#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১১
🌻সকালে🌻
অধরা আশ্বিন আর দাদি একসাথে বসে নাস্তা করছে। অধরা দাদির দিকে তাকিয়ে একটা ইশারা দিতেই দাদি মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে…
— ” আশ্বিন বাবা, বলছিলাম কি… আজ তো শুক্রবার, তোর অফিস নেই। আজ নাহয় তুই আর অধরা একটু বাইরে ঘুরে আয়। ”
— আশ্বিন কফির মগে চুমুক দিয়ে, ” হঠাত ঘুরতে যাওয়ার কথা কেনো বলছো দাদি? ”
— দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে, ” মেয়েটা সারাদিন বাসায় একা একা বসে থাকে। আর, তোদের নতুন বিয়ে হয়েছে।
কোথায় তুই নিজ থেকে অধরাকে নিয়ে ঘুরতে যাবি। তা না করে উল্টো আমাকেই বলছিস কেনো ঘুরতে যাবি? ”
দাদির কথা শুনে আশ্বিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে অধরার দিকে তাকায়। অধরা এতোক্ষণ আড় চোখে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে তার উত্তরের অপেক্ষা করছিলো। হঠাত তার দিকে আশ্বিনকে তাকাতে দেখেই অধরা একমনে খেতে শুরু করে। এমন একটা ভাব, যেনো কি হচ্ছে সে এসবের কিছুই জানে না।
— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে, ” দাদি আমার সময় নেই।
অফিসে কাল একটা মিটিং আছে। আমাকে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না চেক করতে হবে। আর তাছাড়া ফ্যাক্টরীতে আমাদের যে লস হয়েছে সেটা কাটিয়ে তুলতে আমাকে আরো বেশি হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে। ”
— অধরা আশ্বিনের কথা শুনে দাদির দিকে তাকিয়ে মন খারাপ কণ্ঠে, ” থাক, দাদি বুড়ি। তোমাকে আর বলতে হবে না। আমি বলেছিলাম না? উনাকে এসব বলে কোন লাভ নেই। উনি থাকুক উনার বিজনেস নিয়ে। হুহহ, আমার কি? আমি তো কেউ না।
দাদু ভাই জোর করে আমাকে উনার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছে…।
তাও তো উনার মহানুভবতা যে আমাকে তার আশ্রয়ে থাকতে দিচ্ছেন। এটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। ”
কথাগুলো বলে অধরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এদিকে আশ্বিন হা করে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। এসব কি বললো পিচ্চিটা?
— দাদি অধরার দিকে তাকিয়ে, ” এসব কি বলছিস তুই ছোট্ট বুড়ি? কিসের মহানুভবতা? এটা তোর অধিকার।
আর আশ্বিন, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই আশরাফ চৌধুরীর নাতি। আরে, তোর দাদুভাইয়ের সাথে যখন আমার বিয়ে হয়েছিল তখন দুজন মিলে একসাথে কতো ঘুরতে গিয়েছিলাম তুই জানিস?
তোর দাদু তো সময় পেলেই আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হতো আর তুই উনার নাতি হয়ে এমন কিভাবে হলি? ”
— অধরা চোখ মুছে অফসোস কণ্ঠে, ” বাদ দাও দাদি বুড়ি। সবই আমার কপাল। আমার দাদুভাই এমন একজনের গলায় আমাকে ঝুলিয়ে দিয়েছে যে কিনা হাজার চাইলেও আশরাফ দাদুভাইয়ের মতো হতে পারবে না। কারন দাদুভাইয়ের মনে তোমার প্রতি ভালোবাসা ছিলো কিন্তু এই রোবট মার্কা মানুষটার মনে আমার জন্য আবার কিসের ভালোবাসা। হুহহ। ”
— দাদি আফসোস করে, ” খুব খারাপ লাগছে আমার। এমন ফুলের মতো একটা ছোট্ট মেয়েকে আমি এই গাধাটার সাথে বিয়ে দিয়ে ঘরে নিয়ে আসলাম!
আর আমি বেঁচে থাকতেই মেয়েটাকে এমন দিন দেখতে হচ্ছে। না জানি আমার মরার….। ”
— আশ্বিন দাদিকে থামিয়ে দিয়ে, ” হয়েছে দাদি, থামো এবার।
বলে দাও তোমার ফুলের মতো ছোট্ট মেয়েকে যেনো কিছুক্ষণ পর রেডি থাকে।
নিজে তো একটা ড্রামা কুইন এখন তুমিও…! আজব। ”
কথাটা বলেই আশ্বিন টেবিল ছেড়ে চলে যেতেই অধরা আর দাদি আশ্বিনের যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে একে অপরের দিকে হঠাত ফিক করে হেসে ওঠে।
— দাদি হাসতে হাসতে, ” যা গিয়ে তৈরি হয়েনে। নয়তো আবার কখন রেখে চলে যায় কে জানে। ”
অধরা হাসতে হাসতে উপরে চলে আসে।
🌻🌻
অধরা আর আশ্বিন কাছের একটা রিসোর্টে ঘুরতে যাচ্ছে। অধরা গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে আর পাশে বসে আশ্বিন ড্রাইভ করছে।
আবহাওয়াটা আজ খুব সুন্দর। নীল আকাশের মাঝে সাদা তুলোর মতো মেঘ। আর তার সাথে হালকা রোদের কিরণ।
স্নিগ্ধ একটা বাতাস জানালা দিয়ে প্রবেশ করে অধরার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছে। আশ্বিন আড়চোখে বারবার অধরার দিকে তাকিয়ে তা উপভোগ করছে।
আজ পিচ্চিটাকে খুব সুন্দর লাগছে। নীল শাড়ি, নীল চুরি আর চোখে হালকা কাজল। খুব সাধারণ সাজ অথচ কোন অপ্সরীও আজ এই রুপের কাছে হয়তো হার মানবে।
আশ্বিনও অধরার জোরাজুরিতে বাধ্য হয়ে নীল পাঞ্জাবি পরে এসেছে।
গাড়িটা রিসোর্টে এসে থামতেই অধরা নেমে যায়। চারদিকে অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরতে এসেছে। অধরা আলতো করে আশ্বিনের হাত ধরে হাটতে শুরু করে। আশ্বিনও চুপচাপ মুহূর্তটা উপভোগ করছে।
— অধরা মুচকি হেসে আপন মনে, ” মাঝে মাঝে খুব সাধারণ কিছু মুহূর্তও আমাদের কাছে অমূল্য মনে হয়ে থাকে, তাই না?
ভাইয়া আর কণা আপুর সাথে বহুবার এখানে এসেছি। কিন্তু আজকের অনুভূতিটা একদম আলাদা। ”
— আশ্বিন অধরার দিকে একবার তাকিয়ে, ” কাজে ব্যস্ততার মাঝেও আমি মাঝে মাঝে এখানে আসি। খোলামেলা, শান্ত আর প্রকৃতির সাথে মিশে গিয়ে মনের দুঃখকে ভুলে থাকার এক অদ্ভুত অনুভূতি এখানে এসেই খুঁজে পাই।
নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে যখন চোখ বুজে শীতল বাতাসকে উপভোগ করি তখন কেনো জানি না তবে মনে এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে। ”
— অধরা আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে কথাগুলো শুনছিলো, ” তাহলে চলুন। ”
কথাটা বলেই অধরা আশ্বিনকে নিয়ে নদীর ধারে চলে আসে। পানিতে পা ভিজিয়ে, আশ্বিনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে অধরা। সে চোখ বুজে বাতাস উপভোগ করছে আর আশ্বিন একমনে অধরাকে দেখছে।
অধরা মুচকি হেসে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন তার দিকে তাকিয়ে আছে। অধরা ভ্রু কুঁচকে,
— ” কি হলো? এভাবে তাকিয়ে কি দেখছেন? ”
অধরার কথায় আশ্বিন কিছু না বলে অধরার হাত আলতো করে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে। তারপর পাঞ্জাবির পকেট থেকে আলতো করে একটা বেলী ফুলের গাজরা বের করে অধরার সামনে তুলে ধরে।
— ” তোমার সাজ গাজরা ছাড়া অসম্পূর্ণ ছিলো। তাই আসার সময় কিনে নিয়েছি। অর্ণবের কাছে প্রায়ই শুনেছি গাজরা তোমার খুব পছন্দ। তাই…। ”
অধরা স্তব্ধ হয়ে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে আছে। এই মুহূর্তে আশ্বিনের কাছে এমন কিছু সে কখনোই আশা করেনি। এদিকে, অধরার এমন অবস্থা দেখে আশ্বিন নিজ হাতে অধরার খোঁপায় গাজরা বেধে দেয়। তারপর অধরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে অধরার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করে।
🌻এদিকে🌻
শাহিন হাসাদ কয়েকজন ক্লায়েন্ট নিয়ে নিজের রুমে বসে আলোচনা করছে। অনুরিমা তাদের জন্য নাস্তা নিয়ে এসে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করছে।
— শাহিন সোফায় হেলান দিয়ে, ” আমার মনে হয় এর থেকে ভালো আফার আপনাদের আর কেউ দিতে পারবে না। এখন আপনারাই ভেবে দেখুন, আপনারা আসলে কি করতে চাইছেন। ”
— ক্লায়েন্টদের একজন, ” আমারও মনে হচ্ছে, এটাই বেস্ট হবে।
কারণ আশ্বিন চৌধুরী একজন ভালো বিজনেস পার্টনার হলেও তিনি এখনো অনভিজ্ঞ। আর তাছাড়া শাহিন হাসাদ এখানে অনেক টাকাও ইনভেস্ট করছেন। এর থেকে ভালো অফার আর কি হতে পারে? ”
— বাকি দুজন কিছুক্ষণ ভেবে, ” মিস্টার হাসাদ, আমরা আপনার মতামত জানলাম। তবে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে একটু ভেবে দেখা প্রয়োজন।
আমরা নাহয় আমাদের মতামত কাল মিটিংয়ে প্রকাশ করবো। আজ আসি। ”
কথাগুলো বলে ক্লায়েন্টরা সেখান থেকে চলে যেতেই শাহিন একটা বাঁকা হাসি দেয়। এদিকে অনুরিমা আড়ালে লুকিয়ে ভ্রু কুঁচকে শাহিনের পরিকল্পনা বোঝার চেষ্টা করছে।
🌻রাতে🌻
অধরা বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাটে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। হঠাত ফোনটা বেজে ওঠতেই অধরা বিরক্তি নিয়ে ফোন হাতে তুলে দেখে জনি। এক মুহূর্ত দেরি না করে ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায় অধরা।
— ” হ্যালো জনি ভাইয়া। ”
— ” ছোট মনি। একটা তথ্য জানতে পেরেছি। ”
কথাটা বলেই জনি অধরাকে কিছু একটা বলতেই অধরা ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে..
— ” জনি ভাইয়া। কাল সকাল আটটার দিকে আমার সাথে দেখা করবেন। বাকিটা আমি সামলে নিবো। ”
— ” ঠিক আছে ছোট মনি। ”
অধরা ফোন রেখে একটা বাঁকা হাসি দেয়। হঠাত কেউ তার সামনে কফির মগ তুলে ধরতেই অধরা পাশে ফিরে দেখে আশ্বিন দুজনের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছে। অধরা মুচকি হেসে কফির মগ নিতেই আশ্বিন তার পাশে বসে পড়ে।
— ” কে ফোন দিয়েছিলো? ”
— ” তিশা। বললো কাল নাকি আটটায় ক্লাস আছে। ”
— ” ওহ। আচ্ছা, আমি অফিসে যাওয়ার আগে তোমাকে নামিয়ে দিয়ে যাবো। ”
— ” তার দরকার নেই। তিশা বললো সে নাকি এসে আমাকে নিয়ে যাবে। আর তাছাড়া, আপনার না কাল মিটিং। সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখতে হবে না? ”
— আশ্বিন কিছু একটা ভেবে, ” হুম ঠিক আছে। যেতে পারবে তো? ”
— অধরা একটা হাসি দিয়ে, ” আমাকে দেখে কি আপনার বাচ্চা মেয়ে মনে হচ্ছে নাকি? আপনি এখনও আমাকে চিনতেই পারেননি। যতোটা গাধী আমাকে মনে করেন ততোটাও বোকা আমি না। ”
অধরার কথায় আশ্বিন মুচকি হাসি দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়। এদিকে অধরাও আশ্বিনের কাধে মাথা রেখে মুচকি হেসে দেয়।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::১২
🌻পরদিন🌻
অধরা আর তিশা একসাথে কলেজে বসে আছে। তিশা একা একা এটা সেটা বলেই যাচ্ছে আর অধরা এক ধ্যানে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিচ্ছে।
— তিশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে, ” কিরে? এভাবে একা একা হাসছিস কেনো? আবার কি কান্ড করে এসেছিস? ”
— অধরা তিশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে, ” সময় হোক, জানতে পারবি। ”
অধরার কথা শুনে তিশা ভ্রু কুঁচকে তাকায় অধরা বাঁকা হাসি দিয়ে বইয়ের দিকে মনোযোগ দেয়।
🌻এদিকে🌻
আশ্বিন শাহিন সহ আরো কয়েকজন বিজনেস ম্যানদের নিয়ে একটা মিটিং রাখা হয়েছে। ডিলাররা সবাই এটা সেটা নিয়ে আলোচনা করছে।
— ” যেমনটা আপনারা বুঝতে পারছেন, আমরা একজন ভালো ডিলারকেই আমাদের এই প্রোজেক্ট দিতে চাচ্ছি। আমরা সবার সাথেই এই বিষয়ে কথা বলেছি, সবার মতামত জেনেছি। এখন আমরা আমাদের নিজেদের মত প্রকাশ করছি…। ”
কথাটা শুনে শাহিন হাসাদ একটা বাঁকা হাসি দিয়ে আশ্বিনের দিকে তাকায়। আশ্বিন চুপচাপ বসে আছে।
— ” আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমরা এই প্রোজেক্ট মিস্টার আশ্বিন চৌধুরীকেই দিতে চাই।
কেননা মিস্টার আশ্বিন চৌধুরী একজন নতুন বিজনেস ম্যান হলেও তিনি নিজেকে অনেকটাই সফল করতে পেরেছেন।
তাই আমরা উনার কাছে ভালো কিছুই আশা করি। ”
— আশ্বিন খুশি হয়ে, ” অনেক ধন্যবাদ। আশা করি আমি ভালোভাবে প্রোজেক্ট পরিচালনা করতে পারবো। ”
এদিকে শাহিন হাসাদ রাগী চোখে একবার আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
— শাহিন নিজের অফিসে এসে, ” কিভাবে? এটা কিভাবে সম্ভব? এতোগুলো টাকার অফার দেওয়ার পরেও কিভাবে তারা ডিলটা আশ্বিনকে দিয়ে দিলো? ”
— সাহিল অবাক হয়ে, ” এর মানে কি ড্যাড? এতোটা প্ল্যান করার পরেও আশ্বিন কিভাবে ডিলটা পেলো? ”
” আশ্বিন চৌধুরী তার নিজ যোগ্যতায় ডিলটা পেয়েছে, মিস্টার শাহিন হাসাদ। ”
হঠাত কারো কণ্ঠ শুনে শাহিন আর সাহিল পিছনে ফিরে দেখে অধরা দরজার সামনে মুচকি হেসে দাঁড়িয়ে আছে।
অধরা কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভেতরে প্রবেশ করে চেয়ারে বসে পড়ে।
— শাহিন অবাক হয়ে, ” অধরা! তুমি এখানে? ”
— অধরা মুচকি হেসে, ” মিষ্টি নিয়ে আসলাম। আশ্বিন এতো বড় একটা ডিল পেলো মিষ্টি না দিয়ে হয় নাকি?
আজ আমি অনেক খুশি, অবশ্য একটু খারাপও লাগছে। এতো চেষ্টা করেও আশ্বিনকে হারাতে পারলেন না।
কতো টাকা যেনো অফার করেছিলেন? আশ্বিনের তিনগুণ রাইট? ”
— সাহিল অবাক হয়ে, ” তুমি এসব কিভাবে….? ”
— অধরা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” কি ভেবেছিলেন? আশ্বিনকে সবসময় কষ্ট দিবেন আর নিজেরা জিতে যাবেন?
এতোদিন ধরে হয়তো আশ্বিনের সাপোর্টে কেউ ছিলো না বাট এখন আমি আছি। ”
— শাহিন হাসতে হাসতে, ” তুমি?
তুমি আছো সাপোর্টে?
হুহহ, আচ্ছা শুনি তো কি কি করতে পারো তুমি? ”
— অধরা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” এখনও বুঝতে পারছেন না? এতো ভালো অফার দেওয়ার পরেও কেনো ডিলটা পেলেন না? ”
অধরার কথা শুনে শাহিন আর সাহিল অবাক হয়ে যায়। অধরা তাদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়…
🌻ফ্লেশব্যাক🌻
ক্লায়েন্টরা একটা কফি শপে বসে আছে। হঠাত জনি আর অধরা তাদের সামনে এসে বসে।
— ক্লায়েন্টদের একজন, ” অধরা মামুনি, হঠাত আমাদের এখানে ডাকলে। কোন সমস্যা? ”
— অধরা মুচকি হাসি দিয়ে, ” তেমন কিছু না আঙ্কেল। শুনেছি কাল শাহিন হাসাদের সাথে গোপন বৈঠক করে আমার স্বামীর বিপক্ষে ডিল করেছেন? ”
— থতমত খেয়ে, ” এসব কি বলছো মামুনি? আমরা কখনোই এমন করতে পারি না। তুমি তো জানোই আমরা সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিকেই ডিল দিয়ে থাকি। আশ্বিন চৌধুরীর বিপক্ষে আমরা কেনো যাবো? ”
অধরা বাঁকা হেসে নিজের ফোনটা নিয়ে তাদের সামনে ধরে একটা ভিডিও দেখিয়ে…
— ” কিন্তু এই ভিডিওটা তো অন্য কথা বলছে আঙ্কেল। তিনগুণ টাকার কাছে নিজেদের ডিল বিক্রি করছেন।
জনি ভাইয়া, ভিডিওটা ভাইরাল হলে কেমন হবে? ”
— জনি মুচকি হেসে, ” ভালোই হবে ছোটমনি। তাদের আসল চেহারা সবার সামনে চলে আসবে। আর তারপর…। ”
— ক্লায়েন্টরা স্তব্ধ হয়ে, ” নাহহ।
অধরা মামুনি এমন করো না প্লিজ। নাহয় আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ”
— ” হুম। তাহলে আজকে মিটিংয়ে আশ্বিনের বিপক্ষে কোন ধরনের কাজ করলে…। ”
— ” নাহহ। আমরা আশ্বিনকেই এই প্রোজেক্ট দিবো। কারণ সেই এই প্রোজেক্টের যোগ্য। ”
— অধরা জনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে, ” গুড। ”
বর্তমানে…
অধরার কথা শুনে শাহিন আর সাহিল অবাক হয়ে যায়। অধরা মিষ্টির প্যাকেট শাহিনের সামনে রেখে বাঁকা হাসি দিয়ে…
— ” অধরাকে ছোট ভেবে ভুল করবেন না মিস্টার শাহিন হাসাদ। কারণ, অধরা যদি একবার গেইম খেলতে শুরু করে তখন আপনারা নিজেদের অস্তিত্বই আর খুঁজে পাবেন না। ”
কথাটা বলেই অধরা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শাহিন আর সাহিল হা করে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
🌻🌻
বাসায় আসতেই অধরার ফোন বেজে ওঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে অর্ণব। অধরা খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করতেই…
— ” ভাইয়া, কেমন আছো? ”
— ” বোন, আমি ভালো আছি। তুই কেমন আছিস? ”
— ” ভালো না।
এতোদিন পর তুমি আমার খোঁজ নিচ্ছো। তুমি আমাকে ভুলেই গিয়েছিলে তাই না? এক তো জোর করে বিয়ে দিয়েছো এখন আমার কথাই ভুলে গিয়েছো। ”
— ” কি বললি? তোর কথা কি ভুলে যাওয়া যায়? আমার একটা মাত্র বোন তুই। আর জোর করে বিয়ে দিয়েছি মানে? অধরা তুই কাকে বোকা বানাচ্ছিস? তোর বিয়ের রহস্য আর কেউ না জানলেও আমি কিন্তু জানি। ”
— অধরা একটা কাশি দিয়ে, ” ইয়ে মানে, আচ্ছা এই কথা বাদ দাও। হঠাত ফোন দেওয়ার কারণ কি…? ”
— ” ওহ হে। কণার বিয়ে ঠিক হয়েছে। দুদিন পর এনগেস্টমেন্ট। তাই আমি আর কণা এসে কাল তোকে নিয়ে যাবো। আশ্বিনকে আমি বলে রেখেছি। ”
— ” সত্যি?? তাহলে তো খুব ভালো হবে। কাল তাড়াতাড়ি চলে এসো। ”
— ” ঠিক আছে বোন। বাই। ”
অধরা কথা বলে ফোন রেখে নাচতে নাচতে ওয়াশরুমে চলে যায়। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে অধরা রুমে আসতেই দেখে আশ্বিন সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।
— অধরা একটা হাসি দিয়ে, ” আরে, আপনি কখন আসলেন? ”
— আশ্বিন অধরার দিকে তাকিয়ে মজা করে, ” ওহ, তুমি তাহলে বেঁচে আছো। না মানে, এতোক্ষণ ধরে তুমি ওয়াশরুমে ছিলে তো। তাই ভাবলাম…। ”
আশ্বিনের কথা শুনে অধরা চোখ ছোট করে একটা ভেংচি কেটে আয়নার সামনে এসে চুল মুছতে শুরু করে। এদিকে আশ্বিন ঘোর লাগা চোখে অধরার দিকে তাকিয়ে…
🎶 আয়নাকে ওই মুখ দেখবে যখন
কপলের কালো তিল পড়বে চোখে
ফুটবে যখন ফুল বকুল শাখে
ভ্রমর যে এসেছিলো জানবে লোকে 🎶
আশ্বিনের গান শুনে অধরা পিছনে ফিরে মুচকি হাসি দেয়।
— আশ্বিনের সামনে এসে, ” ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো আপনাকে? ”
— ” হুম দিয়েছিলো। কাল তোমাকে এসে নিয়ে যাবে। ”
— ” আপনি আর দাদি যাবেন না? ”
— ” না। নতুন প্রোজেক্টের কাজ অফিসের স্টাফদের বুঝিয়ে দিতে হবে। সমস্যা নেই, আমি দাদিকে নিয়ে ফাংশনের দিন চলে আসবো। তারপর ফাংশন শেষে একসাথে চলে আসবো। ”
— ” কিহহহ? আমি তো সাতদিন আগে আসবোই না। এতোদিন পর যাচ্ছি। ”
— ” দেখো অধরা জেদ করো না। চলে আসবে আমার সাথে। কথা শেষ। ”
— ” না না না। আমি আসবো নাহহহ। ”
অধরার চিৎকার শুনে দাদি রুম প্রবেশ করে..
— ” কি হয়েছে? অধরা এভাবে চিৎকার করছিস কেনো? ”
— অধরা দাদির কাছে এসে, ” দাদি দেখো আমি বাসায় গিয়ে সাতদিন থাকতে চেয়েছি বলে উনি কেমন করছেন। ”
— দাদি আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” কি ব্যাপার আশ্বিন? বউয়ের প্রতি এতো ভালোবাসা কবে হলো যে সাতদিনের জন্যও যেতে দিচ্ছিস না। ”
— আশ্বিন থতমত খেয়ে, ” আরে কিসব বলছো দাদি? তোমার আদরের বউমা যে একটা পড়া চোর ভুলে গিয়েছো? তার কলেজ মিস যাবে আর তুমিও তো একা হয়ে যাবে। ”
— ” তোকে এতো কিছু ভাবতে হবে না। অধরা তার বাসায় গিয়ে সাতদিন থাকবে। কথা শেষ। ”
দাদির কথা শুনে অধরা দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে আশ্বিনকে একটা ভেংচি কাটে।
—চলবে❤
—চলবে❤