#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_06
#Ariyana_Nur
রাস্তা দিয়ে হেলতে দুলতে হেটে চলেছে ফাহাদ।কয়েক বার হোচট খেয়ে পরে যাওয়াতে হাতে,পায়ে অনেক যায়গায় ছিড়ে গিয়ে রক্ত জমাট বেধে রয়েছে।তার পরেও তার চলার গতি থামছে না।যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকেই হেলতে দূলতে হেটে চলেছে সে।ফাহাদের জ্ঞান ফেরার পর এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সে রাই কে খুজতে বের হয়ে গেছে।আত্মীয়-স্বজন এর বাড়ি হতে শুরু করে আলি-গলি এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ফাহাদ রাইকে না খুজেছে।সারাদিন পেটে দানাপানি না দিয়ে হন্য হয়ে ফাহাদ নিজের লোকদের কে নিয়ে রাইকে খুজেছে।দিন শেষে রাই এর কোন খোজ খবর না পেয়ে নিজের কষ্টগুলো থেকে পরিত্রান পাবার জন্য মদের সাহারা নিয়েছে।ফাহাদ এর এই অবস্থা দেখে তার লোকেরা হতভম্ব হয়ে রয়েছে।যেই ছেলে দম্ভীক ভাবে সব সময় চলাফেরা করে সেই ছেলেকে এই রুপে দেখে তারা যেন কথা বলার ভাষাই হাড়িয়ে ফেলেছে।
ফাহাদ নেশার ঘরে এলোমেলো পা ফেলছে আর বিরবির করে বলছে…….
—পাখি!আমার রাই পাখি!কোথায় ঊড়ে গেলে তুমি?প্লিজ আমার কাছে ফিরে এসো না।প্রমিস করছি আর তোমায় কষ্ট দিবো না।এই দু’দিনে আমি বুঝে গেছি তুমি আমার জীবনে কি।প্লিজ ফিরে এসো।আমি গুড বয় হয়ে যাবো।একটুও তোমায় আর কষ্ট দিবো না।
কথাগুলো বলতে বলতে ফাহাদ হোচট খেয়ে পরে গেলো।সাথে সাথেই তার একজন লোক ফাহাদকে উঠে বসতে সাহায্য করল।ফাহাদ তার লোকের হাত ধরে বলল……..
—রনি আমার রাই পাখিকে এনে দে না।তাকে ছাড়া আমার ভীষন কষ্ট হচ্ছে রে।আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা।দম কেমন আটকে আটকে আসছে।রনি আমি না হয় বেড বয় তুই তো গুড বয় তুই একটু আমার রাই পাখিকে বলনা আমার কাছে চলে আসতে।প্রমিস করছি রাই পাখি আমার কাছে চলে আসলে আমি সত্যি সত্যি গুড বয় হয়ে যাব।তাকে একটুও কষ্ট দিবো না।
রনি তীব্রকে উঠানোর চেষ্টা করে বলল……
—ভাই আপনার নেশা চড়ে গেছে বাসায় চলুন।আমরা ঠিক ভাবিকে খুজে বের করবো।
ফাহাদ,রনির হাত ছেড়ে দিয়ে চেচিয়ে বলল…….
—না আমি কোথাও যাবো না।আমি আমার রাই পাখিকে না নিয়ে বাসায় এক পা ও রাখবো না।রাই পাখি!(চিৎকার করে)কোথায় তুমি?প্লিজ চলে আসো?আমি আর পারছিনা তোমাকে ছাড়া থাকতে?প্লিজ চলে আসো রাই পাখি।প্লিজ কাম ব্যাক।
কথাগুলো বলতে বলতে ফাহাদ রাস্তার মধ্যেই সুয়ে পরল।ফাহাদকে দেখলে যে কেউ বলবে ফাহাদ একটা পাগল।হ্যা ফাহাদ পাগল।সে তার রাই পাখির জন্য পাগল।
ফাহাদ এর পাগলামি দেখে রনির চোখে জল চলে এল।একটা পাথরের মত মানুষ কাউকে পাগলের মত ভালো না বাসলে সে কখনো এমন পাগলো করতে পারে না।রনি,ফাহাদের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল…….
—আমি জানি ভাই আপনি ভাবিকে ভীষন ভালোবাসেন।আপনার মত কেউ ভাবিকে ভালোবাসতে পারবে কিনা সেটা আমি জানি না।কিন্তু আপনি যেভাবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতেন নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে চান তেমন ভয়ংকর ভালোবাসাকে ভাবি কেন কোন মেয়েই পছন্দ করবে না।
তাই তো ভাবি এই ভয়ংকর ভালোবাসা থেকে মুক্তি পেতে পালিয়েছে।
__________
তীব্রর সামনে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।চোখে এসে ভীড় করেছে নোনা জল।তীব্র সেটা দেখেও যেন দেখছে না।সে তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাই এর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে তীব্র তার তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়েই রাইকে ভস্ম করে দিবে।
—কাকে বলে বাসা থেকে বের হয়েছো?
তীব্রর শীতল গলার কথা শুনে রাই চোখ তুলে তীব্রর দিকে তাকালো।কিন্তু বেশিক্ষন আর তীব্রর ঐ রাগি চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না।কয়েক সেকেন্ড পরই সে চোখ নামিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইল।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র পুনরায় বলল……..
—কি হল কথা বলছো না কেন?কাকে বলে তুমি বাসা থেকে বের হয়েছো?
তীব্রর কথার প্রতিউওরে রাই চুপ করে দাড়িয়েই রইল।কিই বা উওর দিবে সে।সে তো তাকে ঝামেলা মুক্তি করতেই কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে চলে এসেছে।আজ দুপুরে পারিবারিক ভাবেই রাই আর তীব্রর বিয়েটা হয়েছে।রাই তো প্রথমে তার আর তীব্রর বিয়ের কথা শুনে আকাশ থেকে পরেছিলো।রাই বাসার সবাইকে সবটা জানিয়ে তাদের ভূল ধারনা ভাঙতে চেয়েছিলো।কিন্তু সে ফাইজার জন্য পারেনি।ফাইজা হাত জোর করে নিজের পরিবারের সম্মান বাচাতে রাইকে সব সত্যি সবাইকে জানাতে নিষেধ করেছে।এলাকায় তীব্রর বাবার বেশ ভালোই নাম ডাক রয়েছে।সকাল হতে না হতেই ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পরেছে ফরিদ খান এর ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ের আসন থেকে তুলে নিয়ে এসেছে।তার উপরে ফরিদ খান এলাকার কয়েকজন গন্যমান্য ব্যাক্তিদের কে বিয়েতে থাকতে বলেছেন।এক রাই এখানে এসে তাদের নাম খারাপ করেছে।দ্বিতীয় যদি বিয়েটা না করে তাহলে তাদের মাথা আরো নিচু হয়ে যাবে।তাই রাই না চাইতেও বাধ্য হয়ে বিয়েটা তার করতে হয়েছে।
রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র ভীষণ ক্ষেপে গেলো।দু’কদম বাড়িয়ে রাই এর বাহু শক্ত করে চেপে ধরে ঝাঝালো গলায় বলল……..
—কিছু জিগ্যেস করছি শুনতে পারছো না।উওর দাও।
তীব্র এমন আচরনে রাই কেপে উঠল।শক্ত করে বাহু চেপে ধরাতে ভীষন ব্যাথা লাগছে।রাই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাপা কাপা গলায় বলল……
—কাউকে বলে না।
—কেন?
তীব্রর পাল্টা প্রশ্নে রাই এবার আর দেড়ি করল না।সাথে সাথেই উওর দিল……..
—আমার এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় এর বাসায় জাবার জন্য।
—কেন?
তীব্রর প্রশ্নে রাই মুখ তুলে তীব্রর দিকে তাকালো।সাথে সাথে মাথা নিচু করে কিছুটা সাহস নিয়ে বলল…….
—আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।
রাই এর কথাটা তীব্রর পছন্দ হল না।তীব্র রাই এর বাহু আরেকটুকু শক্ত করে চেপে ধরে রাগি গলায় বলল……..
—ফাজলামি কর।তোমার ইচ্ছেতেই কি সব হবে নাকি?রাত বেড়াতে পাগলের মত সবাইকে ঘুড়াচ্ছো এটা কেমন ইচ্ছা তোমার?আমাদের কে কি মানুষ মনে হয় না?একবারো ভাবলে না আমাদের কথা?
বলা নেই কওয়া নেই হুট করেই বাসা থেকে উধাও।একবারো ভাবতে পারছো যদি কোন অঘটন ঘটে যেত তখন কি হত?
রাই কিছু না বলে নিরবে চোখের জল ফেলছে।তীব্র রাই এর বাহু ছেড়ে দিয়ে বড় করে কয়েকটা নিশ্বাস নিয়ে রাই এর দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল……..
—তুমি কি কোন ভাবে এই সম্পর্কে থেকে পালাতে চাচ্ছো?
রাই হাত জোর করে ডুকরে কেদে উঠল।আটকানো গলায় বলল…….
—আমায় ক্ষমা করবেন।আমি আপনার জীবনটা নষ্ট করতে চাইনি।বিশ্বাস করুন আমি এই বিয়েটা আটকাতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি।বিয়ের আসন থেকে পালিয়ে আপনার বাসায় এসে এমনিতেই আপনাদের মান-সম্মান নষ্ট করেছি।আমি বিয়েটা আটকানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পরিনি।এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিয়েটা করেছি।আমায় ক্ষমা করবেন।আমি আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম।রাই চোখের পানি পানি মুছে নাক টেনে বলল……
—চিন্তা করবেন না।আমি কখনো আপনাদের মাঝে এসে দাড়াবো না।কখনো আপনার কাছে স্ত্রী অধিকার নিয়ে আসবো না।আমার জন্য কখনো আপনাদের কোন ঝামেলা হবে না।আমিই তো ঝামেলার মূল কারন।না থাকবো আমি না থাকবে ঝামেলা।আমি মরে গেলে কিছু একটা বলে সবাইকে বুঝ দিয়ে দিবেন।আমার আগে পরে তো কেউ নেই তাই কোন সমস্যা হবে না।আমি মরে গেলে আপুকে আমার তরফ থেকে সরি বলে দিবেন।আমার জন্য আপু আপনাকে ভূল বুঝলো।আপনাকেও সরি আমার কারনে আপনাদের মাঝে ঝামেলা হবার জন্য।আমি…….।
আর কিছু বলার আগেই রাই এর গালে সজোরে একটা থাপ্পড় পরল।রাই গালে হাত রেখে কাপাকাপা গলায় বলে উঠল……
—ফাইজু!তুই…..?
#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_07
#Ariyana_Nur
ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে দোয়া দুরুদ পরছে মুনিয়া বেগম।টেনশন আর ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে রয়েছে।রাই যে বাসা থেকে রাত বেরাতে বের হয়েছে সেটা শুধু তীব্র, তিহান,ফাইজা আর সে জানে।বাসার বড় দুই কর্তাকে তারা কথাটা জানায় নি।ফারুক খান কথাটা জানলে মুনিয়া বেগম না হয় ফারুক খান কে কোন মত সামলে নিবে কিন্তু ফরিদ খান?সে যদি জানতে পারে বিয়ের রাতেই নতুন বউ কাউকে কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়েছে তাহলে তো সে বাসায় তান্ডব শুরু করে দিবে।এসব ভাবতেই যেন মুনিয়া বেগম এর শরীর কাটা দিয়ে উঠল।দেয়ালে টানানো ঘড়িটায় ধং করে উঠতেই মুনিয়া বেগম এর অস্থিরতা আরো বেড়ে গেলো।রাত একটা বেজে গেছে এখনো কারো কোন খবর নেই।রাইকে ওরা খুজে পেয়েছে কি না সেটাও মুনিয়া বেগম জানে না।মুনিয়া বেগম বসে বসে হাফসাফ করতে লাগলো।নিজের অস্থিরতা দূর করতে না পেরে পাশ থেকে মোবাইল হাতে তুলে নিল।তিহান এর নাম্বার খুজে কল করার আগেই একটা ভাড়ি কন্ঠে ভেসে এল…….
—কে ওখানে?
কন্ঠটা চিনতে মুনিয়া বেগম এর ভূল হল না।মুনিয়া বেগম কিছুটা ভয়ে ভয়ে বলল…..
—দ-দাদা আমি।
ফরিদ খান ড্রয়িং রুমের লাইট অন করে মুনিয়া বেগম এর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গম্ভীর গলায় বলল…….
—এতো রাতে এই অন্ধকারের মধ্যে বসে বসে কি করছো?
ফরিদ খানের কথা শুনে মুনিয়া বেগম এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।না জানি এখন সব সত্য তার সামনেই না চলে আসে।কথায় আছে না যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধে হয়।মুনিয়া বেগম কিছুটা তুতলিয়ে হাতে থাকা তজবীটা দেখিয়ে বলল…….
—ঘুম আসছিলো না।তাই এখানে এসে বসে তজবী পরছি।
মুনিয়া বেগম এর কথাটা ফরিদ খানের বিশ্বাস হল না।ফরিদ খান মুনিয়া বেগম এর দিকে সন্দেহর চোখে তাকিয়ে বলল……
—তোমার ছেলেরা বাসায় আছে তো?না কি রাতে বেরাতে বাসা থেকে বের হয়েছে?
মুনিয়া বেগম যেই ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হল।সে শুকনো ঢোক গিলে বলল……
—হ্যা দাদা ওরা রুমেই আছে।এতো রাতে আর কোথায় যাবে।আপনি চাইলে চেক করে দেখতে পারেন।
—থাক তার আর দরকার নেই।মুখের কথাই বিশ্বাস করে নিলাম।
—দাদা আপনি এতো রাতে এখানে?না মানে কিছু লাগবে?
ফরিদ খান হাতের খালি জগটা দেখিয়ে বলল……
—ঐ একটু পানি নিতে এসেছিলাম।
মুনিয়া বেগম ফরিদ খানের হাতের থেকে পানির জগটা এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে বলল……
—মাফ করবেন দাদা।আজ একেবারে মাথা থেকেই বের হয়ে গেছে আপনার রুমে পানি রাখার কথা।আপনি যান আমি পানি নিয়ে আসছি।
—সমস্যা নেই।সারাদিন যেই ধকল গেছে তোমার উপর।বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা।
ফরিদ খান তাস্যিল্য ভাবে শেষের কথা টা বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।ফরিদ খান যেতেই মুনিয়া বেগম বড় করে একটা নিশ্বাস নিলো।এতোক্ষন যেন তার দম আটকে ছিলো।কিচেনের দিকে পা বাড়াতে বাড়াতে বিরবির করে বলল……
—বাদর ছেলেগুলো আয় আজ বাসায় তোদের আমি দেখে নিব।
_______
রাস্তার পাশে একটা বেঞ্চের উপর বসে রয়েছে রাই।তার সামনে কোমড়ে হাত রেখে দাড়িয়ে ফোস ফোস করছে ফাইজা।ফাইজা তেজি গলায় বলে উঠল……
—ইডিয়েট,মাথামোটা তুই ঐ রুমা শাকচুন্নির কথা বিশ্বাস করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলি?একবারো আমায় কথাটা জানানোর প্রয়োজন মনে করলি না।তোর কি মনে হয় আমি সব জেনে শুনে তোকে ভাইয়ার সাথে বিয়ে দিয়েছি?দেখ রাইজু!আমি তোকে আগেও বলেছি এখনও বলছি। তুই আমার বোনের মত।তোকে সব সময় আমি আমার বেষ্টু+বোন মনে করি।আর ভাইয়া।সে তো আমার বড় ভাইয়ের মত।আমি কখনোই চাইবো না আমার একটা ভূলের কারনে তোদের জীবনে কোন কষ্ট হোক।কি করে পারলি তুই একটা অচেনা অজানা মেয়ের কথা শুনে এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে?
(রুমা,তীব্রর আত্মীয়।তীব্র কে অনেক আগের থেকে পছন্দ করে।তীব্রর বিয়ে দাওয়াত পেয়ে পরিবার সহ তীব্রদের বাসায় আসে।আড়ি পেতে তিহান আর ফাইজার কথা শুনে রাই এর পুরো ব্যপারটা বুঝতে পারে।সুযোগ বুঝে রাইকে একা পেয়ে রাই এর সামনে কেদে কেদে বলে,তীব্রর সাথে তার সম্পর্ক আছে।তীব্র রাইকে বাচাতে একমাএ বাধ্য হয়ে এই বিয়েটা করছে।তীব্র আর নিজের সম্পর্কে বানিয়ে বানিয়ে ইচ্ছে মত কথা শুনিয়ে দেয় রাইকে।রাই এর হাত আকড়ে ধরে কান্না করে বিনতী করে বলে তাদের জীবন থেকে চলে যেতে।সব শুনে রাই এর মাথায়
যেন আকাশ ভেঙে পরে।তার জন্য দুটো মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।তার জন্য তাদের একটু একটু করে গড়ে ওঠা সম্পর্ক,স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা সে কখনোই চায় না।তাই তো সে সবার অগোচরে রাতের আধারে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।প্রথমে রাই ফাইজা কে কিছুই বলতে চায় নি।ফাইজার জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে ফাইজাকে সব বলে।)
ফাইজার কথার শুনে রাই কোন কথা না বলে নিরবে চোখের জল ফেলছে।রাইকে চুপ করে থাকতে দেখে ফাইজা ধমক দিয়ে বলল…….
—এখনো স্টেচু হয়ে বসে রয়েছিস কেন?বাসায় যাওয়ার ইচ্ছা নাই নাকি?
তিহান ফাইজাকে থামিয়ে বলল……
—আহ ফাইজা অনেক হয়েছে।ভাবি বাসায় চল।অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।মা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
তিহানের কথায়ও রাই এর মাঝে কোন ভাবান্তর হল না।সে আগের মতই বসে রইল।একবার বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয়ে পূনরায় সেই বাসায় কোন মুখ নিয়ে যাবে সে?তীব্র,রাই থেকে কিছুটা দূরে দাড়িয়ে ছিলো।রাইকে একি ভাবে বসে থাকতে দেখে কোন কথা না বলে বড় বড় কদম ফেলে রাই এর সামনে এসে ঝড়ের গতিতে রাইকে কোলে তুলে নিল।তীব্রর কাজে রাই হকচকিয়ে গেলো।মুহূর্তেই নামার জন্য ছটফট করতে লাগলো।কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই তীব্র রাই এর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—ফাইজা!তোমার বান্ধবীকে বলে দাও এতো রাতে এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তার কান্না দেখার ইচ্ছা আমাদের কারো নেই।যত কাদতে ইচ্ছে হয় সে জানো বাসায় বসে কাদে।
তীব্রর কথা ও কাজে তিহান,ফাইজা মিটমিট করে হাসতে লাগলো।আর রাই হা করে তীব্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
________
তীব্র পিছনে কাচুমাচু হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।মুনিয়া বেগম রাই এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল…….
—বাড়ির কাউকে কিছু না বলে কোথায় গিয়েছে তুমি?
মুনিয়া বেগম এর কথার প্রতি উওরে রাই মাথা নিচু করে চুপ করে রইল।রাইকে কিছু বলতে না দেখে তীব্র চিচিয়ে চিবিয়ে বলল……
—ছোট মা!তোমার নতুন বউকে পগলা মশায় কামড়িয়ে ইনভাইট করেছিলো তাদের সাথে পার্টি করার জন্য।তাই পাগল হয়ে রাতে বেড়াতে রাস্তার মশাদের সাথে পার্টি করে গিয়েছিলো।
মুনিয়া বেগম তীব্রর দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল…..
—চুপ কর তুই।নিশ্চই তুই উল্টাপাল্টা কিছু বলে মেয়েটার মাথা খারাপ করে দিয়েছিস।তাই সে তোর সাথে রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।
তীব্র বিরবির করে বলল…….
—যার মাথা এমনিতেই খারাপ তার মাথা নতুন করে আর কি খারাপ করবো।
কথাটা মুনিয়া বেগম না শুনলেও রাই ঠিকই শুনতে পেল।মুনিয়া বেগম তীব্রর দিকে কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে বলল……
—কিছু বললি?
তীব্র সাথে সাথে দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না করল।মুনিয়া বেগম রাই এর মাথায় মমতার হাত বুলিয়ে কোমল গলায় বলল…….
—তোমাদের মাঝে কি হয়েছে তা আমি জানি না মা।আর না জানতে চাইবো।শুধু এতোটুকু বলল,বিয়ে হল এক পবিত্র বন্ধন।তোমরা একে অপরের সাথে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের পরিপূরক হয়ে গেছো।শোন মা একটা কথা বলি।জীবনে চলার পথে একে অপরের সাথে ছোট ছোট ঝগড়া,লড়াই মান-অভিমান হতেই থাকবে।তাই কখনো রাগ করে দূরে যাওয়ার কথা মাথায় আনবে না।মনে রাখবে মান-অভিমান ভালোবাসা কমায় না আরো বাড়িয়ে তোলে।
________
রাত ৩:১৫মিনিট।বেডের এক পাশে জড়সড় হয়ে বসে রয়েছে রাই।না চাইতেও চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে নোনা জল।ভাগ্য তাকে আজ কোথার থেকে কোথায় এনে দাড় করেছে।ভাগ্যের কি নির্মল পরিহাস।কাল যে বাসায় অভাগা হয়ে অশ্রয় নিয়ে ছিলো আজ সে সেই বাসায় বউ।হঠাৎ ফাহাদ এর কথা মনে পরে গেলো।সারাদিনের টেনশনেতো বড় টেনশন ফাহাদ এর কথা ভূলেই গিয়েছিলো সে।ফাহাদ এর কথা মনে পরতেই চোখে মুখে ভয়ের ছাপ চলে আসলো।মনে মনে নানান কথা ভাবতে লাগলো।ফাহাদ কি তাকে খুজছে?তার থেকে পালিয়ে বেড়ানোর কারনেই ফাহাদ রাইকে নানান ভাবে শাস্তি দিত।এখন তো সে একেবারে পালিয়ে এসেছে।যদি তাকে খুজে পায় তখন তাকে কি করবে ফাহাদ?একেবারে মেরে ফেলবে নাকি অন্য কোন শাস্তি দিবে?ফাহাদ কে নিয়ে বেশি কিছু ভাবার আগেই মুখে ঠান্ডা পানির ছিটা লাগতেই রাই কেপে উঠল।তীব্র মাত্রই সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে।রাই এর সামনে এসে হাত দিয়ে চুল ঝাড়ছে।রাই তীব্রর দিকে একপল তাকিয়ে কিছুটা নড়েচড়ে আগের মতই বসে রইল।তীব্র হাই তুলে বলল…….
—ঐ পাশে যাও।আমি ঘুমাবো।
তীব্রর কথা শুনে রাই তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র বিরক্তির সুরে বলল……..
—আমি সব সময় এই পাশেই ঘুমাই।আমার ঐ পাশে ঘুম আসে না।যদি এটা ভেবে থাকো আমি নাটক,সিনেমার মত তোমায় এই বিশাল বেডে হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে ঘুমাতে দিয়ে আমি নিচে অথবা সোফায় ঘুমাবো তাহলে তুমি ভূল।আমি নাটক,সিনেমার হিরোদের মত অতো মহান না।বড় কথা আমি হিরোই না।আর হ্যা ঘুমোলে আমার হাত পা ঠিক থাকে না।ঘুমের ঘরে হাত-পা লাগলে সরি।আরে আমিও না কি সব বলি।তুমি তো অন্য কেউ না হাত লাগলেই কি না লাগলেই কি।আমারই তো অর্ধাংশ তুমি।(চোখ মেরে)
তীব্রর কথা ও কাজে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।মনে মনে বলতে লাগলো…….
—এ আবার কোন লোকের পাল্লায় পরলাম আমি?
#চলবে,
(