তোর নামেই শুরু পর্ব -১৩ ও শেষ পর্ব

#তোর_নামেই_শুরু
#তানজিনা_তিহা (লেখনীতে)
#পর্ব_১৩ (অন্তিম পর্ব)

তো মি. মুহিত এখন আপনি কি করবেন? এতদিন ধরে তো অনেক খেলেছেন। প্রচু্র প্রেসার দিয়েছেন। এখানে ওখানে সব জায়গায় ঘুরিয়েছেন। আপনাকে পাগলের মতো খুঁজেছি। আমাকে পাগল করে দিয়েছেন আপনি। আমার মেঘপরিকে কষ্ট দিয়েছেন। ওর শরীর থেকে রক্ত ঝরিয়েছেন। এখন আপনাকে কি করবো বলুন তো?

রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ব্যক্তিটিকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললো রিশান। সামনের ব্যক্তিটির কণ্ঠস্বর থেকে স্পষ্ট কাতর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। ব্যাথায় বারবার কুঁকড়ে উঠছে সে। আর উঠবেই বা না কেন? রাগের বসে ইচ্ছামতো তাকে উত্তম মাধ্যম দিয়েছে রিশান। মাথা ফেটে রক্ত ঝরছে তার। অর্ধমৃত অবস্থায় সে!

আস্তে আস্তে বললো, আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দাও।

ভুল হয়ে গেছে? মাফ করে দিবো? এসব আগে ভাবিস নি? এই ইহনাফ আফসান যে ভয়ংকর হতে পারে তুই জানিস? তুই আমার মেঘপরিকে কষ্ট দিয়েছিস। তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস তোকে আমি ছেড়ে দিবো? কিভাবে ভাবলি? আমার হাত থেকে তোর কোন রক্ষা নেই। কেন করলি এমন? বল,
রাগে গর্জে উঠলো রিশান।

কেন ওর সাথে এমন করলি বল। কি ক্ষতি করেছিলো ও তোর? কি শত্রুতা ওর সাথে?

বলেই লোকটির গাল চেপে ধরলো রিশান। লোকটি কাতর স্বরে বললো, বলছি বলছি।

বল,,

আমি মেঘার বাবার অফিসে কাজ করতাম। প্রথমে ছোটখাটো একটা পদে চাকরি পাই। কিন্তু আমার কাজ আর আমার সততা দেখে আমার প্রমোশন হতে থাকে। আস্তে আস্তে কোম্পানির খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠি আমি। কোম্পানির অনেক দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়। আমি আমার মতো দায়িত্ব পালন করছিলাম। কিন্তু হঠাৎই লোভ নামক জিনিসটা আমার উপর ভর করে। আস্তে আস্তে এই প্রোপার্টির মালিক হওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা আমার মধ্যে জন্মাতে থাকে। এই বিশাল সম্পত্তি আমি একা ভোগ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সব তো ছিল ওই মেঘার বাপের হাতে। আমাকে বিশ্বাস করলেও কখনো আমার উপর কোম্পানির ভার ছেড়ে দেন নি। আমি লোভে প্রায় অন্ধ হয়ে গেছি। হঠাৎ আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। একদম উড়িয়ে দেই তাদের। তাদের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে একদম উড়িয়ে দেই তাদের। প্রথমে তো ভেবেছিলাম মা বাবা মেয়ে সব শেষ। কিন্তু দেখি না মেয়ে বেঁচে গেছে। শুধু মাত্র তোর জন্য বেঁচে গেছে। এরপর আর কি করার ওরে মারার প্লেন করতে থাকি। কিন্তু না আমি সফল হতে পারলাম না। ওর বাবা অনেক আগেই মেঘার নামে সব উইল করে রেখে গেছে। মেঘার আঠারো বছর পূর্ণ হলে ওকে ওর সব সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আর এর আগে ওর কিছু হলে কোম্পানি ট্রাস্টের হাতে চলে যাবে। এই কথায় আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নিজেকে কন্ট্রোল করে দিন গুনতে থাকি। অবশেষে আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়। কিন্তু আমার সব প্লেনে পানি ঢেলে দেছ তুই। তুই সবসময় মেঘাকে বাঁচিয়ে নেস। এরপর হঠাৎ একদিন সুযোগ হয়। মেঘাকে নিজের আন্ডারে নিয়ে যাই। কিন্তু ওকে তুই বাঁচিয়ে নিস। ওকে মারার প্লেন করি আমি আর সব প্লেনে জল ফেলিস তুই।

মুহিত আর কিছু বলতে পারলো না এর আগেই ওর মুখে এক ঘুষি বসিয়ে দিলো রিশান। তার মেঘপরিকে নিয়ে এতো ষড়যন্ত্র! হঠাৎ সে অস্থির হয়ে উঠলো। মেঘপরির কথা মনে হতেই তার ভিতর উত্তাল পাতাল ঢেউ বইছে। তার মেঘপরি এখন কোথায়? কাউকে ফোন করে কিছু বললো সে। তার অস্থিরতা বাড়ছে। সে যে তার মেঘপরির কাছে যেতে চাইছে!

কিছুক্ষণ পরে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলো। পুলিশের হাতে মুহিতকে দিয়ে বেরিয়ে পড়লো সে।

,,

বাড়ি ফিরেই রিশান মেঘাকে খুঁজতে থাকে। কোথায় তার মেঘপরি? সারা বাড়ি খুঁজেও কোথাও তার মেঘপরিকে দেখতে পেলো না সে। অবশেষে মায়ের কাছে গেলো সে।
মা বসে বসে ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।

মা মেঘা কোথায়?

মেঘা তো লিসাদের বাড়ি।

লিসাদের বাড়ি কেন? ও ওখানে গেছে কেন?
বলেই রিশান বেরিয়ে পড়লো। পিছন থেকে তার মা তাকে ডেকে বললো, রিশান এখন তুমি তার ওদিকে যাবে না। মেঘা আজ ওখানেই থাকবে।

কেন মা? ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না যে? আমি যে মেঘাহীনা শূন্য!

হুম। কাল তোমাদের বিয়ে। কাল আমি নতুন বউ আনতে যাচ্ছি। মেঘাকে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আসবো।

রিশান তার মায়ের দিকে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে থাকে। কি বলছে সে? সে কি কানে ঠিক শুনেছে? তার মা কি বলছে তাকে? মেঘা! মেঘা কি জানে? তার মেঘপরি তার হবে?

কি বলছো তুমি?

হ্যাঁ, ঠিক বলছি। আগামীকাল তোমাদের বিয়ে।

মা মেঘা?

ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

রিশানের চোখে মুখে বিশ্ব জয়ের উল্লাস প্রকাশ পেল। তার মেঘপরিকে নিজের করে পাবে! তাহলে কি শেষ হবে তার অপেক্ষার প্রহর।

মেঘপরি! ভালোবাসি রে, অনেক ভালোবাসি তোকে। তোর শহরে নিজেকে হারাতে চাই। তোর মাঝেই নিজেকে হারাতে চাই। তোর নামেই শুরু হতে চাই। দিবি কি আমায় সেই সুযোগ? তোকে ছাড়া ভালো লাগছে না রে।

,,

অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটি চলেই আসলো। আজ সেই দিনটি চলেই আসলো। এক নতুনজীবন পথে চলা শুরু হবে আমার। তার সাথে পথ চলা শুরু হবে আমার। নিজেকে তার রঙে‌ রাঙিয়ে দিবো। নিজেকে তার মাঝে বিলীন করে দিবো। নিজেকে তার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে নিবো। বধূর সাজে সজ্জিত আমি। আমার হাত রাঙানো মেহেদীর রঙে সাথে কাচের চুড়ির সমাহার। সবাই মিলে সাজিয়ে দিচ্ছে বধূর সাজে।

বাহ্ আজ তো মেঘাকে পরির মতন লাগছে। (তাহিয়া)

একদম ঠিক বলেছো।‌ রিশান ভাইয়া দেখলে তো একদম পাগল হয়ে যাবে। (লিসা)

সত্যি পরির মতো একটা ভাবি পেলাম। (হীমা)

,,

সত্যি মেঘপরি আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। তুই সত্যিই আমার?

তার মুখ থেকে একথা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেলাম। কি বলছেন উনি? হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে।
তিনি হাসলেন।

বউ!

তার মুখে বউ ডাক শুনে নিজের মাঝে কেমন যেন ভালো লাগা কাজ করছে। হ্যাঁ আজ আমি তার বউ। তার অর্ধাঙ্গিনী। তার পথ চলার সঙ্গী!

বউ! অনেক ভালোবাসি রে। তোকে অনেক ভালোবাসি। আমার অনুভূতিগুলো তো তোকে ঘিরেই। তোর নামেই শুরু করতে চাই নতুন পথচলা। তোকে ঘিরেই শুরু হোক আমার প্রতিটি সকাল। তোর মাঝেই হারিয়ে যেতে চাই আমি। তোকে নিয়ে হোক আমার নতুন পথচলা। তবে শেষ হবে কি আমার অপেক্ষার প্রহর। আমার হবি কি তুই? দিবি কি সেই সুযোগ?

আজ তাকে আর কোন বাঁধা দিলাম না। আজ হোক না তার সকল আকাঙ্ক্ষা পূরণ। আজ না হয় পূর্ণতা পাক তার ভালোবাসা। শুরু হোক আমাদের নতুন সম্পর্কটা। নিজেকে তার রঙে রাঙিয়ে নেই। পূর্ণতা পাক তার ভালোবাসার! ❤️

~ সমাপ্ত~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here