আমি তোমার গল্প হবো পর্ব -২৭+২৮

#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৭

অধরা সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আশ্বিন রুমে নেই।
” আশ্বিন কোথায় গেলো? আজ তো শুক্রবার, অফিসে তো যাওয়ার কথা না। ”

অধরা কথাটা ভেবে ধীরে ধীরে নিচে নেমে দেখে আশ্বিন কোথাও নেই। অধরা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভেবে ছাদে উঠে দেখে আশ্বিন একে একে তার ফুল গাছগুলোর যত্ন নিচ্ছে। মুহূর্তেই অধরার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। অধরা ধীরে ধীরে যেয়ে আশ্বিনের পাশের দোলনায় বসে পড়ে।

আশ্বিন একনজর অধরার দিকে তাকিয়ে, ” গুড মর্নিং ”
অধরা মুচকি হেসে আশ্বিনের দিকে তাকিয়ে, ” গুড মর্নিং ”

আজকে আকাশটা খুব সুন্দর, চারদিকে কোমল একটা বাতাস বয়ে বেড়াচ্ছে। অধরা চোখ বন্ধ করে দোলনায় দোল খেতে খেতে বাতাসের স্নিগ্ধতা অনুভব করছে। আশ্বিন একবার পাশে ফিরে অধরার দিকে তাকিয়ে দেখে বাতাসে তার খোলা চুলগুলো উঠছে আর অধরা তা অনুভব করছে। আশ্বিন মুচকি হেসে ধীরে ধীরে অধরার পাশে এসে বসে। কারো উপস্থিত বুঝতে পেরে অধরা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আশ্বিন তার পাশে বসে আছে।

আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানে পিঠে গুজে দিয়ে একটা হলুদ অলকানন্দা ফুল গুজে দেয়। আশ্বিনের কান্ড দেখে অধরা মুচকি হাসি দেয়। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরার কোলে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ে। অধরা আশ্বিনের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে গান গাইতে শুরু করে…

🎶 হাওয়ায় হাওয়ায় দোলনা দোলে..
সুরের ডানা মেলে।
তোমার মনের উঠান, লেপে দিবো..
সাজিয়ে দিবো ফুলে।
তুমি এসো, তবু এসো, ভালোবেসে। 🎶

অধরার গান শুনে আশ্বিন মুচকি হেসে দুহাত দিয়ে আলতো করে অধরাকে জড়িয়ে ধরে।
এদিকে, দাদি ধীরে ধীরে ছাদে উঠে এসে অধরা আর আশ্বিনকে একসাথে দোলনায় বসে থাকতে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচে নেমে আসে।

🌻🌻

শাহিন ডাইনিং টেবিলে বসে চুপচাপ নাস্তা করছে। তার পাশে বসে আছে অনুরিমা আর সাহিল।
শাহিন খেতে খেতে, ” সাহিল, আজ বিকেলে ব্যাস্ত না থাকলে একবার আমার অফিসে এসো। ”
সাহিল শাহিনের দিকে তাকিয়ে, ” ঠিক আছে ড্যাড। ”

অনুরিমা এতোক্ষণ চুপচাপ তাদের কথাগুলো শুনছিলো। সাহিল খাবার টেবিল থেকে চলে যেতেই সে শাহিনের দিকে তাকিয়ে, ” শুনেছি আপনার বিজনেস ডিল সব বাতিল হয়ে যাচ্ছে? ”
” শুনে খুশি হয়েছো মনে হচ্ছে? এতো বেশি খুশি হয়ো না, আমি আশ্বিনকে বেশিদিন এই সাফল্যে থাকতে দিবো না। ”
অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে শাহিনের কথা শুনে, ” একটা উপদেশ দেই আপনাকে। আশ্বিনকে বিপদে ফেলার চিন্তা বাদ দিয়ে আগে নিজের বিজনেস ডিল সেইফ করার চেষ্টা করুন। এটাই আপনার জন্য ভালো হবে। ”

অনুরিমা কথাগুলো বলে চলে যেতেই শাহিন রাগে খাবারের প্লেট সব ফেলে দেয়। তারপর মাথায় হাত রেখে বসে থাকে।

🌻🌻

আশ্বিন ফোন হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে নানাভাইকে কল দেয়। কয়েকবার রিং হতেই নানাভাই ফোন রিসিভ করে।
” হ্যালো নানাভাই। কেমন আছো? ”
” আমি ভালো আছি আশ্বিন। তোমরা সবাই কেমন আছো? ”
” আমরাও ভালো আছি। তোমার সেখানে থাকতে কোন সমস্যা হচ্ছে না তো? ”
” আরে না। আমি একদম ঠিক আছি। যাই হোক, তারপর বলো কি খবর? আমার কথামত কাজ হয়েছে? ”
আশ্বিন মুচকি হেসে, ” হ্যা। তোমার কথামত শাহিনের দুটো বিজনেস ডিল এখন আমার অধীনে আছে। তাদের সামনে শাহিনের বিপক্ষে কিছু প্রমাণ দেখানো হয়েছে যার কারণে সহজেই তারা শাহিনের সাথে ডিল বাতিল করেছে। ”
” গুড। আশ্বিন যা করার সাবধানে করতে হবে। শাহিন কিন্তু তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করবে। ”
” জানি নানাভাই। আমি সবকিছু সামলে রাখছি। আর কোন দরকার হলে তোমাকে অবশ্যই জানাবো। ”

নানাভাই কিছু একটা ভেবে, ” আশ্বিন, আমার কি মনে হয় জানো? শাহিন যখন তার এতোগুলো বড় বড় ডিল হারিয়ে ফেলবে, তখন সে তার বিজনেসকে ঠিক রাখতে গোপনে অনেক ঝামেলা সৃষ্টি করবে। অনেক ভাবেই অন্যায় কাজ করবে। তখনই আমাদের তার ভুলগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। ”
আশ্বিন মন দিয়ে কথাগুলো শুনে, ” ঠিক বলেছো নানাভাই। আমি সবসময় তার উপর নজর রাখবো। ”
” হুম। আচ্ছা, এখন তাহলে রাখছি। পরে আবার ফোন দিবো। ”
” ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ। ”

আশ্বিন ফোন রেখে কিছুক্ষণ নানাভাইয়ের কথাগুলো ভাবলো। আসলেই তো নানাভাই ঠিক বলেছে। কথাগুলো ভাবতেই হঠাত তার ফোনে একটা মেসেজ আসে। আশ্বিন ফোনের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

বিকেলে…

সাহিল তার বন্ধুদের কাছে বিদায় নিয়ে শাহিনের অফিসে এসে দেখে শাহিন টেবিলের উপর হাত রেখে মাথা ভর দিয়ে বসে আছে। সাহিল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে,
” কি হয়েছে ড্যাড? ”
শাহিন ধীরে ধীরে মাথা তুলে, ” আজও দুজন ক্লায়েন্ট আমার ডিল ক্যান্সেল করেছে। ”
” কিহ? এসব কি হচ্ছে ড্যাড? তারা হঠাত করেই এমন করছে কেনো? ”
” আমি জানি না, সাহিল। কোন একভাবে তারা আমার ভুল কাজের প্রমাণ পেয়েছে। ”
সাহিল কিছু একটা ভেবে, ” আমার মনে হয় এসব আশ্বিনের কাজ। সে ইচ্ছে করেই এমন করছে। ”
” আমারও তাই মনে হয়। ”
” তাহলে এখন কি করবে ড্যাড? আমি কি কোন ভাবে তোমাকে সাহায্য করবো? ”
” কি করবে তুমি? ”
সাহিল কিছুক্ষণ চুপ থেকে পর মূহুর্তে একটা বাঁকা হাসি দেয়, ” শুধু দেখতে থাকো। ”

সাহিল শাহিনের অফিস থেকে বেরিয়ে একজনকে ফোন করে দেখা করতে বলে। তারপর গাড়ি নিয়ে রওনা দেয়।

এদিকে…

আশ্বিন অফিস থেকে বের হবে ঠিক তখনই দেখে সাহিল গাড়ি করে কোথায় যাচ্ছে। হঠাত তাকে দেখে গাড়ি থামিয়ে তার কাছে এসে,
” কি খবর আশ্বিন? আজ কাল তো দেখাই যাচ্ছে না তোমাকে। ”
আশ্বিন মুচকি হেসে, ” বিশেষ কোন খবর নেই। তুমি হঠাত এদিকে কি করছো? ”
” একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলাম। যাই হোক, শুনলাম ইতালি গিয়েছিলে অধরাকে নিয়ে? ”

সাহিল কথাটা বলে একটা বাঁকা হাসি দেয়। আশ্বিন শান্ত ভাবে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে,
” হুমম। নতুন বিয়ে হয়েছে, এখনি তো ঘুরাঘুরি করবো। ”
সাহিল একটা হাসি দিয়ে, ” হুম। বউকে অনেক কষ্টে নিজের কাছে আটকে রাখার চেষ্টা করছো। বুঝতে পারছি আগের বার তোমার বাবা তো…। একটা করুন অভিজ্ঞতা আছে…। ”
আশ্বিন একটা হাসি দিয়ে, ” চিন্তা করো না সাহিল। আমার অধরাকে নিয়ে ভয় নেই। আমি জানি অধরা কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না। ”
” এতো আত্যবিশ্বাস! গুড। তবুও বলবো আগলে রেখো। ”
” বিশ্বাস আছে বলেই তো বলছি সাহিল। কি ভেবেছো? আমি জানি না? তুমি অধরার পিছু পিছু কতো ঘুরঘুর করেছো, ইনফ্যাক্ট এখনো করছো। তাই না? ”

আশ্বিনের কথা শুনে সাহিল চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তা দেখে আশ্বিন মুচকি হেসে,
” যাই হোক, এটা হয়তো তোমাদের বংশগত প্রথা, অন্যের জিনিসের দিকে নজর দেওয়া। তোমার এতে কোন দোষ নেই। ”
” আশ্বিন, মুখ সামলে কথা বলো। রিসেন্ট যে তুমি আমাদের সব বিজনেস ক্লায়েন্টদের চোখে রুমাল বেধে নিজের কাছে নিয়ে যাচ্ছো…কি ভেবেছো আমরা জানি না? ”

আশ্বিন একটা হাসি দিয়ে, ” সাহিল, একটা কথা কি জানো? তোমরা কিছু পারো আর না পারো, নিজের দোষ অন্যের কাধে চাপিয়ে দিতে ঠিকই পারো। একে তো নিজেরা ক্লায়েক্টদের বিজনেস ডিল ভঙ্গ করে টাকা মেরে দিবে আর ক্লায়েন্টরা ডিল বাদ দিলেই দোষ হবে আমার। তাই না? ”
সাহিল রেগে, ” তুমি…। ”
আশ্বিন তাকে থামিয়ে দিয়ে, ” আরে, থামো থামো। এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমার সাথে ঝগড়া করার সময় আমার নেই। একদিন সময় করে অফিসে চলে এসো, দুজন মিলে এই নিয়ে আলোচনা করবো। ”

আশ্বিন কথাটা বলে মুচকি হাসি দেয়। সাহিল তার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে, ” তোকে আমি দেখে নিবো। ”
কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায়। আশ্বিন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে গাড়িতে উঠে বসে।

সাহিল রাগ দেখিয়ে গজগজ করে রেস্টুরেন্টে ঢুকে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে। সাহিলের সামনে বসা মানুষটা রাগী কণ্ঠে,
” এতোক্ষণে আসলি? সেই কখন থেকে বসে আছি। এভাবে ডাকিয়ে এনে বসিয়ে রাখার মানে কি? ”
সাহিল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে, ” সরি একটু দেরি হয়ে গেলো। কেমন আছিস? ”
” আমি ভালোই আছি। জানিস তো..। ”
” হুমম। আমার তোর একটা হেল্প চাই। আশ্বিনকে একটা শিক্ষা দিতে চাই। আমি জানি তুই আমাকে হেল্প করবি না। তবুও বলবো প্লিজ, আর এখানে তোরও কিন্তু স্বার্থ আছে। এসবটা শুনে তারপর নাহয় সিদ্ধান্ত নিবি। ”
” আগে আমাকে তোর প্ল্যান সবটা খুলে বল। ”
সাহিল তাকে একে একে সব খুলে বলে। সাহিলের কথা শুনে সে মুচকি হেসে, ” প্ল্যান খাবার না। সঠিক ভাবে কাজ করলেই হবে। ওকে, আমাদের বন্ধুত্বের জন্য হলেও আমি তোকে হেল্প করবো। ”
সাহিল মুচকি হেসে, ” থ্যাংকস, মারিয়া। তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ”

মারিয়া তার কথা শুনে মুচকি হাসি দেয়।
#আমি_তোমার_গল্প_হবো🍁
লেখিকা- মাহিয়া তাহসীন মেরিন
পর্ব:::২৮

পরদিন সকালে মারিয়া সবার আগে আশ্বিনের অফিসে চলে আসে।

মারিয়া আশ্বিনের রুমে প্রবেশ করেই, ” সারপ্রাইজ! ”
আশ্বিন মারিয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আবার ল্যাপটপে মন দেয়। মারিয়া আশ্বিনের সামনে এসে চেয়ারে বসে,
” কি ব্যাপার? এতোদিন পর হঠাত করেই তোমার অফিসে চলে এসেছি দেখেও তুমি সারপ্রাইজ হওনি? ”
আশ্বিন মুচকি হেসে, ” উহু। কারণ আমি আগে থেকেই জানতাম তুমি আজকে আমার অফিসে আসবে। ”
মারিয়া কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে, ” জ…জানতে মানে? কিভাবে জানতে? ”

আশ্বিন তার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে, ” বলবো। আগে তুমি বলো, হঠাত করেই আমার অফিসে কি মনে করে? ”
মারিয়া খুশি মনে, ” কিছুদিন ধরেই আমি আর ড্যাড একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম। অবশেষে কাল একটা সিদ্ধান্তে এসেছি। তোমাকে আমি এটাই বলতে এসেছি। ”
আশ্বিন ল্যাপটপে কাজ করতে করতে, ” কি বিষয়ে আলোচনা করলে? আর কি সিদ্ধান্ত নিলে? ”

মারিয়া খুশি হয়ে, ” আমি ভেবেছিলাম ড্যাডের যেকোন একটা প্রোজেক্ট নিয়ে বিজনেস শুরু করবো। কিন্তু ভালো কোন পার্টনার খুঁজে পাচ্ছি না। অবশেষে ড্যাড বললো তোমার কথা। আমিও ভেবেছি সত্যিই তো। তোমার মতো একজন থাকতে আমার বাহিরের কাউকে কি দরকার। ”
আশ্বিন স্বাভাবিক ভাবেই,
” হুম। তোমার ড্যাড কাল এই বিষয়ে আমার সাথে কথা বলেছে। হঠাত করেই নাকি তোমার বিজনেস করার আগ্রহ জেগেছে? অবশ্য এটা ভালো আগ্রহ। ”
মারিয়া অবাক হয়ে, ” ড্যাড তোমাকে সব বলে দিয়েছে? ”

আশ্বিন কিছু না বলে মুচকি হাসি দেয়। মারিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে, ” তো কি ভাবলে? আমরা কি একসাথে বিজনেস করছি? ”
আশ্বিন ল্যাপটপ বন্ধ করে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে, ” অবশ্যই করছি। তোমাদের সাথে তো আমার অনেক দিনের পার্টনারশীপ। আর তুমি তো আমার ভালো ফ্রেন্ডও। তোমার সাথে বিজনেস অবশ্যই করবো। ”
মারিয়া আশ্বিনের কথা শুনে খুশি হয়ে যায়।

আশ্বিন মুচকি হেসে, ” বাট, একটা প্রবলেম আছে মারিয়া। আমার সাথে বিজনেস করতে হলে তোমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। কারণ তুমি যে বিজনেস করতে চাইছো, আমার সেই কম্পানি সিঙ্গাপুরে আছে। সো…। ”
মারিয়া অবাক হয়ে, ” এর মানে কি আশ্বিন? আমি এখন সিঙ্গাপুর যাবো বিজনেস শুরু করতে? ”
” হুম। তোমার ড্যাডের সাথে এই নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি এই বিষয়ে কোন আপত্তি করেননি। আশা করি তোমারও কোন সমস্যা নেই। ”
মারিয়া কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে কিছু একটা ভেবে, ” আচ্ছা আমি পরে তোমাকে জানাচ্ছি। ”

কথাটা বলেই মারিয়া অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। সাহিলকে ফোন করে এখনি দেখা করতে বলে।
এদিকে আশ্বিন মারিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দেয়।

🌻🌻

সাহিল মারিয়ার সামনে এসে, ” কি হয়েছে? হঠাত এভাবে জরুরি তলব? ”

মারিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলো। সাহিলের কথা শুনে মুখ তুলে তাকিয়ে, ” তোর সব প্ল্যান শেষ হয়ে গিয়েছে সাহিল। আজ আশ্বিনের অফিসে গিয়ে তাকে বলেছিলাম আমার বিজনেস পার্টনার হতে..। ”
সাহিল মারিয়ার পাশে বসে, ” তারপর…? ”

” আশ্বিন বললো, ঠিক আছে। তবে আমার সাথে তার সিঙ্গাপুর কম্পানির পার্টনারশীপ করবে। তার মানে তোর জন্য আমাকে এখন সিঙ্গাপুর যেতে হবে। যদি আমি সিঙ্গাপুর চলেই যাই তাহলে তোর কথা মতো তার গোপন তথ্য কালেক্ট করবো কিভাবে? ”

সাহিল কিছুক্ষণ ভেবে, ” আমার মনে হয় আমাদের প্ল্যানের কথা আশ্বিন কোন এক ভাবে জেনে গিয়েছে। ড্যাম ইট! সব প্ল্যান শেষ। ”

মারিয়া সাহিলের দিকে তাকিয়ে, “এখন আমার কি হবে? তুই বলেছিলি, আশ্বিনের সাথে বিজনেস করলে আমি তার কাছাকাছি থাকার একটা সুযোগ পাবো। আশ্বিনকে পাওয়ার এটাই একটা সুযোগ। আর এখন…? তোর জন্য আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। ”

সাহিল এতোক্ষণ মাথায় হাত রেখে গভীর চিন্তা করছিলো। মারিয়ার চেঁচামেচি শুনে তার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে, ” তুই কি দুই মিনিটের জন্য চুপ থাকবি? কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস। ”
মারিয়া রেগে, ” তুই চুপ থাক। তোর জন্যই তো এসব হয়েছে। এখন তুই বল আমি কি করবো? আমি এখন সিঙ্গাপুর গিয়ে বিজনেস করবো আর এখানে আশ্বিন অধরাকে নিয়ে সুখে সংসার করবে? ”
সাহিল রেগে, ” উফ, তুই সিঙ্গাপুর পরে যাবি আগে এখান থেকে যা। আমাকে একটু একা থাকতে দিবি? ”
মারিয়া রাগী চোখে কিছুক্ষণ সাহিলের দিকে তাকিয়ে শেষে হনহন করে চলে যায়। সাহিল মারিয়া চলে যেতেই রাগে টেবিলে ধাক্কা দিয়ে, ” ড্যাম ইট। ”

🌻🌻

অধরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাস করতে করতে গুনগুন করে গান গাইছিলো। আচমকা কেউ একজন তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরায় সে চমকে উঠে পিছনে ফিরে দেখে আশ্বিন।
আশ্বিন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, ” একা একাই বৃষ্টি বিলাস করছো? ”
অধরা গাল ফুলিয়ে, ” আপনি তো সারাদিন ধরেই ব্যাস্ত থাকেন। আমার কথা ভাবার সময় আছে আপনার? ”
আশ্বিন অধরার গাল টেনে, ” এইতো এখন ভাববো। এক কাপ কফি করে নিয়ে এসো। একসাথে বসে বৃষ্টি দেখবো। ”
অধরা মুচকি হেসে চলে যায়।

আশ্বিন অধরার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে নানাভাইকে ম্যাসেজ করে,
” নানাভাই, আমাদের ধারণাই ঠিক ছিল। সাহিল আমাদের বিজনেস স্পাই করতে মারিয়াকে নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আমি তাকে সেই সুযোগ দেইনি। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে সতর্ক থাকতে হবে। আশা করি, বিফল হবো না। ”

আশ্বিন ম্যাসেজটা পাঠিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তখনই অধরা কফির মগ হাতে নিয়ে বারান্দায় আসে। আশ্বিন মুচকি হেসে অধরাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কফির মগে চুমুক দেয়। অধরা আশ্বিনের কাধে মাথা রেখে মুচকি হেসে বৃষ্টি দেখতে থাকে।

🌻কয়েক মাস পর🌻

আশ্বিন তার রুমে বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাত অধরা দৌড়ে রুমে প্রবেশ করে,
” আশ্বিন, জলদি চলুন। দেখুন টিভিতে কি দেখাচ্ছে। ”
আশ্বিন অবাক হয়ে, ” কি হয়েছে অধরা? ”

অধরা কিছু না বলে দৌড়ে আশ্বিনের হাত ধরে টেনে তাকে নিয়ে আসে। দাদি সোফায় বসে ছিলো আশ্বিন আসতেই তার দিকে তাকিয়ে, ” দাদুভাই দেখ, এসব কি বলছে? ”
আশ্বিন টিভির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। প্রতিটি টিভি চ্যানেলে শুধু একটাই হেডলাইন দেখানো হচ্ছে।

” টপ বিজনেস ম্যান শাহিন হাসাদকে তার বিজনেসে বড় ধরনের দুর্নীতির দায়ে আটক করেছে পুলিশ। ”

আশ্বিন অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রুমে এসে ফাহাদকে কল দেয়। ফাহাদ ফোন রিসিভ করতেই, ” হ্যালো স্যার, আপনি নিউজ দেখেছেন? ”
” হ্যা দেখেছি। কিন্তু হঠাত এসব কিভাবে হলো? ”
” স্যার, আমরা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি শাহিন একে একে তার বিশ্বাসযোগ্য সব বিজনেস পার্টনার হারিয়ে শেষে অনেক টাকা অফার দিয়ে বিজনেস শুরু করেছিলো। তারপর সেই টাকার আর কোন হিসাব মিলাতে পারেনি। তাই ডিলার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। ”

আশ্বিন এতোক্ষণ চুপ করে তার কথাগুলো শুনছিলো, ” ঠিক আছে। আর কোন তথ্য পেলে আমাকে জানাবে। ”
” ওকে স্যার। ”

আশ্বিন ফোন রেখে সামনে তাকাতেই দেখে অধরা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
” আশ্বিন, এটাই সুযোগ শাহিনের বিপক্ষে আকাশ বাবার হত্যা মামলা করার। ”
” আমারও তাই মনে হচ্ছে অধরা। নানাভাইকে জিজ্ঞেস কর তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ”
” হুম। ”

আশ্বিন কথাটা বলে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে এসে দেখে অর্ণব বসে আছে। অর্ণব মুচকি হেসে, ” কিরে খবর দেখেছিস? ”
” হুম দেখলাম। ”
” সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমি একটা প্ল্যান করেছি আশ্বিন। ”
” কি? ”
” আগে নানাভাইকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আয়। এখন এসব ঝামেলার মধ্যে তারা নানাভাইয়ের দিকে তেমন ফোকাস করবে না। তারপর নাপাভাইয়ের জবানবন্দি পুলিশকে দিয়ে দিবো সাথে আমাদের সংগ্রহ করা সব তথ্য। ”
আশ্বিন কিছু একটা ভেবে, ” হুম তুই ঠিক বলেছিস। তাই করতে হবে। ”
” হুম। এটাই সুযোগ এই শাহিন আর তার স্ত্রী অনুরিমার কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি পাওয়ার। ”

আশ্বিন হঠাত অনুরিমার কথা শুনে চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ অর্ণবের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে।
আজ পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করছে মাকে কষ্ট দেওয়ার। হাজার কষ্ট সহ্য করেও যেখানে মায়ের বিপক্ষে কখনো কিছু বলেনি সে। আর আজ…।
কথাটা মনে হতেই সে অর্ণকে বললো, ” এই অর্ণব, অনুরিমা এখন কোথায় আছে? তাকেও কি গ্রেফতার করেছে? ”
” আরে না। হয়তো কোনভাবে স্বামীকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে। অসহায় মানুষের মতো। ”

কথাটা শুনে হঠাত চুপ হয়ে যায় আশ্বিন।

—চলবে❤
—চলবে❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here