#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_04
#Ariyana_Nur
বেডের মধ্যে কাচুমাচু হয়ে বসে রয়েছে রাই।তার সামনে চেয়ারে বসে তীক্ষ্ম চোখে রাইকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে ফরিদ খান।তার কিছুটা দূরেই বাসার সকলে দাড়িয়ে রয়েছে।রাই বার বার আড় চোখে ফাইজা দিকে তাকাচ্ছে।ফাইজা প্রতিবারই চোখ দিয়ে রাইকে আস্বস্ত দিচ্ছে।
—কি নাম তোমার?
ফরিদ খানের গম্ভীর গলার কথা শুনে রাই একপলক তার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে শুকনো ঢোক গিলে তুতলিয়ে বলল……
—জ্-জ্বি আ-আমার নাম রাইজা ইসলাম।ডাক নাম রাই।
ফরিদ খানঃবাড়িতে কে কে আছে তোমার?
ফরিদ খানের কথা শুনে রাই চুপ করে রইল।কি উওর দিবে সে?বাবা,মা তো তাকে অনার্থ করে অনেক আগেই চলে গেছে।চাচা,চাচি থাকতেও তো আজ তারা নেই।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে ফরিদ খান আবার বলল…….
—কি হল কথা বলছো না কেন?বাড়িতে কে কে আছে?
রাই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল……..
—আমি অনার্থ।আমার কেউ নেই।
রাই এর কথা শুনে ফরিদ খান কিছুটা রাগ মিশ্রিত গলায় বলল…….
—দু’দিনের সম্পর্কের জন্য বাবা,মা থাকতেও নিজেকে অনার্থ দাবি করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ না।আজকাল কার ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দ মত কিছু না হলেই নিজেকে অনার্থ দাবি করে।যেটা আমার মোটেও পছন্দ হয় না।
ফরিদ খানের কথা শুনে রাই না চাইতেও চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরল।রাই এর কান্না ফাইজার সহ্য হল না।তাই সে কিছুটা এগিয়ে এসে মিনমিনে গলায় বলল……
—মাফ করবেন চাচ্চু।রাই আসলেই অনার্থ।ওর বাবা মা দু’জনই অনেক আগেই মারা গেছে।
ফাইজার কথাটা শুনে ফরিদ খান মনে মনে একটু অনুতপ্ত হল।রাই এর সম্পর্কে সব না যেনেই সে রাইকে কথা শুনিয়ে দিল।যাদের বাবা,মা না থাকে তাদের বাবা,মা এর কথা জিগ্যেস করলে যে কলিজায় কতটুকু আঘাত লাগে তা সে কিছুটা হলেও বুঝে।ফরিদ খান প্রসঙ্গ পাল্টে পূনরায় বলল…….
—তা রাই!তুমি কি বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে এসেছো?
রাই চাপা নিশ্বাস ফেলে মিনমিনে গলায় বলল……
—জ্বি।
ফরিদ খান তীব্রর দিকে তাকিয়ে বলল……
—তুমি কি বিয়েতে রাজি ছিলে না?
রাই মুখে কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে না বলল।
ফরিদ খান পূনরায় তীব্রর দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল……..
—তুমি কি ওর কথা মত পালিয়েছো?
তীব্র ফাইজার পিছনে দাড়ানো ছিলো।
রাই ভাবলো ফাইজার কথা বলছে।তাই সে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।রাই এর কাজে তীব্রর চোখ চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।তিহান,তীব্রকে মৃদু ধাক্কা দিকে ফিসফিস করে বলল……
—দেখ ভাই দেখ!ভালোর জামানা আর নাই।তুই আমার শালীকাকে হিরো সেজে বাচালি আর এদিকে আমার শালীকা তোকে কেস খাইয়ে দিল।
তীব্র,তিহান এর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই তিহান মিটমিট করে হেসে অন্য দিকে চলে গেলো।
—তোমরা কি বিয়ে করেছো?
ফরিদ খানের কথা শুনে রাই গোল গোল চোখ করে ফরিদ খানের দিকে তাকালো।মনে মনে ভাবতে লাগলো লোকটা কি পাগল নাকি?মেয়ে মেয়ে আবার বিয়ে হয় কিভাবে?রাইকে চুপ করে থাকতে দেখে ফরিদ খান পূনরায় জিগ্যেস করল……
—কি হল কথা বলছো না কেন?বিয়ে করেছো তোমরা?
রাই,ফাইজার দিকে তাকাতেই ফাইজা ইশারায় রাইকে না বলতে বলল।রাই ও ফাইজার কথ মত মাথা নাড়িয়ে না করল।
ফরিদ খান শক্ত গলায় বলল…….
—তা কি সিদ্ধান্ত নিলে? বিয়ে করবে ওকে?
রাই মাথা নিচু করে বসে রইল। কি উওর দিবে সে।এতোক্ষন ফরিদ খানকে পাগল ভাবলেও এখন সে পুরো শিউর হয়ে গেছে এই লোকের মাথায় সমস্যা আছে।তাই কথা না বাড়িয়ে চুপ করে বসে থাকাই ভালো।রাই কে চুপ থাকতে দেখে ফরিদ খান আবার বলল……..
—কি হল কথা বলছো না কেন?কথার উওর দাও?
রাই কিছু বলার আগেই মুনিয়া বেগম ফোড়ন কেটে বলল…….
—দাদা!আপনি হলেন গুরুজন। যতোই বাড়ি থেকে পালিয়ে আশুক না কেন মেয়েরা বড়দের সামনে মুখ ফুটে কি বিয়ের কথা বলতে পারে বলুন?আর তাছাড়া বিয়ে করার জন্যই তো পালিয়েছে তাই না।মুখে বলার কি আছে।
মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে যেন রাই এর মাথায় আকাশ ভেঙে পরল।রাই কি বলবে তার কি বলা উচিত কিছুই তার মাথায় আসছে না।মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে ফরিদ খান হুংকার দিয়ে বলল……..
—আমায় আর জ্ঞান দিতে হবে না ছোট বউ মা।যা বোঝার আমি বুঝে গেছি।
কথাটা বলেই সে উঠে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ধুপ ধাপ পা ফেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ফরিদ খান রুম থেকে বের হতেই মুনিয়া বেগম বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বিরবির করে বলল…….
—আল্লাহ অর্ধেক বাচালে।
ফারুক খান মুনিয়া বেগম এর দিকে কাপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে বলল……
—কিছু বললে?
মুনিয়া বেগম নিজেকে সামলে নিয়ে বলল……
—না কিছু না।এখনো তুমি এখানে দাড়িয়ে রয়েছো কেন?যাও গিয়ে দাদাকে রাত বেড়াতে বাসা থেকে বের হতে আটকাও।
ফারুক খান মুনিয়া বেগম এর কথা মত কোন কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।মুনিয়া বেগম তীব্র,তিহান এর দিকে তাকিয়ে রাগি গলায় বলল……..
—তোদের কি রুম থেকে বের হওবার কথা আলাদা ভাবে বলতে হবে?বের হ রুম থেকে। যা গিয়ে দেখ দাদা কি করছে।
মুনিয়া বেগম এর ঝাড়ি খেয়ে তীব্র, তিহান শুর শুর করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।সবাই রুম থেকে বের হতেই মুনিয়া বেগম রাই এর সামনে বসে রাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল…….
—এখন কেমন লাগছে মা?শরীর খারাপ লাগছে।
রাই মাথা নাড়িয়ে না বলল।
মুনিয়া বেগম রাই এর চোখের লেপটানো কাজল থেকে হাতে একটু কাজল লাগিয়ে রাই এর কানের পিছে লাগিয়ে দিয়ে মিষ্টি হেসে বলল…….
—মাশাল্লাহ।কান্না কাটির ফলে মেকআপ কিছুটা নষ্ট হয়ে গেলেও বউ সাজে তোমায় কিন্তু দারুন লাগছে।
মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে রাই মাথা নিচু করে ফেলল।রাই এর কাজে মুনিয়া বেগম মুচকি হেসে কথা না বাড়িয়ে ফাইজাকে উদ্দেশ্য করে বলল…….
—ফাইজা তুই এখানে ওর কাছে থাক। আমি গিয়ে দেখে আসি ওখানে কি হচ্ছে।
______
মুনিয়া বেগম রুম থেকে বের হতেই রাই অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করল……..
—ফাইজু!এতোক্ষন এখানে কি হল কিছুই তো আমায় মাথায় ঢুকলো না।প্লিজ আমায় বলবি কি হল এখানে?আমি তোর কাছে এসে কি তোকে সমস্যায় ফেলে দিলাম?
ফাইজা বেড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে গটগট করে পানি পান করে রাই এর সামনে টানটান হয়ে শুয়ে পরল।বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে বলল…….
—উফ্ বাচা গেলো।এতোক্ষন দমটা আটকে ছিলো।দাড়া একটু পিঠটা টান করে নেই তার পরে তোর সকল প্রশ্নের উওর দিচ্ছি।
রাই উওেজিত কন্ঠে বলল…..
—পিঠ পরে টান করিস।আগে আমার প্রশ্নের উওর দে।ঐ লোকটা কে ছিলো?এমন অদ্ভুত অদ্ভুত প্রশ্নই বা আমায় কেন করছিলো?
—ঐ লোকটা আমার বড় শশুর মানে আমার চাচা শশুর।
এটুটুকু বলে ফাইজা থেমে গেলো।
রাই ফাইজাকে ধাক্কা দিয়ে বলল……
—তা না হয় বুঝলাম।কিন্তু সে আমায় এমন সব প্রশ্ন করছিলো কেন?
ফাইজা উঠে বসে বলল……
—আমি তোকে প্রথম থেকে সব বলছি।তুই সেন্সলেস হয়ে গেছেলি।বাড়িতে পৌঁছানোর পর কোন ভাবেই তোর জ্ঞান ফেরানো যায় নি।গাড়িতে তো তোকে আর এভাবে ফেলে রাখা যাবে না।তিহানের পায়ের অবস্থা তো তুই খারাপ করেছিস।আর তোর মত মুটিরে আমার পক্ষে তো কোলে নেওয়া সম্ভবই না।তাই উপায় না পেয়ে ভাইয়া মানে তিহানের বড় ভাই তীব্র ভাইয়া তোকে কোলে নিয়ে বাসায় ঢুকে।এতো রাতে তীব্র ভাইয়াকে বউ বেসে একটা মেয়েকে নিয়ে বাসায় ঢুকতে দেখে বাড়ির সবাই মনে করে বসে ভাইয়া তোকে বিয়ের আসন থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।আমাদের কারো কোন কথা না শুনেই তারা তাদের মন মত সব ভেবে নেয়।আর আমার চাচা শশুর।তার কথা আর কিই বা বলবো।যেমন পাজি তেমন ঘাড়তেড়া।নিজে যেটা ভাববে,বলবে সেটাই ঠিক।কিছু না জেনে সুনেই আমাদের সাথে রাগারাগি করা শুরু করে দেন।আমি অনেক চেষ্টা করেছি সব বলার কিন্তু কোন ভাবেই পারিনি।শুধু এতোটুকু বলতে পেরেছি তুই আমার কলিজার টুকরা বেস্টু।আর কিছুই বলার সুযোগই পাই নি।
সব শুনে রাই এর মুখটা মলিন হয়ে গেল।রাই মিনমিনে গলায় বলল…….
—আমি এখানে এসে তোকে ঝামেলায় ফেলে দিলাম তাই না।আমার জন্য কত কিছু হয়ে গেছে।তোরা সবাই আমার জন্য শুধু শুধু বকাও শুনলি।দেখ ফাইজু!আমার জন্য তোর কোন সমস্যা হোক আমি চাইনা।কোন সমস্যা হবার আগেই আমি এখান থেকে চলে যাব।আমি এখানে থেকে তোর কোন অশান্তি করতে চাই না।
ফাইজা মুখের মাঝে লম্বা হাসি ঝুলিয়ে বলল…….
—ধূর কি যে বলিস না।তোর জন্য কোন সমস্যাই হবে না।আমার শশুর বাড়ির লোক অনেক ভালো।শুধু চাচা শশুরটা একটু রাগি।কিন্তু মানুষ হিসেবে খুব ভালো।চিন্তা করিস না আমার শাশুড়ি মা আছে না উনি সব দেখে নিবে।আর যদি তোর জন্য কোন সমস্যা হয় তাহলে আমি নিজেই তোকে বলব।তাই এসব নিয়ে কোন টেনশনই করিস না।
রাই অস্রুভেজা চোখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল……
—সত্যি তো?
ফাইজা,রাই এর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল……
—একশতে দুইশো র্পাসেন্ট সত্যি।
ফাইজার কথা শুনে রাই কিছু না বলে মুখ মলিন করে বসে রইল।ফাইজা, রাই এর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল……
—সরি রে রাইজু!আজকের ঘোটে যাওয়া সত্যিটা তোকে বলতে পারলাম না।আমায় ক্ষমা করিস দোস্ত।তোর মুখে হাসি ফুটানোর জন্য আমি এমন হাজার মিথ্যে তোকে বলতে পারি।তাতে তুই আমার ঘৃণাই বা করিস না কেন?
#চলবে,
(
#Part_05
#Ariyana_Nur
বেলকনিতে বসে একের পর এক সিগারেট শেষ করে চলেছে একজন লোক।সিগারেট এর ধোয়া ঊড়ানোর সাথে সাথে নিজের মনের ভিতরের জমে থাকা কষ্টগুলো সে ঊড়িয়ে দিতে চাচ্ছে।কিন্তু বরাবরই সে ব্যার্থ হচ্ছে।বার বার তার চোখের সামনে রাই এর অস্রুভেজা মুখটা ভেসে উঠছে।তাতেই যেন তার ভিতরটা ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে।মনের মধ্যে রক্ত ক্ষরন হচ্ছে।লোকটি হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে নিচে ছুড়ে মাড়লো।নাক মুখ দিয়ে ধুয়ো ঊড়িয়ে চোখ বন্ধ করে বিরবির করে বলল…….
—আমি পারছি না চাঁদ।কিছুতেই নিজেকে আটকে রাখতে পারছি না।তোমার ঐ অস্রুভেজা চেহারা দেখে ইচ্ছে করে সব বাধা পেরিয়ে ছুটে তোমার কাছে চলে যাই।তোমাকে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে এমন ভাবে আগলে নেই যাতে কোন কষ্ট তোমার ছুতে না পারে।কিন্তু…..।তা তো আমি করতে পারবো না চাঁদ।তাতে উল্টো তুমিই আমায় ভূল বুঝে দূরে চলে যাবে।আমি কি করবো চাঁদ?কি করবো?না তোমায় চোখের জল দেখতে পারছি আর না তোমার চোখের জল মুছে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিতে পারছি।
কেমন এক দোটানায় আমায় ফেলোছো তুমি?এই যন্ত্রণা থেকে কবে আমার মুক্তি মিলবে চাঁদ? কবে মুক্তি মিলবে?
________
খোলা জানার পাশে বসে চাঁদ শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের জীবনের হিসেব খাতা মিলাতে ব্যাস্ত রাই।নিজের ভাগ্য দেখে নিজেই তাস্যিল্য হাসছে সে।কি ছিলো আর কি হয়ে গেলো?মাথার উপর থেকে বাবা,মা নামক ছাড়াটা সরে গেলে ঝকঝকে রঙিন দুনিয়া যে মুহূর্তেই অন্ধকারে পরিনত হয়ে যায় তা তার বুঝা হয়ে গেছে।ধরনীর বুকে তো কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে আলোর রশ্নী ফুটে উঠবে।কিন্তু তার এই অন্ধকার দুনিয়ায় কখনো কি এক ঝলক আলোর দেখা মিলবে কি না সেটা রাই এর অজানা।
_________
রুমের মধ্যে অচেতন অবস্থায় পরে রয়েছে ফাহাদ।তার পাশে বসে মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে দিপা বেগম।কলিজার টুকরো ভাতিজাকে এভাবে অচেতন অবস্থায় পরে থাকতে দেখে তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।দিপা বেগম একটু পর পর ফাহাদ এর গালে হালকা চাপড় মেরে ফাহাদ এর জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে।
—ও বাবা!ও আমার ফাহাদ বাবা!বাবা চোখটা খোল না বাবা।দেখ তোর ফুপি তোকে ডাকছে।একবার একটু ফুপিকে চোখ খুলে দেখনা।বাবা!ও বাবা!চোখটা খোল নারে।তোকে এভাবে পরে থাকতে দেখে ফুপির অনেক কষ্ট হচ্ছে রে বাবা।প্লিজ বাবা একবার চোখটা খোল বাবা?ফুপির কথাটা একটু শোন না বাবা।
রাহিম ইসলাম রুম জুড়ে পায়চারি করছে আর ভাবছে কি করবে?এক দিকে নিজের ভাই এর শেষ চিহ্ন তার ভাতিজি নিখোজ অপর দিকে নিজের স্ত্রীর কলিজার টুকরো ভাতিজার করুন দশা।সব দিকের টেনশনে যেন তার মাথা ভাড় হয়ে যাচ্ছে।তার উপরে একটু পর পর দিপা বেগম এর মরা কান্নার কারনে মাথা খাটিয়ে কোন উপায় বের করতে পারছে না।রাহিম ইসলাম দিপা বেগম কে এক রাম ধমক দিয়ে বলল…..
—এমন মরা কান্না জুড়ে দিয়েছো কেন?তোমার ভাতিজা কি মরে গেছে?আদিখ্যেতা দেখলে আর বাচি না।একে দেখতেই বুঝা যাচ্ছে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে পরে রয়েছে।নেশা কাটলে দেখবে এমনিতেই উঠে যাবে।তোমায় আর কষ্ট করে ডাকতে হবে না।এদিকে বাড়ির মেয়ে নিখোজ।কি করবো কিছুই মাথায় ঢুকছে না।কেন যে তোমার কথা শুনে তোমার এই আধ পাগল ছেলেটার সাথে মেয়েটার বিয়ে ঠিক করতে গেছিলাম।দিনকাল এমনিতেই ভালো না মেয়েটা কোথায় আছে কি করছে কে জানে।
দিপা বেগম রাহিম ইসলাম এর কথা শুনে চটে গেলো।রাগি গলায় বলল…….
—মুখ সামলে কথা বল।আমার ফাহাদ বাবা খুব ভালো বুঝলে।ও ঐসব ছাইপাস গেলে না।তোমার ঐ মুখপোড়া ভাতিজীর রাগ আমার উপর না ঝেড়ে তাকে খুজে তার উপর ঝাড়ো না।সে তো নিজের আশিক এর হাত ধরে পালিয়েছে তার জন্য তুমি যে কেন আদিখ্যেতা দেখাচ্ছো সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।আগেই বলেছি এই মেয়েকে বাসায় জায়গা দিও না।শুনোনি তো আমার কথা।এখন বেশ হয়েছে।তোমার মুখে চুনকালি মেখে পালিয়েছে।এবার দেখি সমাজে তুমি মুখ দেখাও কিভাবে।যত্তসব নিজে আদিখ্যেতা দেখিয়ে আমাকে বলছে আমি আদিখ্যেতা দেখাচ্ছি।
রাহিম ইসলাম রাগ দেখিয়ে দিপা বেগম এর সাথে কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।এর সাথে কথা বলতে গেলে যে এ তুরকালাম বাধিয়ে তার মাথা আরো খারাপ করে দিবে সেটা তার অজানা নয়।
_________
ফরিদ খান এর মুখোমুখি দাড়িয়ে রয়েছে তীব্র।রাগে তার শরীর রি রি করছে।সকাল সকাল তীব্রকে,রাইকে নিয়ে নানান কথা শুনিয়েছে ফরিদ খান।তার সাথে নতুন করে সুর তুলেছে আজই রাইকে তার বিয়ে করতে হবে।তীব্র নিজের রাগকে কন্টোল করে স্বাভাবিক গলায় বলল……..
—এটা কোন কথা বাবা?আপনি আমাকে না জানিয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করছেন?বিয়েতে আমার মতামত আছে কিনা সেটা কি একবারো জেনেছেন?
তীব্রর কথা শুনে ফরিদ খান হুংকার দিয়ে বলল……..
—আমি তোমার বাবা তুমি আমার না।কি করবো না করবো তা আমার তোমার থেকে পারমিশন নিয়ে করতে হবে না।আমার যেটা ভালো মনে হচ্ছে আমি সেটা করছি।একটা মেয়েকে বিয়ের আসন থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছো।মেয়েটা তোমার ভরসায় সব ছেড়ে বিয়ের আসন থেকে পালিয়েছে।তাকে বিয়ে না করে কি এভাবেই বাসায় বসিয়ে রাখবে?একবারো ভেবে দেখেছো লোকে কি বলবে?আমাদের মান-সম্মান এর কি হবে?তুমি না হয় ছেলে মানুষ কিন্তু রাই?রাই তো একটা মেয়ে।বিয়ের আসন থেকে পালিয়ে আশা মেয়ে যদি এভাবেই তার প্রেমিকের বাসায় পরে থাকে তাহলে ভাবতে পারছো লোকে তাকে নিয়ে কি কি আজে বাজে কথা রটাবে?আমি বুঝতে পারছিনা,যাকে বিয়ের আসন থেকে তুলে নিয়ে এসেছো তাকে তুমি বিয়ে করতে চাচ্ছো না কেন?তোমার কথা শুনে কেন যেন মনে হচ্ছে তুমি তাকে ধোকা দিতে চাচ্ছো।ভূলেও সে সব চিন্তা মাথায় এনো না।তাহলে আমি ভূলে যাব তুমি আমার ছেলে।আমার কাছে সব ভূলের ক্ষমা হলেও ধোকা বাজদের জন্য কোন ক্ষমা নেই।আমি তোমাকে দুটো অপশন দিচ্ছি।এক রাইকে আজ বিয়ে করবে তা না হলে রাই যেখান থেকে এসেছে আমি নিজে গিয়ে রাইকে সেখানে দিয়ে আসবো।
ফরিদ খানের কথা শুনে তীব্র মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।কি জবাবই দিবে সে।ফরিদ খান যা বলছে তা তো আর মিথ্যে নয়।বরং সেই সবাইকে মিথ্যে বলেছে।কোন মুখে তীব্র বলবে তার বাবাকে কেন সে রাইকে বিয়ে করতে চায় না।তীব্রর কাছে বিয়ে কোন ছেলে খেলা নয়।তীব্র চায় না কাগজ, কলমে সাইন করে কাগজ, কলমের বর,বউ সেজে সব ঝামেলা মিটিয়ে নিতে।পরে ইচ্ছে হলে একসাথে থাকবে না হলে যে যার রাস্তা দেখে নিবে।তীব্র না হয় পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে সব মেনে নিবে কিন্তু রাই?রাই ভাববে তীব্র তাকে দয়া করে করুনা করে বিয়ে করেছে।তাছাড়া বিয়ের মত পবিত্র একটা সম্পর্কে তীব্র দুজনের বিনা অনুমতিতে গড়তে চাচ্ছে না।আর রইল রাইকে তার বাসায় পাঠানো।সেটা তো কোন ক্ষেত্রেই করা যাবে না।তীব্র চায় না দ্বিতীয় বার ঐ আজাব খানায় গিয়ে রাই নিজের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করুক।
তীব্রর ভাবনার মাঝেই ফরিদ খান বলে উঠল………
—তোমার ভাবাভাবি শেষ হলে ফ্রেস হয়ে ড্রয়িং রুমে চলে এসো।কি করবে সেটা না হয় সবার সামনেই জানিও।
ফরিদ খান দরজার দিকে পা বাড়াতেই তীব্র করুন কন্ঠে বলল……..
—বাবা আমার কথাটা একটু শুনুন।আমি এই বিয়…….।
তীব্র আর কিছু বলার আগেই ফরিদ খান তীব্রর দিকে না ঘুড়ে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—আমি তোমার কোন কথাই শুনবো না তীব্র।আমি তোমায় আগেও বলেছি এখন আবার বলছি।তোমার কাছে মাত্র দুটি অপশন আছে হয় রাইকে আজ বিয়ে করবে নয়ত রাইকে আমি তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।আর এটাই আমার শেষ কথা।
কথাটা শেষ করেই ফরিদ খান রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
ফরিদ খান রুম থেকে বের হতেই তীব্র দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরল।মাথাটা তার ভিষন ব্যাথা করছে।কি করবে সে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না।সে কি রাই কে বাচানোর জন্য বিয়েটা করবে নাকি পরিস্থিতি মোকাবেলা না করে কাপুরুষের মত এখান থেকে পালাবে?
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আপনাদের কি মনে হয় তীব্র বিয়েটা করবে তো?রি-চেইক করা হয়নি।ধন্যবাদ)