#গ্যাংস্টার_লাভ (সিজন 2)
#নুসরাত_জাহান_অংকুর
||পার্ট_২||
দরজা খুলে লোক দুটো আসতেই রিহা আরো ছটফট করতে থাকে।
_”পাপা তুমি আসছো? দেখো না এই লোকটা কখন থেকে আমাকে বেধে রাখছে।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে!
আকুতি মিশ্রিত কণ্ঠে রিহা ওর আব্বুর দিকে তাকায়।আফজাল সাহেব রিহার পাশে বসে হাতের বাঁধন খুলতে খুলতে বলে
_”আমি তোকে এখন যে কথা গুলো বলবো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবি !
আফজাল সাহেব কে বলতে না দিয়ে রিহা বলে
_”আব্বু পরে শুনবো আগে আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো প্লীজ! এই লোকগুলো কি সব বলছে
আফজাল সাহেব রিহার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে ।রেহান পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বাইরে চলে যায় ।
রেহান যেতেই রিহা ওর আব্বু কে বলে
_”আব্বু তুমি এখানে কি করে আসলে ? আর ওই লোকটা আমাকে তুলে আনছে তাও তুমি এত শান্ত কি করে ?
আফজাল সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো
_”দেখ মা আজ আমি তোকে যে কথাগুলো বলবো সেগুলো তোর অনেক আগেই জানার দরকার ছিল কিন্তু আমি ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে যাই হোক এখন যা বলবো শুনবি রেহান
আফজাল সাহেব বাকিটা বলার আগেই ফোন বেজে উঠে ।কিছুটা বিরক্ত নিয়ে ফোনটা ধরে কথা বলে রিহার দিকে তাকিয়ে বলে
_”আমি তোর কাছে যা চাইবো তুই দিবি তো ?আমি তোর কাছে কখনো কিছু চাইছি প্লীজ মা না করিস না
নিজের আব্বুর এমন আকুতি মিনতি কথা শুনে রিহা বলে
_”আব্বু তুমি এইভাবে বলছো কেনো ?তুমি আমার আব্বু আর আব্বুরা আদেশ করতে জানে এভাবে বলে আমাকে ছোট করো না প্লীজ
আফজাল সাহেব কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে
_”তুই রেহান কে বিয়ে করে নে ওর সাথে তোর বিয়ে অনেক আগে থেকে ঠিক ছিল ।মাঝখানে আমি এইসব ভুলে গিয়েছিলাম কিন্তু এখন রেহান যখন আছে তাহলে তুই ওকেই বিয়ে কর
একদমে কথাগুলো বলে জোড়ে জোরে নিশ্বাস ছাড়ল আফজাল সাহেব।মনে হচ্ছে কথাগুলো মনের ভিতর দলা পাকিয়ে ছিল।নিজেকে স্বাভাবিক করে রিহার দিকে দৃষ্টি দেয়।রিহার হাবভাব একদম স্বাভাবিক কিছুই বুঝা যাচ্ছে না । ঝড় আশার আগে যেমন সব নিঃস্তব্ধ থাকে রিহার আচরণ ও তেমন লাগছে ।
রিহা হটাৎ জোড়ে জোড়ে হেসে দেয় ।আফজাল সাহেব রিহার হাসির কারণ খুজে না পেয়ে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ।রিহা হেসেই যাচ্ছে।কিছুক্ষণ পর নিজের হাসি থামিয়ে বলে
_”পাপা ওই লোকটা তোমাকে ভয় দেখিয়েছে তাই না ? আমি তো জানি কিন্তু তোমার ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই আমি তো আছি ।
আমজাদ সাহেব ডান হাতের উলটো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছে বলে
_”না রিহা আমি কারোর ভয়তে বলছি না ।রেহান আর তোর বিয়ে ছোট থাকতে ঠিক করা
রিহা এবার উঠে দাড়িয়ে বলে
_”আমার জীবন কে তুমি কি পেয়েছো ? একবার বলবে এই ছেলের সাথে তোর বিয়ে ঠিক আরেক বার বলবে এই ছেলের সাথে ।আমি কি খেলার পুতুল আমার মন বলতে কিছু নেই
আফজাল সাহেব রিহা কে বলতে না দিয়ে বলে
_”দেখ আমি ভুল করেছি আমি জানতাম না যে রেহান সেই ছেলে যার সাথে তোর বিয়ে ঠিক নাহলে কি আমি তোর মন নিয়ে খেলতে পারি।তোর মায়ের শেষ ইচ্ছা ছিল রেহানের সাথে তোর বিয়ে।আমার জন্য না হলেও তোর মায়ের জন্য বিয়েটা করে নে
রিহা ওর বাবার হাত ধরে বলে
_”পাপা প্লীজ আমি ওই লোকটাকে বিয়ে করবো না তুমি তো জানো আমি আফ
বাকিটা বলার আগেই রেহান চলে আসে ।
_”সব ঠিক আছে ?
রিহা ওর পাপার দিকে করুন চোখে তাকায় রিহার বাবা চোখ দিয়ে আশ্বাস দিচ্ছে।রিহার কাছে ওর আব্বু ছাড়া কেউ নেই ওর দুনিয়া বলতে ওর আব্বু।রিহার জন্মের সময় ওর আম্মু মারা যায় ।ওর দুনিয়া বলতে ওর বাবা।সেই বাবা ওর জীবন নিয়ে এমন করবে সেটা ভাবতে কষ্ট হচ্ছে ।
রিহা হটাৎ কি মনে করে চেচিয়ে বলে
_”এই লোকটা গ্যাংস্টার আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না ।বিয়ে কোনো ছেলে খেলা না যে যখন যার সাথে খুশি খেলে নেবো।যাকে আমি চিনি না তার সাথে কি করে সারাজীবন থাকবো
রেহান,আফজাল সাহেব রিহার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে রিহা একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
_”ফিল্মে তো এই ডায়লগ দেয় তাই না
রেহান দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল চুলকে বলে
_” হাম দিল দে চুকে সানাম মুভিতে হটাৎ করে বিয়ে হয় যায় কিন্তু আস্তে আস্তে ভালোবাসা হয়।এমন অনেক জায়গায় আছে বিয়ের পর ভালোবাসা হয়
রিহা একটু লাফিয়ে বলে
_”তাহলে কি আপনিও আমাকে আমার ভালোবাসা
বাকিটা রেহান বলতে না দিয়ে রিহার আব্বুর দিকে তাকিয়ে বলে
_”আমি ওতো দয়ালু না যে নিজের বউ কে অন্যের হাতে তুলে দেবো।এই দুনিয়ার অধিকার কেউ দেয় না নিজের অধিকার নিজেকে আদায় করতে হয় তাই না শশুর জি
আফজাল সাহেব রিহার দিকে তাকিয়ে বলে
_”রিহা অনেক হইছে এখন বিয়েটা করে নাও।আমি কোনো কথা শুনবো না
_”কিন্তু আব্বু উনি তো বললেন হাম দিল দে চুকে সানাম মুভির কথা সেখানে তো নায়ক ফিরিয়ে দেয় তাহলে উনি কেনো দেবেন না ?
আফজাল সাহেব কিছুটা ধমক দিয়ে বলে
_”রিহা অনেক হইছে! এবার তোমার পাগলামি বন্ধ করো
_”এই লোকটার জন্য আব্বু আমাকে বকছে একে তো আমি ঠান্ডা পানিতে চুবিয়ে মারবো ।হ্ন আমাকে বিয়ের করার ওর বের করবো wait and ওয়াচ
আফজাল সাহেব আরো অনেক কথা বুঝায় কিন্তু রিহার মাথায় শুধু একটা কথা ঘুরছে রেহান কে বিয়ে করার সখ মিটিয়ে দেবে।
শেষে বিয়েটা হয়ে যায়। অন্য সব বিয়ের মত রিহার বিয়ে হয় ঢাকার একটা রিসোর্টে বিয়ে হয় ।সব কিছু এত সুন্দর করে সাজানো ছিল রিহা তো sure আগে থেকে প্ল্যান করে সব করছে ।আফজাল সাহেব রিহা কে রেহানের বাসায় পৌছে দিয়ে চলে যায়।বাসার ভেতরে যেতেই রিহার মনে পড়ে ও কি করেছে ।রাগের মাথায় বিয়েটা করলেও এখন আপসোস হচ্ছে ।
বর্তমানে বারান্দায় দাড়িয়ে নখ কামড়াচ্ছে।
_”এই জন্য মানুষ বলে রাগের মাথায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে নেই যে পরে নিজেকে আপসোস করতে হয় । ও আল্লাহ তখন কি আমার বুদ্ধি রিক্সা চালাচ্ছিল উফফ কি করলাম
রিহা নিজের মনে বিড়বিড় করছে তখনই রেহানের হুংকার আসে।রিহার মাথায় আরো গরম হয়ে যায়
রিহা ভিতরে গিয়ে দেখে রেহান বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছে ।রিহা কে দেখে আবার বলে
_”কি হলো ?এখনো চান্স করো নি কেনো ? ভুলে গিয়েছ আজ আমাদের বাসর রাত ? কি করে বা মনে থাকবে সারাদিন তো মাথায় বদ বুদ্ধি ঘুরে বেড়ায় ।ইবলিশের পর মনে হয় তোমাকে পাঠিয়েছে
রিহা তো রাগে ফুসছে।কিছু একটা ভেবে বলে
_”হুম বুঝলাম!এটা যেনো কি মাস?
রেহান ফোনের থেকে চোখ সরিয়ে চোখটা সরু করে বলে
_”কেনো তুমি জানো না ? সেটা জানবে কি করে ?পারো তো শুধু আজাইরা কাজ করতে
রিহার এখন সহ্যের ক্ষমতা চলে গেছে নিজের লেহেঙ্গা জোড়ে ধরে বলে
_”আমি তো খারাপ তাহলে ভালো মেয়ে বিয়ে করতে পারেন নি ? আসলে কি বলুন ত নিজের লোকদের তো সবাই চিনতে পারে।আপনি তো আজরাইল সেইজন্যে আমাকে চিনতে পারছেন আমি ইবলিশ।আপনাকে তো wait
রিহা লেহেঙ্গা উচু করে ঘরের বাইরে যায়।রেহান উঠে বসে
_”এই মেয়ে কি বললো আমি আজরাইল? একে তো দেখাচ্ছি কিন্তু গেলো কই ? ও আম্মু কার পাল্লায় পড়লাম আমায় কেউ বাঁচাও।
রেহান দরজার কাছে আসতেই হটাৎ ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেলো।রেহান স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে সামনে রিহা খিলখিল করে হাসছে
_”কি মিস্টার কেমন লাগে ? আমি নাকি ইবলিশ আমার মাথায় বদ বুদ্ধি ঘুরে?!এবার থেকে এই রিহা কি করে
কথাটা বলে আবার ছুড়ে মারে।রেহানের বুঝতে কিছুটা সময় লাগে।এক শীতকালে ঠান্ডা পানি গায়ে পড়ায় রেহানের কাপুনি দিচ্ছে।রিহার দিকে কটমট করে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রিহা বলে
_”আপনার মত মানুষের জন্য এক জগ কম পড়বে আরেক জগ নিয়ে আসবো নাকি ?
রেহান রিহাকে কে এক টান দিয়ে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে
_”আমি কেনো একটা ঠান্ডা পানি সহ্য করবো ?তুমি তো আমার অর্ধাঙ্গিনী।আমার সব কিছুর উপর তোমার অর্ধেক অধিকার তাহলে তুমি একটু সহ্য করে
রিহা কিছু বলার আগেই রেহান রিহাকে কাধে করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায় ।রিহা নিজের সব শক্তি দিয়ে লাফালাফি শুরু করে কিন্তু রেহান ছাড়ার পাত্র না।রিহা ওয়াশরুমের দরজা টেনে ধরছে রেহান শাওয়ার অন করেই রিহাকে জোর করে দাড় করিয়ে দেয়।একে তো শীতকাল তার উপর সন্ধ্যা হবে প্রায়।রিহার সারা শরীর ভিজে একাকার।ভারী লেহেঙ্গা ভিজে শীত দ্বিগুণ বেড়ে গেছে এদিকে রেহানের ছাড়ার কোনো নাম নেই।
_”দেখুন আমার ঠান্ডা লাগলে জ্বর আসবে কিন্তু তাই প্লীজ ছেড়ে দিন (কাপতে কাপতে)
রেহান নিজেও ভিজে গিয়েছে।রিহা কে তো পানিতে দাড় করিয়েছে কিন্তু রিহা যে রেহান কে বরফের পানি দিয়েছে ।
রিহা রুম থেকে বেরিয়ে সারাবাড়ি খুঁজে রান্না ঘর খুঁজে পায় ।সেখানে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে সাথে কিছু বরফ নেয়।
রিহা আর সহ্য করতে না পেরে রেহানের পায়ে লাথি মেরে বের হয় ।রিহার হটাৎ লাথি মারায় রেহান কিছুটা ঝুঁকে পড়ে সেই সুযোগে রিহা বের হয়ে দরজা আটকিয়ে দেয়।
_”উফফ আল্লাহ কি ঠান্ডা।এই লোক কে তো আমি! ইচ্ছা করছে সারারাত এখানে রাখতে কিন্তু আমার মন মেলা বড়ো।আপাতত ড্রেস চেঞ্জ করে নি।
রিহার হটাৎ খেয়াল হয় ওর তো পড়ার কিছু নেই। ক্যাবার্ড খুলতেই রেহানের ড্রেস চোখে পড়ে সব শার্ট,আর প্যান্ট।রিহা পাশেটা খুলতেই মেয়েদের ড্রেস দেখতে পায় ।
_”আগে তো গ্যাংস্টার মনে করতাম কিন্তু এখন তো চরিত্রের দোষ মনে হচ্ছে।কোন মেয়ের সাথে থাকতো কে জানে।আল্লাহ এ কার পাল্লায় পরলাম।হাদীসে নাকি লেখা আছে তুমি যেমন তোমার জীবন সঙ্গী ও তেমন হবে তাহলে আমার বেলায় অন্য রকম হলো কেনো ?
রিহা ড্রেস নিজে নিজের মাথায় বারি দিচ্ছে।শীতের জন্য দাড়াতে পারছে না তাড়াতাড়ি ড্রেস পড়তে গেলে একটা জিনিস দেখে অবাক হয়ে যায়।
এদিকে রেহান দরজা পিটিয়ে যাচ্ছে এমন ভাবে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে মনে হচ্ছে এক্ষুনি ভেঙ্গে ফেলবে ।রিহা দরজা খুলতেই রেহান ধমক দিতে গেলেই সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ।রেহানের তাকানো রিহার কাছে অসস্তি লাগছে।
রিহা না দাড়িয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে পড়ে সাথে হাচি তো আছেই ।রিহার হাচিতে রেহানের সব ফিলিং চান্দে।
চলবে
(