#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০২_০৩
লেখনীতেঃভূমি
‘ একদম স্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করবেন না অদ্রিজা।একদমই নাহ।আপনি আপনিই! আমার এক রাতের সঙ্গী ছিলেন।ব্যাস!এর বাইরে এসব কেয়ার,খাবার নিয়ে আসা, ব্যান্ডেজ করা কোনটাই করবেন না আপনি।আর যদি মনে করেন এসব করে আপনি আমার মনে জায়গা করতে পারবেন? ইউ আর রং অদ্রিজা,কপ্লিটলি রং।রক্তিম মাহুমদ নারীদের মনে নয় নারীদের শরীরে বিশ্বাসী।ভালোবাসা নয় কামনায় আসক্ত!’
পেঁছন থেকেই নিজের থেতলে যাওয়া হাতটা দিয়েই অদ্রিজার বাম হাতটা মুঁছড়ে ধরেই কথাগুলো বলল রক্তিম।হাতের রক্তগুলো মাখামাখি করে লেগে গেল অদ্রিজার হাতে আর পিঠেও।অদ্রিজা হাত ব্যাথায় অস্ফুট স্বরে “আহ” আওয়াজ করতেই রক্তিম বাঁকা হাসল।মাথা নামিয়ে অদ্রিজার কানের কাছে মুখ এনেই দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘ ব্যাথা পেলেন অদ্রিজা?’
অদ্রিজা ঘাড় ঘুরিয়ে রক্তিমের দিকে তাকাল।রক্তিমের মুখে হাসি ঝুলানো।ট্যারাব্যাকা দাঁত গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান হলো দাঁত কেলিয়ে হাসাতে।হাসিটা অসুন্দর নয়। বরং মোহনীয়!কিন্তু হাসি দিয়ে যে একটা মানুষকে বিচার করা যায় না।নয়তো এই সুন্দর হাসিটার মতোই মানুষটাকেও সুন্দর ভাবত সে।অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ।লম্বা চওড়া মানুষটার বুকের সাথে তার পিঠ মিশে আছে।আধভেজা চুলগুলো ছুঁয়ে আছে তার গালে।হাত ব্যাথার চেয়েও নিজের এতটা কাছে একটা পুরুষ মানুষের উপস্থিতি ভয়ঙ্কর!অস্বস্তিতে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিয়েই নিজের হাতটা ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করল। রক্তিম হাসল। অদ্রিজা
কষ্ট পাওয়ার জন্য আরো জোরে মুঁছড়ে ধরল হাতটা।তারপরই বলল,
‘পারবেন নাহ ছাড়াতে।’
অদ্রিজা চোখজোড়া বন্ধ করে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা চালাল।যেন হাতটা ভেঙ্গে গুড়িয়েই যাবে। মাংসপেশী গুলো ব্যাথায় তড়তড় করতেই দাঁতে দাঁত চেপে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল অদ্রিজা,
‘ হাতটা ছাড়ুন রক্তিম।লাগছে।’
‘ লাগুক!’
রক্তিমের নির্বিকারে দেওয়া উত্তরে অদ্রিজা ছটফট করে উঠল। ব্যাথায় কাঁতরে উঠেই নিজের হাতটা বার কয়েক টেনে হিঁছড়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করল।কিন্তু এবারও পারল নাহ সে।রক্তিমের মতো মানুষের সাথে পারাটা অবশ্য সম্ভব ও নয়।শক্তপোক্ত পেটানো শরীর।অদ্রিজার মতো দুই কি চারজন এসে তাকে একসাথে মারলেও কাজ হবে না।অদ্রিজা ছোটছোট শ্বাস ফেলতেই চোখের পানি গড়াল গাল বেয়ে। কঠিন গলায় বলে উঠল,
‘ হ্যাঁ, লাগুক।লাগুক!আমি ও দেখি কতক্ষন আপনি এভাবে ব্যাথা দিতে পারেন।আর আমিও কতটুকু সহ্য করতে পারি।’
রক্তিম হু হা করে হেসে উঠল।অদ্রিজার ডানহাতটাও মুঁছড়ে পেছনে নিয়ে একসাথে চেপে ধরল দুই হাত। তারপর অদ্রিজার কানের কাছেই ফিসফিসিয়ে বলল,
‘ রক্তিম বলতেই মেয়েরা পাগল।কিন্তু ব্যাথা সহ্য করেও রক্তিমের এতটা কাছাকাছি থাকার সুযোগ হারাতে চাইলেন না?এটা তো পিউর ভালোবাসা! ওয়াও!’
অদ্রিজা তাচ্ছিল্য হেসেই বলে উঠল,
‘ ভালোবাসা?ভালোবাসা আদৌ আপনার মতো মানুষ বুঝতে পারে রক্তিম?ভালোবাসাটা মনের বিষয়!দুইজনের মনের বিষয়।আর সেক্ষেত্রে দেখতে গেলে আপনার না আছে মন আর না আছে অন্যদিকের মানুষটার মন বোঝার ক্ষমতা। তাই আপনার দ্বারা ভালোবাসাটা যেমন সম্ভব নয় ঠিক তেমনই কারোর পক্ষে আপনাকে ভালোবাসাটাও সম্ভব নয়।আর যেখানে ভালোবাসাটাই সম্ভব না সেইখানে পিউর ভালোবাসা খুঁজে নিয়েছেন আপনি?হাস্যকর!’
‘ তার মানে বলছেন আপনি কখনো আমায় ভালোবাসবেন না?আমার জন্য ভালোবাসা জম্মাবে না আপনার মনে কোনদিন।তাইতো?’
অদ্রিজা আগের মতোই কঠিন গলায় বলে উঠল,
‘ নিঃসন্দেহে নাহ।আপনার মতো চরিত্রহীন মানুষকে আর যায় হোক ভালোবাসা যায় না রক্তিম।কোনভাবেই নাহ।’
‘ কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার কি জানেন?এই চরিত্রহীন রক্তিম বলতেই মেয়েরা পাগল হয়ে যায়। রক্তিমের প্রতি মেয়েদের ভালোবাসা জম্মাতে দুই মিনিটও সময় লাগে নাহ। আর আপনি তো সেইখানে কিছুই নাহ অদ্রিজা।এন্ড ইউ নো হোয়াট অদ্রিজা?আপনি খুব শীঘ্রই আমাকে ভালোবাসবেন।এই যে আজ তেজ নিয়ে বলে উঠলেন কখনোই ভালোবাসবেন নাহ?সেইদিন কিন্তু আপনি নিজের মাঝে নিজে মরবেন কেবল আমাকে ভালোবাসেন এই কথাটা ভেবেই।একটা চাপা কষ্ট সেইদিন আপনার পিছু পিছু হানা করবে শুধু এই মানুষটাকে ভালোবাসেন বলে।আর সেইদিন আপনি আপসোস করবেন, কেন আমার সাথে আপনার দেখা হলো তা নিয়ে, কেন আমার প্রতি আপনার অনুভূতি জম্মাল তা নিয়ে।যেমনটা সবাই করে আর কি।আপসোস!আপনিও তাদের মতো উদাহরণ হতে চলেছেন।’
কথাগুলো বলেই অদ্রিজার হাতজোড়া ছেড়ে দিল রক্তিম।অনেকক্ষন পর নিজের হাত জোড়া শক্ত বাহু জোড়া থেকে মুক্তি পেয়ে শিথিল হতে লাগল যেন হাতের মাংসপেশি গুলো।ফর্সা ধবধবে চিকন হাতজোড়ায় রক্তিমের আঙ্গুলের চাপ স্পষ্ট।অদ্রিজা হাতের দিকে একনজর তাকিয়েই বলে উঠল,
‘ ছাড়লেন কেন?আমি তো বলেছিলাম লাগুক।আরো লাগুক।আমি সহ্য করে নিব।’
অদ্রিজার কথাটা শুনেই রক্তিম কাবার্ড থেকে নিজের শার্ট বের করে পরতে পরতেই অদ্রিজার দিকে তাকাল।চেহারায় কঠোরতা স্পষ্ট।নাকের অগ্রভাগ আর ফর্সা গাল হালকা লাল দেখাচ্ছে।কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো হাত খোঁপা করা।পরনে তার খয়েরী রংয়ের সুতি শাড়ি।মেয়েরা নাকি শাড়ীতে সুন্দরী হয়ে উঠে।অদ্রিজাকেও শাড়ীতে ভীষণ মানিয়েছে। সাদা ধবধবে শরীরের এই রমণীকে প্রতিবারই দেখে স্নিগ্ধ নজরে চেয়েছে সে। আজও ব্যাতিক্রম হলো নাহ।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অদ্রিজাকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত দেখে নিতে নিতে অদ্রিজা তাচ্ছিল্য মাখা হেসে চলে যেতে নিচ্ছিল।রক্তিম বিরক্ত হয়েই বলে উঠল,
‘ দাঁড়ান।এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকুন।আপনার শাস্তি।’
অদ্রিজা হতবিহ্বল চোখে তাকাতেই রক্তিম তা উপেক্ষা করে টাউজার হাতে নিয়ে পা বাড়াল ওয়াশরুমের দিকে।মিনিট পাঁচ পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসেই অদ্রিজার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে অদ্রিজা।মুচকি হেসে দু পা এগিয়ে চেয়ার টেনে বসল সে।টাউজারের পকেট থেকে একটা রুমাল বের করেই টেবিলে রাখল।অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই ভ্রু উঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ এদিকে আসুন।’
অদ্রিজা দুই কদম এগিয়েই গম্ভীর গলায় বলল,
‘ বলুন।’
রক্তিম থেতলে যাওয়া ডান হাতটা এগিয়ে দিল সামনে।মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়েই বলে উঠল,
‘ আপনার অনেক দরদ হয়েছিল না আমার এই হাতটার প্রতি?নিন। বেঁধে দিন রুমালটা হাতে।’
অদ্রিজা অবাক হয়ে তাকাল।কয়েক সেকেন্ড ইতস্থত করেই রুমালটা হাতে নিল সে।মৃদু শ্বাস ফেলে বলল সে,
‘ রুমালটা বাঁধলে আপনার ক্ষত ঠিক হয়ে যাবে না মিঃ রক্তিম।ঔষুধ ছাড়া রুমালে তো ক্ষত সারার কোন ম্যাজিক হয়ে যাবে নাহ।তাই না?’
‘ উহ! আপনি একটু বেশিই কেয়ার নিতে শুরু করলেন না টিপিক্যাল বউদের মতো? আমার ক্ষতর জন্য ঐ রুমালটাও প্রয়োজন নেই,ব্যান্ডেজ তো দূর।’
অদ্রিজা বিরক্ত হলো। লোকটার অদ্ভুত কাজকর্ম, অদ্ভুত আচরণ সত্যিই বিস্ময়ের।ক্ষতটা কি এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যাবে?আশ্চর্য!চুপচাপ রুমালটা বাঁধতে লাগল হাতে সে।রক্তিম ব্যাথা পাবে ভেবেই আস্তেধীরে রুমালটা পেঁছিয়ে বাঁধল সে।তারপর তপ্তশ্বাস ফেলেই বেরিয়ে আসল সেইখান থেকে।আর রক্তিম পেঁছন থেকে অদ্রিজার দিকে চেয়েই মুচকি হাসল।চামচ দিয়ে খাবার মুখে নিতে নিতেই বাঁকা হেসে বিড়বিড়িয়ে বলল সে,
‘ আপনি সহ্য করতে চাইছেন।আমাকে সহ্য করতে চাইছেন।আমার আচরণকে সহ্য করতে চাইছেন।কিন্তু পারবেন নাহ।পারবেন নাহ অদ্রিজা।আই প্রমিজ।’
___
তখন রাত একটা কি সাড়ে বারোটা।রক্তিম বেলকনিতে দাঁড়িয়েই সিগারেটের ধোঁয়া উড়োতে ব্যস্ত ছিল।অদ্রিজা এখন যেই রুমে সেই রুমটা তার পাশেরই রুম।বেলকনি দুটোও পাশাপাশি।এক নজর পাশের বেলকনিটার দিকে তাকিয়েই তপ্তশ্বাস ফেলল সে।জীবনের সবগুলো কষ্ট নিকোটিনের কালো ধোঁয়ায় উগড়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাল।এর আগে অবশ্য কোনদিন সিগারেট খায়নি সে।ড্রিংক করেই নিজের কষ্ট ভোলার চেষ্টা চালাত। কিন্তু আজ ড্রিংক করে নি সে।ইচ্ছেই হয়নি ড্রিংক করার।বরং রাগ হচ্ছে। গতকাল রাতে ড্রিংক না করলে হয়তো অদ্রিজার সাথে কিছুই ঘটত নাহ।অদ্রিজা আর তার মাঝে হয়তো কিছুই হতো নাহ।কিন্তু হলো, ড্রাংক থাকার কারণে।কথাটা ভেবেই সামনের টুলটায় লাথি দিল রক্তিম।ঠিক তখনই সামনে এসে দাঁড়ালেন রিয়াদ সাহেব।ছেলের দিকে তাকিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
‘ আমি তোমায় কি বলেছিলাম রক্তিম?’
রক্তিম রিয়াদ সাহেবের কথা শুনেই একনজর তাকালেন তার দিকে।তারপর সেভাবেই সিগারেটে টান নিয়ে ধোঁয়া উড়োতে ব্যস্ত হয়ে বলল,
‘ বিয়ে করতে বলেছিলেন।করেছি তো।’
‘ আমি তোমায় শুধু বিয়ে করতে বলিনি রক্তিম।আরো কিছু শর্ত দিয়েছিলাম আমি তোমায়।মনে নেই?’
রক্তিম পাশ ফিরে রিয়াদ সাহেবের দিকে চাইল।তারপর হেসেই বলল,
‘ আছে মিস্টার মাহমুদ।বিয়ের পর একমাস এই বাসায় থাকতে হবে। তাইতো?আছি তো।’
রিয়াদ সাহেব কঠিন নজরে তাকালেন।তারপর গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন,
‘ শুধু এটা নয় রক্তিম।বলেছিলাম বিয়ের পর একমাস তুমি আর অদ্রিজা একসাথে থাকবে।অদ্রিজার খেয়াল রাখবে এই একমাস।কোন খারাপ আচরণ করবে না।কোন মেয়ের সাথে মেলামেশা করবে নাহ।ড্রিংক বা স্মোক কোনটাই করবে নাহ।কিন্তু তুমি কালকে ড্রিং করেছো, আজ স্মোক। এসব কি?’
রক্তিম মৃদু হাসল।ডান ভ্রু উঁচু করেই বলে উঠল,
‘ আমিও আপনাকে বলেছিলাম এত শর্ত মানা সম্ভব নয়।’
‘ ওকে ফাইন!তাহলে ডিলটা ফাইনাল হবে না তোমার কথা মতো। আর আমার কোম্পানির ৫০% প্রোপার্টি ও তুমি পাবে না আর নাহ ঐ বিশাল এরিয়াটা আমি অনাথ আশ্রমের জন্য ছেড়ে দিব।’
রক্তিম এবার ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল,
‘ আমি আপনার প্রোপার্টি কোনকালেই চাইনি মিস্টার মাহমুদ।কিন্তু ডিলটা যে ফাইনাল হওয়া চাইই!আর ঐ এরিয়াটাও চাই।মাইন্ড ইট!আর আপনার এই শর্তেই আমি অদ্রিজাকে বিয়ে করেছি, এবার যদি ডিলটা আর এরিয়াটা না পাই তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না মিস্টার মাহমুদ!’
‘ দেখা যাক ডিলটা ফাইনাল হয় কিনা।একমাস পরই ফাইনাল হবে তা।তার জন্য সবকটা শর্তই মেনে চলতে হবে তোমায়।সবকটায়।’
রক্তিম এবার সিগারেটটা ছুড়ে দিল বেলকনির বাইরে।চোখ মুখে তিক্ততা স্পষ্ট তার।নিজের বাবার কথা গুলো তার একেবারেই পছন্দ হয়নি তা তার কপালের ভাজেই বেশ স্পষ্ট।দাঁতে দাঁত চেপেই বলে উঠল সে,
‘ ডিলটা আমার কাছে কতটুকু ইম্পোর্টেন্ট আপনি বুঝতেও পারছেন না মিস্টার মাহমুদ।নয়তো একটা সরল মেয়েকে বিয়ে করে তার জীবন নষ্ট করতাম না আমি।যে বাড়িতে আমি দশবছর বয়সের পর একটা মুহুর্তও ছিলাম নাহ আমি সেই বাড়িতেই থাকছি।তাও আবার আপনার সাথে। এক ছাদের নিচে।এই দুটো শর্ত মেনে নিয়েছি, বাকি গুলো তো তার কাছে কিছুই নয় মিস্টার মাহমুদ।আর সে ডিলটা যদি ফাইনাল না হয় তো বুঝতে পারছেন আপনি কি ঘটবে?আন্দাজও নেই আপনার। ‘
রিয়াদ সাহেব ক্লান্ত চোখে তাকালেন।তারপর হালকা হেসেই বলে উঠলেন,
‘ যাও, নিজের রুমে যাও। আমি তোমায় শর্তে এটাও বলেছি অদ্রিজার সাথে একসাথে একমাস থাকতে হবে তোমায়। আশা করি মনে আছে?’
রক্তিম আনমনে কিছু একটা ভেবে নিয়েই রিয়াদ সাহেবের দিকে তাকাল। ভ্রু নাচিয়েই তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,
‘ কালকে আমি এই রুমেই ড্রিংক করেছিলাম।স্পষ্ট মনে আছে আমার।কাল এতটাই ড্রাংক ছিলাম যে,,,’
কথাটা বলেই থামল রক্তিম।তারপরই কড়া দৃষ্টিতে রিয়াদ সাহেবের দিকে তাকিয়েই বলে উঠল,
‘ মিস্টার মাহমুদ?আমাকে ড্রাংক অবস্থায় ঐ রুমে কে নিয়ে গিয়েছে?কে?আপনি?’
‘ হ্যাঁ।আমিই।কেন?’
রক্তিমের চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল মুহুর্তেই।রিয়াদ সাহেবের দিকে ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
‘ ডিজগাস্টিং!আমি আপনাকে বলেছিলাম? বলিনি।তাও কোন সাহসে আপনি আমাকে ওই রুমে নিয়ে গিয়েছিলেন?হাও ডেয়ার ইউ মিস্টার মাহমুদ?আপনি জানেন ও না আপনি আমার সাথে কি করেছেন।এর জন্য আপনাকে সাফার করতে হবে মিস্টার মাহমুদ।’
কথাগুলো বলেই আর এক পা ও দাঁড়াল নাহ রক্তিম।রিয়াদ সাহেবের উপর তার প্রচুর রাগ হচ্ছে।রাগে শরীরের শিরা উপশিরা গুলো যেন টইটই করছে। কিন্তু সেই টইটুম্বুর রাগটাই শীতলতায় পূর্ণ হলো অদ্রিজার রুমে ডুকে অদ্রিজার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই।কোনরকমে হাত পা গুঁটিয়ে রেখে ঘুমোচ্ছে অদ্রিজা।এলেমেলো চুলগুলো মুখের উপর লেপ্টে মিশে আছে। জানালা দিয়ে শীতল বাতাস দুই একবার বয়ে যেতেই চুলগুলো আপন মনে নড়েচড়ে আবারও মিশল তার ফর্সা গালে।ঘুমন্ত মুখটা মোহনীয় ।চোখের ঘন পাঁপড়ি গুলোও অদ্ভুত সুন্দর বোধ হলো রক্তিমের কাছে।নিজের চোখজোড়া বন্ধ করেই দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে।দু পা এগিয়েই অদ্রিজার মুখোমুখি হাঁটু গেড়ে বসল সে।আরো কয়েক মিনিট ঠিক সেভাবে তাকিয়ে থেকেই অদ্রিজার চুলগুলো হাত দিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিয়েই মৃদু গলায় বলল সে,
‘ আপনাকে সরতে হবে অদ্রিজা।আমার জীবন থেকে সরতে হবে।যে কোন মূল্যেই।নয়তো যে রক্তিম এই রক্তিম থাকবে নাহ।তার মাঝে অবিন্যস্ত ভাবে অন্য এক রক্তিম তৈরি হয়ে যাবে। আর আমি যে সেটা চাই না অদ্রিজা।রক্তিমের কাউকে প্রয়োজন নেই। নাহ তো তার বাবার প্রয়োজন আছে, নাহ তো মা, আর নাহ ভালোবাসার মানুষ।সে একা।একাই থাকবে!প্লিজ লিভ অদ্রিজা।প্লিজ!’
অদ্রিজা বেঘোরেই ঘুমাচ্ছিল।রক্তিম ছোট ছোট চোখে কয়েকবার তাকিয়েই হাত জোড়া দিয়ে অদ্রিজার ঠোঁট ছুঁয়ে দিতে গিয়েও থেমে গেল আবার।এই মেয়েটার মাদকতা বড় অদ্ভুত।আগের রাতে সে ড্রাংক ছিল তাই ভুলবশত তেমন কিছু হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আজ?আজ তো সে ড্রাংক নয়।তবুও মেয়েটাকে দেখে আসক্ত হতে বাধ্য সে।তার মুখ, চোখ, চুলের মাদকতা শরীর ময় বিরাজ করতেই ছিটকে উঠে দাঁড়ার রক্তিম।দ্রুত বেলকনির দিকে পা বাড়িয়ে বেলকনির দরজা বন্ধ করল।জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলেই দূর আকাশে চোখ রাখল সে।অন্ধকার আকাশ!
#চলবে…..
{কেমন হয়েছে জানাবেন।গঠনমূলক মন্তব্য করলে খুশি হবো।
দ্বিতীয়ত গল্পের প্রথম পর্বেই গল্পের সবটা সম্পর্কে ভেবে না নেওয়ার অনুরোধ রইল।রক্তিম চরিত্রটা হয়তো খারাপ বোধ হচ্ছে সবার কাছে।তবে গল্পের শেষে আশা রাখি রক্তিম চরিত্রটা সবার ভালো লাগবে। আর হ্যাঁ,ভালোবাসা রইল যারা লেখার প্রতি আগ্রহ দিচ্ছেন রেসপন্স করে।❤️🥀}
#হৃদয়_নিবাসে_তুই
#পর্ব_০৩
লেখনীতেঃ ভূমি
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই নিজের চোখের সামনে রক্তিমের ঘুমন্ত মুখটা ভেসে উঠতেই চমকে গেল অদ্রিজা।কয়েক সেকেন্ডে চোখ মেলে রক্তিমের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়েই মনে পড়ল, গতকাল রাতে ঘুমোনোর সময় সে দরজা লাগায়নি।ইচ্ছে করেই লাগায় নি।কারণ এর আগের দিনও এই রুমে রক্তিমের প্রবেশ অনেক রাত করেই ঘটেছিল।নেশাক্ত রক্তিম।সেইদিন রাতের কথা মনে করেই অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।সামনের লোকটার প্রতি ভেতর থেকে উগড়ে আসল সব ঘৃণা!সবে মাত্র নিদ্রা ত্যাগ করা চোখজোড়া লাল রক্তিম হয়ে ক্ষ্রিপ্ত চাহনি ফেলল ঘুমন্ত মানুষটির উপর। লোকটার ঘুমন্ত নিষ্পাপ চেহারাটা দেখেই মুহুর্তে সেই চোখজোড়া যেন বলে উঠল,” লোকটা খারাপ।পৃথিবীর সবথেকে খারাপ মানুষ এই লোকটি।” অদ্রিজা চোখজোড়া মুহুর্তেই বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস ফেলল। বন্ধ চোখ জোড়া এই মুহুর্তে দেখা চমৎকার যুবকটির মুখটা তার মনে আঁকল নাহ।বরং একের পর এক চিত্র মনে করিয়ে দিল সেইদিন রাতের। মস্তিষ্ক আর সইতে পারল না বোধ হয় সেই স্মৃতি গুলো।তাই তো অদ্রিজা দ্রুত উঠেই সরে আসল।দু পা এগিয়ে এলোমেলো চুল গুলো খোঁপা করে নিতে নিতেই রুমের বাইরে পা ফেলল সে।রক্তিমের বাবার সাথে কথা বলতে হবে ভার্সিটি যাওয়ার বিষয় নিয়ে।তাই এদিক ওদিক তাকিয়েই ঘড়িতে নজর ফেলল সে।সাড়ে আটটা।এতক্ষনে নিশ্চয় ভদ্রলোক ঘুম থেকে উঠে পড়েছেন।স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়েই রিয়াদ সাহেবের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল অদ্রিজা।পর্দার একপাশে রুমের ভেতরে রিয়াদ সাহেবকে পত্রিকা পড়তে দেখেই মৃদু স্বরে বলে উঠল,
‘ স্যার?আসব?’
রিয়াদ সাহেব পত্রিকা থেকে মুখ তুলে চাইলেন।নিজের ছেলের বউকে দরজার সামনে দেখেই তার মুখের উপর ভেসে উঠল খুশির ছাপ।পত্রিকা গুঁছিয়ে একপাশে রাখতে রাখতেই বলে উঠলেন তিনি,
‘ আসো, আসো।’
অদ্রিজা ভীত চাহনিতে পা এগিয়ে রিয়াদ সাহেবের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।মৃদু হেসেই বলল,
‘ আমার কিছু কথা ছিল স্যার।’
রিয়াদ সাহেব কপাল চাপড়ালেন।চোখজোড়া বন্ধ করে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই গম্ভীর গলায় বলল,
‘ অদ্ভুত ভাগ্য আমার বুঝলে!ছেলে মেয়ে বলতে একটা ছেলেই।সেই ছেলেই আমায় বাবা ডাকে না। মিস্টার মাহমুদ ডাকে।আর ছেলের বউ?সেও বাবা ডাকল নাহ।স্যার সম্বোধন করল।জীবনে বোধ হয় বাবা ডাকটা শোনা হবে নাহ আমার।’
অদ্রিজা ভ্রু কুঁচকে তাকাল।রিয়াদ সাহেবের কথার উত্তরে কি বলা উচিত তা খুঁজে পেল না সে।সেভাবেই আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থাকতেই রিয়াদ সাহেব আবারও বললেন,
‘ আমার ছেলেকে আমি কোনদিন বাবা বলে ডাকতে বলিনি।বলার মতো পরিস্থিতি কিংবা যোগ্যতা বোধ হয় আমার নেই।তোমায় বলব বাবা ডাকতে?উচিত হবে অদ্রিজা?’
অদ্রিজা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।ধবধবে ফর্সা চেহারায় মৃদৃ হাসি টেনেই বলে উঠল,
‘ স্যরি।আর হবে নাহ।এবার থেকে বাবাই বলব।’
রিয়াদ সাহেব খুশি হলেন।তার চোখের ভাজে স্পষ্ট ফুটে উঠল সেই খুশিটা।মুখের হাসিটা যেন মুখের আধপাঁকা দাঁড়িতেও ফুটে উঠল।তৃপ্তি নিয়ে কয়েক সেকেন্ড হেসে নিয়েই বলে উঠলেন তিনি,
‘ বলো, কি বলবে।’
‘ ভার্সিটি যাওয়া নিয়েই বলতে এসেছিলাম আমি।আজ থেকে যেতে পারি ভার্সিটিতে?’
‘ কেন নয়।আজ থেকেই যেতে পারো।নিচে গাড়ি আছে। পৌঁছে দেবে তোমাকে। কোনটাইমে ফিরবে বলে দিও। গিয়ে নিয়ে আসবে।ঠিকাছে?’
অদ্রিজা হালকা নিঃশ্বাস ছেড়েই বলে উঠল,
‘ আমি একা একা যেতো পারব।আশা করি এটুকু স্বাধীনতা আপনি দিবেন স্যার।’
কথাটা বলেই জিভ কাঁটল অদ্রিজা। পরমুহুর্তেই বলে উঠল,
‘ স্যরি, বাবা।’
রিযাদ সাহেব হাসলেন।অদ্রিজাও মৃদু হেসে পরখ করে দেখল রিয়াদ সাহেবের হাসিটা।হাসিটা একেবারে রক্তিমের মতোই।রিয়াদ সাহেবের চেহারাটাও একদম রক্তিমের মতোই।লম্বা, চওড়ায় সবটায় রিয়াদ সাহেবের মতোই হয়েছে রক্তিম।কেবল গায়ের রংটা ব্যাতীত।রক্তিমের গায়ের রংটা ধবধবে সাদা আর রিয়াদ সাহেবের গায়ের রং শ্যামলা।অদ্রিজা হাসল।তারপর পা বাড়িয়েই বেরিয়ে আসল সেইখান থেকে।নিজের রুমে এসে রক্তিমকে না দেখেই এদিক ওদিক তাকাল সে।বেলকনি, ওয়াশরুম সবটা দেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।নিশ্চয় নিজের সে ভুতুড়ে রুমে পৌঁছে গিয়েছে সে।
.
অদ্রিজা শাওয়ার নিয়ে ভেজা চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে মুঁছে নিচ্ছিল। হাতে একটা লাল টকটকে শাড়ি। ওয়াশরুমে শাড়ি পরতে অসুবিধে হবে তাই শাড়িটা ওয়াশরুমে না পরে রুমে নিয়ে এসেছিল সে।পরনে পেটিকোট আর ব্লাউজ।ভেজা চুলগুলো থেকে টাওয়াল ছাড়িয়ে শাড়ীটা পরতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই দরজা মেলে রুমে প্রবেশ করল রক্তিম।নিজের থেকে কয়েক হাত দূরে হূরের মতো রূপকন্যার মোহিত রূপ চোখের নজর কাড়তেই বুক ধুকফুক করল তার।অবাধ্য চোখজোড়া সেভাবেই কয়েক সেকেন্ড তাকাতে চোখজোড়াকে মাতাল করে তুলল উম্মুক্ত ফর্সা ধবধবে পেটের ত্বকে থাকা কালো তিলটা।মোমের মতো ধবধবে ফর্সা নরম তুলতুলে ত্বকে ফোঁটা ফোঁটা পানি।ঠিক তার মাঝেই কালো কুচকুচে তিলটা যেন আকৃষ্ট করারই মন্ত্র জপছে।রক্তিম সেভাবেই তাঁকিয়ে রইল।এক্ষুনি তিলটা ছুঁয়ে দিয়ে মসৃন ত্বকে ফোঁটা ফোঁটা পানি গুলো মুঁছে দিলে কি ক্ষতি হয়ে যাবে?অদ্রিজা কি কিছু মনে করবে তাতে?নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হলো রক্তিম।যার থেকে দূরে থাকার এত চেষ্টা তারই কাছে যাওয়ার জন্য মন বলছে?অদ্ভুত!বিছানার উপর নিজের রুমালটা আর ঘড়িটা নিতে নিতেই বলে উঠল,
‘ উফফস! মিস্টার মাহমুদ আমার জন্য কিছু না করতে পারলেও রূপবতী বউ বেঁছে দিতে ঠিকই পেরেছেন কিন্তু।’
অদ্রিজা চমকে তাকাল।এই রুমে কেউ নেই এই ভাবনাতেই সে শাড়ি পরতে ব্যস্ত ছিল।রুমে কখন রক্তিম এল তা তার খেয়ালেই আসেনি।হুট করে রক্তিমের কন্ঠ পেয়ে কুঁচি না করেই শাড়িটা এলোমেলো ভাবে কোনভাবে জড়িয়ে নিল শরীরে।রক্তিমের দিকে তাকিয়েই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
‘ আপনি সবদিক থেকেই জ্ঞানশূণ্য মানব রক্তিম।একটা মেয়ের রুমে প্রবেশ করার আগে তার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধটা অন্তত থাকা উচিত আপনার রক্তিম।’
রক্তিম হেসে উঠল হু হা করে।ট্যারাবাঁকা দাঁত গুলোও হাসির ছন্দে হেসে উঠল।অদ্রিজা সুন্দর হাসিটার দিকে মোহিত নয়নে তাকিয়ে রইল।রক্তিম সেই তাকানোকে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করেই একদম অদ্রিজার সামনে এসে দাঁড়াল। বাঁকা হেসেই ফিসফিসিয়ে বলে উঠল,
‘ কেন?মেয়েদের রুমে লুকায়িত কিছু থাকে নাকি অদ্রিজা?’
অদ্রিজা বিরক্ত হলো।কপালে ভাজ পেলে তাকাতেই রক্তিম চোখ টিপল।অদ্রিজার দিকে আরো এগিয়ে মাঝখানে কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব রাখল কেবল।ফিসফিসিয়েই কানের কাছে বলে উঠল,
‘ ফর্সা মসৃন ত্বকে জলবিন্দুর মাঝখানে কালো কুচকুচে তিল।ভাবতে পারছেন কি সাংঘাতিক? এতটাই সাংঘাতিক যে বুক চিনচিন করে উঠল।’
কথাটা বলেই রক্তিম বুকের বা পাশে হাত রাখল।সরু চোখে অদ্রিজার দিকে তাকিয়েই বাঁকা হাসল সে। অদ্রিজা কিছু না বুঝেই ভ্রু কুঁচকে তাকাল।বিরক্ত নিয়ে বলে উঠল,
‘ সরুন সামনে থেকে।’
রক্তিম হাসল।অদ্রিজার সামনে থেকে সরে এসেই হাতে ঘড়ি পরতে পরতেই বাঁকা চোখে অদ্রিজার দিকে তাকাল।অদ্রিজা দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে হাঁটা দিল।রক্তিম মুচকি হাসল।টেবিলের উপর থেকে একটা ফাইল নিয়ে দেখতে দেখতেই চেঁচিয়ে বলে উঠল,
‘ অদ্রিজা?প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আসবেন। আমার কিছু কথা ছিল আপনার সাথে।’
রক্তিম কথাটা বললেও ভেতর থেকে কোন সাড়া আসল নাহ।রক্তিম এক মিনিট, দুই মিনট করেই প্রায় দশ কি পনেরোবার ওয়াশরুমের দরজায় তাকিয়েছে।অদ্রিজার বের হওয়ার কথা নেই।অবশেষে যখন বের হলো তখনই অদ্রিজার মোবাইল বেঁজে উঠল। বিছানার উপর থাকা মোবাইলটার স্ক্রিনের উপর স্পষ্ট ভাসছে ” দিহান” নামটা।রক্তিম একবার তাকিয়েই মুচকি হাসল।মোবাইলটা অদ্রিজার দিকে এগিয়ে দিয়েই বলে উঠল,
‘ প্রেমিকের সাথে কথা বলে আসুন। আমি অপেক্ষা করছি।’
অদ্রিজা হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে থাকল।স্ক্রিনে দিহানের নামটা দেখে সরু শ্বাস ফেলল।রক্তিমের সহজ ব্যবহারটা কেমন জানি বোধ হলো।ব্যবহারটা কি জটিল হওয়া উচিত ছিল?বোধ হলো না অদ্রিজার।কলটা কেঁটেই রক্তিমের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
‘ ও আমার প্রেমিক নাহ।’
রক্তিম হাসল।অদ্রিজাকে লাল টকটকে শাড়িতে একনজর দেখে নিয়েই বলে উঠল,
‘ প্রেমিক নয় বলছেন?’
অদ্রিজা কঠিন কন্ঠেই বলল,
‘ নাহ।’
‘ আপনার কি মনে হচ্ছে আমি টিপিক্যাল স্বামীদের মতো বউয়ের প্রেমিক আছে শুনে রেগে যাব?কিংবা অভিমান করে কান্নাকাটি করব?উফফস!একদমই তা ভাববেন নাহ অদ্রিজা।আপনি সুন্দরী মেয়ে।রূপের কমতি নেই।আপনার একটা নয়, দশটা প্রেমিক থাকলেও অপরাধ হবে নাহ।আর আমি এই বিষয়ে আপনাকে সাপোর্ট করব। ‘
অদ্রিজা তেজি চাহনিতে তাকাল। রক্তিমের দিকে তীক্ষ্ণ চাহনি ফেলেই বলে উঠল,
‘ আমাকে কি আপনার মতোই হীন চরিত্রের মানুষ বোধ হয়? আপনি হাজারটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখতেই পারেন, হাজারটা মেয়ের সাথে সময় কাঁটাতেই পারেন কিন্তু প্লিজ আপনার চরিত্রটা আমার মধ্যে খুঁজতে যাবেন না রক্তিম।’
রক্তিম দাঁত কেলিয়ে হাসল।অদ্রিজার কাছাকাছি গিয়ে ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল অদ্রিজার কপালে আসা চুল গুলো।নিরীহ মুখ করে বলে উঠল,
‘ আপনি কি রেগে যাচ্ছেন অদ্রিজা?টিপিক্যাল বউদের মতো স্বামীর পাশে অন্য মেয়েদের মানতে কষ্ট হচ্ছে?’
‘ একদমই নয়।’
‘ সে যায় হোক।আমি আপনাকে বলছি, আপনি দিহানের সাথে রিলেশনটা ভেঙ্গে দিবেন নাহ প্লিজ।একটা ছেলের মন ভাঙ্গবেন নাহ প্লিজ।আর তাছাড়া যে বিষয়ে কথা বলতে চাইছিলাম, বলি?’
‘ বলুন।’
অদ্রিজা বিরক্তি নিয়েই কথাটা বলেছিল।রক্তিম মৃদু হেসে নিজের হাতের ফাইলটা এগিয়ে দিল অদ্রিজার দিকে।তারপরই বলল,
‘ আপনাদের বাড়িটা? যেটা বিক্রি করে দিয়েছিলেন?সেটা ফেরত পাবেন খুব শীঘ্রই।কিন্তু তার বিনিময়ে আপনাকে একটা কাজ করতে হবে।’
‘ কিসব বলছেন?বাড়িটা বিক্রি করা হয়েছে, তার বিনিময়ে অর্ধেক টাকা শোধ করা হয়েছে।আর আপনি বলছেন ফেরত পাব!’
রক্তিম আয়েশ করে বসল বিছানায়।মাথার সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে পেঁছনে ঠেলে দিয়েই বলল,
‘ ফেরত কিভাবে পাবেন তা তো আপনাকে ভাবতে বলিনি।শুধু একটা কাজ করবেন।বিনিময়ে আপনি আপনার বাড়ি পেয়ে যাচ্ছেন।সিম্পল।’
অদ্রিজা তেজ নিয়ে বলে উঠল,
‘ আমি কোন কাজ করব নাহ।আর বাড়িটাও পাওয়ার লোভ নেই আমার।’
রক্তিম ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে তাকাল অদ্রিজার দিকে।কপালের মাঝখানে রগটা সঙ্গে সঙ্গেই ফুলে উঠল তার।চোয়াল হয়ে উঠল শক্ত।মুঠো শক্ত করে সামনের চেয়ারটায় লাথি মেরেই উঠে দাঁড়াল সে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,
‘ একদম তেজি গলায় কথা বলবেন নাহ আমার সাথে অদ্রিজা।একদমই নাহ!শুধুমাত্র টাকার লোভে আপনি একটা দুশ্চরিত্র ছেলেকে বিয়ে করে নিলেন।সে বেলায় ভাবেননি আপনার এই কাজটা করা উচিত নয়?এখন বিয়েটা যখন করেছেন তখন আমার দেওয়া কাজটাও আপনি করতে বাধ্য।বাধ্য আপনি।মাইন্ড ইট!’
কথাটা বলে আর দাঁড়াল না রক্তিম।অদ্রিজা তাকিয়ে রইল রক্তিমের যাওয়ার পথে।টলমলে হয়ে উঠল চোখজোড়া।হয়তো জীবনের শেষ পর্যায়েও তাকে লোভী সম্বোধনটা পেতে হবে।আধো কি সে টাকার লোভে করেছে বিয়েটা?তাহলে কি সেইদিন বিয়েটা না করলেই ভালো হতো!
.
ভার্সিটিতে এসেই নিজের মাথা ঘুরিয়ে উঠল অদ্রিজার।সবার মুখেই একটা প্রশ্ন, ” দিহানের সাথে সম্পর্ক ছিল যখন, তখন অন্য একজনের সাথে বিয়েতে রাজি হয়ে গেল কেন সে?এভাবে একজনকে ভালোবেসে অন্য একজনকে বিয়ে করে নিল।” আরও কত কি!অদ্রিজা ঝাপসা চাহনিতে ক্লাসরুম থেকে বেরিয়ে আসছিল।ভার্সিটির মাঠের কাছে এসেই থমকে দাঁড়াল সে।গেইটের কাছাকাছিই রক্তিম।এদিকেই আসছে সে।অদ্রিজা মিনমিনে চোখে তাকাতেই দ্রুত এগিয়ে আসল রক্তিম।আশেপাশে তাকিয়েই বলে উঠল সে,
‘ দিহানের এক্সিডেন্ট হয়েছে অদ্রিজা।’
অদ্রিজা চারপাশ ভাসাভাসা হয়ে উঠল। মস্তিষ্ক ফাঁকা লাগছে তার!দিহানের এক্সিডেন্ট? যে ছেলেটার সাথে হাইস্কুল জীবন থেকে এটুকু পথ চলা সে ছেলেটাকে ভালোবেসেছিল কিনা সে জানে নাহ। তবে সে ছেলেটা তার চোখে উত্তম কেউ ছিল।আর তারই এরকম একটা খবর শুনে নিজেকে স্বাভাবিক রাখা আধো সম্ভব?
#চলবে…..
{কেমন হয়েছে জানাবেন।ভালোবাসা!}