#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_০৬
রিশান ভাইয়া আমার অনেক কাছে চলে এলেন। আমার একদম নিকটে তিনি। কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না আমি।
তা কি বলেছিলি তুই যেন? আমি কি যেন?
কই? আমি তো কিছুই বলি নি।
বলিস নি? তাহলে আমাকে এতো সুন্দর নামগুলো দিয়ে কে ডাকছিলো?
মানে ভাইয়া মানে
হুম বল মানে?
আসলে আমি,
কি তুই? আচ্ছা যা বলা লাগবে না আর আগে যা বলেছিস তার জন্য তো কিছু একটা তোকে দিতে হয় তাই না?
কি দিবে? কি বলছো তুমি?
কি দেওয়া যায় বল তো তুই? কি দিতে পারি তোকে?
কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। এতটুকু বুঝতে পেরেছি এখন আমার সাথে ভালো কিছু হবে না। ভাইয়া এবার আমার একদম কাছে চলে এলেন। তার গরম নিঃশ্বাস গুলো আমার মুখ আঁচড়ে পড়ছে। তার নিঃশ্বাসের শব্দগুলো আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। কি করবো? ভাইয়া এতোটা কাছে চলে এলেন।
ভাইয়া আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
কি রে কথা বলছিস না। কি করবো এখন তোকে?
হঠাৎ করেই মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। চটজলদি বলে উঠলাম, রিশান ভাইয়া চাচি আসছে।
ভাইয়া তৎক্ষণাৎ আমার থেকে দূরে সরে দাঁড়ালেন। ভাইয়া সরতেই দিলাম এক দৌড়। এক দৌড়ে চলে গেলাম সেখান থেকে।
মেঘা তোর খবর আছে। আমাকে বোকা বানানোর শাস্তি তোকে পেতে হবে।
আমি মুখ ভেংচে বললাম, উঁহু কিছু করতে পারবে না তুমি।
আমি এক দৌড়ে লিসার কাছে চলে গেলাম।
মেঘা আমার হাত থেকে তুই কখনো রক্ষা পাবি না। তুই তো আমার মেঘপরি, আমার রাজ্যের রানী।
আমি দৌড়ে লিসার ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম।দৌড়ে হাঁপিয়ে গেছি।
কি রে? এভাবে দৌড়ে কোথা থেকে এলি? কি হয়েছে? হাঁপাচ্ছিস কেন?
রিশান ভাইয়া!
রিশান ভাইয়া মানে? ভাইয়া এসেছে?
হুম।
কখন?
এই তো আমি নিচে দেখে আসলাম।
ভাইয়া তো সহজে আসে না তা হঠাৎ এলো?
আমি কি জানি?
বুঝি বুঝি সব বুঝি। প্রান পাখি এখানে থাকলে সে কি করে না এসে থাকে?
যাহ, কি বলছিস তুই। হয় তো ভাইয়ার ভালো লাগছে না তাই চলে এসেছে।
হুম আর বলতে হবে না।
——————————–
আজ ভার্সিটিতে আসতে না আসতেই নিরব ভাইয়ার সামনে পরে গেলাম।
মেঘা যে, কেমন আছো?
রিশান ভাইয়া আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। এটা বেশ ভালো করে জানি এখন উত্তর দিলে রিশান ভাইয়া রেগে যাবেন। আর উত্তর না দিলে নিরব ভাইয়া পিছু ছাড়বেন না। আমি পড়লাম মহা মুশকিলে। একবার রিশান ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছি আরেকবার নিরব ভাইয়ার দিকে। ধীরে ধীরে রিশান ভাইয়ার মুখে রাগের আভাস ফুটে উঠছে। নিরব ভাইয়াও বকবক করে চলেছে।
মেঘা কথা বলছো না কেন? কি হয়েছে তোমার? এভাবে চুপ করে আছো কেন।
আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। নিরব ভাইয়া আমার থেকে এক বছরের সিনিয়র। সময় পেলেই আমার পিছে আঠার মতো লেগে থাকে। উঠতে মেঘা বসতে মেঘা। মেঘা মেঘা মেঘা এই দুনিয়ায় কি সবাই আমাকেই পেয়েছে নাকি। একটা জিনিস আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না। রিশান ভাইয়া আমাকে অন্যের সাথে একটুও সহ্য করতে পারেন না। আমার প্রতি বেশিই পজিটিভ তিনি। ইদানিং বিষয়টা আমাকে ভাবাচ্ছে। তবে কি ভাইয়া আমাকে ভালোবাসেন? আমাকে পছন্দ করেন উনি? কি ভাবছি আমি? ভাইয়া আমাকে ভালোবাসলে তো বলেই দিতেন। ভাইয়া তো কোন সময় কোন কথাই লুকান না। তবে কেন এমন হচ্ছে?
নিরব ভাইয়া আমাকে ডাকছে তো ডাকছেই। একের পর এক প্রশ্ন করছে। আর রিশান ভাইয়া দূর থেকে তা পর্যবেক্ষণ করে ফুঁসছে। হঠাৎ দেখতে পেলাম রুহি আসছে। এবার যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। নিরব ভাইয়াকে বললাম,
ভাইয়া আমি যাই আপনার সাথে পড়ে কথা বলবো ক্লাস আছে। বলেই রুহিকে ডাকতে ডাকতে চলে গেলাম।
মেঘপরি! এই তো বুঝে গেছিস আমি কি চাই। আস্তে আস্তে তুই বড় হয়ে যাচ্ছিস। আমি তো তোকে চাই। তোর মাঝে নিজেকে হারাই। তুই শুধু আমার। আমার জিনিসে কারো ভাগ আমি সহ্য করতে পারি না। তুই আমার নেশাময়ী যে নেশায় আমি আসক্ত। তোর আসক্তিতে থাকতে চাই আমি। আমার অস্তিত্বে তুই শুধু তুই।
।
আরে মেঘা কি করছিস? এভাবে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আসার মানে কি?
আমি হাঁপাচ্ছি।
কি রে বল?
ধুর আমার আর ভালো লাগে না। নিরব ভাইয়া কি শুরু করেছে।
কেন কি হয়েছে?
শুধু ডাকাডাকি আর বকবক। আর ভালো লাগে না।
এতে আবার কি হলো?
তুই জানিস না রিশান ভাইয়া কেমন?
রিশান ভাইয়া তো রিশান ভাইয়াই।
মজা নিচ্ছিস? ভাইয়া আমাকে কারো সাথে দেখলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। আমি কি করবো?
কেন? কেন? কেন? কি হয়েছে?
জানি না কি হয়েছে? ভাইয়া আমার প্রতি বেশিই পজিটিভ হয়ে গেছে। তার কথায় উঠাবে তার কথায় বসাবে।
কেন? ভাইয়া তোকে পছন্দ করে নাকি?
কি জানি আমি তো জানি না।
জানিস না মানে? ভাইয়া কিছু বলে নি?
নাহ। ভাইয়া আমাকে ভালোবাসলে তো বলেই দিতো। আমার মনে হয় তেমন কিছুই না।
উমমম তুই কি ভালোবাসিস?
রুহির কথা শুনে মনের মাঝে কেমন যেন অনুভূতি কাজ করছে। অজানা অনুভূতির দুয়ারে হানা দিচ্ছি আমি। কেন জানি কল্পনায় ভেসে উঠছে সে। তার কথাগুলো মনে হতেই আবার বাস্তবে ফিরে আসলাম।
কি রে বলছিস না যে?
নাহ আমি কেন ভালোবাসাতে যাবো। ভাইয়া সারাদিন আমাকে বকে কারণে অকারণে বকে। আমি তাকে ভালোবাসি না। সে একটা পঁচা।
রুহি চুপ করে থাকলো।
ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে চলে আসলাম। রিশান ভাইয়া নিহা আপুসহ তার বন্ধুদের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। এই নিহা আপুর আচরণ আমার একটুও ভালো লাগে না। সবসময় ভাইয়ার সাথে চিপকে থাকে একদম আঠার মতো। মনে হয় যেন জোড়া শালিক। তাকে দেখলেও গা টা জ্বলে যায়। আজকেও তার কোন ব্যতিক্রম দেখতে পেলাম না। নিহা আপুর রিশান ভাইয়ার একদম পাশ ঘেঁষে ভাইয়ার কাঁধে একটা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখতেই আরো ঘেঁষে গেলো সে। এবার আমার খুব রাগ হচ্ছে। নিহা আপুর উপর রাগ হলেও রিশান ভাইয়ার উপর বেশি রাগ হচ্ছে। একটা মেয়ে তার উপর ঘেঁষে পড়ছে আর সে কিছু বলছে না। মেয়েরা গায়ে পড়লে খুব ভালো লাগে তাই না।
আমি বড় বড় পা ফেলে সেখানে চলে গেলাম। যেয়ে ভাইয়ার সামনে দাঁড়ালাম।
ক্লাস শেষ?
আমি বাড়ি যাবো।
এখন?
হুম এখনই। আমি বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো।
আমি কি মানা করেছি নাকি?
তো তুমি যাবে না?
না আমি এখন যাবো না দেরি হবে তুই একাই যা।
তো আমি একাই যাবো?
হুম যা। তোকে মানা করেছে কে?
ভাইয়ার কথায় খুব খারাপ লাগলো। ভাইয়া আমাকে এভাবে বলতে পারলেন। রাগে অভিমানে হাঁটতে শুরু করলাম। কিন্তু রাস্তায় এসে রিক্সা চড়তে নিবো তখন আবারও নিরব ভাইয়ার সাথে দেখা। উফফ যেখানে যাই সেখানেই এই বিরক্তিকর লোকটা চলে আসে। কথা বলতে না চাইলেও বকবক শুরু করে দেয়। এই লোকটা কি বুঝে না তার সাথে আমি কথা বলতে চাই না।
মেঘা কোথায় যাচ্ছো?
এই তো বাড়ি যাচ্ছি ভাইয়া।
এখনই যাবে?
হুম।
কেন? বাড়িতে কি কোন কাজ আছে?
না ভাইয়া ভালো লাগছিলো না তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি।
কেন? শরীর খারাপ? কি হয়েছে?
আরে না ভাইয়া তেমন কিছু না। ভালো লাগছে না।
তাহলে চলো সামনের কফি সপটায় গিয়ে বসি। দেখবে ভালো লাগবে।
না ভাইয়া এখন না।
প্লিজ না করো না। প্লিজ চলো। জাস্ট এক কাপ কফি। দশ মিনিট লাগবে না করো না প্লিজ।
না ভাইয়া এখন না।
প্লিজ মেঘা চলো।
না চাওয়া সত্ত্বেও ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন। কিন্তু সামনে এগোতেই দেখতে পেলাম সেই চির পরিচিত মুখটা। তার মুখশ্রী একদম রাগে লাল হয়ে গেছে। বড় বড় পা ফেলে আমার দিকে এগিয়ে এলেন তিনি। তাকে এগিয়ে আসতে দেখে নিরব ভাইয়া আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন। রিশান ভাইয়া এসেই আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন।
মেঘা বাড়ি চল।
ভাইয়া আমাকে গাড়িতে বসতে বলে কোথায় যেন চলে গেলেন। আমি চুপ করে বসে আছি। কি জানি কি হয়। ভাইয়া কোথায় গেছেন তাও আমি জানি না। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া এসেই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গাড়ি ড্রাইভ করছেন আর আমার দিকে তাকাচ্ছেন। আমি মাথা নিচু করে আছি।
গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছাতেই নেমে পড়লাম। বাড়িতে প্রবেশ করে ভাইয়া নিজের ঘরে চলে গেলেন। আমি তো ভয়ে জড়সড়। কিন্তু ভাইয়া আমাকে কিছু বললেন না? আমি গিয়ে ছোট মাকে জরিয়ে ধরলাম। হু হু করে কেঁদে দিয়ে সব বলে দিলাম। ছোট মা আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন কিন্তু আমি কি আর শান্ত হই?
কিছুক্ষণ পরে রিশান ভাইয়ার ঘর থেকে বিকট শব্দ ভেসে আসতেই উঠে দাঁড়ালাম। কি হয়েছে ভাইয়ার? কি করছেন উনি? এতো জোরে শব্দ কিসের?
চলবে……
(