#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_21
কারেন্ট আসতেই বিয়ে বাড়ির সবাই স্টেজের দিকে তাকালো। তাকিয়েই হতবম্ভ হয়ে গেলো। কেউ কেউ তো ভয়ে চিৎকারও দিলো।সাড়িকা সাঈফা দিশা ওরাও অবাক হয়ে গেলো,,যা করতে চেয়েছিলো তার পরিনাম যে এতোটা ভয়ংকর হবে তা ওরা সপ্নেও ভাবতে পারেনি। দিশা যেভাবে পড়ে গিয়েছিলো সেভাবে বসেই হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। সাড়িকা সাঈফা ফোনের ক্যামেরা অন করে সামনের দিকে ধরে স্টাচু হয়ে দাড়িয়ে আছে। আলিশা পফকন খাচ্ছিলো ভয়ে ওর হাত থেকে পফকনের প্যাকেট টা পড়ে গেলো। ও আম্মুগো ভুত ভুত বলে চিৎকার দিয়ে হিয়ান কে জড়িয়ে ধরলো। অভি, হিয়ান,আহির ঠোট চেপে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। কারন সামনে স্টেজে জেরিন কালো রঙে মাখামাখি হয়ে দাড়িয়ে আছে। শুধু রঙ নয় রঙের উপরে একগাদা সাদা তুলো । কালো রঙের উপরে সাদা তুলো পড়ায় জেরিনকে একদম ভয়ংকর দেখতে লাগছে । অবশ্য ওটা জেরিন কিনা সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। ওর চোখদুটো ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সামনে যেনো একটা কালো ভুত্মি দাড়িয়ে আছে। বিয়ে বাড়ির অতিথিরা সবাই হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। দিশাকে ওভাবে হা করে বসে থাকতে দেখে অভি দিশার কাছে গিয়ে ওর সামনে হাটু গেড়ে বসে আস্তে করে বললো
“কি হলো এভাবে শকড হয়ে বসে আছো কেনো? এগুলো তো তোমাদেরই প্লান ছিলো।”
দিশা অভির দিকে তাকিয়ে অবাক হওয়া কন্ঠে বললো
“বিশ্বাস করুন এভাবে ওকে দেখতে যে এতোটা ভয়ংকর লাগবে আমি সপ্নেও ভাবতে পারিনি। আল্লাহ আমি একটুর জন্য হার্ট অ্যাট্যাক করিনি।”
“এমন প্লান করো কেনো যাতে নিজেই হার্ট অ্যাট্যাক করো। (সাড়িকা সাঈফাকে দেখিয়ে)ওই দুইটাকে দেখে মনে হচ্ছে কোমায় চলে গেছে। আর তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি বিদ্যুতের ঝটকা খেয়েছো। তোমাকে একদম আমাদের বাসার সামনের পাগলটার মতো লাগছে।”
অভি উঠে দাড়িয়ে দিশার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো
“এবার তাড়াতাড়ি উঠে পড় নাহলে লোকে তোমাকে সত্যি সত্যি পাগল ভাববে। বলা তো যায়না,,আবার তোমাকে ধরে পাগলা গারদেও দিয়ে আসতে পারে।”
দিশা অভির হাতের উপর একটা থাপ্পর মেরে উঠে দাড়িয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“শাট আপ এন্ড গেট লষ্ট। আমার আপনার হেল্পের কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি আমার থেকে একশো হাত দূরে থাকবেন।”
বলেই দিশা হনহন করে করে সেখান থেকে চলে গেল। অভি মুচকি হাসি দিয়ে বিরবির করে বললো
“দূরে তো থাকতেই চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি থাকতে দিচ্ছো কই। কি দরকার ছিলো আজকে এভাবে ডান্স করার?জেড়িনকে তো অন্য ভাবেও শাস্তি দেওয়া যেতো। শুধু শুধূ নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনলে। এবার আমার থেকে তোমাকে কে বাচাবে সুইটহার্ট।”
_________________________
এইদিকে জেড়িন রেগে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ভাংচুর করছে। ষ্টেজটা পুরো তছনছ করে দিয়েছে। জেড়িনের মা, বাবা, আবির চেয়েও জেড়িনকে থামাতে পারছে না। ও ডেকরেশনের লোকদের হাবিজাবি বলে গালি গালাজ করছে। ওর মতে এইগুলো ডেকরেশনের লোকজনদের কাজ। এসব দেখে গেষ্টরা প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে । কেউ কেউ তো আবার জেড়িনের পাগলামি গুলো ভিডিও করছে। মোনা খান, আহাদ খান, মিরা রহমান,আজম রহমান,মেঘের দুই মামা-মামী ওনারা ফার্ম হাউজের ভিতরে চলে গেছে। ওনাদের এইসব ড্রামা দেখার কোনো ইচ্ছে নেই। তাছাড়া এটা যে আহিরদের কাজ সেটা ওনারা ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন। একে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান টা ভুন্ডুল হয়ে গেলো তার উপর জেড়িনের এমন পাগলের মতো ব্যবহারের জন্য রহমান পরিবারের সবাই কে মেহমানদের সামনে বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে ।জেড়িন অনেকক্ষন পর অনুভব করলো ওর শরীর ভিষন জ্বলছে। চোখের মধ্যেও জ্বালা করছে। ও তড়িঘড়ি করে ফার্ম হাউজের ভিতরে চলে গেলো সাওয়ার নেওয়ার জন্য।
_________________________
আহির,,দিশা,,সাড়িকা,, সাঈফা,,অভি ,,হিয়ান,, আলিশা,,ছাহীর ফার্ম হাউজের ছাদে গোল হয়ে বসে জেড়িনের লাফালাফির ভিডিও গুলো দেখছে আর ভাবছে এগুলো কোন কোন গ্রুপে আপলোড দিবে। তখনি ছাদে মিহির এলো,,এসে আহির কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“এইসব ফালতু কাজ করে কি লাভ হলো বলতো? ওই মেয়ে যা করেছে তাতে এইটুকু শাস্তি ওর জন্য যঠেষ্ট নয়। ওকে তো ভয়ংকর কোনো শাস্তি দেওয়া উচিত ছিলো। গায়ে একটু কালার আর তুলা ঢাললে আর কয়েকটা গ্রুপে ভিডিও পোস্ট করলে আর কিই বা হবে নাহয় একটু অপমানিতো হবে তাতে কি ওর করা অন্যায় গুলোর শাস্তি পূর্ণ হয়ে যাবে। ওকে তো জলন্ত আগুনে ফেলে দেওয়া উচিৎ।”
আহির বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে মিহিরের কাধে হাত রেখৈ বললো
“শান্ত হও বৎস। ওর শাস্তির সবেমাএ একধাপ শুরু হয়েছে তাই ট্রেলারটা একটু হালকার উপরে ঝাপসা দিয়ে শুরু করলাম। আর তোকে কে বললো ওর গায়ে শুধু কালার আর তুলো ঢেলেছি? ওই কালারের মধ্যে গোল মরিচের গুরো আর চুলকানির পাউডার ছিলো। কাল সকালে দেখবি দ্যা গ্রেট কিউট গার্ল জেরিন রহমানকে একদম শেওরা গাছের পেত্মির মতো লাগবে। কারন এমন চুলকানির পাউডার দিয়েছি পনেরো দিনের আগে চেহারায় কোনো মেকআপ ইউস করতে পারবে না। ”
ওদের কথার মাঝেই নিচ থেকে জেড়িনের কান্নার আওয়াজ ভেষে আসলো দিশা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“গাইস শো শুরু গেছে। তাড়াতাড়ি নিচে চলো আজকে কাকতাড়ুয়ার লাইভ ডান্স দেখবো।”
ওরা সবাই নিচে এসে দেখে জেড়িন নিজের রুমের বেডের উপর শুয়ে কাদছে আর কয়েকজন মিলে ওর শরীরে বরফ লাগিয়ে দিচ্ছে। আবির সোফায় বসে একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন টিপছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে জেড়িন মরে গেলেও ওর কিছু আসে যায় না। আহির,দিশা সাড়িকা,সাঈফা ওদের দেখে মনে হচ্ছে না,, ওরা যা করেছে তার জন্য ওদের মনে মিনিম্যাম অনুশোচনা টুকুও আছে। বরং ওদের চোখে মুখে স্পষ্ট খুশির ছাপ ফুটে আছে। অভি, হিয়ান, মিহির কেও বেশ খুশী খুশী লাগছে । জেড়িনের কান্না দেখে আলিশার একটু একটু মায়া হচ্ছে। কিন্তু ও মেঘের সাথে যা করেছে সেটা মনে পড়তেই মায়াটুকু আবার হাপিস হয়ে যাচ্ছে।
সাড়িকা আবির কে দেখিয়ে বললো
“থ্যাংকস টু আল্লাহ এই রাম ছাগলটার সাথে মেঘ আপ্পির বিয়ে হয়নি। দেখো একবার ,,নিজের বউ কতোটা কষ্ট পাচ্ছে আর এই গাধাটা বসে বসে ফোন টিপছে। বেয়াদপ একটা।”
সাঈফা বললো
“ওটাকে দেখলেই আমার খুন করে দিতে ইচ্ছে করে ।ব্যাট্যা হারামি একটা। ইচ্ছে তো করছে ওকেও জেড়িনের মতো কালা পানিতে চুবানি দিয়ে কালা কালা বানিয়ে দেই।”
ওদের দুজনের কথা শুনে দিশা আর আলিশা ফিক করে হেসে দিলো।
_________________________
মৃদ্যু আলোর ঝলকানি চোখে পরতেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো মেঘ। ঘুমু ঘুমু চোখে সামনে তাকাতেই দেখলো আহান সামনের সোফায় ঘুমাচ্ছে। মূহুর্তেই মেঘের সব ঘুম পালিয়ে গেলো ও একটা জোড়ে চিল্লানি দিয়ে ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চারপাশটা তাকিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলো। না এটা তো ওর রুম নয়। তাহলে এখন কোথায় আছে ও। এখানে আসলোই বা কিভাবে । এসব ভাবতে না ভাবতেই কাল রাতের সব কথা আস্তে আস্তে মনে পড়ে গেলো। আর এক রাশ বিসন্নতা এসে ওর মনে ভর করলো। মেঘের চিল্লানি শুনে আহান লাফিয়ে উঠলো । দ্রুত দৌড়ে মেঘের কাছে এসে অস্থির হয়ে জিঙ্গেস করলো
“কি হলো মেঘ?কোথায় কষ্ট হচ্ছে? খারাপ কিছু স্বপ্ন দেখেছো?”
মেঘ মাথা নিচু করে, না সূচক ঘাড় নাড়লো। তারপর মিনমিন করে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে জিঙ্গেস করলো
“আমরা এখন কোথায় আছি? এখানে কিভাবে এলাম?আর আমাকে বাসায় না নিয়ে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?”
“আমরা এখন রিসোর্টে আছি। আর কাল তুমি যখন অঙ্গান হয়ে গিয়েছিলে তারপর আমি তোমাকে নিয়ে এখানে এসেছি। ফার্ম হাউজ থেকে তোমাদের বাসা অনেক দূরে তাছাড়া অনেক রাতও হয়ে গিয়েছিলো তাই তোমাকে বাসায় না নিয়ে এখানে নিয়ে এসেছি। এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নাও। ব্রেকফাস্ট করে মেডিসিন খেতে হবে। রাতে ডাক্তার এসেছিলো তোমাকে বেশি স্ট্রেস নিতে বারন করেছে।”
মেঘ ফ্রেস হওয়ার জন্য কম্ভল টা সরিয়ে বিছানা থেকে নামতে যাবে তখনি ওর চোখ গেলো নিজের শরীরের দিকে ও সাথে সাথে আবার চিৎকার দিয়ে বিছানায় উঠে ভালো করে কম্বলটা নিজের গায়ে জরিয়ে নিলো।আহান বাইরে বের হতে যাচ্ছিলো মেঘের চিৎকার শুনে পিছনে তাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো
“আবার কি হলো? এইভাবে এতো কথায় কথায় বাচ্চাদের মতো চেচাও কেনো? ”
“আমার ড্রেস কোথায়?”
“তোমার গায়েই তো আছে।”
মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“আরে এটা তো একটা শর্ট নাইটি।আমার গায়ের লেহেঙ্গাটা কোথায়?আর আমার ড্রেস কে চেইঞ্জ করিয়েছে?”
আহান এগিয়ে এসে মেঘের বেডের পাশে দাড়িয়ে সাভাবিক ভাবেই বললো
“আমি চেইঞ্জ করিয়েছি। কেন কোনো সমস্যা?”
মেঘ কিছুক্ষন বড় বড় করে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো
“আপনার কি মনে হয় বলুনতো?আপনি এই কথা বলবেন আর আমি মুভির হিরোইনদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না শুরু করে দিবো? কখনো না।কারন আমি জানি আপনি আমার ড্রেস কখনো চেইঞ্জ করতেই পারেন না। আর পারমিশন ছাড়া তো কখনোই না। । আপনি কোনো মেয়েদের পারমিশন ছাড়া তাদের গায়ে হাত দেন না। আর আমি এটাও জানি অঙ্গান অবস্থায় আমার ড্রেস চেইঞ্জ করা দূরের কথা আপনি আমাকে খারাপ ভাবে ছুয়েও দেখেননি।”
মেঘের কথায় আহান স্তব্দ হয়ে গেলো। অবাক চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এই টুকু পিচ্চি মেয়েটা ওকে এতোটা বিশ্বাস করে? আহান হাতে আকাশের চাদ পাওয়ার মতো খুশি হয়ে গেলো । ও ধীর পায়ে মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে বিছানার উপর ওর পাশে বসে পড়লো। তারপর দুইহাত দিয়ে মেঘের গাল স্পর্স করে বললো
“অনেক বড় হয়ে গেছো তাইনা ?একদম বড়দের মতো পাকা পাকা কথা বলতে শিখে গেলো। আমি তো জানতাম তুমি আমাকে সহ্যই করতে পারোনা ।কিন্তু আমাকে যে এতোটা বিশ্বাস করো সেটা তো জানতাম না। ”
আহানের স্পশে মেঘ কেপে উঠলো। নিজের আজান্তেই ওর চোখ বন্ধ করে নিলো। বুকের মধ্যে কেমন ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। আহান মেঘের আরেকটু কাছে গিয়ে ওর কপালে অনেক সময় নিয়ে গভীর ভাবে একটু চুমু খেলো। তারপর মুখের উপরে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পিছনে গুজে দিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে বললো
“তুমি নিজেও জানো না ,আজকে আমি ঠিক কতোটা খুশি হয়েছি। আজকের সকাল টা আমার জন্য যে এতোটা মধুর হবে আমি ভাবতেও পারিনি। থ্যাংক ইউ সো মাচ এতোটা বিশ্বাস করার জন্য।”
বলেই আহান মেঘের দুই গালে দুটো ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে। উঠে দাড়িয়ে বললো
“তুমি ফ্রেস হয়ে নাও। আমি স্টাফদের তোমার ড্রেস আর খাবার দিয়ে যেতে বলছি। ”
কথাটা বলে আহান দরজার কাছে গেলো কিন্তু কিছু একটা মনে পড়তেই আবার মেঘের কাছে এসে ওর দিকে একটু ঝুকে বললো
“বাই দ্যা ওয়ে। পৃথিবীর সব মেয়েরা আমার কাছে হান্ড্রেড পার্সেন সেইফ হলেও তুমি আমার কাছে পুরোপুরি সেইফ নও । আমাকে এতোটাও বিশ্বাস করার কোনো দরকার নেই।আমি আবার তোমাকে দেখলেই যখন তখন কন্ট্রোল লেস হয়ে যাই। বলা তো যায় না আবার তোমার সাথে কখন ভুলভাল কিছু করে ফেলি।সো বি কেয়ারফুল।”
বলেই আহান চলে গেলো। মেঘ বিরবির করে বললো
“ব্যাট্যা আস্ত একটা ইতর । ”
________________________
সাড়িকা সাদে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কালকে গায়ে হলুদের যে পিক গুলো FB তে আপলোড দিয়েছিলো সেইগুলো সাঈফাকে দেখাচ্ছিলো। তখনই ছাদের দরজাটা ঠাস করে খুলে আহির প্রবেশ করলো। ওর চোখ গুলো ভয়ংকর লাল হয়ে আছে। চুলগুলো উসকো খুসকো দেখেই বোঝা যাচ্ছে সবেমাএ ঘুম থেকে উঠে এখানে এসেছে। চেহারার ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। আহির সাড়িকার সামনে এসে কোনো কিছু না বলেই ঠাস করে ওর গালে একটা চড় মারলো। সাড়িকা ছিটকে ছাদের উপর উপুর হয়ে পড়ে গেলো। আহির গিয়ে ওর হাত ধরে উঠিয়ে আবার আরেকটা চড় মারলো,,চড়টা খেয়ে সাড়িকা আবার পড়ে যেতে নিলেই আহির সাড়িকা কে ধরে ফেললো। তারপর ওর গাল জোড়ে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো
“তোর এতো সাহস আসে কোথা থেকে? তোকে আমি কালকে FB তে পিক আপলোড দিতে বারন করেছিলাম না? তাহলে কেনো ওই পিক গুলো আপলোড দিয়েছিস?”
সাঈফা এক কোনায় দাড়িয়ে ভয়ে কাপছে। সাড়িকা ছটফট করছে গাল থেকে আহিরের হাত ছাড়ানোর জন্য। সাড়িকা বললো
“ভাইয়া ছ-ছাড়ো প্লিজ,, ল-লাগছে আমার।”
“লাগুক! আমার কথা অমান্য করার সময় মনে ছিলো না? আমাকে রাগালে আমি তোর কি অবস্থা করবো?”
সাড়িকা আহিরের হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে ওকে থাক্কা দিয়ে চেচিয়ে বললো
“তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে থাপ্পর মারার। তুমি আমার গার্জিয়েন নাকি যে আমাকে তোমার সব কথা শুনে চলতে হবে?”
সাঈফা যতো দোয়া পারতো সব মনে মনে পড়ে ফেলেছে। সাড়িকাকে এভাবৈ কথা বলতে দেখে ভয়ে ওর হাত পা কাপছে । বিরবির করে বললো
“ওরে গাধি বাচতে চাইলে মুখটা বন্ধ রাখ। এমন ভাবে কথা বললে আহির ভাইয়া তোকে পিষে চ্যাপ্টা চিড়া বানিয়ে দিবে। আল্লাহ আমার বুদ্ধিহীন বোনটাকে এই রাক্ষশের হাত থেকে বাচাও।”
সাড়িকা বললো
“কয়েকটা পিক আপলোড দিয়েছি তাতে কি এমন মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে গেছে শুনি?যে তুমি আমার সাথে এই রকম বিহেব করছো। মিঃ সাফোওয়ান সিজাত আহির তুমি আমার কোনো ব্যাপ্যারে যদি কখনো নাক গলিয়েছো তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে বলে দিলাম।”
“আচ্ছা তাই নাকি তা কি খারাপ করবি তুই আমার ?আমি তোর সামনেই দাড়িয়ে আছি,, সাহস থাকলে কি করবি করে দেখা। আর কয়েকটা পিক আপলোড দিয়েছিস তাতে কি হয়েছে তাইনা? দাড়া দেখাচ্ছি কি হয়েছে।”
বলেই আহির নিজের ফোনটা অন করে সাড়িকার আইডিতে ঢুকলো।তারপর কালকের পিক গুলোর কমেন্ট বক্সে ঢুকে একটা একটা করে কমেন্ট পড়তে লাগলো। একেকজন একেক ধরনের কমেন্ট করেছে ।তার মধ্যে ছেলেরাই বেশি। লুকিং নাইস,প্রিটি, কিউট, সুইট এইসব সাধারন কমেন্ট যেগুলো সবাই সাধারনত ইউজ করে থাকে। আহীর বললো
“ছেলেরা এই ধরনের কমেন্ট কেনো করবে? আর ফ্রেন্ড লিষ্টে এতো ছেলেই বা থাকবে কেনো?”
সাড়িকা ঝাড়ি মেরে বললো
“কমেন্ট গুলোয় তুমি খারাপ কি দেখলে এগুলো সাধারন কমপ্লিমেন্ট যেগুলো আমরা সব সময় ইউজ করে থাকি।আর আমার ইনবক্সে কাকে ফ্রেন্ড রাখবো আর কাকে রাখবো না সেটা আমার ব্যাপ্যার তুমি বলার কে।”
আহীর সাড়িকার হাত পিছনে মুচরে ধরে বললো
“সব পিকস গুলো এখনি ডিলেট দিবি নাহলে তোর আইডিটার এমন অবস্থা করবো ওটা খুজেই পাবি না।”
“যা খুশি করো আমি ওগুলো কিছুতেই ডিলেট দিবো না।”
আহির সাড়িকার হাতটা ছেড়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
“গুড বাই।আর নিজের নিউ আইডির কি নাম রাখবি সেটা ডিসাইড করেনে।টাটা”
বলেই আহির নিচে চলে গেলো। সাঈফা সাড়িকার কাছে এসে বললো
“ওই গাধি কি করলি এটা?এইবার তোর আইডিটাকে কেউ বাচাতে পারবে না ওটা আজকে গেলো।”
“আরে ছাড়তো এই লুজার আবার কি করবে। এরা শুধু মুখেই বড় বড় কথা বলতে পারে কাজের বেলায় ঘেচু।”
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_22
“আরে ছাড়তো এই লুজার আবার কি করবে। এরা শুধু মুখেই বড় বড় কথা বলতে পারে, কাজের বেলায় ঘেচু।”
সাঈফা সাড়িকার মাথার পিছনে একটা থাপ্পর মেরে বললো
“ওরে ছাগল আহির ভাইয়াকে এখনো চিনতে পারলি না । ভাইয়া যা বলে তাই করে দেখায়। আজকে তোর আইডির বির্ষরজন হবে। কালকে তোকে কতো বার বারন করেছিলাম পিক গুলো আপলোড না দেওয়ার জন্য ।কিন্তু তুই তো আমার কোনো কথাই শুনলি না। এবার মজা বোঝ।”
“শাটআপ! একদম ওই আহিরের বাচ্চার চামচে গিরি করবি না।”
ব্যাস দুইজন সব কাজ ভুলে আবার ঝগরার কাজে লেগে গেলো।
_______________________
মেঘ ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো আলিশা বেডের উপরে বসে আছে। ও অবাক হয়ে আলিশার কাছে গিয়ে জিঙ্গেস করলো
“আপি তুমি কখন আসলে।”
আলিশা মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো
“কালকে রাতেই এসেছি।”
“কিন্তু কেনো? তুমি বিয়ে বাড়ি ছেড়ে এখানে কি করছো? আর তুমি কার সাথে এখানে এসেছো?”
“হিয়ানের সাথে এসেছি। আর কালকে রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে আহান ভাইয়া হিয়ানকে ফোন করে বলে,, কাউকে কিছু না বলে যেনো আমাকে নিয়ে এই রির্সোটে চলে আসে। আমরাও ভাইয়ার কথা মতো এইখানে চলে এসেছি। এসে দেখি তুইও এখানে আছিস ।ভাইয়া আমাদের এখানে কেনো আসতে বলেছে ষেটা জিঙ্গেস করায় ভাইয়া আমাদের সবটা খুলে বললো। আর এটাও বলেছে যে সবাই যদি জানতে পারে তুই আহান ভাইয়ার সাথে আছিস,,তাহলে সবাই তোর নামে আজে বাজে কথা বলবে । তাই ভাইয়া ওইখানে মিহিরকে দিয়ে বলিয়েছে আমি আর তুই আমাদের বাড়িতে চলে গেছি। আর আহান ভাইয়া আর হিয়ান ওদের নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে। ”
আলিশার কথা শুনে মেঘ অবাক হলো মনে মনে বললো এই লোকটা আমার সম্মানের কথা এতোটা ভাবে? আমাকে যাতে কেউ আজেবাজে কথা বলতে না পারে তাই হিয়ান ভাইয়াকে আর আলিশা আপুকে এখানে ডেকে এনেছেন । যে লোক মেয়েদের সম্মানের কথা এতো ভাবে তাকে আমি কেনো পৃথিবীর যেকোনো মেয়েই চোখ বুজে বিশ্বাস করতে পারবে । দরজায় টোকা পড়তেই মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটলো। দরজার ওপাশ থেকে একজন মেয়েলি কন্ঠে বললো
“মে আই কাম ইন ম্যাম?”
আলিশা বললো
“কাম ইন।”
পারমিশন পেয়েই একজন পচিশ ছাব্বিশ বছরের মেয়ে রুমে প্রবেশ করলো। মেয়েটার হাতে একটা ফুড ট্রলি। আর মুঠের মধ্যে একটা শপিং ব্যাগ। গায়ে ইউনিফম পড়া । দৈখেই বোঝা যাচ্ছে এই রির্সোটের কোনো স্টাফ। মেয়েটা ফুড ট্রলিটা এক সাইডে রেখে মেঘের কাছে এসে হাতের ব্যাগটা মেঘের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ঠোটের কোনে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে বেশ ফরমাল ভাবে বললো
“ইউর ড্রেস ম্যাম। ড্রাই ক্লিন করানো হয়েছে এবার পড়তে পারেন।”
মেঘ মিষ্টি হেসে বললো
“থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
“ইউ আর মোষ্ট ওয়েলকাম ম্যাম। আপনার শরীরের অবস্থা এখন কেমন ম্যাম?আগের থেকে একটু বেটার ফিল করছেন?”
“জ্বি আগের থেকে অনেকটা বেটার ফিল করছি।”
“ওকে টেইক কেয়ার। আমি এখন আসছি। আপনার ব্রেকফাস্ট ওখানে রাখা আছে খেয়ে নিবেন। গুড ডে ম্যাম।”
বলে মেয়েটা যেতে নিলেই মেঘ পিছন থেকে ডাকলো। মেঘের ডাকে মেয়েটি ওর কাছে এসে জ্ঞিগেস করলো
“কিছু বলবেন ম্যাম?”
মেঘ একটু ইতস্তত করে বললো
“না মানে আসলে বলতে চাইছিলাম যে কালকে রাতে আমার ড্রেসটা কে চেইঞ্জ করেছে ।”
“আমি করেছি ম্যাম। আসলে আপনার লেহেঙ্গাটায় একদম হলুদ লেগে নোংরা হয়ে গিয়েছিলো । তাই স্যার (আহান) বলেন ওটা যাতে আমি চেইঞ্জ করে ড্রাই ক্লিন করিয়ে দেই। কেনো কোনো সমস্যা হয়েছে?”
“না না কোনো সমস্যা নেই । যাষ্ট এমনিতেই জিঙ্গেস করেছি। আপনি এখন আসতে পারেন।”
বলেই মেঘ জোড় পূর্বক একটা হাসি দিলো। মেয়েটিও ফরমালিটিজ বজায় রাখার জন্য একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো।মেয়েটি যেতেই আলিশা এসে মেঘের কান টেনে দিয়ে বললো
“তুই কি ভেবেছিলিস তোর ড্রেস আহান ভাইয়া চেইঞ্জ করিয়েছে।”
মেঘে লাফাতে লাফাতে বললো
“আহ আপি কি করছো লাগছে তো। বিশ্বাস করো আমি আগেই জানতাম ওনি আমার ড্রেসটা চেইঞ্জ করান নি। তাও মনে একটা কিউরোসিটি ছিলো সেটা দূর করার জন্যই প্রশ্নটা করলাম।”
“মেরে তোর কিউরোসিটি ছুটিয়ে দিবো । সারা রাত বসে বসে ছেলেটা ওনার সেবা করে গেছেন আর ওনি কিউরোসিটি দূর করছে। জানিস ভাইয়া সারা রাত ঘুমায়নি,, আমি ফজরের সময় নামাজ পড়তে উঠেছিলাম,,এখানে এসে দেখি আহান ভাইয়া তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে । আমি জোড় করে ভাইয়াকে সোফায় নিয়ে শুইয়ে দিয়েছি। বলেছি ,, ভাইয়া যতোক্ষন না উঠবে আমি তোর কাছে থাকবো। তারপর উনি একটু ঘুমিয়েছেন। আর তুই কি করছিস ভাইয়াকে সন্দেহ করছিস । আরে ওনার যদি তোর সাথে উল্টোপাল্টা কিছু করারই হতো তাহলে আমাদের ফোন করে এখানে ডাকতো না, বুঝেছিস গাধি?”
“হ্যা হ্যা বুঝে গেছি । আমার কানটা ছাড়ো প্লিজ ওটা ছিড়ে গেলে আমার আর বিয়ে হবে না। তুমি জিবনেও খালামনি ডাক শুনতে পাবে না । আর তোমারও বিয়ে হবে না। লোকে বলবে এই ধরনের দজ্জাল মেয়েকে জিবনেও বাড়ির বউ বানাবো না। যেই মেয়ে উব বি ননদের কান ছিড়ে দেয় সেই মেয়ে না জানি শাসুরির কি অবস্থা করবে।”
মেঘের কথা শুনে আলিশা ফিক করে হেসে দিলো। মেঘ এতোক্ষন কি সব আজাইরা কথা বলেছে সেটা মনে পড়তেই ও হেসে দিলো।
_________________________
মেঘ,, আলিশা, হিয়ান ,আহান রুমে বসে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে।নয়টার দিকে রির্সোটে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লো। হিয়ান আর আলিশা ওদের গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। মেঘ আহানের সাথে ওর গাড়িতে করে রওনা দিলো। সারে দশটার দিকে ওরা ফার্ম হাউজে পৌছে গেলো । মেঘ আর আহান গাড়ি থেকে নামতেই কোথা থেকে সাড়িকা এসে আহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে দিলো। পিছনে পিছনে সাঈফাও আসলো। আহান অবাক কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“সাড়িকা কি হয়েছে এভাবে কাদছিস কেনো?”
সাড়িকা কিছু বলছে না শুধু কেদেই যাচ্ছে। মেঘ ড্যাবড্যাব করে সাড়িকার দিকে চেয়ে আছে। আহান সাঈফার দিকে চেয়ে বললো
“সাঈফু কি হয়েছে ওর?এভাবে কাদছে কেনো?”
সাঈফা অসহায় কন্ঠে বললো
“আহীর ভাইয়া ওর আইডিটা হ্যাক করে ওর FB আইডির এর পাসওয়ার্ড চেইঞ্জ করে দিয়েছে। তাই ও আর FB তে লগইন করতে পারছে না । আহীর ভাইয়াকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছি কিন্তু ভাইয়া পাসওয়ার্ড বলেই নি উল্টো ওর ফোনটাও রেখে দিয়েছে।”
আহান ভ্রু কুচকে জিঙ্গেস করলো
“আইডি কেনো হ্যাক করেছে। কি করেছিস তোরা।”
সাঈফা সকালে যা যা হয়েছে সেগুলো গরগর করে আহানকে বলে দিলো। সাঈফার কথা শেষ হতেই আহীর আর মিহির ওদের কাছে এসে দাড়ালো। আহীর সাঈফাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ওরে চুকলি খোর ব্রো আসতে না আসতেই আমার নামে চুকলি শুরু করৈ দিয়েছিস। দাড়া আগে ওরটা নিয়েছি এবার তোরটাও নিবো । তোর আইডিটাও আজকে শেষ হয়ে যাবে।”
আহীরের কথা শুনে সাঈফা আহীরের কাছে গিয়ে ওর গাল দুটো টেনে দিয়ে একটা ক্যাবলা কান্ত মার্কা হাসি দিয়ে বললো
“আমার কিউট ভাইয়াটা। তুই জানিস আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি। বিশ্বাস কর আমি তোর নামে একদম চুকলি করছিলাম না। আমি কি তোর নামে চুকলি করতে পারি বল?আমি তো সব সময় সবার কাছে তোর নামে প্রশংসা করি। আমার আইডিটার কিছু করিস না প্লিজ। ওটা চলে গেলে আমার কি হবে বল। আমি তো পরিচয় হীন হয়ে যাবো।”
সাড়িকা কাদতে কাদতে আহানকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“দেখেছো ভাইয়া কি পাল্টিবাজ মেয়ে একটা। সেকেন্ডে সেকেন্ডে টিকটিকির মতো রঙ পাল্টায়। যেই শুনেছে ওর আইডিটা চলে যাবে অমনিই নিজের দল বদল করে নিলো। কুওি একটা।”
আহান ষাঈফার দিকে তাকিয়ে বললো
“সাঈফা তুই তো খুব দুষ্ট হয়ে গেছিস তোকে একটা মাইর দিতে হবে।”
সাড়িকা নাক টানতে টানতে বললো
“আহান ভাইয়া ওরে মাইর পরে দিবে, আগে তোমার ওই কুওা ভাইকে আমার আইডি আর ফোনটা ফেরত দিতে বলো।”
আহান সিরিয়াস হওয়ার ভান করে বললো
“এই কুওা ভাই ওর আইডি আর ফোনটা ফেরত দে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আর সাঈফা ফিক করে হেসে দিয়ে আবার নিজেদের মুখ চেপে ধরলো। আহীর দাতে দাত চেপে সাড়িকা কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“তোর সাহস তো কম না।তুই আমাকে কুওা বলিস?তোকে আজকে মেরেই ফেলবো।”
বলেই আহীর সাড়িকার দিকে তেড়ে যেতে নিলেই। আহান গম্ভির কন্ঠে বলে
“খবরদার আহীর এক পাও এগোবি না। তোরা যেমন মেঘকে কেউ কিছু বললে রেগে যাস তেমনি সাড়িকা, সাঈফা,হিমা, আলিশা, দিশা ওরাও কিন্তু আমার বোন।ওদের কেউ কিছু বললে আমিও কিন্তু তাদের ছেড়ে দিবো না। এমনকি আমার ভাইয়েরা হলেও না।চুপচাপ ওর ফোনটা ফেরত দিয়ে দে।”
“নো ওয়ে ব্রো ও আমার কথার অমান্য করার ষাহস দেখিয়েছে। আইডিটা তো ও কিছুতেই পাবে না । পৃথীবি উল্টে গেলেও না। তুমি প্লিজ এই বিষয়ে কোন কথা বলবে না ।আর বললেও আমি শুনবো না।”
“ওকে কোনো ব্যাপ্যার না। তুই আমার কথা শুনবি না তো, শুনতে হবে না। তুই যদি সাড়িকার ফোন আর আইডিটা ফেরত না দিস, তাহলৈ আমি তোর আইডি টাও হ্যাক করাবো।আমার চেনাজানা অনেক হ্যাক্যার আছে। যাদের তোর মতো পুচকে হ্যাক্যারের আইডি হ্যাক করতে মাএ পাচ মিনিট লাগবে। তখন কেমন হবে বলতো?”
বলেই আহান পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করল। আহির গিয়ে সাড়িকাকে টান দিয়ে আহানের থেকে ছাড়িয়ে এনে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে পকেট থেকে সাড়িকার ফোনটা বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো
“এই নে তোর ফোন। খুব বড় একটা ভূল করলি ।আজকে নাহয় ব্রো এর জন্য বেচে গেলি। কিন্তু এরপর থেকে তোকে আমার হাত থেকে কে বাচাবে ।”
সাড়িকা আহীরের হাতটা ঝাড়া দিয়ে ছাড়িয়ে বললো
“তুমি আমার কিচ্ছু করতে পারবৈ না। এই সব হুমকি গিয়ে অন্য কাউকে দিবে যাও সর সামনে থেকে। এন্ড বাই দ্যা ওয়ে পাসটা বলো।”
আহির দাতে দাত চেপে বললো
“আমার ফোন নাম্বারটা উল্টোভাবে বসালেই হবে। ”
সাড়িকা একটা ভেংচি কেটে আহানকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো
“লাভ ইউ ভাইয়া। এন্ড থ্যাংক ইউ সো মাচ।”
বলেই সাড়িকা দৌরে ফার্ম হউজের ভিতরে চলে গেলো।ওর পিছনে পিছনে সাঈফাও চলে গেলো। দুই বোনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আহান মুচকি হেসে দিলো।আহীর আহানের দিকে তাকিয়ে রাগে ফোস ফোস করতে করতে চলে গেলো।
_________________________
আহান ড্রাইভিং করছে ওর পাশের সিটে মেঘ বিষন্ন মনে বসে আছে। মেঘদের বাসার সামনে এসে আহান গাড়িকা থামালো ।মেঘ কিছু না বলেই চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে নেমে যেতে লাগলো। আহান মেঘের হাতটা টেনে ধরে এনে নিজের বুকের সাথে মেঘের পিঠটা মিশিয়ে ফেললো। তারপর ওর ঘাড়ে মুখ গুজে লো ভয়েজে আহান বললো
“কি হয়েছে মেঘ পড়ি? মুখটা এভাবে কালো করে রেখেছো কেনো?”
মেঘের চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গাড়িয়ে পরলো। ও কান্নাজড়িত কন্ঠে বললো
“এই সব কিছু আমার জন্য হয়েছে । আপনি আমার জন্য এতোটা হার্ট হয়েছেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি বুঝতেই পারিনি আমার সামান্য একটা কথায় এতো বড় ঝামেলা হয়ে যাবে।”
আহান শক্ত করে মেঘকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করে বললো
“সব কিছুর জন্য নিজেকে দোষ দেওয়াটা বন্ধ করো মেঘ। তোমার জন্য কিচ্ছু হয়নি। যা করেছে ওই থার্ড ক্লাস মেয়েটা করেছে। তোমার এতে কোনো দোষ নেই।”
___________
(ফ্লাস ব্যাক )
আহীর চলে যাওয়ার পর মিহিরও ওর পিছনে পিছনে চলে গেলো। আহান আর মেঘ বাসার ভিতরে গেলো। ড্রইং রুমে ঢুকতেই মেঘের চোখ গেলো ড্রইং রুমের সোফার উপর।সেখানে জেড়িন সোফার সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে । ওর সাড়া গায়ে লাল র্যাস পড়ে গেছে । চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে। চুলগুলো উসকো খুসকো চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট । পাশেই জেড়িনের মা বসে বসে জেড়িনকে ব্রেড খায়িয়ে দিচ্ছে। জেড়িনকে এমন অবস্থায় দেখে মেঘ অবাক হয়ে গেলো। যে মেয়েটা কাল অবদি ঠিকঠাক ছিলো,, আজকে কি এমন হলো যাতে সেই মেয়েটাকে এতোটা বিষন্ন লাগছে? আহান জেড়িনের দিকে এক পলক তাকিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসে পড়লো। জেড়িনকে এমন অবস্থায় দেখে মেঘের একটু মায়া হলো। ও ধীর পায়ে জেড়িনের মায়ের কাছে গিয়ে নীচু স্বরে জিঙ্গেস করলো
“ফুপি মনি ওর কি হয়ৈছে?ওকে এমন লাগছে কেনো?”
মেঘের কন্ঠ কানে আসতেই জেড়িন মাথা তুলে মেঘের দিকে তাকালো । সাথে সাথে জেড়িনের বিষন্ন মুখটা হিংস্র হয়ে উঠলো। ও উঠে দাড়িয়ে চিল্লিয়ে বললো
“তুই এখানে কি করছিস? এক্ষনি বেরো আমার বাড়ি থেকে। থার্ড ক্লাস মেয়ে একটা । এই সব কিছু তোর প্লান তাইনা? তুই আর দিশা মিলে এইসব কিছু করেছিস । তোরা ইচ্ছে করে আমার গায়ে এইসব ঢেলেছিস। তুই আমাকে মেরে ফেলতে চাস তাইনা?”
জেড়িনের চিৎকারে মেঘ কেপে উঠলো। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো। মেঘের মা-বাবা ,আহানের মা-বাবা, সাড়িকা সাঈফার মা-বাবা,চাচা-চাচী, অভি দিশা ওনারা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো।জেড়িনের চিৎকারে ওনারা সবাই উঠে ড্রইং রুমে এলো সাথে আহানও আসলো। মেঘ ভয়ার্ত গলায় বললো
“তুই কি বলছিস এসব?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিস না। আমি আবার তোর গায়ে কখন কি ঢাললাম?”
“আমাকে খুন করতে চেয়ে আবার নেকামি হচ্ছে। ক্যারেক্টার লেস মেয়ে একটা তুই আমার থেকে আবির কে কেড়ে নিতে চাস তাইনা?তাই তুই আমাকে মারতে চেয়েছিস। কিন্তু আমি সেটা কিছুতেই হতে দিবো না। তুই আমার থেকে আমার আবির কে কেড়ে নিবি তার আগেই আমি তোকে খুন করে ফেলবো।”
বলেই জেড়িন আশেপাশে তাকিয়ে কিছু একটা খুজতে লাগলো। সোফার সামনে টেবিলের উপরে একটা ফ্লোয়ার ভাস রাখা ছিলো জেড়িন সেটা হাতে নিয়ে মেঘের দিকে ছুড়ে মারলো। আহান দৌড়ে এসে মেঘকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আড়াল করে ফেললো। ফ্লোয়ার ভাসটা এসে আহানের পিঠে উপর পড়লো। আহান ব্যাথ্যায় হাটু ভেঙে মেঘকে জড়িয়ে ধরে রেখেই ফ্লোরে বসে পড়লো। আহানের এমন অবস্থা দেখে মেঘ জোড়ে একটা চিৎকার দিলো।ড্রইং রুম ভর্তি সব মানুষ হতবম্ভ হয়ে গেলো। ঠিক তখনই কেউ জেড়িনের গালে সজোড়ে একটা চড় মাড়লো।
চলবে………
#চলবে,,,,,,,,,,,