#আমার_আকাশে_তারা_নেই
#লাবিবা
পর্ব: 6
–‘আমায় কেমন লাগছে ইহান!?’
ইহান একবার ইচ্ছেকে দেখে নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–‘তোমায় তোমার মতই লাগছে। তোমায় নিশ্চই আমার মত দেখতে লাগবেনা!’
নিমিষেই ইচ্ছের হাসি হাসি মুখটা নিভে গেল। সুন্দর মুখশ্রীতে নেমে এল ঘন কালো আঁধার। চোখে জমতে শুরু করল অশ্রুকণা। যার জন্য তার এত আমাজন করে সাজসজ্জা করা সেই তো তাকে একবার ভালোকরে দেখলোনা। আচ্ছা ইহানকি কখনো তার দিকে ভালোবাসার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়েছিল? যদি কখনো ভালোবাসার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতো তাহলে একবারের জন্য হলেও সে ইচ্ছের রূপের প্রশংসা না করে পারত না।
ইহানের জন্যে ইচ্ছে লাল রঞ্জিত একটি পাঞ্জাবি বেডের উপর রেখে দিয়েছিল। কিন্তু ইহান সেটা পড়লো না। খাবার থেকে কালো রঙের টি-শার্ট নিয়ে সিটি গায়ে জড়িয়ে নিল। তার উপর একটা জ্যাকেট পরেনিল। এটা দেখে ইচ্ছের মন আকাশে আরো ঘন মেঘ জমলো। তবে কি তার তার সাথে ম্যাচিং হয়েছে বলেই ইরান পাঞ্জাবি পরল না! কথাটা মাথায় আসতেই ইচ্ছে বুকের বা পাশে হালকা ব্যথা অনুভব হল। বুক ভারী হয়ে আসতে লাগলো। কান্নারা চোখ থেকে বৃষ্টি হয়ে ঝড়তে চাইল। সে কি এতটাই অপছন্দের?
নিচে নামতেই টিনাকে গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হল ইচ্ছে। টিনাও যাচ্ছে সাথে? এই মেয়েটাকে ইচ্ছে একদমই সহ্য করতে পারে না। কেমন গায়ে পড়া স্বভাবের। তাছাড়া কোনো এক কারণে কি নাও ইচ্ছে কে খুব একটা পছন্দ করে না। তবে সে কারণটা অজানা। ইহান ড্রাইভিং সিটে বসেই না দ্রুত ইরানের পাশে ফ্রন্ট সিটে বসে পরলো। ইচ্ছের রাগে সর্বস্ব যেন জ্বলে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাঁকে একা পেছনে বসতে হলো। ইরা তাদের সাথে যাচ্ছে না। সে তার এক বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে যাবে।
–‘ভাবি তুমি প্লিজ মাইন্ড করোনা। তুমি তো সব সময় এখানে বস আজ না হয় আমি বসলাম।’
চিনা ইচ্ছেকে কিছুটা ন্যাকামো সুরে কথাগুলো বলল।
–‘না না ঠিক আছে আমি মাইন্ড করিনি।’
মুখে মাইন্ড করিনি পড়লেও ভেতরে ভেতরে সে ঠিকই ফেটে যাচ্ছে।
–‘আজ ওয়েদার টা খুব সুন্দর। দেখেছি খান ভাই আমি যদি আজ তোমায় কল করে না আসতে বলতাম তাহলে হয়তো এই ওয়েদার টা আমরা সবাই মিস করতাম।’
টিনার কথায় ইচ্ছে যেন আকাশ থেকে পড়লো। তারমানে ইরানকে টিন আসতে বলেছে? কিনার উপড়াতে আজ প্রথম ইরান তার অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে! ইচ্ছে খুব কান্না পাচ্ছে। ইহানের কাছে তবে শুধুমাত্র তাঁরই কোন মূল্য নেই। কই আগে তো কখনো এখানে কিভাবে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আসেনি! ইচ্ছে ভেবেছিল আজ হয়তো ইহানা সে ঘুরবে এবং এখান থেকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে বলেই তাড়াতাড়ি এসেছে। কিন্তু তার ধারণা সম্পূর্ণ মিথ্যে। ইচ্ছের বুকটা হু হু করে কেঁদে উঠলো। আজি হালদার স্বচ্ছ মনটাকে খন্ড খন্ড করে ভেঙে দিয়েছে। সে বুঝল ইহান তাকে শুধু নিজের দায়িত্বই ভাবে। এটা অবশ্য ইচ্ছে আগেই ভেবেছিল। কিন্তু তার নিজের উপর ভরসা ছিল। নিজের ভালবাসার উপর ভরসা ছিল। সে ভেবেছিল নিজের ভালোবাসা দিয়ে ইহানের মন জয় করে নিবে। কিন্তু না! তাদের ভালোবাসাটা হয়তো এই জনমে আর হয়ে উঠবে না। তার এই মুহূর্তে আর ইচ্ছে হচ্ছে না কোথাও যেতে। মন বিষিয়ে উঠেছে তার।
–‘গাইড একটু সাইড করুন প্লিজ।’
ফটো দিচ্ছ রে মন কোথায় ইহান গাড়িটি এক সাইডে পার্ক করে। গাড়ি পার্ক করতে ইচ্ছে গাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। ইচ্ছে বের হতে ইহান ও বের হয়।
–‘কোন সমস্যা?’
ইহান ইচ্ছের কাছে এসে জানতে চায়। ইহানকে কিছুটা চিন্তিত দেখাচ্ছে। অন্য সময় হলে হয়তো ইরানের চোখে নিজের জন্য এই চিন্তা টুকুই দেখে ইচ্ছে অনেক খুশি হত। কিন্তু এই মুহূর্তে তার সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। ইরানের এই চিন্তিত মুখটি ও তার বিরক্ত লাগছে।
–‘আমার প্রচুর মাথা ব্যথা করছে। আপনি প্লিজ আমাকে একটি রিক্সা ঠিক করে দিন আমি বাসায় চলে যাই।’
ইচ্ছের কথাই ইহানের কপালের ভাঁজ দৃঢ় হলো। হঠাৎ করে কি হলো মেয়েটার? এইতো কিছুক্ষণ আগেও সব ঠিক ছিল। এরই মাঝে টিনাও গাড়ি থেকে বের হয়ে আসে।
–‘রিক্সা কেন চলো আমরা ফিরে যাই। অন্য একদিন হয় ঘুরে যাব এসে।’
ইহান ইচ্ছের কথার প্রতি উত্তরে বলল। কিন্তু তৎক্ষণাৎ টিনা তার বিরোধিতা করে বলে উঠলো,
–‘তা কিভাবে হয় ইহান ভাই! আমি তো দুদিন বাদেই ফিরে যাব। তোমরা না হয় অন্য একদিন ঘুরো একসাথে। ভাবিকে রিক্সা করে দাও, ভাবি বাসায় ফিরে যাক।’
টিনার কথায় সম্মতি জানিয়ে ইচ্ছেও বললো,
–‘হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে।’
আসলে তার এই মুহূর্তে ইহানকে একদমই সহ্য হচ্ছেনা। মানুষটা যে তাকে চারআনা দাম ও দেয় না! সে কি কম ভালোবাসে তাকে? কি করেনি সে এই মানুষটার মোন জয় করতে!
_________________
বর্তমানে ইহান আর টিনা একটি শাড়ির দোকানে দাঁড়িয়ে আছে। এই প্রথম ইহান নিজে ইচ্ছের জন্য শাড়ি কিনতে আসছে। মেয়েটা তাকে সত্যিই অনেক ভালবাসে। কত পাগলামিই না করে! ইচ্ছের পাগলামি গুলো মনে পড়তেই তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। অনেক হয়েছে এবার সম্পর্কটা গুছিয়ে নিতে হবে। আজ সে ইচ্ছেকে চমকে দিবে। মেয়েটা নিশ্চই তখন খুশিতে কেঁদে দিবে! কাঁদতে কাঁদতে আবদার করে বলবে,
–‘আপনাকে একটু জরিয়ে ধরব ইহান? আপনার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে মন চাচ্ছে।’
আবারো হাসলো ইহান। এ হাসিতে রয়েছে একরাশ ভালোবাসা। মেয়েটা নিজের পাগলামি দিয়েই ইহানের বুকে জায়গা করে নিয়েছে। এই কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ইহান চৌধুরী এই মেয়েকে দেখতে দেখতে নির্ঘুম রাত কাটায় আজকাল। কাজে মন বসাতে পারেনা। সারাক্ষণ পাগলী বউটার মুখ চোখের সামনে ভেসে থাকে। এমন পাগল একটা মিষ্টি বউকে ভালো না বেসে থাকা যায়?
কলাপাতা রঙের একটি জামদানি শাড়ি কিনলো ইহান। চোখ বন্ধ করে কল্পনায় থেকে এই শাড়ি পরা অবস্থায় ভেবে নিল। তার মতে চোখ ধাঁধানো সুন্দর লাগবে মেয়েটিকে এই রঙে। আজ ও তাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছিল। শপিং মল থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় তার মনে পড়ল চুরির কথা। মেয়েটা বড্ড চুরির পাগল। টিনাকে দাঁড়াতে বলে সে আবারও দৌড়ে একটি কসমেটিকসের দোকান থেকে এক ডজন রেশমি চুড়ি নিল। একসাথে এতগুলো চুড়ির আওয়াজ দোকানদার হেসে বলল,
–‘বউ এর জন্য বুঝি?’
ইহান প্রতিউত্তরে শুধু মিষ্টি করে হাসলো। তার হাসির অর্থ বুঝল দোকানদার। সে হাসি মুখেই বলল,
–‘আমার বউ যখন রেগে থাকে তখন রাগ ভাঙানোর জন্য এই চুরিই যথেষ্ট। এই সামান্য জিনিসেই কিছু মেয়েরা অনেক খুশি হয়। এদের জন্য হাজার টাকার গিফট লাগেনা।’
দোকানদারের কোথায় ইহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। হাসিমুখে তাকে বিদায় জানাল।
–‘আসি তবে! ভালো থাকবেন।’
দোকানদার হাসিমুখে তাকে বিদায় জানালো।
চুরি গুলো দেখে ইচ্ছে কতটা খুশি হবে সেটা ভাবতেই ইহানের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। আজ মেয়েটা বড্ড কাঁদবে। খুশির কান্না কাঁদবে। ইহান তখন একদম বাঁধা দিবে না। সে তো তখন মোন ভরে সেই সুন্দর দৃশ্য দেখবে। অতঃপর নিজ হাতে প্রেয়শির চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে উষ্ণ পরশ বুলিয়ে দিবে। তখন তার প্রেয়শির মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠবে। আহা! কি মনোরম সে দৃশ্য! ভাবতেই হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
চলবে……..