#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্ব_০৪
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
আরিয়া আর অন্তু ক্লাসে আসার পর অন্তু জিজ্ঞেস করলো আরিয়া তুই তখন কী বলছিলি তোর সব পছন্দের জিনিস ও কেড়ে নিতো। কেমনে কী দোস্ত?
”জানিস ছোট থেকেই ও এমন। আব্বু যখন আমার জন্য কোন কিছু আনতো তখন ওর এটাই লাগবে। আমাদের বাড়িতে আসার পর আমার সব প্রিয় জিনিস ও কেড়ে নিত। আমিও ওরে হাসি মুখে সব দিয়ে দিতাম। কে জানতো আজও ফারিয়া এমন থেকে যাবে। আমার প্রিয় মানুষটাকেও কেড়ে নিল। বল আমি ওর কী ক্ষতি করছিলাম। আর রাতুল সে কী করলো সৌন্দর্যের মোহে পড়ে এতদিনের সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটালো। বলেই কান্না করতে লাগলো আরিয়া।
আরিয়ার কান্না দেখে অন্তু স্তব্ধ হয়ে গেলো।
দোস্ত প্লিজ কান্না করিস না। কিছুক্ষণ আগেও তো তুই ঠিক ছিলি। আসলে তুই তো তোর থেকে সব দিক থেকে এগিয়ে তাই ও তোর দুর্বল জায়গাটাতেই আঘাত করছে। (অন্তু)
কে বলল আমি ফারিয়ার থেকে সব দিক দিয়ে এগিয়ে। দেখনা ও তো আমার থেকে সৌন্দর্যের দিক থেকে অনেক এগিয়ে তাই তো রাতুল আমাকে ছেড়ে দিল।(আরিয়া)
প্লিজ দোস্ত বিশ্বাসঘাতকদের জন্য একদম কাঁদবি না। আর এসব কথা একদম বলবি না। আমরা সবসময়ই তোর পাশে আছি। (অন্তু)
হ্যাঁ আরু আমরা সবাই তোর পাশে আছি। ওই ফারিয়া শাঁকচুন্নির হালুয়া টাইট করমু সময় হলে।
আরিয়া আর অন্তু সামনে তাকিয়ে দেখে অাহিল আর ছোঁয়া দাঁড়িয়ে আছে।
(আরিয়া, অন্তু, ছোঁয়া আর অাহিল চারটা কলিজার ফ্রেন্ড। সবাই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট। ওরা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে এক সাথে পড়া লেখা করে। যে কারণে ওদের মধ্যে আত্মার সম্পর্ক)
ওদের দেখেই চোখে পানি নিয়েই আরিয়া মুচকি হাসলো। ছোঁয়া আর অাহিল দৌড়ে ওদের জড়িয়ে ধরলো৷ আরিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে ছোঁয়া বলতে শুরু করলো,,
‘‘দোস্ত বিশ্বাস ঘাতকদের জন্য একদম কাঁদবি না। ওদের শাস্তি ওরা পাবে। হয় আমরা দিব না হয় প্রকৃতি দিবে। রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার বলে একটা কথা আছে মনে রাখিস।
হুম আরু ওরা শাস্তি পাবেই। আর তোর জীবনে এমন কেউ আসবে যে তোকে তোর থেকেও বেশি ভালোবাসবে। আর সেই দিন টা আসতে খুব বেশি দেরি নাই।(অাহিল)
আরিয়া কান্না থামিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,, মানে?
অাহিল চোখ টিপ দিয়ে বলল,, আগে আগে দেখতাহে হো তা হে কিয়া! 😉
ক্লাস শেষ করে সবাই ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসলো। গেটের কাছেই ফুচকার দোকান দেখে সবাই জেদ ধরলো ফুচকা খাবে। আর বিল দিবে আহিল।
ওকে গাইস আজ আমিই বিল দিবো।
সবাই অবাক হয়ে আহিলের দিকে তাকিয়ে আছে।
তখনি ছোঁয়া বললো, আমায় একটা চিমটি দে তো আমি স্বপ্ন দেখছি না কি এটা সত্যিই শুনলাম।
বলতে দেরি হলো কিন্তু দিতে দেড়ি হলো না।
আঁউচ! আহু হারামী তুই আমারে এত জোরে চিমটি দিলি কেন?
তুই এই তো বললি!
তাই বলে এত জোরে।
হুম! বুঝিয়ে দিলাম তুই সত্যিই শুনছিস।
তোরা থাম এইবার। আহু বল তো আজ কী হয়ছে তোর? শরীল ঠিক আছে তো? জ্বর-টর আসে নি তো আবার!(আরিয়া)
ধ্যাত জ্বর আসতে যাবে কেন? আমি একদম ঠিক আছি। এখন বল তুই এইসব জিজ্ঞেস করছিস কেন?(আহিল)
না মানে তুই যেই কিপ্টুস আর তুই কি না আমাদের ফুচকা খাওয়ার বিল দিবি। ভাবা যায়! (অন্তু)
কী আমি কিপ্টা? এত বড় কথা। যা খাওয়াবো না তোদের। গেলাম আমি। বাই!
আহারে আমাদের কিউট গুলোমুলো কুত্তা টা না সরি দোস্ত টা রাগ করেছে? (কিছুটা মজার স্বরে বলল আরিয়া)
আহিল গাল ফুলিয়ে বলল, নাহ্।
আর কিছু কমু না দোস্ত তোর কসম। এখন খাওয়া। (ছোঁয়া)
হু চল।
সবাই দুষ্টুমি করতে করতে ফুচকা খাওয়া শেষ করল।
খাওয়া শেষে ছোঁয়া বলল,, আহু এখন তো বল কেন খাওয়ালি৷ আসলে ব্যাপার টা না ঠিক হজম হচ্ছে না।
আসলে আজ আমি অনেক হ্যাপি তাই খাওয়াইলাম।
কেন? আজ কী আরো কোন মেয়েরে পটাইলি না কি?(আরিয়া)
আমারে কী তোর বারোভাতার মনে হয় নাকি রে শাকঁচুন্নি?
না সেটা মনে হওয়ার কী আছে? এটা তো নিজের চোখেই দেখতে পাই আমরা। হুহ্!(ছোঁয়া)
এসব শুইনা আহিল আরিয়াদের দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়া তাকিয়ে আছে।🐸
আহু বলনা কী জন্য খাওয়ালি?(অন্তু)
সেটা সময় হলেই জানতে পারবি এখন সব বাসায় চল। কাল ঠিক টাইমে ভার্সিটি থাকবি।
___________________🌻
আরিয়া বাসায় এসে দেখে ড্রয়িং রুমে সবাই বসে আছে। তার ফুপি আসছে। আরিয়া এগিয়ে গিয়ে সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে রুমে চলে আসছে।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার জন্য গেলো। খাওয়ার মাঝেই আরিয়ার ফুপি আরিয়ার বাবার উদ্দেশ্যে বলল,, ভাইয়া ফারিয়ার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি আসছে মাসের ১২ তারিখ। ছেলে দেখতে-শুনতে ভালো। আর্থিক অবস্থাও ভালো, আর ছেলে ভালো পজিশনে আছে। খুব তারাতাড়িই সব হয়ে গেছে তাই তোমাদের আর জানানোর সময় হয় নি। প্লিজ তোমরা কিছু মনে করো না।
তখন আরিয়ার বাবা জবাব দিলো,, এটাতো ভালো খবর। রাগ করবো কেন!
__সবাই থাকবা প্লিজ বিয়েতে। আর আরু মা তুই ২ দিন আগেই চলে যাস।
এটা শুনেই আরিয়ার গলায় খাবার আঁটকে গেলো। অনেক কষ্টে চোখের পানি লুকিয়ে তার ফুপি কে জবাব দিলো ঠিক আছে ফুপি। বলেই খাবার না খেয়েই উঠে গেলো আরিয়া।
একি মা তুই না খেয়েই উঠে গেলি কেন? খেয়ে নে।
আসলে আম্মু ফারু আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তো তাই কষ্ট হচ্ছে। আর আমি আসার সময় ফুচকা খেয়ে আসছি। তোমরা খেয়ে নাও প্লিজ। আমি রুমে গেলাম। বলেই এক মুহুর্ত দেরি না করে আরিয়ার চলে আসলো। রুমে এসেই দরজা বন্ধ করে কান্নায় ভেঙে পড়লো। সবার সামনে যতই নিজেকে শক্ত প্রমাণ করুক না কেন সে তো ভেতরে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কী করে মেনে নিবে সে। কান্না করছে আর ভাবছে বিয়ের দিনে নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো তো আমি!
কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে গেলো আরিয়া। সন্ধ্যায় উঠে নামাজ আদায় করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আরিয়া ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে তার আব্বু আর ভাই টিভি দেখছে। রৌদ্রা কার্টুন চলছে। যেটা আরিয়ার ফেবারিট কার্টুন তাই সেও গিয়ে বসে পড়লো৷ কিছুক্ষণ পড়ে আরিয়ার আম্মু চা আর নাস্তা নিয়ে আসলো। সবাই মিলে নাস্তা করে নিল। আরিয়া আর সাঁদ পড়তে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে রুমে চলে আসলো আরিয়া। ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো! আবার রাতুলের কথা ভেবে মন খারাপ হয়ে গেলো। সারাদিন নিজের সাথে যুদ্ধ করে ঠিক থাকলেও রাতে একাকিত্বরা হানা দিবেই।
সকালে ফজরের নামাজ আদায় করে একটু বাগানে ঘুরতে গেলো আরিয়া।
রুমে এসে কিছুক্ষণ পড়তে বসলো। নয়টার দিকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে, খেয়ে বেরিয়ে গেলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
__________________________
গেটের সামনে এসে দেখে ছোঁয়া, অন্তু, আহিল দাঁড়িয়ে আছে।
ওদের দেখেই আরিয়া বলে উঠলো,, কী রে আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উদয় হয়ছে?
কেন? ডেইলি যেদিক দিয়া উঠে।(ছোঁয়া)
আসলে আজ লেট লতিফের বউ আগে চলে আসছে তো তাই কইলাম।
ওই শাঁকচুন্নি একদম এডা কইবি না। নেক্সটে যদি কইছিস তাইলে কিন্তু খুব খারাপ হইবো।
ঝগড়া থামা শাঁকচুন্নির দল। আজ ভাবছিলাম একটু লাইব্রেরিতে যামু কিন্তু যা শুরু করলি!(আহিল)
আমি আগে কিছু কইছি ক? ওই আবুলের বউয়েই তো শুরু করছে। আর আমি কিছু কইলেই দোষ। আর যদি আমারে ও লেট লতিফের বউ কয় তাইলে আমি ওরে দেইক্কা নিমু।
হইছে মেরি মা চুপ কর। আর কমু না।(আরিয়া)
হুহ্ চল।
কিছুক্ষণ পরে লাইব্রেরিতে রাতুল, ফারিয়া আর তাদের বন্ধু-বান্ধব এসে হাজির। মূলত ওরা আসছে আরিয়াকে অপমান করতে।
আরু শোন একটু!
কিন্তু আরিয়া আজ ভেবে রেখেছে তাকে যতক্ষণ না পুরা নাম ধরে ডাকবে ততক্ষণ সে কারো ডাকে পাত্তা দিবে না।
আরু শুনতে পাচ্ছিস?
আরিয়া ছোঁয়ার সাথে গল্প করতে ব্যস্ত। এমন ভাব করছে আশেপাশে কে কী বলছে সে শুনতেই পারছে না।
আরিয়ার এমন গা ছাড়া ভাব দেখে ফারিয়া রেগে গেলো। আরিয়ার সামনের টেবিলে জোরে হাত দিয়ে বারি মেরে জিজ্ঞেস করলো,, এই আরু কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?
হেই লিসেন! ডোন্ট কল মি আরু! এনলি আরিয়া। ওকে!
আরিয়ার কথা শুনে সবাই রীতিমতো অবাক।
কী বলছিস আরু? তোকে আরু বলে ডাকবো না?
না। যারা আমাকে ভালোবাসে শুধু তারাই আরু বলে ডাকবে। কোন বিশ্বাস ঘাতকদের মুখে এই নাম শুনতে চাই না।
আচ্ছা আপনারা এখন আমাদের সামনে সঙ সেজে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?(ছোঁয়া)
ভার্সিটি আর লাইব্রেরি কী তোর বাপের? আমরা কোথা দাঁড়াবো সেটা কী তুই ঠিক করবি?
#ভালোবেসে_থাকবো_পাশে💝
#পর্ব_০৫
#লেখিকা_ইসরাত_জাহান_ইমা
– ভার্সিটি আর লাইব্রেরি কী তোর বাপের? আমরা কোথায় দাঁড়াবো সেটা কী তুই ঠিক করবি?(ফারিয়া)
ওই বেদ্দপ মাইয়া একদম বাপ তুইল্লা কথা কইবি না। কানের নিচে এমন একটা দিমু যে তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুইল্লা যাইবি। তোর মতো বেহায়া মেয়ের সাথে কথা বইল্লা আমার টাইম আর মুখ নষ্ট করতে চাই না৷ (ছোঁয়া)
হ দোস্ত এই খবিশ বেডির লগে বেহুদা কথা কইয়া আমাগোর লাভ নাই!(আহিল)
রাতুল বাবু দেখছো ওরা আমাকে কীভাবে অপমান করতাছে!(ফারিয়া)
রাতুল পাশ থেকে বলে উঠলো, ”ছোঁয়া তোমরা কিন্তু এখন একটু বেশিই বারাবাড়ি করতাছো। লাইব্রেরি থেকে বের হও না হয় চুপচাপ থাক। আর একবার ফারিয়াকে অপমান করলে তোমার খবর আছে।
এই তুই কোন উগান্ডার নেতা রে। তোর কথা কেন শুনবো? আর তুই আমার কী খবর করাবি? তুই তো এখনও তোর গার্লফ্রেন্ডের কাছে বাবু-ই রয়ে গেলি। আরু এই বাবু আমাদের ভার্সিটিতে কী করে? ওর তো এখন মায়ের হাত ধরে শিশুপার্কে যায়া ঘুরার কথা। (ছোঁয়া রাতুলকে দেখিয়ে কিছুটা মজার স্বরে বলে উঠলো।)
এই মেয়ে বয়সে তোমার থেকে বড়। সম্মান দিয়া কথা বলো!(রাতুল)
হপ বেডা কিসের বড় হইলি? আগে তোর বেহায়া গার্লফ্রেন্ড সামলা। যত্তসব আজাইরা পিপলস।(ছোঁয়া)
এটা শুনে রাতুল রাগে আরিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,, আরু তুমিই ওদের বলেছো আমাদের অপমান করতে তাই না। আসলে তোমাদের মতো থার্ডক্লাশ মেয়ের থেকে এর বেশি আর কী আশা করা যায় বলো৷ আমাকে পাও নি তাই এখন আমাকে আর ফারিয়াকে অসম্মান করতে উঠে পড়ে লেগেছো। মা-বাবা হয়তো শিক্ষায় দেয় নি কার সাথে কী ভাবে কথা বলতে হয়।
কথাটা শুনেই আরিয়া রাগে ফুঁসে উঠলো। রাতুলের দিকে ঘৃনা ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়া বলতে শুরু করল, ”হেই লিসেন মিস্টার রাতুল! আগেও বলেছি আর এখনও বলছি ডোন্ট কল মি আরু। অনলি আরিয়া ওকে! তোমাদের মতো বিশ্বাস ঘাতকদের মুখে আমার আরু নাম টা শুনতে চাই না। কি বলছিলে আমি ওদের বলছি তোমাদের অপমান করার জন্য? সম্পুর্ন ভুল। আর সব থেকে বড় কথা তোমরা তো এটারই যোগ্য। ইচ্ছে তো করছে তোমার গালে একটা টাটিয়ে থাপ্পড় মারি। কিন্তু দিতে পারছি না কারণ মা-বাবা এসব শিক্ষা দেই নি। সব থেকে বড় কথা তোমাকে থাপ্পড় দিয়া আমি আমার হাত নোংরা করতে চাই না। কি যেন বলছিলে তুমি আমার মা-বাবা আমাকে শিক্ষা দেয় নি? ওই হ্যালো কান খুলে শুনে রাখো আমার মা-বাবা আমাকে খুব ভালো শিক্ষা দিয়েছে। শিক্ষা হয়তো তুমি পাও নি৷ পেলে কাউকে ঠকাতে পারতা না। নেক্সট টাইমে আমার সাথে কথা বলতে আসলে ভদ্রতা বজায় রেখে কথা বলবা। আবার যদি একি ভুল করো আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। যত্তসব আজাইরা ম্যানার্সলেস পিপলস।
একনাগাড়ে কথা গুলা বলে থামলো আরিয়া। আহিল, ছোঁয়া আর অন্তুকে উদ্দেশ্য করে বলল, তোরা এখানেই থাকবি নাকি ক্লাসে যাবি?
ক্লাসে চল। এদের লগে ফালতু বেহুদা কথা বইলা আমাদের টাইম নষ্ট করার কোন মানে হয় না।(অন্তু)
বলেই সবাই লাইব্রেরি থেকে বের হয়ে গেলো।
রাতুল আর ফারিয়া রীতিমতো অবাক। যেই মেয়েটা তাদের এত ভালোবাসতো সম্মান করতো সেই আজ এত অপমান করলো।
এসব থেকে আড়াল থেকে কেউ একজন বাঁকা হেসে বেরিয়ে গেলো। আর খুশি যেনো উপচে পড়ছে। খুশি হবেই না কেন তার প্রেয়সী আজকেও বেইমানদের যোগ্য জবাব টাই যে দিয়েছে।
লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে দেখে সায়ান দাঁড়িয়ে আছে। সায়ান আরিয়াদের দুই বেজ সিনিয়র আর রাতুলের ক্লাসমেট(যদিও রাতুল বর্তমানে বাবার সাথে বিজনেস সামলায়)। সায়ান ছোঁয়া কে ভালোবাসে। কিন্তু ছোঁয়া পাত্তা দেয় না। যদিও সে মনে মনে সায়ানকে পছন্দ করে। আরিয়াকে একদম বোনের মতোই ভালোবাসে।
সায়ান ভাইয়া কখন এলে?(আরিয়া)
সায়ান ছোঁয়া কে দেখিয়ে বলল,, যখন থেকে তোমার এই দজ্জাল বান্ধবী রাতুল আর ফারিয়াকে ধুয়ে দিচ্ছিল তখন থেকেই দাঁড়িয়ে আছি।
এটা শুনেই ছোঁয়া রাগে ফুঁসে উঠলো। কী আমি দজ্জাল? এই ছেলে সাবধানে কথা বলবেন না হলে কিন্তু ওদের থেকে বেশি খারাপ অবস্থা করবো আপনার।
কিভাবে করবা গো? একটু ভালোবাসো আমারে তাহলেই তো হয়।
আমার টেকা পড়ে নি আপনারে ভালোবাসতে। যত্তসব ঢং!
একটা কথা কী জানিস আরু,, যে আমাকে পাত্তা দেয় তাকে পাত্তা না দিয়ে,, যে আমাকে পাত্তা দেয় না তার পিছনে ঘুরে ঘুরে,, পাত্তাহীনতায় বেপাত্তা আমি।😒
সায়ানের কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে দিল। এটা যেন আগুনে ঘি ঢালার মতো কাজ করলো! ছোঁয়া মুহুর্তে রণচণ্ডীর রুপ ধারণ করে সায়ানকে বলল,, এই বেডা আপনারে কইছি আমার পিছনে ঘুরতে? ফারদার যদি এই কথা কইছেন তাইলে কিন্তু আপনারে দেইক্কা নিমু হুহ্!
কেন বেবি এই দুইবছর আমাকে দেখেও তোমার মন ভরে নি? আর কত দেখবা বল? আচ্ছা চল আমরা এখনি বিয়ে করে ফেলি তাহলে আরো ভালো হবে। সারাদিন তোমার সামনে বসে থাকবো। তখন যত মন চাই দেইখো।
আরে আজব আমারে আপনার কোন দিক দিয়া বেবি মনে হলো হে? যদি বেবিই হতাম তাহলে এখন আমি শিশু পার্কে মায়ের খুলে আসে বসে পিটার খাইতাম। ভার্সিটিতে থাকতাম না। যত্তসব ন্যাকা মার্কা ডায়ালগ। এই আমি ক্লাসে গেলাম মন চাইলে তোরাও আয়। বলেই ছোঁয়া চলে গেলো।
আরু এইডা কী হইলো? তোর বান্ধবী আমারে এত্তগুলা কথা শুনাই গেলো আমারে।
ভালো হয়ছে। তুমি জানো না ও এসব ন্যাকা মার্কা কথা শুনলে রাগ করে। একটু আগেও তো রাতুল আর ফারিয়াকে অপমান করে আসলো।
হু তোর শাঁকচুন্নি বান্ধবী এডা ছাড়া আর কী পারে।
তুমি তো আমার ওই শাঁকচুন্নি বান্ধবীর পেছনেই পরে আছো হুহ্!😏 (একটু ভাব নিয়া বললো আরিয়া)
সায়ান মুচকি হেসে বলল,, ওরে রাগাইতে ভাল্লাগে তাই এমন করি। আচ্ছা শুন যেটার জন্য আসছি!
কেন আসছো ভাইয়া তোমার বিয়ের দাওয়াত দিতে?(অন্তু)
আরে না বিয়েটা তো তোমাদের বান্ধবীরেই করমু।
তো?
শুনো তিনদিন পর কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আর সেই দায়িত্ব আমাদের উপর পড়েছে। রাতুলও থাকবে। কিছুক্ষণ পর প্রিন্সিপাল স্যার যাবে সব ক্লাসেই বলতে।
যেটা বলতে আসছি- আরু তোকে আর আহিলকে কিন্তু গান গাইতে হবে। আর অন্তু তুমি আর ছোঁয়া ডান্স পারফরম্যান্স করবা।
আরিয়া মনে মনে ভাবছে,, যার জন্য গান গাইতাম সেই তো আর আমার নেই।
কি ভাবছিস আরু? (আহিল)
আরিয়া কিছুটা মন খারাপ করে বলল,, ভাইয়া আমি এই মুহূর্তে প্রস্তুত না। আমি পারবো না।
আরু আমি জানি তোর মনের অবস্থা টা। কিন্তু তোকে পারফরম্যান্স করতেই হবে।(সায়াম)
আমি পারবো তো ভাইয়া?
আহিল আরিয়াকে বলল,, আরু চিন্তা করছিস কেন? আমি আছি তো তোর পাশে। আমরা দু’জন মিলে গান গেয়ে পুরো স্টেজ কাঁপিয়ে দিবো।
এ্যাহ্ আসছে অস্বর নিয়ে স্টেজ কাঁপাইতে।
এই অন্তু ফকিন্নি একদম অস্বর কইবি না। আমিও দেখবনি তুই কেমন ডান্স করিস।
হুহ্ দেখিস। এইবার ক্লাসে চল।
হুম আরু তোরা ক্লাসে যা বাই বলেই সায়ান চলে গেলো।
ক্লাসে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে প্রিন্সিপাল স্যার অনুষ্ঠানের কথা বলে আসলেন। বড়দের সব দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর ক্লাসে বলে গেলেন কে কোন পারফরম্যান্সে অংশ গ্রহণ করবে তার লিস্ট বড়দের কাছে দিতে। আর সেই লিস্ট তৈরি করার দায়িত্ব আরিয়ার উপর দিয়েছে।
ক্লাসের কয়েকজন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। ফারিয়াও গানের প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে। ফারিয়া আর তার ফ্রেন্ড জয় গাইবে।
হাতে আর চারদিন সময় আছে তাই সবাই কাল থেকেই গানের রিয়ারসেল শুরু করবে। দুই বেল শেষ হওয়ার পর ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে।
___________🖤
পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে সবাই রিয়ারসেল শুরু করলো। প্রায় দুই ঘন্টা প্র্যাকটিস করে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে গেলো শপিং করতে যাবে তাই। সবাই টুকটাক প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস পত্র কিনে মার্কেট থেকে বেরিয়ে গেলো। রাস্তা পার হওয়ার সময় ছোঁয়া, অন্তু, আহিল একটু এগিয়ে গেলো।
আরিয়া পেছন পেছন একটু অন্যমনষ্ক হয়ে হাঁটছিল। আর তখন কেউ পেছন থেকে কেউ একজন আরিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে পেছনে নিয়ে যায় আর গাড়ি আরিয়াকে ছুঁই ছুঁই হয়ে দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যায়। চমকে উঠলো আরিয়া।
হঠাৎ সবাই পিছনে ফিরে দেখে আরিয়ার হাত কেউ একজন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দেখা যাচ্ছে না কারণ মুখে মাস্ক লাগানো ছিল। সবাই দৌড়ে আরিয়ার কাছে চলে আসলো।
ছোঁয়া উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে আরিয়া?
আমি ঠিক টাইমে না আসলে আপনাদের বান্ধবী মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে লাশ হয়ে রাস্তায় পরে থাকতো। সবাই একটু সতর্ক হয়ে রাস্তায় চলা-ফেরা করবেন।
জ্বি ঠিক আছে।
ছেলেটা আরিয়ার দিকে কিছুটা ঝুকে বললো,, এই যে ম্যাম মন কোথায় থাকে? এইবার তো একটু নিজের মতো করে বাঁচতে শিখুন। নিজের জন্য না হলেও অন্যের জন্য নিজের একটু খেয়াল রাখুন। কেউ তো আছে যে আপনাকে তার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে। সো নিজের প্রতি খেয়াল রাখুন। বাই আরুপাখি।
চলবে…..!!