###__স্বামী__###
পর্ব-২৯
#Nirzana(Tanima_Anam)
-নীরা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই!!এই বিয়ে নিয়ে আমার আর কোনো আপত্তি নেই
-বাবাহ্ মি.সায়ন হটাৎ আমার প্রতি তোমার এতো দরদ??
-নীরা মা খালামুনি আর অ… সবাই চায় তোমাকে আমি বিয়েটা করি তাই…..
-ওওও সবাই বলেছে বলে বিয়ে করতে চাইছেন তাই তো??
সায়ন মাথা নিচু করে ফেলে।
[মাঝে বেশ কয়েক দিন কেটে গেছে। নির্ঝর অনুর সম্পর্কটা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।এই ক দিন সিমি নিখোজ।সেদিন হাসপাতালেই সিমিকে শেষবারের মতো দেখা গেছে তারপর আর সিমির খোজ পাওয়া যায় নি।তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথ্যা নেই। তবে নীরা আর সায়নের বিষয়টা এখনো থেমেই আছে।তবে কাল রাতে হটাৎই সায়ন নীরাকে ফোন করে ক্যাফেতে ডাকে।নীরা প্রথমে রাজি না হলেও ভালোবাসার ডাক এড়ানোর মতো সাধ্য নীরার নেই।হাজার মান অভিমানের পাহাড় জমে থাকলেও ভালোবাসা যখন হাতছানি দেয় তা এড়ানোর সাধ্য কি কারো আছে!!
নেই ভালোবাসা তো এমনই হয়!!
ক্যাফেতে মুখোমুখি বসে আছে নীরা আর সায়ন। বেশ কিছুক্ষন দুজন চুপ চাপ বসে আছে।সায়নই প্রথম কথা বলা শুরু করে।
নীরা মুখ ভার করে বসে আছে।সায়নও এখন মাথা নিচু করে বসে আছে।
নীরা কিছুক্ষন সায়নের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে উঠে যেতে নিলে সায়ন নীরার হাত ধরে নেয়
-কি হলো উওর দিলে না তো!!
-আপনার বুকের বা পাশটায় একটা নাম লিখা আছে তবে সে নাম আমার নয়।যে দিন আপনার হৃদয়ে আমার নাম লিখা হবে সেদিন৷ আসবেন।
-নীরা!!
-এতো দিন যখন আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি বাঁকি জীবনটাও অপেক্ষা করেই কাটাতে পারবো!!
-আমার সময় লাগবে!!
-নিন না যতো খুশি সময় নিন আপনার জন্য অপেক্ষা করার অভ্যেস আছে আমার।না হয় আরো কিছু দিন অপেক্ষা করলাম…..
সায়ন চুপ চাপ মাথা নিচু করে আছে।সায়নকে চুপ থাকতে দেখে নীরা উঠে যায়।তবে এবার।আর সায়ন নীরাকে আটকায় নি।নীরাও আর পেছন ফিরে তাকায় নি!!
পেছন ফিরে তাকিয়ে কি লাভ।এখন তো অপেক্ষার পালা।অপেক্ষা করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য!!অপেক্ষা করতে হবে তার ভালোবাসার জন্য।অপেক্ষা করতে হবে ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার জন্য…!!
এ অপেক্ষার স্বাদ অন্য রকম…এ অপেক্ষার মাঝেও যেন এক তৃপ্তি রয়েছে।
হাজার চাওয়ার মাঝে একটি চাওয়ার জন্য অপেক্ষা………
শুধু অপেক্ষা……
সাওয়ার নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে অনু।আকাশটা কেমন মেঘলা মেঘলা ঠেকছে।ধবধবে মেঘের আড়ালে রক্তিম সূর্যটা মাঝে মাঝে উকি দিচ্ছে।
মেঘের আড়ালে সূর্যটা লুকোচুরি খেলছে।অনুর কাছে বেশ লাগছে এই আকাশটা
-যখন তোমার মনের আকাশে মেঘ জমবে আমার কাছে এসো আমি মন ভালো করে দিবো!!
নির্ঝরের কথা শুনে অনু চমকে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
নির্ঝরের মুখে দুষ্টামি মার্কা হাসি।
অনু নির্ঝরের দিক থেকে চোখ সড়িয়ে নিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকায়।
এখন সে আকাশ দেখতে ব্যস্ত।অনু কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই।
-কি হলো কথা বলো না কেন?
নির্ঝর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে……
-উহু
-তাহলে চুপ করে আছো কেন?আর এখানে এভাবে দাড়িয়ে কি দেখছো??
-আকাশ…. দেখুন নির্ঝর আল্লাহ্ সবকিছু কি সুন্দর পরিপূর্ন করে সাজিয়ে দিয়েছে। নীল আকাশ সাদা মেঘ লাল সূর্য…..আর জমিনে মাটির সাথে সবুজ গাছ পালা…..সবাই সবাইকে পেয়ে কি সুন্দর পূর্ণ…
-হুম্ম তো???
-আমি পূর্ণ নই
(অনুর গাল বেয়ে এক ফোটা পানি নির্ঝরের হাতে পরে।নির্ঝর চমকে যায়।অনু কাঁদছে।অনুকে পেছন থেকে সামনে ঘুড়িয়ে দেয় নির্ঝর।তারপর অনুর ডান হাতটা শক্ত করে ধরে)
-কি হয়েছে কাঁদছো কেন???
-নির্ঝর আমি পূর্ণ নই আল্লাহ হয়তো আমাকে কখনো পূর্ণতা দেবে না!!
-অনু কি হয়েছে..??
-আমি মা হতে চাই নির্ঝর আপনার সন্তানের মা হতে চাই!!
অনু কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে…….
নির্ঝর দাড়িয়ে আছে।পায়ে খুব ব্যাথ্যা তাই নির্ঝর চেয়েও বসেতে পারছে না…..তবে নির্ঝর একটু নিচু হয়ে অনুর হাত দুটো শক্ত করে ধরে…..
অনুকে টেনে তোলে
-কাঁদছ কেন পাগলি হবে সব হবে তুমি আমার সন্তানের মা হবে….দেখো আমাদেরও ফুটফুটে মিষ্টি একটা বেবি হবে ঠিক তোমার মতো
(কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর নাকটা টেনে দেয়)
অনু ফিক করে হেসে দেয়
-সত্যি???
-হুম্ম……
অনু নির্ঝরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
-আউউউউউ….
-কি হলো???
-ব্যাথ্যা…..বাবাহ্ অনু তুমি তো দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছো!!
-কিহ্ আমাকে মোটা বললেন??
-কোই না তো!!🤐🤐🤐🤐
-😒😒😒😒
-😓😓😓
-সরুন….
অনু নির্ঝরকে ধাক্কা মেরে ঘরে চলে যেতে নিলে নির্ঝর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে……
-অনু…আল্লাহ্ যার ভাঙ্গে যতোটুকু রেখেছে তাকে ততোটুকুতেই সুখে থাকতে হয়।তুমি পূর্ণতা চাও আমিও সন্তান সুখ চাই আল্লাহ্ যদি চায় তো অবশ্যয় হবে সব হবে তুমি ও মা হবে আমিও বাবা হবো…..আমাদের ঘরে ছোট্ট ছোট্ট এ জোড়া পা ছুটাছুটি করবে…….
অনু কাঁদতে কাঁদতে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে….
নির্ঝরও অনুকে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেয়।
এদিকে সায়ন মন স্থির করে নিয়েছে সে নীরাকেই বিয়ে করবে।অনু তো বেশ আছে তার নতুন সংসারে তাহলে সে কেন দুঃখ নিয়ে বাঁচবে তাকেও সুখি হতে হবে।আর বর্তমানে তার সুখ মানেই নীরা। কিন্তু নীরা তো….
এই নীরাই তো ছোটবেলায় কতো পাগলামো করতো।যখন সায়ন খালামুনির বাসায় যেতো তখন নীরা বার বার নানা অছিলায় তার ঘরে আসতো।বার বার দরজার আড়াল থেকে উকি ঝুকি মারতো।আজ এই নীরাই কি না তাকে এড়িয়ে চলছে……
এতো চিন্তার মাঝে হটাৎই সায়নের ফোনটা বেজে উঠে…..
-হ্যালো সায়ন
-হুহ
-আমি সিমি বলছি
-বুঝতে পেরেছি…
-আমার একটু তোর সাহায্য চাই শেষবারের মতো….
-what???
-হুহ।প্লিজ দোস্ত এটাই শেষবার…….
চলবে……..