#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ59
পরে তিনজন আমাকে এক প্রকার জোড় করে টানতে টানতে রিসোর্ট থেকে দূরে রাস্তার পাশের একটা ছোট পাহাড়ি রেষ্টুরেন্টে নিয়ে এসেছিলো।সেখানে এসে আমরা ভিষন অবাক হয়ে ছিলাম।আমি এক প্রকার আকাশের চাদ হাতে পেয়ে গিয়েছিলাম।ভাবতেই পারিনি এতো রাতে সেই মেয়েটা কে এখানে দেখতে পাবো।প্রথমে ভেবে ছিলাম মেয়েটার কথা অতিরিক্ত ভাবতে ভাবতে হয়তো মেয়েটা কে কল্পনায় দেখছি।কিন্তু না,পরে বুঝতে পারলাম যে মেয়েটা সত্যিই আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।
রেষ্টুরেন্ট টা কাঠের তৈরি ছিলো।উপরে টিন দিয়ে ছাউনি দেওয়া।ওটার সামনের উঠোনের মতো ছোট একটু খানি খোলা জায়গা।সেখানে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি।সাথে একটা ছেলে আর কিছু ছোট ছোট বাচ্চারা আছে।সামনের খোলা জায়গাটা পুরোটা একদম ফুল এবং বেলুন দিয়ে সাজানো।সাথে বিভিন্ন রঙের ঝাড়বাতিও আছে।মেয়েটার থেকে কিছুটা দূরে একটা মিডেল সাইজের টেবিল রাখা।টেবিলটার উপরে বড় একটা কেক রাখা।কেকের পাশে মোমবাতি আর টুকিটাকি কিছু স্নাক্স।মেয়েটা সাদা রঙের লং একটা গাউন পড়া ছিলো।সাথে খুব সুন্দর ভাবে হিজাব পড়ে ওড়নাটা কাধের এক সাইডে ফেলে রেখেছিলো।
আমি,হিয়ান,রিয়ান,অভি আমরা চারজন পকেট থেকে মাস্ক বের করে পড়ে তারপর ভিতরে ঢুকি।আসলে আমরা প্রথমে ভেবে ছিলাম রুমে বসেই খাবার ওর্ডার দিয়ে খাবো।কিন্তু আমার মাথা থেকে মেয়েটার ভুত তাড়ানোর জন্য অভি,হিয়ান,রিয়ান আমাকে রাতের ফ্রেস এয়ারে নিয়ে গিয়েছিলো।যাতে আমাদের ঘোড়াও হয়,খাওয়াও হয় আর মেয়েটাকেও আমি ভুলে যাই।কিন্তু মেয়েটা কে এখানে দেখে ওদের ভাবনায় এক বস্তা বালি পরে গেলো।আমরা একটু ভিতরের ঢুকে দু-কদম এগোতেই মেয়েটার সাথে তখন যে দুজন লোক ছিলো তারা এসে আমাদের আটকে দিলো।আমরা চারজন ওদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালাম।তখন মেয়েটির সাথে থাকা ছেলেটি এসে বেশ মার্জিত কন্ঠে বললো
“সরি ব্রো আসলে আজকে রাতের জন্যে এই রেষ্টুরেন্ট টা পুরোটা আমরা বুকিং দিয়েছি।তাই বাইরের কাউকে এখানে এলাউ করা হবে না।প্লিজ আপনারা এখন যেতে পারেন।”
ছেলেটার কথা শুনে আমার মেজাজ প্রচন্ড মাএায় খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।ওই টুকু পুচকে ছেলে কিনা সাবরিদ সিজাত আহান কে ভিতরে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছে?ইচ্ছে করেছিলো ঠাটিয়ে ছেলেটার গালে কয়েকটা চড় বসিয়ে দেই।আমি রেগে ছেলেটা কে কিছু বলতে যাবো তার আগেই পিছন থেকে মেয়েটা এসে ছেলেটা কে ঝাড়ি মেরে বললো
“ওই কাউকে এলাউ করবি না মানে কি?এতো রাতে ওনারা এখানে এসেছেন তারমানে নিশ্চয়ই ওনাদের হয়তো খুব খিদে পেয়েছে।এলাউ না করলে ওনারা খাবার খাবে কিভাবে?”
ছেলেটা নাক মুখ কুচকে বললো
“কিভাবে খাবে আমি কি জানি?এখানে আশেপাশে আরো অনেক রেষ্টুরেন্ট আছে।সেখানে চলে যাবে তাহলেই তো হয়।”
মেয়েটা একটু বিরক্তির স্বরে বললো
“মানুষ জন কি পাগল হয়েছে যে রাত সাড়ে বারোটার সময় রেষ্টুরেন্ট খুলে রাখবে? এটা তো এক্সটা টাকা দিয়েছিস তাই এখনো আমাদের জন্যে খুলে রেখেছে।আর অন্যগুলো তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে।”
মেয়েটার কথা শুনে ছেলেটি বিরক্তির স্বরে বললো
“লোকজন পাগল হতে যাবে কেনো?পাগল তো আমি।যে তোর মতো একটা তারছিড়া মেয়েকে নিয়ে এতো রাতে বাইরে এসেছি।ধ্যাত তোর যা মনে চায় তাই কর আমি আর কিছু বলবো না।”
কথাটা বলেই ছেলেটা একটা চেয়ার হাতে নিয়ে অন্যপাশে গিয়ে বসে পড়লো।তারপর পকেট থেকে ফোন বের করে গম্ভীর মুখে ফোনটা স্ক্রল করতে লাগলো।মেয়েটা আমাদের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো
“আপনারা এবার ভিতরে যেতে পারেন,কেউ আপনাদের কিছু বলবে না।”
মেয়েটার কথা শেষ হতেই আমি ওর দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে বলেছিলাম
“ডবল থ্যাংকস ম্যাম।”
আমার কথা শুনে মেয়েটা ভ্রু কুচকে বলেছিলো
“ডবল থ্যাংকস কেনো?”
আমি আলতো হেসে বলে ছিলাম
“কারন তুমি আমাকে তখন ট্রাকের নিচে চাপা পড়ার হাত থেকে বাচিয়ে ছিলে।আর এখন রেষ্টুরেন্টে ঢোকার পারমিশন দিলে।তখন তো থ্যাংকস বলার আগেই চলে গিয়েছিলে।তাই তখনের টা আর এখনের টা একসাথে দিলাম।”
আমার কথা শুনে মেয়েটি গোল গোল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো
“আচ্ছা তারমানে আপনি সেই দিনকানা লোকটা?আচ্ছা আপনারা সব সময়ই কি এই ভাবে ফেইজ কভার করে চলাফেরা করেন নাকি?আপনাদের দেখলে কেমন ডাকাত ডাকাত ফিলিং আসে।”
মেয়েটার কথা শুনে হিয়ান,অভি,রিয়ান ফিক করে হেসে দিয়েছিলো।আমি ওর কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে ছিলাম
“আমরা আসলে ভিষন সুইট দেখতে মেয়েরা আমাদের দেখলেই শ্লিপ খেয়ে পড়ে যায়।তাই বেচারা মেয়ে গুলোকে বাচানোর জন্যে সব সময় মুখে মাস্ক পড়ে থাকি।”
কথাটা বলে আমি রেষ্টুরেন্টের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম।আমার পিছনে পিছনে হিয়ান,অভি,রিয়ানও ভিতরে চলে আসে।মেয়েটা আমাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজের কাজে চলে যায়।
আমরা ভিতরে এসে খাবারের অর্ডার করি।ওয়েটার এসে জানায় খাবার টা আসতে বিশ মিনিট টাইম লাগবে।তাই আমি ওদের ওখানে বসিয়ে রেখে মেয়েটা কি করছে সেটা দেখার জন্যে রেষ্টুরেন্টের দরজার পাশে এসে দাড়িয়ে ছিলাম।দেখলাম মেয়েটা কেক কেটে সব গুলো বাচ্চাকে খেতে দিলো।কেক খাওয়া শেষে বাচ্চাদের নিয়ে কিছুক্ষন লাফালাফি,হৈ-হুল্লোর করে সবাই মিলে ঘাসের উপরে বসে ডিনার করলো।একমাএ সেই ছেলেটা ছাড়া।ছেলেটা এক পাশে গম্ভীর মুখ করে বসে ছিলো পুরোটা সময়।ওকে দেখে মনে হয়েছিলো হাসি কাকে বলে সেটা ওই ছেলে জানেই না।আমি পকেট থেকে আমার ফোন বের করে আড়াল থেকে মেয়েটার বেশ কিছু পিক তুলেছিলাম।খাওয়া শেষে মেয়েটা বাচ্চা গুলোর হাতে একটা করে প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।তারপর সব গুলো বাচ্চাকে একে একে আদর করে একটা মিনি প্রাইভেট বাসে উঠিয়ে দিলো।বাচ্চা গুলো চলে যেতেই মেয়েটা সেখানে দাড়িয়ে ফুপিয়ে কেদে দিয়েছিলো।মেয়েটার কান্না শুনে ছেলেটা বসা থেকে উঠে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে।মেয়েটা ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে আরো জোড়ে হাউমাউ করে দেয়।মেয়েটা কে কাদতে দেখে আমার আর এক মূহুর্তও ওখানে দাড়িয়ে থাকার সাহস হয়নি।আমি দ্রুত ভিতরে চলে এসেছিলাম।আমার কেনো যেনো ভিষন কষ্ট হয়েছিলো।মনে হচ্ছিলো কেউ আমার কলিজায় হাতুরি দিয়ে জোড়ে জোড়ে আঘাত করছে।অচেনা একটা মেয়ের চোখের পানি কেনো আমাকে এতোটা পোড়াচ্ছিলো আমি নিজেও জানতাম না।
এইটুকু বলে থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আহান।তারপর মাথা তুলে মেঘের দিকে তাকাতেই দেখলো,মেঘ কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে।
মেঘের এখনো স্পষ্ট মনে আছে।দিশাকে ওর খালা মনি নিয়ে যাওয়ার পর মেঘ একদম একা হয়ে গিয়েছিলো।দিশাকে প্রত্যেকদিন ভিষন মিস করতো।তাই ‘ও’ দিশার বার্থডে টা কিছু এতিম বাচ্চাদের সাথে সেলিব্রেট করবে বলে ঠিক করে।বাচ্চাদের জন্যে কিছু ড্রেস আর চকলেট কেনার জন্যে বের হয়েছিলো।তখনই দেখেছিলো একটা ছেলে রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে ফটোশুট করছে।আর অন্যদিক থেকে দ্রুত গতিতে একটা ট্রাক এগিয়ে আসছে কিন্তু ছেলেটার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।তাই ‘ও’ গিয়ে ছেলেটাকে থাক্কা দিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়া থেকে বাচিয়ে ছিলো।
রাতের বেলা মিহির আর ‘ও’ চুপিচুপি বাসা থেকে বের হয়ে।ছোট একটা এতিমখানার সব বাচ্চাদের নিয়ে বার্থডে সেলিব্রেট করতে ছোট্ট একটা রেষ্টুরেন্টে চলে এসেছিলো।সেখানে এসে কো-ইন্সিডেন্সলি আবার ছেলে গুলোর সাথে দেখা হয়ে গিয়ে ছিলো।
বাচ্চাগুলো যতোক্ষন মেঘের সাথে ছিলো ততোক্ষন ওর সময় টা বেশ ভালোই কেটে ছিলো।কিন্তু ওরা চলে যেতেই মেঘের দিশার কথা ভিষন মনে পড়ে গিয়েছিলো।তাই ‘ও’ আর নিজেকে সামলাতে পারেনি সেখানে দাড়িয়েই কেদে দিয়েছিলো।মিহির চেষ্টা করেও ওকে সামলাতে পারেনি।ওখান থেকে বাড়ি ফিরে আসা পযর্ন্ত পুরোটা রাস্তা ‘ও’ কান্না করেছে।
__________
মেঘকে ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে আহান ওর সামনে তুড়ি বাজালো।তুড়ি বাজানোর শব্দে মেঘের ভাবনায় ছেদ ঘটলো।আহান ভ্রু নাচিয়ে বলে
“কি ভাবছো?”
মেঘ ডানে বামে ঘাড় নাড়ায়।যার মানে কিছুনা।আহান আবারও বলতে শুরু করে
রেষ্টুরেন্ট থেকে আসার পর পুরোটা রাত আমি ছটফট করেছি।চেয়েও দু-চোখের পাতায় একটু খানি ঘুম আনতে পারিনি।যখনই চোখ বন্ধ করেছি বারবার মেয়েটার কান্নারতো চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভেষে উঠেছে।তারপর পুরো দুটো দিন কেটে গিয়ে ছিলো।এই দুই দিনে আমি যতোবার বাইরে বের হয়েছি ততোবার আমার চোখ দুটো শুধু মেয়েটা কে খুজেছে,কিন্তু কোথাও পায়নি।আমি বারবার বাইরে বের হতাম যাতে মেয়েটাকে একটা বার দেখতে পারি।বাট প্রতিবারই নিরাশ হয়ে ফিরে আসতাম।ওকে কেনো খুজতাম আমি নিজেও জানি না।শুধু জানতাম আমার অশান্ত মনটা কে শান্ত করার জন্য ওকে আমি একবার দেখতে চাই।
দুই দিন পর অবশেষে মেয়েটার দেখা পেয়ে ছিলাম।কিন্তু ওকে যে অবস্থায় দেখে ছিলাম তাতে আমার মাথায় রাগ উঠে গিয়েছিলো।আমরা সন্ধ্যার কিছুক্ষন আগে মার্কেটে গিয়ে ছিলাম।সেখানে গিয়ে দেখলাম কয়েকটা বখাটে ছেলের সামনে দাড়িয়ে মেয়েটা মাথা নিচু করে কাদছে।আর ওদের মধ্যে থাকা একটা ছেলে মেয়েটার ওড়নার এক মাথা ধরে টানছে।আর মেয়েটা ঘাড়ের কাছ থেকে ওড়নাটা চেপে ধরে আছে।আমি রেগে গিয়ে ছেলেটার নাক বরাবর একটা ঘুসি মেরে ওর হাত থেকে মেয়েটার ওড়নাটা ছাড়িয়ে এনে মেয়েটা কে এক সাইডে দাড় করিয়ে দিয়ে ছিলাম।
ওই ছেলেটাকে মারায় ওর দলের বাকি ছেলেরা আমার উপর অ্যাট্যাক করে।আমি ওদের সবার সাথে ফাইট করতে থাকি।আমার সাথে হিয়ান,রিয়ান,অভিও এসে যোগ দেয়।মারামারির এক পর্যায়ে ওরা আমাদের সাথে না পেরে ওদের দলের বাকি ছেলেদের খবর দেয়।কিছুক্ষনের মধ্যে পুরো বিশ পচিশ জনের মতো ছেলে এসে হাজির হয়।এতো গুলো ছেলেকে এক সাথে দেখে আমরা চারজন একটু ঘাবরে যাই।কারন জায়গা টা আমাদের জন্য একদম অচেনা ছিলো।তার উপর এতো গুলো ছেলে একসাথে।তারপরেও আমরা নিজেদের সামলে নিয়ে ওদের সাথে ফাইট করতে লাগলাম।মারামারির এক পর্যায়ে একটা ছেলে হকিষ্টিক হাতে নিয়ে আমাকে পিছন থেকে আঘাত করতে চাইলো।কিন্তু তখনই সেই ষ্টুপিড মেয়েটা এসে আবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।তবে এইবার আর ‘ও’ আমার বুকের উপর পড়লো না।ঘাড়ে ষ্টিকের বারি খেয়ে আমার থেকে কিছুটা দূরে মুখ থুবরে পড়লো।আমি হতবম্ভ হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।মেয়েটা ঘাড়ে হাত দিয়ে চেপে রেখে মাথা উঠিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো
“হুডিম্যান প্লিজ তোমরা এখান থেকে চলে যাও।তোমরা এখানে থাকলে ওরা তোমাদের ক্ষতি করবে।প্লিজ তাড়াতাড়ি যাও এখান থেকে।”
মেয়েটার কথা শুনে লাইফে হয়তো ফাষ্ট টাইম আমার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পড়েছিলো।ওই টুকু পিচ্চি মেয়েটা এতোটা আঘাত পাওয়ার পরেও নিজের কথা না ভেবে শুধুমাত্র আমাদের কথা ভেবেছিলো।মেয়েটি জোড় পূর্বক একটা হাসি দিয়ে বলেছিলো
“আমার কথা ভেবো না।আমার কিচ্ছু হয়নি,শুধু একটুখানি ঘাড়ে লেগেছে।আর আমার ভাইয়া আমাকে খুজতে খুজতে ঠিক এখানে চলে আসবে।তোমরা যাও এখান থেকে প্লিজ।”
মেয়েটা কথাটা শেষ করার আগেই কতোগুলো বাইক একসাথে এসে ছেলে গুলোকে ঘিরে ধরলো।মেয়েটা সেদিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।এর মধ্যে হিয়ান আর রিয়ান এসে আমার আমার হাত ধরে টেনে শোয়া থেকে উঠিয়ে আমাকে নিয়ে ওখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো।আমরা ওখান থেকে সোজা রিসোর্টে চলে গিয়েছিলাম।আর সেই রাতেই আমরা ঢাকায় চলে আসি।কারন ওখানের ফেমাস একজন বিজনেস ম্যানের মেয়ের উপর এ্যাট্যাক হয়েছিলো।তাই পুলিশ ওখানে যারা যারা মারামারি করেছিলো তাদের সবাইকে খুজেছিলো।আমরা চাইনি এমন একটা অচেনা জায়গায় নিজেদের ঝামেলায় জড়াতে।
কথা গুলো বলে আহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মেঘের মনে আছে সেদিন হুডিম্যানেরা চলে যাওয়ার পর মিহির গিয়ে মেঘকে কোলে তুলে নিয়ে হসপিটালে নিয়ে এসেছিলো।আর ওর বন্ধুরা ছেলে গুলোকে মেরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলো।তবে কয়েকটা ছেলে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো।পুলিশ সেই ছেলে গুলোকে আর হুডি ম্যানদের পুরো শহরে তন্নতন্ন করে খুজেছে।তবে ছেলেগুলোকে খুজে পেলেও হুডি ম্যানদের পাওয়া যায়নি।
আহান বললো
বাড়িতে ফিরে আসার পর আমার অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো।যেখানেই যেতাম যাই করতাম সব সময় শুধু মেয়েটার কথা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতো।হাজার চেষ্টা করেও মেয়েটাকে ভুলতে পারিনি।হিয়ান,অভি,রিয়ান মিলে আমাকে বোঝাতো যে আমি মেয়েটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না যে আমি ওইটুকু পুচকে একটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছি।তার উপর যার নামটা অবদি জানি না এমন একটা মেয়েকে কিভাবে ভালোবাসবো?ওরা সবাই মিলে আমাকে বারবার বলেছিলো যে মেয়েটা কে খুজে বের করতে।কিন্তু আমি একবারের জন্যও মেয়েটা কে খুজিনি।উল্টে আমি আমার মনকে সব সময় বুঝাতাম যে আমি মেয়েটা কে ভালোবাসি না।এটা শুধুমাত্র আমার এ্যাটরাকশন ছিলো।
আমার এমন পাগল পাগল অবস্থা দেখে মা-বাবা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো।ওনারা অভিদের কাছে আমার এমন অবস্থায় কারন জিঙ্গেস করতে ওরা সব কিছু বলে দেয়।সব শুনে ওনারাও আমাকে বলেছিলেন মেয়েটা কে খুজে বের করার জন্যে।ওনাদের নাকি আমার পছন্দ নিয়ে কোনো আপএি নেই।ওনারা তোমার পিকও দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি কাউকে দেখতে দেইনি।তারপরেও ওনাদের তোমাকে মেনে নিতে কোনো আপওি ছিলো না।
কথাটা বলেই আহান ফোস করে একটা শ্বাস ফেললো।মেঘ ওর কথা গুলো মাথা নিচু করে শুনছে।আহান বললো
অবশেষে সবার এতো এতো টর্চার সহ্য করতে না পেরে আমি দেশ ছেড়েই চলে গিয়ে ছিলাম।আর আমার পিছনে পিছনে ওই গাধা গুলোও লন্ডনে চলে এসেছিলো।পুরো দুটো বছর মেয়েটাকে ভোলার চেষ্টা করেছি।শুধুমাএ মেয়েটা কে ভোলার জন্য বাবার বিজনেসে জয়েন করেছি।সাড়াদিন পড়া শোনা করতাম।আর সময় পেলে অফিসের কাজ করতাম।তারপরে ক্লান্ত হয়ে রাতে যখন একটু ঘুমাতে যেতাম তখন মেয়েটা আমার কানের কাছে এসে হুডিম্যান হুডিম্যান বলে চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিতো।
আহানের কথা শুনে মেঘ ফিক করে হেসে দিলো।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে হতাশ কন্ঠে বললো
“হেসো না মেঘ পরী।জানো এমন কোনো একটা দিন ছিলো না আমি মেয়েটার কথা ভাবিনি।ফাইনাললি দুই বছর পর বাংলাদেশে ফিরে মেয়েটার আবার দেখা পেয়ে ছিলাম।তবে তখন মেয়েটা সম্পূর্ন অন্য একটা রূপে ছিলো।ওর দিকে একবার তাকাতেই আমি ওকে চিনে ফেলে ছিলাম।তবে ওর বিধ্বস্ত চেহারা দেখে আমার বুকটা ধক করে উঠেছিলো।মেয়েটা যখন একটা নাইভস নিয়ে হাতে চেপে ধরেছিলো ওর হাত দিয়ে রক্ত পড়ছিলো তখন আমার পুরো পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো।”
মেঘ এক দৃষ্টিতে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।আহান ভাঙা গলায় বললো
“যখন বুঝতে পেরেছিলাম আমি মেয়েটাকে ভালোবাসি।আর ওকে ছাড়া আমার বেচে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।তখন আমি সবাইকে সবটা জানিয়ে ছিলাম।আর মেয়েটার ব্যাপ্যারেও সবটা জেনে ছিলাম।তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো সবাই মিলে আমাকে মেয়েটার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো।কতো আকুতি মিনুতি করেছি কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেনি।হয়তো ওটাই আমার ভুলের শাস্তি ছিলো।আমি চাইলেই অনেক আগেই মেয়েটা কে খুজে বের করে ওকে ভালো একটা লাইফ গিফট করতে পারতাম।বাট আমি আমার অনুভূতি গুলোর থেকে পালিয়ে বেড়িয়েছি।তার শাস্তি শরূপ আল্লাহ হয়তো মেয়েটার থেকে আবার আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলো।পুরো ছয়টা বছর পর যখন মেয়েটার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো পৃথিবীতে আমার থেকে সুখী মানুষ আর কেউ নেই।”
এইটুকু বলে আহান একটা তাছিল্য হাসি দিয়ে আবারও বললো
“কিন্তু যখন আমি ভাবলাম আমার এতোদিনের অপেক্ষার অবশান ঘটেছে তখন জানতে পারলাম মেয়েটি নাকি আমাকে কোনোদিন ভালোই বাসে নি।সবকিছু নাকি ওর মোহ ছিলো।”
কথাটা বলে আহান মেঘের দিকে তাকালো।মেঘের চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।আহান কাঠকাঠ গলায় বললো
“আমি অনেক অপেক্ষা করেছি মেঘ।এই ছয়টা বছর অনেক বোকামি করেছি।প্রথমে আমার ভালোবাসা টা আমি নিজে বুঝতে পারিনি।তারপর যখন নিজে বুঝতে পেরেছি তখন পরিবারের লোকদের বোঝাতে পারিনি।আর যখন সবাই কে বুঝিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করে ফেলেছি তখন তোমাকে কিছু বোঝাতে পারছি না।অনেক হয়েছে আর না।আজকে এক্ষুনি এই মূহুর্তে আমাদের বিয়ে হবে।তুমি রাজি থাকলে ভালো কিন্তু যদি না থাকো তাহলে তোমাকে জোড় করা ছাড়া আমার আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।”
মেঘ আহানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আহানের কথা শুনে ‘ও’ হতবম্ভ হয়ে গেছে।’ও’আহানের দিকে তাকিয়ে বললো
“আজকে আমাদের বিয়ে মানে?আমি আপনাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবো না।আর আপনি আমাকে জোড় করতে পারেন না।”
আহান মেঘের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর পায়ের বাধন খুলতে খুলতে বললো
“আমি সব করতে পারি মেঘ পরী।তুমি আমাকে এখনো চিনতেই পারোনি।”
কথাটা বলে আহান মেঘের পায়ের বাধন খুলে ওর বাহু ধরে দাড় করালো।মেঘ নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আহান কে একটা ধাক্কা মারলো।আহান এমন আচৎমকা ধাক্কার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।তাই মেঘের ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।সেই সুযোগে মেঘ জোড়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আহান মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।তারপর নিজেও ওর পিছনে পিছনে হাটা দিলো।
#ভালোবাসার_অনুভূতি
#লেখিকাঃতানিশা_তিশা_মনি
#পর্বঃ60
কথাটা বলে আহান মেঘের পায়ের বাধন খুলে ওর বাহু ধরে দাড় করালো।মেঘ নিজের সর্বশক্তি দিয়ে আহান কে একটা ধাক্কা মারলো।আহান এমন আচৎমকা ধাক্কার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না।তাই মেঘের ধাক্কা খেয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।সেই সুযোগে মেঘ জোড়ে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।আহান মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসলো।তারপর নিজেও ওর পিছনে পিছনে হাটা দিলো।মেঘ রুমে থেকে বের হয়ে দৌড়ে সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে লাগলো।ওর হাত দুটো এখনো বাধা।’ও’ সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে হঠাৎ কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো।মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো ওর সামনে হাসি হাসি মুখ করে মিহির দাড়িয়ে আছে।মিহির কে দেখে মেঘ একটা শস্তির নিশ্বাস ফেললো।মেঘ কিছু বলতে যাবে তার আগেই মিহির এসে হাতের বাধন খুলতে খুলতে বললো
“আজব হাত বেধে রাখার কি আছে আমি তো সেটাই বুঝলাম না?”
আহান সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো
“কি করবো বল?তোর বোন মুরগির বাচ্চার মতো যেভাবে লাফালাফি করে তাতে না বেধে কোনো উপায় ছিলো।দেখ পায়ের বাধন খুলে দিয়েছি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সোজা নিচে চলে এসেছে।”
আহানের কথা শুনে মিহির হেসে দিলো।তারপর দড়িটা খুলে ফ্লোরে ছুড়ে মেরে বললো
“কামঅন ব্রো যতোই মুরগির বাচ্চার মতো লাফালাফি করুক আর দৌড়াদৌড়ি করুক এখান থেকে আজকে কোথাও যেতে পারবে না।”
মিহিরের কথাটা শেষ হতেই মেঘ গিয়ে মিহির কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো
“ভাইয়া আমি এখানে থাকবো না ।আমাকে বাসায় দিয়ে আয় প্লিজ।”
আহান এসে এক ঝটকায় মেঘকে মিহিরের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর ড্রইংরুমের দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো
“আগে বিয়েটা হোক তারপর আমি নিজে গিয়ে তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো।”
কথাটা বলতে বলতে আহান মেঘকে ড্রইং রুমে নিয়ে আসলো।এখানে এসে যা দেখলো তাতে মেঘ আরো অবাক হলো।কারন ড্রইং রুমের সোফায় আহির,রিয়ান,হিয়ান,অভি বসে আছে।ওদের সাথে একজন উকিল আরেকজন মধ্যবয়স্ক হুজুর লোক।আহান মেঘকে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও গিয়ে মেঘের পাশে বসে পড়লো।তারপর ওর হাত চেপে ধরে বললো
“কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”
মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে কর্কস কন্ঠে বললো
“বিয়ে পড়ানো শুরু করবে মানে?কতোবার বলবো আমি আপনাকে বিয়ে করবো না!করবো না!করবো না!”
আহান হাত ধরে টান দিয়ে মেঘকে আবার নিজের পাশে বসিয়ে দিলো।তারপর আচৎমকা ঠাস করে মেঘের গালে একটা চড় মারলো।মিহির,আহির,অভি,রিয়ান,হিয়ান অবাক হয়ে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।কারন যে আহান আজ অবদি মেঘের গায়ে একটা আচোড়ও কেটে দেখেনি।সে আজকে মেঘকে চড় মারলো?মেঘ গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে আহানের দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ ভাবতেই পারছে না আহান ওর গায়ে হাত তুলেছে।আহান মেঘের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বললো
“চুপচাপ এখানে বসে থাকো।যতোক্ষন পযর্ন্ত না বিয়ে পড়ানো কম্পিলিট হচ্ছে।ততোক্ষন পর্যন্ত এখান থেকে এক চুল পরিমানও যদি নড়েছো তাহলে আরো একটা কানের নিচে পড়বে।”
আহানের কথা শুনে মেঘ গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।আহান মেঘের দিকে এক পলক তাকিয়ে কাজিকে চোখের ইশারায় বিয়ে পড়াতে বললো।কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করে আহান কে কবুল বলতে বললো।আহান র্নিদ্ধিধায় তিনবার কবুল বলে দিলো।কিন্তু মেঘকে অনেক বার কবুল বলতে বলার পরেও ‘ও’ চুপ করে বসে রইলো।ওকে এভাবে বসে থাকতে দেখে আহান বললো
“মিহির তোর বোন মনে হয় সত্যিই বিয়েটা করবে না বুঝেছিস।একটা কাজ কর,উকিল আর কাজি দুজনকে মেরে ওনাদের লাশটা গায়েব করে দে।”
আহান কথাটা বলার সাথে সাথে মেঘ অবাক কন্ঠে মৃদ্যু চিল্লিয়ে বললো
“মেরে লাশ গায়েব করে দেবে মানে?বিয়েটা আমি করবো না।তাতে ওনাদের ভুলটা কোথায়?আপনি ওনাদের কেনো মারতে চাইছেন?”
মেঘের কথা শুনে আহান স্বাভাবিক স্বরেই বললো
“আমি বিয়ে করবো তাই ওনাদের এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।এখন যখন বিয়েটা হচ্ছেই না তাহলে ওনাদের বাচিয়ে রেখে কি লাভ?”
মেঘ চেচিয়ে বললো
“আজব এটা কোন ধরনের লজিক?বিয়েটা হচ্ছে না তাই আপনি দুজন নির্দোষ মানুষকে মেরে ফেলবেন?আপনার লজ্জা করছে না এই কথাটা বলতে?”
আহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসা থেকে দাড়িয়ে বললো
“নাহ একদমই লজ্জা করছে না।আমি যদি শান্তিতে থাকতে না পারি তাহলে এদের কাউকে শান্তিতে থাকতে দেবো না।”
এইটুকু বলে আহান আহির আর মিহিরের দিকে তাকিয়ে বললো
“তোরা হা করে তাকিয়ে কি দেখছিস?যেটা বলেছি সেটা কর।ওনাদের মেরে লাশ টা গায়েব করে তারপর তোর বোনকে বাড়িতে দিয়ে আয়।”
আহির আর মিহির একসাথে বললো
“ওকে ব্রো!”
বলেই ওরা ওদের কোমরে শার্টের নিচে গোজা রিভলবার টা টেনে বের করলো।তারপর মিহির গিয়ের হুজুর লোকটার মাথায় রিভলবার তাক করলো।আর আহির গিয়ে উকিলের মাথায় তাক করলো।মেঘ বসা থেকে দাড়িয়ে রাগি কন্ঠে বললো
“তোরা কি করছিস এসব?তোদের মাথা ঠিক আছে?”
মেঘের কথা শুনে আহির স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
“সরি মেঘ আমাদের কিছুই করার নেই।আমরা ব্রো’র কথা কখনো অমান্য করি না।”
মেঘ বললো
“তাই বলে দুটো নির্দোষ মানুষকে এভাবে মেরে ফেলবি?বিয়েটা আমি করবো না তাতে ওনাদের দোষ কোথায়?”
মেঘের কথা শেষ হতেই হুজুর লোকটা অসহায় কন্ঠে বললো
“মামনি প্লিজ বিয়েতে রাজি হয়ে যাও।নাহলে এনারা আমাদের মেরে ফেলবেন।আমরা মরে গেলে আমাদের পরিবার কে দেখবে?সবাই তো রাস্তায় এসে দাড়াবে।”
হুজুর লোকটার কথা শেষ হতেই উকিল ছেলেটা বললো
“আপু আপনি আমার ছোট বোনের মতো।প্লিজ আমাকে বাচান।আমার কিছু হয়ে গেলে আমার অসুস্থ মা-বাবা কে দেখার কেউ নেই।”
ওদের কথা শুনে মেঘ ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।এই প্রথম আহান,আহির,মিহিরের প্রতি মেঘের ঘৃনা হচ্ছে।ওরা নিজেদের টাকার অহংকারে অসহায় দুটো মানুষ কে এভাবে অহেতুক কারনে মেরে ফেলতে চাইছে?মেঘের চোখ থেকে দু-ফোটা পানি গালে গড়িয়ে পড়লো।’ও’ আহানের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো
“আমি বিয়েতে রাজি আছি।”
মেঘের কথা শুনে ওখানে উপস্থিত সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।আহান এসে আবারও মেঘের পাশে বসে পড়লো।তারপর বললো
“দ্যাটস গ্রেট।আগে রাজি হলেই পারতে তাহলে ওনাদের আর ভয় দেখাতে হতো না।”
আহানের কথা শুনে মেঘ আর কিছু বললো না।অবশেষে মেঘ আর আহানের ধর্মীয় ভাবে আর আইনি ভাবে বিয়েটা হয়েই গেলো।শাক্ষী হিসেবে মিহির আর আহীর সাইন করেছে।বিয়ে কাজ শেষ হতেই আহান গিয়ে হুট করে কাজিকে জড়িয়ে ধরলো।তারপর হাসতে হাসতে বললো
“আঙ্কেল আপনি তো দারুন এ্যাক্টিন করেন।যাষ্ট ফাটিয়ে দিয়েছেন।আপনার অভিনয় দেখে আমারই কান্না চলে এসেছিলো।আর মেঘ তো একটা বাচ্চা মেয়ে ‘ও’ রাজি না হয়ে যেতো কোথায়।”
আহানের কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই হো হো করে হেসে দিলো।মেঘ ওদের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে আছে।উকিল ছেলেটা বসা থেকে দাড়িয়ে ফাইলগুলো হাতে নিয়ে বললো
“ভাই আমার এ্যাক্টিন টা কেমন হয়েছে?”
আহান হুজুর লোকটা কে ছেড়ে দিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো
“দারুন হয়েছে।তোকে উকিল না বানিয়ে এ্যাক্টর বানানো উচিৎ ছিলো।”
আহানের কথা শুনে ছেলেটা ফিক করে হেসে দিলো।ওদের সবার কথা শুনে মেঘের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এতোক্ষন এখানে যা হচ্ছিলো সবকিছু আগে থেকে প্লান করা ছিলো।মেঘ ভাঙা কন্ঠে বললো
“তারমানে আপনারা সবাই মিলে এতোক্ষন আমার সাথে নাটক করেছেন?”
আহান ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে মেঘের কাছে এসে বললো
“তো!তোমার কি মনে হয়,তুমি বিয়েতে রাজি না এইজন্য আমি আমার বাবার বয়সের একটা লোক কে বিনা দোষে মেরে ফেলবো?”
আহানের কথা শেষ হতেই উকিল ছেলেটা মেঘের সামনে এসে বললো
“আর আমি তো আহান ভাইয়ের ছোট ভাইয়ের মতো।আমাকে মারা তো দূরের কথা,আজ অবদি ভাই আমাকে একটা ধমকও দেয়নি।খুব ছোট বেলায় আমার বাবা মারা গিয়েছিলেন।আমার বাবা আহাদ আঙ্কেলের ম্যানেজার ছিলেন।উনি মারা যাওয়ার পর আমার লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে আমাদের সংসারের খরচ সব কিছু আহাদ আঙ্কেল দিয়েছেন।ষ্টাডি কম্পিলিট করার পর আহান ভাই চাকড়িটা পাইয়ে দিয়েছেন।ওনারা শুধু আমাদের দিয়েই গেছেন।কখনো কিচ্ছু চায়নি।তাই আজকে যখন ভাই আমার কাছে এসে এইটুকু হেল্প চাইলেন আমি আর মানা করতে পারিনি সরি ভাবি।”
মেঘের ইচ্ছে করছে নিজের মাথাটা দেয়ালের সাথে বারি দিতে।ওর আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো আহান অকারনে কখনো কোনো নির্দোষ মানুষ কে মারেনা।তাই যাই হয়ে যাক এনাদের মারার তো প্রশ্নয়ই উঠে না।মেঘ মাথা নিচু করে থম মেরে দাড়িয়ে রইলো।
উকিল ছেলেটা আর হুজুর লোকটা নিজেদের কাজ কম্পিলিট করে চলে গেলেন।ওনারা যাওয়ার পর আহান,আহির,মিহির, অভি,হিয়ান, রিয়ান একে অপরকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলো আর নিজেদের মধ্যে কথা বলতে লাগলো।তখনই হঠাৎ করে মেঘ চিল্লিয়ে বললো
“তোমরা সবাই মিলে ঠকিয়েছো আমাকে।সবাই মিলে আমাকে মিথ্যা বলেছো,বোকা বানিয়েছো।তোমাদের কারো কাছে আমার ইচ্ছের কোনো দাম নেই।”
মেঘ এতো জোড়ে চিল্লিয়ে কথা বলায় সবাই অবাক চোখে মেঘের দিকে তাকালো।মেঘ কথাটা বলেই দৌড়ে উপরে চলে গেলো।ওরা সবাই উপরে তাকিয়ে আরো অবাক হলো।কারন মেঘ রুমে না গিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছে।ওরা সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে নিজেরাও মেঘের পিছনে পিছনে দৌড় দিলো।
______
মেঘ ছাদে এসে রেলিংএর উপরে দাড়ালো।ঠিক তখনই আহান এসে মেঘকে টান দিয়ে রেলিংয়ের উপর থেকে নামিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।মেঘ ধাক্কা দিয়ে আহান কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।তারপর চিল্লিয়ে বললো
“ডোন্ট টাচ মি!খবরদার একদম ছোবেন না আমায়।আপনি আমায় ঠকিয়েছেন।আমার ইমোশন নিয়ে গেম খেলেছেন।”
মেঘের কথা শুনে আহান অসহায় কন্ঠে বললো
“এছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিলো না মেঘ।আমি তোমাকে ছাড়া কিছুতেই বাচতে পারবো না।তুমি এসব কেনো করছো আমি জানি না।আর জানতেও চাই না।আমি শুধু এইটুকু জানি তোমাকে আমার চাই।এ্যাট এনি কস্ট।”
মেঘ আবার চেচিয়ে বললো
“বাট আমি আপনাকে চাই না।কতোবার বলবো আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আমার মনে আপনার জন্য কোনো ফিলিংস নেই।আমি আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই।কেনো বুঝতে পারছেন না আপনি?”
মেঘের কথা শুনে আহানের রাগ উঠে গেলো।’ও’ মেঘের কাছে এগিয়ে এসে ওর বাহু চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বললো
“তুমি কেনো আমার থেকে দূরে থাকতে চাও?কি করেছি আমি?এতো গুলো বছর ধরে পাগলের মতো শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবেসে গেছি।আর তুমি সবকিছু জেনেও আমাকে আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো?আমি ভেবেছিলাম সবটা জানার পর তুমি হয়তো তোমার ভুলটা বুঝতে পেরে আমাকে কাছে টেনে নিবে।কিন্তু তুমি এখনো আগের মতো একই কথা বলে যাচ্ছো।”
মেঘ তাছিল্য হেসে বললো
“ভালোবাসা?কিসের ভালোবাসা বলুনতো?আপনি তো আমাকে কখনো ভালোই বাসেন নি।যদি ভালো বাসতেন তাহলে আজকে এভাবে ঠকিয়ে আমাকে বিয়ে করতে পারতেন না।আমার ইচ্ছের দাম দিতেন।কেউ যদি কাউকে ভালোবাসে তাহলে সব সময় তার ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকার কথা চিন্তা করে।আর আপনি তো শুধু নিজের কথা ভেবে গেছেন।যখন দেখেছেন আমি বিয়েতে রাজি হয়নি তখন জোড় করে মিথ্যাে বলে আমাকে বিয়ে করে নিয়েছেন।”
হিয়ান,রিয়ান,আহির,মিহির ওরা অবাক হয়ে মেঘের কথা শুনছে।আহান হতবিহ্বল চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।’ও’ ভাবতেই পারেনি মেঘ শেষ পযর্ন্ত ওর ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহ করবে।’ও’ শুকনো একটা ঢোক গিলে বললো
“তুমি এখন কি চাও মেঘ?”
আহানের প্রশ্ন শুনে মেঘ সোজা ভাবেই বললো
“ডিবোর্স!আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে আমি আমার ভালোবাসা মানুষটা কে বিয়ে করতে চাই।”
মেঘের কথা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।আহান দু-কদম পিছিয়ে গেলো।’ও’ বোকার মতো মেঘের দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কানে বারবার মেঘের বলা “আপনাকে ডিবোর্স দিয়ে আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে বিয়ে করতে চাই” এই কথাটা বাজছে।’ও’ ভাবতেই পারছে না মেঘ অন্য কাউকে ভালোবাসে।মিহির মেঘের সামনে এসে বললো
“তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস?”
মেঘ মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো
“হ্যা।”
কথাটা বলার সাথে সাথে মিহির নিজের গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে মেঘকে কশিয়ে একটা চড় মারলো। এতো জোড়ে চড় মারায় মেঘ ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো।ওর গালটা জ্বলে যাচ্ছে।জিবনে হয়তো এতো জোড়ে কেউ ওকে মারেনি।তবে গালের থেকেও মনের মধ্যে বেশি কষ্ট লাগছে।বুকের বাম পাশটা বড্ড জ্বালা করছে।একটা সময় যে মানুষগুলো ওকে সবসময় আগলে রাখতো।তারা আজকে ওকে আঘাত করছে।তবে এতে ওর কোনো আফসোস নেই।’ও’ তো এটাই চায় সবাই ওকে ভুল বুঝুক।যাতে ‘ও’ যদি মরেও যায় তাহলেও যেনো কেউ ওর জন্যে আফসোস না করে।মিহির চিল্লিয়ে বললো
“নিজের মুখে আবার হ্যা বলছিস?তোর লজ্জা করছে না?ইচ্ছে করছে তোর গলা টিপে এখানেই মেরে ফেলি।আরে আমরা তো সামান্য একটু নাটক করেছি বিয়েটা দেওয়ার জন্য।তাতেই তুই আমাদের ঠকবাজ বলছিস।তুইতো আমাদের থেকেও বড় ঠকবাজ।আহান ব্রো কে ভালোবাসার কথা বলে এখন আবার বলছিস তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস?ছিহ!এতোটা নিচে কিভাবে নেমে গেলি?”
মিহিরের কথা শেষ হতেই আহান একপা দু-পা করে পিছাতে পিছাতে মেঘের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
“ওকে মেঘ পরী,তুমি যা চাও তাই হবে।আমি তোমার লাইফ থেকে চলে যাবো।তুমি আমাকে ডিবোর্স দিয়ে আবার নিজের মতো নতুন করে সবটা গুছিয়ে নিও।তোমার ভালোবাসার মানুষটা কে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করো।দোয়া করি তোমার কখনো যেনো আমার মতো অবস্থা না হয়।”
কথাটা বলতে বলতে আহান পিছাতে পিছাতে ছাদ থেকে বেরিয়ে গেলো।আহানের যাওয়ার দিকে তাকাতেই মেঘের চোখ থেকে দু-ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো।আহির এসে মেঘের হাত ধরে টেনে ফ্লোর থেকে উঠিয়ে দাড় করালো তারপর বললো
“আমার জিবনের সবচেয়ে বড় ভুল হলো তোর মতো সার্থপর মেয়েকে নিজের বোন ভাবা।তুই কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যই না।আজকে তুই আমার ভাইকে যতোটা কষ্ট দিয়েছিস একদিন দেখিস তুই এর থেকেও বেশি কষ্ট পাবি।রিভেঞ্জ অফ ন্যাচ্যার বলে একটা কথা আছে জানিসতো? আজকে যেটা করলি একদিন সেটা সুদে আসলে ঠিক ফিরে পাবি।”
কথাটা বলে আহির মেঘকে আবার ফ্লোরে ছুড়ে মারলো।তারপর হনহন করে ছাদ থেকে চলে গেলো।ওর সাথে সাথে মিহির,হিয়ান,রিয়ান, অভিও ছাদ থেকে নেমে গেলো।মেঘ ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলো।ওর কান্নার শব্দ এই অন্ধকার রাতের সাথে মিলিয়ে গেলো।সবাই এতোক্ষন ওর কঠিন কথা গুলো শুনেছে।কিন্তু এখন ওর এই চিৎকার গুলো কেউ শুনতে পেলো না।কেউ জানতেও পারলো না ‘ও’ কতোটা কষ্ট মনের মধ্যে চেপে রেখে ওই কথা গুলো বলেছে।
#চলবে,,,,,
চলবে,,,,,