#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১১
—-“তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে তানজু কিসব বলছো তুমি…?’
“একরাশ হতাশা নিয়ে কথাটা বলে উঠল রিয়াদ তানজুকে!’কারন তানজু তাকে তার সাথে তার বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার অফার করেছে আর তা শুনেই রিয়াদের এমন রিয়েক্ট!’তানজু রিয়াদের কথা শুনে রিয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ
—“মাথা খারাপ হবে কেন স্যার সিরিয়াসলি বলছি আমার সাথে চলুন স্যার দেখবেন ভালো লাগবে,আর এমনিতেও আপনার নতুন মুভির শুটিং শুরু হতে এখনও তো দু সপ্তাহ বাকি…
—“কিন্তু তানজু…
—“আবার কিন্তু কিসের স্যার হয়তো আপনি যেসব পরিবেশে থাকেন তার থেকে আমাদের পরিবেশটা টোটালি ভিন্ন,,আপনার সমস্যা হতে পারে একটু কিন্তু তারপরও বলবো চলুন স্যার অনেক তো বিদেশের হাওয়া খেলেন এখন না হয় একটু আমাদের গ্রামের হাওয়া খাবেন….
“তানজুর কথা শুনে চুপ করে রইলো রিয়াদ!’রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে তানজু আবারো বলে উঠলঃ
—“দেখুন স্যার এখানে থাকলে রোজ রোজ আপনাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে তানজুর সাথে আপনার সম্পর্ক আছে কিনা, তাই আমার সাথে চলুন কিছুদিন তো এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন..
—“তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না তানজু…
—“আমাদের কিসের অসুবিধা স্যার আর আপনার ভালো না লাগলে আপনি চলেন আসবেন, বাট আই ছোআর আপনার খুব ভালো লাগবে…
“রিয়াদ তানজুর কথা শুনে চুপচাপ ভাবতে লাগলো!’রিয়াদকে ভাবতে দেখে তানজু রিয়াদের আর একটু কাছে গিয়ে বললোঃ
—“কি হলো স্যার যাবেন?’
“রিয়াদ চুপ!’
—”এই অফার কিন্তু বার বার আসবে না স্যার আপনি গেলে আপনাকে আমাদের গ্রামের বিখ্যাত আম খাওয়ামু নে..(দাঁত কেলানি হাসি দিয়ে)
“তানজুর কথা শুনে হাল্কা হাসলো রিয়াদ!’কিছুক্ষন পর তানজু আবারো বলে উঠলঃ
—“কি হলো স্যার কথা বলছেন না কেন?’আপনি যাবেন না…?’
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ চোখ তুলে তাকালো তানজুর দিকে!’রিয়াদের চাহনী দেখে তানজু নিরাশ হয়ে বললোঃ
—“বুঝেছি আপনার যাওয়ার ইচ্ছে নেই ঠিক আছে আপনাকে যেতে হবে না আমি তাহলে এখন যাই স্যার…
“এতটুকু বলে তানজু চলে যেতে নেয়,,তানজুকে যেতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“ওয়েট!’
“রিয়াদের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে তানজু তারপর হেঁটে রিয়াদের সামনে গিয়ে বলেঃ
—“হুম বলুন স্যার…
—“যাবো আমি…
“রিয়াদের কথা শুনে খুশি হয়ে যায় তানজু!’ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে বলে সেঃ
—“সত্যি স্যার…
“উওরে মাথা নাড়িয়ে বলে রিয়াদঃ
—“হুম…
—“তাহলে স্যার তাড়াতাড়ি আপনি আপনার ব্যাগপএ গুছিয়ে নিন ওয়েট আপনাকে গুছাতে হবে না আমি গুছিয়ে দিচ্ছি কি কি নিবেন স্যার বলুন আমায়…
“এই বলে তানজু তাড়াতাড়ি আলমারির পাশ থেকে রিয়াদের ব্যাগটা নিয়ে আসে!’তানজুর কাজ দেখে রিয়াদ হেঁসে বলে উঠলঃ
—“কুল ডাউন তানজু,এত তাড়াহুড়ো করতে হবে না তুমি গিয়ে ঘুমাও আমি করে নেবো…
—“পাক্কা স্যার…
—“হুম পাক্কা তুমি যাও…
—“ঠিক আছে স্যার…
“এই বলে রিয়াদের ব্যাগ বিছানার উপর রেখেই চলে যেতে নেয় তানজু দরজার কাছ পর্যন্ত যেতেই আবার রিয়াদের কাছে ফিরে এসে বলে সেঃ
—“আর একটা কথা বলবো স্যার…
“তানজুর কথা শুনে পিছন ফিরে তাকায় রিয়াদ তারপর বলেঃ
—“হুম বলো….
—“বলছিলাম স্যার আপনি যখন যাবেন আমার সাথে তাহলে আর আপনার গার্ডদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই…
—“ওহ এই ব্যাপার ঠিক আছে…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু হেঁসে বলেঃ
—“থ্যাংক ইউ সো মাচ স্যার…
“এতটুকু বলেই দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে!’তানজুর কান্ড দেখে রিয়াদ হেঁসে বলে ফেলেঃ
—“আসলেই পাগলী একটা…
“তারপর রিয়াদ রুমের দরজা বন্ধ করে ব্যাগ গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে!’
__________
“রাত_১ঃ০০টা….
“বেঘোরে ঘুমাচ্ছে তাসলিমা এমন সময় ফোনটা বেজে উঠলো তার!’এত রাতে ফোন বাজতে দেখে চমকে উঠলো সে,ফোন হাতে উপরে তানজুর নাম দেখে কিছুটা অবাক হয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে সেঃ
—“হ্যালো…
“তাসলিমার কথা শুনে অপরপাশে তানজু তার রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে বলে উঠলঃ
—“আপু ঘুমাচ্ছো…
—“তুই এতরাতে এই কথাটা বলার জন্য আমায় ফোন করেছিস..!”
—“আরে না…
—“তাহলে…
—“আসলে হয়েছে কি আপু আমার সাথে রিয়াদ স্যারও যাবে আমাদের বাড়িতে…
“তানজুর কথা শুনে তাসলিমার ঘুম উধাও!’চোখ বড় বড় করে বলে সেঃ
—“সত্যি বলছিস তুই?’
—“হুম আপু,তুমি মা বাবাকে বলে দিও…
—-“তা না হয় বলবো…
“এমন সময় তাসলিমার পাশে শুয়ে থাকা তার মা বলে উঠলঃ
—“এত রাতে কার সাথে কথা বলছিস তুই?’
“তাসলিমা তার মায়ের কথা শুনে ফোন কানে নিয়েই বলেঃ
—-“তানজু মা…
—“এতরাতে কি বলছে..
—“মা তানজুর সাথে তানজু স্যারও আসবে আমাদের বাড়িতে…
—“কি বলিস দেখি ফোনটা আমায় দে…
“এই বলে তাসলিমার হাত থেকে ফোন নিয়ে বললেন তানজুর মাঃ
—“সত্যি বলছিস তানজু…
—“হুম মা,
—“আমি খুব খুশি হয়েছি এমনিতেও আমার ইচ্ছে ছিল তোকে বলার যাতে রিয়াদও তোর সাথে আসে কিন্তু ওতো বড় সেলিব্রেটি কি আমাদের এখানে আসবে তাই আর বলি নি…
—“রিয়াদ স্যার সেলিব্রেটি হলে কি হবে এমনিতে খুব ভালো মানুষ,,তুমি বাবাকে বলে দিও আর ওনার থাকার ব্যবস্থাটা…
—“তুই কোনো চিন্তা করিস না আমরা সব মেনেজ করে নিবো…
—“ঠিক আছে মা কাল দেখা হবে বাই…
—“হুম রাখ…
“তারপর খুশি মনে ফোনটা কেটে দেয় তানজু!’জোৎসা ভরা রাতে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তানজু দৌড়ে রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে,,প্রচন্ড খুশি সে!’খুশিতে নাগিন ড্যান্স করতে ইচ্ছে করছে তাঁর!’
______
“পরেরদিন….
“সকাল_৯ঃ০০টা….
“ঢাকার রেলস্টেশনের প্লাটফর্মের সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ তানজু!’তানজুর পরনে ওয়াইট জর্জেট থ্রি-পিচ চুলগুলো সুন্দর করে বেনুনি করা সাথে সাদা কাঁচের চুড়ি,চোখে কাজল ঠোঁটে লাল লিপস্টিক আর মুখে হাল্কা মেকাপে সুন্দর লাগছে তাকে!’আর ওর পাশেই রিয়াদ রেড টিশার্টের ওপর কালো জ্যাকেট আর কালো জিন্স মুখে মাস্ক আর মাথায় টুপি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!’এরই মাঝে তানজু বলে উঠলঃ
—“আপনি দু’মিনিট দাঁড়ান স্যার আমি আপনার জন্য কেভিন আর আমার জন্য বগি ঠিক করে আসি…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ বলে উঠলঃ
—“আমার জন্য কেভিন কেন আমিও বগিতে করেই যাবো…
—“না মানে স্যার…
—“কোনো মানে নেই তোমার সাথে যখন যাচ্ছি তখন তুমি যেভাবে যাবে আমিও সেভাবে যাবো…
—“কিন্তু স্যার এভাবে পাবলিক প্লেসের মাঝে আপনাকে কেউ চিনে ফেললে…
—“চিনবে না ডোন্ট ওয়ারি….
—“ওকে স্যার…
“এতটুকু বলে তানজু চলে যায় টিকিট কাউন্টারের কাছে!’
_______
“সামনাসামনি দুটো বগির সিটের জানালার ধারে বসে আছে রিয়াদ তানজু!’কিছুক্ষনের মধ্যেই তাদের ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে!’তানজু রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো স্যার…
—“এত প্যারা নেও কেন আমি ঠিক আছি…
“উওরে হাল্কা হাসে তানজু!’হঠাৎই বলে উঠল সেঃ
—“আপনি বসুন স্যার আমি কিছু নিয়ে আসি….
—“কি নিয়ে আসবে…?’
—“আপনি বসুন স্যার আমি আসছি…
—“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো..
—“হুম স্যার….
“এতটুকু বলে চলে যায় তানজু,আর রিয়াদ মেবাইল হাতে মাথা নিচু করে বসে থাকে!’
“কিছুক্ষনের মধ্যেই মাইকে এনাউন্সমেন্ট করা হয় কিছুক্ষনের মধ্যেই তাদের ট্রেন রাজশাহীর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাবে!’মাইকের কথা শুনে রিয়াদ জানালা দিয়ে আশেপাশে তাকায় তানজুকে দেখার জন্য কিন্তু না তানজু আশেপাশে নেই,,এরই মধ্যে ট্রেন স্টার্ট দিতে শুরু করল রিয়াদ তা দেখে তানজুকে ফোন করবে তার আগেই তানজু হাজির!’হাতে দু’প্যাকেট পপকন নিয়ে এসে সিঁটে বসে পরলো সে!’তারপর রিয়াদের দিকে এক প্যাকেট বারিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“নিন স্যার….
“তানজুর কাজ দেখে রিয়াদ হাতে পককনের প্যাকেটটা নিয়ে বলে উঠলঃ
—“লাইক সিরিয়ালি তানজু তুমি এগুলো কেনার জন্য বাহিরে গিয়েছিলে…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু হেঁসে বলে উঠলঃ
—“জ্বি স্যার…
—“তুমিও না…
“হেঁসে উঠলো তানজু!’
“এরই ভিতর ট্রেন চলতে শুরু করলো তার আপন গতিতে!’ট্রেনকে চলতে দেখে তানজু রিয়াদ দু’জনেই জানালার বাহিরে তাকালো,,আস্তে আস্তে ঢাকার রেলস্টেশনকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো তাঁরা….
“সবুজ শ্যামলার মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে চলছে রিয়াদ তানজু!’গ্রামের হাওয়া এখান থেকেই ফিল করছে রিয়াদ,এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর ভিতর!’ রিয়াদ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে,,তার চোখের সামনেই রয়েছে বিশাল বড় ফসলের মাঠ যার চার দিকটাই সবুজে ঘেরা,দু’একটা মানুষ দেখা যায় মাঝেসাজে, যার বেশির ভাগ মানুষই গরু সাথে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মাঠের দিকে হয়তো ঘাস খাওয়ানোর জন্য..
“ধীরে ধীরে মাঠের গভীরতা আরো বাড়তে লাগলো সাথে সূর্য্যিমামাও তার নিজস্ব আলোতে সবুজের বুকে রোদ্দুর ফেলে রূপ দিচ্ছে সোনালি বর্নের,,রিয়াদ জাস্ট পলকবিহীন তাকিয়ে আছে বাহিরের দিকে,যেন প্রকৃতি তাকে টানছে,,প্রকৃতির মুগ্ধ করা পরিবেশেই হারিয়ে যাচ্ছে সে…..
!
!
!
!
!
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১২ #স্পেশাল_পর্ব
“অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রিয়াদ বাহিরের প্রকৃতির দিকে,গ্রামবাংলার সবুজকে এত কাছ থেকে এই প্রথম দেখছে রিয়াদ,নিমিষেই রিয়াদ তার চোখ বন্ধ করে নিলো, সাথে সাথে সে ফিল করছে কিছু জিনিস মস্ত বড় ধবধবে সাদা বর্নের রোদ্দুরে চিক চিক করা আকাশ,যার সূর্যের আলোতে পুরো ট্রেনের ভিতরটা জ্বল জ্বল করছে,চারপাশ থেকে বয়ে আসছে শীতলাতাপ নিয়ন্ত্রিত মন মাতাল করা বাতাস,সাথে কানে ভেসে আসছে তার বড় বড় সবুজ ঘাসের বাতাসে উড়ে চলার শব্দ যেন এক মনোমুগ্ধকরা মুহূর্ত,রিয়াদের ভিতর এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে এখন সাথে কিছুটা নিজেকে হাল্কা হাল্কা ফিল হচ্ছে তার,মনটা ফুড়ফুড়ে হয়ে যাচ্ছে রিয়াদের!’এমন সময় হাতে কারো স্পর্শ পেতেই চোখ খুলে তাকালো রিয়াদ সামনে তানজুকে দেখে তাকালো সে তানজুর দিকে!’
“এদিকে তানজু হাল্কা হেঁসে বললোঃ
—“আপনার কি কিছু ফিল হচ্ছে স্যার…
—“কি বল তো..
—“কেন স্যার এই যে মুগ্ধ করা পরিবেশ..
“উওরে মুচকি হাসলো রিয়াদ,তারপর বললো সেঃ
—“থ্যাংক ইউ তানজু…
—“এখনই থ্যাংক ইউ লাগবে না স্যার..
“রিয়াদ কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—“মানে…
—“মানেটা না হয় পরে বলবো…
“উওরে রিয়াদ ও আর কিছু বললো না…!’
“জানালার দিক ঘুরে মুখের মাস্ক খুলে ফেললো সে!’রিয়াদের কাজ দেখে তানজু গিয়ে বসলো রিয়াদের পাশ দিয়ে তারপর বললোঃ
—“এটা কি করছেন স্যার আশেপাশে কেউ দেখলে…
—“দেখবে না তুমি আছো না…
—“আমি আছি মানে..
“উওরে রিয়াদ তার মাথার টুপিটাকে একটু নিচু করে তানজুর গাল টেনে দিয়ে বলে সেঃ
—“নাথিং মাই ফেক গার্লফ্রেন্ড!’
“রিয়াদের কথা আর কাজ দেখে তানজু জাস্ট হাবলার মতো বসে রইলো রিয়াদের পাশ দিয়ে!’আর রিয়াদ জানালার দিক মুখ করে বসে রইলো!’
“২ ঘন্টা পর….
“তানজুদের ট্রেন এসে থামলো রাজশাহী রেলস্টেশনে!’ট্রেন থামতেই একে একে সবাই নেমে পরলো ট্রেন থেকে ট্রেন খালি হতেই রিয়াদ তানজুও নেমে পরলো ট্রেন থেকে!’ট্রেন থেকে নেমে দু’মিনিট হেঁটে তানজু আর রিয়াদ চলে গেল বাস স্ট্যান্ড, বিষয়টাকে তানজুর কাছে একটু আনিজি ফিল লাগছে এত বড় সেলিব্রেটিকে কি করে বাসে করে নিয়ে যাবে সে!’কিন্তু আর কোনো উপায়ও তো নেই এসব ভাবছে আর নীরবে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’তানজুকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“কি হলো দাঁড়িয়ে পরলে যে যাবে না…
“তানজু কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বলে উঠলঃ
—“স্যার আমাদের বাসে করে যেতে হবে…
—“হুম চলো তাহলে..
—“কিন্তু স্যার..
—“এখানে আবার কিন্তু কিসের…
—“আপনার খারাপ লাগবে না তো…
—“খারাপ লাগবে কেন?’
—“না মানে…
—“এতো মানে না খুঁজে চলো তাড়াতাড়ি…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু সস্থির নিশ্বাস ফেললো!’তারপর রিয়াদের হাত ধরে খুশি মনে বললো সেঃ
—“চলুন তাহলে…
—“হুম চলো…
“তারপর রিয়াদ তানজু গিয়ে উঠে পড়লো বাসে!’বাসের নয়-দশ নাম্বারের পাশাপাশি সিটে বসেছে রিয়াদ তানজু!’জানালার পাশ দিয়ে রিয়াদ আর ওর পাশে তানজু!’রিয়াদের অন্যরকম কিছু ফিল হচ্ছে, এসবে একদমই অভ্যস্ত নয় রিয়াদ সারাদিন এসি ওয়ালা গাড়িতে করে চলাচল তার,জীবনে ফাস্ট টাইম বাসে করে কোথাও যাচ্ছে রিয়াদ,শুরুতে গরমে একটু অস্থিরতা ফিল হলেও পরক্ষণেই বাস ছাড়তেই জানালা ভেদ করে বাতাস এসে গায়ে লাগতেই নিমিষেই অস্থিরতা দূর হয়ে গেল তার!’একদমই অন্যরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে রিয়াদের!’গ্রামীণ রাস্তা পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ তানজু!’আশেপাশে শুরুতে দোকান পাট থাকলেই কয়েক কদম দূর যেতেই চোখের সামনে ভেসে আসছে গ্রামীন সব পরিবেশ!’দু’দিকে বড় বড় মাঠসমূহ, মাঠেই চাষিরা চাষ করছে,কেউ ট্রাক্টর চালাচ্ছে,কেউ গরু সাহায্য লাঙল দিচ্ছে,!’গ্রামীণ খাল বিল পেরিয়ে চলছে রিয়াদ তানজু!’ট্রেনের যাত্রার থেকেও এটাই বেশি ইনজয় ফিল করছে রিয়াদ কারন ট্রেনের থেকে একটু বেশি কাছ থেকে সবকিছু দেখছে রিয়াদ!’হঠাৎই কি হলো রিয়াদের মাথা টেনে নিজের দিকে নিয়ে আসলো তানজু!’তানজুর কাজে রিয়াদ অবাক হয়ে বললোঃ
—“এটা কি হলো…
—“বুঝতে পারলেন না স্যার এই মাএই আপনার মাথায় গাছের ডাল লেগে যেতো তো…
—“ওহ!’
—“হুম…
“বলেই তানজু রিয়াদকে ছেড়ে দেয়!’আড়াআড়িভাবে রাস্তার দুপাশেই ছড়িয়ে রয়েছে বড় বড় গাছ!’আর দু’একটা গাছের ডাল এতটাই বড় যে মাঝে মাঝে গাছের ডাল বাসের জানালার ভিতরে চলে আসে!’তাই তো তখন রিয়াদের মাথা ধরা!’বিষয়গুলো একদমই আনকমন রিয়াদের জন্য তাই তো পদে পদে অবাক হচ্ছে সে!….
“৪০ মিনিট পর….
”তানজুদের বাস এসে থামলো “কমলাপুর” (কাল্পনিক নাম বাস্তবে আছে কিনা জানা নেই) বাস স্ট্যান্ডে!’
“এখানেও ব্যতিক্রম কিছু নয় সবাই নামার পরই নামতে লাগলো রিয়াদ আর তানজু!’বাস থেকে নেমেই মুখের মাস্কটা হাল্কা খুলে চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস ফেললো রিয়াদ!’সাথে সাথে নাকে ভেসে আসছে তার মাটির গন্ধ!’এক অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছে তাঁর!’এরই মাঝে গাড়ির ভিতর থেকে নেমে তানজু দাঁড়ালো রিয়াদের পাশে!রিয়াদ তানজুর উপস্থিতি ফিল করে বললোঃ
—“এখন…(মাস্ক পড়ে)
—“আপনি দু’মিনিট দাঁড়ান স্যার আমি এক্ষুনি আসছি…
“বিনিময়ে রিয়াদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় তানজু!’
“কিছুক্ষন পর…
“তানজু একটা ভ্যান গাড়ি নিয়ে এসে বললোঃ
—“চলুন স্যার…
“রিয়াদ তানজুর পাশে ভ্যান গাড়ি দেখে অবাক হয়ে বললোঃ
—“এটা কি?’
—“কেন স্যার ভ্যান গাড়ি…
—“এটা দিয়ে কি হবে তানজু?’
—“এটা করে আমরা যাবো স্যার…
—“লাইক সিরিয়াসলি আমরা এটা করে যাবো তানজু..
—“হুম এটা ছাড়া আর কোনো উপায় তো নেই স্যার…
—“তাই বলে ভ্যান গাড়ি…
—“টেনশন কেনো নিচ্ছেন স্যার চলুন আমার সাথে দেখবেন ভালো লাগবে?’
“এতটুকু বলে তানজু তাদের ব্যাগগুলো ভ্যানের উপর রেখে ভ্যানের পিছনের দিকে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ে!’তানজুর বসে যাওয়ায় রিয়াদও আর উপায় না পেয়ে বসে পড়ে তানজুর পাশ দিয়ে!’হাল্কা ভয় হচ্ছে তার, এটার ওপর চড়ার তার বিন্দুমাত্র ধারনা নেই!’রিয়াদের অবস্থা বুঝতে পেরে তানজু রিয়াদের হাত ধরে বললোঃ
—“ডোন্ট ওয়ারি স্যার কিচ্ছু হবে না আমি আছি তো…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ হাল্কা হাসে!’এরই মাঝে একটা সাত বছরের বাচ্চা এসে বসলো তানজুদের ভ্যানের উপর,সাধারণত ছেলেটি হলো ভ্যান চালকের ছেলে!’ছেলেটি হাল্কা হেঁসে বললোঃ
—“এহন তাইলে আব্বারে ভ্যান চালাইতে কই আফু?’
—“হুম বলো (তানজু)
“তানজুর কথা শুনে ছেলেটিও তার বাবাকে বললো গাড়ি চালাতে!’সেও তাড়াতাড়ি ভ্যান গাড়ি চালাতে শুরু করলো!’শুরুতে রিয়াদের একটু অন্যরকম আর ভয় লাগলেও পরক্ষণেই ভালো লাগতে শুরু করলো তাঁর!’জায়গাটা গ্রাম হলেও গ্রামের রাস্তাগুলো একদমই শহরের রাস্তাগুলোর মতো সমান আর পাকাপোক্ত!’যার কারনে তেমন একটা অসুবিধা হচ্ছে না রিয়াদের আরো বেশি ভালো লাগছে তার,মস্ত বড় আকাশকে একদমই কাছ থেকে দেখছে সে,
“মাঝে মাঝে কখনো গাছের আড়ালে ছায়ার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে তারা আবার কখনো একদম পরিষ্কারভাবে সূর্য্যিমামার আলোতে আলোকিত হচ্ছে তাঁরা,তবে এই দু’টোর মাঝখানে প্রতিবারই তাদের গায়ে এসে বারি মারছে বাতাস!’খুবই ভালো লাগছে রিয়াদের!’হঠাৎই সুন্দর রাস্তা পেরিয়ে তানজুদের ভ্যান ঘুরে চলে গেল ইটের রাস্তার ভিতরে,জায়গাটা একদমই নিরিবিলি আর ছোট এতটাই ছোট্ট যে একসাথে তিনটে ভ্যান গাড়ি যেতে হিমশিম খাবে,রিয়াদের ভাবনার মাঝে বলে উঠল তানজুঃ
—“স্যার এখন আপনি আপনার মাস্ক খুলে ফেলতে পারেন এখানে তেমন কেউ নেই বললেই চলে….
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদও আর বেশি কিছু ভাবলো না তাড়াতাড়ি মুখের মাস্ক খুলে ফেললো সে!’এখন আরো বেশি ভালো লাগছে তার এতক্ষণ যেন প্রকৃতি তার কাছে এসেও ফিরে যাচ্ছিল,পাশাপাশি গাছপালার আড়াল দিয়ে চলছে রিয়াদ তানজু,গাছের পরেই আছে ছোট্ট বিল আর বিলের পরেই বিশাল বড় ফসলের ক্ষেত!’হঠাৎই রিয়াদের কানে ভেসে আসলো গাছের আড়াল থেকে আসা পাখির ডাক!’রিয়াদ কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—“এগুলো তো..
—“পাখির ডাক আপনাকে ওয়েলকাম করছে স্যার…
“রিয়াদের একদমই আনএক্সপেকটেড বিষয় ছিল এটা!’ গাছের ডালের পাখিগুলোর দিকে বারংবার চোখ যাচ্ছে তার,নানা কিছু বলছে তাঁরা একদমই অন্যরকম ভালো লাগা আর অদ্ভুত ফিলিংস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ!’এতক্ষণ পর রিয়াদ বুঝতে পারলো তখন তানজু কেন বলেছিল তাকে…
—“এখনই থ্যাংক ইউ লাগবে না স্যার…
“তানজুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো রিয়াদ!’তানজু অন্যদিক মুখ করে থাকায় বিষয়টা চোখে পড়ে নি তাঁর!’
“ধবধবে সাদা আকাশকে হাল্কা ঢেকে রেখেছে বড় বড় গাছের ডালপালা,গাছদের ভিড়েই দু’পাশে রয়েছে মস্ত বড় সবুজ ফসলের ক্ষেত,চারপাশে রয়েছে মন মাতাল করা ঠান্ডা বাতাস,পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ,সাথে ভ্যানের যাত্রা উফ!’ যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা!’
“অজানা এক শিহরণ বয়ে যাচ্ছে রিয়াদের ভিতর,সাথে একরাশ মুগ্ধতা…!’
“ইঁট দিয়ে বাঁধানো রাস্তায় দিয়ে যেতে একটু বেশি নড়েচড়ে উঠছে রিয়াদ,কিন্তু ভালো লাগছে!’
______
“কিছুক্ষন পর….
“রিয়াদদের ভ্যান গাড়ি এসে থামলো একটা বড় বাড়ির সামনে!’ভ্যান থামতেই তানজু নেমে পরলো তারপর ভ্যান চালকের বিল মিটিয়ে তাদের ব্যাগগুলো নিয়ে বলে উঠল তানজু রিয়াদকেঃ
—“চলুন স্যার আমরা এসে পড়েছি…
“উওরে রিয়াদ কিছু না বলেই চললো তানজুর সাথে!’
“শুরুতেই রিয়াদের চোখে পড়লো দেয়াল দিয়ে বাঁধানো চারদিকটা!’দেয়ালের মাঝ বরাবর রয়েছে বড় গেট!’গেটের দু’পাশে বড় দুটো গাছ, গাছ দুটো এতটাই বড় যে বাহির থেকেই স্পর্শ গাছের পাতা দেখা যাচ্ছে!’তানজু রিয়াদ পাশাপাশি একসাথে গেটের ভিতর ঢুকলো!’ওরা ঢুকতেই তানজুর কাছে দৌড়ে আসলো পাঁচ ছয় টা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এরা সবাই তানজুর বন্ধু!’তানজু খুশি মনে সবাইকে জড়িয়ে ধরল!’তারপর তাঁরা হেঁটে চললো তাদের সামনেই থাকা বড় বাড়ির দিকে,মস্ত বড় বাড়ি তানজুদের!’রিয়াদ তো আশেপাশের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত!’বাড়ির চারদিকটাই গাছ পালায় সমৃদ্ধ!’
“বাড়ির ভিতর ঢুকতেই তাদের সামনে আসলো কিছু লোক,তাসলিমা ছাঁদ থেকেই দেখেছে তানজু আর রিয়াদকে!’তাই সবার আগে সেই দৌড়ে আসলো ওদের সামনে,তানজুকে জড়িয়ে ধরে খুশি মনে বললো তাসলিমাঃ
—“কেমন আছিস তুই?’
—“হুম ভালো আপু তুমি?’
—“আমিও ভালো…
“তাসলিমা একপলক তাকালো রিয়াদের দিকে!’তার যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না বিখ্যাত সেলিব্রেটি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,এক্সাইটিং এ কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে তাসলিমার!’এরই ভিতর তানজুর মা এসে হাজির দু’বছর পর মেয়েকে দেখে খুশিতে চোখে পানি এসেছে তাঁর!’তানজু দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বললোঃ
—“কেমন আছো মা…
—“ভালো মা তুই…
—“আমিও ভালো…
“এরপর তানজু তার বাবাসহ সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো!’খুশিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সে,,হঠাৎই তার মাথায় আসলো রিয়াদের কথা তানজু চটজলদি চলে যায় রিয়াদের কাছে তারপর সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় রিয়াদের সবাই খুশি মনে কথা বলতে শুরু করলো রিয়াদের সাথে,রিয়াদও খুশি মনে সবার সাথে কথা বলতে শুরু করলো!’এরই মাঝে ট্রেতে করে দু’গ্লাস শরবত আর কিছু মিষ্টি নিয়ে এসে হাজির তানজুর কাজিন “হিয়ামিনি”!!সবার আড়াল থেকে বলে উঠল সেঃ
—“ছাইড প্লিজ…
“সাথে সাথে সবাই হিয়ামিনির আসার জন্য জায়গা করে দিলো!’পুরো বাড়িতে মানুষের হুল্লোড় পড়ে গেছে একদম!’গ্রামের মানুষজন এমনই নতুন হোক বা পুরনো কেউ আসলেই ভিড় জমে যায় পুরো!’বিষয়টা একদমই নতুন লাগছে রিয়াদের কাছে…
“পাশাপাশি সোফায় বসে আছে রিয়াদ তানজু!’তাদের সামনেই হিয়ামিনি খাবার এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“শরবতটা আমি নিজের হাতে বানিয়েছি কিন্তু…
“তানজু হিয়ামিনির কাছ থেকে একগ্লাস শরবত নিয়ে এগিয়ে দিল রিয়াদের দিকে!’রিয়াদও খুশি মনে গ্রহণ করলো!’লেবুর তৈরি শরবত ভালো লাগছে রিয়াদের!’তানজু তার নিজের শরবতের গ্লাসটা নিয়ে এক চুমুক দিতেই বললোঃ
—“হুম এই শরবত তুই বানাতেই পারিস না এটা তো মায়ের হাতের শরবত…
“তানজুর কথা শুনে হিয়ামিনি মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলঃ
—“যা তুই বুঝে ফেললি…
“সাথে সাথে হেঁসে ফেললো সবাই!’তানজুর শরবতে আরেক চুমুক দিয়ে বললোঃ
—“আমি মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারি কিন্তু মায়ের হাতের স্বাদ আজও ভুলিনি..
“তানজুর কথা শুনে মুচকি হাসে তানজুর মা!’রিয়াদ শুধু তাকিয়ে আশেপাশের পরিবেশ দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে’…..
“এদিকে….
“হিয়ামিনি তাকিয়ে আছে রিয়াদের দিকে!’এতদিন যাকে টিভিতে দেখেছে আজ সরাসরি তাকে দেখবে এটা কল্পনার বাহিরে ছিল তার,,আড়চোখে বারবার সে তাকাচ্ছে রিয়াদের দিকে আর মুচকি হাসছে!’বিষয়টা রিয়াদের চোখ এড়ায়নি একটুও কিন্তু তেমন একটা ভাবলো না সে, কারন এসবে অভ্যস্ত রিয়াদ…
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………
[