সুঁই সুতোর আসক্তি পর্ব -২১

#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

পিটপিট করে চোখ খোলে কায়াসা।সে আস্তে আস্তে উঠে বসে।কায়াসা চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে এখন তার রুমেই আছে।কায়াসা ঘরে আলো দেখে বুঝতে পারে এখন সকাল হয়ে গিয়েছে।ঘড়ির দিকে কায়াসা তাকিয়ে দেখে ৯ টা বেজে গিয়েছে কিন্তু কায়াসা বুঝতে পারছেনা সে বাড়িতে কি করে এলো।সে তো আরোহীর জন্মদিনের পার্টিতে ছিল।মাথায় হাত দিয়ে কায়াসা কাল রাতের কথা ভাবতে থাকে।

ফ্ল্যাসবেক,

আরোহীর জন্মদিনের কেক কাটা হয়ে গিয়েছে।ইতি এখনো এসে পৌঁছায়নি।কায়াসা ফোন করে জানতে পেরেছে মাঝরাস্তায় তার গাড়ি খারাপ হয়ে গিয়েছে কিন্তু সে আসছে।আরোহী তার কাজিন আর বন্ধুদের সাথে মজা করছে।কায়াসা চুপচাপ এককোণোয় দাঁড়িয়ে আছে।সে চলে যেতে চাইছে কিন্তু আরোহীর কাছে সে যেতেই পারছেনা।আর এখন সে চলে গেলে ইতি আসার পর একা হয়ে যাবে এটা ভেবেও কায়াসা যেতে পারছেনা।

কায়াসা একটা টেবিলে গিয়ে বসে ইতির অপেক্ষা করতে থাকে।হঠাৎ কোথা থেকে আরোহীর বিএফ রাতুল এসে তার সামনের চেয়ারটাতে বসে পড়ে।আচমকা রাতুলকে দেখে কায়াসা ভরকে যায়।

” হেই মিস শালিকা।কেমন আছো?আমার সাথে তো এখনো ভালো করে কথাও বলোনি।আমাকে পছন্দ হয়নি বুঝি?”

রাতুলের কথা শুনে কায়াসার প্রচুর বিরক্ত লাগে তবে সে তা প্রকাশ করেনা।এতক্ষণে কায়াসা এতটুকু বুঝতে পেরেছে যে রাতুল মোটেও ভালো ছেলে না।তার মধ্যে অনেক বাজে অভ্যাস আছে।

” কিগো শালিকা কথা বলছো না যে?কি এতো চিন্তা করছো গো শুনি?বয়ফ্রেন্ড কি অন্যকোন ছেলের সাথে কথা বলতে বারণ করেছে বুঝি?”

” না।”

” তাহলে কথা বলছো না যে?তোমার কি এটা মনে হচ্ছে আমার সাথে কথা বললে তুমি আমার প্রেমে পড়ে যাবে?” কথাটা রাতুল একটা কায়াসার দিকে ঝুঁকে বলে।

” না সেরকম কিছুনা।আরোহী তো আপনাকে বলেছেই আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।”

” আরে এটা কোন কথা হলো?তুমি যদি কথা না বলে তাহলে অপরিচিত হবো কেমন করে?কথা বলবে,একটু হাসিমজা করবে তবেই না আমি তোমার পরিচিত হতে পারবো।চাইলে এর থেকেও বেশি কিছু হতে পারি।”

” নো থ্যাংকস।আপনার সাথে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছে আপাতত আমার নেই।”

” হায়…..শুনে কষ্ট লাগলো।আরে তোমার হাত খালি কেন?কিছু না নিয়ে খালি হাতে বসে আছো।”

” না তার দরকার নেই।আমি ঠিক আছি।”

” আরে তা বললে হয় নাকি?ওয়েটার এদিকে এসো।”

ওয়েটার একটা ট্রে নিয়ে টেবিলটার কাছে এসে দাঁড়ায়।

” এই নাও ড্রিংক।”

” আমি এসব খাইনা।”

” ও নো প্রবলেম।এই নাও তোমার জন্য জুস,একদম ফ্রেশ।খেয়ে দেখো,তোমাকে রিফ্রেশ করে দেবে।একদম অন্য দুনিয়ায় নিয়ে যাবে।”

কায়াসা জুসের গ্লাসটা টেনে নিলেও সেটা খায়না।সে নিচে দিয়ে বারবার ইতিকে ফোন করে যাচ্ছে কিন্তু ইতি ফোন ধরছেনা।

” আরে কি হলো খাচ্ছোনা কেন?খাও খাও।”

ইচ্ছে না থাকার স্বত্তেও কায়াসা জুসটা খায় তবে পুরোটা অর্ধেক থেকেও কম খায়।

” ওকে শালিকা তাহলে তুমি বসো আমি তোমার বান্ধবীর সাথে একটু দেখা করে আসি।আমাকে মনে পড়লে ডেকো কিন্তু।বাই…..”

রাতুল চলে যেতেই কায়াসা হাফ ছেড়ে বাঁচে।রাতুল যেতেই কায়াসা আবারো ইতিকে ফোন দেয়।

” ইতু তুই আসছিস?”

” আরে বাবা তোকে কতবার বলবো যে আমি আসছি।”

” তো সেই কখন থেকে বলছিস ‘আমি আসছি,আমি আসছি’ কিন্তু এখনো তো এসে পৌঁছালিনা।”

” কায়ু তুই তো জানিসই আমার বাসা থেকে রেস্টুরেন্টটা কত দূরে আর তার উপর গাড়িটাও মাঝরাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।আমার আর বেশিনা ১৫ মিনিট সময় লাগবে।তুই আরেকটু ওয়েট কর আমি আসছি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

ফোন কেটে দিয়ে কায়াসা ফোনে ভিডিও দেখতে থাকে।ভিডিও দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই কায়াসা অস্বস্তি লাগতে শুরু করে।সে টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটা উঠিয়ে পুরো পানিটা খেয়ে ফেলে কিন্তু তাতেও তার অস্বস্তিভাবটা যায় না বরং এখন আরো তার বেশি অস্বস্তি লাগছে।কায়াসা উঠে আরোহীর দিকে যেতে থাকে।ভীড় ঠেলে সে আরোহী টেনে বাইরে নিয়ে আসে।

” কি হয়েছে কায়ু?”

” ওয়াশরুমটা কোথায়?”

” কেন?তুই যাবি?”

” হুম।”

আরোহী কায়াসাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।ওয়াশরুমে গিয়ে কায়াসা বেসিনে বমি করতে থাকে।হঠাৎ করে কায়াসাকে বমি করতে দেখে আরোহী ঘাবড়ে যায়।সে কায়াসার পেছনে দাঁড়িয়ে তার পিঠে মালিশ করতে থাকে।বমি বন্ধ হলে কায়াসা চোখে মুখে পানি দেয়।

” কায়ু তুই ঠিক আছিস?”

” জানিনা আরু।আমার খুব অস্বস্তি লাগছে।চোখটাও হঠাৎ করে জ্বালা করছে।আমি বরং বাসায় যাই এখন।”

” তোর অবস্থা আমার মোটেও ভালো লাগছেনা।এই অবস্থায় তুই একা কি করে বাসায় যাবি।কাউতো নেই যে তোকে তার সাথে পাঠাবো।তুই বরং ইতি আসা পর্যন্ত এখানে একটা রুমে রেস্ট নে।ইতি আসলে না হয় ওর সাথে যাস।”

” না আমি ঠিক আছি।”

” হ্যাঁ দেখতে পাচ্ছি কতটা ঠিক আছিস।ঠিক মতো দাঁড়াতে পারছিস না।এই তুই কি ড্রিংক করেছিস নাকি?”

” আরে না,জাস্ট একটু জুস খেয়েছিলাম।”

” হয়তো খালি পেটে জুস খাওয়া জন্য বমি হয়েছে।আচ্ছা চল একটু রেস্ট নে,তাহলে হয়তো ভালো বোধ করবি।”

কায়াসাকে ধরে আরোহী পরে থাকা একটা রুমে নিয়ে যায়।কায়াসাকে বিছানায় শুইয়ে তার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আরোহী চলে যায়।

নিচে সবাই যে যার মতো আনন্দ করতে ব্যস্ত।বিছানায় ঘুমিয়ে আছে কায়াসা।আরোহী যাওয়ার কিছুক্ষন পরেই রাতুল কায়াসা যে রুমে শুয়ে আছে সে রুমে আসে।কায়াসাকে দেখে রাতুলের মনে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়।রাতুলের উদ্দ্যেশ আগে থেকেই খারাপ ছিল।সে জেনে বুঝে কায়াসাকে জুসটা খেতে দিয়েছে।জুসের মধ্যে সে প্রচুর পরিমাণের নেশারদ্রব্য মিশিয়েছিল,যা অল্প একটু খেলেও মানুষের নেশা হয়ে যায়।

রাতুল আস্তে আস্তে কায়াসার কাছে এসে বসে।সে নেশাগ্রস্ত দৃষ্টিতে কায়াসার দিকে তাকিয়ে আছে।

” জানো যেদিন প্রথম তোমার ছবি আরোহীর ফোনে দেখে ছিলাম তখনিই আমার তোমাকে কাছে পাওয়া ইচ্ছে জেগেছিল।আমার সবসময় তোমার কথা মনে পড়তো।আসলে সত্যি বলতে তোমার কথা না বরং তোমার এই সুন্দর দেহটার কথা মনে পড়তো।তাইতো আরোহীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে তোমাকে এখানে ডেকে আনলাম।কত বোকা মেয়েটা।হাহাহা…..আজ অবশেষে তোমাকে পেলাম।এখন তোমাকে আমার থেকে কে বাঁচাবে জান।আজ নিশ্চিত তুমি তোমার সতীত্ব হারানো।তবে তুমি আগেই তোমার সতীত্ব হারালেও আমার তাতে কিছু যায় আসেনা।আমার তো শুধু তুমি হলেই চলবে।”

রাতুল আস্তে আস্তে কায়াসার শরীর থেকে চাদরটা সরাতে থাকে।তবে এরমধ্যে কায়াসার ঘুম ভেঙে যায় তবে পুরোটা নয়।কায়াসার পুরোপুরি হুশে না থাকলেও সে এতটুকু অনুভব করতে পারছে যে তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে।সে তার দুর্বল হাতে চাদরটা আকড়ে ধরে।কিন্তু এতো কম শক্তি নিয়ে কি আর কায়াসা রাতুলের সাথে পেরে উঠবে।রাতুল টান দিয়ে কায়াসার গায়ে থেকে চাদরটা সরিয়ে ফেলে।

” প্লিজ আমার সাথে বাজে কিছু করবেন না।আমি আপনার পায়ে পড়ি।” বিরবির করে বলে কায়াসা কিন্তু কায়াসার কোন কথায় রাতুলের কানে ঢুকেনা।রাতুল আস্তে আস্তে কায়াসার জামায় হাত দিতে থাকে।আচমকা কেউ দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।রাতুল পেছনে ফিরে দেখে একটা মাস্ক পড়া লোক দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

” এই কে আপনি?এভাবে হুট করে কারো রুমে ঢুকতে নেই জানেন না?”

” ও হো।তুই আমাকে মেনার’স শেখাচ্ছিস।বাহ্…. সে নিজে কোন কিছু মানেনা সে আমাকে মেনার’স শেখাতে এসেছে।”

” এইযে কে আপনি বলুন তো? আর এভাবে তুই তুই করে কথা বলছেন কেন?”

” আমি?আমি হচ্ছে তোর যম।তোর সাহস দেখে আমি বড়ই অবাক।যেখানে কেউ আমার কায়ুপাখির সাথে বাজে ব্যবহার করলেও আমাকে তাকে জীবিত ছাড়িনা সেখানে তুই তো আমার কায়ুপাখির সতীত্ব নষ্ট করার চেষ্টা করেছিস।তোর এতো সাহসী কাজের জন্য তোকে পুরষ্কৃত করা দরকার।আর তোর পুরষ্কার হচ্ছে মৃত্যু।”

” এই তুই কি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে আছিস নাকি?নাকি মেয়ে দেখে মাথা ঘুড়ে গিয়েছে?ভাগ লাগবে?লাগলে বল।আমার পরে তোকেও সুযোগ করে দেবো কিন্তু হ্যাঁ এর জন্য দামও দিতে হবে।আমি আর ফ্রীতে কিছু দিয়না।”

” খুব বেশি বলে ফেলেছিস।”

এশান পাশে থাকা ফুলদানিটা নিয়ে রাতুলে মাথায় জোরে বারি দেয়।এতে করে রাতুলের মাথা ফেটে রক্ত পড়তে থাকে আর একসময় রাতুল বেহুশ হয়ে যায়।এশান একবার মাটিতে পড়ে থাকা রাতুলের দিকে তাকাই তার কায়াসার দিকে তাকাই।কায়াসা এখনো বিরবির করে যাচ্ছে,এটা দেখে এশান একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here