নিষিদ্ধ সে পর্ব ১২+১৩(শেষ)

#নিষিদ্ধ_সে

(১২)-(১৩)শেষ পর্ব
।।
মধ্যরাত্রি চোখ দুটো মেলে বাসার সিলিং এর দিকে চেয়ে আছি। রিধিতা আপু পাশে নেই। হয়তো ভাইয়ার সাথে প্রেমালাপনে ব্যস্ত। সায়র ভাইকে নিয়ে মগজের এক একটা নিউরন যুদ্ধ বাজিয়ে দিয়েছে মনে হয়। একচিন্তা থেকে আরেক চিন্তায় পদার্পণ করছি তবু চিন্তার রেশ কাটছে না। সারাদিনের সায়র ভাইয়ের সাথে করা খুনসুটি ঝগড়াগুলো চোখের পাতায় ভাসছে। কিছুক্ষন পরই আবার নির্মা আপুর চেহেরা ভেসে উঠে অপরাধবোধ জাগ্রত করছে মনে। এতোদিনে এটা দেখেছি আপু সায়র ভাইয়ের প্রতি বেশ পজেসিভ থাকলেও ইগনোর করে বেশি। সম্পর্কটা ওদের কেমন নদীতে ভাসমান ভেলার মতো। ভেলার কাঠামো ঠিক রেখে তৈরি করলে ভাসবে নয়তো ডুবে যাবে একসময়। নির্মা আপু রিলেশনে হিট দিচ্ছে না। আরেকদিকে মনে হচ্ছে সায়র ভাইও হাল ছেড়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু আর শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য আমি এখন ওদের বিচ্ছেদ চাইছি। খারাপ আমি বড্ড! যে আপু আমার প্রতি এতো ভালো ব্যবহার করে তারই বিচ্ছেদ চাইছি। স্মৃতির পাতা বন্ধ করার প্রচেষ্টায় আস্তে আস্তে ঘুমে তলিয়ে যেতে লাগলাম। আলোর ঝলকানি তীব্র হয়ে চোখে পরায় চোখ মেলে তাকালাম। আম্মু রুমের পর্দা টেনে দিচ্ছে। উঠে বসলাম চোখে হাত দিয়ে।

“আম্মু আজকে সকাল সকাল এতো কড়া রোদ উঠেছে যে বাইরে?”

“কয়টা বাজে দেখে নে!”

অলসহাতে বালিশের পাশে হাতড়ালাম। ফোন হাতে এসে বারি খেতে তাকিয়ে দেখি বারোটা বাজে! আম্মুর দিকে সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালাম। আম্মু স্বাভাবিক ভঙ্গিতে আমার দিকে চেয়ে বিছানা থেকে উঠতে বলে চাদর ঝেরে ঠিক করতে লাগলো। এখন ঘটে এলো আজকে সায়রির বিয়ে আর মা কেন আমাকে আগে আগে ডাকেনি।

“আম্মু আগে আগে ডাকোনি কেন? আজকে না সায়রির বিয়ে!”

আম্মু স্বাভাবিক চেহারায় আমার দিকে তাকালো, “কারন ঘুম থেকে উঠেই তুই বিয়ে বাড়িতে দৌড় দিবি। সায়রির চাচির কথাগুলো কালকে শুনিসনি? বেয়াদবের মতো তো কিছু কথা শুনিয়ে দিলি! আজকে গেলে তোর হাড় ভেঙে দেওয়া কথা শুনাবে!”

মুখটা বিকৃত করে তাকালাম, “এর ভয়ে তুমি আমাকে ডাকোনি? আমার রেডি হতে হবে। বিয়ে বাড়িতে কি কি করবো প্ল্যানিং করতে হবে। সায়রিকে সাপোর্ট দিতে হবে। এটা ভুলে গেলে?”

আম্মু বিছানা ঠিক করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ অসন্তুষ্টি চেহেরায় খেলা করছে, “বিয়ে রাতের বেলা। এতো তাড়াতাড়ি যাবি তুই?”

“সায়রির পাশে থাকবো না? বেস্টফ্রেন্ড আমি সবসময়।”

আম্মু আমার কথাগুলো মাঝপথে থামিয়ে দিলো, “ফ্রেন্ডশিপের নীতি শুনাতে হবে না।” রুম থেকে যেতে যেতে, “ওনাদের শক্ত খোটা শুনতে চাইলে রেডি হয়ে চলে যা।”

ফ্রেশ হয়ে সোফার রুমে বসে আছি। আম্মুর শক্তচোখ মুখের ভয়ে বিয়ে বাড়িতে যাবার নাম তুলতে পারছি না। ভাইয়া দিব্যি চলে গেছে রিধিতা আপুকে নিয়ে। আমিই সে অভাগা যে কিনা বিয়ে বাড়িতে যেতে ভয় পাচ্ছি।

“বসে আছিস কেন তুই না বিয়ে বাড়িতে যাবি!”

রিমোট দিয়ে চ্যানেল বদলাতে বদলাতে, “যাবো তো। টিভি দেখে নেই আগে!”

খালা রান্নার কাজ ছেড়ে হাত মুছতে মুছতে সোফার রুমে এসে গেলো। আমায় বাসায় অলস ভঙ্গিতে রিমোট হাতে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো, “নিষ্ঠা, তোর না বান্ধবীর বিয়ে। এখানে এমন করে বসে আছিস যে? রিহাম তো চলে গেলো আরো সকাল সকাল!”

গাল ফুলিয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। তিনি একধ্যানে রান্নার জন্য আদা বেটে দিচ্ছে।

“পরে যাবো খালা। আম্মু।”

আমার কথাটুকু থামিয়ে দিয়ে আম্মু গর্জে উঠলো, “খবরদার, আমার নাম নিয়ে মিথ্যে বলবি না।” রেগে ভ্রু কুচকে, “আমি তোকে আটকে রেখেছি?”

“ওহ আপা, বাচ্চা মানুষ। বান্ধবীর বিয়েতে মজা করবে ইচ্ছে মতো আর তুমি ওকে আটকে রেখেছো।” আমার দিকে ফিরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, “যাও মা, তুমি রেডি হয়ে চলে যাও বিয়েতে।”

“হ্যা, হ্যা লায় দিয়ে যেতে দাও! ঐখানে গিয়ে যখন শক্ত খোটা শুনে কাঁদতে কাঁদতে আসবে তখন আবার কিছু বলো না!”

খালা আম্মুর দিকে তাকিয়ে কিছুটা গর্বিত ভঙ্গিমায় বলতে লাগলেন, “আপা, ও তোমার মেয়ে। মনে নেই তুমি সামান্তা আপার বিয়েতে তার ভাবিকে কি জবাবটাই না দিয়েছিলে?”

উৎসুকচোখে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু খালাকে মৃদুস্বরে ধমক দিলেন। খালা হাসতে লাগলো।

“আমি কি যাবো তাহলে?”

আম্মু আমার দিকে একবার চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। খালা মৃদু হেসে আমাকে যেতে বললেন। ড্রেস চেঞ্জ করে চুলগুলো নিচু খোপা করে রুম থেকে বেরিয়েছি। আম্মু চোখ ছোট ছোট করে তাকালেন, “সাজলি না?”

“এখন সেজে কি করবো? বিয়ে তো রাতে তখন সাজবো!”

“বিয়ে বাড়িতে তাই এমন করে যাবি? কেউ তাকাবে তোর দিকে?”

খালা রান্নাঘর থেকেই আম্মুকে জবাব দিলো, “আপা তোমার মেয়ে ন্যাচারাল বিউটি। না সাজলেও ছেলেরা ঘুরে ঘুরে তাকাবে!” কথা শেষে রান্নাঘর থেকে চোখ টিপ দিলো আমাকে।

“যা ডায়লগ দিলা খালা!”

আম্মুকে একহাতে জড়িয়ে গালে চুমু দিয়ে দাঁত ভেটকানি দিয়ে বেরিয়ে পরলাম। আম্মু উপর থেকে সিড়ির রেলিঙ ধরে চেঁচিয়ে উঠলেন,”কেউ খোটা শোনালে আবার কেঁদে দিস না যেনো!”

বিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখি কিছু পিচ্চি নতুন জামা পরে ছোটাছুটি করছে। বড়রা রান্নার কাজ করছে। সায়র ভাই হ্যাল্প করছেন আঙ্কেলকে। চেয়ার রেখে কপালের ঘাম একহাতে মুছে ঝেরে ফেললেন। অতিথিদের ভিড় জমে গেছে বাসাটায়। গুটিগুটি পায়ে বাড়ির অবস্থা পরখ করতে করতে এগুচ্ছি দেখি রনক ভাইয়াও কাজে লেগে গেছেন। আমাকে দেখে হাসলেন। উনার কাছে এগিয়ে গেলাম।

রনক ভাইয়া নিজের কাজ ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন, “এতো দেরিতে এলে যে?”

“আম্মু ঘুম থেকে ডেকে তুলেনি সকাল সকাল।”

“তুমি তো সাজোনি দেখছি। আজকের দিনেও না সাজলে চলে?”

“আরে ভাইয়া, রাতে সাজবো। বরপক্ষের মাথা একদম ঘুরিয়ে দিতে হবে না?”

উনি হেসে আবারো কাজে লেগে গেলেন। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে গামছা খুজতে লাগলাম। আমাকে চারপাশে তাকাতে দেখে কাজ করতে করতে প্রশ্ন ছুড়লেন, “কি খুজো?”

“দাঁড়াও আসছি।”

আন্টির কাছে গিয়ে গামছা চাইলাম। আন্টি প্রশ্ন না জিজ্ঞেসা করে রুমের দিক নির্দেশনা দিয়ে দিলেন। সেখানে গেলে নাকি ইনটেক গামছা পাবো। আমিও কোন বারতি কথা না বলে গামছার লোকেশন অনুসারে গিয়ে গামছা হাতে সুরসুর করে বেরিয়ে এলাম। গামছা হাতে রনক ভাইয়ার কাজের জায়গার কিছুটা আগে দাঁড়ালাম।

“ভাইয়া কাজ থামিয়ে এদিকটায় আসেন তো!”

সপ্রশ্ন চোখে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। হাত নেড়ে তাকে আবারো কাছে আসতে ডাকলাম। উনি এগিয়ে এলেন।

“এক হাটু ভাজ করে নিচু হোন!”

উনি কিছু না বলে নিচু হলেন। গামছা ভাজ করে উনার মাথায় পেচিয়ে গিট্টু দিলাম কয়েকটা। উনি অবাকচোখে আমার কাজগুলো দেখছেন।

“এখন দুইহাটুই ভাজ করে বসেন তো।”

কথানুসারে উনি দুইহাটু ভাজ করে বসলে ফোন বের করে সেলফি তুলতে লাগলাম। ব্যাপারটা যখন বুঝলেন তখন তিনি হাসতে লাগলেন সেই শব্দহীন টোলপরা হাসি। হঠাৎ সায়র ভাই এসে রনক ভাইয়ার মাথার গামছা খুলতে লাগলেন।

বাধা দিতে লাগলাম হাতে ছাড়াতে চেয়ে, “আরে আরে খুলছেন কেন?”

সায়র ভাই গিট খুলতে খুলতে আমার দিকে তাকিয়ে একহাতে বাতাস করার মতো নাড়িয়ে বলতে লাগলেন, “আজকে প্রচুর গরম পরেছে!”

কাহিনী না বুঝে হাত সরিয়ে উনার দিকে চেয়ে আছি। উনি রনক ভাইয়ার মাথার গামছা খুলে নিয়ে নিজের কপাল আর মুখের ঘাম মুছছেন। মোছা শেষে গামছাটা হাতে ধরিয়ে দিলেন।

“নে এবার ব্যবহার কর। ঘামে ভেজা ঘামছা ওকে পরিয়ে ছবি তুললে তোর সেলফিটা আরো সুন্দর হবে!”

সায়র ভাই হেলেদুলে চলে গেলেন। আমি হাত থেকে ফেলে দিলাম গামছাটা। রনক ভাইয়া মৃদু হেসে গামছা উঠিয়ে তিনিও নিজের ঘাম মুছছেন। ঘাম মুছে আমার দিকে বাড়ালে আমি নাক মুখ কুচকে সরে গেলাম সামনে থেকে। সায়রি বেশ ততস্থ হয়ে বসে কাজিনদের মাঝে। চোখে-মুখে বিব্রতভাব। কিছুটা ভয়। কিছুটা অনিশ্চয়তার রেখা। আমি গেলে আমাকে হাত চেপে বসিয়ে দিলো। ওর কাজিনগুলো এক সময় চলে গেলো রুম থেকে। সায়রি আমার হাত চেপে ধরলো।

“নিষ্ঠা, ভয় লাগছে রে।”

“বোইন আমি শান্তনা দেওয়ায় খুব কাঁচা। কিন্তু তুই যদি এখন ভয়ে কান্না করিস আমি তোকে মাথায় পিঠে বারি মেরে আশ্বাস দিতে পারবো!”

“হুর মাইয়া, মজা করিস না। সত্যি ভয় লাগছে।”

একহাতে সায়রিকে জড়িয়ে ধরলাম, “ভয় পাস না সব ঠিকঠাকই হবে।” চোখ টিপ মেরে, “তুইও বাসরে ঢুকে যাবি সবশেষে!”

সায়রি হাত ঝারা মেরে সরিয়ে দিলো, “তুই আরো কেমন!”

মাথা চুলকে, “বোন আমার তো বিয়ে হয় নাই শান্তনা কিভাবে দেয়? তোর হাত ধরে আছি তুই আশ্বাস নে আমার থেকে!”

সায়রিকে রেখে বিকেল দিকে খালার বাসায় এসে গেলাম। রেডি হয়ে সেজে আবারো এসেছি বিয়ে বাড়িতে। আমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে আবারো হেসে উঠলেন সায়র ভাই। তড়িঘড়ি নিজের দিকে তাকালাম। না ঠিকই আছে শাড়ি। উনি তবু হাসছেন। ভেংচি কেটে সায়রিকে দেখতে উপরে চলে এলাম। সায়রিকে সাজানো শেষ। বরযাত্রী আসার পালা। রুমটাতে সায়রি একা বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে। আমি গিয়ে কাধে হাত রাখতে ম্লান হাসি হাসলো।

“নার্ভাস হচ্ছিস কেন আমি আছি! দরকার পরলে আমাকে নিয়েই তুই তোর বাসরে ঢুকিস!”

“উফ, নিষ্ঠা আশ্বাস তো ঠিক মতো দিতে শিখ!”

হাসতে লাগলাম, “তোর ২য় বিয়েতে দেখিস ঝাকানাকা শ্বান্তনা দিবো! এবারেরটা অভিজ্ঞতায় যোগ করে নিচ্ছি।”

বরপক্ষ এসেছে গুঞ্জন নিচ থেকে আসছে। নিচে যেতে গেলে সায়রি হাত চেপে ধরলো।

“ভয় পাস না সাইফ ভাইয়া আছে তো।”

সায়রি হাত ধরে আমার দিকে চেয়ে আছে। কি জানি বলতে চেয়েও থেমে যাচ্ছে। জানালার কাছ থেকে এসে এর এমন গম্ভির মুখাবয়ব দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘কি?”

“তুই কি সায়র ভাইয়ার প্রতি দূর্বল? না আমি তোকে যতোটুকু চিনি তুই সবার সাথেই ফ্রি হয়ে মিশিস ঠিক আছে। কিন্তু তোর বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে আমার মনে হচ্ছে সায়র ভাইয়াকে তুই পছন্দ করতে শুরু করেছিস। হয়তো পছন্দ থেকেও_”

থেমে অন্যদিকে তাকালো। এই মূহূর্তে এই প্রশ্নটার আশা করিনি। থতমত খেয়ে ওর দিকে চেয়ে আছি। মিথ্যে বলতে যেয়েও থেমে গেলাম। আজ পর্যন্ত আমার সব সিক্রেটগুলো কাউকে না বললেও সায়রিকে বলেছি। চোখ বন্ধ করে লম্বা দম নিলাম। সত্যিটা বলে দিবো। বেস্টফ্রেন্ড হিসেবে আমার খারাপ দিকটাও ওর জানা উচিত। আচ যেহেতু করেছে মিথ্যে বলে কি লাভ!

“হ্যা আমি সায়র ভাইকে পছন্দ করি।”

কথাটা বলে সায়রির দিকে তাকালাম। সে বিস্মিতচোখে আমাকে দেখছে। কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসার জন্য পিছনে ঘুরলে নির্মা আপুকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম।
১৩ (শেষ)

“হ্যা আমি সায়র ভাইকে পছন্দ করি।”

কথাটা বলে সায়রির দিকে তাকালাম। সে বিস্মিতচোখে আমাকে দেখছে। কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসার জন্য পিছনে ঘুরলে নির্মা আপুকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। আপু উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। চমকে আপুর তুচ্ছতাচ্ছিল্য শোনার অপেক্ষায় আছি। অবাক করে দিয়ে বেশ স্বাভাবিকভাবে আমার জন্যে প্রশ্ন ছুড়লেন, “বর দেখতে যাবে না? তোমায় ডাকতে এলাম সেজন্যে।”

আপুর স্বাভাবিক কথায় ওর দিকে চুপ হয়ে চেয়ে আছি। আপু বেশ সানন্দে আমার কাছে এসে হাত টেনে নিয়ে এলো রুম থেকে। আমি শুধু আপুকে দেখে যাচ্ছি।

“আপু তুমি রেগে যাওনি?”

নির্মা আপু মৃদু হাসলো। আমার হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে সামনে এগোতে লাগলো, “পছন্দ করতেই পারো। তোমার মনের উপর তো আর আমার অধিকার নেই। যদি থাকতো সত্যি বলছি আমার একমিনিটও সময় লাগতো না সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বার্থপর হতে। তোমার মন থেকে একদম মুছে দিতাম সায়রের উপর ক্রাশটুকু। সে সুযোগ তো আর নেই। তাছাড়া আমরা কেউই জানি না আমাদের ভবিষ্যৎ কে। তাই সামান্য এই কথা নিয়ে ঝগড়া করার কারন খুজে পাচ্ছি না। ক্রাশ খেতেই পারো। তুমি তো আর ভালোবাসো না সায়রকে! ঠিক না?”

আপুর প্রশ্নমাখা চোখ থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম। কতো সহজভাবে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছে আপু। আর আমি কিনা সেই এই আপুর ভালোবাসার বিচ্ছেদ চেয়েছি। না বোধক মাথা নাড়লাম। আপুর সাথে নিচে নেমে সায়রির কাজিনদের সাথে সাইফ ভাইয়ার গেট ধরে দর কষাকষি করলাম। একবারো সায়র ভাইয়ের দিকে তাকায়নি আর। তাকে পছন্দ করি, সেই সীমাটা হয়তো সায়রির ভাষায় পছন্দের থেকেও বেশি কিছু। যতোটা পছন্দ করলে ঘুম ভাঙলেই প্রথমে তার চিন্তা আসে মাথায়। সব চিন্তাতেই সে জড়িত থাকে। যার কথা ভাবলে নিমিষে হৃদস্পন্দন বাড়তে থাকে, যার স্মৃতি মনে পরলে লজ্জামিশ্রিত একরাশ ভালো লাগা গ্রাস করে আমাকে। প্রত্যেকটা মূহূর্ত সে নিষিদ্ধ আমার জন্য জেনেও সেই নিষিদ্ধ চাওয়াটা চেয়ে বসে অপরাধবোধে নিজেই গুটিয়ে যাই। একে ভালোবাসা বলে? হ্যা তাহলে আমি ভালোবাসি। কিন্তু এটা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ। কারন সে অন্যের সাথে সম্পর্কে জড়িত যে ভীষণ ভালো একজন মানুষ। আমার অধিকার নেই তাকে কষ্ট দেওয়ার। এই মানুষগুলো শুধু সুখ ডিজার্ভ করে কষ্ট না। যেখানে কিছুদিনের পরিচয়ে আমাকে আপন করে নিয়েছে আপুটা সেখানে আমি কেন তাকে কষ্ট দিতে যাবো। খুব পছন্দের একটা মানুষ এই নির্মা আপু। আবেগের বসে ওদের বিচ্ছেদ চাইলেও সেই চাওয়াটা যে আমার জন্য নিষিদ্ধ তা একদম চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সময়। ভালোবাসলেও তা মুখে বলা মানা কারন সে নিষিদ্ধ আমার জন্য। “নিষিদ্ধ সে!” বিয়ের সময় বরপক্ষের সাথে প্রচুর মজা করলাম। আমার আম্মু প্রচুর খুশি আমার এই ব্যবহারে জামাইয়ের আশায়। কিন্তু রনক ভাইয়াকে তার বেশি ভালো লেগেছে। সায়র ভাই আমার হাত ধরে টেনে আনতে গেলেও পালিয়ে গেছি। চাইনা আমার এমন কেয়ারের যে কেয়ারের কোন নাম নেই। খেতে বসে রনক ভাই আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন পাশে বসে, “কিছু হয়েছে নিষ্ঠা?”

চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে মাথা নাড়লাম প্রবলবেগে। আমার দিকে বেশ সন্দিগ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন উনি।

“আমার মনে হচ্ছে কিছু হয়েছে। সায়রকে ইগনোর করছো কেন? সে রেগে টমেটো হয়ে যাবার যোগার!”

খাওয়া থামিয়ে চারপাশ দেখলাম। এককোনে সায়র ভাই বেশ লাল চেহেরা করে বসে আছে আমার দিকে তাকিয়ে। আশপাশের সবাই নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত। খাবার মুখে দিতে দিতে সায়র ভাইয়ের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিলাম, “তাকে ইগনোর করার কি হলো? আমাদের মধ্যে তো এমন কোন সম্পর্ক নেই যার জন্য তাকে ইগনোর করবো।”

রনক ভাইয়া চোখ বড় বড় করে আমার দিকে চেয়ে আছেন। খাওয়া শেষে হাত মুছছি রনক ভাইয়া আমাকে ফিসফিসিয়ে বললেন, “এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার! এই দুটো ক্ষেত্রে যেকোন কিছু করে জেতা যায়। যা সর্বক্ষেত্রেই জায়েজ!”

একগাল হাসি নিয়ে, “আমার জন্য মানুষটা ‘নিষিদ্ধ সে’। যাকে পছন্দ করলেও স্বিকার করা মানা।”

কথাটা বলে পিছন ঘুরতে আবারো ধাক্কা খেলাম সায়র ভাইয়ার বুকে। কিছু না বলে মাথা নিচু করে পাশ কেটে সরে এলাম। হয়তো উনি শুনেছেন। শুনে আমাকে সবচেয়ে বদমেয়ে পদবি দিয়ে দিয়েছেন।



ডায়রিটা বন্ধ করে পাশ ফিরলো পুতুল। পাশে নিষ্ঠা ব্যাগ গোছাচ্ছে ধুমসে। আজ হোস্টেলে লাস্টদিন ওর। ব্যাগ গোছাতে গোছাতে ভ্রু কুচকে এলো। সব কিছু উঠিয়ে কিছু একটা খুজছে। পুতুল ডায়রিটা সামনে ধরলো নিষ্ঠার।

“আপু এটা খুজছো?”

নিষ্ঠা চোখের চশমা ঠিক করে পুতুলের দিকে তাকালো। মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে ডায়রিটা নিয়ে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো। পুতুল মোচড়ামোচড়ি করতে লাগলো কিছুটা।

“আপু আসলে আমি না তোমার ডায়রিটা পড়েছি অনুমতি না নিয়ে। তুমি কি রাগ করেছো?”

নিষ্ঠা কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “পড়ে ফেলেছো এখন তো আর কিছু করার নেই। সবটুকু পড়েছো?”

পুতুল উপর নিচ করে হ্যা বোধক মাথা নাড়লো। ম্লান হাসি হেসে ব্যাগ কাধে নিতে লাগলো নিষ্ঠা, “আমাকে নিশ্চয় বেশ খারাপ ভাবছো? আমি সত্যিই খারাপ একজন!”

“আমার মনে হয় না তুমি তেমন।” নিষ্ঠাকে জড়িয়ে ধরে, “আমার পাওয়া বেস্ট রুমমেট তুমি। তোমার বাসা ঢাকাতে থাকতেও কেন হোস্টেলে এলে?”

“এমনিই!”

“শুধু এমনিই? আমি তো ডায়রি পড়ে ফেলেছি বলো না ব্যাপারটা কি সায়র ভাইয়ার জন্য?”

নিষ্ঠা ব্যাগ উঠিয়ে পুতুলের হাতে ধরিয়ে দিলো, “ডায়রি পড়েছো এখন তার পেমেন্ট করো।”

“হিহিহি তাতে রাজি। ও আপু বলো না পরে কি হয়েছে!”

“আমাদের বাসা আর সায়রিদের বাসা পাশাপাশি। সায়র ভাই বদলি হয়ে ঢাকায় এসে পরেছিলো। যেতে আসতে প্রতিদিন দেখা হতো আমাদের। এমন চললে ভোলা কঠিন হবে তাকে তাই হোস্টেলে এসে গেছি আম্মুকে জোর করিয়ে।”

“পরের কাহিনী?”

নিষ্ঠা ব্যাগ নিভৃতের হাতে ধরিয়ে দিলো। নিভৃত সেগুলো নিয়ে নিজের গাড়িতে তুলে রাখলো। রিধিতাও এসেছে সাথে। কোলে কয়েকমাসের বাবু। কেটে গেছে তিনটা বছর নিষ্ঠা ইন্টার্নি করে বেরিয়েছে হসপিটাল থেকে। বাবুটার কপালে চুমু খেলো নিষ্ঠা। ঘুরে পুতুলের দিকে তাকালো।

“আমার উত্তরটা দিলে না আপু।”

“পরের কাহিনী অসমাপ্ত।”

পুতুলকে ভালো মতো থাকতে বলে গাড়িতে উঠে চলে গেলো নিষ্ঠা। তার যাওয়ার পানে চেয়ে আছে পুতুল। তার ইচ্ছে করছে কোন এক অলৌকিক শক্তি দিয়ে নিষ্ঠার সাথে সায়রকে মিলিয়ে দিতে। মাঝখানে “নির্মা” মেয়েটাকে শুরু থেকে মুছে দিতে। যেনো সব কিছুই হ্যাপি এন্ডিং হয়। এ কয় বছরে বদলে গেছে সব। বিয়ের সংবাদ এসেছিলো নিষ্ঠার কানে নির্মাদের। প্রিয় মানুষটার বিয়ে সচক্ষে দেখার সাহস কুলিয়ে উঠেনি তাই যায়নি। চোখে আগে যে চশমাটা দু এক সময় হুটহাট করে মাথা ব্যাথা নিরাময়ে পরতো এখন তাতে পাওয়ার এসেছে। সব সময় পরে থাকতে হয়। বাসায় এলে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান আমেজ দেখতে পেলো। নিষ্ঠা রিধিতার দিকে তাকালো, “ভাবী, বাসায় কি কোন অনুষ্ঠান হবে?”

“হ্যা, তোমাকে দেখতে আসবে। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেও। তোমার বিছানায় শাড়ি রাখা আছে।”

নিষ্ঠা অমত করলো না। কার জন্য অমত করবে যেখানে মানুষটা এখন বিবাহিত! ক্লান্ত ভঙ্গিতে মা-কে পিছন থেকে একবার জড়িয়ে ধরে রুমে এসে গেলো। সময়ের স্রোতে এক সময় না এক সময় বিয়ে তাকে করতেই হবে! শুধু শুধু এখন বাগড়া দিয়ে লাভ আছে? শাওয়ারের নিচে বসে চোখ বন্ধ করলো।

“ভাইয়াকে তুই ভুলে যা নিষ্ঠা! আমি জানি ব্যাপারটা কঠিন হবে। কিন্তু তোকে পারতে হবে। আমি কখনো ভাবিনি আমার জন্য এমন সময় আসবে যে সময়টায় আমাকে বোন আর বেস্টুর মধ্যে চুজ করতে হবে। নির্মা আপুকে আমি ছোট থেকে চিনি। সে কাউকে ভালোবাসলে একদম মন উজার করে ভালোবাসে! তার মধ্যে ভাইয়া আর নির্মা আপু রিলেশনে আছে তুই মাঝখানে ভাইয়াকে পছন্দ করে শুধু শুধু কাহিনী বানাচ্ছিস। হ্যা ভাইয়া তোর উপর দূর্বল নির্মা আপুর থেকে বেশি তোকে এ কদিনে কেয়ার করেছে যা আমার সচক্ষে দেখা কিন্তু তোরা নির্মা আপুকে মাঝখান থেকে সরিয়ে রিলেশনে গেলে পরে নিজেরাই অপরাধবোধে ভুগবি। ব্যাপারটা তোর জন্যেও ভালো হবে, আপু আর ভাইয়ার জন্যেও ভালো হবে ভুলে যাস ভাইয়াকে।”

চোখ খুললো নিষ্ঠা। সেদিন সায়রি সত্যি কথাই বলেছিলো। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে শাড়ি পরে নিলো। এ কবছরে এটা রপ্ত করেছে বেশ। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেজে নিলো। রিধিতা নিষ্ঠার রুমে ডাকতে ডাকতে আসতে লাগলো, “নিষ্ঠ শেষ হয়েছে তোমার?”

আয়না থেকে চোখ সরিয়ে, “হ্যা আপু ওরা কি এসে গেছে?”

“হুম” নিষ্ঠার কাছে এসে থুতনি ধরে মুখটা উপরে উঠালো আরেকটু, “তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে বোনু। উফ, ছেলে আজ হাই লেভেলের ক্রাশ খাবে তোমার থুতনির খাজে!”

“আপু আর কিছু পেলে না! থুতনির খাজে ক্রাশ!”

নিষ্ঠার গাল ফোলানোয় ফিক করে হেসে দিলো রিধিতা, “তোমার এই থুতনির খাজ আমার বেশ ভালো লাগে। আমার দিক থেকে বলে ফেলেছি তাই এমন!”

নিষ্ঠার মা আসলেন কিছু মূহূর্ত পর। মেয়েকে সজ্জিত অবস্থায় দেখে তিনি ভীষণ খুশি। মেয়ে বিয়ে করবেনা স্লোগান তুলে ঝামেলা করবে ভেবেছিলেন। ঝামেলামুক্ত সব মেনে নেওয়ায় উনার খুশির ইয়াত্তা নেই। নিষ্ঠা খাবারের প্লেট হাতে এক পা দু পা করে পাত্রপক্ষের সামনে এগুচ্ছে আর বিষাদগ্রস্ততা ঝেকে বসছে মনে। পাত্রপক্ষের সামনে মাথা নিচু করে আছে। বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেসা করলে মাথা নিচু করেই মাথা নেড়ে হ্যা না উত্তর দিয়েছে। শেষে পাত্রকে নিষ্ঠার সাথে একা কথা বলতে ছেড়ে দিলো। একা রুমে হেজিটেট হবে দেখে রুমে যেতে গিয়েও ছাদে পা বাড়িয়েছে। ছেলেও আকা বাকা পথে নিষ্ঠার পিছু নিয়েছে। ছাদে নিষ্ঠা অন্যদিক মুখ করে চেয়ে। চোখের সামনে ছেলেটা তুড়ি বাজালে বিরক্ত হয়ে ছেলের দিকে তাকালো। চমকে পিছিয়ে গেলো।

“আপনি, আপনি এইখানে কেন?”

“পাত্র আমি তো এখানে আমি থাকবো না?”

নিষ্ঠা চেয়ে আছে সামনে বিস্মিত হয়ে। চিরচেনা মুখে এখনো লেপ্টে আছে সৌন্দর্য। জোড়া ভ্রুয়ের নাচানি, ঠোঁটে হালকা হাসি হৃদের বিষাদগ্রস্ততায় শীতল শিহরণ দিয়ে গেলো। কিছু মূহুর্ত পরই আবার ফ্যাকাশে হয়ে এলো মুখখানা।

“আপনি আমাকে ২য় বউ হিসেবে বিয়ে করতে চাইছেন?”

সায়র কিছুক্ষন ভ্রু কুচকে নিষ্ঠার দিকে চেয়ে রইলো পরমূহূর্তে চেহেরায় শয়তানি হাসির রেখা টেনে উপর নিচ মাথা নাড়তে লাগলো। নিষ্ঠা রেগে উঠলো এবার।

“করবোনা আপনাকে বিয়ে!”

“তোমার বাবা-মা তো আমার মা-কে কথা দিয়ে দিয়েছে তোমাকে আমার ২য় বউ হিসেবে দিয়ে দিতে। এখন তুমি না করলেই কি আর হ্যা করলেই কি?”

নিষ্ঠা ভ্রু কুচকে গভীর চিন্তাতে মগ্ন। সায়র মেয়েটাকে একধ্যানে দেখছে।

“আমি না করাতেই অনেক কিছু। আমার বাবা-মা টিপিক্যাল বাবা-মা না যে আমার উত্তর না নিয়ে কথা খেলাপের চিন্তা করবে। আপনাকে বিয়ে করবো না করবো না করবো না!”

“পরে যেনো না পস্তাতে হয়। এমনিতেই বেচারা বুড়ো হয়ে গেছে তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে!”

নিষ্ঠা ঠিকমতো তাকিয়ে দেখে পাশের বাসার ছাদে রনক, নির্মা বসে। ওরা নেমে এলো নিষ্ঠাদের বর্ডারের কাছটায়। নিষ্ঠা একবার নির্মার দিকে তো একবার সায়রের দিকে তাকাচ্ছে। নির্মা নিজের দিকে নিষ্ঠাকে তাকাতে দেখে হালকা হাসলো, “আমি মেরিড বারবার আমার দিকে না তাকিয়ে সায়রের দিকে তাকাও!”

“তোমার আর সায়র ভাইয়ার না বিয়ে হয়ে গেছে_”

রনক বাধা দিলো, “ভুল, বিয়েটা আমার আর নির্মার হয়েছে সায়র আর নির্মার না। তুমি কার্ড ঠিকমতো দেখোনি।”

নিষ্ঠা অবাক চোখে বারবার ওদের দিকে তাকিয়ে কাহিনী স্বপ্ন না বাস্তব বুঝতে চাইছে। রনক সায়রের ইশারায় নির্মাকে ধাক্কাতে লাগলো, “চলো পাত্রী আর পাত্রকে স্পেস দাও ওরা কথা বলে নিক।”

দুজন চলে গেলে সায়র এক হাটু ভেঙে বসে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ফুল বের করলো। নিষ্ঠা এখনো চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে।

“আমার শুধু তোমাকেই লাগবে! আমি ভাবতে চাই না কে আমায় পছন্দ করে আর কে করে না! এতোগুলো বছরে কাটানো প্রত্যেকটা সময় আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে আমার যা চায় সবটাই তোমাতে! বিয়ে করবে আমায় নিষ্ঠা?”

চোখের পাতা কয়েকবার ঝাপ্টা দিলো নিষ্ঠা। চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো। সায়রের হাত থেকে ফুল নিতে উঠে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো নিষ্ঠাকে।

“তোমার “নিষিদ্ধ সে” আজ থেকে শুধু তোমাতেই আবদ্ধ। তুমি ছাড়া সবার কাছেই সে নিষিদ্ধ! “নিষিদ্ধ সে”

“এর জন্যই কণ্ঠটা সামান্তা আন্টি আর আঙ্কেলের কণ্ঠে সাথে মিলছিলো?”

নিষ্ঠা সপ্রশ্ন চোখে সায়রের বুক থেকে মাথা তুলে তার দিকে চাইলো।

“তোমার এখন আমার বাবা-মা-কে নিয়েও অবিশ্বাস হচ্ছে উনারা সত্যিই আমার বাবা-মা না স্বপ্ন?”

নিষ্ঠা চিমটি কাটলো সায়রের পিঠে। দুজন হাসতে লাগলো। আড়াল থেকে এদের দেখে নির্মা চোখের পানি ফেলতে লাগলো। সায়রকে সে সত্যিই ভালোবাসতো কিন্তু নিজের করা ইগনোরগুলো যে সম্পর্কে ফাটল ধরাতে শুরু করেছিলো তা তার কাছে অজানা ছিলো। নিষ্ঠা সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেবার পর সায়রের নতুন রূপ দেখেছিলো। আস্তে আস্তে নির্মাকে ইগনোর করা শুরু করে। পরে একটা সময় দুজনেই বুঝে যায় ওদের রিলেশনটা শুধু নামমাত্র। সায়রের দিকে থেকে কোন রেস্পন্স নেই। এদিকে নির্মার কাছে পরিষ্কার সায়র যাকে চায় মানুষটা নির্মা না নিষ্ঠা। ভালোবাসলেও সরে যায় সায়রের জন্য। ততোদিনে নির্মার বাবা আর রনকের বাবা নিজেদের মধ্যে পাকা কথা বলে ফেলেছেন। নির্মা রনককে বিয়ে করতে না চাইলেও বাবা-মা-র মুখের উপর না বলতে পারেনি। এখন রনককে ভালোবাসলেও প্রাক্তন অধ্যায়টা বারবার কড়া নাড়ে মনের মধ্যে। রনক নির্মাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।

“রনক, আমি এখনো ভুলতে পারিনি তাকে!”

রনক ম্লান হেসে নির্মার মাথায় চুমু খেলো, “ভুলতে হবেও না। কিছু কিছু মানুষকে কোনদিন ভুলতে হয় না।”

“তুই এতো ভালো কেন?”

“কারন আমি তোর নামে রেজিট্রি হয়ে যাওয়া আসামি! যে সায়রের ভাষায় অন্য সবার কাছে ‘নিষিদ্ধ সে’।”

নির্মা কাঁদতে কাঁদতেও ফিক করে হেসে দিলো। রনক নির্মাকে কোলে তুলে নিয়ে নামতে লাগলো সিড়ি ভেঙে।

সমাপ্ত________❤

#এ্যাগ্নেস_মার্টেল

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here