মাঝে রহস্যের প্রতিটা অক্ষর একেবারে সুঁই সুতো দিয়ে আটকে দেওয়া।
—–
রায়হানকে ডেকে প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে মেধা ভাঙ্গা কাঁচের টুকরো গুলোর স্পটে এসে বললো,’হয়ত খুনি এখান দিয়ে প্রবেশ করেছে তাই এই গ্লাসের এমন করুণ পরিণতি।’

নুহাশ একটা কাঁচের টুকরোকে উল্টে পাল্টে বললো,’হ্যাঁ তাও হতে পারে’

শাওন মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’এত সোজা না।খুনি এত সাউন্ড করে ভেতরে যাবেনা খুন করতে।এটা কমন সেন্স।তাছাড়া মিস মেধা আপনি তো বলেছিলেন রেদোয়ানের কেসটা আত্নহত্যার কেস’

-‘কিন্তু আশার তো মার্ডার হয়েছে।হয়ত তাকে যে খুন করেছে সে এখান দিয়ে প্রবেশ করেছিল’

শাওন মেধার দিকে ফিরে বললো,’তাহলে তুমি আমায় বোঝাও।রেদোয়ান যদি আশাকে না মেরে থাকে।বাইরের কেউ যদি ওকে মেরে থাকে তাহলে কোন দুঃখে রেদোয়ান সুইসাইড করতে গেলো?’

নুহাশ কাঁচের টুকরো দিয়ে মাটি খু্ঁড়তে খুঁড়তে দুষ্টুমি করে বললো,’খুশির ঠেলায় মরছে।শুনছি রেদোয়ান নাকি মাঝে মাঝে পাগলামি করতো।তার পাগলামির ফুটেজ আসবে আজকে দুপুরের দিকে।’

-‘তাই নাকি?কিরকম পাগলামি?’

-‘ক্লাবে গিয়ে অতিমাত্রায় মদ খাওয়া তারপর উন্মাদের মতন নাচানাচি। টাকার ব্যবহার সে ক্লাবে বেশি করত।’

-‘তাহলে তো ফুটেজ পরে দেখা যাবে।আগে ঐ ক্লাবে যেতে হবে।আজ রাতে আমরা সেই ক্লাবে যাবো।রেদোয়ানের আশেপাশে অথবা ঐ ক্লাবে যতজন যেতো সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে হবে’

-“তাদের আবার কি জিজ্ঞেস করবে?’

-“হতে পারে তাদের মাঝেরই কেউ খুনি।রেদোয়ানের শত্রুর অভাব নেই।টাকা থাকা মানুষের শত্রু এমনি এমনি হয়।হয়ত রেদোয়ানেরও তাই।আমরা আগে টার্গেট করবো তার ঘনিষ্ঠ ফ্রেন্ডদের।তাদের থেকে অনেক ক্লু পাওয়া যাবে’সঞ্চারিণী
আফনান লারা

১৯.
-‘আমি আগে থেকেই বলে রাখি,আজ ক্লাবে আমি যাচ্ছিনা।ক্লাবে যাওয়া মানে রাত ১২টার পর ফেরা।আর আমি যদি ১২টার পর ফিরি, বাবা মা আমাকে সাথে করে কাল পটুয়াখালী নিয়ে যাবে।
তাছাড়া ওরকম পরিবেশে আমার যাওয়ার শখ বিন্দুমাত্র ও নেই’

শাওন মেধার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হোসে বললো,’কে রে এটা?কে চয়েজ করে এনেছে এরে??উনি কি আসলেই অফিসার নাকি একজন স্কুলে পড়ুয়া স্টুডেন্ট?যার এখনও ইন্টারে পড়া বাকি?আব্বুর ভয় কাজ করে আজও’

মেধা কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’কি বুঝাতে চাইছেন আপনি?আমি কি ভুল কিছু বললাম?’

-“অবশ্যই।শুধু রাত বারোটা কেন?রাত ১/২টা অবধি তোমাকে ক্লাবে উপস্থিত থাকতে হবে।গিয়াস স্যার যদি মানাও করে তাও আমি তোমায় সাথে করে নিবোই নিবো।চাকরিতে জয়েন করেছে দুদিন ও হলোনা,উনি ফাঁকি দেওয়া শুরু করে দিছেন।তা হচ্ছেনা’

মেধার মনে পড়লো বাবার কাছে শ্যাওলার নাম নিলে হয়ত মানাতে পারবে তাকে।তাই সে আর কথা বাড়ালোনা।

নুহাশ কাঁচের টুকরো সব ল্যাবে পাঠিয়ে দিয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সার্চের জন্য।
রেদোয়ানের খাটের বক্স থেকে কিছু কাগজপত্র বেরিয়ে এসেছে শুনে শাওন আপাতত সেখানে এসে হাজির।কাগজগুলো বিভিন্ন জায়গার জমির দলিল।রেদোয়ানের এত টাকা পয়সা ছিল আর সে মিডিয়ার সামনে শো অফ করতো এত কম?মানুষ টাকা অধিক থাকলে শো অফ বেশি করে আর রেদোয়ান দেখি তার উল্টো ভাবনার মানুষ।সে ইনকাম ট্যাক্সের ভয়ে এত এত টাকার কথা কিনা লুকিয়ে রাখলো।
প্রায় শো অফ করা সম্পত্তির দিগুণ সম্পত্তির মালিক ছিল সে।জেনেশুনে গরীব ঘরের মেয়েকে বিয়ে কেনোই বা করলো?আর তাকে টর্চারই বা কেন করত?তার কি পরকিয়া ছিল?আশার বাবার মতে রেদোয়ানের চরিত্র প্রকাশ্যে বিদঘুটে ছিল।রেদোয়ানকে চরিত্রহীন এওয়ার্ড দিয়ে গেলেন তিনি। তার মানে নিশ্চয় এমন ঘটনা ঘটেছে।তবে কার সাথে ঘটেছে?সেই নারীকে কই পাওয়া যাবে?’

-“পাওয়া গেছে’

রায়হানের কথা শুনে শাওন ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকালো।রায়হান বললো,’তার নাম এ্যামিলি।বাড়ি মালদ্বীপ।তবে স্থায়ী বাসিন্দা না।তাকে একবার একদেশে দেখা যায়।
বড়লোকের গার্লফ্রেন্ড হলে যা হয় আর কি!’

-‘নাইস!তা সেই এ্যামিলি এখন কোন রাষ্ট্রে বসবাসরত? ‘

-“তার টাকা দেওয়া বিবাহিত বয়ফ্রেন্ড মরে গেছে বলে সে এখন বাংলাদেশেই আছে।তবে পলাতক’

-‘পলাতক?তাহলে তো সন্দেহের তীর তার দিকে ছুঁড়তে হচ্ছে।নুহাশ আর নিতুকে পাঠাও ঐ পলাতক এ্যামিলিকে খুঁজতে।আমি বরং ক্লাবের ফুটেজ দেখে আসি।আর হ্যাঁ,
মিস অতিরিক্তকে বলো এবার একটু কাজ টাজ করে দেখাতে।একদিন শুট করে কি দশদিন ধরে তার প্রশংসা শুনে যাবে?বলো রেদোয়ানের গেস্ট রুম সার্চ করতে যেতে।টিম আকারে ভাগ হয়ে যাও।মেধার সঙ্গে মিলনকে পাঠাও’

-“স্যার আমি যাবো?’

-“না সাজিদ।তুমি আমার সঙ্গে চলো’
—-
মেধা আর মিলন রেদোয়ানের গেস্ট রুমে এসে হাজির।কত বড়লোক হলে আলাদা গেস্ট হাউজ বাহিরে একটা রেখে আবার বাসার ভেতরে গেস্ট রুমও রাখে।বাসার নিচ তলাতেই গেস্ট রুমটা।একেবারে পেছনের সাইডে বলে এতদিন কেউ এটা পরোক করে দেখতে আসেনি।তবে ওয়াশরুমের মিররে লেগে থাকা শুকনো সাবানের ফ্যানা বলে দেয় এটা ব্যবহার হয়েছে বেশিদিন হয়নি।

-‘মিলন তুমি বিছানা ওলটপালট করে দেখো।আমি আলমারি দেখছি আপাতত ‘

মিলন চশমা ঠিক করে বিছানার চাদরটা উল্টে দেখলো কিছু নেই।তারপর এক এক করে দুটো তোষক সরিয়ে ফেললো।বিছানাতে কিছুই নেই।মেধা আলমারি খুলে পুরোনো তোয়ালে ছাড়া কিছুই পেলোনা।মিলন বিছানার নিচ থেকে একটা লিপস্টিক খুঁজে পেলো সবার শেষে।
মেধা ওর হাত থেকে লিপস্টিকটা নিয়ে দেখে চোখ বড় করে বললো,’এটা তো Couture Beauty Diamond Lipstick।রেপ্লিকা না তো?’

-“রেপ্লিকা কেন হবে?এরকম হা করছো কেন?লিপস্টিক দেখলে মেয়েদের মাথার ঠিক থাকেনা আজ প্রমাণিত ‘

-“আরে কথা সেটা না মিলন।এই লিপস্টিকের দাম জানো তুমি?১৪মিলিয়ন!!!!
তার মানে কোটি টাকার উপরে।রেদোয়ান এত বড়লোক?
মাই গড!!এত দামি লিপস্টিক কিনা খাটের তলায় রেখে মরছে!’

-‘আশা লিপস্টিক ইউজ করত না।তার কোনো ছবিতেই আমরা লিপস্টিক দেখিনি।এমন কি যেদিন সে মারা গেছে সেদিনও তার ঠোঁটে লিপস্টিক ছিলনা’

-‘তাহলে এটা কার?’

-‘ল্যাবে পাঠিয়ে দিতে হবে।টেস্ট করলেই বোঝা যাবে এটা কার।আপাতত এটার কয়েকটা ছবি তুলি।১৪মিলিয়নের লিপস্টিকের পিক তুলে আপলোড করলে অন্তত ১৪হাজার লাইক তো পেয়েই যাবো’

মেধা লিপস্টিকটা মিলনের হাতে দিয়ে পুরো রুমটা আবারও ঘুরে দেখা শুরু করলো।এই রুমে লিপস্টিক বাদ দিয়ে আর কিছুই পেলোনা যেটা কিনা সন্দেহের আওতায় আনা যায়।শুধু ঐ ফ্যানা বাদে।
.
ফুটেজে রেদোয়ানকে দশ বিশটা মেয়ের মাঝে দেখা গেলেও সিওর হওয়া গেলোনা ঠিক কোনটা এ্যামিলি।কারণ সে একবার একটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিল।শাওন ফুটেজ অফ করে রুম থেকে বের হতে গিয়ে মেধার সঙ্গে আবারও ধাক্কা খেয়ে গেলো।কপাল মুছতে মুছতে বললো,’আমাকে ধাক্কা দেওয়াতে মাস্টার্স পাশ করেছো?’

-“নাহ।স্নাতক সম্মান’

-“চুপ!কি জন্যে এখানে এসেছো?’

-“এই লিপস্টিকটা দেখাতে।ল্যাবে চলে যাবে তার আগে মিলন বললো আপনাকে দেখাতে’

-‘এটা সেই লিপস্টিক না যেটার দাম ১৩/১৪মিলিয়ন হবে?’

“-ওয়াও!আপনি জানেন কি করে?’

-‘তৃনা আপু আমাকে এই লিপস্টিকটা দেখিয়ে বলেছিলো কিনে দিতে।।’

মেধা ব্রু কুঁচকে বললো,’ঘুষ খান?’

-“আমার বামহাতটা দেখেছো?এটা দিয়ে চড় মারলে দাঁতের জায়গা নড়ে উঠে আসামিদের।তোমাকে এখন এই হাত দিয়ে চড় মেরে দেবো।
আমি ঘুষ খাবো কোন দুঃখে?বড় আপুরা ছোট ভাইদের সাথে এমন মজা করতেই পারে।নিজের বউ ও মাঝে মাঝে এসে বলে আকাশের চাঁদ এনে দিতে।সেটা তো সম্ভব হয়না।তারা বলতে পারে।কিন্তু আমরা যে কিনে দিব তা তো সচরাচর হয়না।১৪মিলিয়ন আমার ১৪ বছরের ইনকাম ও না।’

-‘তার মানে আপনার ১৫বছরের ইনকাম?’

-“তুমি যাও এখান থেকে।না এক মিনিট!তোমাকে সাথে নিয়ে ক্লাবে যাবো।অতিরিক্ত কথা বলতে তুমি শীর্ষে।তোমাকে নিয়ে গেলে লাভ হবে এই প্রথমবার’

-‘স্যার আপনি সিনিয়র বলে যাচ্ছেতাই বলতে পারেননা।গিয়াস স্যারের কাছে নালিশ করবো’

-‘করো।স্যার সোজা আমার কাছেই পাঠাবেন।’

মেধা বাধ্য হয়েই যাবে বলে কথা দিয়ে এখন মুখটা হাঁড়ি করে রেদোয়ানের পুরো বাড়িতে চক্কর দিচ্ছে।এত বড় লিপস্টিক নাকি এ্যামিলির জন্য কিনেছিলো রেদোয়ান।
-‘উক্তিটা শাওন স্যারের।হয়ত গিফট আর নয়ত গিফট দিয়ে ফেলেছে আর সে এই রুমেই ছিলো।তড়িগড়িতে লিপস্টিক নেওয়ার কথা ভুলে গেছে।
মানুষ গিফট হিসেবে গাড়ী দেয়,ডায়মন্ড দেয়,বাড়ি দেয়।আর রেদোয়ান কিনা কোটি টাকার লিপস্টিক কিনে দিলো।তার গার্লফ্রেন্ড মনে হয় লিপস্টিককে ডায়মন্ডের চেয়েও বেশি পছন্দ করতো।আইডিয়া!!!
ফুটেজে যে মেয়ের ঠোঁটে লিপস্টিক থাকবে সে হলো এ্যামিলি।পেয়েছি স্যার!’

শাওন ব্রু কুঁচকে কফিতে চুমুক দিলো।মেধার উল্লাসে কোনো পাত্তাই সে দিলো না।মেধা সামনে ঘুরে এসে বললো,’কি হলো স্যার?বুদ্ধিটা ভালো লাগেনি?’

-“তুমি নিজের চোখে ফুটেজ দেখে আসো তারপর নাচানাচি করিও”

মেধা এক রাশ আগ্রহ নিয়ে ফুটেজ দেখতে গেলো।রেদোয়ানের সঙ্গে যত মেয়ে ছিল সবগুলোর ঠোঁটে লাল টকটকে লিপস্টিক। আশ্চর্য!!
স্যার আমার মনে হয় রেদোয়ান ঐ একটা লিপস্টিক নিয়েছে তারপর ওগুলো ভাগ করে সবাইকে দেবে বলে ঠিক করেছে।ধরুন একজনে যদি এক চিমটি লিপস্টিক নেয় তার ভাগে লক্ষ লক্ষ টাকা পড়লো’

শাওন মেধার ভাঙ্গা হাতটা টেনে ধরে সামনে এনে বললো’তুমি বোকা না,অবুঝ ও না,পারফেক্ট ট্রেইন্ড্ একজন অফিসার।সকাল থেকে বোকা সেজে কি বুঝাতে চাও?আমি কালকের ঘটনা ভুলে যাবো?’

মেধা হাত টান দিয়ে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,’বুদ্ধি গুলো কাজে লাগান।আপনার কাজে দেবে’

-‘রেদোয়ান ছেঁসড়া না।ও চাইলে পাঁচ ছটা গার্লফ্রেন্ডকে কোটি টাকার লিপস্টিক আলাদাভাবেই গিফট করতে পারতো’

-“রাইট শাওন স্যার!!লিপস্টিক আরেকটা পেলাম।’

মিলনের কথা শুনে মেধা চোখ কপালে তুলে বললো,’আমি সিওর এই বাড়ি মাটি থেকে উপড়ে তুললে স্বর্নের খনি পাওয়া যাবে।আমার কথা তোমরা সবাই মিলিয়ে নিও’

শাওন মিলনের হাত থেকে লিপ্সটিকটা নিয়ে বললো,’আর পাবোনা।এটাই লাস্ট লিপ্সটিক। এমনিতেও এইই দুটো কিনে ফকির হয়ে গেছে রেদোয়ান।ঐ এ্যামিলিকে আজকের মধ্যে খুঁজে পেতে হবে।২০% ক্লু তার থেকেই পাবো’

-“স্যার আমার মনে হয় ও খুনি।নাহলে পালাতো না’

-‘আরে না।সে কেন রেদোয়ানকে মারবে??রেদোয়ান তো আত্নহত্যা করেছে।তাই না মিস মেধা?’

মেধা লিপস্টিকটা রেখে চোরের মতন হেঁটে চলে গেলো।মিলন হাত ভাঁজ করে বললো,’স্যার ঐ মেয়েটার কথা কানে নিবেননা।না জেনেই বলেছে আত্নহত্যা।
এটা আত্নহত্যা কেস হতেই পারেনা।ইম্পসিবল ‘

-‘হুম তা তো শেষেই বোঝা যাবে’
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here