#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::০৪
অধরা এতোক্ষণ দাদির কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। সবটা শোনার পর আশ্বিনের জন্য খারাপ লাগছে তার।
অধরা গভীর ভাবে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে শুরু করে।
— দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে,, ” ছোট্ট বুড়ি, আমি চাই তুই সবসময় আমার আশ্বিনকে আগলে রাখিস। ছেলেটা খুব একা। তাকে একটু ভালোবেসে দেখ, দেখবি সারা জীবন তোর পাশে থাকবে। ”
অধরা দাদির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে,,
— ” দাদি বুড়ি, তুমি কোন চিন্তা করো না তো। শুধু দেখতে থাকো আমি কি করি। ”
— দাদি খুশি হয়ে,, ” এই তো আমার লক্ষি দাদুভাই। ”
অধরা দাদির দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।
🌻রাতে🌻
আশ্বিন অফিস থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসতেই কেউ একজন তার দিকে কফির মগ এগিয়ে দেয়। আশ্বিন কফির দিকে একবার তাকিয়ে উপরে তাকাতেই দেখে অধরা তার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে।
আশ্বিন ভ্রু কুঁচকে এক নজর ভালো ভাবে অধরার দিকে তাকিয়ে দেখে, বেচারি হয়তো বহু কষ্টে কোনরকম ভাবে পেরিয়ে শাড়ি পড়ে আছে।
— আশ্বিন অধরার হাত থেকে কফির মগ নিয়ে,, ” ধন্যবাদ। ”
কথাটা বলে কফিতে চুমুক দিতেই অধরা বাঁকা হেসে, একটু ব্যাঙ্গ করে বললো..
— ” ওগো শুনছেন, কফিটা কেমন হয়েছে? ”
কথাটা শুনেই আশ্বিনের বিষম খেয়ে মুখ থেকে কফি বেরিয়ে যায়। সে কাশতে কাশতে কোনরকম নিজেকে সামলে নিয়ে,,
— ” এই পিচ্চি, কি বললে তুমি? কিসের ওগো? এসব কি ধরনের ভাষা? ”
— অধরা একটু লাজুক হেসে,, ” আমি সিনেমায় দেখেছি, স্বামীর নাম ধরে নাকি ডাকতে নেই,
ওগো বলতে হয়, ওগো। ”
— আশ্বিন একটা ধমক দিয়ে,, ” একদম চুপ। এসব টাইপের কথা যেন আর না শুনি। যাও পড়তে বসো। তোমার না সামনেই পরীক্ষা? পড়া বাদ দিয়ে তামাশা করছেন উনি। যাও বই নাও। ”
অধরা চোখ ছোট ছোট করে একবার তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে চলে যায়। আশ্বিন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাফ ছেড়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে।
🌻🌻
রাতের খাবারের পর,
বেশ কিছুক্ষণ ধরেই অধরা বই নিয়ে বসে আছে। পড়ালেখা তার একদমই ভালো লাগে না, আশ্বিনের ভয়েই তাকে পড়তে হচ্ছে।
আশ্বিন এতোক্ষণ ল্যাপটপে কাজ করছে আর অধরাকে পাহারা দিচ্ছে। হঠাত তার ফোন বেজে ওঠে, ফোনের দিকে তাকাতেই মুখে বিরক্তি ফুটে ওঠে তার। তবুও ফোন রিসিভ করতেই,,
— ” হ্যালো। আশ্বিন, কেমন আছো? ”
— ” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মারিয়া? ”
অধরার এতোক্ষণ বইয়ের দিকে মনোযোগ থাকলেও আশ্বিনের মুখে মারিয়া নামটা শুনে তার একটু খটকা লাগে।
— মনে মনে,, ” নামটা কোথাও শুনেছি মনে হয়। কিন্তু কোথায়…?
আরে,
সেদিন আশ্বিনের আম্মু বলেছিলেন না,, উনি মারিয়ার সাথে আশ্বিনের বিয়ে দিয়ে চেয়েছিলেন।
এটাই কি সেই মারিয়া? মারিয়ার সাথে উনার কিসের কথা? ”
অধরা আড়াল থেকে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে।
— মারিয়া ওপাশ থেকে,, ” আশ্বিন, কালকে নাকি ড্যাডের সাথে তোমার মিটিং আছে? তাহলে কিন্তু আমিও আসবো ড্যাডের সাথে। অনেকদিন তোমার সাথে দেখা হয়নি। ”
— আশ্বিন বিরক্তি নিয়ে,, ” ওকে।
তাহলে কাল সকালে অফিসে দেখা হবে। এখন রাখছি, বাই। ”
— ” ওকে, বাই। ”
কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয় আশ্বিন। এদিকে অধরা তাদের কথোপকথন কিছুটা হলেও শুনতে পেরে…
— মনে মনে,, ” কিহহ? এতো বড় কথা? কালকে অফিসে দেখা করবে? কেনো দেখা করবে? উনার সাথে মারিয়ার কি কাজ?
হুমম,, ষড়যন্ত্র, গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। ”
অধরা গভীর ভাবে কথাগুলো ভাবছিলো হঠাত আশ্বিন তার সামনে এসে,,
— ” এই যে মিস পড়া-চোর।
অনেক তো পড়ালেখা করেছেন, এখন ঘুমিয়ে পড়েন। ”
অশ্বিনের কথাটা বলার সাথে সাথেই অধরা খাতা বই বন্ধ করে এক দৌড়ে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
আশ্বিন এতোক্ষণ হা করে অধরার কান্ড দেখছিলো,, শেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে নিজেও অধরার পাশে শুয়ে পড়ে।
🌻পরদিন🌻
আশ্বিন অফিসে যাওয়ার পর থেকেই অধরা এটা সেটা প্ল্যান করছে। দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে,,
— ” কিরে ছোট্ট বুড়ি, কি এমন ভাবছিস? ”
— ” জানো দাদি? আজকে মারিয়া আশ্বিনের সাথে দেখা করতে অফিসে যাবে। ”
— ” কোন মারিয়া? অনুরিমার বান্ধবীর মেয়ে মারিয়া? তার সাথে আশ্বিনের কি কাজ? মেয়েটাকে আমার একদম পছন্দ না। ”
— অধরা খেতে খেতে,, ” কেনো কেনো? ”
— ” মেয়েটা একদম গায়ে পড়া স্বভাবের। আশ্বিনকে অনেক পছন্দ করে।
যদিও আমার নাতিটা তাকে পাত্তা দেয় না,, তবুও…”
— অধরা খাওয়া থামিয়ে,, ” তবুও কিহ? ”
— দাদি একটু দুষ্টুমি করে,, ” বুঝতেই তো পারছিস, পুরুষ মানুষের মন, কোন বিশ্বাস নেই। ”
কথাটা শুনে অধরা চোখ বড় করে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে। নাহ, তাকেই কিছু একটা করতে হবে।
🌻এদিকে🌻
আশ্বিন অফিসে আসতেই দেখে মারিয়া তার সাথে দেখা করার জন্য বসে আছে। তাকে দেখেই দৌড়ে এসে আশ্বিনকে জড়িয়ে ধরে,,
— ” আশ্বিন, আই মিস ইউ সো মাচ। ”
— আশ্বিন নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে,, ” কেমন আছো? মফিজ আঙ্কেল কোথায়? ”
— মারিয়া চেয়ারে বসতে বসতে,, ” ড্যাড কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে। আমি আগে আগেই চলে আসলাম। ”
— আশ্বিন নিজের চেয়ারে বসে,, ” ভালো। ”
— ” এখন বলো, কতোদিন পর তোমার সাথে দেখা হলো। আমাকে মিস করোনি? যাই হোক, শুনেছি নিউ প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করছো।
শুনে খুব ভাল লাগল, এতো কম বয়সে নিজেকে এতোটা সাকসেসফুল করেছো। ড্যাড তো তোমাকে নিয়ে অনেক প্রশংসা করে। ”
— আশ্বিন মুচকি হেসে,, ” যাই বলো না কেনো, আমার সফল হওয়ার পিছনে মফিজ আঙ্কেলেরও অবদান আছে।
তিনি আমাকে অনেক ভাবেই সাহায্য করেছেন। আমি সবসময় উনার কাছে কৃতজ্ঞ। ”
মারিয়া কথাটা শুনে মুচকি হাসি দেয়। আশ্বিন তার দিকে একবার তাকিয়ে ফাইল চেক করতে শুরু করে।
🌻এদিকে….
অধরা দাদির কথা শোনার পর থেকেই চিন্তায় পড়ে যায়। তাই নিজেকে আর সামলাতে না পেরে অফিসে চলে আসে।
— অধরা কাউন্টারে এসে,, ” আশ্বিন চৌধুরী কোথায় আছেন? আমি উনার সাথে দেখা করতে চাই। ”
— ” স্যার তো উনার কেবিনে আছেন। একটু অপেক্ষা করুন। ”
কথাটা বলেই উনি কেউ একজনকে কল দিতেই একটা মেয়ে নিচে নেমে আসে।
— ” স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছেন? স্যার তো এখন ব্যস্ত আছেন। আপনি একটু অপেক্ষা করুন। ”
— অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,, ” অপেক্ষা করতে পারবো না। আমার দেখা করা খুব দরকার।
আপনি উনাকে আমার কথা বলুন। বলুন ওনার ওয়াইফ এসেছে দেখা করতে। ”
মেয়েটা কিছুক্ষণ অধরার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
🌻🌻
আশ্বিন মারিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাত নিচে থেকে হৈচৈ এর শব্দ শুনে নিচে নেমে দেখে গার্ড অধরার হাত টেনে ধরে আছে।
— অধরা আশ্বিনকে নামতে দেখেই,, ” আশ্বিন দেখুন, আমাকে আপনার কাছে যেতে দিচ্ছে না। ”
— আশ্বিন রেগে গার্ডদের ধমক দিয়ে,, ” কি হচ্ছে এসব? লিভ হার। ”
আশ্বিনের বকা খেয়ে গার্ডরা অধরাকে ছেড়ে দিতেই অধরা দৌড়ে এসে আশ্বিনের পিছনে লুকিয়ে পড়ে।
— মেয়েটা আশ্বিনের সামনে এসে,, ” স্যার, উনি বারবার আপনার কেবিনে যাওয়ার জন্য জোর করছিলেন। আমি বলেছিলাম আপনি ব্যাস্ত আছেন। কিন্তু উনি কোন কথাই শুনছিলেন না, উল্টো হৈচৈ শুরু করে দিয়েছিলেন। তাই…। ”
— ” টিনা, অধরার আমার কেবিনে প্রবেশ করতে কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই।
অধরা আমার ওয়াইফ, যে যখন খুশি আমার কেবিনে প্রবেশ করবে।
নেক্সট টাইম যেনো এমন না হয়। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন অধরাকে নিয়ে তার কেবিনে চলে আসে। এদিকে আশ্বিনের মুখে ওয়াইফ শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো।
আশ্বিন অধরাকে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করতেই দেখে মারিয়া অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আশ্বিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অধরাকে তার চেয়ারে বসিয়ে,,
— ” তুমি ঠিক আছো? সব সময় সব জায়গাতেই ঝামেলা করা তোমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাই না? কি দরকার ছিল অফিসে আসার? ”
— অধরা গাল ফুলিয়ে,, ” আমি তো শুধু আপনার সাথে দেখা করতেই এসেছিলাম। ”
আশ্বিন অধরার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে,,
— ” মারিয়া পরিচিত হও,, অধরা আমার ওয়াইফ। ”
— মারিয়া অবাক হয়ে,, ” তুমি বিয়ে করেছো? কবে? আমাদের তো বলোনি। ”
— ” আসলে, ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হয়েছে।
আমাদের ভালোবেসে বিয়ে। তাই জলদি করেই ছোট আয়োজনে বিয়েটা করলাম। ”
অধরা আশ্বিনের কথা শুনে অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। কি বলছে আশ্বিন এসব? তবে কথাটা শুনে অধরার গাল হালকা লাল হয়ে গিয়েছে।
— ” ভালোবেসে বিয়ে মানে? আর তুমি অধরা না? অর্ণবের ছোট বোন? ”
— ” হ্যা।
আচ্ছা মারিয়া আমদের নাহয় পরে কথা হবে। তুমি মিটিং রুমে গিয়ে অপেক্ষা করো। ”
মারিয়া অধরার দিকে একবার তাকিয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে চলে যায়। আবার কিছু একটা ভেবে পিছনে ফিরে,,
— ” আশ্বিন, ভাবছিলাম কি?
আজকে রাতে তো সব বিজনেস ম্যানদের নিয়ে একটা পার্টি রাখা হয়েছে। তুমি তো কখনো কোন পার্টিতে থাকো না। আজ নাহয় অধরকেও সাথে নিয়ে এসো। সবার সাথে নিজের ওয়াইফকে পরিচয় করিয়ে দিবে না?
আর,, অনুরিমা আন্টি আর শাহিন আঙ্কেলও তো যাবে পার্টিতে। তাদের সাথেও নাহয় পরিচয় করিয়ে দিও। ”
কথাটা বলেই মারিয়া একটা বাঁকা হাসি দেয়। আশ্বিন মারিয়ার কথাটা শুনে চুপ হয়ে যায়। অধরা এক নজর আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে মারিয়ার উদ্দেশ্যে…
— মুচকি হেসে,, ” অবশ্যই আমরা যাবো। অনুরিমা মামুনির সাথে তো আগেই পরিচয় হয়েছে, এখন শাহিন হাসাদের সাথে পরিচয় হওয়া বাকি আছে। আরও অনেকের সাথেই তো পরিচিত হতে হবে,, আফটার অল আশ্বিন চৌধুরীর ওয়াইফ আমি।
তো, দেখা হবে পার্টিতে। ”
কথাটা বলেই অধরা মারিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। মারিয়া দাঁতে দাঁত চেপে একটা হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে আসে।
মারিয়া চলে যেতেই আশ্বিন অধরার কাছে এসে,,
— ” আমরা কোথাও যাচ্ছি না। কোন পার্টিতেই যাবো না আমরা।
অনুরিমা যেখানে যাবে, আমি সেখানে কখনোই যাবো না। বুঝতে পারছো? ”
— অধরা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,, ” কেনো যাবেন না? অনুরিমা মামুনির জন্য নিজেকে সব সময় পিছিয়ে রাখবেন নাকি?
উনি তো নিজের জীবন গোছানোর সময় আপনার কথা একবারও ভেবে দেখেননি,, তাহলে আপনি কেনো উনার কথা ভেবে পিছিয়ে থাকবেন? ”
অধরার কথা শুনে আশ্বিন একবার তার দিকে তাকায়। তারপর নিজের চেয়ারে বসে কিছু একটা ভেবে,,,
— ” ঠিক আছে। আমরাও যাবো পার্টিতে। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা মুচকি হাসি দেয়।
—চলবে💜