#সুঁই_সুতোর_আসক্তি
#পর্বঃ২৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
ট্যাক্সি ড্রাইভারকে ভাড়া দিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পড়ে কায়াসা।সে এখন তার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।এটা কায়াসার নিজের বাড়ি।চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে কাল মধ্যরাতের বাসেই উঠে পড়েছিল কায়াসা।বাসায় আসতে আসতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়।এতক্ষণ চিন্তিত থাকলেও বাড়ির বাইরের পরিবেশ দেখে কায়াসার ভ্রু-কুচকে উঠে।কারণ বাড়ির বাইরে দেয়ালের এক অংশ ছোট ছোট লাইট দিয়ে সাজানো।তবে কায়াসা এতে এতো মনোভাব না দিয়ে তাড়াতাড়ি লাগেজ নিয়ে ভেতরে আসতে থাকে।আসলে কাল সন্ধ্যার দিকে তার ফুফু তাকে ফোন করে বলেছে তার বাবা নাকি খুব অসুস্থ, সে যেন তাড়াতাড়ি চট্টগ্রাম চলে আসে।এটা শুনে কায়াসা রাতেই বাসে উঠে পড়ে।
বেল দিলে একটা মেয়ে এসে দরজা খুলে দেয়।কায়াসা মেয়েটাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়ে।
” আরে আরে কে কেডা?আর ভিতরে যাচ্ছেন কিল্লাই ?” কায়াসার পেছন পেছন আসতে আসতে মেয়েটা বলে।কিন্তু কায়াসা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তার ফুফু কে ডাকতে থাকে।
” ফুফুমণি…..ফুফুমণি…..”
” আরে নিশু মা তুই এসে পড়েছিস।কত দিন পর তোকে দেখলাম।আসতে কোন অসুবিধা হয়নি তো?”
” এসব ছাড়ো ফুফু।আগে এটা বলো আব্বু কোথায়?কি হয়েছে আব্বুর?”
” আরে তুই শান্ত হ আগে।”
” তুমি আগে বলো আব্বু কোথায়?”
” ভাইজানতো ছাদে।”
কায়াসা আর কোন কথা না বলে লাগেজটা নিচে ফেলে দৌড়ে ছাদের দিকে চলে যায়।
” কিরে মিতা এভাবে কি দেখছিস?যা ব্যাগটা রেখে আয়।”
” কোথায় রাখমু ফুফু আম্মা?আর এই মাইয়াটাই বা কেডা?”
” আরে এটা নিশু।তোর সাহেবের মেয়ে।”
” ও আচ্ছা এটাই তাহলে আপা।আসলে কোনদিন দেখিনাইতো তাই চিনতে পারিনাই।”
” আচ্ছা এবার যা ব্যাগটা তুলে রেখে আয়।আর তাড়াতাড়ি আসবি,অনেক কাজ বাকি।”
কায়াসা ছাদে এসে দেখে কয়েকটা লোক দেয়ালে লাইট লাগাচ্ছে আর তার বাবা তাদের কাজের তদারকি করছে।
” আব্বু।” হাঁপাতে হাঁপাতে বলে কায়াসা।মেয়েকে দেখে আকাশ মির্জা খুবই খুশি হয়।
” মা তুই এসে পড়েছিস?”
কায়াসা দৌড়ে গিয়ে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে।
” আব্বু তুমি ঠিক আছে?কি হয়েছে তোমার?কোথায় কষ্ট হচ্ছে তোমার?”
” আরে মা শান্ত হয় আমি ঠিক আছি।আমার তো কিছু হয়নি।”
” তাহলে ফুফুমণি যে বললো।”
” আগে তুই ফ্রেশ হয়ে নে,তারপর আমি তোকে সব বলছি।”
” কিন্তু…… ”
” কিন্তু পরে শুনবো,আগে যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
কায়াসা নিজের রুমে এসে লাগেজ থেকে একটা জামা বের করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে তার বাবার রুমে চলে আসে।
” আব্বু আসবো?”
” আরে এতো তাড়াতাড়ি এসেও পড়েছিস।আয় আয়।”
” আব্বু এসব কি?বাড়িতে লাইটিং করা হচ্ছে কেন?আর তোমার কিছু না হলে ফুফুমণি আমাকে আসতে বললো কেন?”
” এদিকে আয়,আমার পাশে বস।”
” বলো এবার।”
” আচ্ছা তোর কি কোন পছন্দ আছে?মানে বলতে চাইছি তোর কি কারো সাথে কোন সম্পর্ক আছে?”
” নাতো।”
” আলহামদুলিল্লাহ,এটাতো খুবই ভালো কথা।আমি তোর কাছে এইটাই আশা করেছিলাম।”
” কিন্তু আব্বু কি হয়েছে তা তো বলবে?হঠাৎ এরকম প্রশ্ন?আর আমার সাথে কারো সম্পর্ক নেই এটা শুনে আলহামদুলিল্লাহ বলার কি আছে?”
” সেটা তুই বুঝবিনা।শোন মা তোকে এখানে আনানোর আসল কারণটা বলি।আজ তোর বিয়ে।আমি জানতাম তোকে এমনিতে বললে তুই কখনো আসতিনা,তাই তোকে মিথ্যা কথা বলে আনালাম।”
” আব্বু তুমি এসব কি বলছো?আমার পড়াশোনা এখনো বাকি।আমি মাত্রই মেডিকেলে পড়া শুরু করলাম।আমিই এখনই বিয়ে করতে চাইনা।তুমি তো জানো আমি এই পর্যন্ত পৌঁছাতে কত কষ্ট করেছি।”
” আমি জানি মা কিন্তু আমি যা করছি সব তোর ভালোর জন্যই করছি।আমি তোর আব্বু।আমি কি তোর খারাপ চাইবো বল?”
” আব্বু তুমি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করো।”
” ভাইজান তুমি যাও আমি ওকে বোঝাচ্ছি।” কায়াসার ফুফু বলে।
” দেখ বোঝাতে পারিস কিনা।”
” ফুফুমণি এসব কি?তোমরা আমাকে এভাবে মিথ্যা কথা বলতে পারলে?”
” নিশু মা শান্ত হয়।আমরা কেউই তোকে মিথ্যা কথক বলতে চাইনি কিন্তু কি করবো বল মিথ্যা না বললে যে তুই আসতিনা।মা তুই রাজি হয়ে যায় বিয়েতে,এতেই সবার মঙ্গল।না হলে যে ভাইজানের অনেক সমস্যা হবে আর তোরও বাঁচা মুশকিল হয়ে যাবে।”
” মানে?”
” মানে যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে তার আব্বুর কাছ থেকে ভাইজান ৫০ লক্ষ টাকা ধরার নিয়েছে কিন্তু এখনো তা ফেরত দেয়নি আর না দিতে পারবো।এটার জন্য ওরা ভাইজানকে অনেক দিন ধরে ব্ল্যাক মেইল করতেছিল।আর ওরা যখন জানতে পারে ভাইজানের একটা মেয়েও আছে তখন ওরা বলে যেন তোর সাথে ওদের ছেলের বিয়ে দেয়।নয়তো তোর সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে আর ভাইজানকেও শান্তিতে বাঁচতে দেবেনা।তুই চিন্তা করবি বলেই তোকে এসব আমরা জানাইনি।তাই বলছি বিয়েতে রাজি হয়ে যায় এতেই সবার মঙ্গল।”
কায়াসা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,” ঠিক আছে।”
রুমে এসে কায়াসা তাড়াতাড়ি ইতিকে ফোন করে।
” হ্যালো ইতু কোথায় তুই?”
” এইতো কলেজে থেকে বের হচ্ছি।কেন?আর তুই আজ এলিনা কেন?”
” শোন ইতু আমি খুব বড় একটা বিপদে পড়ে গিয়েছি।”
” কি হয়েছে?আর তুই এখন কোথায়?”
” আমি এখন চট্টগ্রামে আছি।আব্বু আর ফুফুমণি মিলে মিথ্যা কথা বলে আমাকে এখানে নিয়ে এসে।আর এখানে এসে জানতে পারি ওনারা আমার সাথে একজন অপরিচিত কারো বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।আর সন্ধ্যাই নাকি বিয়ে।”
” কি বলছিস তুই এসব?আর আঙ্কেলই বা হঠাৎ এরকম কিছু করলো কেন?”
” ফুফুমণি বলেছে যে আব্বু নাকি ওনাদের থেকে অনেকে গুলো টাকা ধার নিয়ে।এখন সেটা ফেরত দিতে পারছে আর তার বদলে ওনারা আমাকে চাইছে।না হলে আমাদের মেরে ফেলবে বলছে।আমার সাথে খারাপ কিছু হবে এই ভয়ে তারা বিয়েতে রাজি হয়ে গিয়েছে।”
” হুম সমস্যা তো খুবই জটিল।এখন তো তোর বিয়ে করা ছাড়া কোন পথই খোলা নেই।আর ওয়েট তোর সুতো কি জানে যে তোর আজ বিয়ে?”
” জানিনা।তবে সেটা এখন ভাবার বিষয় নয়।ভাবার বিষয় এটা আমি কি করে আবার ঢাকায় ফিরতে পারবো।”
” তোর তো কোন পছন্দ নেই তাহলে বিয়েতে অমত কিসের?”
” কারণ আমি ওদের কাউকে চিনিনা,আমার কাছে পরিবেশটা পুরোই অজানা।যদি ওনারা খারাপ কেউ হয় তখন।জানাশোনা থাকলে তাও ভেবে দেখতাম কিন্তু অপরিচিত কারো সাথে হুট করে বিয়ে করা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।দেখা যাবে বিয়ের পর আবার অন্যকোন নাটক করছে।”
” আচ্ছা তুই একটু শান্ত হয় আর ভাব কি করা যায়।আমি এখন থেকে কিছু করার চেষ্টা করছি।”
সন্ধ্যা হয়ে যায়।কায়াসা ভেবেছিল হয়তো ঘরোয়া ভাব ছোট খাটো করে বিয়েটা হবে কিন্তু না সন্ধ্যা হতেই অনেক মানুষ চলে এসেছে।কায়াসা এখন ভাবছে এতো মানুষের মাঝে সে পালাবে কি করে।আর এখন পালিয়ে গেলে তার বাবার মান সম্মান তো যাবেই সাথে তাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
কায়াসার ফুফুমণি আর কয়েকটা পার্লারের মেয়ে এসে কায়াসা তৈরি করিয়ে দিয়ে যায়।
” ফুফুমণি এতো মানুষ কেন?তোমরা কি সব আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলে নাকি?”
” আরে না না ২/৩ দিন আগেই তো সব হলো।আর এতো মানুষ কারণ তারা চাই বড় করে বিয়ের অনুষ্ঠান হোক।এসব আয়োজন,মানুষ সব তারাই করেছে।তোর আব্বু তো চেয়েছিল ছোট আয়োজনে সব শেষ করতে কিন্তু ওনারাই দমক দিয়ে বলে ভাইজানকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।”
এরই মধ্যে নিচে থেকে শোরগোল শোনা গেলো।
” মনে হয় ওনারা চলে এসেছেন।তুই থাক,আমি কিছুক্ষণ পর এসে তোকে নিয়ে যাবো।”
ফুফুমণি বেরিয়ে গেলেই কায়াসা ফোনটা নিয়ে ইতিকে ফোন দেয়।
” ইতু,ওরা তো চলে এসেছে এবার কি হবে?”
” কায়ু তুই চিন্তা করিস না।আমি কয়েকঘন্টার মধ্যেই তোদের বাসায় পৌঁছে যাবো।এরমধ্যে তুই কিছু একটা করে বিয়েটা আটকা।”
কায়াসা ফোন কেটে দিয়ে চিন্তা করতে থাকে যে কি করা হয়।বিছানায় বসে চিন্তা করছিল কায়াসা হঠাৎ করেই সে মাথা ঘুরে বিছানায় পড়ে যায়।
চলবে………