#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_11
সাঈফা বিরক্তি নিয়ে মেঘকে জোড়ে একটা চিমটি কাটলো। মেঘ আম্মুগো বলে একটা চিৎকার দিলো। হটাৎ মেঘের এরকম চিৎকারে সবাই হকচকিয়ে উঠে ওদের দিকে তাকালো।কিন্তু মেঘের সেদিকে খেয়াল নেই। মেঘ বুঝলো ও স্বপ্ন দেখছে না এটা সত্যি।ও অস্পষ্ট কন্ঠে বললো
“আ্ আহান ভ্ ভাইয়া।”
মেঘ অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে ওনাদের তো আরো কয়েকদিন পর আসার কথা ছিলো!বাংলাদেশে কবে আসলো?আর আমাকে কেউ কিছু জানালো না কেনো?মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে আহাদ খান জিঙ্গেস করলো
“কি হলো মামনি এভাবে চিৎকার দিলে কেনো? এনি প্রভলেম?”
মেঘ তাকিয়ে দেখলো সবাই ওর দিকেই উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে ।ও অনেকটা অসস্তিতে পড়ে গেলো। আমতা আমতা করে বললো
“নো প্রভলেম পাপা (আহাদ খান) আসলে মনে হলো হাতে একটা পিপড়া কামর দিলো।”
আহাদ খান হেসে দিয়ে বললো
“তার জন্য এভাবে কেউ চিৎকার দেখ।আমরা তো ঘাবরে গিয়েছিলাম ।”
আহাদ খানের কথা শেষ হতেই, হিয়ান বসা থেকে দাড়িয়ে হাসি মুখে মেঘের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে
“কেমন আছিস?”
মেঘও এক হাত হিয়ানের পিঠে রেখে মৃদু হেসে বললো
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি ভাইয়া।তুমি কেমন আছো?আর তোমরা দেশে কবে আসলে? আমাকে জানাও নি কেনো”
হিয়ান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে ওর নাক টিপে বললো
“আমিও খুব ভালো আছি।আজকে সকালে দেশে ব্যাক করেছি।আর আমরা যে ফিরে আসছি, সেটা তোকে কেনো, কাউকে জানাইনি সবাইকে সারপ্রাইস দিয়েছি।”
মেঘ হিয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আহানের দিকে তাকালো। আহান ওর দিকেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঠোটের কোনে মুচকি হাসি। মেঘ দেখলো আহানের পাশে মিহির, আহির, ছাহীর ,অভি, আলিশা ,রিয়ান ,সাড়িকা , বসে আছে।সোফার অপর পাশে ওর দুই মামা, বাবাই আর পাপা বসে আছে।মহিলারা সবাই কিচেনে রান্নায় ব্যাস্ত।মেঘের বড় মামা মেঘকে উদ্যেশ্য করে বললো
“মেঘ মা এখানে আমাদের পাশে এসে বস।”
মেঘ ওনাদের পাশে বসতে যাবে তার আগেই সাঈফা মেঘের হাত ধরে বললো
“বড় আব্বু, আপি তোমাদের সাথে পড়ে কথা বলবে।এখন আমার সাথে যাবে ।আপির সাথে আমার ইম্পরটেন্ট কিছু কাজ আছে।”
ছাহীর বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে মেঘের আরেক হাত ধরে বললো
“আপি তোর সাথে কোথাও যাবে না।আপি এখন আমাদের সাথে বসে গল্প করবে।”
সবাই হাসছে আর ওদের দুই ভাই বোনের কান্ড দেখছে। মেঘ অসহায় মুখ করে দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।এবার সাড়িকা উঠে এসে মেঘের যেই হাত সাঈফা ধরেছে সেই হাত ধরে ছাহীর কে বললো
“ওই আপির হাত ছাড় বলছি। আপির সাথে আমাদের ইম্পরটেন্ট কাজ আছে।”
ছাহীর ব্যাঙ্গ করে বললো
“হ্যা তোরা যে কি ইম্পরটেন্ট কাজ করবি সেটা আমার ভালো করেই জানা আছে। এখন আপিকে উপরে নিয়ে গিয়ে, আপিকে দিয়ে তোদের এই পেচার মতো মুখে আটা ময়দা মাখিয়ে শেওরা গাছের পেত্নি সাজবি।”
ছাহীরের কথায় সবাই হা হা করে হেসে দিলো।সাঈফা রেগে গিয়ে বললো
“ছোট, ছোটদের মতো থাকবি একদম বড়দের কথায় নাক খলাবি না।”
ছাহীর বললো
“ওই আমাকে একদম ছোট বলবি না ওকে।আমি ক্লাস নাইনে পড়ি।আমার জন্য আমাদের স্কুলের কতো মেয়েরা পাগল জানিস।”
মেঘ ছাহীরের কথায় হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে বললো, আল্লাহ্ এই ছেলে বলে কি? এই টুকু পুচকে একটা ছেলে তার জন্য নাকি আবার মেয়েরা পাগল ভাবা যায়।ছাহীর আবার ব্যাঙ্গ করে বললো
“অবশ্য তোরা যতোই আটা ময়দা মাখিশ না কেনো। কোনো লাভ নেই । তোদের ফেইসের যা অবস্থা তাতে আটা ময়দায় কিছুই হবে না।প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে।নাহলে জীবনেও তোদের কেউ বিয়ে করবে না।”
সাঈফা সাড়িকা মেঘের হাত ছেড়ে দিয়ে রেগে চেচিয়ে দুজন এক সাথে বলে
“সাহীরের বাচ্চা”
ব্যাস শুরু হয়ে গেলো তিনজনের মারামারি।সাঈফা আর সাড়িকা মিলে ইচ্ছে মতো ছাহীরকে মারছে। আর বেচারা ছাহীর দুই বোনের মার খেয়ে নাজেহাল অবস্থা ।সবাই ওদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।আহির বসা থেকে উঠে এসে সাড়িকা সাঈফার থেকে ছাহীরকে ছাড়িয়ে সিরিয়াস মুখ করে বললো
“ছাহীর ভেরি ব্যাড ।এভাবে কেউ বলে ?সবসময় সত্যি কথা বলতে হয়না জানিস না।মাঝে মাঝে শেওরা গাছের পেত্নিকেও বিশ্ব সুন্দরি বলতে হয়।”
বলেই আহির আবার ফিক করে হেসে দিলো।সাঈফা আর সাড়িকা রাগে গজগজ করতে করতে উপড়ে ওদের রুমে চলে গেলো।পিছনে পিছনে আলিশা আর মেঘও গেলো।মেঘ আর আলিশা উপরে গিয়ে প্রথমে হিমার রুমে গেলো।হিমার সাথে কিছুক্ষন কথা বললো এরপর বেবিকে কোলে নিয়ে দুজনে অনেক গুলো পিক তুললো।হিমার থেকে জানতে পারলো হিমার চাচা শ্বশুর, চাচি শ্বাসুড়ি আর ফুপি শ্বাসুড়িরা আসবে।তারা এই বাড়িতে বিকালের দিকে আসবে ।তারপর রাতে এখানে থেকে কালকে সকালে হিমাকে আর বেবিকে নিয়ে হিমার শ্বসুর বাড়িতে চলে যাবে।মেঘ আর আলিশা আরো কিছুক্ষন হিমার সাথে কথা বলে।সাড়িকা আর সাঈফার রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো দুই বোন মুখ ভার করে বসে আছে।মেঘ আর আলিশা মিলে অনেক কষ্টে এটা ওটা বলে দুজনের রাগ ভাঙালো।মেঘ এক এক করে সাঈফা আর সাড়িকা কে সাজিয়ে দিলো।ওদের সাজাতে আলিশাও মেঘকে হেল্প করেছে।সাড়িকা সাঈফা দুজনেই একদম একরকম সেজেছে।ওরা বেবি পিংঙ্ক কালারের গাউন পড়েছে, সাথে ম্যাচিং জুয়েলারি।হালকা মেকাপ করেছে, চুলগুলো সামনে দিক থেকে পাফ করে পিছনে ছেড়ে দিয়েছে। সাড়িকার চুলগুলো একদম স্ট্রেইট করা আর সাঈফার চুলগুলো কারর্ল করা ।দুই বোনকে দেখলে সহজে কেউ চিনতে পারবে না কে কোনটা।আলিশা নীল কালারের একটা সালোয়ার সুট পড়েছে।সাথে নীল কালারের ম্যাচিং হিজাব।সাড়িকা সাঈফার সাজা শেষ হলে চারজন মিলে কিছু পিক তুললো। তারপর চারোজন নিচে চলে গেলো।
ওরা নিচে আসতেই মেঘের বড় মামি হন্তদন্ত হয়ে এসে ওদের সামনে দাড়িয়ে বললো
“আলিশা মা হিমার ফুপি সাসুড়িরা কিন্তু অনেক স্ট্রিক্ট। ওনারা যদি তোমাকে উল্টো পাল্টা কিছু বলে তাহলে দাতে দাত চেপে সহ্য করে নিও মা।শুধু আজকের দিনটার জন্য।”
আলিশা আশ্বস্ত করে বললো
“তুমি চিন্তা কোরো না মামনি।আমি জানি ওনারা কেমন। আমি এদিকের সবটা সামলে নেবো।”
মেঘের বড় মামি একটু মুচকি হেসে আলিশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল।তারপর সাড়িকা সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো
“তোরা দুইজন হিমার বিয়ের মতো এইবার যদি কিছু করিস তাহলে মার কিন্তু একটাও মাটিতে পড়বে না।”
বলেই ওনি কিচেনের দিকে চলে গেলেন।মেঘ সাড়িকা সাঈফাকে উদ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“হিমা আপির বিয়েতে তোরা কি করেছিলিস রে?”
সাড়িকা হাসতে হাসতে বললো
“বেশি কিছু করিনি, শুধু রিয়ান ভাইয়ার দুই ফুপির খাবারে পেট খারাপের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম।পাক্কা তিন দিন ওনারা ওয়াশরুমে গেছে আর আসছে।”
মেঘ অবাক হয়ে বললো
“কিন্তু কেনো?”
সাঈফা বিরক্তি নিয়ে বললো
“আর বলো না, হিমা আপির ফুপি শাসুরি দুজন একদম রক্ষসী রানি কটকটির ডুপ্লিকেট।সবসময় বলবে মেয়েরা এটা করতে পারবে না ওটা করতে পারবে না।বাড়ির বউরা একসাথে খেতে পারবে না।উচু গলায় কথা বলতে পারবে না।মুখের উপরে জবাব দিতে পারবে না। ব্লা ব্লা ব্লা।বিরক্তিকর দুইজন মহিলা ওনাদের দেখলেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।”
মেঘ বললো
“ছিঃ বনু গুরুজনদের সম্পর্কে এভাবে বলতে নেই।”
সাঈফা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো
“হুহ,,,গুরুজন না গরুজন”
_________________________
সন্ধ্যার দিকে মেহমানরা আসলেন।ওনারা প্রায় পনেরো ষোলো জন। মেহমানরা আসতেই সবাই ওনাদের আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন।আলিশাও বড়দের সাথে সাথে সমানে কাজ করে যাচ্ছে।মেঘ মাঝে মাঝে টুকিটাকি হেল্প করছে।আহান, হিয়ান,রিয়ান, মিহির, আহির, ছাহীর, অভি, সাড়িকা, সাঈফা ওরা সবাই মেহমানদের সাথে বসে গল্প করছে।হিমাও ওদের পাশে বেবিকে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।রিয়ানদের বাড়ি থেকে হিমার বেবির জন্য গোল্ড চেইন নিয়ে আসছে। সাথে আরো অনেক গিফট।মেঘ আর আলিশা মেহমানদের সাথে একবার দেখা করে কিচেনে ঢুকেছে তারপর আর বের হয়নি।মেঘ আহানের সামনে অনেক বার পড়েছে। কিন্তু একবারও কথা বলেনি ইগনোর করে চলে গেছে।সাভেন্টরা এসে ট্রেতে করে মেহমানদের জুস সেন্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে।নাস্তা খাওয়া শেষে, মেহমানদের ফ্রেস হওয়ার জন্য গেষ্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হলো।রাত দশটার দিকে বাড়ির পুরুশেরা সবাই একসাথে ডিনার করলো।বিপওি বাজলো মহিলারা ডিনার করার সময়।হিমার শসুর বাড়ি থেকে যে মহিলারা আসলেন তারা সবাই বসলেন।সাথে হিমা, মেঘ, সাড়িকা, সাঈফাও বসে পড়লো।মেঘের মা, মামনি ( আহানের মা ), আর দুই মামি মেহমাদের সার্ভ করছে।সাথে আলিশাও ওনাদের হেল্প করছে।মেঘের বড় মামি আলিশা কে উদ্যেশ্য করে বললো
“আলিশা মা তোমাকে আমাদের হেল্প করতে হবে না।তুমিও খেতে বসে পড়।”
আলিশারও অনেক খিদে পেয়েছে।তাই ও আর অমত না করে একটা মুচকি হাসি দিয়ে খেতে বসে পড়লো।তখনি রিয়ানের এক ফুপি মেঘের বড় মামিকে উদ্যেশ্য করে বললো
“আরে কি করছেন আপা? বাড়ির বউদের এতো আহ্লাদ দিবেন না। তাহলে মাথায় উঠে নাচবে।আর তাছাড়া এই মেয়ে এখনো এই বাড়ির বউ হয় নি।তার আগেই হবু শসুর বাড়িতে আসে।আজকাল কার মেয়েদের লজ্জা বলতে কোনো জিনিসই নেই।”
ওনার কথা শুনে ড্রইং রুমের সবাই আলিশার দিকে তাকালো।আলিশার ইচ্ছে করছে লজ্জায় মরে যেতে ।কিসের জন্য যে এখনে খেতে বসলো।আলিশা নিজেকে সামলে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে ঠোটে কৃএিম হাসি টেনে রিয়ানের ফুপিকে উদ্যেশ্য করে বললো
“সরি ফুপি ,আমার ভুল হয়ে গেছে।আপনারা খান আমি মামনিদের সাথে খাবো। আর আমার এখন খিদেও পায়নি।”
মোনা খান, মিরা খান, মেঘের দুই মামি ওনারা ভিষন রেগে গেছেন।কিন্তু মেহমান বলে কিছু বলতে পারছেন না।আহান, হিয়ান, রিয়ান, আহির, মিহির ওরা দাতে দাত চেপে নিজেদের রাগ কন্ট্রোল করছে।অভি মাথাটা নিচু করে রেখেছে ওর আদরের বোনকে সবার সামনে এভাবে বলায় ওর খুব খারাপ লাগছে।রিয়ানের মা চাচিরা মাথা নিচু করে রেখেছে ননদকে কিছু বলতেও পারছে না।ওনারা যানেন এখন যদি রিয়ানের ফুফিকে কিছু বলেন তাহলে ওনারা এখানে সিন ক্রিয়েট করবে। মেঘ তাকিয়ে দেখলো আলিশা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।মেঘ একবার একে একে সবার মুখের দিকে তাকালো।ভাবলো হয়তো কেউ ওই মহিলার কথার প্রতিবাদ করবে।কিন্তু না সবাই চুপচাপ আছে কেউ কিছুই বলছে না। মেঘর ভীষন রাগ লাগছে।সাথে আলিশা কতটা অপমানিত হয়েছে সেটা ভেবে কান্নাও আসছে। মেঘ বসা থেকে উঠে দাড়ালো তারপর শক্ত গলায় বললো
“আমার খিদে নেই।মাথায় প্রচন্ড পরিমান ব্যাথ্যা করছে।আই নিড রেষ্ট।”
মেঘের কথায় সবাই ওর দিকে অবাক চোখে তাকালো।আলিশা মেঘকে শাসনের সুরে বললো
“মেঘ চুপচাপ খেতে বসে পড়ো।সকালে ব্রেকফাস্ট করার পর থেকে তুমি সাড়াদিনে আর কিচ্ছু খাওনি।এখন কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।”
“বললাম তো খিদে নেই।”
বলেই মেঘ হনহন করে উপরে চলে গেলো।ওর পিছনে আলিশাও গেলো।সাড়িকাও বসা থেকে দাড়িয়ে বললো
আমার পেটে প্রচন্ড ব্যাথ্যা করছে। আমি পড়ে খাবো।
বলেই ও অন্য কাউকে
আর কিছু বলার সুজোগ না দিয়ে ।ও মেঘদের পিছনে পিছনে চলে গেলো।এবার সাঈফাও বসা থেকে উঠে দাড়ালো।সাঈফা কেও দাড়াতে দেখে, মোনা খান ওকে জিঙ্গেস করলো
“তোর কিসে প্রভলেম হচ্ছে পেটে নাকি মাথায়? ”
সাঈফা ঝাঝালো গলায় বললো
“আমার আত্মসম্মানে প্রভলেম হচ্ছে।”
তারপর রিয়ানের ফুপির দিকে একবার রাগি চোখে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো
“এখানে কিছু মানুষ আছে যাদের সাথে এক টেবিলে বসে খেতে আমার রুচিতে বাধে।”
বলেই সাঈফা ওখান থেকে হনহন করে সিড়ির দিকে হাটা দিলো।সিড়িতে উঠার আগে সোফায় বসে থাকা হিয়ানের দিকে একবার রাগি চোখে তাকালো।তারপর দৌড়ে উপরে চলে গেলো। ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘের বড় মামি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।তারপর আবার মেহমানদের সার্ভ করায় মনোযোগ দিলেন।বাকিরা সবাই যে যার মতো কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।আহানরা আরো কিছুক্ষন সবার সাথে কথা বললো।তারপর আহান, হিয়ান, অভি, মিহির, আহির, রিয়ান, ছাহীর ওরা সবাই উপরে সাঈফাদের রুমের সামনে চলে আসলো।এসে দেখলো ওদের রুমের দরজাটা হালকা করে চাপিয়ে রাখা।ভিতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ আসছে না।হিয়ান এক ধাক্কা দিয়ে দরজাটা খুলে ফেললো।দরজা খুলতেই যা দেখলো তাতে ওরা সবাই চমকে গেলো।স্তব্দ হয়ে দাড়িয়ে রইলো কিছুক্ষন। এমন কিছু দেখবে ভাবতেও পারেনি।আলিশা খাটের উপর গুটিশুটি মেরে সুয়ে ।মুখে বালিশ চেপে রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।মেঘ খাটের আরেক পাশে বসে খাটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।নিরবে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।সাড়িকা সাঈফা সোফার দুই মাথায় দুইজন বসে হাটুতে মুখ গুজে আছে। আলিশা তখন সবার সামনে নিজেকে সামলে নিলেও।উপরে এসে রিয়ানের ফুপির কথাগুলো মনে করে কেদে দিয়েছিলো।আলিশা ওর বাবা মায়ের ভাইয়ের সবার খুব আদরের।ওকে খাওয়া নিয়ে কখনও কেউ এভাবে বলেনি।শুধু খাওয়া কেনো, ওর কোনো কিছু নিয়েই ওর বাড়ির লোকেরা এভাবে বলে না।ও যখন যা খুশি তাই করে।আলিশা নিজেও যানে রিয়ানের ফুপিরা অভদ্র টাইপের মহিলা, তাই ওনাদের কথা গায় মাখার কোনো মানেই হয় না।কিন্তু তাও সবার মধ্যে বসে এভাবে খাবার নিয়ে কথা বলায় আলাশা ভীষন লজ্জা পেয়েছে।তার চেয়েও ওর বেশি কষ্ট হয়েছে হিয়ানের প্রতিবাদ না করে ,চুপ থাকার বিষয়টা। রিয়ানদের বাড়ি থেকে মেহমান আসবে সেটা শুনে আলিশা প্রথমে এখানে আসতেই চায়নি।কিন্তু হিয়ান চার বছর পর বাংলাদেশে এসেছে।এই জন্য নিজের মনের আর মস্তিষ্কের সাথে অনেক যুদ্ধ করে ওর প্রিয় মানুষটাকে এক পলক দেখার জন্য ছুটে এসেছে। ওর এখন রাগ, লজ্জা, অভিমান এই সব মিশে একাকার হয়ে, অশ্রু কনার মাধ্যমে চোখ থেকে গরিয়ে পড়ছে ।আলিশাকে এভাবে কাদতে দেখে সাড়িকা,সাঈফা ,মেঘও ওর সাথে এতোক্ষন কেদেছে।ওরা তিনজনই আলিশা কে খুব ভালোবাসে।একদম আপন বোনের মতো।আলিশাও ওদের তিনজনকে সবসময় ছোট বোনদের মতো আগলে রাখে।দরজা খোলার শব্দে সাড়িকা, সাঈফা হাটু থেকে মুখ তুলে দরজার দিকে তাকালো দেখলো আহানরা দাড়িয়ে আছে ।মেঘও চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে আহানদের দিকে তাকালো।আলিশার কোনো ভাবান্তর হলো না ।সে এখনো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদেই যাচ্ছে।আলিশাকে এভাবে কাদতে দেখে হিয়ানের কলিজাটা মোচর দিয়ে উঠলো।ও আর কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রুমে ঢুকে আলিশার হাত ধরে টেনে শোয়া থেকে বসিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মেঘরা বুঝলো এখানে থাকা আর ওদের ঠিক হবে না তাই রুমটা হালকা করে টেনে দিয়ে সবাই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আহান আর চোখে তাকিয়ে মেঘকে দেখতে লাগলো।কান্না করার জন্য ফর্সা গাল আর নাকের ডগা একদম লাল হয়ে গেছে।সাদা মনি ওয়ালা চোখ দুটো হাল্কা ফোলা।অতিরিক্ত কান্নার জন্য বারবার হেচকি দেওয়ায়,গোলাপি ঠোটটা কেপে কেপে উঠছে।চোখ মুখ থেকে যেনো মায়া উপচে পড়ছে তার এই পিচ্চি মায়াপরীর। কোনো মেয়েকে কাদলেও যে এতটা সুন্দর লাগতে পারে সেটা জানা ছিলো না আহানের। ওরা সবাই সাঈফাদের রুম থেকে বের হয়ে হিয়ানের রুমে আসলো। কারো মুখে কোনো কথা নেই সবাই চুপচাপ। মোনা খানের ডাকে আহান সহ সবাই দরজার দিকে তাকালো।দেখলো মোনা খান আর মিরা রহমান রুমের ভিতরে এসেছেন।মোনা খান ব্যাস্ত গলায় বললেন
“মেঘ, সাড়িকা, সাঈফা, খাবি চল।মেহমানদের খাওয়া হয়ে গেছে। এবার তোরাও খেয়ে নে। আলিশা কোথায় ওকেও ডেকে নিয়ে আয়।”
মেঘ কাঠ কাঠ গলায় মোনা খানকে উদ্যেশ্য করে বললো
“আমি খাবো না মামনি। আমার খিদে নেই।আমার খুব ঘুম পেয়েছে কোন রুমে ঘুমাবো সেটা বলো।”
মোনা খান আদুরে গলায় বললো
“এরকম করে না আম্মুটা ।রাতে না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাড়াতাড়ি খেতে চলো।”
মেঘ মাথা নিচু করে বললো
“আমি ঘুমাবো।”
মোনা খান একটা হতাশ নিশ্বাস ছাড়লেন।ওনি জানেন মেঘ যখন একবার বলেছে খাবে না তখন হাজার বার সাধলেও খাবে না।তাই ওনি সাড়িকা সাঈফার দিকে তাকিয়ে বললেন
“তোরও কি ডিনার করবি না?”
সাড়িকা সাঈফা দুইজনেই ডানে বামে মাথা নাড়ালো ।যার অর্থ না। মোনা খান ওদের কিছু বলতে যাবে তার আগেই আহান মোনা খান কে উদ্যেশ্য করে বললো
“থাক মা, ওরা যখন খেতে চাইছে না তখন আর জোর কোরো না। আমরা বাড়িতে যাওয়ার সময় রেষ্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাবো।ওরা বাড়িতে গিয়ে খেয়ে নিবে।”
মেঘ ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
আমরা কি কোথাও যাচ্ছি ?
মোনা খান বললো
“হ্যা। তুই, আহান, মিহির ,আহির, সাড়িকা ,সাঈফা ,ছাহীর, হিয়ান ,আলিশা ,অভি তোরা সবাই এখন আমাদের বাড়িতে যাবি। এখানে আজকে অনেক লোক তোদের থাকতে কষ্ট হবে।শুধু তোদের এখানে থেকে ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই।”
মেঘ আর কিছুই বললো না ।সত্যি বলতে ওরও এখানে থাকতে প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে।মনে হচ্ছে এখান থেকে চলে গেলেই বেচে যাবে। মোনা খান আর মিরা রহমান আর কিছু না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।আসলে আহানদের বাড়িতে যাওয়ার প্লানটা আহানের ।বিকজ মেহমানদের সাথে রিয়ানের কয়েকটা কাজিনও আসছে।তাদের মধ্যে আহানদের বয়সি কয়েকটা ছেলেও আছে।তাই এই বাড়িতে পর্যাপ্ত রুম থাকা সর্তেও, আহান ওর মাকে এটা ওটা বলে বুঝিয়ে মেঘদের নিয়ে ওদের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।কিছুক্ষন পর ওরা সবাই আহানদের বাড়ির উদ্যেশে রওনা দেয়। গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে ড্রাইভিং করছে অাহান ওর পাশের সিটে বসে আছে অভি।ওদের পিছনের সিটে হিয়ানের বুকে মুখ গুজে চুপচাপ বসে আছে আলিশা।আর ছাহীর ওদের পাশের সিটে বসে আহানের ফোন দিয়ে গেমস খেলছে।সবার পিছনের সিটে বসেছে মেঘ, সাড়িকা, সাঈফা।আহীর আর মিহির বাইক নিয়ে অনেক আগেই বেড়িয়েছে।ওরা দুজন আগে রেষ্টুরেন্টে গিয়ে মেঘদের জন্য খাবার কিনবে, তারপর আহানদের বাড়িতে যাবে।
#ভালোবাসার_অনূভুতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ_12
খান ম্যানসন,,,,,
মেঘ হটাৎই ঘুমের মাঝে অনুভব করলো ওর ভীষন অসস্তী লাগছে,,,শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ,,,,ওর মনে হচ্ছে কেউ ওর গলাটা জোড়ে চেপে ধরেছে।মেঘ ধরফড়িয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে পড়লো। ও এক হাত নিজের বুকে রেখে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে,,এসির মধ্যেও শরীর দরদর করে ঘামছে । মেঘ অনুভব করলো ওর পেটে ভীষন ব্যাথ্যা করছে। সাড়া শরীর কেমন কাপছে,,,,গলাটা শুকিয়ে গেছে। হটাৎ এমন শরীর খারাপ হওয়ার কোনো কারনই বুঝতে পারলো না । ভীষন পানির পিপাসা পেয়েছে ওর, কিন্তু বিছানা থেকে নামার শক্তিটুকুও পাচ্ছে না ।পাশে তাকিয়ে দেখলো আলিশা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে একবার ভাবলো আলিশাকে ডেকে ঘুম থেকে তুলবে, আবার পরক্ষনেই ভাবলো না থাক সাড়াদিনে আপ্পির উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে এখন আর ওকে ডাকা ঠিক হবে না।সাড়িকা সাঈফাও পাশের রুমে দরজা আটকে ঘুমাচ্ছে, এতো রাতে ওদের ডাকাও ঠিক হবে না ।রুমের মধ্যে অনেক খুজলো কিন্তু কোথাও কোনো পানির ছিটেফোটাও নেই।মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে গায়ে ওরনাটা কোনোরকম জড়িয়ে নিচের দিকে রওনা দিলো। সাড়া বাড়িতে লাল নীল সবুজ রঙের ডিম লাইট জ্বলছে,,,, ডিম লাইটের মৃদ্যু আলোতে পুরো বাড়ি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।মেঘ গুটিগুটি পায়ে সিড়ির কাছে আসলো,,,, সিড়ি দিয়ে নামতে যাবে তখনি দেখলো ড্রইং রুমের আলো জ্বলছে।ও ভালো করে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলো ড্রইংরুমের সোফায় বসে আহান, আহির ,আর মিহির ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করছে।তিনজনের হাতে তিনটে ল্যাপটপ আর ওদের সামনের টেবিলে একগাদা ফাইল রাখা। আহান সিড়িআস মুখ করে নিজের ল্যাপটপের স্কিনের দিকে তাকিয়ে মিহির আর আহির কিছু একটা বুঝিয়ে দিচ্ছে।আর ওরা দুজন খুব মনোযোগ দিয়ে সেটা শুনছে আর নিজেদের হাতে থাকা ল্যাপটপে টাইপ করছে।দেখেই ভোঝা যাচ্ছে অফিসের কোনো জরুরি প্রজেক্ট রেডি করছে।মেঘ ওদের দিকে বিরক্তি কর চোখে তাকিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে বললো
আল্লাহ্ তুমি এই মানুষ রুপী আজব প্রানিগুলো কে পৃথিবীতে কেনো পাঠালে? এই মহাবিশ্বে এতো গুলো গ্রহ উপগ্রহ আছে সেখানে পাঠাতে পাড়লে না?বিশেষ করে এই আহান খানেকে এই ব্যাট্যা আস্ত একটা মানুষরূপী এলিঅন,,,একে তো এলিঅনদের সাথেই ভালো মানায়। আমি তো নিশ্চিত এর যদি ডি.এন.এ. টেস্ট করা হয় তাহলে 99.9% এলিঅনদের সাথে মিলে যাবে।আরে ভাই কোথায় চার বছর পর নিজের দেশে এসেছিস টানা একমাস খাবি ঘুমাবি আর বিশ্রাম নিবি। তা না করে এতো রাত জেগে ওই খচ্চর দুটোকে কাজ গেলাচ্ছে এই দুটোও বসে বসে গিলছে। যএসব কাজ খোড়ের দল কোথাকার। এরা এতো কাজ কিভাবে করে আল্লাহ জানে ।তারপর আবার মনে মনে নিজেকে হাজারটা বকা দিয়ে বললো ধ্যাত তেরি আমি এসব কেনো ভাবছি? ওরা গোল্লায় যাক তাতে আমার বাপের কি হুহ।
মেঘ কথা গুলো ভাবতে ভাবতে ডাইনিংয়ের দিকে যেতে লাগলো।আহান, মিহির, আহির কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ল্যাপটপ থেকে চোখ সড়িয়ে সামনের দিকে তাকালো, দেখলো মেঘ সিড়ি দিয়ে নেমে ডাইনিংরুমের দিকে যাচ্ছে। ওরা ভাবলো মেঘ হয়তো পানি খেতে নিচে এসেছে তাই মেঘকে কিছু জিঙ্গেস না করে আবার নিজেদের আজে মনোযোগ দিলো। এই বাসার নিচতলার একদম মাঝখানে উপড়ে উঠার সিড়ি।তার একপাশে বিশাল বড় ড্রয়িংরুম আর তারপাশে একটা মিডিয়াম একটা ষ্টোররুম আর দুইটা বেডরুম।আর সিড়ির আরেক পাশে বেশ অনেকটা জায়গা নিয়ে একটা ডাইনিং স্পেজ তার পাশে একটা বড় কিচেন আর দুইটা ওয়াশরুম আর একটা বেডরুম।ডাইনিং রুমটা আর ড্রইং রুমটা একদম ওপেন এস্পেজে।ড্রইংরুম থেকে স্পষ্টো ডাইনিং রুমটা দেখা যায়।মেঘ ডাইনিংরুমে ডুকে ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানির একটা বোতল নিয়ে চেয়ারে বসে বোতলের ঢাকনাটা খুলে ঢকঢক করে পুড়ো পানিটা শেষ করে ফেললো।কিন্তু খালি পেটে এতো খানি পানি খেয়ে গা গুলিয়ে উঠলো কেমন বমি বমি পাচ্ছে।তাই বমি আটকানোর জন্য কিছুক্ষন থম মেরে বসে রইলো। ওর সাড়াদিনে কিছুই খাওয়া হয়নি, সকালে ব্রেকফাস্টে শুধু দুইটা ব্রেড আর একটু ফ্রুট জ্যাম খেয়েছিলো।রাতে এখানে আসার পর আহির আর মিহির রেষ্টুরেন্ট থেকে চিকেন বিরিয়ানি এনেছিলো কারন চিকেন বিরিয়ানি আলিশা, মেঘ ,সাড়িকা , সাঈফা ওদের চারজনেরই খুব ফেবারিট। কিন্তু মেঘের মন খারাপ থাকায় ও রাতে কিছুই খায়নি ।সবাই ওকে অনেকবার খেতে বলেছে কিন্তু ও না খেয়েই উপরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। মেঘ অনুভব করলো পানি খাওয়ার পর ওর পেটে ব্যাথ্যাটা আগের থেকে আরো বেরে গেছে।ও ভাবলো হয়তো এতো খানি ঠাণ্ডা পানি খেয়েছে তাই পেটে ব্যাথ্যাটা বেড়ে গেছে,,এখন একটু নরমাল পানি খেলেই সবটা ঠিক হয়ে যাবে।তাই ও নিজের হাত দিয়ে পেটটা শক্ত করে চেপে ধরে টেবিলের উপরে থাকা নরমাল পানির জগ থেকে একগ্লাস পানি ঢেলে খেয়ে নিলো।কিন্তু পেটের ব্যাথ্যাটা তো কমলোই না উল্টে ভীষন বমি পাচ্ছে।মেঘ একহাতে পেট চেপে ধরে আরেক হাত নিজের মুখে রেখে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।আহান, আহির , মিহির এতোক্ষন খুব মনোযোগ দিয়ে নিজেদের কাজ করছিলো,মেঘের কান্নার শব্দে তিনজনই চমকে ডাইনিংএর দিকে তাকালো।দেখলো মেঘ এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে।ওরা তিনজনই বসা থেকে উঠে তড়িঘড়ি করে ডাইনিংয়ের দিকে আসতে লাগলো। মেঘ ওভাবেই পেট আর মুখ চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। আহান, আহির, মিহির মেঘের পিছন পিছন গিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাড়ালো। ওয়াশরুমের দরজাটা একদম খোলা।মেঘ একহাতে পেট চেপে ধরে বমি করছে ,, পেটে কোনো খাবার না থাকায় শুধু মুখ দিয়ে শুধু পানি পড়ছে,,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নাও করছে। আহান দ্রুত নিজের ট্রাউজারটা উপরে ফোল্ড করে ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকলো।একহাত দিয়ে মেঘের কোমর ধরে আরেকহাত কপালে রাখলো।বমি করতে করতে মেঘ একসময় দূর্বল হয়ে আহানের গায়ে ঢলে পড়লো।আহানও একহাত দিয়ে মেঘের কোমর শক্ত করে ধরে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে দাড় করালো । তারপর ট্যাপ ছেড়ে মেঘের চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে ওকে কোলো তুলে বাইরে বের হয়ে আসলো।ড্রইংরুমে এসে ওকে খুব সাবধানে সোফায় বসিয়ে নিজেও ওর পাশে বসলো।ওদের পিছনে পিছনে আহির আর মিহির আসলো,, তিনজনের চোখে মুখেই স্পষ্ট চিন্তা ও ভয়ের ছাপ ।
আহীর মেঘের আরেক পাশে বসে ওর গালে কপালে হাত ছোয়ালো তারপর চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো
“ওর গায়ে জ্বর উঠলে এভাবে হটাৎ করে বমি করে। কিন্তু এখন শরীরের টেম্পারেচার তো নরমালই আছে,,মনে তো হচ্ছে না ওর গায়ে জ্বর উঠেছে তাহলে এভাবে হটাৎ বমি হওয়ার কারন কি?”
মিহির রাগি গলায় বললো
“জ্বরের জন্য বমিটা হয়নি, রাতে না খাওয়ার কারনে হচ্ছে। ”
মেঘ সোফার সাথে হেলান দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে ,,,এই মূহুর্তে বড্ড ক্লান্ত ও,,,খুব খিদেও পেয়েছে। কিন্তু মুখ ফুটে যে কিছু খেতে চাইবে শরীরে সেই শক্তিটুকুও নেই।পেটে এখনো হালকা হালকা ব্যাথ্যা করছে তাই এখনো একহাতে পেট চেপে ধরে রেখেছে।আহান মেঘের পাশে বসে একদম শান্ত ভঙ্গিতে মেঘকে পর্যবেক্ষণ করছে। একধ্যানে শুধু মেঘের দূর্বল,ক্লান্ত ,বিধ্বস্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা যেনো আস্ত একটা মায়াপরী,,একবার কেউ এর দিকে তাকালে সহজে চোখ ফেরাতেই পারবে না।চোখ, নাক, ঠোট ,গাল সব কিছুই আল্লাহ্ খুব যত্ন করে অনেক সময় নিয়ে আর্ট করে হয়তো নিজের হাতে বানিয়েছেন। মাঝে মাঝে আহানের এটা ভেবে হাসি পায় এই মেয়েটাকে কেউ একজন পছন্দ হয়নি বলে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো।এটা নিতান্তই একটা হাস্যকর ব্যাপার ছাড়া কিছুই না । অবশ্য আল্লাহ্ যা করেন সবসময় মানুষের ভালোর জন্যই করেন।যদি আবিরের সাথে মেঘের বিয়েটা না ভাঙতো তাহলে ও মেঘকে কিভাবে পেতো । ঠিক এই একটা কারনের জন্য আবির আর জেরিন মেঘের সাথে এতো অন্যায় করার পরও বাচিয়ে রেখেছে। নয়তো এতোদিনে ওই বিশ্বাস ঘাতক দুইটার কি করতো সেটা ও নিজেও জানে না।প্রায় চার বছর পর আহান আজকে মেঘকে দেখলো। এই চার বছরে আহান একবারের জন্যও মেঘের চেহারা দেখেনি, আর না শুনেছে ওর কন্ঠস্বর। ,,, হিমা, হিয়ান, অভি, রিয়ান ওদের সাথে প্রায়ই মেঘ ভিডিও কলে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলতো।কিন্তু আহানের সাথে ভিডিও কল তো দূরের কথা কখনো নরমাল ফোন কল অবদি দেয়নি ইনফ্যাক্ট একটা মেসেজ পযর্ন্ত কখনো করেনি। আহানের এই বিষয়টা খুব খারাপ লাগলেও ওর কিছুই করার ছিলো না,, সবাই তো ওকে এই একটা শর্তই দিয়েছিলো যে ও মেঘকে তখনই পাবে যখন মেঘের থেকে দূরে থাকবে। এখন কেউ ওর থেকে মেঘকে কেড়ে নিতে পারবে না ,,ওর মেঘ পড়িকে ও নিজের করেই ছাড়বে সেটা কারো ভালো লাগুক বা না লাগুক। এইসবই ভাবছিলো তখনই মেঘের রাতে না খাওয়ার কথাটা শুনে ওর মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
আহান রাগি গলায় মেঘকে জিঙ্গেস করলো
“তুমি রাতে কিছু খাওনি??”
মেঘ মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে ডানে বামে না সূচক মাথা নাড়ালো। আহান এবার ভীষন রেগে গেলো ও চেচিয়ে বললো
“ওয়াও সেটা আবার আপনি মাথা নেড়ে বলছেন? তারমানে আপনি আজকে সারাদিন কিছুই খান নি? ইচ্ছেতো করছে চড়িয়ে তোর গালটা লাল করে দেই।আরে নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে, তুই কোথাকার ছাগল রে। তুই জানিস না টাইম টু টাইম না খেলে তোর ব্লাড প্রেসার লো হয়ে যায়,,অসুস্থ হয়ে পড়িস ।”
আহানকে এভাবে রেগে কথা বলতে দেখে মেঘ ভিষন ভয় পেয়ে যায় ।ও ভয়ে আহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আহির নিজের একহাত মেঘের মাথায় রেখে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আহানকে উদ্যেশ্য করে বলে
“প্লিজ ব্রো এবার থামো মেঘ ভয় পাচ্ছে!”
আহান তাকিয়ে দেখলো মেঘ গুটিশুটি হয়ে আহীরকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মুখ গুজে আছে। আহান ভাবলো এখন ওকে বেশি কিছু বলা ঠিক হবে না। একে তো অসুস্থ তার উপর আবার এই মেয়ে বেশি ভয় পেলেই অঙ্গান হয়ে যায়,,, এখন ভয় পেয়ে অঙ্গান হয়ে গেলে একটা সাইড এফেক্ট হতে পারে । আহান জোড়ে জোড়ে দুইটা লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের রাগটা কন্টোর্ল করার চেষ্টা করলো। তারপর বসা থেকে উঠে গিয়ে একটা ফাষ্ট-এইড বক্স নিয়ে ফিরে এলো,,,বক্স খুলে একটু নাড়াচাড়া করে কয়েকটা ঔষধের পাতা বের করলো,,,সেখান থেকে দুইটা ঔষধ ভেঙে মিহিরের হাতে দিয়ে বললো
“এই দুইটা এক্ষুনি ওকে খায়িয়ে দে,, এতে বমি আর পেটে ব্যাথাটা কমে যাবে যাবে। আর বাকিগুলো খাবার খাওয়ার পড়।”
মিহির ডাইনিং টেবিলে থেকে এক গ্লাস পানি এনে মেঘের সামনে ঔষধ আর পানির গ্লাস ধরে বললো
“চুপচাপ ভালো মেয়ের মতো ঔষধটা খেয়ে নে, একদম ঘাড় ত্যাড়ামি করবি না ।”
মেঘ আহীরের বুক থেকে মাথাটা উঠিয়ে একবার ঔষধের দিকে তাকালো।তারপর মিহিরের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে, কাদো কাদো গলায় বললো
“আমি ঔষধ খাবো না,,,দেখেই কেমন গা টা গুলিয়ে উঠছে খেলে নিশ্চিত আবার বমি পাবে!”
আহীর আদুরে গলায় বললো
“সোনা বনুটা আমার প্লিজ ঔষধ টা খেয়ে নে,, নাহলে আবার শরীরটা খারাপ করবে।”
মেঘ বিরক্তি নিয়ে ভাঙা গলায় বললো
“তোমরা জানো না, আমার ঔষধ খেতে একদম ভালো লাগে না। আর তাছাড়া আহান ভাইয়া তো ডক্টর না, ইনফ্যাক্ট ওনার ঔষধ সম্পর্কেও তো মনে হয় না কোনো ধারনা আছে! তাহলে আমি ওনার দেওয়া ঔষধ কেনো খাবো? ওই ঔষধ গুলো খেলে যদি আমার শরীর আরো খারাপ হয়ে যায়।”
মেঘের কথা শুনে আহীর আর মিহির আর চোখে আহানের দিকে তাকালো।আহান চোখ ছোট ছোট করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে,,
মিহির মৃদু ধমক দিয়ে বললো
“শাট আপ! উল্টোপাল্টা কথা না বলে ঔষধ টা খেয়ে নে।”
মেঘ জেদ্দি গলায় বললো
“বললাম না খাবো না,,একবার যখন বলেছি খাবো না তারমানে কিছুতেই খাবো না।”
আহান গিয়ে মিহিরের হাত থেকে ঔষধ নিয়ে নিলো।এরপর মেঘের পাশে বসে একহাত দিয়ে মেঘের গাল জোড়ে চেপে ধরে ঔষধ গুলো মুখে পুরে দিয়ে পানি খাইয়ে ওর মুখটা চেপে ধরলো। মেঘ আর কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঔষধটা খিলে নিলো।ঔষধ টা খায়িয়ে আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে কিচেনে চলে গেলো । আর মেঘ রাগি চোখে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মনে মনে একগাদা বকা দিলো।কিছুক্ষন পর আহান কিচেন থেকে খাবার গরম করে প্লেটে করে নিয়ে এসে আহীরের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ,,সোফার একপাশে বসে ফোন স্ক্রল করতে লাগলো। আহীর ভাত মেখে মেঘেকে খায়িয়ে দিলো ।মেঘও চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো সবটা খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে ঔষধটাও খেয়ে নিলো এবার আর ওকে জোড় করতে হয়নি আহানের ভয়ে নিজের ইচ্ছেতেই খেয়ে নিয়েছে। খাওয়া শেষে মিহির মেঘকে কোলে করে রুমে শুয়িয়ে দিয়ে নিচে এসে আবার তিনজন নিজেদের কাজে মনোযোগ দিলো।
_________________________
সকালে সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করলো। মেঘ এখন একদম সুস্থ হয়ে গেছে,,পেটে ব্যাথ্যা বমি বমি ভাব উইকনেস কিছুই নেই। ঔষধ গুলো দারুন কাজ দিয়েছে,, মনে মনে আহানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকলেও মুখে সেটা প্রকাশ করলো না । ব্রেকফাস্ট করার পর মিহির ,আহির আর আহান অফিসে চলে গেলো। বাকিরা সবাই হিয়ানদের বাড়িতে আসলো ।মেঘদের সাড়াদিনটা অনেক হৈ হুল্লোর আর মজায় কাটলো । দুপুরে লাঞ্চ করার পর হিমাকে নিয়ে ওর শশুর বাড়ির লোকেরা সবাই চলে গেলো।ওনারা যাওয়ার পর বাকিরাও সবাই আস্তে আস্তে নিজেদের বাড়ির উদ্দ্যেশে বেড়িয়ে পড়লো। আহান , আহীর , মিহির ওদেরকে দুপুরে হিয়ান ফোন করেছিলো লাঞ্চে খেতে আসার জন্য ।কিন্তু ওরা জানালো ওরা আসতে পারবে না একটা ইম্পরটেন্ট প্রজেক্ট নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত আছে ।
_________________________
রাতে ঘুমানোর জন্য মেঘ নিজের বিছানা ঠিক করছিলো, মিহির এসে দরজায় হালকা নক করে বললো
“আসবো??”
মেঘ বালিশ ঠিক করতে করতে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো
“হ্যা আসো!”
“তোর শরীরের অবস্থা এখন কেমন? সাড়াদিনে একবারও পেটে ব্যাথ্যা, বমি হয়েছে?”
মেঘ কাজ শেষ করে স্থির হয়ে বসে বললো
“না,,,,নাউ আই অ্যাম অ্যাপসুলোটলি ফিট অ্যান্ড ফাইন।”
মেঘের কথা বলতে বলতে চোখ যায় মিহিরের হাতে থাকা একটি মিডিঅ্যাম সাইজের লাগেজের উপর।
মেঘ ব্রু কুচকে জিঙ্গেস করে
“ভাইয়া এতো রাতে তুই ল্যাগেজ নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস?”
“আমি কোথাও যাচ্ছি না, এটা তোর জন্য আহান ভাইয়া ইউ.কে. থেকে নিয়ে আসছে।”
মেঘ কিছুক্ষন চোখ বড় বড় করে ল্যাগেজটার দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর হি হি করে হেসে দিলো।হাসতে হাসতে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“যেমন আহান ভাইয়া তেমন ওনার গিফট ‘গাজাখোড় মার্কা’,, মানুষ বিদেশ থেকে কতো কিছু নিয়ে আসে আর এনি কিনা আমার জন্য ল্যাগেজ নিয়ে এসেছে। হিমা আপিরা যখন বাংলাদেশে এসেছিলো তখন সবার জন্য কতো জুয়েলারি, ডিজাইনস ড্রেস ,মেকাপস , চকলেট এনেছিলো। আহান ভাইয়াও আপিদের কাছে সবার জন্য অনেক কিছু পাঠিয়ে ছিলেন। আর আমার জন্য কি পাঠিয়ে ছিলেন?? “একটা ল্যাপটপ” এমন একটা ল্যাপটপ যেটার আহান খানের মতোই মাথার তারছেড়া। গত ছয়মাস ধরে এতো চেষ্টা করেও ঠিকঠাক মতো ফাংসন গুলোই বুঝতে পারলাম না। আর এখন পাঠিয়েছেন এই ল্যাগেজ।”
মিহির ধমক দিয়ে বললো
“ওই শাকচুন্নি,, ল্যাপটপের জন্য তো তুইই কান্নাকাটি করছিলি!’ আম্মু’ আব্বুকে আর আমাকে ল্যাপটপ কিনে দিতে মানা করেছিলো বিধায়,,তুই একসপ্তাহ ভার্ষিটিতে যাস নি,,ইনফ্যাক্ট রুম থেকেই বের হসনি। তার জন্যই তো আহান ভাইয়া আম্মু কে ফোনে অনেক বুঝিয়ে তোর জন্য ল্যাপটপ চালানোর পারমিশন নিয়েছে।”
মেঘ মৃদু রাগ দেখিয়ে বললো
“তো ওনাকে ইউ.কে. থেকে ল্যাপটপ পাঠাতে কে বলেছে? আমি তো বাবাই কে বলেছিলাম বাংলাদেশ থেকে কিনে দিতে,, যেগুলো আমি খুব ভালোভাবে চালাতে পাড়ি। আর এটা দুই একটা ফাংসন ছাড়া ঠিকঠাক মতো কিছুই বুঝতে পাড়ি না।”
“ওটা একটা লেটেস্ট মডেলের ল্যাপটপ তাই ফাংসন গুলো একটু অন্য রকমের । ছাড় তোকে বলে লাভ নেই।তোর মতো গরু ভালো জিনিস চিনবেও না আর চালাতেও পারবে না। ”
কথাটা বলেই মিহির হাতে থাকা ল্যাগেজ টা বেডের উপর উঠিয়ে ওটার চেইনটা খুলে ফেললো। মেঘ ল্যাগেজের তাকিয়েই ওর মুখটা হা হয়ে গেলো।চোখ বড় বড় করে একবার ল্যাগেজের দিকে তো একবার মিহিরের দিকে তাকাচ্ছে। কারন ল্যাগেজটা ভর্তি গিফটস সবগুলো র্যাপিং পেপার দিয়ে র্যাপ করা। মেঘ ভীষন এক্সাইটেড হয়ে বেডের উপর বসে একটা একটা করে র্যাপিং পেপার খুলে দেখতে লাগলো।
মিহিরও বেডের উপর বসে ঠোটে মুচকি হাসির রেখা টেনে বোনের কান্ড দেখতে লাগলো । মেঘ র্যাপিং পেপার খুলে প্রথমেই দেখতে পেলো ছয়টা ছয় রকমের চকলেটের বক্স । তার পর পেলো ছোট্ট পুতুল ওয়ালা কয়েকটা চাবির রিং। এরপর পেলো কয়েকটা শপিজ, দুইজা মিনি সাইজের টেডিবিয়ার, একটা মেকআপ কিট, দুইটা পারফিউম । পারফিউম দুইটার উপরের অংশটা চৌকো বক্সের মতো, আর কাঠের তৈরি। তার উপরে সোনালী সেড দিয়ে খোদাই করে লেখা “মেঘ পড়ি” । মেঘ লেখাটার দিকে কিছুক্ষন অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে নামটা আওরাতে লাগলো “মেঘ পড়ি”। মেঘ লেখাটার উপরে একটা চুমু খেয়ে পারফিউম টা আলাদা করে একপাশে রেখে দিলো। সবার শেষের র্যাপিং পেপার মোড়ানো বক্সটা খুলতেই ওর চোখে পড়লো একটা সেলফ ফোন। মেঘ ব্রু কুচকে মিহির কে উদ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“আমি নিউ ফোন দিয়ে কি করবো ??আমার তো ফোন আছে…”
মিহির বিদ্রুপের স্বরে বললো
“ওমা তাইই তোর ফোন আছে ?? আমি তো ভুলেই গিয়ে ছিলাম! তা তোর কোন ফোনটা যেনো? যেটা তোকে আব্বু চার বছর আগে কিনে দিয়েছিলো সেইটা? ”
মেঘ চোখ ছোট ছোট করে মিহিরের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ও কি বলতে চাইছে। মিহির বললো
“ওটাকে ফোন বলে না ঝুনঝুনি বলে।ওটা যদি ফেরিওয়ালাদের ফ্রিতেও দিস না তাও ওরা নেবে না। এই চার বছরে ওটা কমপক্ষে চল্লিশটা আছাড় খাইছে , চার বার পানিতে পড়ে গেছে আর কতোবার যে তুই ওইটাকে সাড়িয়েছিস সেটা আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ জানে না। তোর ওই ফোন নামের কলঙ্কটা দিয়ে সেদিন আহীর কে কল দিয়েছিলাম ,,কল ঢুকতে ঢুকতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম যে কলটা দিয়েছি কিসের জন্য। ওটা যে স্পিডে চলে আমার মনে হয় তার থেকে ঠেলাগাড়িও জোড়ে চলে। ওই ঠেলাগাড়ি মার্কা ফোন দিয়ে করো কাছে কল দেওয়ার চেয়ে কবুতর দিয়ে চিঠি পাঠানো ভালো।”
মেঘ রেগে গিয়ে বললো
“বাই এনি চান্স,, তুই কি আমার ফোনটা কে অপমান করার চেষ্টা করছিস??”
#চলবে…..
#চলবে…..