#লতাকরঞ্চ (২)
আমাদের দুজনের মধ্যে দুরুত্ব খুব বেশি নেই। একি ট্যাক্সিতে পাশাপাশি বসে আছি দুজন। প্রান্তিক ভাইয়া যদি এখন কিছু বলে ফেলে আমি কি বলবো?
যদি বলে, ” চল লতা আমরা অমুক জায়গায় যাই…. চল তমুক জায়গায় আজ তোকে নিয়ে যাবো.. ”
তখন আমি কি বলবো? লতা ভাবছে..
ভাইকি এখন আলতোভাবে স্পর্শ করে দিবে আমার হাত?
আমি তখন মৃদ্যু স্বরে বলে উঠবো,
– আরে আরে কি করছেন? ড্রাইভার আংকেল আছে তো!
ভাই কি তখন বলবে?
– থাকুক না! ক্ষতি কি? হাত ধরা কি অপরাধের কিছু?
লতা ভাবছে..
সে এইসব কথা শুনার পর সুন্দর করে একটা হাসি দিবে তারপর চোখ ফিরিয়ে নিবে বাইরের দিকে..
•°•°•°•°•°•°•°•
” এই লতা! কিরে? কি ভাবছিস এত? নেমে পড়, শপিংমল এসে গেছে। ”
প্রান্ত ভাইয়ের এই কথা শুনে লতা কাচুমাচু করতে লাগলো। সেকি! ভাইয়াতো কিছুই বললোনা,করলো না।
এতক্ষন বুঝি সে স্বপ্নই দেখতেছিলো?
কিন্তু ওতো স্বপ্নগুলো অনুভব করতে পেরেছিলো!
মনে হচ্ছিলো, এই বুঝি ছুঁয়ে দিলো!
এই বুঝি ছুঁয়ে দিয়েছে..
এমনটাই তো মনে হলো!
তাহলে?
লতা নামছে না।
প্রান্ত বললো,
– সমস্যা কি তোর? নামছিস না কেন?
লতা কিছু বললো না।
প্রান্ত বললো,
– ঠাঁস করে একটা চড় দিবো। নাম বলছি!
লতা চোখ ধাঁধিয়ে তাকালো এই কথাটা শুনে।
সে লক্ষ্য করলো ড্রাইভার সাহেব খুব বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কারণ উনার ভাড়ার সময় চলে যাচ্ছে কিন্তু লতা নামছে না।
লতা আরো নোটিস করলো প্রান্ত ভাইয়ের চোখ-মুখে ফের রাগী রাগী ভাব চলে এসেছে, সামান্য এইটুকুর জন্যই!
লতা ড্রাইভারকে বললো,
– আংকেল আপনি গাড়ি ঘুরান। আমি আবার আগের জায়গাতেই যাবো।
ড্রাইভার সাহেব বললো,
– কি কন আফায়! তো, আমনেগো বাড়ির সামনেই আবার নিয়া যামু?
লতা হ্যাঁসূচক দৃষ্টি দিয়ে মাথা নাড়ালো।
প্রান্ত ভাই বলে উঠলো,
– মানে কি! এই! তুই কোথায় যাচ্ছিস? বাড়িতে! কিন্তু কেন?
লতা ফিরেও তাকালো না।
প্রান্ত বললো,
-আশ্চর্য তো! তুই নামবি কিনা?
লতা ড্রাইভারকে বললো,
– কি হলো আংকেল? গাড়ি চালান না কেন?
গাড়ি স্টার্ট দিয়েছে।
প্রান্ত ভাই এতক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে ট্যাক্সির দিকে ঝুঁকে ছিলো। যখন দেখলো আমি আর তাকাচ্ছিই না, গাড়িটাও স্টার্ট দিয়ে দিলো তখন উনি সরে দাঁড়ালেন।
•°•°•°•°•°•°•
বাড়ির দিকেই আবার রওনা হলাম।
ভাবতেছি, বেশি বেশি হয়ে গেলোনা?
এত রাগই বা আসলো কেন?
আমি যেটা ভাববো ওটাই হতে হবে কেন?
ইশ! কেন যে এই ওভাররিয়েক্টটা করে ফেললাম!
হয়তো আমাকে ভাইয়া এখান থেকেই কোথাও নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলো! কে জানে! ধুর!
ভাইয়াকে এখনি একটা ফোন দিবো।
তারপর সরি বলবো,ব্যস কাজ শেষ। বেশিই করে ফেলছি একদম… উনি আমার হয়ে আপুকে কথা শুনিয়েছে, একসাথে এসেছে…
কিন্তু, প্রান্তিক ভাইয়ের নাম্বারটা খুঁজে পাচ্ছিনা!
কি মুশকিল!
সেদিনই তো প্রান্তিক ভাই ড্রয়িংরুমে আমাকে ডেকে নিয়ে, নিজ হাতে সেইভ করে দিয়েছিলো উনার নাম্বারটা!
তাহলে এখন কোথায় গেলো নাম্বার?
আজ সকালে অবশ্য দেখলাম লিমা আপু ফোন খুঁজে পাচ্ছিলোনা..
তখন আমার কাছ থেকে আমার ফোনটা চেয়ে নিয়েছিলো। ওর নাকি আর্জেন্ট কাজ আছে।।
তবে কি এটাই ছিলো ওর আর্জেন্ট কাজ?
নাম্বারটাই ডিলেট করে দিয়েছে!
তাহলে কি আপু প্রান্ত ভাইকে…………
আমার আসলে প্রান্ত ভাইকে নিয়ে এসব ভাবা একদম ঠিক না। কিছুক্ষন আগে যে এক্সপেক্টেশনটা পুষে রেখেছিলাম মনে; ওটা একদমই অনুচিত আর অযৌক্তিক ছিলো।
আপু হয়তো উনার জন্য দূর্বল।
আমি যে প্রান্ত ভাইকে পছন্দ করি তাও না।
ব্যস! সামান্য ভালো লাগে, এই যা।
আর এরকম রাগী মানুষকে পছন্দ করতে আমার বয়েই গেছে।
এইসব উল্টাপাল্টা ভাবনা হচ্ছে বয়সের দোষ।
ফোন বেজে উঠলো।
নাম্বার অচেনা। চেনা চেনা লাগছিলো।
নিশ্চয়ই কোনো বাজে ছেলের ফোন। খুব ডিস্টার্ব করে সারাদিন। বাড়ির পাশেই একটা চায়ের দোকান। সারাদিন ওখানেই এদের আড্ডাবাজি চলে। আর কোনো কারণে যদি আমাকে বারান্দায় দেখছে তো, এই সারছে… বাইরেতো বের হওয়াই টাফ। সারাক্ষন পিছু নিবে, বাজে বাজে মন্তব্য ছুঁড়বে। আর আল্লাহর দুনিয়ার সব উল্টাপাল্টা গান গাওয়া শুরু করবে। পথেঘাটে দেখলে করে অপ্রাসঙ্গিক উক্তিতো আছেই। আর এই সময়ে ফোন করেছে.. কি একটা ঝামেলা আর টেনশনের মধ্যে আছি এখন।
রিসিভ করেই জোরালো কণ্ঠে বললাম,
– কে আপনি? সারাদিন শুধু মেয়েদের ডিস্টার্ব করা,না? আরেকবার ফোন করলে আব্বার কাছে বলে দিবো কিন্তু। যত্তসব।
ওপাশ থেলে শীতল কণ্ঠে বললো,
– বাহ্! নাম্বার নিজ হাতে সেইভ করে দিয়েছি তাও ডিলেট করে দিয়েছিস! এত বড় স্পর্ধা তোর!
এইরে!
এটাতো প্রান্ত ভাই! (প্রান্তিক কে শর্ট করে প্রান্ত বলে লতা।)
– ইয়ে মানে___ না ভাইয়া____আসলে আমি না___
ফোন কেটে দিয়েছে ঐ রাগী মানুষটা।
এবার সত্যি সত্যিই রাগ উঠেছে উনার।
এবারে আমাকেই কিছু করতে হবে।
– ড্রাইভার আংকেল! গাড়িটা ঘুরান প্লিজ!
উনি গাড়ি থামালেন না। চালিয়ে যাচ্ছেন…
– এই যে! গাড়িটা ঘুরাতে বললাম তো! একটু তাড়াতাড়ি ঘুরান না, প্লিজ!
ড্রাইভার আংকেল থামালেন গাড়ি।
খুব গম্ভীর দৃষ্টি নিয়ে মুখটাকে প্যাঁচার মত করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
— কি? সমস্যা কি আফনের?
আমতা আমতা করে বললাম,
– না মানে আমাকে আবার আগের জায়গাতেই নিয়ে যান। আমি আপনার সব টাকা দিয়ে দিবো। তাও প্লিজ, একটু তাড়াতাড়ি করুন!
ড্রাইভার সাহেবের চোখ রক্তবর্ণ হয়ে আছে।
নির্ঘাত রাতে ঘুমায়নি অথবা গাঁজা, ভদকা খেয়েছিলো মনভরে তাই এরকম দশা হয়ে আছে চেহারার!
খুব ভয় লাগতেছে উনাকে দেখে।
এত রাগী চোখে প্রান্ত ভাই ও তাকায়নি কোনোদিন।
— আফা, আপনে নামেন। নাইম্মা যান্ কইতাছি।
আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– নামবো মানে? আপনার যত হয়েছে ততই দিয়ে দিবো; বললাম তো!
উনি রেগে বললেন,
– না। আমি যামুনা। আমার আমনের মত এমন পাগল প্যাসিঞ্জারের দরকার নাই। আমনে নামেন। একবার কন এদিকে যান, আবার কন ঐদিকে যান। আমারে আর কয়বার চক্কর দেওয়াইবেন? পাগল পাব্লিক।
আমি ভ্যাবলাকান্তের ন্যায় তাকিয়ে আছি।
দুনিয়ার সবাই_ই বুঝি আমার সাথে এমন করে!
সবার রাগারাগি, রক্তচক্ষু, প্যাঁচার মত মুখ সবই বুঝি আমার জন্য?
শেষমেশ, এই ড্রাইভার আংকেল ও…
আহ্! কি হাস্যকর!
চলবে….
•°•°•°•°•°•°•°•°•°•°•
(
#ফারজানা_রহমান_তৃনা