###__স্বামী__###
পর্ব-২৭
#Nirzana(Tanima_anam)
-আর কতো জোড় করবেন আমাকে মি.নির্ঝর?জোড় করে বিয়ে করলেন!বিয়ের প্রথম রাতে জোড় করে স্বামীত্ব ও ফলালেন এখন এসছেন জোড় করে ধরে বেঁধে সংসার করাতে!এভাবে আমি পারছিনা প্লিজ এবার আমায় মুক্তি দিন প্লিজ!!
[অনেক খোজাখুজির পরও নির্ঝর অনুর খোজ পাচ্ছিলো না।অনুর বাবার বাড়ি থেকেও কেউ কিছু বলছিলো না।নির্ঝর পাগলের মতো এদিক ওদিক খুজছিলো কিন্তু অনুর কোনো খবর নেই।হটাৎই অনুর ভাবি নির্ঝরকে ফোন দেয়।
-সংসারে এমন মান অভিমান হবেই।অনু ছেলে মানুষ তাই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে নি।তুমি একটু গিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসো
-ইয়ে মানে অনু তো আমাকে বলে যায়নি মানে আমি জানি না অনু কোথায়
-তা ভাই এ বিষয়ে আমি তোমায় সাহায্য করতে পারি
-হ্যা ভবি বলেন না অনু কোই
-বাবাহ্ বউকে দেখার তড় সইছে না
-ইয়ে….
-বলছি অনু ছোট ফুপ্পির বাড়ি গেছে।
অনু ভাবির কাছ থেকেই নির্ঝর জানতে পারে অনু তার ফুপ্পির বাসায় আছে।নির্ঝর খবর পেয়েই ভাবির ঠিকানা মতো ছুট লাগায় অনুর কাছে।
অনুর কাছে পৌছালেও অনু নির্ঝরের সাথে দেখা করতে নারায।সে এক জিদ ধরে বসে আছে।
অনেক জোড়া জুড়ির পর শেষ মেষ দেখা করতে রাজি হয়।অনু বার বারই নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলছিলো যা নির্ঝরের একদম পছন্দ হয়নি তাই সে জোড় করে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে।অনুকে একরকম জোড় করেই বাড়ি নিয়ে যেতে চায়।তখনই অনু নির্ঝরকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে
অনু কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে।নির্ঝর মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে]
“আজ অনু মুক্তি চাইছে!!মুক্তি চাইছে তার ভালোবাসা থেকে।অনু মুক্তি চাইছে এই সম্পর্ক থেকে”
নির্ঝরও অনুর পাশে বসে পড়ে অনুর মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে
অনুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে
-অনু একটি বার আমার চোখে চোখ রেখে বলো তুমি আমায় ভালোবাসো না??
-(…)
-কি হলো বলো
-(….)
অনু মাথা নিচু করে নেয়।নির্ঝর আবার অনুর মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে
-তোমার ঐ দুই চোখে আমার বার বার ডুবতে চেয়েছি।তোমার ঠোটের কোণে ঐ মিষ্টি হাসিটাতে বার বার হাড়িয়ে যেতে চেয়েছি।তোমার ভালোবেসে পাড়ি দিতে চেয়েছি নিজের বাঁকি জীবন।অনু তোমার হাতে হাত রেখে আমি বুড়ো হতে চেয়েছি।আমার এই চাওয়াগুলো কি এতোই বেশি ছিলো যে তুমি মুক্তি চাইছো আমার থেকে।বলো না বলো???
অনু নির্ঝরের জ্বলন্ত দৃষ্টি থেকে চোখ সড়িয়ে নেয়।অনুর থুতনি থেকে নির্ঝরের হাত সরিয়ে নেয়
-আপনার চাওয়াগুলো ভুল ছিলো ভুল হলাম আমি।নির্ঝর আপনি ভুল মানুষের কাছে ভুল জিনিস চেয়েছেন।প্লিজ আমি হাত জোড় করছি আমাকে এবার মুক্তি দিন।
নির্ঝর অনুকে শক্ত করে ধরে তারপর দাড় করিয়ে দেয়
-বার বার এক কথা কেন বলছো
-বলছি তার কারণ আপনার মতো বিশ্বাসঘাতক বেঈমান লোকের সাথে আমি একটি মুহূর্তও থাকতে চাই না।
-অনু…
-দয়া করে আর একবার ও আমাকে ছোবেন না প্লিজ
-কি করেছি আমি?
-আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন নাকি আমি নিজেকে…??
নির্ঝর অনুকে ঠাটিয়ে চড় মারে
-আমি বার বার বলছি তোমাকে ছাড়া আমি মরে যবো
-আপনার মতো স্বামী থাকার থেকে বিধবা হওয়া অনেক ভালো!!
নির্ঝর অনুকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়।নির্ঝরের কানে বার বার অনুর বলা একটা কথায় বাজছে।”বিধবা!অনু বিধবা হতে চায়”
-আমার ভালোবাসা তোমার কাছে এতোই অসহ্য লাগছে যে তুমি আমার মৃত্যু কামনা করছো!!
-আসলে….
-আসছি।আল্লাহ্ তোমার ইচ্ছে পুরন করুক
কথাগুলো বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যেতে নিলে….অনুু বলে উঠে
-আপনার পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে মি.নির্ঝর চৌধূরী আপনার বোনের ভালোবাসার পথে আরর আমি বাঁধা হয়ে দাড়াবো না।আপনার বোন তার ভালোবাসার মানুষকে পাবেই
-কি?(অবাক হয়ে)
-আপনি এখন আসতে পারেন আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্সটা দিয়ে দিবেন এই সম্পর্কে এবার ইতি টানা প্রয়োজন!!
অনুর কথাগুলো শুনে নির্ঝর আর একমুহূর্ত দাড়ায়নি।হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়ে
“যখন কেউ আঘাত করে ব্যাথ্যা লাগে খুব লাগে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের দেওয়া আঘাত শুধু ব্যাথ্যা দেয়না সাথে দেয় অসহ্য যন্ত্রনা।যে যন্ত্রনা প্রত্যেক মুহূর্তে ভেতরটা কুড়ে কুড়ে খায়”
নির্ঝর গাড়ি নিয়ে একটানে হাইওয়েতে চলে এসেছে।রাতের এই সময়টা হাইয়ওয়ের রাস্তা ফাঁকায় থাকে ইচ্ছে মতো গাড়ি চালানো যায়।নির্ঝরেরর গাড়িও সর্বোচ্চ গতিতে ছুটছে।
অনুর দেওয়া ব্যাথ্যাগুলো মনে হয় নির্ঝরের হৃদয়ে গেথে গেছে।
এদিকে কাঁদতে কাঁদতে অনুর ও নাজেহাল অবস্থা।ভেতরটা বড্ড বেশি পুড়ছে।মুখে তো বলে দিলো সে মুক্তি চায় নির্ঝর নামের প্যারা থেকে সে মুক্তি চায় কিন্তু সেই মুক্তির স্বাদ কি অনু নিজে মেনে নিতে পারবে??কি করে থাকবে সে নির্ঝরের সেই রোমান্টিক অত্যাচার ছাড়া…
কথাগুলো মনে হতেই অনুর চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।
হটাৎই অনুর বা চোখ কেমন কাঁপছে।ছোট বেলায় অনুর মা বাম চোখ কাঁপলেই কেমন ভয় পেতেন বা চোখ কাঁপলে না কি কাঁছের মানুষের বিপদ হয়।
হুট করেই অনুর মাথায় নির্ঝরকে বলা শেষ কথাটা চলে আসে।
“আপনার মতো স্বামী থাকার থেকে বিধবা হওয়া অনেক ভালো”
তাহলে কি নির্ঝরের কোনো ক্ষতি হবে।কথাটা মাথায় আসতেই অনুর বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠে
অনেক ধৈয্য ধরে শেষ মেষ এক পাহাড় সংকোচ নিয়ে নির্ঝরকে ফোন করে
দুইবার ফোন বাজতেই নির্ঝর ফোনটা তোলে….
ফোনটা কানে ধরে নির্ঝর চুপ করে আছে।অনুও চুপ করে আছে।অনু বার বার কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না।সব কথা কান্না হয়ে গলায় এসে আটকা পরে যাচ্ছে আর চোখে জল হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
অনেক ক্ষন চুপ থেকে নির্ঝর বলতে শুরু করে
-জানো তো অনু কেন যেন আমার মনে হচ্ছে এটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়তো আর কখনো তোমায় দেখতে পাবো না!!
-নির্ঝর আপনি ঠিক আছেন তো কিছু হয় নি তো???
-এখন ঠিক আছি তবে কতোক্ষন ঠিক থাকবো জানি না!!
-নির্ঝর…..
-টুট…টুট….টুট
হটাৎ দুম করে নির্ঝরের ফোনটা কেটে যায়।অনুও অবাক হয়।তারপর বার কয়েক নির্ঝরকে কল ব্যাক করলেও ফোনটা কানেক্ট হচ্ছে না।অনুর বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে।কেন যেন প্রচুন্ড ভয় হচ্ছে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে…
“ভুল করে মুখ দিয়ে ভুল কথা বেরিয়ে গেছে কথাটা যেন সত্যি না হয়”
অনুর মাথয় বার বার একটা প্রশ্নই ঘুরছে “নির্ঝর ঠিক আছে তো??”
।
।
।
নীরা সোফায় বসে রাগে ফুসছে।রাগে দুঃখে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।হাত পা থরথর করে কাঁপছে।
পাশেই সিমি বসে বসে নীরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।নীরার চোখ মুখের ভঙ্গি দেখে সিমির বেশ হাসি পাচ্ছে।
অনুর কান্ড করখানার গুলো বেশ রং চং মিশিয়ে নীরার সামনে উপস্থাপন করেছে সিমি।
“সিমির কথা হলো:সুখ যদি আমি না পাই তুমিও পাবে না অনু।নির্ঝর তোমার নয়।সে আমার সম্পদ তাই সেই সম্পদের রক্ষা আমাকেই করতে হবে।হোক না তা বাঁকা পথে তবুও নির শুধু আমার।
তোমাকে যে আমি সুখে থাকতে দিবো না।যে সুখ আমার নয় তা তোমারও নয়”
নীরার ঠিক বিপরীতে নির্ঝরের মা ও বসে বসে সিমির কথাগুলো শুনছিলো।রাগে শরীর জ্বলছে ওনার।
একেই তো বাজা মেয়ে মানুষ তার উপর মেয়ের কি না চরিত্রখারাপ।ভাবা যায় এসব!
-মেয়ের মুখ দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না এখন দেখছি ঠিক উল্টো এ মেয়ের মুখে এক ভেতরে আরেক।
অসভ্য বাজা মেয়ে মানুষ।আমার ছেলে তো দয়া করে বিয়ে করেছিলো এখন অন্য প্রেমিক পেয়ে…ছি ছি যতো সব নোংরা মেয়ে মানুষের কৃত্তিকারখানা!!
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই দম নেয় নীরার মা।রাগে ফুসতে ফুসতে পায়চারি করছেন ওনি
-বোঝো না মা ঐ মেয়ে যে গভীর জলের মাছ।বাহিরে ভালোর মুখোশ পড়ে এক সাথে দুই নৌকায় পা রেখে চলছিলো।এখন সুযোগ পেয়ে ভাইয়াকে রেখে…..
কথাগুলো শেষ করতে পারে নি নীরা।হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।ঐ একজনকেই তো সে ভালোবেসেছে।নিজের জীবনে আর কউকে চায়নি সে শুধু সায়নকে ভালোবেসে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছে।সেই। সায়নই কিনা এভাবে ঠকালো।
সায়নের তো কোনো দোষ নেই সব দোষ এই মেয়ের মেয়ে যদি ছেলেকে ফুসলায় তাহলে কোন ছেলে গলবে না….
নীরা ফুপিয়ে কাঁদছে।ছোটবেলার ভালোবাসা,এতো দিনের চাওয়া এক মুহূর্তে ভুলে যেতে হবে তাকে।মুছে ফেলতে হবে জীবন থেকে।
নীরার চোখ দিয়ে পানি পারছে।এর চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে ভাইয়ের কথা ভেবে।
ভাই অনু ভবিকে ছাড়া কি করে বাঁচবে?এই একজন মেয়েকে ভালোবেসে ভাই গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে…
আর আজ সেই মেয়েই কি না তার প্রাক্তনের সাথে পালিয়ে গিয়ে ভাইয়ের পিঠে ছুড়ি মারলো।ভাই ভাবির দেওয়া এতো বড় আঘাত মানতে পারবে তো???
কথাগুলো মনে আসতেই অনুর আরো কান্না পাচ্ছে।এদিকে নির্ঝরের মা তো তখন থেকেই অনুকে গাল মন্দ করেই চলেছে…..
ওনি তো মনে মনে স্থির করেই ফেলেছে সিমিকে এবার বাড়ির বউ করবে।তা নির্ঝর চাক বা না চাক…
আগের বার ছেলের জিদ ওনি রেখেছে এবার ছেলেকে তার জিদ মানতে হবে।
এখানে যে যার চিন্তায় আছন্ন।এমন সময় বাড়ির ল্যান্ড নম্বারে ফোন আসে।প্রথম বার বেজে বন্ধ হয়ে যায় আবার বাজতেঔ নীরা গিয়ে ফোন তোলে…
অপর পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে
-এটা কি নির্ঝর চৌধূরীর বাড়ি??
-জ্বি কে বলছেন??
-আমি হাসপাতাল থেকে বলছি।আসলে নির্ঝর চৌধূরী…..
চলবে…..