#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_17
“স্যার আপনাদের সমস্যাটা আমি শুনেছি ।কিন্তু আপনারা যদি এভাবে বলেন তাহলে কিভাবে হবে। তার থেকে আপনারা একটা কাজ করুন,, আপনারা দুজনেই আপাততো দুটো দুটো চারটা টেডি নিয়ে নিন আর বাকি গুলো আমি আপনাদের কালকের মধ্যে অর্ডার দিয়ে এনে দিবো।”
আহান রাগি কন্ঠে বললো
“যা বলেছি চুপচাপ তাই করুন। আমি যখন একবার বলেছি ওইগুলো আমি নিবো তার মানে ওই গুলো আমিই নিবো।At any cost..”
আহানের কথায় ম্যানেজার বেশ অনেকটা রেগে গেলো। আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে ঝাড়ি মেরে বললো
“আজব পাবলিক তো আপনি। সামান্য টেডিবিয়ারের জন্য এভাবে বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বসে আছেন।তাও আবার কি অদ্ভুত আবদার,,একটা টেডি পুড়িয়ে ফেলতে হবে। এরকম আবদার কেউ করে? এতো ক্ষন থেকে আপনাদের অনেক চেচামেচি সহ্য করেছি,,আর না। আপনাদের কারো কাছেই আমি কোনো প্রডাক্ট বেচবো না। আপনারা এক্ষুনি ভালোয় ভালোয় এই শপটা থেকে বের হয়ে যান।নয়তো পুলিশ ডেকে জেলে ঢুকিয়ে দিলো।”
আহানের সাথে এভাবে রুঢলি কথা বলায় জেড়িন আর আবির মনে মনে বেশ খুশী হলো। মেঘ পুলাশের নাম শুনে বেশ অনেকটা ঘাবরে গেলো।ও আহানের কাছে গিয়ে আহানের এক হাত আকরে ধরে মিনমিন করে বললো
“এখান থেকে চলুন প্লিজ। আমার টেডি লাগবে না। বাসায় অনেক গুলো আছে সেগুলোই আমার কোনো কাজে লাগে না ।আর নতুন করে কতো গুলো কিনে কি করবো । প্লিজ চলূন আমার খুব ভয় লাগছে।”
আহান মেঘের দিকে তাকালো দেখলো ভয়ে মেঘের চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গেছে। যে হাত দিয়ে আহানের বাহু ধরে রেখেছে সেই হাতটাও মৃদু কাপছে। মেঘকে এতোটা ভয় পেতে দেখে আহানের রাগটা আরো বেশি বেরে গেলো। ও মেঘের হাতটা নিজের বাহু থেকে আলতো করে ছাড়িয়ে দিয়ে, একদম ম্যানেজারের সামনে গিয়ে দাড়ালো। তারপর নিজের হুডিটা একটু উপরে তুলে মুখের মাক্সটা সরিয়ে ফেললো। হুডিটা এমন ভাবে সরিয়েছৈ যেনো ম্যানেজার ছাড়া আর কেউই ওকে দেখতে না পায়। ম্যানেরজার আহানের চেহারা দেখার সাথে সাথে দুই কদম পিছিয়ে গেলো।মূহুর্তেই ওনার চেহারা থেকে সব বিরক্তি, রাগ উড়ে গিয়ে চেহারায় স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।ম্যানেজারের হাত পা রিতিমতো কাপাকাপি শুরূ করে দিয়েছে।ওনার মুখ দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ওনি আহানকে এখানে দেখে কতোটা অবাক হয়েছে।ম্যানেযারকে এভাবে কাপাকাপি করতে দেখে আবির আর জেরিন অনেক টা অবাক হয়ে গেলো। মেঘও বেশ অবাক হলো।যেই লোক একটু আগেও ওদের পুলিশে দেওয়ার জন্য ভয় দেখাচ্ছিলো,,সে এখন নিজেই ভয়ে কাপছে। আহান নিজের রাগে লাল হয়ে যাওয়া তীক্ষ্ম চোখ দুটো একবার ম্যানেজারের দিকে নিক্ষেপ করলো,,তারপর আবার মুখে মাক্সটা পড়ে মাথার হুডিটা টেনে দিয়ে রুক্ষ স্বরে বলল
“আমি কি করবো, আর কি করবো না , তার কৈফিয়ত আমি কাউকে দেই না। কিন্তু আপনি যেহেতু আমার বয়সে বড়,তাই আপনার একটা কনফিউশন ক্লিয়ার করতেই পারি।আসলে ওই পুতুলটা এই নোংরা মেয়েটা (জেরিন কে দেখিয়ে ) ছুয়েছে তাই এই পুতুলটা একদম নোংরা আর অপবিএ হয়ে গেছে। আর আমি চাইনা আমার পরির (মেঘের দিকে তাকিয়ে ) কাছে কোনো নোংরা বা অপবিএ জিনিস থাকুক। তাই ওটাকে পুরিয়ে ফেলতে বলেছি । আই হোপ সবটাই বুঝতে পেরেছেন।এবার চুপচাপ গিয়ে যেটা বলেছি সেটা করুন ।নাহলে আপনাদের সাথে ঠিক কি কি হবে সেটা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন। ”
ম্যানেজারটা ভয়ার্ত গলায় বললো
“সরি স্যার !আমি বুঝতে পারিনি এটা আপনি। আর আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।যেভাবে যেভাবে আপনি বলেছেন আমরা ঠিক সেভাবে সেভাবেই করবো। আমি নিজে গিয়ে এগুলো আপনার গাড়িতে পৌছে দিয়ে আসবো।সরি অনস এগেইন স্যার”
আহান বললো
“ইটস ওকে ! আপনাকে এসব পৌছে দিতে হবে না। আমি আমার একজন গার্ড কে বলে রাগবো ও এসে নিয়ে যাবে।”
ম্যানেজার ,,ওকে স্যার বলে এক প্রকার দৌরে চলে গেলো।আবির আর জেরিন ওনাকে অনেকবার পিছন থেকে ডাকলো কিন্তু উনি একটুর জন্যও পিছনে ফিরলেন না। জেরিন আর আবির অবাক হয়ে লোকটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“চলো এবার যাওয়া যাক। আমাদের আরো অনেক কেনেকাটা বাকি আছে। তারাতারি চলো।”
মেঘও সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে আহানের সাথৈ হাটা দিলো। তখনই জেরিন পিছন থেকে মেঘকে উদ্দেশ্য করে বললো
“বয়ফ্রেন্ড নিয়ে রাতের বেলা বাইরে ঘুরে বেরাচ্ছিস , ছোট মামু (মেঘের বাবা)সেটা জানে?আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হয়?আমি যদি ছোট মামুকে ফোন করে বলে দেই ,তার আদরের ছোট্ট মেয়ে এতো রাতে বাইরে ছেলে নিয়ে ঘুরছে। তাহলে তোর আর এই ছেলের কি অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখ। ”
জেরিনের কথায় আহান আর মেঘ দুজনেই দাড়িয়ে গেলো। আহান জেরিনের দিকে একটু এগিয়ে এসে ওর সামনে দাড়িয়ে বললো
“Oh my god.. মিসেস রহমান । আমি তো আবারও ভয় পেয়ে গেলাম ।আপনি আমার মতো একটা বাচ্চা ছেলেকে বারবার এইভাবে ভয় দেখাচ্ছেন? এটা কিন্তু ঠিক না। এন্ড বাই দা ওয়ে ,, ওর বাবাকে শুধু মাএ এইটুকু কেনৌ বলবেন? তার থেকে ভালো এইটা বলবেন,, মেঘকে আপনি একটা ছেলের সাথে হোটেলে দেখেছেন আর সাথে কয়েকটা পিক এডিট করে নিয়ে যাবেন।যেমনটা আপনি চার বছর আগে করে ছিলেন। এসব বিষয়ে তো আপনি আগে থেকেই এক্সপার্ট । আচ্ছা আপনার কাছে মেঘের বাবার সেলফ ফোন নম্বর আছে?নাকি আমার থেকে নিবেন?”
আহানের ব্যাঙ্গাত্মক কথা শুনে জেরিন বেশ রেগে গেলো। কিন্তু আহানের কথার উওরে কি বলবে সেটা খুজে পেলো না । মেঘ শুধু অবাক হয়ে আহান কেই দেখছে। আহানকে এতো কনফিডেন্টলি কথা বলতে দেখে জেরিন ভাবলো এখান থেকে চলে যাওয়াই ওর জন্যে ভালো ।নাহলে আবার কেচো খুরতে কেউটে বেরিয়ে আসবে । তাই ও তারাহুরো করে যাওয়ার জন্য পা বারাতেই আহান ওকে ল্যাং মারলো সাথে সাথে জেরিন মুখ থুবরে উপুর হয়ে ফ্লোরে পড়ে গেলো। মেঘ চমকে উঠে দুহাত নিয়ে নিজের মুখের উপর রাখলো।এমন কিছু হবে ও ভাবতেই পারেনি। শপের অন্যান্য কাষ্টমারেরা হা হা করে হেসে দিলো। আবির লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে।আহান একটা বাকা হাসি দিয়ে ,হাটু গেরে জেরিনের সামনে বসে ওকে লো ভয়েজে বললো
“এতোক্ষন বেশি ওড়াউড়ি করছিলি তো।তাই তোকে তোর জায়গাটা বুঝিয়ে দিলাম। ভবিষ্যতে যদি তোর জন্য আমার পিচ্চি পরিটা একটুও কষ্ট পায় ,, তাহলে তোর এমন অবস্থা করবো নিজেকেও নিজে আয়নায় দেখে আতকে উঠবি। তোকে এতোদিন বাচিয়ে কেনো রেখেছি জানিস?কারন তোর একটা ভুলের জন্য আমি আমার ছয় বছর আগে হারিয়ে যাওয়া পরিটাকে চার বছর আগে ফিরে পেয়েছি। তাই বলে এটা ভাবিস না ,বার বার একই ভুল করে পার পেয়ে যাবি। আর কোনো দিন যদি আমার জানের কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে তোর কি অবস্থা করবো যাষ্ট ভাবতেও পারবি না। আর আজকের কথা অন্যায়টা তুলে রাখলাম সুদে আসলে ফেরত দিবো।”
আহানের কথা শুনে ভয়ে জেরিনের কলিজা কেপে উঠলো। যেই ছেলে এতোক্ষন আপনি আপনি করে কথা বলছিলো সে সেকেন্ডের মধ্যে নিজের রুপ পাল্টে একদম আপনি থেকে সোজা তুইতে চলে গেলো। কে এই ছেলেটা ?মেঘের সাথে এর কিসের সম্পর্ক ? জেরিনের মাথায় শুধু এই সবই ঘুরপাক খাচ্ছে। আহান সোজা হয়ে দাড়িয়ে মেঘের একহাত চেপে ধরে শপ থেকে বেরিয়ে গেলো।
_____________________
মেঘ কিছু একটা ভাবতে ভাবতে আনমনেই হাটছিলো। আহান দেখলো মেঘ কপাল কুচকে কিছু একটা ভাবছে। ও একটু গলা খাকারি দিয়ে মেঘকে জিঙ্গেস করলো
“কি এতো ভাবছেন ম্যাম?”
মেঘ আনমনেই বললো
“ভাবছি জেরিনের বেবিটা কোথায়? সেদিন রেষ্টুরেন্টেও ওদের সাথে কোনো বেবি দেখলাম না আর আজও দেখলাম না।”
আহান স্বাভাবিক ভাবেই বললো
“এর্ভোরশন করিয়ে ফেলেছে।”
কথাটা কানে যেতেই মেঘে পৃথিবী উল্টে গেলো। ওর মনে হচ্ছে ও ভুল শুনেছে । ওর মুখ থেকে আপনা আপনিই বেরিয়ে আসলো
“কি?,,,,,,,”
“হুমম। তোমরা এখানে আসার কিছু দিন পরেই জেরিন চুপিচুপি হসপিটালে গিয়ে বেবিটা এর্ভোশন করিয়ে এসেছে। পরে যখন সবাই জানতে পেরে ওকে প্রশ্ন করেছিলো,ও এটা কেনো করলো তখন ও সবাইকে বলে এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিলে ওর ফিগার খারাপ হয়ে যাবে। তাই ও বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলেছে।আবিরও এই বিষয় কিছুই জানতো না।যেদিন সবটা জানতে পারলো তার দুইদিন পরই ও কানাডা চলে গিয়েছিলো । গতো মাসেই ফিরেছে। ”
মেঘের চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। কেউ দেখার আগে খুব সাবধানে সেটা মুছেও ফেললো কিন্তু আহানের চোখে ঠিকই পড়েছে। মেঘ ভেজা গলায় বললো
“ছিহঃ ও এতোটা নিচে নেমে গেছে। একটা বাচ্চা,, যে কিনা পৃথিবীর আলো অবদি দেখেনি । ও সেই নিষ্পাপ বাচ্চাটাকে মেরে ফেলেছে। মানুষ কতোটা নিষ্ঠুর হলে নিজের সন্তান কে নিজের হাতে মেরে ফেলতে পারে। জানোয়ার একটা।”
কথাটা বলতে বলতে মেঘের চোখ দুটো আবার ভিজে এলো। ও চোখের পানিটা মুছে আহানকে জিঙ্গেস করলো
“আচ্ছা এসব আপনি কিভাবে জানলেন? কবে জানলেন?আর আমাকে এতো দিন জানাননি কেনো?মাম্মাম বাবাই জানে এসব?”
“আমি অনেক আগে থেকেই জানতাম মেঘ,, যখন এই কাহিনি ঘটেছে তখন থেকেই। আর শুধু মামনি পাপা না,, আমরা সবাই এই ঘটনা জানতাম।তোমাকে জানাই নি কারন তুমি তখন অনেক পিচ্চি ছিলে । অলরেডি তোমার উপর দিয়ে অনেক ঝড় গেছিলো।ডাক্তার বলেছিলো তোমাকে আর যেনো অতিরিক্ত মানষিক চাপ দেওয়া না হয়। তাই তোমাকে কেউ কিছু বলেনি।”
মেঘ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছু কিছু স্বার্থপর মানুষের জন্য চোখের পানি ফেলার কোনো মানেই হয় না । এই মানুষ গুলো একদম ডাষ্ট বিনের ময়লায় মতো হয় যার জিবনেই ঢোকে তার জিবন টাকেই নষ্ট করে ফেলে।দুজনেই বেশ অনেকক্ষন চুপ রইলো। তারপর হঠাৎই মেঘের মেঘের মনে পড়লো ওরা শপিং এ কেনো এসেছে সেটাই তো জিঙ্গেস করা হইনি। মেঘ বললো
“আমরা হঠাৎ সবাই মিলে শপিংএ কেনো এসেছি? এমন তো তখনই হয় যখন আমাদের বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হয়।”
আহান চেহারায় একটু বিরক্তি ভাব ফুটিয়ে বললো
“আরে তোমার ওই চাচাতো ভাই ইফাত না কি নাম? কয়েক দিন পর ওর বিয়ে না,, সেই উপলক্ষ্যে শপিং করা হচ্ছে। তোমরা সবাই সেখানে কি ড্রেস পড়বে, কি জুয়েলারি পড়বে,পাএীকে কি কি দেওয়া হবে সেইসব ।”
মেঘ নিজের মুখটা গোল করে বললো
“ও ও ও ও”
____________________
ভার্ষিটির মাঠের একপাশে বসে আছে দিশা, মেঘ, সাড়িকা , সাঈফা। রিজা আজকে ভার্ষিটিতে আসেনি। ওদের ক্লাস শুরু হতে আরো অনেক দেরি আছে। তাই মাঠে বসে বসে চারজন খাতার কাগজ ছিরে নৌকা বানাচ্ছে। চারজনই এমন ভাবে মনোযোগী হয়ে কাজটা করছে যেনো এই মূহুর্তে ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেলেও ওরা কিছু টের পাবে না। অলরেডি চল্লিশটার মতো নৌকা বানিয়েও ফেলেছে। হটাৎ শা করে দুইটা বাইক ভার্ষিটির গেট দিয়ে প্রবেশ করলো। বাইক দুটো এতো স্পিডে আসায় মেঘদের কাগজের নৌকা গুলো সব বাতাসে উড়ে গিয়ে পাশের পুকুরে পরে গেলো। আচমকা এমনটা হওয়ায় মেঘ, দিশা, সাড়িকা ,সাঈফা হতবম্ভ হয়ে গেলো। ওরা চার জনই রাগি মুড নিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে যেখানে বাইক দুটো থেমেছে ষেদিকে তাকালো। বাইক থামতেই হেলমেট খুলে বাইক থেকে নামলো আহির আর মিহির । দুজনের পড়নেই ব্লাক জিন্স, সাদা টি সার্ট, সাথে ব্লাক লেদারের জ্যাকেট । চুল গুলো স্পাইক করা, দুজনের পিঠেই গিটার ঝুলানো, টিশার্টের সাথে সান গ্লাস টা ঝুলিয়ে রেখেছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওরা দুজন টুইনজ ।ভার্ষিটির অনেক মেয়েরা হা করে ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে । ওরা বাইক থেকে নামতেই ওদের বন্ধুরা এসে ওদের ঘিড়ে ধরলো। সাঈফা রাগে গজগজ করতে করতে বললো
“এদের দেখে কে বলবে এরা ভার্ষিটিতে এসেছে। এমন ভাবে সেজে এসেছে যেনো লেখাপড়া করতে না কনসার্ট করতে এসেছে। যএসব! এদের ভাব দেখলে মনে হয় এক বাটি পানিতে ডুবে মরে যাই ।আর মেয়ে গুলোকে দেখো এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে আছে যেনো জিবনে কোনো দিন ছেলে দেখেইনি।ওরে বইন নিজেদের মুখটা একটু বন্ধ কর নাহলে তো মুখে মশা ঢুকে যাবে”
“ওদের ভাব নেওয়া আমি বের করছি।”
বলেই মেঘ বসা থেকে উঠে গিয়ে মিহির আর আহিরের সামনে দাড়ালো ।ওরা দুজন এতোক্ষন ওদের বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলো। মেঘকে এভাবে ওদের সামনে এসে দাড়াতে দেখে দুজনেই ভ্রু কুচকে মেঘের দিকে তাকালো। আহির বললো
“কিরে এভাবে ফুলে বেলুন হয়ে আছিস কেনো?”
মেঘ দাতে দাত চেপে বললো
“তোমরা আমাদের এতো কষ্ট করে বানানো নৌকা গুলোকে উড়িয়ে পানিতে কেনো ফেলে দিলে?”
আহির কনফিউসড হয়ে বললো
“যাহ বাবা! আমরা আবার কখন নৌকা উড়িয়ে পানিতে ফেলে দিলাম? মিহির কখনো শুনেছিস কাঠের নৌকা উড়িয়ে পানিতে ফেলা যায়?”
মিহির মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তুই কাঠ মিস্থিরির কাজ কবে থেকে শুরু করলি রে। আমাদের বলিসনি তো।”
মেঘ চেচিয়ে বললো
“একদম বাজে বকবে না। তোমরা আমাদের কাগজে তৈরি নৌকা গুলো উড়িয়ে পুকুরে ফেলে দিয়েছো। জানো?কতো কষ্ট করে ওইগুলো বানিয়েছি।”
মেঘের কথা শুনে আহির মিহির হা হা করে হেসে দিলো। সাথে ওদের বন্ধুরাও মুখ টিপে হাসছে। মিহির হাসতে হাসতে বললো
“এতো বড় মেয়ে কাগজ দিয়ে নৌকা বানিয়েছে।ভাবা যায়। ওহ গড, কেউ আমাকে একটা কচু গাছ এনে দে আমি সেটায় ঝুলে পড়ি।”
আহির এসে এক হাত মেঘের কাধে রেখে বললো
“নৌকা গুলো নিশ্চয়ই পানিতে ভাষানোর জন্যই বানিয়েছিলি। যেটা তোরা পরে করতি সেটা আমরা আগে করে দিয়েছি। পরে একটা একটা করে কষ্ট করে নৌকা গুলো তোদের পানিতে ভাষাতে হতো,এতে তোদের শক্তি আর সময় দুটোই নষ্ট হতো। এখন তোদের কাজটা আমরা সহজ করে দিয়েছি। এবার চুপচাপ ক্লাসে চলে যা।”
মেঘ ওর কাধ থেকে আহিরের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে হন হন করে সেখান থেকে চলে গেলো।মিহির অবাক গলায় বললো
“এটা কি হলো?ও কিছু না বলেই চলে গেলো। আজকে সূর্যটা কোন দিক থেকে উঠলো বলতো।”
“প্রত্যেক দিন সূর্য যে দিক থেকে উঠে আজও সেদিক থেকেই উঠেছে। ”
মেঘের কথা শুনে ওরা সবাই মেঘের দিকে তাকালো ।দেখলো মেঘ আর দিশা দুজন দুহাতে দুইটা পানির বোতল নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আহির আর মিহির চোখ ছোট ছোট করে ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে, ওরা কি করতে চাইছে। মেঘ আর দিশা আহির মিহিরের সামনে এসে বোতলের সব পানি ওদের মাথায় ঢেলে দিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সবার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো । মিহির আর আহির জোড়ে একটা চিৎকার দিলো। মিহির বললো
“ইউ ইডিয়েট! এটা কি করলি?”
মেঘ মিহিরের বুকে ঝুলানো সানগ্লাস টা নিয়ে নিজের চোখে দিয়ে বললো
“তোদের কাজটা সহজ করে দিলাম। দেখ তোরা বাড়িতে গিয়ে এমনিতেও সাওয়ার নিতি । যেটা তোরা একটু পর করতি সেটা আমি এখন করলাম। তেদের বাড়িতে গিয়ে কতো কষ্ট করৈ সাওয়ার নিতে হতো আমি তোদের কষ্টটা একটু কমিয়ে দিলাম আরকি।”
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_18
অসহায় বাচ্চাদের মতো মুখ করে মিরা রহমানের দিকে তাকিয়ে আছে মেঘ।কিন্তু তাতে মিরা রহমানের কোনো হেলদোল নেই ওনি ওনার মত করে একে একে লেহেঙ্গা , জুতা,ফুলের জুয়েলারি শপিং ব্যাগ থেকে বের করে খাটের উপরে মেঘের সামনে রাখছেন। মিরা রহমান ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললেন
“মুখ ফুলিয়ে বসে না থেকে তাড়াতাড়ি এগুলো পড়ে রেডি হয়ে নাও। আমাদের অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
মেঘ গাল ফুলিয়ে বললো
“মাম্মাম, আমি ওখানে যাবো না প্লিজ। তোমারা যাও, আমার ইচ্ছে করছে না ওখানে যেতে । ওখানে গেলেই দেখবে ,জেরিন আমার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে। ও আমাকে অপমান করার একটা চান্সও ছারবে না।”
“সেটা আমি জানি। শুধু জেরিন নয় ওখানের অনেকেই আছে যারা তোমাকে কথা শোনাবে । অপমান করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাও আমাদের ওখানে যেতেই হবে মেঘ। তোমার মেজ চাচ্চু নিজে এসে আমাদের ইনভাইট করে গেছে। তোমার বড় চাচ্চুও অনেক বার ফোন করেছে । এবার আমরা যদি না যাই তাহলে ওনাদের অপমান করা হবে।”
মেঘ মাথাটা নিচু করে বললো
“তোমরা তো সবাই যাচ্ছো আমি একা না গেলে কি হবে।”
“এতো কথা বলার সময় আমার নেই। প্লিজ তারতাড়ি রেডি হয়ে নেও যখন একবার বলেছি তোমাকে যেতে হবে মানে যেতেই হবে।”
কথাটা বলেই মিরা রহমান তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ।মেঘ কিছুক্ষন মন খারাপ করে বসে থেকে লেহেঙ্গা আর হিজাব হাতে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। আজকে মেঘের কাজিন ইফাদের হলুদ সন্ধ্যা। সেখানে মেঘদের সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে। মিহির প্রথমে ওখানে যেতে চাইছিলো না কিন্তু মিরা রহমান অনেক বোঝানোর পর যেতে রাজি হয়েছে।এই চার বছরের মধ্যে মেঘের মেজ চাচি আর চাচা ছাড়া ওর দাদু বাড়ির কারো সাথে ওদের যোগাযোগ ছিলো না। তাই মেঘের চাচ্চুরা বিয়ের সুতোয় ওদের ইনভাইট করে নিজেদের সম্পর্কটা আবার আগের মতো ঠিক করতে চাইছে।এই বিয়েতে প্রথমে আজম রহমান যেতে চাইছিলেন না। কিন্তু ভাইদের রিকোয়েষ্টের জন্য বাধ্য হয়ে রাজি হতে হয়েছে। যতোই হোক বড় ভাইদের কথা তো আর আমান্য করতে পারেন না।বিয়েটা ঢাকাতেই হচ্ছে। এখানে আবিরের বাবার একটা ফার্মহাউজ আছে বিয়ের আচার অনুষ্ঠান সব সেই বাড়িতেই হবে। মেঘের দাদু বাড়ির সব আত্মীয় স্বজনেরা সেখানেই আছেন।
______________
মেঘ ওয়াশরুম থেকে রেডি হয়ে বের হয়ে দেখে আহান ওর বেডের উপর বসে বসে ফোন টিপছে। মেঘ আহানের দিকে ভালো করে তাকালো আহান হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে,, সাথে সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবির উপরে সাদা রঙের কটি পড়েছে।ফর্সা জীম করা বডিতে হলুদ পাজ্ঞাবিটা বেশ মানিয়েছে। বামহাতে কালো রঙের একটা ব্যান্ডেড ওয়াচ। সিল্কি চুলগুলো কপালের উপরে এলোমেলো হয়ে পড়ে রয়েছে । মেঘ হা করে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে। আহানের থেকে চোখই সরাতে পারছে না।ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে এই লোকটা এতো সুন্দর কেনো। ছেলেদের এতো সুন্দর হতে নেই ,তা কি এই লোকটা জানে না?
আহান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো। মেঘ হা করে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘ একটা সলিড লেহেঙ্গা পড়েছে। লেহেঙ্গাটার নিচের স্কার্ট টা কাচা হলুদ কালারের,, টপস টা সাদা কালারের,, সাথে হলুদ কালারের লং কটি। মাথায় সাদা জরজেট হিজাব। চেহারায় কোনো রকম মেকআপ নেই । তাতেও মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
মেঘের লেহেঙ্গাটা সেদিন আহানই পছন্দ করে কিনে দিয়েছিলো। নিজের ড্রেসের সাথে মেচিং করে। মেঘ প্রথমে ভেবেছিলো আহানের পছন্দ করা কিছু কিনবে না। কিন্তু লেহেঙ্গাটা ওরও বেশ পছন্দ হয়েছিলো তাই আর অমত করেনি।
আহান একপা একপা করে মেঘের দিকে এগিয়ে এসে নিজের একহাত মেঘের কোমরে রাখলো তারপর একটানে মেঘকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো
“আমার মতো একটা নিষ্পাপ বাচ্চা ছেলেকে এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো? এটা কি ঠিক মায়াপরি? এরপর আমি যদি নিযেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে, তোমার সাথে ভুলভাল কিছু করে ফেলি তাহলে কিন্তু আমার কোনো দোষ নেই।”
আহানের কথা কানে আসতেই মেঘের ঘোড় কেটে গেলো, ও ছিটকে আহানের থেকে দূরে সরে গেলো। ওর হার্ট জোড়ে জোড়ে বিট করছে। মনে হচ্ছে এখনই হৃদপিণ্ড টা বেড়িয়ে আসবে ।এতোক্ষন কি করছিলো সেটা ভাবতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো মেঘ। মনে মনে বললো ছিহ মেঘ তুই এতোটা নিলজ্জ কবে থেকে হলি? শেষ পযর্ন্ত ওই অ্যাটিটিউটের দোকানটার দিকে এভাবে হা করে তাকিয়ে ছিলি? ছিহ এই লোকটা মনে মনে কি ভাবছে?মেঘ নিচের দিকে চেয়ে হাতের আঙুল কচলাচ্ছে।
মেঘকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে আহানের বেশ মজা লাগছে। ভাবলো মেঘকে আরেকটু লজ্জা দেওয়া যাক ,,তাই মেঘের আরেকটু কাছে গিয়ে ঠোটের কোনে একটা বাকা হাসি ঝুলিয়ে আহান বললো
“এটা তুমি কি করলে মায়াপরি ?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থেকে, দিলে তো আমাকে নজর লাগিয়ে? এইবার আমার কি হবে?”
আহানের কথা শুনে মেঘ চোখ বড় বড় করে আহানের দিকে তাকালো। আর দাত কটমট করে মনে মনে বললো এর মতো এওো বড় রাম ছাগলকে নাকি আমি নজর দিবো। ভাবা যায়? আর এমন ভাবে বলছে আমার কি হবে ?যেনো মনে হচ্ছে আমি ওনার ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করছি। হায় আল্লাহ এক বাটি পানি দেও, হয় আমি ডুবে মরি নাহলে এইটারে চুবাইয়া মারি। মেঘ রাগে ফোস ফোস করতে করতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে ফুলের গহনা গুলো একেক করে পড়তে লাগলো ।রাগে মেঘের নাকের ডগা লাল হয়ে গেছে। মেঘ আয়নায় দেখতে পেলো আহান ওর দিকেই একধ্যানে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।ও একপলক তাকিয়েই আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। মেঘ হালকা একটু মেকআপ করলো ঠোটে পাউডার পিংক কালারের লিভষ্টিক দিলো ,চোখের নিচে চিকন করে কালো কাজল দিলো।
মেঘ যতক্ষন ধরে সেজেছে ততক্ষনই আহান নিষ্পলক দৃষ্টিতে ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সাজ কম্পিলিট করে মেঘ আহানের সাইড কাটিয়ে আসতে নিলেই আহান খপ করে মেঘের হাতটা ধরে ফেলে। তারপর মেঘকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে নিজেও মেঘের পিছনে দাড়ায় , এরপর পাজ্ঞাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা একটা বক্স বের করে। মেঘ ভ্রু কুচকে বোঝার চেষ্টা করছে আহান অ্যাকচুলি কি করতে চাইছে। আহান বক্সটা থেকে একটা গোল্ড চেইন বের করে মেঘের গলায় পড়িয়ে দিলো। মেঘ হাত দিয়ে চেইনটা ধরে দেখতে লাগলো । চেইনটায় একটা লাভ শেপের লকেট আছে। লকেটার মধ্যে A লেখা। মেঘ তড়িঘড়ি করে চেইনটা খুলতে খুলতে বললো
“আমি এটা পড়বো না।”
আহান মেঘের হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বললো
“খবরদার মেঘ একদম এটা খোলার চেষ্টা করবে না।”
মেঘ নিজের হাত আহানের হাত থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো
“দেখুন এটায় A লেখা।আমি এটা কিছুতেই পড়তে পারবো না।”
“কেনো?”
মেঘ ক্ষেপে গিয়ৈ বললো
“আজব তো আমার নাম মেঘনা। তাহলে আমি A অক্ষর ওয়ালা লকেট চেইন কেনো পড়বো?”
আহান তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“আমি দিয়েছি তাই পড়বে।”
“দেখুন,, এটা যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে আমাকে সবার কাছে জবাব দিহি করতে হবে।সবাই আমাকে খারাপ ভাববে।আর এটা কার নামের লকেট? ”
“তোমাকে কতোবার বলবো যে, কে কি ভাবলো বা বললো তাতে আমার কিচ্ছু আসে যায়না। আর তোমাকে কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে না। কারন এটা আমার নামের লকেট। এটা সবসময় পড়ে থাকবে কখনো খুলার চেষ্টাও করবে না।”
“অদ্ভুত তো! আমি আপনার নামের লকেট কোন দুঃখে পড়বো।”
আহান মেঘের হাত দুটো আলতো করে পিছনে নিয়ে মুচরে ধরে মেঘকে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আহানের উষ্ণ নিশ্বাস মেঘের চোখে মুখে আচরে পড়ছে। মেঘ চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে । আহান মেঘের কানের কাছে এসে লো ভয়েজে বললো
“মেঘপরি তুমি সত্যিই কি এতোটাই অবুঝ? যে এটাও জানোনা তুমি আমার নামের লকেট কেনৌ গলায় পড়বে?কোনো ব্যাপ্যার না এখন থেকে জানবে। যেই ভয়ংকর আগুনে আমি ছয়টা বছর ধরে প্রত্যেকটা দিন প্রত্যেকটা মূহুর্ত পুরেছি, সেই একই আগুনে আমি তোমাকেও পোড়বো। তুমি ঠিক একদিন বুঝতে পারবে কতোটা যন্ত্রণা নিয়ে আমি এতো গুলো বছর বেচে ছিলাম।”
আহানের কথাগুলো মেঘের মনের গভিরে গিয়ে কোথাও একটা সুপ্ত অনৃভুতি তৈরি করছে। শীরদারা দিয়ে একটা একটা অদ্ভুত শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। মনের মধ্যে কেমন একটা অজানা অনূভুতি কাজ করছে। মেঘের ভাবনার মধ্যেই হঠাৎ আহান মেঘের হাতটা জোড়ে চেপে ধরলো। মেঘ ব্যাথ্যা কুকিয়ে উঠলো। আহান তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো
“ইউ নো মেঘ? আমি তোমাকে কখনো হার্ট করতে চাই না। একটা ফুলের টোকাও কখনো দিতে চাইনা তোমার গায়। তাই প্লিজ কখনো এমন কোনো কাজ করবেনা যাতে আমি তোমাকে হার্ট করতে বাধ্য হই।আর আমার অনুমতি ছাড়া যদি কখনো এই লকেট টা খোলার চেষ্টাও করেছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা । এই লকেটটা তোমাকে সবসময় মনে করিয়ে দিবে তোমার জিবনের সাথে আহান নামের একজনের খুব গভির ভাবে অস্তিত্ব মিশে আছে।”
______________________
দিশাদের ফ্লাটের সামনে দাড়িয়ে আছে একটা কালো রঙের গাড়ি । গাড়িটার ভিতরে বসে আছে অভি,আহান আর মেঘ। আহান ড্রাইভিং সিটে বসে ফোন টিপছে। অভি ওর পাশে বসে ফোনে গেমছ খেলছে। আর মেঘ পিছনে বষে বসে দাত দিয়ে নক কামরাচ্ছে। অভি গেমস খেলার মাঝে মাঝে চিল্লিয়ে বলে উঠছে এই ধর ধর এটাকে ,এই চলে গেলো তো,মার মার মার, এই যাহ চলেই গেলো। অভির এরকম চিল্লাচিল্লি শুনে আহান বিরক্তি নিয়ে বললো
“ওই , তুই এই চিল্লাচিল্লিটা একটু বন্ধ করবি, নাকি তোকে তোর ফোন সহ লাওি দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দিবো?”
অভি গেমস খেলতে খেলতে ফোনের দিকে চোখ রেখেই বললো
“আমাকে যা বলার বল । খবরদার আমার ফোনকে ভুলেও কিছু বলবি না। ইউ নো এইটা আমার জান।”
“তোর ওই জানের ভর্তা বানিয়ে আমি তোকে গেলাবো ইডিয়েট।”
বলেই আহান অভির হাত থেকে ফৌনটা নিয়ে গেমসটা কেটে দিলো। অভি চিল্লিয়ে বললো
“আমার গেমস,,,,আরেকটু হলেই আমি এই লেভেলটা পার করে যেতাম। শালা তুই আমার থেকে আমার জানকে কেড়ে নিলি তোর জিবনেও কোনদিন বিয়ে হবেনা দেখে নিস।”
আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
“হুহ,, শকুনের দোয়ায় গরু মরে না।”
“তারমানে তুই মানছিস তুই একটা গরু।”
বলেই অভি হাহা করে হেসে দিলো। অভির কথা শুনে মেঘও ফিক করে হেসে দিলো। আহান রেগে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“শাটআপ! খুব হাসি আসছে তাই না? বেশি হাসলে একদম দাত ভেঙে দিবো।”
অভি হাসতে হাসতে বললো
“ওর দাত ভেঙে দিলে কি তুই গরু থেকে মানুষ হয়ে যাবি?”
এমনিতেই মেঘ চেইন পড়তে চাইছিলোনা সেই বিষয়টা নিয়ে আহানের মেজাজটা ভিষন খারাপ হয়ে ছিলো। তার উপর অভির এই ত্যাড়াত্যাড়া কথা গুলো ওর রাগটা দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো। আহান রেগে অভির মাথাটা গাড়ির সামনে থাকা ডেস্কে চেপে ধরলো। অভিও ওর একহাত দিয়ে আহানের মাথাটা ডেস্কের সাথে চেপে ধরলো।তারপর দুজনের হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। দুজন যে যাকে পারছে মারছে । একে অপরকে চিমটি কাটছে, শুরশুরি দিচ্ছে ,,শার্ট ধরে টানছে, চুলধরে টানাটানি করছে কিন্তু দুজনের মুখ থেকে একটা টু শব্দও বের হচ্ছে যাকে বলৈ একদম সাইলেন্ট মারামারি। মেঘ হতবম্ভ হয়ে বসে আছে। এতো বড় ম্যাচিউড দুইটা ছেলে এভাবে বাচ্চাদের মতো মারামারি করছে। ভাবতেই মেঘের হেসে গড়াগড়ি খেতে ইচ্ছে করছে।
দিশা দৌরে এসে হাপাতে হাপাতে বললো
“সরি গাইস একটু দেরি হয়ে গেলো।”
কথাটা বলেই দিশার চোখ গেলো অভি আর আহানের উপর। ওদের দুজনকে এভাবে মারামারি করতে দেখে দিশা হা করে ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।অভি আহানের চুল টানতে টানতে বললো
“এতো দেরি কেউ করে মিস বিষা? দেখো তুমি এতো দেরি করেছো দেখে আহান রেগে আমাকে মারছে ।আর কি বলেছে জানো? ও নাকি ওয়েট করতে করতে একটা গরু হয়ে গেছে।”
দিশা রেগে বললো
“দেখুন সবার আগে আপনি আমার নামটা ঠিক করে ডাকুন। কতোবার আপনাকে বলবো আমার নাম বিষা নয় দিশা। সেদিন রেষ্টুরেন্টে আপনি আমাকে অনেক বার বিষা বলেছেন। বাইরে ছিলাম তাই কিছু বলতে পারিনি ।এখন আপনি আমাকে ঠিক নামে ডাকুন নাহলে আপনার খবর আছে ।”
“তাই নাকি?তা তুমি আমার কি করবে শুনি?তোমাকে তো আমি বিষা বলেই ডাকবো দেখি কি করতে পারো?”
দিশা দাতে দাত চেপে আহানকে উদ্দেশ্য করে বললো
“আহান ভাইয়া আপনি এনাকে নাকের উপর একটা ঘুশি মেরে নাকটা ফাটিয়ে দিন তো।”
অভি চোখ বড় বড় করে বললো
“কি সাংঘাতিক মেয়েরে বাবা। আমাকে মারার সুপাড়ি দিচ্ছে।তোমাকে তো আমি জেলের ভাত খাওয়াবো।”
দিশা চেচিয়ে বললো
“আপনাকে আমি পচা ডোবার পানি খাওয়াবো।”
অভি আহানকে একহাত দিয়ে মারছে আর দিশার সাথে ঝগরা করছে।মেঘ এতোক্ষন চুপচাপ বসে বসে এদের তামাশা দেখছিলো। এবার আর সহ্য করতে না জোড়ে একটা চিৎকার দিয়ে বললো
“শাটআপপপপ! একদম চুপ করো সবাই।”
মেঘের চিৎকারে অভি আহান একে অপরকে ছেড়ে দিলো। দিশাও ঝগরা থামিয়ে দিলো। মেঘ বললো
“আপনারা ডোবার পানি,খালের পানি, ডাষ্টবিনের পানি যে যাকে পারেন খাওয়ান। কিন্তু প্লিজ আমাকে কোথাও একটা পৌছে দিয়ে আসুন। নাহলে আমি আপনাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে আমি পাগল হয়ে যাবো।”
মেঘের কথা শুনে আহান গাড়ির মিররে তাকিয়ে নিজের চুল পাজ্ঞাবি ঠিক করে গাড়ি স্টার্ড দিলো। দিশাও অভিকে একটা ভেংচি কেটে মেঘের পাশে উঠে বসলো। দিশা গাড়িতে উঠতেই মেঘ দিশার গালে একটা চড় মেরে বললো
“যতোদিন যাচ্ছে তুই আস্তে আস্তে একটা ছ্যাচরা হয়ে যাচ্ছিস। যখন তখন যেখানে সেখানে ঝগরা শুরু করে দিস।”
দিশাকে থাপ্পর মারতে দেখে অভি তৃপ্তির একটা হাসি দিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এই না হলে আমার কিউট বোন। আমার সাথে হওয়া অন্যয়ের প্রতিশোধ নিয়েছে।”
বলেই অভি মেঘের সাথে হাই ফাইভ করলো। দিশা গালে হাত দিয়ে কাদো কাদো মুখ করে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে। আহান ড্রাইভিং করতে করতে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ডোন্ট ওয়ারি দিশা। তোমার সাথে আমি আছিতো। ওরা দুজন বেশি বাড়াবাড়ি করলে দুটোকে গাড়ি শুদ্ধ ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দিবো।”
আহানের কথা শুনে দিশা খিলখিল করে হেসে দিলো। আর অভি মুগ্ধ দৃষ্টিতে সেই হাসি দেখতে লাগলো।
চলবে,,,,
চলবে