#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্ব_33
আহান কি বলছে তাতে মেঘের কিচ্ছু গেলো আসলো না।ও আহানের কথা কানেই তুললো না।ও আরো জোড়ে ছুটতে লাগলো।আহান মেঘকে আরো জোড়ে ছুটতে দেখে ওর মাথাটা গরম হয়ে গেলো।ও আর নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারলো না।ওর হাতে থাকা গানটা মেঘ যেদিকে ছুটে যাচ্ছে সেদিকে পয়েন্ট করে সোজা টির্গারে চাপ দিলো।সাথে সাথে গুলিটা গিয়ে একদম মেঘের সামনে থাকা একটা ফুলের টবে লাগলো।গুলি লেগে ফুলের টব টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পোড়া মাটির টুকরো গুলো আশে পাশে ছড়িয়ে পড়লো।মেঘ এমনিতেই আগে থেকে ভীষন ভয় পেয়ে ছিলো,তার উপর আহানের এমন হঠাৎ গুলি চালানোতে ও আর সহ্য করতে পারলো না।গুলির শব্দে ভয়ে সেন্সলেস হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।মেঘকে পড়ে যেতে দেখে আহান দৌড়ে মেঘের কাছে এসে, গান টা কোমরে গুজে মেঘকে পাজ-কোল করে তুলে নিয়ে বাসার দিকে হাটা দিলো।
আহান আগে থেকেই জানতো এমন কিছু একটাই হবে।কারন মেঘ অতিরিক্ত ভয় পেলে সেন্সলেস হয়ে যায়। বিশেষ করে রক্ত, মারামারি,অতিরিক্ত সাউন্ড এইসব ও একদমই সহ্য করতে পারে না।তাই আহান মেঘকে থামানোর জন্য ইচ্ছে করেই ফুলের টব টার উপরে গুলিটা ছুড়েছে। আর যাহ ভেবেছিলো তাই হয়েছে, মেঘ গুলির শব্দে অতিরিক্ত ভয় পেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে।
_______________________
সন্ধ্যা 5:35
নবীন বরনের অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে।আস্তে আস্তে সবার পার্ফরমেন্স শেষ হয়ে গেছে।এখন শুধু বাকি আছে অনুষ্ঠানের মূল আর্কষন কাপল ডান্স।মাগরিবের আযান দিতেই সবাই আরেকটা ছোট্ট ব্রেক নিয়ে নামাজ পড়ে আসলো।নামাজ পড়ে এসে সবাই আবার আগের মতো নিজেদের জায়গায় বসে পড়লো।তবে এখন দুপুরের থেকে চারপাশ টা আরো বেশি সুন্দর লাগছে।চারপাশে বিভিন্ন রঙের লাইট জ্বলছে।লাইটিং এর আলোতে সবার চোখ ধাধিয়ে উঠছে।ষ্ট্রেজ থেকে শুরু করে সবার বসার জায়গা পুরো এড়িয়া এতোটাই সুন্দর করে লাইটিং এবং ডেকারেশন করেছে যে সবাই পলকহীন ভাবে সেটা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
দিশা আর রিজা ষ্টেজে উঠে গিয়ে কাপল ডান্সের এনাউন্সমেন্ট করে দিলো সাথে ডান্সের নিয়ম গুলোও বলে দিলো।নিয়মগুলো হচ্ছে প্রথম একটা সং প্লে করা হবে তাতে সবাইকে তাদের কাপলদের সাথে ষ্টেপ বাই ষ্টেপ ডান্স করতে হবে।ডান্সের মাঝখানে সবাই নিজেদের পার্টনারকে বারবার একে অপরের সাথে চেইঞ্জ করতে থাকবে।গান চলা অবস্থায় যে কাপর ষ্টেপ ভুলে যাবে বা ডান্স থামিয়ে দিবে অথবা এ্যাক্সিডেন্টলি নিচে পড়ে যাবে,তারা কমপিটিশন থেকে বাদ হয়ে যাবে।এভাবে একটা একটা করে কাপল বাদ পরবে আর নতুন করে সং প্লে হতে থাকবে।সবাইকে এক টানা ততোক্ষন ডান্স করতে হবে যতোক্ষন না পযর্ন্ত একজোড়া উইনার সিলেক্ট করা যায়।সবার লাষ্টে যে কাপল জোড়া থাকবে তারাই এই কমপিটিশনের উইনারের ট্রফি পাবে।
এনাউন্সমেন্ট করে দিশা আর রিজা ষ্ট্রেজ থেকে নিচে নেমে আসলো।ওরা ষ্টেজের এক সাইডে এসে দাড়ালো।দুজনের চোখে মুখেই ষ্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ।রিজা চোখ মুখ কুচকে এক হাত কোমরে দিয়ে ক্লান্ত স্বরে দিশাকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“ইয়ার আজকে আমি শেষ।দাড়িয়ে দাড়িয়ে উপস্থাপনা করতে করতে আমার কোমরের নাট বল্টু ঢিলা হয়ে গেছে।খুব খিদে পেয়েছে,,মাথা ব্যাথ্যা করছে,,গলা শুকিয়ে গেছে,,পা ব্যাথ্যা করছে,,হিজাবের মধ্যে ঘামে ভিজে গেছে,,চোখের মধ্যে জ্বলছে,,হাতের,,,,,,”
রিজাকে কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে দিশা দাতে দাত চেপে বললো
“হুম বুঝতে পারছি তুই খুবই অসুস্থ।আর তোর একমাএ ঔষধ হচ্ছে আমার ভাই।তুই এখন তার সাথে দেখা করতে যেতে চাস।তোর ওই বাবু সোনা এসে তোকে জাদু টোনা করবে আর তুই একদম ঠিক হয়ে যাবি।যাহ বইন আমার চোখের সামনে থেকে তুই এক্ষুনি যাহ।তাড়াতাড়ি ভাগ এখান থেকে।আবার বলা তো যায় না,তুই আরেকটু টাইম এখানে থাকলে হয়তো তোর হার্ট ষ্টোক,ব্রেন ষ্টোক সব এক সাথেও হতে পারে।”
দিশার কথায় রিজা খুশীতে গদগদ হয়ে দিশার গাল টেনে দিয়ে বললো
“তুই কওো ভালো দিশু।এইজন্যই তো আমি তোকে এতো ভালোবাসি।তোকে কিছু বলার আগেই কি সুন্দর তুই সব কিছু বুঝে যাস।লাভ ইউ মাই সুইট,কিউট ননদীনি।”
দিশা ক্ষেপে গিয়ে বললো
“ওই পাম ওয়েলের ফ্যাক্টরি,,আমাকে একদম পাম দিতে আসবি না।সর আমার চোখের সামনে থেকে।নাটক বাজ মেয়ে একটা।”
রিজা কাচুমাচু করে ইনোসেন্ট বাচ্চাদের মতো মুখটা বানিয়ে বললো
“এতো রেগে যাচ্ছিস কেনো জানু?তোকে তখন রেষ্টুরেন্টে অভি ভাইয়া বিরক্ত করেছে,,আমি না।তাহলে তুই শুধু শুধু ভাইয়ার রাগ এখন আমার উপর ঝারছিস?আমার কি দোষ?আমি কি করেছি?”
দিশা ধমক দিয়ে বললো
“তুই কিচ্ছু করিসনি, সব দোষ আমার।আমার ওদের সাথে রেষ্টুরেন্টে যাওয়াটাই ভুল হয়েছে।আর ওই ছেলের নাম আমার সামনে একদম নিবি না।ওকে তো আমি দেখে নিবো।আমার পিছনে লাগার ফল ও হারে হারে টের পাবে।ওকে যদি আমি পাগলা গারদের পেসেন্ট না বানিয়েছি তো আমার নামও দিশা নয়।বেয়াদপ ছেলে একটা।আপাততো তুই আমার সামনে থেকে ফোট।”
রিজা যেতে যেতে মিনমিনে স্বরে বললো
“দেখিস ওনাকে পাগলা গারদের পেসেন্ট বানাতে গিয়ে,তুই নিজে আবার সেখানের পেসেন্ট হয়ে যাসনা।”
রিজার কথা শুনে দিশা রাগি চোখে ওর দিকে তাকালো।দিশাকে এভাবে তাকাতে দেখে রিজা জোড় পূর্বক একটা ক্যাবলা কান্ত মার্কা হাসি দিয়ে শাড়ির কুচি ধরে দিলো এক দৌড়।আর দিশা ওর যাওয়ার দিক কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ঠোট ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো।
।
কিছুক্ষনের মধ্যেই একে একে সব কাপলরা এসে ষ্টেজে উঠলো।মোট বারো জোড়া জুটি।এদের মধ্যে সাড়িকা,সাঈফা,আহির, মিহিরও আছে।তবে ওদের চারজনের পার্টনারই আলাদা।আহির,মিহিরের সাথে ওদের ক্লাসের দুইটা মেয়ে।আর সাড়িকা, সাঈফার সাথে মেঘদের ক্লাসের দুইটা ছেলে।ষ্টুডেন্টরা সবাই নিজেদের পজিশন নিতেই গান বেজে উঠলো।গানের সাথে সাথে সবাই ষ্টেপ বাই ষ্টেপ মিলিয়ে ডান্স করতে লাগলো।প্রথম গানেই দুই জোড়া জুটি ডান্স ডান্স করতে করতে পার্টনার চেইঞ্জ করতে গিয়ে তাদের মেয়ে পার্টনার দুজন এক জনের সাথে আরেকজন থাক্কা খেয়ে ধপাস করে পড়ে গেলো।ওরা পড়ে যেতেই গান ষ্টপ করে দেওয়া হলো।গান ষ্টপ হতেই ওই দুই জোড়া জুটি ষ্টেজ থেকে নেমে গেলো।ওরা নামতেই আবার নতুন করে আরেকটা গান ষ্টার্ড করা হলো।সবাই আবার সেই গানের সাথে ডান্স করতে লাগলো।
আহির ডান্স করছে ঠিকই বাট ওর সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই।ও তীক্ষ্ম চোখে সাড়িকার দিকে তাকিয়ে আছে।সাড়িকা ছেলেদের সাথে এতোটা ক্লোজ হয়ে ডান্স করছে সেটা দেখেই ওর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।ইচ্ছে করছে সাড়িকাকে ধরে একটা আছাড় মারতে।কিন্তু ও এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চায় না বলে নিজের রাগটাকে যথা সম্ভব সংযতো করে রাখলো।
পার্টনার চেইঞ্জ করতে করতে এক পর্যায়ে সাড়িকা এসে আহিরের সাথে পড়লো।আহির সাড়িকার দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে ওর সাথে ডান্স করতে লাগলো।সাড়িকার আহিরের সাথে ডান্স করতে কেনো যেনো খুব অস্বস্তি লাগছে।কারন এক তো আহির তীক্ষ্ম চোখে এক ধ্যানে শুধু ওর দিকেই তাকিয়ে আছে,,আর তার উপর ডান্সের সময় বারবার ওকে ডিপলি টাচ করছে।যেটা আহির এর আগে কখনো করেনি।
ছোট বেলা থেকেই আহির আর সাড়িকা একে অপরকে একদমই সহ্য করতে পারতো না।আজ অবদি ওদের যখনই দেখা হয়েছে তখনই শুধু ঝগরা লেগেছে।শুধু ঝগরা না ওরা দুজন মারামারিতেও বেশ পারোদর্শি।ওরা ঝগরা করতে করতে এক পর্যায়ে সেটাকে থাপ্পর, লাথি, কিল, ঘুসি পযর্ন্ত টেনে নিয়ে যায়।আর ওদের কেউ থামাতে আসলে তাদেরও মধ্যে থেকে মার খেতে হয়।
সাড়িকার চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ভাব ফুটে উঠেছে।ও ডান্সের মধ্যে বারবার আহিরের থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছে।কিন্তু আহিরের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না।আহির সাড়িকার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে আস্তে করে বললো
“এতোক্ষন তো এতোগুলো ছেলের সাথে খুব হেসে হেসে ডান্স করছিলি?এখন মুখটা প্যাচ্যার মতো করে রেখেছিস কেনো?”
সাড়িকা রাগি স্বরে বললো
“কারন ওরা তোমার মতো আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেনি?”
সাড়িকার এই টুকু কথায় আহীরের রাগটা দ্বীগুন বেড়ে গেলো।ও সাড়িকা কে টান দিয়ে নিজের আরো কাছে এনে শক্ত কন্ঠে জিঙ্গেস করলো
“ও আচ্ছা ওরা তোকে ভালোভাবে স্পর্শ করেছে আর আমি তোকে বাজে ভাবে স্পর্শ করছি?তাহলে বল ওরা তোকে কোন কোন জায়গায়,কিভাবে কিভাবে স্পর্শ করেছে আমিও তোকে সেভাবেই স্পর্শ করবো।”
আহিরের কথা শুনে রাগে সাড়িকার শরীর রি রি করে উঠলো।ও আহিরের চোখে চোখ রেখে বললো
“মুখ সামলে কথা বলো ভাইয়া।কি বলতে চাইছো তুমি?”
“কি বলতে চাইছি বুঝতে পারছিস না?এতোক্ষন যে ওই ছেলে গুলোর সাথে ঢলাঢলি করছিলিস সেটা খুব ভালো লেগেছিলো তাইনা? বাইরের ছেলেদের শরীরের সাথে লেপ্টে থাকতে খুব ভালো লাগে।আর আমি কাছে আসলেই অসহ্য লাগে?”
আহীরের কথায় সাড়িকার শরীর ঘিনঘিন করে উঠলো।মানুষ কতোটা নিচু মনের হলে কারো বিষয়ে এই ধরনের মন্তব্য করতে পারে।সাড়িকা আহীরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো
“যেমন তুমি তেমন তোমার জগন্য চিন্তা ভাবনা।আমি কার সাথে ঢলাঢলি করবো,আর কার সাথে গিয়ে লেপ্টে থাকবো সেটা একান্তই আমার ব্যাপ্যার,তুমি বলার কে? ভবিষ্যতে আমার ব্যাপ্যারে এমন ফালতু কমেন্ট করতে আসলে, হাতের পাচটা আঙুলের দাগ সব তোমার গালে বসিয়ে দিবো।ছাড়ো আমাকে!তোমার মতো কোনো ফালতু মাইন্ডের লোকের সাথে ডান্স তো দুরে থাক,তোমার আশে পাশেও আসতে চাই না।”
সাঈফার কথা শুনে আহির তীক্ষ্ম চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের হাতটা আলগা করে নিলো।সাড়িকা আহিরের থেকে একটু সরে এসে যখনই পার্টনার চেইঞ্জ করার জন্য পা বাড়াবে তখনই আহির সাড়িকা কে ল্যাং মারলো।হঠাৎ নাচের মধ্যে এভাবে ল্যাং মারায় সাড়িকা নিজের ব্যালেঞ্চ ঠিক রাখতে না পেরে হুমরি খেয়ে উপুর হয়ে পড়ে গেলো।সাড়িকা এভাবে পড়ে যাওয়ায় সামনে যারা দর্শকরা ছিলো তারা সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে গেলো।গানটা বন্ধ হয়ে গেলো।সব কাপলরা নাচ থামিয়ে দাড়িয়ে গেলো।চারপাশে লোকজনের হইচই পড়ে গেলো।আহীর প্যান্টের পকেটে দুহাত গুজে ঠোটের কোনে একটা বাকা হাসি ঝুলিয়ে সাড়িকার দিকে তাকিয়ে আছে।
সাড়িকা নিজের মাথাটা একটু উঠিয়ে সামনের দিকে তাকালো।দেখলো দর্শকের সাড়িতে বসে থাকা সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ তো আবার মুখ টিপে টিপে হাসছে,,অনেকে ভিডিও করছে।সবার সামনে এভাবে লজ্জায় পড়তে হবে সেটা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। লজ্জায় সাড়িকার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো।ও নিজের মাথাটা নামিয়ে আবার উপুর হয় কাদতে থাকলো।সাড়িকা এখান থেকে এই মুহূর্তে উঠতে চাইছে না।ওর মনে হচ্ছে এখান থেকে উঠলেই সবাই ওর চোখের সামনে ওকে নিয়ে ঠাট্টা করবে, টন্ট করবে,বাজে কথা বলবে।যেগুলো ও একটুও সহ্য করতে পারবে না।
সাড়িকা কে উঠতে না দেখে সাঈফা আর মিহির দৌড়ে এসে ওকে টেনে তুললো।অভি দিশা ওরাও দৌড়ে ষ্টেজের উপরে চলে আসলো।সাড়িকা দ্রুত গিয়ে দিশাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে উঠলো।
সাড়িকা কে কাদতে দেখে সাঈফাও কেদে দিলো।সাঈফা ভেবেছে সাড়িকা হয়তো পড়ে গিয়ে ব্যাথ্যা পয়েছে তাই এভাবে কাদছে।দুইজন এমনিতে সব সময় এটা ওটা নিয়ে ঝগরা ঝাটি করলেও,,একজন আরেক জনের কষ্ট একদম সহ্য করতে পারে না।
অভি রাগি চোখে আহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।কারন আর কেউ না দেখলেও অভি ভালো করেই দেখেছে সাড়িকা কে ল্যাং টা আহিরই মেরে ছিলো।আহির অভির চাহনি কে উপেক্ষা করে একটা হু কেয়ারস ভাব নিয়ে ষ্টেজ থেকে নেমে চলে গেলো।অভি আহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ থেকে বিরক্তিকর একটা চ শব্দ উচ্চারণ করলো।
দিশা বারবার সাড়িকা কে প্রশ্ন করছে ওর কোথাও লেগেছে কিনা?পড়ে গিয়ে কোথাও ব্যাথ্যা পেয়েছে কিনা?কিন্তু সাড়িকা শুধু কেদেই যাচ্ছে কোনো প্রশ্নেরই উওর দিচ্ছে না।দিশা,অভি,মিহির,সাঈফা মিলে অনেক বুঝানোর পরও কোনো কাজ হলো না।ওরা যতো বোঝাচ্ছে সাড়িকা ততো দিশা কে জড়িয়ে ধরে কেদে যাচ্ছে।অভি আর কোনো উপায় না পেয়ে প্রিন্সিপালের কাছে বিদায় নিয়ে দিশা, সাড়িকা আর সাঈফা কে নিয়ে চলে গেলো।প্রিন্সিপাল স্যার অনেক বার সাঈফা থাকতে বলেছিলেন।ডান্স টা কমপ্লিট করে তারপর যেতে বলেছিলেন কিন্তু সাঈফা ডান্স করার মতো অবস্থাই নেই।বোনকে কাদতে দেখে নিজেও কাদতে কাদতে হেচকি উঠিয়ে ফেলেছে।ডান্স করবে কি, ঠিক মতো কথাই বলতে পারছে না।
সাঈফা চলে যেতেই টির্চারেরা মহা বিপদে পড়ে গেলো।এতোক্ষন সাঈফা এতোক্ষন যে ছেলেটার সাথে নাচছিলো সেই ছেলেটা এখন পার্টনার ছাড়া হয়ে গেলো।ওকে ওনারা বাদও দিতে পারবেন না।কারন এতে ছেলেটার উপরে অন্যায় করা হবে আর তাছাড়া রুলসও ব্রেক হবে।ওনারা এই সব নিয়ে ষ্ট্রেজের এক পাশে দাড়িয়ে আলোচনাই করছিলেন তখনই মিহির এসে জানায় ও ডান্স থেকে কুয়াইট করতে চায়।কথাটা বলেই মিহির কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।যাওয়ার আগে ষ্ট্রেজের উপর দাড়িয়ে সব ষ্টুডেন্ট দের দিকে তাকিয়ে বললো
“যারা যারা সাড়িকার পড়ে যাওয়ার ভিডিও টা ক্যাপচার করেছো,,তারা সবাই ভালো বাচ্চাদের মতো ভিডিওটা ডিলেট করে দাও। নাহলে ওই ভিডিও টা যদি বাইরে কোনো ভাবে লীক হয়ে যায় তাহলে যার কাছ থেকে লীক হবে তাকে দিনের বেলা আকাশের চাদ দেখিয়ে আনবো।গট ইট?”
কথাটা বলেই মিহির ষ্টেজ থেকে নেমে চলে গেলো।সব ষ্টুডেন্টদের ভয় পাওয়ানোর জন্য মিহিরের এইটুকু কথাই যঠেষ্ট ছিলো।সবাই দ্রুত নিজের ফোন বের করে ভিডিওটা ডিলেট করতে লাগলো।প্রিন্সিপাল স্যার সব ষ্টুডেন্টদের এমন ভয়ার্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলেন।যদিও ভার্ষিটিতে কাউকে এভাবে হুমকি দেওয়া অন্যায়।তবুও ওনি মিহিরের কাজে খুব খুশী হয়েছেন।কারন কোনো মেয়ের সম্মান বাচানোর জন্য এই টুকু অন্যায় মেনে নেওয়াই যায়।মিহির এইটুকু অন্যায় না করলে হয়তো কালকে এই ভিডিওটা সবার নিউজফিডে ঘুড়ঘুড় করতো।একেক জন একেকটা ফানি ক্যাপশন দিয়ে ভিডিওটা শেয়ার করতো।সবার কাছে ভিডিওটা খুব মজার হলেও মেয়েটার জন্য চরম অপমানের একটা বিষয় হতো।সবাই মিলে মেয়েটাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো।আর মেয়েটা হয়তো সেসব সহ্য করতে না পেরে ঘড় থেকে বের হওয়াই ছেড়ে দিতো,কিংবা ডিপ্রেশনে চলে যেতো।
_________________________
একটা গোডাউনের মধ্যে হাত পা বাধা অবস্থায় নিচে মাটিতে পড়ে আছে সৃষ্টি।পা থেকে রক্ত বের হয়ে পুরো ফ্লোরটা রক্তে ভিজে গেছে।ওর চোখ খুলে তাকানোর শক্তিটা অবদি পাচ্ছে না।শরীর থেকে একটানা এতো ঘন্টা রক্ত বের হতে হতে সারা শরীর অলমোষ্ট পেপার হোয়াইট হয়ে গেছে।মুখ থেকে বারবার ঘোঙানির আওয়াজ বের করছে।হঠাৎ কেউ এসে ওর মুখে বরফ মিশানো ঠান্ডা পানি ছুড়ে মারলো।বরফের শক্ত টুকরো গুলো ওর শরীরে পড়তেই ও ব্যাথ্যায় মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠলো।জোড় পূর্বক চোখ খুলে একটু সামনে তাকাতেই আহানের ভয়ংকর রাগি মুখটা চোখের সামনে দেখতে পেলো।আহানকে দেখেই ওর ভয়ে কলিজার পানি শূকিয়ে গেলো।হাত পা থরথর করে কাপতে লাগলো।আহান দুজন লেডি গার্ড কে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করতেই মেয়ে দুটো গিয়ে সৃষ্টির কাছে গেলো,,তাদের মধ্যে একজন মেয়ে গিয়ে সৃষ্টির চুল ধরে টেনে শোয়া থেকে উঠিয়ে বসালো।একজন ছেলে গার্ড গিয়ে আহানের জন্য একটা চেয়ার নিয়ে আসলো।আহান চেয়ারটার উপরে বসে হাতে থাকা গানটা চোখের সামনে ঘুড়াতে ঘুড়াতে শান্ত স্বরে সৃষ্টিকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“আচ্ছা আজকে কেনো এতো বড় বোকামি টা করতে গেলি বলতো?খুব কি দরকার ছিলো এইরকম গাধার মতো কাজটা করার?সেদিন যা করেছিস সেটা নাহয় না জেনে করেছিস।সেজন্য তোকে আমি তোর প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে আজকে এমনিতেই ছেড়ে দিতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু তুই আজকে কি করলি?সব জেনে বুঝেও এতো বড় একটা ভুল করলি?তাও আবার তার সাথে,যে মেয়েটা নিজে তোকে বাচাতে চেয়েছিলো।একবারও নিজের বিবেকে বাধলো না?এক বারও মনে হলো না ওইটুকু পিচ্চি একটা মেয়ে নিজের কথা না ভেবে তোকে বাচাতে গিয়েছিলো। আর তুই কি করলি, নিজেকে বাচাতে ওই মেয়েটারই রক্ত ঝরালি?”
সৃষ্টি অসফুট স্বরে বললো
“আমার খুব বড় ভুল হয়ে গেছে স্যার। আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।”
সৃষ্টির কথা শুনে আহানের এতোক্ষনের চেপে থাকা রাগটা বাইরে বেরিয়ে এলো।আহান সৃষ্টির পায়ের যে জায়গাটায় গুলি লেগেছিলো সেই জায়গাটা নিজের পা দিয়ে চেপে ধরলো।ওর পায়ে কেডস পড়া ছিলো।চেপে ধরার সাথে সাথে সেই জায়গা থেকে গলগল করে রক্ত পড়তে লাগলো।সৃষ্টি ব্যাথ্যায় ঘড় কাপিয়ে জোড়ে চিৎকার দিলো।ওর চোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ছে।আহান চেচিয়ে বললো
“কি বললি, তুই ভুল করেছিস?তোকে মাফ করে দেবো?তুই যেটা করেছিস সেটা ভুল নয় অন্যায়।মস্ত বড় অন্যায় করেছিস তুই।আমার যেই রূপটা আমি সব সময় আমার মেঘ পড়ির থেকে লুকিয়ে রেখেছি,তোর জন্য আজকে ও সেটা দেখে ফেলেছে।ও আমাকে ভুল বুঝেছে।আমার থেকে ভয় পেয়ে পালাচ্ছে।তুই জানিস, ওকে যদি আবার আগের মতো নরমাল করতে হয় তাহলে ওর কাছে আমাকে আরো কতো গুলো মিথ্যা কথা বলতে হবে?কতো ভালো মানুষির নাটক করতে হবে!এই সব কিছু হয়েছে তোর জন্য ।শুধু মাএ তোর জন্য আমার পরীটা এতোক্ষন ধরে অঙ্গান হয়ে পড়ে আছে আছে।”
কথাগুলো বলেই আহান হাতে থাকা পিস্তল টা দিয়ে সৃষ্টির অপর পায়ে পরপর দুটো গুলি করলো।সৃষ্টি এইবার আগের বারের থেকেও আরো জোড়ে চিৎকার দিলো।হাউমাউ করে কাদতে লাগলো বারবার আহানের কাছে মাফ চাইতে লাগলো।সৃষ্টির এতোটা চিৎকার,আর্তনাদ আহানের কান অবদিই পৌছালো না।আহান চেয়ার থেকে দাড়িয়ে সৃষ্টির কাছে গিয়ে ওর সামনে হাটু গেরে বসে হাতে থাকা গান টা সৃষ্টির কপালে ঠেকিয়ে বললো
“চারটা বছর ধরে ওই মেয়েটাকে একটু কাছে পাওয়ার জন্য কুড়ে কুড়ে মরেছি।এই চারটা বছর ওর থেকে দূরে থেকেও সব সময় আড়াল থেকে ওকে প্রটেক্ট করে গেছি।ওর অগোচরে ওর পিছনে সব সময় গার্ড লাগিয়ে রেখেছি,যাতে ওর গায়ে কেউ একটা ফুলের টোকাও না দিতে পারে।এতো দূরে থেকেও ওর প্রত্যেকটা সেকেন্ডের খবর আমি রেখেছি।আর যারা যারা ওকে কষ্ট দিয়েছে তাদের সবাইকে টিকিট কেটে সোজা উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।জানিস ওর একফোটা চোখের পানি অবদি আমি সহ্য করতে পারি না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।আর তুই সেই মেয়েটার শরীর থেকে রক্ত ঝরালি?ওকে এতোটা যন্ত্রণা দিলি?তোকে কিভাবে মাফ করে দেই বলতো?”
কথা গুলো বলেই আহান সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে সৃষ্টির কপালে পরপর চারটা গুলি করে দিলো।শুট করার সাথে সাথে সৃষ্টির নীথর দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।আহান বসা থেকে দাড়িয়ে গান টা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে সৃষ্টির ডেড বডিটার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো
তোমাকে যারা যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের সবাইকে আমি এইভাবেই শাস্তি দিবো মেঘ পড়ি।সেটা বাইরের লোকেরা হোক কিংবা তোমার পরিবারের লোকেরা।তোমার আপন জনেরা যারা তোমার সাথে অন্যায় করেছে তাদের কাউকে আমি ছাড়বো না।ওরা আর তোমাকে হার্ট করার সুযোগ পাবে না।অবশ্য ওরা যেটা তোমার সাথে করেছিলো,,সেটা হয়তো আমার বোকামির জন্যই করার চান্স পেয়েছিলো।যদি ছয় বছর আগে আমি একটা বারের জন্যও তোমার খোজ নেওয়ার চেষ্টা করতাম।তাহলে হয়তো ওরা তোমার সাথে ওই অন্যায় গুলো করার সুযোগই পেতো না।সব দোষ আমার।কেনো সেদিন অভি আর হিয়ানের কথা গুলো শুনলাম না।
আহান নিজের মনে কথা গুলো ভেবেই রাগে চেয়ারের উপরে একটা লাওি মারলো।সাথে সাথে চেয়ারটা কাৎ হয়ে পড়ে গেলো।আহান গার্ডদের দিকে তাকিয়ে রাগি স্বরে বললো
“এই ডাষ্টবিন টাকে নিয়ে জঙ্গলে ফেলে দিয়ে এসো।ওর শরীরটা শেয়াল কুকুরে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে নিক।ওর মতো সার্থপর মেয়েকে সুন্দর ভাবে দাফন করার কোনো প্রয়োজন নেই।”
কথাটা বলেই আহান হনহন করে ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ34
পিট পিট করে চোখ খুলতেই মেঘ নিজেকে কারো বাহু বন্ধনে আবিস্কার করলো।ও কয়েকবার চোখের পলক ফেলে,ওকে জড়িয়ে থাকা ব্যাক্তিটি কে, তা দেখার জন্য মাথা তুলতেই চোখের সামনে আহানের ঘুমন্ত মুখটা ভেষে উঠলো।রুমটার মধ্যে সব লাইট অফ করা,শুধু মাএ একটা ডিম লাইট জ্বালানো।ডিম লাইটের আবছা আলোতেও মেঘের আহানকে চিনতে একটুও অসবিধা হলো না।ওকে দেখতেই মেঘের একে একে দুপুরের ঘটা সব ঘটনা মনে পড়ে গেলো।ও আহানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ছাড়িয়ে,ঝটফট বেড থেকে নেমে গেলো।
আচৎমকা এভাবে ধাক্কা দেওয়ায় আহানের ঘুমটা ভেঙে গেলো।ও খুলে পাশে তাকাতেই মেঘের ভয়ার্ত মুখটা দেখতে পেলো।আহান তড়িঘড়ি করে উঠে বেড থেকে নেমে মেঘের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই।মেঘ দু-কদম পিছিয়ে গিয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে কাপা কাপা কন্ঠে বললো
“এ-একদম আ-আমার দ-দিকে এ-এগোবেন না।আ-আমার থেকে দ-দূরে থাকুন প্লিজ।”
মেঘের কথায় আহানের পা দুটো থেমে গেলো।আহান আগেই জানতো মেঘ ওকে দেখে এভাবেই রিয়্যাক্ট করবে।ও মেঘের দিকে তাকিয়ে কাতর কন্ঠে বললো
“মেঘ পড়ি তুমি আমায় ভয় পাচ্ছো?ভয় পেও না প্লিজ।আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবো না।”
বলে আহান মেঘের দিকে আবারো এগোতে নিলেই।মেঘ আরেকটু পিছনে গিয়ে কাদো কাদো কন্ঠে চেচিয়ে বললো
“না,না প্লিজ,প্লিজ আপনি আমার থেকে দূরে থাকুন।”
“মেঘ পড়ি তুমি শুধু শুধু আমাকে কেনো ভয় পাচ্ছো?আমি কি তোমাকে মেরেছি বা বকেছি?”
“আ-আপনি খুব খারাপ।আপনি সৃষ্টি ম্যামকে শুট করেছেন।”
“আমি ইচ্ছে করে ওকে শুট করিনি বিশ্বাস করো।ওটা তো ব্যাস অ্যাক্সিডেন্টলি ট্রিগারে চাপ লেগে বের হয়ে গিয়েছিলো।”
মেঘ একটু ঝাঝালো কন্ঠে বললো
ওহ গুলিটা অ্যাক্সিডেন্টলি ট্রিগারে চাপ লেগে বের হয়েছিলো তাইনা?তো ওর গায়ে যে এতোগুলো মারের দাগ দেখলাম,ওগুলোও কি অন্য কাউকে মারতে গিয়ে অ্যাক্সিডেন্টলি বা ভুলে ওর গায়ে মেরেছেন।”
আহান বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো
“মেঘ তখনকার সিচুয়েশন অন্য রকম ছিলো।’ও’ একটা অন্যায় করেছিলো তাই ওকে আমি এতোদিন আটকে রেখে শাস্তি দিয়েছি।বিশ্বাস করো আমি আজকেই ওকে ছেড়ে দিয়ে, আমার লোকদের বলে হসপিটালে পাঠিয়ে ওর চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতাম।কিন্তু ‘ও’ তোমার গলায় ওভাবে কাচ ধরায় আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ছিলাম।মাথায় কিচ্ছু আসছিলো না।তাই ওকে আমি,,,,,,,”
আহান এইটুকু বলতেই মেঘ আহানের কথার মাঝে ফোরন কেটে তাছিল্য স্বরে বললো
“তাই আপনি ওকে শুট করে দিলেন!”
“মেঘ পড়ি আমি ওকে শুট না করলে, ‘ও’ তোমার কোনো ক্ষতি করে ফেলতো।যেভাবে তোমার গলায় কাচটা চেপে ধরেছিলো তাতে যদি তোমার উল্টোপাল্টা কিছু একটা হয়ে যেতো।তখন কি হতো?”
“কি আর হতো?আমার গলাটা কেটে যেতো,আর আমি মরে যেতাম।আমি মরে যাই, আমার গলা কেটে যাক,মাথা ফেটে যাক,হাত-পা ভেঙে যাক,যাহ খুশী হোক তাতে আপনার কি?আপনি কেনো আমার সব বিষয় নিয়ে এতো মাথা ঘামান।আমার বিষয়ে কথা বলার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে?আপনি শুধুমাত্র আমার কাজিন হন,এর থেকে বেশি কিচ্ছু না।তাহলে শুধু শুধু কেনো আমার গার্ডিয়ান হওয়ার চেষ্টা করেন?”
আহান এতোক্ষন শান্ত ভাবে কথা বললেও মেঘের মুখ থেকে মরার কথা শুনে ওর মাথায় রাগ উঠে গেলো।ও হনহন করে মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে মেঘকে এক টান দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো।তারপর নিজেও মেঘের দিকে ঝুকে ওর দু-হাত বিছানার সাথে চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো
“তোমার সাহস হয় কি করে আমার সামনে মরার কথা বলার?এতোক্ষন ভালো ভাবে কথা বলছিলাম তাই আমার কথা মাথায় ঢুকছিলো না তাইনা?তোমাকে না বারন করেছিলাম,,আমার সামনে মরার কথা না বলতে?তারপরেও তুমি কোন সাহসে ওই কথাটা বললে?আর বাকী রইলো তোমার বিষয়ে আমি কেনো এতো মাথা ঘামাই সেটা?তাহলে জেনে রাখো, তোমার মা-বাবার পরে যদি কারোর তোমার উপরে সবচেয়ে বেশি অধিকার থেকে থাকে তাহলে সেটা হচ্ছে আমার।তোমার সব বিষয়ে মাথা ঘামানোর অধিকার আমার আছে।”
মেঘ আহানের এমন হঠাৎ কাছে আসাতে ভয় পেয়ে গেলেও সেটা মুখে প্রকাশ করলো না।বরং চেহারায় কাঠিন্য একটা ভাব এনে, শুকনো একটা ঢোক গিলে ঝাঝালো কন্ঠে বললো
“আমার উপরে আপনার কোনো অধিকার নেই।আপনার মতো নোংরা,অসভ্য আর বাজে লোকের আমার উপরে কোনো অধিকার থাকতেই পারে না।আর আমাকে এভাবে কেনো ধরে রেখেছেন ছাড়ুন আমাকে।”
বলেই মেঘ হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো।আহান অগ্নি চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর হাতটা আরো জোড়ে বিছানার সাথে চেপে ধরলো তারপর রেগে চেচিয়ে বললো
“তোমার সাহস হলো কিভাবে আমাকে নোংরা,অসভ্য,বাজে লোক বলার?আমি কি এমন করেছি তোমার সাথে,যাতে তোমার আমাকে বাজে লোক মনে হচ্ছে?”
আহান এভাবে রেগে চেচিয়ে কথা বলায় মেঘের এতোক্ষনের সাহস সব ফুস হয়ে গেলো।ওর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ ফুটে উঠলো।মেঘ বুঝতে পারলো নিজেকে সাহসী প্রমান করতে গিয়ে ‘ও’ আহানকে একটু বেশিই বলে ফেলেছে।’ও’ আর কিছু না বলে অসহায় বাচ্চাদের মতো ফেইস করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।আহান ধমক দিয়ে বললো
“কি হলো?এখন চুপ করে আছো কেনো?স্পিক আপ?”
মেঘ এইবারেও কিছু বললো না,,শুধু কাদো কাদো মুখ করে আহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।আহান দেখলো মেঘ মুখটা একদম অসহায় বাচ্চাদের মতো বানিয়ে রেখেছে।ওকে দেখে মনে হচ্ছে আরেকটু কিছু বললেই কেদে দিবে।আহান ভ্রু কুচকে বললো
“কি হলো মুখটা এমন বানিয়ে রেখেছো কেনো?”
মেঘ কাদো কাদো কন্ঠে বললো
“আমার হাতে খুব ব্যাথ্যা লাগছে।ছাড়ুন প্লিজ।”
মেঘের কথা শুনে আহান চোখ ছোট ছোট করে মেঘের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।কারন আহান মেঘের হাতটা এতোটাও জোড়ে চেপে ধরেনি যে,মেঘ ব্যাথ্যা পাবে।আহান কিছুক্ষন মেঘের দিক তাকিয়ে থেকে ওর ভাব ভঙ্গি বোঝার জন্য ওকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাড়ালো।
আহান মেঘকে ছেড়ে দিতেই,মেঘ মনে মনে একটা বাকা হাসি দিলো।ও জানতো,,হাতে ব্যাথ্যার কথা বললে আহান ওকে ঠিক ছেড়ে দিবে।আহান ওকে ছেড়ে একটু দূরে সরতেই ও এক লাফ দিয়ে শোয়া থেকে দাড়িয়ে গেলো।তারপর আর কোনো দিক না তাকিয়ে দরজার দিকে দিলো একটা ভো দৌড়।কিন্তু আফসোস দরজাটা আহান আগে থেকেই লক করে রেখেছিলো।মেঘ দরজার কাছে এসে জোড়ে জোড়ে দরজাটা ধাক্কাতে লাগলো,,লক ধরে টানাটানি করতে লাগলো,কিন্তু দরজাটা কিছুতেই খুলতে পারলো না।
আহান দু-হাত বুকে গুজে একটু বাকা হয়ে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে মেঘের কান্ড দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।কারন ও আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলো মেঘ এরকম কিছু একটাই করবে।আহান ঠোটের কোনে মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে মেঘকে উদ্দ্যেশ্য করে বললো
“মেঘ পড়ি, আমি বারবার তোমাকে এক কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করি,আর তুমি বারবার সেই একই ভুল করো।তোমাকে আর কতোবার বলবো,তুমি যতোই দৌড়াদৌড়ি করো আর আমার থেকে পালানোর চেষ্টা করো,আমার পারমিশন ছাড়া তুমি আমার থেকে এক চুলও দূরে সরতে পারবে না।”
আহানের কথা শুনে মেঘ শুকনো একটা ঢোক গিলে ঘাঢ় ঘুড়িয়ে ভয়ে ভয়ে পিছনে তাকালো।ওর এখন ইচ্ছে করছে ফ্লোরে গড়াগড়ি খেয়ে কান্না করতে।কেনো যে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো?আহান নিশ্চয়ই এখন ওকে ধরে একটা ঠাটিয়ে চড় মারবে।চড়ের কথা মনে হতেই মেঘের একটা হাত অটোমেটিক ওর গালে চলে গেলো।
আহান সোজা হয়ে দাড়িয়ে ট্রাউজারের পকেটে দু-হাত ঢুকিয়ে ফুল অ্যাটিটিউট নিয়ে এগিয়ে এসে মেঘের সামনে দাড়ালো।তারপর পকেট থেকে একটা চাবি বের করে মেঘের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
“এই দরজাটা লক করা আছে।আর এটা হচ্ছে লক খোলার চাবি।”
মেঘ আহানের হাত থেকে ছো মেরে চাবিটা নিতে চাইলো।কিন্তু ও চাবিটা ছুবে তার আগেই আহান নিজের হাতটা মুঠোবন্ধি করে নিলো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দিয়ে,চাবিটা একটা টি টেবিলের উপর রেখে,একহাত মেঘের কোমরে দিয়ে,ওকে একটানে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে চোখ রেখে বললো
“তোমার কি মনে হয় টিয়া পাখি?তুমি এই রুম থেকে বের হলেই আমার কাছ থেকে পালাতে পারবে?ধরো, তুমি এই চাবিটা দিয়ে এই রুমটার দরজা খুলে বের হয়ে গেলে।কিন্তু তারপর নিচের এতো এতো সিকিউরিটির চোখে ফাকি দিয়ে কিভাবে বের হবে?আর ধরলাম সবার চোখে ফাকি দিয়েও বের হয়ে গেলে,কিন্তু তারপর?তুমি কি আদৌ জানো এটা কোন জায়গা?এখান থেকে যদি কোনো ভাবে বেরও হও,, তাহলেও সেইফলি বাড়ি গিয়ে পৌছাতে পারবে না। তাই বলছি,এখান থেকে পালানোর ভুত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।”
আহানের কথা শুনে ভয়ে মেঘের চোখ মুখ শুকিয়ে একদম পানশে হয়ে গেলো।সত্যিই তো,,ও তো এতোক্ষন এসব কিছু ভেবেই দেখেনি!দুপুরে বাইরে যা কড়া সিকিউরিটি দেখলো, তাতে ও হাজার চেষ্টা করেও এখান থেকে বের হতে পারবে না।মেঘ আহানের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বললো
“আমি বাসায় যাবো।আমাকে দিয়ে আসুন প্লিজ।”
আহান মেঘের কপালে এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকা চুলগুলো আলতো করে কানের পিছনে গুজে দিয়ে বললো
“হুমম,,দিয়ে আসবো।তবে এখন না,কালকে সকালে।”
মেঘ চমকে উঠে বললো
“কালকে সকালে মানে?ততোক্ষন আমি কোথায় থাকবো?”
আহান নিজের মুখটা মেঘের আরেকটু কাছাকাছি নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো
“কোথায় থাকবে মানে?আমার এতোবড় বাড়িটা তোমার চোখে পড়ছে না?”
“আমি এখানে আপনার সাথে এক বাড়িতে থাকবো না।আমি বাসায় যাবো।”
“ওমা তাই নাকি!তো যাও তোমাকে কে আটকে রেখেছে।”
মেঘ অসহায় চাহনী দিয়ে বললো
“আমি একা কিভাবে যাবো।আপনি দিয়ে আসুন প্লিজ।”
আহান নেশাতুর চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো
“এখন আমিও কোথাও যাবো না,আর তোমাকেও কোথাও যেতে দিবো না।বুঝেছো টিয়া পাখি?আমরা দুজন আজকে রাতে এখানেই থাকবো।”
বলেই আহান নিজের মুখটা একদম মেঘের কাছাকাছি নিয়ে গেলো।দুজন এতোটাই কাছাকাছি আছে যে ওদের দুজনের ঠোট একদম ছুইছুই হয়ে আছে। আহানের গরম নিশ্বাস মেঘের চোখে মুখে আচড়ে পড়ছে।মেঘ চোখ খিচে বন্ধ করে আছে।ওর কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে।শরীর জমে একদম বরফ হয়ে গেছে।হৃদপিন্ডের গতি দ্রুত উঠানামা করছে।নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে।
আহান ঘোড় লাগা দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘের হৃদপিন্ডের গতি দ্রুত উঠা নামার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পারছে।রুমের আবছা আলো আর অন্ধকার মিশ্রিত পরিবেশটা মেঘকে একদম মোহনীয় করে তুলেছে।শরীরের সাথে সাথে মেঘের ঠোট মৃদ্যু কাপছে,,আহান ওর হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতো করে মেঘের ঠোটে শ্লাইড করতে লাগলো।ও এক ধ্যানে মেঘের ঠোটের দিকে তাকিয়ে আছে।মেঘের ঠোটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই ওর খুব ইচ্ছে জাগলো নিজের প্রিয় তমার ঠোট আলতো করে ছুয়ে দেওয়ার।আহান আর বেশি কিছু না ভেবে মেঘের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর ঠোট নিজের আয়ওে নিয়ে নিলো।
আহানের হঠাৎ এমন কান্ডে মেঘ অবাক হয়ে গেলো।ও দ্রুত আহানকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু আহানকে এক চুলও সরাতে পারলো না।বরং মেঘ যতো আহান কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে,,আহান ততো আরো ওকে শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিচ্ছে।মেঘ ছটফট করতে করতে আহানের সাথে শক্তিতে না পেরে, শান্ত হয়ে নিজেও আহানের সাথে রেসপন্স দিতে লাগলো।
______________________
রাত 11:10
ছাহীর (সাড়িকা সাঈফার ছোট ভাই) নিজের রুমের দরজা খুলে পা টিপে টিপে রুম থেকে বের হয়ে,,আস্তে আস্তে সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো।তারপর সতর্ক দৃষ্টিতে চারপাশে একবার তাকিয়ে সদর দরজার কাছে গিয়ে কোনো শব্দ না করে দরজাটা খুলে ফেললো।দরজা খুলতেই কালো হুডি পড়া দুটো ছেলে তড়িঘড়ি করে বাসার ভিতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।আচৎমকা এভাবে ভিতরে ঢোকায় ছাহীর ভয় পেয়ে ওদের থেকে একটু পিছিয়ে গেলো।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে রাগি গলায় বললো
“তোমরা মানুষ নাকি অন্যকিছু!একে তো এতো রাতে একটা বাচ্চা ছেলেকে ব্লাকমেইল করে দরজা খুলতে বাধ্য করলে, তার উপর আবার এই ভাবে হুডি পড়ে ভ্যাম্পায়ার হয়ে তাকে ভয় দেখাচ্ছো?লজ্জা করে না তোমাদের আমার মতো একটা ভোলাভালা বাচ্চাকে এই ভাবে এতো রাতে ভয় দেখাতে?”
ছাহীরের কথা শুনে হুডি পড়া ছেলে দুটো নিজেদের হুডি সড়িয়ে ফেললো।ছেলে দুটো আর কেউ না আহির আর মিহির।আহির ছাহীরকে ধমক দিয়ে বললো
“ওই শালা তুই দরজা খুলতে এতো দেরি করছিলি কেনো রে?আর একটু হলেই তো তোর ওই হিটলার বাপ আমাদের দেখে ফেলতো।ওই ব্যাট্যা ডাক্তার এতো রাত জেগে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি করে?চোর পাহাড়া দেয় নাকি?আর ভোলাভালা বাচ্চাটা কে রে?তুই?তুই যদি ভোলাভালা বাচ্চা হোস তাহলে আমরা দুজন নবজাতক শিশু।সবেমাএ পৃথিবীতে ভুমিষ্ঠ হয়েছি।”
মিহির গিয়ে এক হাত ছাহীরের কাধে রেখে হাসতে হাসতে বললো
“বুঝলি আহির, আমাদের ভোলভালা বাচ্চা ছাহীর বাবু,,এই বয়সেই রাত তিনটা অবদি জেগে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করে।একবার ভাব যদি এই কথা এর ওই খারুস বাপ জানতে পারে, তাহলে এর অবস্থা কি করবে?”
ছাহীর মিহিরের হাতটা কাধ থেকে ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বললো
“যা বললে তাই তো করলাম, তার পরেও ওই এক কথা বলে আবার কেনো ব্লাক মেইল করছো?কতো বার তোমাদের বলবো ওই মেয়েগুলো যাষ্ট আমার ফ্রেন্ড।এর থেকে বেশি কিচ্ছু না।আর কি তখন থেকে তোর বাপ, তোর বাপ করে যাচ্ছো ভুলে যেওনা ওনি তোমাদেরও মামা হন।সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলতে শেখো।”
মিহির ছাহীরের গাল টেনে দিয়ে বললো
“ওরা তোর যাষ্ট ফ্রেন্ড বলেই না আজকে বেচে গেলি, নাহলে তোকে গাছের সাথে উল্টো ঝুলিয়ে এমন মার মারতাম ক্লাস এইটে বসে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করার শখ জিবনের মতো ঘুচে যেতো।আর তোর ওই বাপ জিবনে এমন কোনো ভালো কাজ করেনি যাতে ওনাকে রেসপেক্ট করবো।ওনাদের ওই থার্ড ক্লাস ইগোর জন্য আমার মা অনেক গুলো বছর সাফার করেছে।মাঝে মাঝে তো ইচ্ছে করে ওনাদের শরীর থেকে ইগো বের করে,ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছে বিক্রি করে ঝালমুড়ি কিনে খাই।”
ছাহীর কনফিউশন হয়ে মাথা চুলকে বললো
“জানো,আমি এতোদিন জানতাম ক্লাউড আপ্পি (মেঘ) শুধু উদ্ভট কথা বলে।কিন্তু এখন দেখি তুমিও বলা শুরু করেছো।লাইফে ফাষ্ট টাইম শুনলাম শরীর থেকে নাকি ইগো বের করে ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছে ব্রিকি করা যায়!কি জানি,,তোমাদের দ্বারা সবই সম্ভব।”
ওদের কথা শুনে আহীর একটা ধমক দিয়ে বললো।
“ওই তোদের এইসব আজাইরা বকবক বাদ দিয়ে,,আগে বল আমার বউটা কোথায়?”
ছাহীর বিদ্রুপের স্বরে বললো
“তোমার ওই খাচ্চুনী বউ নিজের রুমেই আছে।বাড়িতে এসে নিজের রুমের সব জিনিস পএ ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে ফেলেছে।ছোট আপ্পি( সাঈফা)থামাতে গিয়েছিলো, আপ্পিকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছে।তারপর নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে,,সবাই অনেক ডেকেছে কিন্তু দুজনের এক জনও খেতে আসেনি।ছোট আপ্পি তো কাদতে কাদতে আমার রুমেই ঘুমিয়ে পড়েছে।”
সাঈফার কান্নার কথা শুনে মিহিরের বুকটা মোচর দিয়ে উঠলো।বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে ব্যাথ্যা অনুভব করলো।
আহির আর ওখানে দাড়িয়ে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে সোজা সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।ছাহীর গিয়ে চুপচাপ সোফার উপরে বসে ফোন টিপতে লাগলো।
মিহিরের হঠাৎ করেই কেনো যেনো সাঈফাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কই আগে তো কক্ষনো এই রকম হয়নি।তাহলে আজকে কেনো সাঈফার কান্নার কথা শুনে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।ইচ্ছে করছে এক দৌড়ে সাঈফার কাছে গিয়ে ওকে একবার দেখে আসি।মিহির বারবার নিজের মন কে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলো।ও মনে মনেই নিজেকে বোঝাতে লাগলো ও সাইফার কাছে কিছুতেই যেতে চায় না।কিন্তু অবশেষে নিজের মনকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়ে,উপরে যাওয়ার জন্য পা বারালো।কিন্তু তখনই পিছন থেকে ছাহীর বলে উঠলো
“ব্রো তুমি কোথায় যাও?আসো এখানে আমার পাশে বসে পড়।শুধু শুধু ওদের রোমান্সের মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে যেও না।তার থেকে চলো আমরা দুজন এখানে বসে ওদের পাহাড়া দেই।দেখি কেউ আসে কিনা?”
ছাহীরের কথা শুনে মিহির বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললো
“আমাকে কি তোর সিকিউরিটি গার্ড মনে হয়, যে এখানে বসে বসে ওদের পাহাড়া দিবো?”
ছাহীরও মিহিরের মতো চোখ মুখ কুচকে বললো
“তো তোমার আমাকে কি সিকিউরিটি গার্ড মনে হয়?আমি তো ওদের পাহাড়া দিচ্ছি?না তো!তাহলে আমি যদি ওদের পাহাড়া দিতে পাড়ি,তুমি কেনো পারবে না।”
“তোর খেয়ে দেয়ে এখন কোনো কাজ নেই তাই তুই পাহাড়া দিচ্ছিস।কিন্তু আমার এখন অনেক কাজ আছে তাই আমাকে উপরে যেতে হবে।”
ছাহীর ভ্রু কুচকে বললো
“তোমার আবার এখন কি কাজ আছে?আর উপরেই বা কোথায় যাচ্ছো?”
মিহির ধমক দিয়ে বললো
“যে কাজই থাকুক না কেনো?সেটা কি তোকে বলতে হবে?আর এটা আমার মামু বাড়ি তাই আমি ডানে,বামে,উপড়ে, নিচে যেখানে খুশী যেতে পাড়ি তোর কোনো সমস্যা আছে ?”
ছাহীর একটা ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে ফোন দিকে তাকিয়ে ফোন টিপতে টিপতে বললো
“উহুম,,আমার কোনো সমস্যা নেই।বরং তোমার মাথায় সমস্যা আছে।একটু আগেই তো আমার বাবার ইগো বিক্রি করে তুমি ঝালমুড়ি কিনে খাচ্ছিলে,ওই ব্যাট্যা বলছিলে।এখন মুহুর্তের মধ্যে ওই ব্যাট্যা থেকে সোজা মামু হয়ে গেলো।বাহ!আর ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,,এখন তোমরা এই বাড়ির গেষ্ট হয়ে আসোনি,যে যেখানে খুশী যেতে পারবে।আপাততো তোমরা এই বাড়িতে রাতের অন্ধকারে ঢুকে পড়া দুজন চোর।যদি একবার কোনো ভাবে বড় আব্বু বা বাবাইয়ের কাছে ধরা পড়েছো তাহলে ওনাদের বন্ধুকের বর্তমান বুলেটের উপর তোমাদের নাম লেখা আছে।আর আমিও কতোক্ষন নিজের মুখ বন্ধ রাখতে পারবো বলতে পারছি না।হতেও তো পারে আমি নিজের মুখটা বন্ধ রাখতে না পেরে নিজেই ওনাদের কাছে তোমাদের চোড় বলে ধড়িয়ে দিলাম।”
মিহির ভ্রু কুচকে বললো
“তুই কি কোনোভাবে আমাদের ব্লাক মেইল করার চেষ্টা করছিস?”
“চেষ্টা করছি না,,ডিরেক্ট ব্লাকমেইল করছি।চুপটাপ আমার মুখ বন্ধ করার জন্য কিছু একটা দিয়ে যাও,নাহলে তোমরা এতোক্ষন যে যে কথা গুলো বলেছো সব আমার ফোনে রেকর্ড করা আছে।রেকর্ডিং গুলো গিয়ে ভালো ছেলের মতো বড় আব্বু আর বাবাইকে দেখিয়ে আসবো।তখন তোমাদের দুজনের কি অবস্থা হবে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো।”
মিহির চোখ দুটো বড় বড় করে ছাহীরের দিকে তাকিয়ে রইলো। এই টুকু পুচকে একটা ছেলে নাকি তাসনিধ সায়াজ মিহির কে ব্লাকমেইল করছে!বিষয়টা নিতান্তই হাস্যকর।তবে আপাততো এই পুচকের কথা না শুনলে এই লেজ ছাড়া বাদরটা সত্যি সত্যি ওদের বিপদে ফেলে দিতে পারে।মিহির ছাহীরের দিকে এগিয়ে গিয়ে পকেট থেকে ওয়ালেট টা বের করে একটা পাচশো টাকার নোট ছাহীরের হাতে দিয়ে ওর কান টেনে ধরে বললো
“এইবার চুপচাপ নিজের মুখটা বন্ধ রাখবি।নাহলে তোকে নিয়ে গিয়ে ছাদ থেকে টুপুৎ করে ফেলে দিবো।তোর যাহ সাইজ তাতে ওতো উপর থেকে পড়লে একদম আলুর ভর্তা হয়ে যাবি।”
বলেই মিহির গটগট করে হেটে উপরে উঠে গেলো।মিহির যেতেই ছাহীর ফিক করে হেসে দিলো।অনেক দিন পর ও মিহিরকে জ্বালাতে পেরে ভীষন মজা পেয়েছে।
।
আহীর তড়িঘড়ি করে পকেট থেকে সাড়িকার রুমের ডুপ্লিকেট চাবিটা বের করে দরজাটা খুলতে লাগলো।এই চাবিটা অনেক আগেই বানিয়েছিল সাড়িকা কে জ্বালানোর জন্য।আহীর আর মিহির মাঝে মাঝে রাতে এসে ভুত সেজে এসে সাড়িকা আর সাঈফা কে ভয় দেখাতো।
আহির দরজাটা খুলে সামনে এগোতেই অবাক হয়ে গেলো।পুরো ফ্লোরে শুধু কাচের গুড়োর ছড়াছড়ি, রুমটা একদম তছনছ হয়ে আছে।কোনো একটা জিনিস ঠিকঠাক মতো জায়গায় নেই,সব উল্টেপাল্টে এখানে সেখানে পড়ে আছে।আহীর বেডের দিকে তাকালো, দেখলো সাড়িকা বেডের উপরে নেই।বেডের উপরে থাকা বালিশ,পাশ বালিশ,টেডিবিয়ার সব এখানে সেখানে পড়ে আছ। আহীর ওর পকেট থেকে ফোনটা বের করে,টর্চ অন করে চারপাশে ভালো করে তাকিয়ে সাড়িকা কে খুজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও দেখতে পেলো না।আহীর এটাই ভেবে পাচ্ছে না,রুম তো ভিতর থেকেই বন্ধ ছিলো তাহলে সাড়িকা গেলো কোথায়?আর কিভিবেই বা গেলো?
চলবে,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,