#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩৭.
ইহান আমার চোখের সামনে নিজের হাতে অনবরত ঘুসি মেরে হাত রক্তাক্ত করে ফেলল। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। লাল হয়ে আছে অসম্ভব। আমি ভয়ে এক কোনে জড়োসরো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাসায় না এসে পার্কে এসেছে ইহান আমি ভেবেছি বেড়াতে কিন্তু না এসেই এরকম করে যাচ্ছে।আমি ভয়ে কিছু বলতে ও পারছি না। ইহান সেই একটা কথাই বলেছিল আর কথাও বলেনি। এমন রাগ ই বা কেন করছে। নিজেকে আঘাতই বা করছে কেন? আমি আজকেই এই ইহানকে চিনতে পারছি না। এতোটা ভয়ংকর লাগছে তাকে। তার রক্তাক্ত হাতের দিকে তাকালে মাইল বুক কেঁপে উঠছে। ইহানকে আটকানোর সাহস ও দেখাতে পারছি না আমি সেকেন্ড এ ভীতুর খাঁতায় নাম লিখিয়ে ফেলেছি। ইহান নিজেই নিজেকে শান্ত করে ফোন এগিয়ে নিয়ে এলো আমার কাছে। আর সেখানে একটা রেকর্ড শুনালো। যেখানে আমি আম্মুর কন্ঠ শুনতে পেলাম সাথে একটা পুরুষ ও আরেকটা মহিলার আওয়াজ। তাঁদের কথা বার্তা স্পষ্ট হলো তারা কি নিয়ে কথা বলছে। তারা বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। আর বিয়েটা আমাকে নিয়ে। আর ওই অপরিচিত মহিলাটির ছেলেকে নিয়ে। তার ছেলের জন্য আমার কথা বলছে। আম্মু রাজি না হলেও না করছে না। হেসে হেসে ভদ্রতা স্বরুপ কথা বলছে। হঠাৎ মহিলাটা ছেলেটাকে নাম ধরে ডাকলো সাথে সাথে শুভ্র নামটা কানে এসে বাড়ি খেলো। আমি যেন আসমান থেকে ধপ করে জমিনের পরলাম। ইহান আগুন চোখে ঘাসের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ঢোক গিলে ইহানের দিকে তাকিয়ে আছি। এই শুভ্র আমাকে এই ভাবে ফাঁসালো। এবার আমার ও রাগ হচ্ছে। মা ছেলের পেটে এই ছিল। এজন্য সেইদিন মহিলাটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ওমন করে।
‘আমি এসবে কিছু জানিনা বিশ্বাস করুন।’ ভয়ার্ত গলায় বললাম।
ইহান ফোনটা একটা আছাড় মেরে ভেঙে ফেলল।
‘ ওই ছেলের থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু তুমি আমার কথা শুনো নি। আরো হেসে হেসে কথা বলেছ। এই সব কিছুর জন্য তুমি দায়ী ”
‘ আরে এমন করে বলছেন কেন? আমি কখনোই উনার সাথে কথা বলিনি। ওইদিন শুধু আপনার উপর একটু রাগ করে মজা করছিলাম। এছাড়া…
‘ তোমার সামান্য মজার জন্য কি হতে দেখতে পাচ্ছ! বুঝতে পারছো কিছু আমি তোমার ভালোর জন্য একটা কথা বলেছি আর তুমি তাতে রেগে আমাকে এরিয়ে চললে এটা কি ঠিক করেছো তুমি। আনসার মি।’
ইহান আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো। আমি কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারলাম না। ভয়ে আমার মুখের সমস্ত ভুলি অফ হয়ে গেছে। ইহান রেগে গেল আমার এমন নিরব চাহনী দেখে ও আমাকে ছেড়ে গাছের গোড়ায় জোরে লাথি মেরে চিৎকার করে বলল,
‘ ওই শালা কে আমি দেখে নেব। ও সব জানার পর ও আমার সাথে গেম খেলতে এসেছে ওর বিয়ের ভূত যদি না নামিয়েছি তো আমার নাম ইহান না।’
.
বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে ইহান চলে গেছে। আমি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে লিফটে উঠলাম। আজকেও শুভ্র কে দেখলাম। শুভ্র দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার ইহান কথা মনে পরলো কি রাগ টাই না করছিল। সব এই ছেলেটার জন্য আমি তেরে তার কাছে গেলাম,
‘ আপনার সাহস কি কে হলো আমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ায়।’
‘ কেন এখানে সাহসের কি আছে?’
‘ আপনি জানেন আমি ইহান ভাইকে ভালোবাসি তাও এমন কেন করলেন আপনার মতলবটা কা বলুন তো।’
‘ তোমার ওই ইহান আমাকে খুব বাজে ভাবে অপমান করেছিল জাস্ট তোমার সাথে সেইদিন কথা বলেছিলাম বলে। এটা ঠিক আই লাইক ইউ। তাই বলে উনি আমাকে থ্রেট দিতে পারেন না। একা অন্যায় আমার সাথে অপরাধ করেছে আমার গায়ে হাত তুলে। এবার আমি তোমাকেই ওর কাছ থেকে আলাদা করে দেব। দেখি ও কি করছ আটকায়।’
‘ ছিহহ আপনি এতো খারাপ। আপনাকে আমি এতোটা খারাপ ভাবিনি।’
‘ তোমার ভাবনায় তো আর সব হবে না তাই না। তোমার মাকে পটাতে না পারলেও বাবাকে পটিয়ে ফেলেছি। ইউ কামিং মাই লাইফে ‘
‘ আপনাকে আমি জীবনে বিয়ে করবো না বলে রাখছি। আপনার মতো জঘন্য মানুষ আর একটাও দেখি আমি।’
রাগে আমার শরীর কাঁপছে। এত নির্লজ্জ বেহায়া কেউ হতে পারে?!!
.
বাসায় এসেই আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম এসব কি? আম্মু বললো।
‘ আমি কি জানি বাড়িওয়ালা মহিলাটা হঠাৎ এসেই এসব বলবে আমি জানতাম নাকি। কিন্তু তুই জানলি কি করে।’
আমি থতমত খেয়ে গেলাম। তারপর আমতা আমতা করে বললাম, ‘ উনার সাথে আমার দেখা হয়েছিল বাইরে।’
‘ ওহ। তুই এসব এ পাত্তা দিস না। আমি তোকে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে দেব না। তোর আব্বু আসুক উনার সাথে কথা বলে নিব।’
‘ আচ্ছা।’
আমি মনে মনে চিন্তিত হয়ে আছি। আব্বু কে কি রাজি করিয়েছে শুভ্র কি বললো কিছু তো বুঝতে পারলাম না। আমি ইহানকে কল করলাম।
‘ আমার খুব চিন্তা হচ্ছে শুভ্র আব্বুকে কি রাজি করিয়েছে বলল।’
‘ তুমি আবার ওর সাথে কথা বলেছো?’ রাগান্বিত স্বরে।
‘ না আসলে ওই জিজ্ঞেস করিছি।’
‘ তোমাকে সামনে পেলে থাপ্পড় দিয়ে দিতাম একটা ইডিয়েট। কথা কে বলতে বলেছে।’
‘ আমার খুব রাগ হয়ছিল তাই সামনে পেয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি।’
‘ যা করার আমি করবো। তোমাকে কিছু করতে হবে না।’
‘ ওকে।’
রাতে খাবার টেবিলে আব্বুর কাছে কথা তুললো আম্মু। আমি চুপচাপ খাচ্ছিলাম। আব্বু সব শুনে বলল,
‘ ছেলেটা তো ভালোই। আমার সাথে কথা হয়েছে কয়েকবার। আর ছেলের বাবা ও কথা বলেছে।’
‘ তুমি কি এই সমন্ধে তাহলে রাজি? এই বয়সেই মেয়েকে বিয়ে দিবে?’
‘ আমি কি তাই বলেছি নাকি। ছেলেটা ভালো জব করে। টাকা পয়সাও ভালোই আছে। ফ্যামিলির ব্যাকগ্ৰাউন্ড ও ভালো।’
‘ তো তোমার কি সিদ্ধান্ত?’
‘ আমি বলেছি। এই মুহূর্তে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দেব না।’
‘ ওহ ভালো করেছো না করে দিয়ে। যাক বাবা উনি এসে আমার সাথে এমন করছিল যেন আমার মেয়ে আমার অনুমতি ছাড়াই বিয়ে দিবেন ভাব একবার।’
‘ আমি না করিনি।’
‘ মানে তুমি তো না করেছো। এখন বিয়ে দিবেনা মানে তো নাই ই। আর উনার ছেলের বিয়ের বয়স হয়েছে। তার ছেলেকে কি আমার মেয়ের বিয়ের বয়স হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন নাকি। ক্লিয়ার করে বলো তো।’
‘ উনি এটাই বলেছে। ঊষার জন্য অপেক্ষা করবেন উনারা।’
‘ কি বলছো এসব তুমি। মুখের উপর না করতে পারো নি।’
‘ না কেন করবো। ছেলে ভালো তারা অপেক্ষা করতে চাইলে আমি না কেন করবো।’
‘ তুমি তাই এইভাবে বাজিয়ে রাখবে কেন। আর ভালো ছেলে নাই নাকি দুনিয়াতে।’
‘ আমি কি তাই বলেছি নাকি। উনাদের কথা দেয়নি কিন্তু উনারা বসে থাকলে থাক। পরে আমাদের ইচ্ছা হলে বিয়ে দেব না হলে নাই। ‘
‘ তবুও তুমি কাজটা ঠিক করো নি।’
‘ তুমি এতো হায়পায় হচ্ছ কেন সেটাই আমি বুঝতে পারছি না।’
আম্মু আর কিছু বললো না। আমিও আর খেতে পারলাম না। হাত ধুয়ে চলে এলাম। ইহানকে কল করলাম রিসিভ করলো না।
আমি এসব জানানোর জন্য পাগল পায় একবার ধরে ইহান ধমক দিয়ে ফোন অফ করে রাখল। আমি যেন কল কাটার আগে ওইখানে শুভ্র এর আওয়াজ পেলাম।
#এক_চিলতে_রোদ- ২
#Writer_Nondini_Nila
(কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ)
৩৮.
দুইদিন পর শুভ্র কে দেখলাম হাতে ভাঙা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে। আমি তাকে দেখে এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম। শুভ্র আমার দিকে তাকালো ও না কথা ও বলল না। আমি তাতে অবাক হলাম। কলেজে চলে এলাম। সেইদিন ইহানকে ফোনে বললাম,
‘ শুভ্র আজ আমার সাথে কথা বলেনি এমন কি তাকায় ও নি।’
আমার কথা শুনে ইহান বললো, ‘ যে টাইট দিয়েছি তার পর আর ওর পক্ষে তোমার দিকে তাকানোর সাহস করবে না!’
‘ উনাকে আপনি মেরেছেন। ‘
‘ সব কিছু এতো তোমাকে জানতে হবে না।’
‘ আপনি আসবেন?’
‘ কেন?’
‘ এমনি কতোদিন দেখি না। আসেন না।’
” আমার সময় নাই এখন।’
‘ ওহ্।’ মন খারাপ করে বললাম।
.
ইহানের রেজাল্ট দিলো। ইহান টপ হয়েছে। ইহান যে এতো ভালো স্টুডেন্ট আমার ধারনার বাইরে ছিল। আমি তো হতবিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিল আমাদের বাসায় ইহান। আব্বু আম্মু ও খুব খুশি ইহানের জন্য। আমার এতো গর্ব হচ্ছিল কা বলবো। আমি নিজে হাতে ইহানকে মিষ্টি খাইয়েছি। ইহান ও। শুভ্র আর আমাকে জ্বালাতন করে না। তাই ওর ব্যাপারটা একদম ভুলে গেছি। আগের মতোই আমাদের প্রেম চলছে। কথা বলা হুটহাট দেখা করা ঘুরতে যাওয়া।
দাদুকে এক সপ্তাহ পর নিয়ে গেছে আব্বু।নিজে দিয়ে এসেছে। চাচা কথা না বললেও খারাপ ব্যবহার করে না।
ইহানের রেজাল্টের তিনদিন পর ইহান মাস্টার্স করতে অস্ট্রেলিয়া যাবে। দুই বছরের জন্য । আমি খবর শুনে থমকে গেছি। ইহান আমাকে রেখে চলে যাবে! এটা আমি মানতে পারছি না। খুব কষ্টে নিজেকে সবার সামনে কন্ট্রোল করছি। ভেতরে ভেতরে আমি কষ্টে আছি।
ইহান চলে যাওয়ার আগে একটা পার্টির আয়োজন করেছে। চাচা জানের বিজনেস আব্বুর বিজনেসের সাথে যুক্ত করেছে যার জন্য উঠে দাঁড়ানোর মধ্যে আছে। চাচা জান বোধহয় এই জন্য ই ভাইকে আর কিছু বলতে পারে না। কিন্তু আব্বু নিজের ভাইকে সাহায্য করার জন্য নিজের ক্ষমা চায়নি। এটা তিনি নিজের দায়িত্ব ভেবে পালন করেছে। চাচা জান দ্বিমত পোষণ করে নি।
দুইদিন আগেই আমরা ওই বাসায় চলে গেলাম। সবাই আমাদের নিতে এসেছিল। শুধু চাচা জান বাদে। সবাইকে উপেক্ষা করেননি আববু। দাদুকে কথা দিয়েছে আর কারো সাথে অভিমান করে বাড়ি যাওয়া অফ করবেন না। তাই আমরা সবাই দুইদিন আগেই চলে এলাম।
ইমা আপু ও এবাসায় ই। আব্বুর রুমে গোছানো সেখানেই তারা থাকবে আমার জন্য রুম প্রয়োজন আমাকে ইলা আপুর সাথে থাকার কথা বলল।
আমি খালি ইহানকে একা পাওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজছি। আর লুকিয়ে চুরিয়ে চোখের পানি ছাড়ছি।
অবশেষে জানতে পারলাম ইহান কোন রুমে আছে। সে ছাদের চিলেকোঠায় আছেন। আমি তাই সবার চোখের আড়ালে ছাদের সেই রুমে যেতে লাগলাম। সাথে সাথে পেছনে থেকে একটা হাত আমার হাত চেপে ধরে টেনে আনলো দরজার সামনে থেকে। আমি চমকে উঠলাম। দেখি ইহান।
ইহান কে দেখে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না। কেঁদে উঠলাম। ইহান আমার দুগালে হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল,
‘ হোয়াট হ্যাপেন্ড। এমন মরা কান্না শুরু করছো কেন?’
‘ আমি মরা কান্না শুরু করেছি এটা বলতে পারলেন?’
ইহান নিশ্চুপ।
আমি আবার বললাম, ‘ আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন। একটু ও কষ্ট হবে না আপনার। আপনি আমাকে ভালোবাসেন না আবার প্রমাণ করলেন।’
‘ ফালতু কথা বাদ দিবে! আমি তোমাকে ভালোবাসি না এই ফালতু কথাটা কিছু হলেই কেন তোমার মাথায় আসে? ‘
‘ আসার যথেষ্ট কারণ আছে। আপনি আমাকে ভালোবাসলে এভাবে ছেড়ে যাওয়ার কাজ করতে পারতেন। বিদেশে গিয়ে পরতে হবে কেন দেখে কা লেখাপড়া নাই নাকি।’
‘ দূরে গেলেই কি আমি তোমায় ভুলে যাব নাকি। তুমি তো সব সময় আমার এই অন্তরে থাকবে। আর দুই বছর খুব দ্রুত চলে যাবে। আমার ইচ্ছা ছিল বিদেশে গিয়ে কিন্তু অনার্সের আগেই আমি যেতে পারিনি। এখন নিজের স্বপ্ন টা পূরণ করতে তুমি আমার পাশে থাকবে না বলো। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে ফিরে এসেই আমার এই বাচ্চা বউকে মিসেস ইহান করে ফেলব।’
‘ আমার খুব কষ্ট হবে। খুব বেশি মিস করবো। আপনাকে একদিন না দেখলেই আমি পাগল হয়ে যায়। আর দুই বছর না দেখে আমি কি করে থাকবো। আপনিই বা থাকবেন কি করে বলুন কষ্ট হবে না।’
‘ হবে কিন্তু মানিয়ে নিবো। তোমার কাছে থাকলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি না ঊষা। খালি আজেবাজে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। যা তোমার জন্য বিপদজনক। আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না বলেই বিদেশে যাওয়ার কথা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে ভাবলাম চাচু এখনি তোমার বিয়ে দিবে না কম পক্ষে দুই বছর পর এই দুই বছর না হয় দূরে থাকি। কাছে থাকলে কবে জানি জোর করে ধরে বিয়ে করে ফেলবো। আমার এই বাচ্চা বউকে ছেড়ে থাকা যে আমার জন্য কষ্টকর খুব। দূরে গেলে আমাদের ভালোবাসা আরো গাঢ় হবে।
আর দেখা না হওয়া বলছো সেটা তো প্রতিদিনই হবে। ভিডিও কল আছে না। সেখানে দেখবে আমাকে আমি দেখবো আমার এই বাচ্চা বউকে। দুজনে দুই প্রান্তে অপেক্ষা করবো দুজনের জন্য। আর একদিন হুট করেই সামনে এসে দাড়িয়ে আমার এই বাচ্চা বউকে চমকে দেবো। আর তুমি রাগ করছ আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পরবে কাঁদতে কাঁদতে।’
ইহান আমাকে অনেক ভাবেই বুঝানোর চেষ্টা করছে এই দূরে যাওয়াটা নাকি আমাদের জন্য ভালো হবে। ভালোবাসা বাড়বে। আমি মানছি না। ইহান আমার কপালে একটা গভীর ভাবে ভালোবাসার পরশ দিল। আর এই সব কিছু একজন মানুষ দেখে নিল সে আর কেউ না আমার মা জননী। যা আমরা কেউ জানতে পারলাম না। আমি তখন ইহানের বুকে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছি। আর ইহান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে এটা ওটা বুঝাচ্ছে।
পরদিন বড় করে আয়োজন করা হলো পার্টির। বিজনেসের লোকজনের সমাগম বেশি। একা একটা বিজনেস পার্টিই।আববু ও চাচাজানের বিজনেস এক করার জন্য। আমি খুব একটা সাজলাম না। শুধু ব্লো কলারের গাউন পরেছিলাম। পুরোটা সময় আমি গাল ফুলিয়ে ছিলাম। আজকেই দিনটাই আছেন ইহান কাল চলে যাবে ভাবলেই আমার কান্না পায়। ইমা আপু আমাকে অনেক সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু আমার কেন জান মনে হচ্ছে ইহান আমার থেকে দূরে গেলেই হারিয়ে যাবে। আমি এক কোনে চুপ করে বসে ছিলাম ইহান এসে পাশে দাঁড়ালো। আমি এক নজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলাম।
‘ এখনো মন খারাপ করে আছো।’
‘ আমি জানি আপনি আমাকে ভুলে যাবেন। বিদেশে কতো সুন্দর সুন্দর মেয়ে তাদের দেখে আমাকে ভুলে যাবেন। এমন না হয় আবার সুন্দরীর একজন কে বিয়ে করে আমার ভাবি করে এনে বলবেন,
‘ ঊষা এটা তোমার ভাবি। দেখো সুন্দর না। কতো ফর্সা স্মার্ট। তুমি আমার বোনই ঠিক আছো। বউ হওয়ার যোগ্য না।’
ইহান রাগান্বিত স্বরে বলল, ‘ এক থাপ্পর দিয়ে গাল লাল করে ফেলবো ইডিয়েট। এমন উদ্ভট কথা যেন আর না শুনি।’
‘ আপনার সাথে ওই ফারিয়া ও বলে যাবে।’
‘ হ্যা।’
‘ আপনি আমাকে আগে কেন বললেন না। আপনার আর ফারিয়ার মধ্যে কিছু চলছে বলুন তো। আমাকে রেখে দুজন দূরে গিয়ে প্রেম করার ধান্দায় আছেন নাকি!’
‘ তোমাকে আগেও বলছি ফারিয়া জাস্ট মাই ফ্রেন্ডস। এর বাইরে আর কোন সম্পর্ক নাই আর হবে ও না কোনদিন। তাই এসব কথা বলে আমার মেজাজ টা খারাপ করো না। আর একটা দিন আছি তাই সময় গুলো ইমপর্টেন্ট করো। রাগারাগী বাজে বলা অফ করে সুন্দর কিছু মুহূর্ত বানাও। ‘
‘আমার ভয় তো যাচ্ছে না। আপনাকে হারানোর ভয়ে আমি ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাচ্ছি।’
‘ আমার কথা তুমি বিশ্বাস করছো না কেন! তারমানে কি তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না? তাহলে তো আমি বলবো তুমি আমাকে ভালোই বাসো না। কারণ যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা থাকতে পারে না।’
#চলবে…..
#চলবে…..