#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_১১
তবে কি ভাইয়া আমার কথাগুলো শুনছিলেন। আমি বিস্ফোরিত নয়নে চেয়ে আছি তার পানে। সে তা দেখে হাসছে।
আমি কিছু বলতে নিবো এর আগেই শুনতে পেলাম, রিশান!! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?
কারো শব্দ পেতেই ভাইয়া আমার থেকে দূরে সরে দাঁড়ালেন। তিনি নিজেকে সংযত করে নিলেন। সামনে তাকিয়ে দেখলাম তাহিয়া আপু। রিশান ভাইয়ার চাচাতো বোন উনি। রিশান ভাইয়া থেকে বয়সে দুই বছরের বড়। আপু তার হাসবেন্ড আর ছোট মেয়ে তানহার সাথে লন্ডন থাকেন। আপু এভাবে দেখেছেন আমাকে লজ্জায় আমার নাক কাটা যাচ্ছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছু বলতে পারছি না। রিশান ভাইয়া পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন। ভাইয়া বললেন,
আ,,আ,,,আপু তু,,,তুই কখন এলি? বিডি তে আসলি কবে?
তুই তোতলাচ্ছিস কেন? ব্যাপারটা কি? (আপু মিটিমিটি হাসছেন)
আমি তো লজ্জায় লাল নীল বেগুনী হয়ে যাচ্ছি। কি ভাবছে আপু।
আমি তোতলাবো কেন? কি আবার ব্যাপার।
আচ্ছা তাই নাকি। যা তোকেই বিশ্বাস করলাম। তা কি করছিলি।
এই মানে কিছু না এই তো এভাবেই।
কি আর বলা লাগবে না। আমি কচি খুকি না বুঝলি?
বাদ দে তো, কখন এলি? ভাইয়া তানহা চাচা চাচি ওনারা কোথায়?
বলছি বলছি সবাই নিচে আছে। এই তো গতকাল এলাম। এসেই শুনলাম মেঘা নাকি অসুস্থ তাই আজই চলে এলাম। তো মেঘার ট্রিটমেন্ট করছিলি নাকি এখানে?
আপুর কথা শুনে আমি তো লজ্জায় মরে যাচ্ছি। উনি আমাকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই হয় তো এগুলো বলছে।
রিশান ভাইয়া বারবার মাথা চুলকাচ্ছে। আপু মিটিমিটি হাসছে।
তা এটা কি ট্রিটমেন্ট তা জানতে পারি?
আপু আমি আসছি তোরা কথা বল। বলেই রিশান ভাইয়া চলে গেলেন। আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম।
আপু এবার আমার কাছে এগিয়ে এলেন।
নয়া নয়া পিরিতি তাই না ভাবি?
আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। এতটুকু খুব ভালো করে জানি এখন আপুর থেকে আমার রক্ষা নেই। আপু হঠাৎ হেসে দিয়ে বললেন,
থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। শুধু বলো কবে থেকে?
কি আপু?
এই যে কবে থেকে প্রেমালাপ শুরু? হুম বলো বলো
আপু তেমন কিছু না।
তাই নাকি।
হুম।
আপু হেসে দিয়ে বললেন, তা শরীর কেমন আছে?
এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো এখন। তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
হঠাৎ করেই তানহা এসে আমার কোলে বসে পড়লো। তার পিছনে পিছনে রিশান ভাইয়াও এসেছেন। তানহা এসে আমার কোলে বসেই আমার গলা জড়িয়ে ধরলো। ভাইয়া এসে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছেন সাথে তাহিয়া আপুও।
বাব্বাহ আমি এতক্ষন ধরে ঘুরলাম আমার কাছে আসলে না যে? (রিশান)
বা লে আমাল মেঘা আততির কাতে এতেছি।তোমাল কাতে পলে যাবো। বলেই তানহা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। বেচারা রিশান ভাইয়া ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে রইলেন। কি হলো বুঝতে পারলেন না। তাহিয়া আপু বললেন,
এখন আর তোমার আন্টি নেই এখন থেকে তুমি মামণি বলে ডাকবে কেমন?
মামণি বাহ্। বলেই তানহা হাত তালি দিতে থাকলো।
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। রিশান ভাইয়া মুচকি হাসছে। আপু তো আমার অবস্থা দেখে হো হো করে হেসেই দিয়েছেন। রিশান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেন। তা দেখে তো আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। আপুও হাসছেন। আমি চুপ করে বসে থাকলাম।
।
সন্ধ্যা হয়ে গেছে পশ্চিম আকাশের সূর্যটা ঢলে পড়েছে। আকাশের কোণে স্পষ্ট লালিমা দেখা যাচ্ছে। গোধূলি বেলায় এক অন্যরকম আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমি আর তানহা গার্ডেনে বসে আছি। তানহা আমার সাথে একটা দুটো কথা বলছে। ভারী মিষ্টি মেয়ে তানহা। বয়স এখন মাত্র চার কিন্তু চার বছর হলেও বেশ বুদ্ধিমতী সে। কথা বলার আগেই উত্তর তার কাছে রেডি থাকে।
তানহা স্কুলে ভর্তি হয়েছো?
হুম মামণি।
মামণি বলছো যে?
মা তো বললো তাই বলতে। ওর কথা শুনে অবাক।আমি মুচকি হাসলাম। কিন্তু কারো কন্ঠে থমকে গেলাম।
তানহা কি করছো মামণির সাথে?
ফাহাদ ভাইয়া! (তাহিয়া আপুর হাসবেন্ড)
কি বললেন ভাইয়া?
কেন তুই শুনতে পাস নি? কানে কালা হলি কবে? কোথা থেকে হুট করে এসেই রিশান ভাইয়া উক্ত বাণী আমার উদ্দেশ্যে উচ্চারণ করলেন। এরপর আমার সামনে এসে কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে নিজের বুকে হাত গুজে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। এরা আজ হঠাৎ এমন করছে কেন?
ফাহাদ ভাইয়া হেসে বললেন, শালা বাবু এমন করতে নেই। বেশি হার্ড হলে কেঁদেই দিবে। পরে কিন্তু তোমারই লস। কপাল তোমারই পুড়বে।
আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এরা আসলে কি বলতে চাচ্ছে?
তোমরা কি বলছো আমাকে একটু বলবে প্লিজ। আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
এবার রিশান ভাইয়া আমার সন্নিকটে এসে বললেন, তুই কি বড় হস নি মেঘা? বয়স তো কম হলো না এরপরও কথায় কথায় বুঝিস না বুঝিস না করিস কেন? গাঁধি একটা।
আমি কিছু না বলে মুখ ফুলিয়ে তানহাকে কোলে নিয়ে চলে আসলাম। রিশান ভাইয়া মুখটা মলিন করে আমার দিকে চেয়ে আছেন। ফাহাদ ভাইয়া হাসছেন।
শালা বাবু আগেই বলেছিলাম বেশি কঠিন হইয়ো না তাহলে তোমারই লস। দেখলে তো? এখন কথাও বলবে না।
কেন কেন?
আস্তে আস্তে বুঝবে। আমি আবার পাঁচ বছরে সব বুঝে গেছি। তাই একটু এক্সপেরিয়েন্স আছে আরকি।
মেঘপরি! তুই যখন রাগ করিস তোর মুখটা লাল টমেটোর মতো ফুলে যায়। একদম বাচ্চাদের মতো লাগে তোকে। ওহ্ কি বলছি আমি তুই একটা বাচ্চাই। আমার ছোট মেঘপরি। আমার মনে তো তোর নামই লেখা। নিজের অজান্তেই কখন লিখে ফেলেছি কে জানে! (মনে মনে রিশান)
।
রুমে এসে মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। ভাইয়া কি আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে পারে না? আমার সাথে একটু হলেও মিষ্টি করে কথা বলতে পারে না? কি এমন ক্ষতি হয় আমার সাথে সুন্দর করে কথা বলতে? সে কি বুঝে না আমাকে? আস্ত শয়তানের হাড্ডি একটা। কি মনে করে নিজেকে সে। আর কথা বলবো না তার সাথে। জারি ছাড়া তো আমার সাথে কথাই বলতে পারে না। খুব রাগ হচ্ছে তার উপর। বেলকনিতে গিয়ে চারপাশটা দেখতে লাগলাম। যখনই মন খারাপ হয় তখনই এই নিস্তব্ধ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য নিরবে অনুভব করি। মন তখন নিজে নিজেই ভালো হয়ে ওঠে। আমি বাহিরে তাকিয়ে আছি সেই মুহূর্তে নিজের কাছে আরেক সত্ত্বা আবিষ্কার করলাম। একদম আমার সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে চিনতে আমার আর কষ্ট হলো না। চুপ করেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। আজ যাই হোক একটা শাস্তি তো দিবো আজ একটুও কথা বলবো না তার সাথে। সে যাই করুক। দেখুক কেমন লাগে।
মেঘা অনেক রেগে আছিস?
আমি নিশ্চুপ।
বেশি বলে ফেলেছি সরি। আ’ম রেলি সরি। (আদুরে গলায়)
নিশ্চুপ।
কথা বল না।
নিশ্চুপ।
কথা বলবি না? এমন চুপ করে আছিস যে?
নিশ্চুপ।
হঠাৎ করেই ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। ভাইয়া আমাকে কোলে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।
ভাইয়া ছাড়ো। সবাই দেখবে।
দেখুক না। আর এমনিতেও আর মাত্র কয়েকটা দিনই আছে। এরপর তো আর কোন বাঁধা নেই।
মানে কি বলছো তুমি? ভাইয়া প্লিজ ছাড়ো। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? কেউ দেখবে তো। বলেই আমি লাফালাফি শুরু করে দিলাম। ভাইয়া এবার থেমে গেলেন। আর ধমক দিয়ে বললেন,
মেঘা যদি আর লাফালাফি করিস একদম কোল থেকে ফেলে দিবো।
আমি লাফালাফি বন্ধ করে দিলাম। ভাইয়া আমাকে ছাদে নিয়ে গেলেন। ছাদে নিয়ে আমাকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। আমি তো অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছি। এটা কি রিশান ভাইয়া? এগুলো কি সত্যিই ভাইয়ার কাজ? ছাদটাকে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চারিদিকে বিভিন্ন ফুলের গাছ। ফুলের সুবাসে ভরে উঠেছে চারপাশ। সামনে দাঁড়িয়ে আছে চাচা, চাচি, লিসা, আবিদ ভাইয়া, ছোট মা, ফুফা, ফাহাদ ভাইয়া তাহিয়া আপু, রিশান ভাইয়ার চাচা চাচি সহ চেনা অচেনা অনেকে। সকলে একসাথে বলে উঠলো “হ্যাপি বার্থডে মেঘা।”
আমি হা করে তাকিয়ে থাকলাম। আজকে আমার জন্মদিন! আর আমি নিজেই ভুলে গেছি। আমি ঠোঁট উল্টে রিশান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ভাইয়া হেসে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন, হ্যাপি বার্থডে মেঘপরি। এবার কেকটা কাট।
আমি বেশ অবাক হচ্ছি। ভাইয়া এসব কখন করলো? এতো এ্যারেন্জমেন্ট কখন হলো? রুহিটাও এসেছে এখানে।
কি রে কেমন আছিস?
তুই কখন এলি।
তোকে কেন বলবো?
রুহির দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই ও গলে গেলো।
এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? বিকেলে এসেছি। তুই তখন গার্ডেনে ছিলি। রিশান ভাইয়া স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যাতে তুই কিছু না জানিস। তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলেন।
ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ভাইয়া আসলেই পাগল!
কেমন আছিস আপু?
লিসা! আমি ভালো আছি। তুই?
এই তো ভালো। তা কেমন কাটছে দিন?
ভালোই তো। এভাবে বলছিস কেন? কি হয়েছে?
কিছু নাহ ভাবি।
ভাবি!! ভাবি বলছিস কেন?
ওহ্ সরি ভুলে। লিসা এবার আমাকে এড়িয়ে রুহির সাথে গল্প করতে বসে গেলো। কিন্তু আমার মাথায় তো একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে কি বলতে চেয়েছিলো ও? আমি এক কোণে একটা চেয়ারে বসে আছি। আমার চোখ দুটো রিশান ভাইয়াকে খুঁজছে। হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলেন তিনি? দেখতে পেলাম তিনি ছাদের দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছেন। আমার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ। আমার মনমরা হয়ে বসে আছি। আমার দিকে তাকিয়ে কিঞ্চিত ভ্রু কুঁচকে সে এসে আমার পাশে বসে পড়লো।
কি হয়েছে মন খারাপ কেন?
কিছু না।
দেখ ভালো করে বলছি বলে দে।
ভাইয়া তোমারা কি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাচ্ছো?
ভাইয়া আমার দিকে চেয়ে আছেন। হঠাৎ এই প্রশ্নের জন্য হয় তো উনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর তিনি বললেন,
হ্যাঁ একটা কথা তোকে বলা হয় নি। আর এখন আমি বলতে চাচ্ছি না। সময় হলেই জানতে পারবি। এসব নিয়ে মাথা ঘামাস না এখন।
কি কথা ভাইয়া?
ভাইয়া হেসে বললেন, সেটা সময় আসলেই বুঝতে পারবি!
।
আজ অনেক দিন পর ভার্সিটিতে আসলাম। সেই ঘটনার পর আজ প্রথম। ক্যাম্পাসে পা রাখতেই নিহা আপু দৌড়ে আসলো। এসেই ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে নাটক শুরু করে দিলো। ভাইয়ার সাথে আঠার মতো লেগে আছে এই মেয়েটা। একেবারেই অসহ্য একটা মেয়ে। এই মেয়ের মতো নির্লজ্জ দুটো দেখি নি আমি।
আই মিস ইউ বেবি। কোথায় ছিলে তুমি? এতো দিন কেন আসো নি? জানো তোমার জন্য আমি তো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। একটা কলও রিসিভ করো না। কেন এমন করছো তুমি?
তার নেকামি আর সইছে না ভাইয়ার দিকে তাকালাম। তিনিও হয় তো এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। আমি রাগে গজগজ করতে করতে ক্লাস রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
পিছন থেকে ভাইয়া ডাকছে, মেঘা শোন!
চলবে……
(