তোমার জন্য ফিরে আসা পর্ব ১৪

#তোমার_জন্য_ফিরে_আসা
#লেখা_ইভানা
#পার্ট_১৪
কলেজ ক্যাম্পাসে একটা মেয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছে এমন ঘটনা সচারাচর দেখা যায় না সবাই হাঁ করে তাকিয়ে আছে ইভা একটা ছেলের দিকে দৌঁড়ে যাচ্ছে কেনো?

ইভা দৌঁড়ঝাপে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে বললো,
“আলিব আপনি এখানে কি করে আসলেন?আপনি আজকেই আসবেন আমি ভাবতেও পারি নি ”

আলিব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
“আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না, কে আপনি? ”
“আমি আপনার মহারানী, আপনি আমার জন্য ফিরে এসেছেন মনে আছে ”
“এই মেয়ে মাথায় সমস্যা আছে নাকি, আপনার জন্য কেনো ফিরে আসবো? জব ট্রাসফার হয়েছে তাই এসেছি”
” আপনি তো বলেছেন আমার জন্য ফিরে এসেছেন, আমি আপনাকে বার বার স্বপ্ন দেখেছি নাকি বাস্তবে ছিলো জানি না কিন্তু আপনি ছিলেন এটা জানি”
“হ্যাঁ আপনার মতো একজনকে আমিও বার বার স্বপ্নে দেখেছি, জাদু দিয়ে আপনার ইচ্ছে পূর্ন করেছি ”
“হ্যাঁ এসব তো হয়েছে এই দেখুন আমার হাতের আংটি আপনি দিয়েছেন ”

আলিব ইভার হাতের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো এই সেই আংটি যেটা স্বপ্নে ছিলে তাহলে কি মেয়েটাও স্বপ্ন দেখেছে কিন্তু স্বপ্ন দেখলে আংটি আসলো কিভাবে?

আলিব আবার একটু ইভার দিকে তাকিয়ে ভেবে বললো,

“বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে? স্বপ্নের জিনিস বাস্তবে হয় কেনো? ”
” হ্যাঁ বাস্তবে ছিলো ”
” আচ্ছা, আপনি আমার নামও জানেন ব্যাপারটা কেমন জানো ”
“আমার কথা বিশ্বাস করেন আমি সত্যি বলছি, আপনার সাথে অনেক সময় কাটিয়েছি আপনার অতীত জানি ”

আলিবের ফোনে একটা কল আসে আর কোনো কথা না বলে চলে যাচ্ছে। ইভা আলিবকে ফলো করে ওর পিছু হাঁটতে শুরু করে। ইভা দেখতে পেলো ওদের বাসার পাশের বাসায় আলিব ঢুকে। এখানে আলিব থাকে এটা জেনে ইভা আবার কলেজে গেলো, আজকে ক্লাস না করলে রক্ষা নেই তাই ক্লাস করছে কিন্তু মন পড়ে আছে আলিবের কাছে।

ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার সময় ইরা জিজ্ঞাসা করলো,
“তুই ওরকম ভরা মাঠে দৌঁড়ে ওই ছেলেটার কাছে গিয়েছিলি কেনো? ”
“আমার পরিচিত একজন তাই ”
“তুই নতুন প্রেম করছিস নাকি”
“আগে কি প্রেম করেছি নাকি যে এটা নতুন হবে “?
” নাহ্ কিন্তু তোর শুধু পরিচিত এটা মানতে পারলাম না নিশ্চয়ই কিছু আছে”
“হুম ভালো লাগে। একটা হেল্প করবি? ”
“হ্যাঁ বল?”
“তুই আজকে বিকেলে আমার বাসায় আসিস ”
“ওক্কে ”

ইভা বাসায় গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। ইভা ভাবতে আছে এতো দিন ওর সাথে কি হয়েছে ওটা কি স্বপ্ন নাকি বাস্তব জীবন? এর উওর তান্ত্রিকসাধু দিতে পারবে তবে এখন ওর নানু বাড়ি যেতে পারবে না আর একা যাওয়া সম্ভব না তাহলে আলিব সাহায্য করতে পারবে কিন্তু ও তো না চেনার ভান করে চলে গেলো।?

অপেক্ষা করতে করতে বিকেল হলো ইরাও আসলো। ইভা আর ইভা দুজনে ছেঁদে গেলো এবং আলিবের দেখা পাওয়া মাত্র বলে,
” আপনার বাসায় কে কে আছে? ”
“আপনাকে কেনো বলবো হ্যাঁ?সকাল থেকে দেখছি আমার পিছে পরে আছেন ”
“আপনি আমার রাজামশাই, আপনাকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না আর একবার যখন আপনার দেখা পেয়েছি তখন তো ছাড়ছি না ”
“আপনার মাথায় সত্যি কোনো সমস্যা আছে, ভালো ডক্টর দেখান ”
“আমার মাথা ঠিক আছে বরং আপনার মাথায় সমস্যা আছে। আমাকে আপনি চেনেন না এটা হয় নাকি”?
” হ্যাঁ হয়। ”
“আপনার সাথে কথা না বললে আমার ভালো লাগে না ফোন নাম্বার টা দেন”
“দিবো না”

আলিব চলে যাচ্ছে তখন ইভা ডাক দিলো,

“এই যে মিস্টার আপনার ফোন নাম্বার টা দিয়ে যান নয়তো আমি নিচে লাফ দিবো ”
আলিব চোখ বড় করে তাকিয়ে বলে,
“আপনি আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছেন নাকি? ”
“সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল তো বাঁকাতে হয় ”
“আপনার যা ইচ্ছে তাই করুন ”
“সত্যি তো? আমি মরে গেলে আপনি দায়ী থাকবেন ”
“যত্তসব, ফোন নাম্বার টা লিখুন ”

আলিব ফোন নাম্বার দিয়ে চলে গেলো। ইভা তো মহাখুশি। ইরাকে কোনো কাজে লাগে নি। সন্ধ্যায় ইভা বই পড়তে বসেছে তখন খুব বৃষ্টি শুরু হলো রুমের জানালা বন্ধ করে দিবে তখন গেলো দেখতে পেলো আলিব ওর রুম সোজা বরাবর ফ্ল্যাটে থাকে, বিছানায় শুয়ে আছে। জানালা বন্ধ করে দিয়ে ইভা কল দিলো,
“ওভাবে শুয়ে আছেন কেনো? অসুস্থ নাকি?”
“কে আপনি? ”
“একক্ষুনি আমার নাম্বার সেইভ করুন ”
“আরে কে আপনি পরিচয় না দিলে নাম্বার সেইভ করবো কেনো?
” মহারানী, বিকেলে আপনার ফোন নাম্বার নিয়েছি মনে আছে”
“নাহ্ আপনার জ্বালায় কি আমি একটু শান্তিতে থাকতে পারবো? সকালে, বিকেলে,রাতে জ্বালিয়ে যাচ্ছেন ”
“আগের মতো হয়ে যান শান্তি পাবেন”
“ধুর ”

আলিব কল কেটে দিলো। পরের দিন সকালে ইভা কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো পথে আলিবের দেখা পেয়ে বললো,
“এখন কোথায় যাচ্ছেন?
” দেখো মহারানী, প্রতিদিন ক্লাস ফাঁকি দেওয়া ভালো না নিজের পড়ালেখায় মন দেও”
“এই তো আপনি আমাকে মহারানী বলছেন তার মানে আপনিও আমাকে চিনেছেন শুধু শুধু না চেনার ভান করেন”
“না মানে গতকালকে এতো করে আপনার নাম মহারানী বলেছেন তাই আমিও বলে ফেলেছি ”

আলিব ইভাকে এড়িয়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু ইভা তো নাছোড়বান্দা তাই আলিবের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
“একদম মিথ্যে বলবেন না, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলুন আপনি আমাকে চিনেন কি না?”
“উফফফ্ রে এক কথা আর কতো বললো ”

আলিব আর কিছু না বলে রিকশায় উঠে চলে গেলো। ইভা মন খারাপ করে কলেজে গেলো। ক্লাস শেষ করে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হতে আলিবকে দেখে কিন্তু ইভা কোনো কথা না বলে চলে যায়।
ইভা বুঝতে পারলো আলিব ইচ্ছে করে ওকে না চেনার ভান করছে, আলিব কেনো এরকম করেছে এটা জানাতেই হবে।
ইভা বিকেল বেলা ছাঁদে অপেক্ষা করছে কখন আলিব আসবে? বেশ কিছুক্ষণ হলো আলিব আসে নি তাই বাধ্য হলে কল দিলো ,
“আপনি কোথায় আছেন? ”
“আমার রুমে আছি ”
“একক্ষুনি ছাঁদে আসুন ”
“আসতে পারবো না, আমার খুব ঘুম পেয়েছে ”
“আপনি না আসলে আমি বৃষ্টিতে ভিজবো ”
“ভিজুন ”

আলিব কল কেটে দিয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো। এদিকে ইভা ছাঁদে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে আছে। আলিবের ঘুম আসছে না, একবার ভাবছে ছাঁদে যাবে আবার ভাবছে ছাঁদে যাবে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আলিব ছাঁদে গিয়ে দেখছে ইভা বৃষ্টিতে ভিজে ভেজা কাক হয়ে গেছে।চুল থেকে টপটপ পানি পরছে, ঠান্ডায় জমে শরীর কাঁপছে।আলিব কিছু বলতে যাবে তখন ইভার মা এসে ইভাকে নিয়ে গেলো।
আলিব রুমে এসে ইভা কল করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। অনেক বার কল দিচ্ছে তাও ফোন বন্ধ, ইভার রুমের জানালাও বন্ধ।

চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here