#কুয়াশায়_ঘেরা_আধার
#লেখনীতে_জেনিফা_চৌধুরী
#পর্ব_তিন
নিজের স্বামীর সাথে দ্বিতীয় কোনো মেয়েকে সহ্য করা পৃথিবীর কোনো মেয়ের পক্ষেই সম্ভব না। আর সেখানে নুহা নিজের হাতে নিজের স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে দিয়েছে। এই যন্ত্রনা বোধহয় ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নুহা রাস্তা দিয়ে ধীর পায়ে হাটছে আর কালকের দৃশ্য গুলো ওর চোখের সামনে ভাসচ্ছে। নুহার হাতে একটা প্যাকেট জাতীয় কিছু রয়েছে। সন্ধ্যায় রাস্তায় শুনশান করে গাড়ি গুলো নুহাকে ক্রস করে যাচ্ছে। হঠাৎ করেই নুহার চোখে লাইটের আলো পড়তেই নুহা হাত দিয়ে চোখ আড়াল করার চেষ্টা করলো। আলো নিভে যেতেই নুহা চোখের থেকে হাত সরিয়ে দেখলো একটা সাদা রঙের গাড়ি এসে ওর সামনে থামলো। নুহা গাড়িটাকে সাইড কাটয়ে কয়েক পা আসতেই পেছন থেকে কেউ একজন ” বরফি” বলে ডেকে উঠতেই নুহা থেমে গেলো। বরফি নামটা শুধু একজনেই ডাকতো কিন্তু সে তো এই মুহূর্তে এই শহরে নেই তাহলে কে ডাকতে পারে। নুহা পেছন ফিরতেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিটাকে দেখতেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কে নিজের দুঃসময়ে যে কেউ পাশে পেতে চাইবে। নুহা হাসি মুখে বলে উঠলো……
—সন্দেশ তুই? তুই কবে?
নুহাকে দেখেই আবরার এক গাল হেসে বললো…..
–আমি তোকেই সারপ্রাইজ দিতে তোদের বাসায় যাচ্ছিলাম।
নুহা হেসে আবরারের সামনে এসে আবরারের পিঠে একটা থাপ্পড় মেরে মুখ গোমড়া করে বললো…..
—তুই দেশে ফিরলি আর আমাকে একবার জানানোর প্রয়োজন বোধ করলি না। একদম কথা বলবি না তুই আমার সাথে।
বলেই নুহা মুখ গোমড়া করে মুখটাকে অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলো। আবরার একটু হেসে কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস করে বলে উঠলো….
—সরি মাই বরফি। কিন্তু আমার দোষ নেই। তোকে গত কয়েকদিন অনেক ফোন দিয়েছি তুই রেসপন্স করিসনি।
আবরারের কথা শুনে নুহার মুখটা চুপসে গেলো। গত কয়েকদিন ওর ফোন ধরার মতো পরিস্থিতি ছিলো না। নুহা আবরার কে কিছু বুঝতে না দিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো……
—মিস্টার সন্দেশ। এখন নিজের দোষ আড়াল করতে আমার উপর দোষ চাপানো হচ্ছে। খুব খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।
বলেই নুহা কোমরে হাত দিয়ে আবরারের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই আবরার মুখ টিপে হেসে বললো…..
—“একদম বরফির মতো লাগছে”
বলেই চোখ টিপ মা’রতেই নুহা আর আবরার দুজনেই শব্দ করে হেসে উঠলো। আজ দুইদিন পর নুহার মুখে হাসি ফুটলো। নুহা হাসচ্ছে আর আবরার নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো…..
–খুব শিঘ্রই তুই তোর এই মিষ্টি হাসিটা ফিরে পাবি।
____________________________________________
রাতে নিহান বাড়ি ফিরে নিজের রুমে আসতেই তৃধাকে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে ফোনে কারোর সাথে কথা বলছে। নিহান কে দেখেই তৃধা থেমে গেলো নিহান একবার তৃধার দিকে চোখ দিয়ে সোজা ওয়াশ রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তৃধা পেছন থেকে বলে উঠলো…..
–তুমি আজকে যেই কাজটা করলে সেটার জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে নিহান। আমি চাইলে এক্ষুনি তোমার……
তৃধার কথা শুনে নিহান রক্ত চক্ষু নিয়ে তৃধার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো……
—আলিশার গায়ে যদি একটা আচড় লাগে তাহলে কি হবে তুমি ভাবতেও পারছো না।
বলেই নিহান ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। নিহান পানি ছেড়ে দিয়ে কয়েকবার মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই নিহানের চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো। নিহানের চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে আছে। ছেলেটার চেহারা টা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। নিহান আয়নার দিকে তাকিয়ে দুই হাত মুঠোয় বন্দি করে রাগী ফেস করে দাতে দাত চেপে বলে উঠলো…….
— খুব শিঘ্রই তোমার খেলা শেষ করব আমি তৃধা। আর সেদিন তোমার অবস্থা কি হবে তুমি ভাবতেও পারছো না।
নিহানের রাগে শরীর কাপছে। নিহান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো তৃধা রুমে নেই। নিহান ওর হাতের ঘড়িটা খুলে ড্রেসি টেবিলের উপর রেখে বেরিয়ে গেলো।
____________________________________________
–নুহাকে সর্বক্ষন চোখে চোখে রাখবি। নুহার যেনো কোনো ক্ষতি না হয়। আর যেই কাজটা করার জন্য তোকে নুহাদের বাসায় পাঠালাম সেই কাজটা কি হয়েছে?
ফোনের ওপাশ থেকে কেউ উপরোক্ত কথাগুলো বলতেই আবরার শান্ত কন্ঠে জবাব দিলো….
—আমি নুহার রুমে একটা সিক্রেট ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছি। কিন্তু….
“কিন্তু” বলে আবরার থামতেই ওপাশ থেকে কেউ রাগী কন্ঠে বলে উঠলো….
–আমার অর্ধেক কথা একদম পছন্দ নয় আবরার সেটা তুই ও জানিস। সো, কথাটা শেষ কর।
আবরার কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো….
—নুহার রুমে ক্যামেরাটা লাগানোর আগে পুরো রুম টা খুঁজে দেখার সময় অন্য একটা ক্যামেরা পাই। মনে হয় এই ক্যামেরা টা অনেক দিন ধরে ওর রুমে লাগানো ছিলো।
আবরারের কথা শুনে ওপাশের লোক টা চিন্তিত স্বরে বলে উঠলো….
–অন্য একটা ক্যামেরা। নুহার রুমে অন্য ক্যামেরা কি করে আসবে? আর কে লাগাতে পারে?
আবরার ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দিলো…..
–কে আর করবে যে এইসব কিছু সে ছাড়া আর কে আছে?
আবরারের কথা শুনে ওপাশ থেকে আর কোনো শব্দ আসলো না। আবরার শব্দ না পেয়ে ফোন টা কেটে দিলো। আবরারের মুখে ও আজ হাসি নেই। নিজের ভালোবাসার মানুষটা নিঁখোজ থাকলে বোধহয় কোনো মানুষের মুখেই হাসি থাকবে না। আলিশার কথা মনে উঠতেই আবরার খাটের উপর সটান হয়ে সুয়ে পড়তেই ওর চোখের দুই পাশ দিয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়লো।
____________________________________________
আলিশার জ্ঞান ফিরতেই আলিশা চারদিকে একবার চোখ বুলাতেই দেখলো বড় একটা রুমের এক পাশে দুই জন মেয়ে গার্ড চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। মূহুর্তেই আলিশার সব মনে পড়ে গেলো। আলিশা দুইদিন যাবৎ এখানে বন্দি। খাওয়ার সময় খাবার পাচ্ছে। সব পাচ্ছে কিন্তু এই রুম থেকে বের হওয়ার রাস্তা আলিশার জানা নেই।
আলিশা আস্তে করে নেমে পা টিপে টিপে জানালার কাছে গিয়ে উঁকি দিতেই বাইরে অন্ধকার চোখে পড়লো। এত অন্ধকার দেখে আলিশা ভয়ে জানালাটা শব্দ করে বন্ধ করতেই গার্ড দুটো জেগে গেলো। ওরা দুজনেই ধড়ফড়িয়ে উঠে দেখে আলিশা জানালার কাছে গুটিশুটি মে’রে দাড়িয়ে আছে। গার্ড দের মধ্যে একজন উঠে এসে বলতে লাগলো……
—পালানোর চেষ্টা করলে কি হবে জানো তো।
গার্ডের কথা শুনে আলিশা অশ্রুসিক্ত চোখে গার্ডের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…..
—কেনো আটকে রেখেছেন আমাকে? আমি কি করেছি? আমাকে প্লিজ ছেড়ে দেন । আমি বাড়ি যাব। আমার বাড়ির সবাই আমার জন্য চিন্তা করছে। আমার ভাইয়া আমাকে পা’গলের মতো খুঁজচ্ছে। প্লিজ যেতে দেন আমাকে। প্লিজ
বলেই আলিশা কান্না করে উঠলো। আলিশার কান্নার দেখে গার্ড জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠলো…..
—এই মেয়ে চুপ। একদম চুপ। টেবিলের উপর খাবার রাখা আছে চুপচাপ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। রাতের বেলা ডিস্টার্ব করো না তো।
বলেই মেয়েটা আবার গিয়ে নিজের জায়গায় বসে চোখ বন্ধ করে নিলো। আলিশা জানালার পর্দাটা খামচে ধরে বসে পড়লো। হাটুতে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কেঁদে উঠলো আলিশা।
____________________________________________
সিনথিয়া বেগম আর তৃধা মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে। সিনথিয়া বেগম রাগী গলায় তৃধার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো……
—আমার মেয়ে কোথায় তৃধা? তোমার কথামতো আমি নুহাকে এই বাসা থেকে কু’কুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছি। নিহান আর নুহার ডির্ভোসের ব্যবস্থা করেছি। যেহেতু নুহা প্রেগন্যান্ট সেহেতু ওদের ডির্ভোস হবে না এখন। তোমার সব কথা মেনেছি। আইনের লোক হওয়া স্বত্তেও আইন ভেঙেছি। তোমার কাছে হাত জোড় করছি প্লিজ আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দাও প্লিজ।
#চলবে
[