#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_22
পুলিশ দের সাথে নিবিড় চৌধুরী ওই জঙ্গলে ঘেরা বাংলোতে ঢুকে। বাইরে থেকে এমন বাজে অবস্থা এই বাসার যে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না এখানে কারো বসবাস আছে। কিন্তু বর্ষা তাকে এসব বলেছিল তাই তিনি জোর করে বাসার ভেতরে ঢুকে। পুলিশ তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে গেল। বাইরে যতটা বিচ্ছিরি অবস্থা ভেতরে ততটাই সুন্দর। কোন রাজপ্রাসাদের মতো। পুলিশ রাও এইসব দেখে থমকে যায়। আর তাদের সন্দেহ বাড়তে লাগে।
পুরো বাসা চেক করে। কার বাসা এটা জানার জন্য। কিন্তু কিছুই পায় না প্রমাণ বলতে কিছু নাই প্রত্যেকটা রুম ফাঁকা।
কয়েকটা আসবাপত্র ছাড়া কিছুই নাই। কোন ক্লু না পেয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসে। আর পুলিশরা এই বাসা কার এসব জানার জন্য তদন্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো।
পুলিশ রা দুইদিন পর অনেক চেষ্টার পর একটু আশার আলো দেখতে পেলো। ওই বাসা কার নামে ঠিকানা পেলো না। কিন্তু একজনের হদিশ পেলো। তার মাধ্যমে আসল লোক কে খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে চলে গেলো সেখানে।
রফিক ওখানকার রান্নার লোক ছিল এক সপ্তাহের মত কাজ করেছিল তারপর আর করেনি। ওকে আর রাখিনি।ও বুঝে উঠতে পারছেনা। একসপ্তাহ কাজ করলো সেইখান কার খোঁজ ওর কাছে নিতে কেন এসেছে?
পুলিশ দেখে এমনিতেই ও ভয় পায়। তারপর অর কাছে খোঁজ করতে এসেছে। ও ভয়ে কপালের ঘাম মুছে পুলিশের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে,
‘স্যার আমনেরা এইহানে ক্যান আইছেন?’
‘ তোর কাছ থেকে আমাদের একটা ইনফরমেশন দরকার! তুই এক সপ্তাহ মতো ওই বাসাটায় কাজ করেছিস! ওই বাসার মালিক কে আমরা তাকে খুঁজছি তুই আমাদের তার ঠিকানা দে।’
‘ স্যার কার ঠিকানা চাইতাছেন মালিকের?’
‘ হ্যা।’
‘ হেইডা আমি কন থিকা দিমু।’
‘কোথা থেকে দিবি মানে?ওই বাসার মালিক এর জন্য রান্না করেছিস। তাহলে চিনিস না তাকে তোরা। বিবরণ দে। তাদের নাম বল। আর তারা এখন কেউ বাসায় নাই তারা আছে কোথায়?’
‘স্যার মুই তো এসব কিছুই জানি না।’
‘বোকা পেয়েছিস আমাদের জানিস না! ওই বাসার কাউকেই তুই চিনিস না তাহলে তুই রান্না করতি কার জন্য।আর তোকের ওই বাসায় রান্নার কাজ টা দিয়েছিল কে আর এত তাড়াতাড়ি কাজ ছেড়ে দিলি কেন?’
‘ স্যার মুই তো ছারি নাই আমারে তো কাজে থেকে বের কইরা দিছে। বাসার মালিক রে জীবনে দেখি নাই কিন্তু আমারে নিছিল হাসেম চাচা। কাজে লিগা ঘুরতে ছিলাম। তখন ঐ হাসেমের লাগে আমার দেখা হয়। আর তিনি আমারে ওই বাসায় কাজটা দেয়। বলে দুপুরে রান্নাটা ভালো করতে হইবো রান্না কইরা দিয়াই চইলা আসতাম। কিন্তু এক সপ্তাহ পর কি হইল আমারে নিজে থেকে বের করে দিলো। কতো কইলাম চাকরিটা আমার দরকার। টাকা দিতো অনেক একটু কাজের জন্য অনেক টাকা এজন্য খুব করতে চাইছিলাম। কিন্তু আমার রাখেনাই কি করুম আর তারপর থেকে আমি আর ওই বাসায় যায় নাই। হাসেম চাচা রে ও আর খুইজা পাইনাই।’
‘সে হাসেমের ঠিকানা দাও।’
‘তার ঠিকানা কই থিকা দিমু। তার ঠিকানা তো আমি জানিনা।’
‘ হোয়াট? একটা বাসায় কাজ করলি আর তাদের কোন খোঁজখবর জানিস না হাসেমের নাম্বার আছে তো সেটা দে।’
‘ক্ষমা করেন স্যার তার নাম্বার ও তো নাই।’
পুলিশ হতাশ হয়ে ফিরে আসলো রফিকের থেকে কোন খবর পেল না। ও কিছুই জানে না সবকিছুই ধোঁয়াশা রয়ে গেল।
নিবিড় চৌধুরী পুলিশকে ফোন দেয়।
‘হ্যালো অফিসার, আমার মেয়ের কোনো খোঁজ পেয়েছেন?’
‘সরি স্যার আমরা এখনো কোনো খোঁজ পায়নি। ওই বাসার সবকিছু রহস্য রয়ে গেছে।
যার কাছে গিয়েছিলাম এত আশা নিয়ে তিনি ও কোন খবর দিতে পারেনি। কিন্তু তাকে আমরা নিজেদের সাথে নিয়ে যাচ্ছি। অন্য একজনের নাম বলছে হাসেম করে আমরা তাঁর মুখের বিবরণ দেখে হাসেমের ছবি আর্ট করে তাকে খুঁজবো আমার মনে হয় তার মাধ্যমে আমরা সবকিছু হদিস পেয়ে যাব।’
‘ওই নাম্বার কি খুলেছে?’
‘না স্যার ওই নাম্বারটা আর খোলা হয়নি এজন্য আমরা নাম্বারটা ট্যাগ করতে পারিনি আর।’
থানায় এসে অফিসার চেয়ারে বসে কফি চাইল।এত ঘোরাঘুরি করল। কিন্তু কোন খবর পাওয়া গেল না।মেয়েটাকে পাগলের মত হন্যে হয়ে খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না এত চেষ্টার পরেও কোনো ক্লু পাচ্ছে না। মাথা ব্যথা করছে কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো।
‘স্যার আপনার কফি!’
‘রেখে যাও।’
কপি খাচ্ছে একটু শান্তি মত কিন্তু এই শান্তির আর বেশিক্ষণ রইল না দুই মিনিটের মাঝে দুজন লোক আসলো থানায় এসে সোজা তার কফি খাওয়ার ডিস্টার্ব করল।
বিরক্তের নাক মুখ কুঁচকে আসছে তার। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। একজন মহিলা ও একজন পুরুষ তারা এসে লোকটার সামনে চেয়ারে বসে পড়ল আর পুলিশ টার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘অফিসারঃ আপনি আমাদের মেয়েকে বাঁচান।’
আবার মেয়ে! পৃথিবীর সবার মেয়ের কি একসাথে প্রবলেম হতে হলো?মেয়ে হারিয়ে গেছে মেয়ে, কিডন্যাপ হয়েছে, এমন এই 15 দিনে পাঁচটা এসেছে। আবার আজকে আরেকটা। কোন দিকে যাব আমরা।
‘সরি এখন কোন কেস নেওয়া হবে না আপনারা পরে আসুন!’
‘এসব কি বলছেন পরে আসবো মানে। ওইদিকে আমার মেয়েটা মরে যাচ্ছে। আর আপনি পরে আসতে বলছেন?’
রেগে চিৎকার-চেচামেচি করতে লাগলো মাথা ধরেছে তারপরে সব আর নিতে পারল না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘জ্বি বলেন।কলেজ থেকে আর বাসায় ফিরেনি নাকি বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে?
‘কোনোটাই না অফিসার!’
‘তাহলে কি?’
‘ আমাদের মেয়েকে ফাঁসিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে। তারপর অত্যাচার করছে। এখন সে অসুস্থ হয়ে হসপিটালে পড়ে আছে।আমরা সেদিন গিয়েছিলাম জোর করে বিয়ে দেওয়ার জন্য। মেয়েকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কিন্তু তারা বলেছে তারা ফিরিয়ে দেবেনা।বউ হিসাবে মেনে নেবে কিন্তু তারা মেনে নেয় না। ছেলে অন্য একজনের প্রেমে মগ্ন। আর আমাদের মেয়েটাকে অত্যাচার করে অসুস্থ করে ফেলেছে। আমরা ওর হাজবেন্ড অভ্রের নামে কেস করতে এসেছি। অফিসার আদিল আপনি ওই ছেলেটাকে উচিত শিক্ষা দেবেন আমাদের মেয়ের উপর অত্যাচার করার জন্য।’
কেস লেখিয়ে চলে গেল শয়তানি হাসি দিয়ে নিদ্রার চাচা চাচি। বাইরে আসতেই তাদের ফোন বেজে উঠল।
হাতে নিয়ে দেখে আরিয়ানের কল।
‘হ্যালো বাবা!
‘তোমরা কোথায়?’ গম্ভীর গলায় বলল আরিয়ান।
‘থানায় এসেছিলাম নিদ্রার হাজবেন্ডের নামে কেস করতে। এবার খুব তাড়াতাড়ি ওদের ডিভোর্স হয়ে যাবে। টেনশন নিস না নিদ্রা শুধু তোরই থাকবে।’
‘ওই ছেলেকে তো আমি খুন করে ফেলতাম ও আমার নিদ্রা কে বিয়ে করেছে। ওদের তাড়াতাড়ি আলাদা করো না হলে আমি আলাদা করতে আসলি কাউকে মরতে হবে।’
‘যা করার এবার পুলিশ করবে তুই মাথা গরম করিস না বাবু।’
‘ওকে রাখছি!’
আদিল ক্লান্ত হয়ে চেয়ারে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
পাশ থেকে আদিলের এক বন্ধু টাইপের লোক এসে বললো, ‘কি ব্যাপার আদিল তোমার শরীর খারাপ নাকি? কেমন যেন অসুস্থ লাগছে!’
‘আরে না ওই নিবিড় চৌধুরীর মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে অর্ধেক পাগল হয়ে যাচ্ছে আমি।’
‘হ্যাঁ তা তো বটেই। লোকটা খুবই চালাক না হলে এত বড় বড় পুলিশ অফিসাররা খুঁজেও তার হদিস মিলছে না ভাবা যায়।’
‘আর তার এই সমস্ত প্যারা আমার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে! ওনার জন্য আমি দিনরাত একটা টাইম শান্তিতে চোখ বুজে উঠতে পারি না। সারাক্ষণ ফোন দিতে দিতে আমার মাথাটাই খারাপ করে দেয়।’
‘কেসটা আমার উপর ছিল ভাগ্যিস তোমার উপর দিতে পেরেছিলাম। এজন্য আমি শান্তিতে আছি না হলে এসব প্যারা তো আমাকে সহ্য করতে হতো।’
‘শালা আমাকে ফাঁসিয়ে এখন আনন্দের হাসি দিচ্ছিস।’
‘ তা তো দিচ্ছি ই।এখন আবার এরা কার জন্য এসেছিল?’
‘ওনাদের মেয়েকে নাকি জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ছেলের সাথে। এখন অত্যাচার করে হসপিটালে ভর্তি হয়ে আছে। ওনারা নাকি বিয়ের খবর কিছুই জানতেন না। আজকে আর কোন জায়গায় যাচ্ছিনা সব পরে দেখা যাবে।’
‘ হুম রেস্ট নাও। আসি।’
আদিল এর সামনে থেকে চলে গেলো।
বর্ষাকে একটা অন্ধকার রুমে দুইদিন ধরে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে। সেদিন ওই সাহসিকতা দেখানোর জন্য। বর্ষার চোখ বন্ধ পেটে খিদের যন্ত্রণা আর হাত পা বেঁধে রেখে খুব শক্ত করে এজন্য ওর অবস্থা খুব খারাপ। একবার ও আলো জ্বলে নি। কেউ আসিনি। মুখ ও বাঁধা এজন্য ও আওয়াজ ও করতে পারে না। সারা শরীর এ অসহ্য যন্ত্রণা হয় ওর। আজকেও জ্ঞান ফিরতেই চেয়ারে বাঁধা হাত পা নাড়াতে যায় আজ ব্যাথা কম লাগছে।
কাল তো ছিঁড়ে যাচ্ছি লো। ও বাঁধন ছুটানোর জন্য নড়াচড়া করলো তারপর দূর্বল শরীর নিয়ে পরে রইলো। আর জ্ঞান হারালো।
চোখ খুললো কারো স্পর্শে। আধো আধো চোখ মেলে একটু আলোর ঝলকানি এসে ওর চোখে লাগলো। ও সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে আবার তাকালো। ওর সামনে বসে আছে তূর্য। ও দেখতে পেলো ও চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় নেই। তূর্য ওকে নিয়ে বিছানায় আছে। তূর্য ওর চোখের পানি মুছে দিচ্ছে তারপর ওর কপালে গালে চুমু খেয়ে যাচ্ছে। বর্ষা কথা বলতে চাইলো পারলো না। না খেয়ে ওই ভাবে বাধা অবস্থায় থেকে ওর সারা শরীর নিস্তেজ হয়ে গেছে। কোন শক্তি নাই।
ও নড়াচড়া করতে পারছে না। শুধু চোখ মেলে তূর্য নামক এই পাষাণ লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্য ওর উপর থেকে উঠে এসে পায়ের কাছে বসে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। আঘাত পাওয়া জায়গা ফূ দিয়ে দিয়ে মলম লাগাচ্ছে। আর তাতে বর্ষা কেঁপে উঠছে। সেদিন বর্ষা ওসব করার পর তূর্য ওকে ওর অন্য বাড়ি নিয়ে আসে আর রেগে ওকে একটা রুম হাত পা বেঁধে রুম অন্ধকার রেখে চলে যায়।
তূর্য ওর মলম লাগানো শেষ করে বর্ষাকে সুপ খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর ওর মুখের কাছে ঝুঁকে বলে,
‘ তোমার জন্য আমাকে অনেক কিছু সাফার করতে হয়েছে তাই এতোটা কঠোর আমাকে হতেই হলো।আগেই বলেছিলাম বাড়াবাড়ি করো না। সময় মতো পৌঁছে দেবো।শুনলে না এবার ভোগ করো বর্ষা মনি। ‘
বলেই তূর্য বর্ষার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
#তুমি_যে_আমার🥀
#Writer_Nondini_Nila
#Part_23
একদিন
রাত বারোটা বাজে তখন কলিং বেল বাজতে লাগলো। যেন ডাকাত পরেছে। এমন শব্দের নিবিড় চৌধুরী তরিগড়ি করে ঘুম থেকে উঠে পরলো। এমন বেল বাজাচ্ছে কে? উঠে গিয়ে রুমের লাইট জ্বালালো। সারা রুমে আলোকিত হয়ে উঠলো। আর সাথে সাথে কলিং বেল বাজানো বন্ধ হয়ে গেলো। শব্দের আওয়াজ না পেয়ে উনি কপাল কুঁচকে রইলো। বর্ষার মাও দপ করে উঠে গেছে বিছানায় থেকে জেগে উঠে।
উঠেই বলে উঠলো,
-‘ আমার বর্ষা এসেছে..!!’
নিবিড় চৌধুরী চমকে স্ত্রীর দিকে তাকালো। তিনি ঘরির দিকে তাকিয়ে ভাবছে এতো রাতে কে এলো? আর কেই বা এমন অসভ্যের মতো বেল বাজাতে লাগলো? উনি স্ত্রীর কথার উত্তর না দিয়ে বারান্দার গিয়ে উঁকি মারলো। কি ভেবে বের হতে যাবে। তার আগেই বর্ষার মা ছুটে গেলো নিচে। তাকে এমন ছুটতে দেখে বর্ষার বাবা ও পেছনে যাচ্ছে। অসুস্থ মানুষ আবার পরে টড়ে ব্যাথা না খায় দেখার জন্য।
বর্ষার মা দরজা খুলতে যাবে পেছনে থেকে বর্ষার বাবা চেঁচিয়ে বললো, – ‘ দরজা খুলো না। কে না কে এমন বেয়াদবের মতো কলিং বেল বাজালো। রিক্সি ব্যাপারটা।’
বর্ষার মা তার কানে ও নিলো না কথা গুলো। উনি দরজা খুলে দিলেন।বর্ষার বাবা চিৎকার করে দরজা লাগাতে এসে থমকে গেলো। বর্ষার মা কাকে যেন জরিয়ে ধরে কাঁদছে। তিনি হালকা করে তাকে দেখলো। এ তো তার একমাত্র মেয়ে। তার প্রিন্সেস।
বর্ষার শরীরে কালো গেঞ্জি ও হলুদ প্লাজো। আগের থেকে অনেকটা শুকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। হাতে ও পায়ে ব্যান্ডেজ। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। বর্ষার মা মেয়েকে ধরে কান্না করছে বর্ষার বাবা ছুটে গিয়ে বর্ষার মাকে বর্ষার থেকে সরিয়ে দিলো। আর বর্ষার শুকনো মুখটার দিকে তাকালো কি অবস্থা হয়েছে মেয়ের। তবু ও মেয়েকে ফিরে পেয়ে শান্তি পাচ্ছেন। বর্ষা দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না তারাতাড়ি ওকে রুমে নিয়ে আসে। আর ডাক্তার কে কল করে।সাথে পুলিশ কেও।ক্ষমতা শীল লোকরা যখন তখন ডাক্তার পায়। বর্ষা রুমে এসেই জ্ঞান হারিয়েছে। ডাক্তার এসে ওকে দেখছে। বর্ষার মা মেয়ের হাত ধরে বসে আছে। পুলিশ এসে হাজির। অফিসার আদিল নিবিড় চৌধুরী এর সামনে এসে দাড়ালো।
‘ আপনার হারানো মেয়ে পেলেন কোথায়? এতো দিন পাগলা কুকুরের মতো দৌড় পারলাম তাও পেলান না। আর আজ একটু রেস্টে ছিলাম মেয়ে একদম বাসায় চলে এলো How is that possible?’
‘সেসব তো আমিও জানি না অফিসার!হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় কলিংবেলের শব্দে আর আমি এক নাগাড়ে কলিংবেলের শব্দ পাই। রুমের লাইট জ্বালাতে শব্দ টা বন্ধ হয়ে যায়। আর তারপর আমার স্ত্রী নিজে এসে দরজা খুলে দেখে আমাদের মেয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টা দেখে আমিও স্তব্ধ হয়ে গেছি।যাকে এত দিন ধরে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সে নিজেই দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।’
‘আপনি কি বলতে চান আপনার মেয়ে একাই ফিরে এসেছে?’
‘না ওর যে অবস্থা ও এক কদমও একা চলতে পারবেনা।’
‘ তাহলে? আপনি আরও কাও কে কি দেখেছেন ওর সাথে?”
‘তা দেখি নি। কিন্তু বারান্দা থেকে আমি একটা গাড়ির আওয়াজ পেয়েছি। কিন্তু গাড়িটা দেখতে পাইনি। আমার মনে হয় গাড়ি টাই বর্ষাকে এখানে পৌঁছে দিয়েছি।’
‘গাড়িটা কি রংয়ের নাম্বার কি কিছু কি একটু হলেও দেখেছিলেন?’
‘বললাম তো গাড়িটা আমি দেখিনি শুধু আওয়াজ শুনেছি।’
‘আপনার বাসার দারোয়ান তো জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে।’
‘এটা ওই লোকটার ই কাজ।’
‘কিডন্যাপ করে মুক্তিপণ চাইল না আবার আপনার মেয়েকে নিজে থেকে ফিরিয়ে দিয়ে গেল তাদের উদ্দেশ্য কি হতে পারে?’
‘সেটাইতো আমি বুঝতে পারতাছি না কিন্তু আমার মেয়ের উপর যে খুব অত্যাচার করেছে। সেটা আমি নিশ্চিত আমার কলিজা আমার বর্ষার কি অবস্থা করেছে? দেখেছেন তো আপনি। মেয়ে আমি ফেরত পেয়েছি। কিন্তু অদের কে আপনি ছাড়বেন না। যেভাবেই হোক ওদের খোজ লাগান। বাসার বাইরে সিসি ক্যামেরা আছে আপনি একবার চেক করে নিন অফিসার।’
‘ওকে ডোন্ট ওয়ারি কিডনাপার টাকে তো আমরা খুঁজে বের করবই। আপনি চিন্তা করবেন না মেয়ের যত্ন নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ডাক্তার তো বলল দুর্বলতা জন্য এমন হয়েছে।’
‘হ্যা।’
নিবিড় চৌধুরী চলে গেল ডাক্তারের সাথে কথা বলতে। আদিল ও পিছন পিছন আসলো। আর ডাক্তার কি বলছে শুনলো সাথে একজন বর্ষাকে দেখে নিলো। তারপর নিঃশব্দে বেরিয়ে এলো। বর্ষাকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করা হয়নি। আর হাতে ও পায়ে আঘাত দেখে বুঝতে পেরেছে শক্ত কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল এজন্য ক্ষত হয়েছে। আর কোন গভীর আঘাত নেই শরীরে। দুদিনের মধ্যেই সেরে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
নিবিড় চৌধুরী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। বাইরের ক্যামেরা চেক করে আদিল ও নিবিড় চৌধুরী কিন্তু ব্যাডলাক যে সময়টাতে বর্ষাকে গেটের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে সেই সময়টার ফুটেজ নাই। নিবিড় চৌধুরীও আদিল দুজনে অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকালো।এটা কি করে সম্ভব? তাহলে কেউ তাদের সাহায্য করেছে নাহলে এটা পসিবল হতো না।
কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে বেরিয়ে এলো দুজনে। তাদের ভরষা এখন বর্ষা।ও সুস্থ হলে সব বলতে পারবে। সেই মোতাবেক কাজ করতে হবে। আদিল বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
দারোয়ান কে পানির ছিটা দিয়ে জ্ঞান ফেরানো হয়েছে তিনিও কিছুই বলতে পারেনি। দুইদিন পর বর্ষা অনেকটা সুস্থ হয় কথা বলে না চুপচাপ থাকে সবসময়। দু-একটা কথা ছাড়া ওকে দিয়ে কেউ কথা বলাতে পারে না। মাথা নিচু করে পাথর হয়ে বসে থাকে বর্ষা।কি যেন চিন্তা ভাবনা করে সবসময় ওর মা বোন আত্মীয়স্বজন সবাই এসে পরেছে ওর খবর শোনা মাত্র।সবাই অনেক কথা বলছে, ও কোথায় ছিল? কে ওকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল? এতদিন কিভাবে কাটলো? নানা কথা জিজ্ঞেস করে কিন্তু ও কিছু বলে না উল্টা চেচামেচি করে এসব জিজ্ঞেস করলে। তাই এখন আর কেউ কিছু বলে না। এসবের জন্য পুলিশ আর বাড়িতে আসেনি নিবিড় চৌধুরী মেয়ের ক্ষতি হওয়ার ভয়ে তাদের কেউ আসতে বারণ করে দিয়েছে।
আজ তিন বর্ষা বাড়ি এসেছে।ও বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে ঘুম আসছে না। মা ওর সাথে শুয়েছে। ওকে একা রাখেনা। ও ডিম লাইটের আলোতে মায়ের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে পা টিপে টিপে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলো। দরজার বাইরে এক পা রাখতেই কিসের যেন শব্দ পেয়ে মুখ চেপে ধরে আবার পেছনে চলে গেলো।বাবা জেগে আছে। আবার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ল ঘুম চলে আসছে। ও জোর করে নিজের ঘুম ছুটিয়ে তাকিয়ে আছে। 10 মিনিট পর আবার পা টিপে টিপে বেরিয়ে এল খুব সাবধানে। সোজা চলে গেল বাবার লাইব্রেরীতে। যেখানে বইয়ের ছড়াছড়ি। সব বই ঘটে গুটে একটা হলুদ কালারের ফাইল হাতে নিলো। তারপর আবার পা টিপে টিপে মেইন ডোর এর কাছে চলে এলো।
হাত-পা কাঁপছে বর্ষার। এখনো শরীর অনেকটাই দুর্বল। তবু ও অনেক কষ্টে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। দারোয়ান চাচা গেটের কাছে নাই। কে সরিয়ে ও জানে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফাইলটা বুকে চেপে ধরে গেটের বাইরে চলে এলো।
দক্ষিণ দিকে হাটতে লাগলো। পাঁচ মিনিট হাঁটার পর একটা লাল রঙের গাড়ি দেখতে পেল। যেখানে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কালো পোশাক ও মাক্স পরিহিত একজন লোক। সে আর কেউ না তূর্য। তূর্য বর্ষার গুটি গুটি পায়ে হেঁটে আসা দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখানে ল্যাম্পপোস্টের আলো নাই অন্ধকার কিন্তু আকাশে চাঁদের আলো আছে। যাতে বর্ষার পরনে সাদা স্কার্ট ও খয়েরি টপস মৃদু মৃদু দেখা যাচ্ছে। বর্ষার সামনে এসেই ওর হাতের ফাইলটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিলো। তূর্য ফাইল না ধরে বর্ষার নরম হাত ধরলো। বর্ষা চমকে তাকালো। আর হাত ছাড়াতে চেষ্টা করলো। তূর্য না ছেড়ে আরো শক্ত করে ধরে হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে কোমড় জড়িয়ে নিলো। বর্ষার সারা শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো ভয়ে আঁতকে উঠলো। ঢোক গিলেএ দিকে ওদিক তাকাচ্ছে। তূর্য কখন যে নিজের মুখের মাক্স খুলেছে বর্ষা জানে না। কপালে চুমু দিতেই বর্ষার ছটফটানি চলে গেল। ও চোখ বন্ধ করে তূর্য এর স্পর্শ অনুভব করতে লাগলো। এই স্পর্শ ওর খারাপ লাগে না। কিন্তু মানুষ টাকে খারাপ লাগে ঘৃণা লাগে।
‘ছারুন আমাকে? আপনার যেটা দরকার সেটা তো দিলাম এটা রেখে এবার আমাকে মুক্তি দিন।’
তূর্য বর্ষার কথার উত্তর দিল না। মাথা ঝুঁকিয়ে বর্ষার কোমড় থেকে একহাত উঠিয়ে ওর মাথায় পেছনে চুল শক্ত করে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলো। তারপর ঝট করেই বর্ষাকে ছেড়ে সরে দাঁড়ালো। বর্ষা দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে। তূর্য ওর ঠোট মুছে বর্ষার হাত থেকে ফাইল টা টান দিয়ে নিজের হাতে নিয়ে নেয়। আর বলে,
‘গেট আউট।’
বর্ষা আর তাকালো না পেছন ঘুরে চলে গেলো। রুমে যেতেই মা জেগে গেলো আর বলল কোথায় গিয়েছিলি তুই? অবাক হয়ে।
বর্ষা ঢোক গিলে বলে, ‘ পানি খেতে।
#চলবে…….