###__স্বামী__###
পর্ব-২০
Nirzana(Tanima_Anam)
“শুনোন মি.চৌধূরী আমার না ভীষন তেতুল খেতে ইচ্ছে করছে।
পাঁকা তেতুল আর একটু ঝাল দিয়ে মাখিয়ে এনে দিন না আমি খাবো”
সকাল সকাল অনু গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে আছে….
নির্ঝর অফিস যাবে বলে তৈরী হচ্ছিলো।
অনু বিছানায় বসে বসেই নির্ঝরের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অনুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে নির্ঝর অনুর কাছে এগিয়ে যায়।
অনুর দুই হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়।
-কি হয়েছে টুনি পাখি এভাবে বসে আছো কেন ঘুম হয় নায় এখনো??
অনু ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো মুখ বাঁকিয়ে জবাব দেয়
– “শুনোন মি.চৌধূরী আমার না ভীষন তেতুল খেতে ইচ্ছে করছে।
পাঁকা তেতুল আর একটু ঝাল দিয়ে মাখিয়ে এনে দিন না আমি খাবো”
নির্ঝর অনুর এরকম বায়না শুনে কিছুক্ষন অনুর দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে যায়।
-কি হলো এনে দিন না আমার না খুব টক টক পাচ্ছে….মানে টক খেতে ইচ্ছে করছে
নির্ঝর একটু মুচকি হেসে অনুর কাছে এগিয়ে যায় তারপর অনুর কপাঁলে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে উওর দেয়
-ফ্রেস হয়ে নিচে চলো।।
-আর আমার তেঁতুল
-বাড়িতে আপাতোতো কোনো তেঁতুল নেই।আমি অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসবো।।
অনু মুচকি হেসে দুম করে নির্ঝরের গালে চুমু দিয়ে দেয়।নির্ঝর ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে আছে।
অনু লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায আর নির্ঝর মুচকি হেসে নিচে চলে আসে।
নিচে নির্ঝরের মা নির্ঝরকে দেখে এগিয়ে আসে।
-কিছু বলবা আম্মু??
-আব্বু জি আজকে অফিস থেকে একটু তারা তারি চলে এসো!!
-কেন??
-আসলে তোমাকে বলা হয় নি আজকে সন্ধ্যায় তোমার আনিকা আপুর সাদের অনুষ্ঠান আছে।তুমি এলে তোমাকে নিয়ে যাবো!!
-আচ্ছা।
-আর শোনো তুমি তোমার বউ কে বাপের বাড়ি দিয়ে এসো!
-কেন?
-বাড়ি শুদ্ধো সবাই তো যাবো সে একা একা বাড়িতে থাকতে পারবে?আর রাতে ফিরবো কি ফিরবো না।তাই তাকে বরং…..
-এক মিনিট বাড়ির সবাই যাবো অনু যাবে না???
-এইসব বাজা মেয়ে মানুষদের এরকম শুভ কাজে যেতে নেই।।
-আম্মু….
(নির্ঝর কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল অনু আসছে)
অনু অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।শ্বাশুড়ির বলা সম্পূর্ণ কথা শুনতে না পেলেও বাজা শব্দটা ঠিকই তার কানে এসেছে।
কিন্তু ওনি কাকে বন্ধ্যা বললেন????
সন্ধ্যে বেলা…..
নির্ঝরের জোরাজুরিতে অনুকেও সাথে আনা হয়েছে।নির্ঝরের মা একরকম ছেলের কথা রাখতেই অনুকে আনার পার্মিশনটা দিয়েছেন বউ মা এলে নাকি ছেলে ও আসবে না।
আনিকা আপুর সাদ বলে কথা।আনিকা হলো নির্ঝরের ফুপাতো বোন।বেশ আদরের বললেই চলে।।বাড়ির প্রথম মেয়ে।
বেশ নিয়ম কানুন মেনেই আনিকার সাদ দেওয়া হচ্ছে আর অনু দূর থেকেই এসব দেখছে। কেন জানি তার শ্বাশুড়ি তাকে এসবে ধারের কাছেও ঘেষতে দিচ্ছে না।
নির্ঝরকেও আশেপাশে দেখতে পাচ্ছে না অনু
হটাৎই কেউ একজন পেছন থেকে অনুর মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।অনু ছুটার চেষ্ট করছে কিন্তু পারছে।
লোকটা অনুকে গার্ডেনের এক কোণে এনে ছেড় দেয়।
অনু বেশ ভয় পেয়ে গেছে।লম্বা লম্বা দম নিচ্ছে।
-কে….কে আপনি??কি চাই??
-তোমাকে…
লোকটা সামনে আসতেই অনু চমকে যায়।কতোদিন পর এই মুখটা আবার দেখছে সে…
-সায়ন????
-হুম্ম।কেমন আছো অনু??
-ভালো আছি খুব ভালো আছি।(বেশ জোড় দিয়েই কথাটা বললো অনু)
-আমি জানি তুমি ভালো নেই
-আপনাকে কে বলেছে আমি ভালো নেই
-আমি জানি
-ভুল জানেন।সরুন আমাকে যেতে দিন(সায়নকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে সায়ন অনুর হাত ধরে টান দেয় অনু টাল সামলাতে না পেরে সায়নের বুকে এসে পড়ে)
অনু সায়নকে ধাক্কা মেরে দূরে সারিয়ে দেয়
-ডোন্ট টাচ মি!!
-অনু চলো এখান থেকে তোমাকে আর নির্ঝরের কাছে যেতে হবে না।তুমি আমার সাথে থাকবা।আমি তোমায় ভালোবাসি।
(সায়ন কথা বলতে বলতে বার বার অনুকে কাছে টানছিলো অনুও রেগে গিয়ে সায়নকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে)
-ভালোবাসা মাই ফুট!!কোই ছিলো আপনার ভালোবাসা মি.সায়ন যখন আমি ঘুমের ঘোরেও আপনাকে খুজেছিলাম??কোই ছিলেন আপনি যখন আমি আপনাকে দেখার জন্য ছটপট করেছিলাম??কোই ছিলো আপনার এই দরদ??রাতের পর রাত আপনাকে ফোন দিয়েছি আপনি ফোন তোলার ও প্রয়োজন বোধ করেন নি।।।এখন এসছেন সোহাগ দেখাতে!!
-অনু আমি!!
-আপনি কি হুম্ম কি??
-অনু আমি তোমায় সব বলছি!!
-এতো তামাশা করার পরও আপনি শান্তি হচ্ছেন না কেন??
-তামাশা?
-হুম্ম তামাশা। সব চেয়ে বড় তামাশা সেদিন হয়েছিলো।জানেন কোন দিন আমার বিয়ের আগের দিন সেদিন সারা রাত আমি বাগানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য কিন্তু আপনি আসেন নি!!
সে যাই হোক….আমি ভালো আছি খুব ভালো আছি…
(কথাগুলো বলেই অনু চলে যেতে নিলে সায়ন আবার অনুকে টেনে কাছে নিয়ে আসে)
-আমি জানি তুমি ভালো নেই….
-ছাড়ুন
-নির্ঝর খুব খারাপ অনু!!!
অনু সায়নকে ধক্কা মেরে ছুটতে থাকে….
একরকম পালিয়েই আসে সায়নের কাছ থেকে।সায়নকে কেন যেন তার অসহ্য লাগছে।বড্ড অসহ্য লাগছে।
জীবন বড্ড বেশি খেলা করছে অনুর সাথে।এখানে সবাই বড্ড স্বার্থপর যে যার নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্থ।অন্যের কথা ভাবার মতো সময়ই নেই কারো কাছে।সায়নটাও বড্ড বেঈমানী করেছে।অনুর সাথে নয় অনুর ভালোবাসার সাথে।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে চলে ভীরের দিকে। অনুর চোখে জল কিন্তু মুখে হাসি।
ওখানে সবাই অানিকাকে ঘিরে ধরে কি সব করছে
অনু ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেখানে।পাশেই নীরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছবি তুলছে
-কি গো বর সোহাগী ভাবি কোই ছিলা এতোক্ষন? তোমার বর তো তোমাকে দেখতে না পেয়ে খুজে খুজে দেবদাস হয়ে গেলো!!
-কি সব বলছো?
-হুম্ম।সেই কখন থেকে তোমাকে খুজছে সে
-ওও।আছা নীরা ঐটা কি??
-কোনটা?
-ঐ যে কুলোতে ঐগুলো কি…
-ওও এই একটা কুলোতে পান সুপারী কতো রকমের মিষ্টি সাজিয়ে রেখেছে।ঐ কুলোটা আবার চারজন বিবাহিত মেয়েকে ধরে রাখতে হবে এবং বড় রা ঐ কুলো থেকে মিষ্টি নিয়ে আনিকা আপুকে খাওয়াবে ও দোয়াও করবে আর সাথে গিফ্ট দিবে!!
-তাই তুমি কি করে জানলে??
-জানতে হবে না একদিন তো আমাকেও দরতে হবে তোমার কুলো!!
-ধূর।এটা কি নিয়ম??
-হুম্ম এটাই নিয়ম। মেয়ের বিবাহিত ভাবিরা বা বিবাহিত ননদেরা এটা করে।আর জানো তো সবচেয়ে মজার কথা হলো যারা কুলো ধরে তাদেরও না কি খুব তারাতাির বাবু হয়।
-তাই নাকি??
-হুম্ম তোমার ও ডাক পরড়ো বলে।।।
কথা বলতে বলতে নীরা দাঁত বের করে হাসতে থাকে
এমন সময় কেউ একজন অনুকে ডাকদেয়
-ওও নতুন বউ তুমি ও আসো খুব তারাতারি তোমারও কোল জুড়ে আলো আসবে…
অনু প্রথমে ইতস্ত করলেও পরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়।অনু কাছে যেতেই অনুর শ্বাশুড়ি অনুকে ধরে নেয়।তারপর টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে দেয়।
“এই মেয়ে জানো না বাজা মেয়ে মানুষদের এসব করতে নেই তাতে অনাগত সন্তনের অমঙ্গল হয়!!চুপটি করে এখানে দাড়িয়ে থাকো ভূল করেও ওখানে যাবে না বলে দিচ্ছি কিন্তু।আমি চাই না তোমার জন্য আমার আনি মার কোনো ক্ষতি হোক”
অনু অবাক চোখে শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।বোধয় বোঝার চেষ্টা করছে ওনি এসব কি বলছেন!!!
মনে মনে বার বার একটা প্রশ্নয় ঘুরছে…
“ওনি আমাকে এসব বললেন কেন।আমার জন্য আপুর ক্ষতিই বা হবে কি করে??”
চলবে……
(