#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_16
নিদ্রা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে ওর চাচা ও চাচি । চাচি চিৎকার করে এগিয়ে এসে নিদ্রার গায়ে হাত তুলতে গেল। নিদ্রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। অভ্র এটা মানতে পারলোনা এমনিতেই এতক্ষণ ধরে এত চেচামেচির যা নয় তাই বলে গালাগালি করছে। ক্রোধে ফেটে পড়ছে অভ্র। ও এগিয়ে এসে নিদ্রার চাচির হাত ধরে ফেলল। নিদ্রা তাকিয়ে সেটা দেখে সরে দাঁড়ালো।
নিদ্রার চাচি তা দেখে অপমানে চেঁচিয়ে উঠলো,
‘ এই ছেলে তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার হাত ধরছ।’
‘আপনি নিদ্রার গায়ে হাত তুলছেন কেন?’
‘নিদ্রা আমাদের বাড়ির মেয়ে আমাদের সম্মান নষ্ট করেছে ও একা একা বিয়ে করে। আর নিদ্রাকে কি করে দোষ দেই। এই বাড়ির ছেলে ওকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করেছে। দেখেছে ধনী বাড়ির মেয়ে অনেক টাকা সম্পত্তির মালিক। সেই মেয়েকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে সম্পত্তির লোভে বুঝি বুঝি সব বুঝি।সেই ছেলে আর ছেলের পরিবার আমাদের বাড়ির মেয়েকে টাকার লোভে হাত করে নিয়েছে। এই বিয়ে তো আমরা কিছুতেই মানবোনা কোথায় ওর স্বামী?’
অভ্র নিদ্রার চাচির কথা শুনে ওর মাথায় রক্ত উঠে গেলো। ওকে আর ওর পরিবারকে নিয়ে বাজে কথা শুনে আর কপালের ফুলে উঠলো। ওর রেগে একবার নিদ্রার দিকে তাকালো। নিদ্রা অসহায় মুখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
‘মুখ সামলে কথা বলুন! আপনারা আসার পর থেকে, যা নয় তাই বলে অপমান করছেন। কিন্তু আমরা নেহাত ভদ্রলোক বলে আপনাদের সাথে বাজে বিহেব করছি না। আপনাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি বিয়েটা কিভাবে হয়েছে। কিন্তু আপনারা আমাদের কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ইচ্ছেমতো আমাদের অপমান করে যাচ্ছেন।’
‘অপমান করবো না কেন? একটা মেয়েকে বিয়ের পিড়িতে বসে দিলে তার পরিবারের খোঁজ না নিয়ে। তাদের সিদ্ধান্ত জানার প্রয়োজন বোধ করলে না তোমরা। এতেই তো বোঝা যায় তোমরা কতটা লোভী হতে পারো। পরিবারের সাথে কথা বললে এই বিয়ে হত না তোমরা ভালো করে জানো। এজন্য সেই সুযোগ দাওনি।’
নিদ্রা এবার মুখ খুললো, ‘উনারা আমাকে পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করেছিল। আমি বলেছি আমার কেউ নাই।’
নিদ্রার কথা শুনে আর চাচা বলল, ‘কি বললি তোর কেউ নাই। তাহলে আমরা কে তাহলে? ছোট থেকে এত কষ্ট করে মানুষ করলাম আমরা। আর এখন আমরা তোর কেউ না।’
পাশ থেকে নিদ্রার চাচি বললো, ‘দেখেছো কেমন স্বার্থপর মেয়ে! মেয়ের মত মানুষ করলাম। আর এখন বলছে আমরা তার কেউ না। রক্ত কথা বলে ও তো আমাদের রক্তের কেউ না তার প্রমাণ করছে।’
‘হ্যাঁ তাইতো দেখছি কেমন ফাজিল মেয়ে!’
নিদ্রার চাচি নিদ্রার হাত ধরে বলল, ‘এইভাবে কষ্ট দিলি তোকে নিজের মেয়ে ভাবতাম!’
‘কেমন নিজের মেয়ে ভাবতে তাতো আমি জানি। তাই এখন আর নাটক করে লাভ নেই।’
‘দেখেছ কেমন চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বলে। আমরা নাকি নাটক করছি। এই নিদ্রা তোর বিয়ে আমরা আরিয়ানের সাথে ঠিক করে রেখেছিলাম সেইটা তো তুই জানতি।’
‘হ্যাঁ জানতাম।’
‘জানা সত্বেও তো এই বিয়ে কিভাবে করলি?’
‘আরিয়ান ভাইকে শুধুই আমি ভাই ভাবি তাকে আমি বিয়ে করতে পারবোনা। সেটা আমি হাজার বার তোমাদের বলেছি।কিন্তু তোমরা শোনো নাই।’
‘এখন নিশ্চয়ই আমাদের ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলবি এখন তো বর পেয়েছিস, সংসার পেয়েছিস। আমাদের আর কি দরকার এতদিন কেউ ছিলনা আমাদের দরকার ছিল। এই ছিল তোর মনে শেষ পর্যন্ত।’
‘আমি কি তোমাদের বলেছি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও। তোমরা যেভাবে আছো সেভাবেই থাকো। আমার কিছু দরকার নাই ঐ সম্পত্তির জন্যই তো তোমরা আমার ওপর এত অত্যাচার করতে ওই সবকিছু আমি তোমাদের দিয়ে দিলাম। ওই সম্পত্তির জন্যই তো তোমরা এতসব কিছু করেছ।’
‘কি বললি আমরা সম্পত্তির জন্য তোর উপর অত্যাচার করেছি। হায় হায় এই মেয়ে কি মিথ্যা কথা বলে!’
নিদ্রার চাচা চাচি নিদ্রার কথা শুনে মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু সম্পত্তির সাথে তো এই মেয়েটাকেও চাই। না হলে ছেলে ওদের কি অবস্থা করবে আল্লাহ জানে। সে তো এখনো জানেই না নিদ্রার বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে নিদ্রা বলতে অজ্ঞান। এখন যদি জানতে পারে নিদ্রার বিয়ে হয়ে গেছে কি হবে এখান থেকে নিদ্রাকে যেভাবেই হোক নিয়ে যেতে হবে।
‘আমাদের সম্পত্তি চায়না আমাদের মেয়ে চায় তুই এই সংসারে সুখে থাকবি না। আমরা জানতে পেরেছি তোর হাজবেন্ড নাকি ওর যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাকে ভালোবাসে। তাকে নাকি কেউ কিডন্যাপ করেছে। এজন্য তাকে বাধ্য হয়ে তোকে বিয়ে করেছে সম্মানের জন্য। ওরা তোকে ব্যবহার করেছে। ওই মেয়ে ফিরে আসলে ওই ছেলে তোকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
অভ্র রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না এগিয়ে এসে বলল, ‘আমার আর আমার পরিবারের নামে আর একটা বাজে কথা বললে আমি আপনাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেব।’
‘ও তার মানে তুমি সেই হাসবেন্ড!!’
‘হ্যাঁ আমি। আর আমি নিদ্রার ফ্রেন্ড আগে তার পর হাজবেন্ড। এটা ঠিক বিয়েটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে তাই বল ওকে আমি ছুঁড়ে ফেলব এভাবে বলতে পারেন না আপনি।’
‘কেন বলতে পারবো না তুমি তো তোমার ওই আগের পছন্দ করা মেয়েটা কে ভালোবাসো তার জন্য এখনো দৌড়াদৌড়ি করো। আমরা জানিনা বুঝেছ কিছু। ওই মেয়ে ফিরে আসলে তুমি নিদ্রা কে ছুড়ে ফেলবে না তার কি গ্যারান্টি। আমরা খুব ভালো করে জানি তুমি নিদ্রাকে ভালোবাসো না শুধুই ফ্রেন্ড ভাবো। তো এখন নিদ্রা কে ব্যবহার করছ না।আর এইখানে আমাদের বাড়ির মেয়েকে আমরা এক মুহূর্ত রাখবো না। ও আমাদের যতই অপমান করুক না কেন। আমরা ওর আপনজন। আমরা ওর ভালো চাই। ওকে আজকে আমাদের সাথে বাড়ি নিয়ে যাব আর তোমাদের ডিভোর্স করিয়ে দেবো। এই পুতুল বিয়েতে আমাদের মেয়েকে আমরা রাখবোই না।’
অভ্র কি বলে বুঝতে পারছে না।এটাতো ঠিকই ও নিদ্রাকে ভালোবাসে না কিন্তু বন্ধু হিসেবে খুব ভালোবাসে। পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব ওদের। অভ্র খুব ভালো করে জানে নিদ্রার চাচা চাচি কতটা খারাপ। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ও বাসা নিয়ে থাকে একা আলাদা তাদের সাথে যোগাযোগ রাখে না বললেই হয়।তারা নিদ্রার সাথে যোগাযোগ করে শুধু ব্যাংক থেকে টাকা উঠানোর সময় কারণ কোন ব্যাংকে নিদ্রা কে ছাড়া টাকা দেবে না। ওর বাবা সেই ব্যবস্থাই করে গেছে মেয়ের জন্য। নিদ্রার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে সব সম্পত্তি এতিমখানায় নামে চলে যাবে। এজন্য নিদ্রার কোনো ক্ষতি তারা চায় না। তারা চায় নিজের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে। ছেলেটাও খুব একটা সুবিধাজনক না। নিদ্রা তাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারেনা। বিয়ে তো দূরে থাক। এখন ও কি করবে ও তো বর্ষাকে ভালোবাসে। নিদ্রা কে ও ডিভোর্স দেবেই। মহিলা তো ঠিকই বলেছে আমরা তো নিদ্রাকে শুধু ব্যবহার করছি। কিন্তু এখন যদি তাদের সাথে নিদ্রা কে যেতে দে তাহলে ওর সাথে অমানবিক অত্যাচার করবে আর জোর করে আর সেই ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে পারে। আমাকেই নিদ্রা কে বাঁচাতে হবে।
‘এইটা ঠিক আমি বর্ষাকে ভালবাসতাম। কিন্তু নিদ্রা এখন আমার স্ত্রী। ওর সমস্ত দায়িত্ব আমার আর উপর সম্পন্ন অধিকার আমার আছে। তাই ওকে আপনি এখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন না।’
‘তুমি বললেই হলো নাকি! আমরা আমাদের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে যাবই।আজ বাদে কাল তুমি ওকে যে ছেড়ে দেবে সেটা আমরা ভালো করেই জানি তাই এখন এত ঢং করে লাভ নাই।’
নিদ্রা এখন আর কথা বলতে পারছনা। কিছু বলার ভাষা নাই ওর। অভ্র যে ওকে ডিভোর্স দিবে সেটা জানে। তাই চাচীর কথা এখন ওর ভালো লাগছে এখানে থেকে কি হবে? অভ্র তো ওকে সত্যিই ডিভোর্স দেবে। চেষ্টা করছে অভ্রর মনে জায়গা করতে কিন্তু আজ দশ দিন ধরে এই বাসায় আছে এক মুহুর্ত ও অভ্র ওকে সেভাবে দেখেনি।সব সময় বর্ষা কে ভাবে ওর দিকে ফিরে ও তাকায় না। চাচির কথায় তো ফলবে কিছুদিন পর ডিভোর্সী হয়ে বের হতে হবে ওকে।
অভ্র ও নিশ্চুপ এখন।
ওর চোখে জল চিকচিক করছে। কান্না গলায় এসে ঠেকেছে। পরিবারের সবাই অনেক কথা বলছে চাচার সাথে চাচি অভ্রকে কি যেন বলছে অভ্র নিশ্চুপ। তখন অভ্রের মা এসে ছেলের হাত টেনে আড়ালে নিয়ে কি যেন বলতে লাগলো। অভ্র নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে অবাক হয়ে। নিদ্রা তাকিয়ে আছে সেদিকে।ওর সামনে দাঁড়িয়ে চাচি কি যেন বলছে ওর কানে যাচ্ছে না কথাগুলো। ও এক দৃষ্টিতে অভ্র আর অভ্রর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। কি কথা বলছে তিনি হঠাৎ অভ্ররের এক হাত নিজের মাথায় নিয়ে কি জানি বলে ঠেলে আবার সবার সামনে নিয়ে এলো।
এবার অভ্র যা বলল তা শুনে আমি আমাকে চরম সীমায় পৌঁছে গেলাম। এই সব কিছুর পেছনে যে আমার শাশুড়ি মার হাত আছে তা আমি ঠিক ধরতে পারলাম। তার মুখে প্রশান্তির হাসি। অভ্র মুখ কালো করে বললো,
‘ আমি নিদ্রাকে কখনো ডিভোর্স দিব না। নিদ্রা কে আমি স্ত্রীর মর্যাদা দেবো। আমি দ্বিতীয় বিয়েও করব না। আপনাদের সামনেই বলছি। তাই এখন আর আমার স্ত্রীকে নেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।’
বলেই অভ্র গটগট করে চলে গেলো। নিদ্রার চাচা- চাচি হা করে অভ্রের কথা গিললো। এসব কি শুনছে এই ছেলেতো পাল্টি খেলো।
এখন নিজের ছেলেকে বুঝাবে কি করে!
তাদের দুজনের মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল। নিদ্রা নিজের শাশুড়ি মাকে জড়িয়ে ধরলো খুশিতে। এত খুশি বাবা মা মারা যাবার পর প্রথম হলো।
‘মা আপনি না থাকলে এটা কখনো সম্ভব ছিল না। থ্যাংক ইউ সো মাচ। আই লাভ ইউ সো মাচ মাদার।’
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_17
‘শুধুমাত্র আজকে রাতটা আমি তোমার কথা শুনবো। বিনিময় তুমিও আমার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করবে।’
কথাটা বলেই তূর্য ওর তর্জনি আগুল দিয়ে বর্ষার চোখের জল মুছে দিলো।
বর্ষা তূর্য এর হাত ঝামটা দিয়ে গাল থেকে সরিয়ে দিলো। তূর্যর এতে রাগ মাথায় উঠে গেল। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করলো। আজ রাগ দেখাতে চায় না ও।
‘এত জেদ দেখিয়ে লাভ নেই বর্ষা মনি। তুমি স্বেচ্ছায় এসব করছ আমি তোমাকে কোন রকম জোর করিনি।’
‘লজ্জা করছে না এসব বলতে আপনার। আমি স্বেচ্ছায়! আপনি আমাকে বাধ্য করেছেন স্বেচ্ছায় রাজি হতে।’
‘বাধ্য করি আর যাই করি না কেন। স্বেচ্ছায় ই তো সবকিছু করবে আমি তো তোমায় জোর করব না। আসলে জোর করা আমি পছন্দ করিনা।’
‘ভালো মানুষের মতো কথা বলছেন কেন? আপনি একজন নিকৃষ্ট মানুষ। আপনার সাথে কথা বলতে আমার ঘেন্না করছে।দয়া করে আমার সাথে কথা বলবেন না আমার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে থাকুন।’
‘দূরত্ব রাখব! একটু পর তো দূরত্ব কমিয়ে একদম কাছে চলে আসবো। আর এখন তুমি দূরত্ব রাখার কথা বলছো ইটস নট ফেয়ার বর্ষা।’
বর্ষা কথা বলছে না। এই লোকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। আর না তার ওই মুখের দিকে দিকে তাকাতে ইচ্ছা করে। ও নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
তূর্য ওর হাতের ব্যাগটা বর্ষার সামনে রেখে বলল,
‘এটা পড়ে ফেলো ঝটপট।’
‘কি এটা?’
‘শাড়ি!’
‘শাড়ি দিয়ে আমি কি করব?
‘কি করবে মানে! শাড়ি দিয়ে মানুষ কি করে! পড়বে এটা।’
‘আমি শাড়ি পরবো কেন আমি কি নতুন বউ! আর আপনি আমাকে শাড়ি পরতে বলছেন কেন? এমন ভাবে বলছেন যেন আপনি আমার হাজব্যান্ড। তাই হাজবেন্ডের ইচ্ছে হয়েছে বউকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখতে তাই পরতে বলছে । আমি কোন শাড়িটাড়ি পড়তে পারব না বিয়ে করে নিজের বউকে শাড়ি পড়তে বললেন।’
বলে ব্যাগটা ছুঁড়ে মারল বর্ষা।
‘তোমার সাহস তো কম না আমার আমার জিনিস ছুড়ে মারো।’
‘হুম মেরেছি। কি করবেন? আমাকে মেরে ফেলবেন!মেরে ফেলুন! তাহলে আমি আপনার মত রাক্ষসের হাত থেকে মুক্তি পাবো!’
‘আজকে তুমি যত বাজে কথাই বলোনা কেন আমি আজকে কিছুতেই রাগারাগি করবো না! আজকে একটা সুন্দর রাত আমি নষ্ট করতে চাইনা। আর কি যেন বলছিলে?বউকে পরতে বলবো। বউয়ের সাথে যা যা করতাম সব তো তোমার সাথে করবো। বিয়ে না করলেও তুমি আমার হাফ বউ হবে আজ। তাড়াতাড়ি শাড়িটা পড়ে ফেলো তুমি না হলে আজকে এই রুমের বাইরে যেতে চাইছিল তা ! তোমার ইচ্ছেটা পূর্ণ করা হবে না। তাই আমার কথা শোনো না হলে তোমার কথাটা আমি রাখতে পারব না।’
বর্ষা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আজকে রাতে ওর সাথে কি কি ঘটবে সেসব ভেবে ভয়ে কুকড়ে উঠছে ও। এই লোকটার হাত থেকে রক্ষা পাবে না ও। আর নিজেও নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না কারণ সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ওকে এই লোকটার কাছে নিজেকে সপে দিতে ই হবে। নিজের সর্বস্ব যখন হারাবেই। তার আগেও জানতে চাই এসব এই লোকটা কেন করছে। বাপির সাথে এই লোকটার কি শত্রুতা?এতদিন ধরে আছে এখন অব্দি এই লোকটার নাম জানা হয়নি আর এমন খারাপ লোকের নাম ও জানতে চায় না। ও তূর্য এর চোখের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,
‘সবকিছুর আগে আমি আপনার কাছে একটা সত্যি জানতে চাই বলবেন প্লিজ!’
‘কি সত্যি জানতে চাও?’
‘আগে বলেন আমি যা জানতে চাইবে তা আমাকে বলবেন!’
তূর্য কপালে সূক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে বলল,
‘আগে বল কি যদি বলা যদি যায় তাহলে বলবো।’
‘প্লিজ বলা না গেলেও বলবেন প্লিজ! আমি যে অপরাধের শাস্তি পাবো সেই অপরাধ টা আমি জানতে চাই। আমার বাপি আপনার সাথে কি করেছে যার জন্য আপনি তার এত বড় ক্ষতি করছেন। কেন তার উপর আপনার এত রাগ এত বিদ্বেষ। আমার একজন খুব ভালো মানুষ সে কারো ক্ষতি করতেই পারে না। আমার বাপি সত্যের পথ ছেড়ে কখনো অন্যায়ের পথে পা রাখেনি। আপনি জানেন বাপির এই পেশার জন্য বাপির হাজার হাজার শত্রু আছে। যারা বাপিকে দিনরাত ফোন করে হুমকি দেয়। কিন্তু বাপি কখনো ভয় পায় না। সত্য থেকে সরে যায় না। কি করেছে আমার বাপি আমি সত্যিটা জানতে চাই।’ কাঁদতে কাঁদতে বলল।
তূর্য বললো, ‘ তোমার বাপি খুব ভালো মানুষ কিন্তু সে আমার সাথে অন্যায় করেছে। আমার চোখে তিনি অপরাধী। আমার খুব কাছের মানুষ কে সে কেড়ে নিয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ফাঁসির রায় দিয়েছিলো। যা সে করেছিলোই না। আমি অনেক করে তোমার বাবাকে বলছিলাম আমার জন্য অপেক্ষা করতে করেনি। আমার অনুপস্থিতিতে সব শেষ করে ফেলেছে। আজ তাই করবো আমি তোমার সাথে।এখানে তোমার কোন অপরাধ নেই। তোমার ভুল তুমি নিবিড় চৌধুরী এর মেয়ে তার রক্ত তোমার শরীর এ বয়ছে।’
‘ আপনার কাছের লোক কে সে?
‘ এতো কিছু আমি বলতে পারবো না। যা বলেছি করো দ্রুত।’
‘ আর কি অভিযোগ? আমার বাপি নির্দোষ কে শাস্তি দেয় না।’
‘দিয়েছিলো। এসব নিয়ে আমি তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।’
‘ কিন্তু….
‘ শাড়িটা পরো তারাতাড়ি।’
‘ কিন্তু আমি তো শাড়ি পরতে পারিনা।’
‘ যেভাবে পারো সেই ভাবেই পরো।’
‘আপনি আমাকে বউ সাজাচ্ছেন কেন বলেন তো! বিয়ে করবেন নাকি?’
‘ আমার মাথা খারাপ হয়নি এখনো।’
বলেই তূর্য তিরস্কার হাসি দিয়ে চলে গেল। বর্ষার ফেলে রাখা ব্যাগটা নিজেই তুলে বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো। এই লোকটার কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া থেকে মরে যাওয়ার ওর জন্য ভালো। কিন্তু ও মরে গেছে মাম্মা বাপি কেউ আরো কষ্ট দেবে। মরে গিয়ে আমি নিজে বেঁচে যাব কিন্তু
মাম্মা বাপ্পির তো কষ্ট যাবে না। এতটা অসহায় কেন করলে তুমি আমাকে আল্লাহ।
বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে লোকটা বলছে,
‘বসে বসে ন্যাকা কান্না না-কেঁদে তাড়াতাড়ি রেডি হও না হলে বাইরে যেতে হবে না।’
বর্ষা আতংকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
‘আপনি দরজার বাইরে থেকে জানলেন কি করে আমি বসে কান্না করছি?’
‘আমি যেখানেই থাকি না কেন।তুমি আমার নজরে থাকো সবসময় বর্ষা মনি। তাই এত কিছু চিন্তা না করে কাজ করো তাড়াতাড়ি।’
বর্ষা চিন্তিত মুখ করে তাড়াতাড়ি ব্যাগটা ছিঁড়ে ফেললো। ব্যাগের ভেতর থেকে একটা লাল টকটকে জর্জেট শাড়ি বেরিয়ে এলো। ফ্যালফ্যাল করে শাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে বর্ষা। এই পাতলা শাড়ীটা আমাকে পড়তে হবে।
পড়তে না চাইলে জোর করে আমাকে পড়াবে।
তাই নিজেই পরি যেটুকু পারি পড়লাম। জর্জেট হওয়ায় বারবার খুলে যাচ্ছে বর্ষা পেটে দুহাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। এই শাড়ি পড়ে তো ও এক পা ও এগোতে পারবে না। কিন্তু শাড়ি না পড়লেও যে ওকে এই রুমের বাইরে যেতে দেবে না। কতদিন এই ঘরের বাইরে যায়না মুক্ত বাতাস নেয় না। খোলা পৃথিবীর নিচে যাওয়ার জন্য ও মন টা ব্যাকুল হয়ে আছে।
তূর্য রুমে এসে বর্ষার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল বর্ষা অগোছালোভাবে শাড়ি পরে পেটে দুই হাত চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে মুখে চিন্তার ছাপ।
তূর্য ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে বর্ষার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
‘কি হয়েছে?’
‘কিছু না!’
বলেই বর্ষা শাড়ির ঠিক রাখার চেষ্টা করে হাত সরিয়ে নিলো।আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে যেন এই অসভ্য শাড়িটা খুলে না যায়। কিন্তু মনে ওর আকাশ সমান চিন্তা কিভাবে হাঁটবে। এক পা এগুলে ও ত ওর শাড়ি খুলে যাবে। আল্লাহ আজকের মতো বাঁচিয়ে দাও জীবনে শাড়ি পড়বো না।
তূর্য ওর পিছনে গিয়ে চোখ বেঁধে দিল। ও চমকে ওঠে ছটফট করতে লাগলো।
‘একি আমার চোখ বাঁধছেন কেন?’
তূর্য কিছু বললো না। বর্ষা আবার বললো,
‘আপনি আমাকে বাইরে নিয়ে যাওয়া কথা বলে মেরে ফেলতে চাইছেন না তো?’
‘You can’t talk less.’
”এবার চলো।’ চোখ বাঁধা সম্পূর্ণ হতেই বর্ষার হাত টেনে ধরে বললো তূর্য।
‘ টানছেন কেন? আমার চোখের বাঁধন খুলেন। না হলে আমি হাঁটবো কি করে? আর এমন করে টেনে ধরলেন কেন? আমার শাড়ি খুলে যাবে তো কোন রকম পরেছি। ছারুন হাত।’
বলেই হাত ছাড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগলো বর্ষা। তূর্য হাত ছেড়ে দিলো। বর্ষা হাতে ছাড়া পেয়ে দুই হাত উপরে তুলে চোখের বাঁধন খুলতে গেলো। কেবল খুলতে যাবে তখন ওকে তূর্য পাঁজকোলে তুলে নিলো। তাতে বর্ষা নড়ে ওঠে হাত পরে গেলো। ভয়ে ও তূর্য এর গলা জড়িয়ে ধরলো।
#চলবে……..
#চলবে……..