আষাঢ়ে প্রেমের গল্প পর্ব -১৭+১৮

#আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১৭

আগে বর্ণ আর আমার দুরত্ব ছিল রাস্তার এপার আর ওপারের মতো। আর এখন আমরা দু’জন পৃথিবীর দুই ভিন্ন প্রান্তে।

বর্ণ আর আমি আগের মতো একই আছি শুধু মাঝখানে কেটে গেছে অনেকটা সময়। চারটা বছর হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে। একসাথে থাকলেও আমাদের মধ্যে দূরত্ব ছিল শত কোটি মাইলের। তবুও আমরা খুব যে খারাপ ছিলাম এমন না। আমরা আমাদের মতো ভালোই ছিলাম।

বর্ণের সাথে ২৮ তারিখ রাত সাড়ে দশটার পরে ওইদিনের মতো আর কথা হয়নি। আমাদের কথা হয়েছিল একেবারে পরের মাসের ৮ তারিখে। বর্ণ নিজেই আমাকে ফোন দিয়েছিল। আমি অবশ্য এজন্য বর্ণকে কিছু বলিনি।কারণ নতুন দেশ, নতুন শহর একটু মানিয়ে গুছিয়ে চলতে বর্ণের আলাদা করে সময় দরকার। ওনার প্রিয় মানুষ হয়ে যদি ওনার সুবিধা-অসুবিধাই না বুঝি; তাহলে কীসের প্রিয় মানুষ আমি?

বর্ণ সেদিন ফোন দিয়েই বর্ণ যেখানে থাকেন। সেই রুম, পুরো বাড়ির আশপাশটুকু আমাকে ভিডিও কলে দেখিয়ে ছিলেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বর্ণের বাসার নিচে একটা কমলা গাছ আছে। সেই কমলা গুলো দেখতে খুব সুন্দর। বর্ণ একদিন আমার সামনে সেই কমলার এককোয়া ভেঙে মুখে দিয়েছিলেন। এরপর বর্ণের মুখের ভঙ্গি ছিল দেখার মতোন। টকে বেচারার দাঁত মুখ শেষ। পরে আমি বর্ণকে রাগানোর জন্য বলেছিলাম যে,

— টক খেয়ে দাঁতে দাঁত ঘষা দিলে খুব ভালো লাগে।

পরে বর্ণের সে কী রাগ। আমার এখনও হাসি পায় ওইদিনের ঘটনা মনে পরলে। বেচারা!

— তোর ঘরে একটা শাড়ি রেখেছি। ওটা পড়ে সুন্দর করে সাজবি। মাথায় সুন্দর করে ঘোমটাও দিবি বলে দিলাম।

আমি বিকাল বেলা নাস্তা খেয়ে টেবিল থেকে উঠছিলাম। তখন আম্মা আমাকে এটা বলে উঠলেন। আমি ভেবেছিলাম আম্মা হয়ত আমাকে নিয়ে কোথাও যাবেন। আমি এজন্য আম্মাকে জিজ্ঞেস করলাম,

— আমরা কোথায় যাবো আম্মা?

— কোথাও গেলেই কী শুধু সাজতে হয়? এমনি কী সাজগোজ করা যায় না?

— না মানে কেন সাজবো? এটাই জানতে চাচ্ছিলাম।

— তোকে দেখতে আসবে একটু পরে। ওইদিন ঘটক একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। তাই তাদেরকে আজকে সন্ধ্যায় আসতে বলেছি। তুই রেডি হয়ে থাকিস কিন্তু।

আমি খুব ভয়াবহ ভাবে চমকে উঠলাম। আমি আম্মাকে অনুনয়ের স্বরে বললাম,

— আম্মা, আমার পড়ালেখা তো এখনও শেষ হয়নি। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে কেন করবো?

— দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় না কি?

আমি আম্মার এই যুক্তির সাথে আর পেরে উঠলাম না। কী যে করবো? একদিকে বর্ণ আর আরেকদিকে আম্মা। কাকে ছেড়ে কাকে বেছে নেবো?

আমি সন্ধ্যা বেলা ড্রয়িংরুমে গেলাম আম্মার সাথে। গিয়ে দেখি ওখানে পাত্রপক্ষ বসে আছেন। আম্মা আমাকে ওনার সাথে বসতে বললেন। আমি চুপচাপ বসে রইলাম। মাথা নিচু করে রাখতে রাখতে ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা আমার সামনে আমার পছন্দের নাস্তা রাখা। এগুলো আম্মা পাত্র পক্ষের জন্য আনিয়েছেন। আমার শুধু চিন্তা করছিলাম যে, এরা কখন বিদায় হবে আর আমি;একটু শান্তি করে এই নাস্তা গুলো খাবো। আমি সামনে বসা কিন্তু আমাকে কেউ একটু সাধলো ও না? সাধলেই কী আমি সব খেয়ে নিতাম? এরা তো মহা কিপ্টা!

এরপর আম্মা বললেন পাত্রের সাথে আমাকে একটু আলাদা করে কথা বলতে। আমি দ্বিতীয় ঝটকা খেলাম। ওই যে স্টার জলসা আর জি বাংলার নাটকগুলোতে; বজ্রপাত হওয়ার একটা সাউন্ড দেয় না? আমার মাথায় তাঁর চেয়ে বড় একটা বাজ পড়লো। আমি এবার মনের মধ্যে যত কুবুদ্ধি ছিল সব জোট বাঁধলাম। কারণ এই ছেলের আমাকে পছন্দ হয়েছে। যেভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো আমাকে! এখন যদি বিয়ে ফাইনাল করে দেয়? আমাকে তো বিয়ে ভাঙতেই হবে। তবে এমন ভাবে সবকিছু করতে হবে যাতে সাপ ও না মরে আর লাঠিও না ভাঙে।

ছেলেটাকে আমি আমার রুমে নিয়ে আসলাম। ছেলেটা আমার রুমে এসে আমার বেডের উপরে বসেই আমাকে বললো,

— আপনাকে না আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমি ভেবেছি আমি আমার ফ্যামিলিকে বলবো আমি আপনাকেই বিয়ে করতে চাই। আপনার আমাকে ভালো লেগেছে তো?

— হুম তা তো লেগেছেই।

— ওহ্ তাহলে তো ভালোই।

— আমার আসলে একটা প্রশ্ন ছিল।

— জি, কী প্রশ্ন?

— আচ্ছা, ডিভোর্স ছাড়া কী দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়?

— এই প্রশ্নটা কেন করলেন? মানে কারণটা জানতে পারি কী?

— আসলে আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। আমার আব্বা আম্মা জানে না অবশ্য। এখন আমার প্রথম স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিতেই চাচ্ছে না। আমি কী চিন্তা করেছি জানেন? সে ডিভোর্স দিক বা না দিক আমি আপনাকেই বিয়ে করবো। ডিভোর্স তো শুধু মাত্র একটা কাগজে সই করা। ওই সই করলেও যা না করলেও তা। আমার তো আপনাকেই পছন্দ হয়েছে। আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আপনি কিন্তু আজকে গিয়েই আপনার ফ্যামিলিকে আমার কথা বলবেন।

— জি জি অবশ্যই।

এটা বলেই ছেলেটা আসি বলে আমার রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমার তো হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। যা বুঝলাম এই ছেলে বিয়ে করবে আবার আমাকে! হাহাহাহা! কালকে হবে আসল মজা। দেখি কালকে পাত্রপক্ষ কী বলে।

পাত্র পক্ষের সবাই চলে যাওয়ার পর আমি বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পড়লাম। নাস্তা গুলো সব অবশ্য খাওয়া শেষ আমার। আম্মা মাঝখান দিয়ে একবার জিজ্ঞেস করে গেছেন ছেলেটাকে কেমন লেগেছে? পছন্দ হয়েছে কি না। আমি হু হা করে চুপ হয়ে গিয়েছি। ছেলেটাকে আমার একটুও ভালো লাগেনি। আমার তো বর্ণ আছে। বর্ণ থাকতে আমার ওই ছেলেকে কেন পছন্দ হবে?

রাতে বর্ণ ভিডিও কল দিলেন আমাকে। আমি কল রিসিভ করতেই বর্ণ আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলেন। আমি তখনও মুখ সাজুগুজু পরিস্কার করিনি। ভেবেছিলাম ঘুমানোর আগে পরিস্কার করে একেবারে ঘুমাবো। বর্ণ ভেবেছেন আমি ওনার জন্য এত সেজেছি। উনি আমাকে বললেন,

— তোমাকে কী সুন্দর লাগছে আজকে। আমার জন্য সেজেছো যে তাই এত সুন্দর লাগছে।

— আমি আপনার জন্য এত সাজুগুজু করিনি।

— মিথ্যা কথা বলবে না মেহুলিকা। আমাকে ছাড়া আর কার জন্য এত সেজেছো তুমি?

— আমাকে না আজকে দেখতে এসেছিল বিয়ের জন্য।

–ওহ সিট! তারপর!

— আমাকে ওনাদের পছন্দ হয়েছে অনেক। আব্বা আম্মার ও ছেলেটাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আব্বা বলেছে ওনার সাথেই আমার বিয়ে দেবেন। সব ঠিকঠাক হয়ে গেছে আরকি…

— তুমি এটা কী করলে মেহুলিকা? আমার এতদিনের জমিয়ে রাখা স্বপ্ন গুলোকে এভাবে ভেঙে দিলে? আসলেই একটা কথা আছে জানো তো? হাওয়ায় ইমারত গড়ে কোনো লাভ নেই। করো বিয়ে তোমার ফ্যামিলির পছন্দ করা ছেলেকে। যা ইচ্ছা করো। যাঁর জন্য ইচ্ছে তাঁর জন্য সাজো। ভুল মানুষের জন্য অপেক্ষা করাটা আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। আমাদের সম্পর্কের সমাপ্তি এখানেই। ভালো থেকো।

এটা বলেই ঠাস করে বর্ণ কল কেটে দিলো। আমি ভেবেছিলাম কই একটু মজা করবো। কিন্তু,কিছুই তো করতে পারলাম না। এত সিরিয়াস টাইপের কেন উনি? একটু ঠাট্টা ও কী বুঝতে পারেন না? আমি আবার কল দিতে গিয়ে দেখি আইডি অফ। আবার নাম্বারে কল দিয়ে দেখি নাম্বারও অফ। কী যে করি এখন? মজা করতে গিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করার ফল এটা। কে যে আমাকে এসব করতে বলেছিল! ধুর! এবার বর্ণকে যে কোথায় পাই। কোথাও নেই উনি। পুরো নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন।

পরেরদিন সকালে আব্বা এসে জানালেন ছেলের না কি আমাকে পছন্দ হয়নি। আমি আব্বার সামনে এমন ভাবে কথা;বললাম যাতে আমি কিছুই জানি না। আমি রুমে এসে খুশিতে ফেটে পড়লাম। যাক বাবা কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে। এখন শুধু বর্ণকে যেভাবেই হোক খবরটা জানানো। কিন্তু কীভাবে জানাবো? ওনার সাথে কথা বলার কোনো মাধ্যমই খুঁজে পাচ্ছি না।উনি তো আমার সাথে কথাই বলতে চাচ্ছেন না। সব রকম যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছেন।

চলবে…
আষাঢ়ে_প্রেমের_গল্প
#নুজহাত_আদিবা
#পর্ব ১৮

অনেক চেষ্টার পরে বর্ণের দেখা মিললো। ওই ঘটনার প্রায় দুইদিন পরে বর্ণকে আইডিতে একটিভ হতে দেখলাম। আমি ওনাকে একটিভ হতে দেখেই একটা অডিও কল দিলাম। চারবারের মতো কল দিলাম। বর্ণ বারবার কেটে দিচ্ছেন। পাঁচবারের বার যখন কল দিলাম। বর্ণ কল রিসিভ করলেন। আমি শুরুতেই বললাম,

— হ্যালো।

— আপনার এখন নিজের হবু হাসবেন্ডকে সময় দেওয়া উচিত। আপনি সেটা না করে আমাকে বিরক্ত করছেন কেন?

— সবকিছুতে বেশী বোঝার অভ্যাসটা আপনার এখনও গেল না বর্ণ।

— যা বোঝার আমি বুঝে ফেলেছি। এখন আর কিছু শুনতে কিংবা বুঝতে চাই না।

— আপনি কী বুঝেছেন সেটা আমি জানি। আমি সব সময় বলি দুই লাইন। আপনি শোনেন পাঁচ লাইন। আর আমাকে কথা শোনান দশ লাইন। এই হলো আপনার অভ্যাস।

— কী বলতে কল দিয়েছো জলদি বলো। আমার এত অবসর সময় নেই গল্প করার মতো।

— কোথায় ছিলেন এতদিন? কত ভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি। কিছুতেই কিছু লাভ হয়নি। এত জেদ কেন আপনার?

— এত কথা বলার সময় নেই আমার। রাখছি আমি।

— বর্ণ এখন যদি আপনি কল রাখেন তাহলে আপনার ক্ষতি। এর দ্বায়ভার আমি নিতে পারবো না।

— আমার ক্ষতি? আমার যা ক্ষয় ক্ষতি হওয়ার ছিল সব হয়েই গেছে। তাহলে কোন ক্ষতির চিন্তা করবো আমি?

— আপনার বোকামিতেই আপনি আমাকে হারাবেন বর্ণ।

— যাকে কখনো পাইনি তাঁকে হারানোর প্রশ্ন আসে কী করে?

— আপনি আসলেই বেশী বুঝেন বর্ণ। সেদিন আমাকে দেখতে এসেছিল ঠিকই কিন্তু আমার বিয়েশাদি কিছুই ঠিক হয়নি। ছেলের ও আমাকে পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু আমি কায়দা করে বিয়ের কথা আর এগুতে দেইনি। সেদিন যদি একটু অপেক্ষা করে আমার কথা শুনতেন তাহলে এমন কিছুই হতো না। কিন্তু, নাহ আপনি আপনার রাগ জেদ নিয়ে নিজের মতোই ছিলেন।

— মেহুলিকা শোনো…

— একদম চুপ। আপনার সাথে কোনো কথা নেই আমার। আপনাকে সত্যটা জানানো জরুরি ছিল তাই জানালাম। এই কয়দিন যেমন ছিলেন তেমনই থাকুন। বায়।

আমি এটা বলে টুস করে কল কেটে দিলাম। এবার বুঝুক ঠ্যালা। রাগ জেদ শুধু ওনারই আছে। আমার যেন নেই। থাক এবার তুই তোর মতো। আমি একটা কথাও বলবো না। নিজে থেকে যেদিন কল দিবে সেদিন কথা বলবো।

আমি ফোন অফ করে চুপচাপ বসে রইলাম। কোনো কথা নেই ওনার সঙ্গে। কিছুতে কিছু বললেই রেগেমেগে একাকার।

আমি ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখি আজ সোমবার। কালকে সেই হিসেবে মঙ্গলবার। এই বৃহস্পতিবার আমার বড় ফুপির মেয়ের বিয়ে। বুধবারে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। তাই কালকে আমরা বড় ফুপির বাসায় যাবো। কতদিন পরে ফুপির বাসায় যাবো। পড়াশোনা সহ অন্যান্য কাজকর্মের চাপে অনেকদিন ফুপিদের বাসায় যাওয়া হয় না। এই বিয়ের উসিলায় সব কাজিনদের সাথে দেখাও হয়ে যাবে। ছোট ফুপিরা,বড় চাচ্চুরা সবাই আসবে। কী যে মজা হবে। অনেকদিন যাবত কোনো কাজিনদের বিয়েও হয় না। সেই সূত্রে একটু বিয়েও খেতে পারি না। এবার শান্তি করে বিয়েটা খাওয়া যাবে। একেবারে তিনদিনের টানা দাওয়াত। আহ! কী শান্তি!

ওইদিন সারাদিন ফোন অফ করে রাখলাম। রাতে কী মনে করে ফোন অন করে দেখি বর্ণের অগনিত কল। যেগুলোর একটাও আমি ধরিনি। আমাকে অনলাইন হতে দেখে বর্ণ আবার কল দিলেন। আমি এবার ও ধরলাম না। মোট কথা আমি আজকে বর্ণের সাথে কোনো কথা-ই বলবো না। যে সামান্য মজা বোঝে না তাঁর সাথে আবার কীসের কথা?

বর্ণ আমাকে লাস্টবার যখন কল দিলেন আমি একপ্রকার বিরক্ত হয়ে কলটা ধরলাম। কল ধরেই দিলাম এক ঝারি। রেগে গিয়ে বললাম,

— কী হয়েছে? সমস্যা কী?এত রাতে ঘুম নেই না কি চোখে? কাজ না থাকলে খই ভাজুন যান। আমাকে বিরক্ত করলে এবার সত্যি সত্যি খবর আছে বললাম।

— রাত কোথায় পাও? এখন তো সকাল। কানাডায় সকাল কিন্তু বাংলাদেশে এখন রাত।

— ওহ সরি, মনে ছিল না আমার।

— যান এখন, আমি ঘুমাবো এখন। সারাদিন অনেক কাজ করেছি এখন একটু শান্তিতে ঘুমাতে চাই বায়।

— ও আমার মেহুলিকা। ও আমার মেহু সুন্দরী।

— এই সুন্দরী ফুন্দরীটা কে?

— আমার বউ, নাম তাঁর মেহুলিকা। সাথে আমার দুই বাচ্চার মা।

— মেহুলিকা এখনও পিওর সিঙ্গেল। হাসবেন্ড কিংবা বাচ্চা কাচ্চা কিছুই নেই তাঁর।

— হয়নি তবে খুব শীঘ্রই হবে।

— আগে হোক তারপর। যাঁর বিয়ে তাঁর খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।

— এমন রেগে রেগে কথা বলছে কেন? মিষ্টি করে কথা বলো।

— বেশি মিষ্টির দরকার নেই। কারণ, পরে ডায়বেটিস হতে পারে।

— ওসব বাদ দাও। এখন বলো আমার কথায় কী বেশি কষ্ট পেয়েছো?

— নাহ্ আমি আবার কষ্ট পেতে পারি না কি? আমি তো আনন্দে ধেই ধেই করে নেচেছি।

— মেহুলিকা! যেটা জিজ্ঞেস করলাম সেটা বলো না।

— জেনে আপনার কী লাভ? আমি কিছু বললেই দোষ হয়ে যায়। আর আপনি আমাকে দিনদুনিয়া বলে উল্টে ফেললেও আপনি নির্দোষ।

— বললাম তো সরি। সরি সরি সরি।

— থাক হয়েছে আর বলতে হবে না সরি। জুতো মেরে গরু দান!

— কী করছো এখন?

— জামাকাপড় প্যাকিং করছি।

— কেন কোথায় যাবে?

— আমার কাজিনের বিয়ে। তাই যেতে হবে কাজিনদের বাসায়।

— মানে, এই কয়দিন কথা বলতে পারবো না তোমার সাথে?

— আসলে হ্যাঁ। আপনি তো আমার ফ্যামিলি কেমন তা জানেনই। তাই এই কয়দিন কথা বলতে পারবো না।

— হুম, কিন্তু ছবি তুলবো কিন্তু তোমার। আমাকে সেন্ড করে দিবে। আমি কিন্ত তোমাকে দেখার অপেক্ষায় থাকবো।

— আচ্ছা। রাখি এখন ফোনটা? আমার ঘুম পাচ্ছে খুব।

— আচ্ছা।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই আম্মার সাথে বেরিয়ে গেলাম ফুপির বাসার উদ্দেশ্যে। আব্বা কালকে যাবেন। তাই আজকে আমি আর আম্মা একাই যাচ্ছি।

বড় ফুপিদের বাসায় গিয়ে দেখি আমার কাজিনরা সব ডান্স প্র্যাকটিস করছে। আমি এবার বোকা বনে গেলাম। আমি কিছুই জানতাম না এই ব্যাপারে। ওরা যে সবাই একসঙ্গে গ্রুপ ডান্স করবে কেউ বলেনি আমাকে। আমি এবার জিজ্ঞেস করলাম ওদেরকে,

— আমাকে ছাড়াই সবাই ডান্স রিহার্সাল করছো? এত কিছু প্ল্যান করেছো তোমরা আমাকে তো কেউ কিছুই জানালে না।

আমার কাজিনদের মধ্যে যে সবাইকে ডান্স প্র্যাকটিস করাচ্ছিল তাঁর নাম রিহা। আমার বড় ফুপির ছোট মেয়ে। বয়সে যদিও আমরা সমবয়সী। কিন্তু, আমরা তুমি সম্মোধন করেই কথা বলি। আমার কথা শুনে রিহা আমাকে বললো,

— আমরা কেউই কোনো প্ল্যান করিনি। সবাইকে দেখেই আমার ডান্স রিহার্সালের কথা মনে পড়লো। তুমিও ঢুকে যাও সবার সাথে। একসাথে সবার প্র্যাকটিস করতে পারবে। আমি রিহার কথা শুনে একবার চিন্তা করলাম প্র্যাকটিস করা শুরু করবো। আবার চিন্তা করলাম আম্মার অনুমতি নেওয়াটা বেশি জরুরি।

আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি আম্মা বড় ফুপির সাথে গল্প করছেন। আমি গিয়ে সবার সাথে ডান্স রিহার্সালের কথাটা আম্মাকে বললাম। আম্মা শুনেই না করে দিলেন। আরও বললেন আব্বা না কি এইসব জিনিস পছন্দ করেন না। আব্বা শুনলে বকা দেবেন। আমি তবুও আম্মার কাছে কিছুক্ষন অনুনয় বিনয় করলাম। শেষে বড় ফুপি আম্মাকে বললেন,আমাকে সবার সাথে ডান্স রিহার্সাল করতে দিতে। আম্মা তাও অনেক ভেবে চিন্তে আমাকে ডান্স রিহার্সাল করার অনুমতি দিলেন। কিন্তু কড়াকড়ি ভাবে বলে দিলেন কোনো ছেলের সাথে যেন নাচগান না করি। যা করি সব যেন মেয়েদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। আমিও সায় দিয়েছি আম্মার কথায়। কারণ সায় না দিলে আম্মা আমাকে ডান্স প্র্যাকটিস করতে দেবেন না।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here