#জলপদ্ম
#কুরআতুল_আয়েন
|১৫|
নিস্তব্ধ চারপাশ।বাতাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যাচ্ছে না।বাতাসের তাড়নায় পুকুরের পানি টাও যেনো কেঁপে উঠছে।পুকুরের শীতল পানিতে আমি আর রক্তিম ভাই পা ডুবিয়ে বসে আছি।শাড়িটা হাঁটু অবধি ভিজে আছে।রক্তিম ভাই সাদা পায়জামা টা উপরে তোলে বসেছেন বলে ভিজে যায় নি।রক্তিম ভাই আমার মাথাটাকে নিজের কাঁধে শুইয়ে দিয়ে বললেন,
‘শীত লাগছে?’
আমি ছোট করে উত্তরে বললাম,
‘না রক্তিম ভাই।’
রক্তিম ভাই ঘাড় বেঁকিয়ে আমার দিকে তাকালেন।আমিও রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।দু’জন দু’জনের অপলক দৃষ্টিতে হারিয়ে যাচ্ছি।এইভাবে কতক্ষণ ছিলাম তা জানা নেই আমার।তবে,গলার কাছে পানির ছোঁয়া পেতে আমার দিক বেদিক যেনো হারিয়ে গেলো।সটান করে রক্তিম ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে সরে আসলাম।কিছুটা মিহি গলায় চেঁচিয়ে বললাম,
‘মায়া-দয়া নেই নাকি আপনার রক্তিম ভাই।এই ঠান্ডাযুক্ত পরিবেশে আপনি আমাকে ভিজিয়ে দিলেন!ঠান্ডায় যেনো আমার সারা শরীর কেঁপে উঠছে।উফফ!আপনি খুব ধড়িবাজ রক্তিম ভাই।’
রক্তিম ভাই দাঁত কেলিয়ে হেসে উঠলেন।এক টানে আমাকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন।কোমর থেকে শাড়িটা সরিয়ে দিয়ে ঠান্ডা যুক্ত হাত টা সেখানে চেপে ধরে বললেন,
‘ঠান্ডা যেহেতু করেছি সেহেতু গরমও করতে পারবো।আমার উষ্ণতায় যখন তোমাকে রাঙিয়ে দিবো তখন বুঝবে এই রক্তিম কি জিনিস।পালাতে চাইলেও পালাতে পারবে না।কারণ,রক্তিম তোমাকে পালাতে দিবে না।রক্তিম নিজের জিনিস নিজের কাছে বন্দী করে রাখতে জানে।’
আমি চমকে উঠলাম।সেই সাথে সারা শরীর বেয়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো।রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকাতেই আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম।কারণ,রক্তিম ভাই আমার ঠোঁটের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।ইশশ!কি বেশরম ভাবে তাকিয়ে আছেন আমার ঠোঁটের দিকে।আমি অন্যদিকে ঘুরতে নিলেই রক্তিম ভাই আমার ঠোঁট দুটোতে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
‘লিপস্টিক পড়িস নি তো রিমঝিম।’
আমি সাথে সাথেই মাথা নাড়িয়ে জবাবে বললাম,
‘না রক্তিম ভাই।লিপস্টিক পড়ি নি।আপনিই নাকি পড়তে না করে দিয়েছেন।কিন্তু,কেনো রক্তিম ভাই।’
‘তার কারণ জানতে চাস নাকি!’
‘আমি জানতে চাইলে আপনি আমাকে বলবেন নাকি রক্তিম ভাই।’
‘ঠিক ধরেছিস!তোকে বলবো না,তবে প্র্যাকটিক্যাললি বুঝিয়ে দিবো।’
রক্তিম ভাইয়ের কথায় আমি কিছুটা আহাম্মক হয়ে গেলাম।কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভ্রুকুটি কুঁচকে বললাম,
‘মানে কীভাবে রক্তিম ভাই।’
রক্তিম ভাই আর দেরি না করে আমার গালদুটো শক্ত করে চেপে ধরে নিজের ঠোঁট টা আমার ঠোঁটের উপর চেপে ধরলেন।ব্যাপার টা বুঝার বোধগম্য হতেই রক্তিম ভাইয়ের বুকের উপর সজোরে কয়েকটা কিল,ঘুষি দিয়েও নিজের থেকে সরাতে পারলাম না।এর ঠিক কিছুক্ষণ পরই রক্তিম ভাই আমাকে ছেড়ে দিয়ে চুল গুলো সুন্দর করে পরিপাটি করতে লাগলেন।রক্তিম ভাই ছাড়তেই আমি আঁচলের শেষ অংশটুকু দিয়ে ঠোঁট দুটো মুছতে মুছতে বললাম,
‘এইটা কিস নাকি অন্য কিছু রক্তিম ভাই।লালায় সারা ঠোঁট ভরিয়ে দিয়েছেন।’
রক্তিম ভাই আঁড়চোখে তাকিয়ে বললেন,
‘এইটা লালাযুক্ত কিস।তোর লালা আমার লালা না মিললে কি আর কিস করে মজা আছে!!উঁহুহু!!ব্যাপার টা তে একটুও মজা নেই।’
রক্তিম ভাইয়ের লাগামছাড়া কথা শুনে আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।রক্তিম ভাইয়ের থেকে সুড়সুড় করে কিছুটা দূরত্বে চলে আসলাম।রক্তিম ভাই আমার হাবভাব পরোক্ষ করে বললেন,
‘যতোই দূরে দূরে যাস না কেনো শেষে কিন্তু আমার ভালোবাসায় তোকে বন্দী হতে হবে।এই রক্তিমের ভালোবাসায়।’
‘আপনি আর ভালোবাসা।অসম্ভব রক্তিম ভাই।’
‘কি বললি!আমি আর ভালোবাসা মানে কি বুঝাতে চাইছিস রিমঝিম তুই?আমি ভালোবাসতে পারি না তাই মিন করলি নাকি!!’
‘আপনাকে কি বলা উচিত তা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না রক্তিম ভাই।আপনি কেনো হুট করে আমাকে বিয়ে করে বসলেন?আপনার তো তারিন আপুর সাথে সম্পর্ক আছে।ওইদিন তো রেস্টুরেন্টে সবার সামনেই আপনি তারিন আপুকে প্রপোজ করলেন।তাহলে,এখন কেনো আমাকে বিয়ে করেছেন?তারিন আপুর কি হবে এখন একবারো ভেবে দেখেছেন আপনি রক্তিম ভাই?’
রক্তিম ভাই আমার দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালেন।দাঁতে দাঁত পিষে বললেন,
‘তারিন তোর সতীন হবে বুঝেছিস।এবার খুশি তো।’
রক্তিম ভাইয়ের কথার ধরন দেখে আমার বুকটা ভারী হয়ে আসলো।আচমকাই বুকে তীব্র এক ব্যথার সন্ধান পেলাম।চোখ দুটো জ্বালা জ্বালা অনুভব হচ্ছে।কান্নার পূর্বলক্ষণ।দ্রুত গতিতে রক্তিম ভাইয়ের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম।কিছুটা দূরে দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছি।
ঝিরিঝিরি বাতাসে আমার চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়ছে।চোখে,মুখে চুলের ছোঁয়া পেতেই তপ্ত একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে চুল গুলোকে হাত খোঁপা করে নিলাম।আকাশ পানে তাকিয়ে দেখলাম,বড় থালার মতো চাঁদ উঠেছে।আজকের আকাশের বুকে উঠা এই চাঁদটাকে আমার ছুঁয়ে দিতে মন চাচ্ছে।যা নিতান্তই ভাবা বোকামি।তাও,আমি আনমনে চাঁদের সোজাসুজি হাত টা বাড়িয়ে দিতেই রক্তিম ভাই আমার হাতটাকে আঁকড়ে ধরলেন।পিছনে তাকিয়ে দেখি রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।রক্তিম ভাইকে ছাড়াতে গেলেই রক্তিম ভাই আমাকে আরো শক্ত করে জাপটে ধরলেন।একরাশ অভিমান নিয়ে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকালাম।এমতাবস্থায় বললাম,
‘ছাড়ুন তো আমাকে।আমার ভালো লাগছে না।’
হঠাৎ কানের কাছে শুনতে পেলাম,
‘ভালোবাসার প্রেয়সীকে ছাড়া কি থাকা যায়।কতদিন অপেক্ষা করে ছিলাম আজকের এই দিনটার জন্য।অবশেষে এই দিনটা এলো ঠিকই কিন্তু,আমার প্রেয়সী,আমার উপর রেগে আছে।তাও,আবার চোখে ভুলভাল দেখে।আমি জানি এখন সে মুখ ঘুরিয়ে বলবে,চোখের দেখা ভুল হতে পারে না রক্তিম ভাই।কিন্তু,একটা কথা কি,মাঝেমধ্যে চোখের দেখাও ভুল হয় মিসেস রক্তিম।’
রক্তিম ভাইয়ের সম্পূর্ণ কথা শুনে আমার বুকের ভিতর ঢিপঢিপ আওয়াজ করতে শুরু করে দিয়েছে।রক্তিম ভাইয়ের প্রেয়সী তাহলে আমিই।কথাটা কেনো জানি মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে।তার কারণ একটাই,রক্তিম ভাইয়ের আচরণ।রক্তিম ভাইয়ের আচরণ দেখে তো আমি মাঝেমধ্যে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যেতাম।তার মানে!তারিন আপুর সাথে রক্তিম ভাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।তাহলে তারিন আপু চিপকে থাকলে রক্তিম ভাই কেনো হাসি মুখে মেনে নিতেন।তার উপর রেস্টুরেন্টের ওই ঘটনা টাই বা কেনো ঘটিয়েছিলেন রক্তিম ভাই।সবকিছু কেমন যেনো হাওয়ায় ভাসছে।এইসব ভাবনার মাঝেই উল্টো ঘুরে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকালাম।রক্তিম ভাইয়ের অবস্থান দেখে আমি চমকে কিছুটা দূরে সরে যাই।রক্তিম ভাই আমার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাঁটুগেঁড়ে বসে আছেন।ঠোঁটে মাতাল করা সেই হাসি।যেই হাসি দেখে আমি বহুবার কপোকাত হয়েছি।রক্তিম ভাই মৃদু আওয়াজে বলতে লাগলেন,
‘ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কীভাবে করতে হয় তা আমার জানা নেই।শুধু এতোটুকু জানি এই রিমঝিম ছাড়া রক্তিম পুরোপুরিই নিঃস্ব।ভালোবাসার অনুভূতি গুলো খুবই অদ্ভুত।সেই অনুভূতি গুলো এই রিমঝিমকে ঘিরেই হয়েছিলো রক্তিমের মনে।এক কথায়,রক্তিমের সারা হৃদয় জুড়ে শুধু রিমঝিমের বসবাস।’
চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।রক্তিম ভাইয়ের কথা গুলো শুনে কেনো জানি মনের ভিতর অভিমান ঝেঁকে বসেছে।বারবার মনে হচ্ছে,রক্তিম ভাই যেহেতু আমাকে ভালোবাসেন সেহেতু কেনো প্রতিনিয়ত আমার সাথে এমন করতেন?কেনো নিজের দহনে পোঁড়াতেন?মন বলতে কিছু একটা আমারও আছে নাকি!!রক্তিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন।পুনরায় বলতে লাগলেন,
‘আমি ভালোবাসি এই রিমঝিমকে।খুব খুব ভালোবাসি।যা প্রকাশ করেও শেষ করা যাবে না।’
আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম।কেনো কাঁদছি তাও জানি না।কিন্তু খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে।আমার কান্নার আওয়াজ পেয়ে রক্তিম ভাই উঠে দাঁড়ালেন।দৌড়ে আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।নিজের বুকে ঠায় দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,
‘ডোন্ট ক্রাই মিসেস রক্তিম।জানি তো অনেক কষ্ট দিয়েছি।তোমার সব কষ্ট আমি কমিয়ে দিবো আমার ভালোবাসা দিয়ে।এখন শুধু ভালোবেসেই যাবো।আর কোনো লুকোচুরি থাকবে না।’
কান্না কিছুটা কমে এসেছে।তাও রক্তিম ভাইয়ের বুকে মাথাটা ঠেস দিয়ে রেখেছি।খুব শান্তি শান্তি অনুভব হচ্ছে।ভালোবাসা তো এমনেই।রক্তিম ভাইয়ের বুকে আঁকিবুঁকি করে নাক টেনে টেনে বললাম,
‘তাহলে ওইদিন রেস্টুরেন্টে কি এমন হয়েছিলো যার জন্য আপনি তারিন আপুর সামনে ওইভাবে বসে ছিলেন?’
রক্তিম ভাই বাচ্চাদের মতো মুখ করে বললেন,
‘বিশ্বাস করো মিসেস রক্তিম তারিনের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।তারিন আমাকে পছন্দ করলেও আমি কিন্তু তারিনকে বন্ধুর চোখেই দেখি।কারণ,আমার মনে তো আগে থেকেই একজন জায়গা দখল করে রেখেছে।আর,তারিন কেনো অন্যকোনো মেয়ের প্রতি আমার কখনই তেমন কোনো ফিলিংস বা ভাবনা আসে নি।শুধুমাত্র তুমি ব্যতীত।শিলা,সুস্মিতা যেমন আমার খুব ভালো বন্ধু ঠিক তেমনি তারিনও আমার কাছে সেইম।ওইদিন সিফাত আর রঞ্জন এই দু’জন মিলে আমাকে জরুরী ভিত্তিতে তলব করে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলো।আমি যখন বলেছিলাম আমি সবাইকে নিয়ে আসছি তারা কোনো মতেই আমার কথাটাকে পাত্তা দেয় নি।তাদের এক কথা আমার এখনেই যেতে হবে।তাই তো,আমি আবিরকে বলে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পড়ি।রেস্টুরেন্টে গিয়ে যখন শুনলাম ট্রুথ এ্যান্ড ডেয়ার খেলার জন্য ওই বাদর দুটো আমাকে জরুরী ভিত্তিতে তলব করেছে তখনি মেজাজ টাই চটে গিয়েছিলো।অবশ্য,তাড়াতাড়ি গিয়ে একটা লাভের লাভ হয়েছিলো।রেস্টুরেন্টে কিছু ডেকোরেশন বাকি ছিলো,মানে ওরা ইচ্ছে করেই সেগুলো করে নি।তাই,আমিও ওদের রাগ টা রেস্টুরেন্টের লোকদের উপর ঝেড়ে দেই।’
রক্তিম ভাই লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছাড়লেন।আমি পিটপিট করে তাকিয়ে বললাম,
‘তারপর!কি হয়েছিলো?’
‘তারপর আর কি!আমিও বসে বসে রেস্টুরেন্টের লোকদের বাকি কাজ গুলো বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম।কারণ,তনায়া আর বাবু যেনো খুব খুশি হয় সেইজন্যই এইভাবে বসে থাকা।তাই,সময় কাটানোর জন্য সবাই একসাথে সিদ্ধান্ত নিলো ট্রুথ এ্যান্ড ডেয়ার খেলবে।আমিও একা বসে কি করবো,তাই আমিও যোগ দিয়েছিলাম।সিফাত আর রঞ্জন ইচ্ছে করেই এই ডেয়ার টা দিয়েছিলো।ওরা ভেবেছিলো আমি তারিনকে ভালোবাসি।কিন্তু,তারিন যে আমাকে আগে থেকেই পছন্দ করে,ভালোবাসে তা সিফাত আর রঞ্জন আগে থেকেই জানতো।তাই তো!ইচ্ছে করেই আমার কপালে এই ডেয়ার টা দিয়েছিলো।শিলা জানতো আমি তোমাকে ভালোবাসি।বন্ধুমহলে আমি শিলাকে কিছু বলে শান্তি পেতাম।সবকিছু সুন্দরভাবে সল্যুশন করার ক্ষমতা শিলার ছিলো।শিলা শোনার সাথে সাথে একবাক্যে বা করে দিয়েছিলো।কিন্তু,গাধা দুইটা আমাকে এই ডেয়ার দিয়েই ফেলে।আমিও ডেয়ার মাফিক পূরণ করতে গেলেই সেখানে তুমি চলে আসো।আর,তারিন অত্যধিক খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে।তারপর তো তুমি ভুল বুঝে চলে গিয়েছিলে।’
কথাটা শেষ করেই রক্তিম ভাই আমার মুখ টাকে আগলে নিলেন।কপালে গভীর একটা স্পর্শ এঁকে দিয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন,
‘আমার সামনে যখন তোমার নিথর দেহটা পড়ে ছিলো তখন নিজেকে অনেক পাগল পাগল লাগছিলো।মনে হচ্ছিলো আমি নিজেই নিজেকে শেষ করে দেই।কারণ,আমি তোমায় ছাড়া নিঃস্ব রিমঝিম।’
রক্তিম ভাইয়ের কথা শেষ হতেই আমি বলে উঠলাম,
‘ভালোবাসি রক্তিম ভাই আপনাকে।ভীষণ পরিমাণে ভালোবাসি।আপনি কেনো সবকিছু বুঝে গিয়েও আমাকে কষ্ট দিয়েছেন।আমি যে আপনার দেওয়া কষ্ট গুলোতে জর্জরিতও পর্যন্ত হয়েছি।’
‘ভুল আমার মিসেস রক্তিম।আমি সবকিছু বুঝেও না বুঝার ভান করে ছিলাম।এমনকি ইচ্ছে করে কষ্টও দিয়েছি তোমাকে।কিন্তু,এখন আর কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।আদরে আদরে ভরিয়ে দিবো।’
‘আচ্ছা রক্তিম ভাই!রিমি কেনো আমাকে বলেছিলো আপনি স্কলারশিপ পেয়ে কানাডায় চলে গিয়েছেন।এইটা তো মিথ্যা বলেছে!কিন্তু কেনো?এইটা শোনার পর আমার কি অবস্থা হয়েছিলো আপনি জানেন রক্তিম ভাই!!’
রক্তিম ভাই অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বললেন,
‘আমিই না করেছিলাম!এতোদিন তোমার সামনে না এসে এইসবের অ্যারেঞ্জ করেছিলাম তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য।তোমার এক্সিডেন্টের পর তো আমি প্রায় পাগলপারা হয়ে গিয়েছিলাম।আমার এই পাগলামি সবাই দেখেছিলো।তখন শিলাই সত্যি কথাটা সবাইকে বলে দেয়।আর,এদিকে আমিও সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই তোমাকে বিয়ে করার।বাবা অনেক আগে থেকেই জানতো আমি তোমাকে পছন্দ করি।তোমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে সেদিন বাবা আমাকে দু’গালে দুটো থাপ্পড় দিয়েছিলো।পরে,ঠিকই বুকে টেনে নিয়ে বুঝিয়েছিলো।তারপর,বাবাকে বিয়ের কথা বলতেই বাবাও বিনাবাক্যে রাজি হয়ে যায়।’
রক্তিম ভাইয়ের কথা শেষ হতেই দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম।আমার অজান্তে এতোকিছু হয়ে গেলো অথচ আমি টেরও পেলাম না।টের না পাওয়ার এই কথা।অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকলে তো কোনো কিছুরই হুশ থাকে না।আমার এসব ভাবনার মাঝেই রক্তিম ভাই আমাকে হেঁচকা টান দিয়ে কোলে তোলে নিলেন।আমি চমকে গিয়ে বললাম,
‘রক্তিম ভাই!কোল থেকে নামান বলছি।আপনার মতলব ভালো ঠেকছে না।’
‘উঁহুহু!কোল থেকে নামাচ্ছি না।আমার এখন তোমার সঙ্গ প্রয়োজন।’
লজ্জায় চোখ দুটো নিভু নিভু হয়ে আসলো।রক্তিম ভাই আমার নাকে ঠোঁটের উষ্ণ ছুঁইয়ে দিয়ে ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
————-
সবাই আমার আর রক্তিম ভাইয়ের দিকে অদ্ভুত এক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।সবার চাহনি দেখে আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে।আঁড়চোখে রক্তিম ভাইয়ের দিকে তাকালাম।উনার মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই।নির্বিকার ভঙিতে হেঁটে যাচ্ছেন।আমি সামনে যেতেই রিমি,তনায়া আপু,সুস্মিতা আপু,শিলা আপু এই চারজনে মিলে আমাকে ঘিরে দাঁড়ালো।ভিজে চুল গুলোতে হাত দিয়ে সুস্মিতা আপু বললেন,
‘এহেম এহেম!!সবই বুঝি রিমঝিম।’
আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।গতকাল রাতের কথা ভাবতেই সারা শরীর শিউরে উঠলো।রক্তিম ভাইয়ের স্পর্শ গুলোর কথা মনে পড়তেই আমি আবেশে চোখ দুটি বন্ধ করে নিলাম।
রিমি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
‘ইশশ!আমার ভাই যে এতো কামড়াকামড়ি করতে পারে তা তোর গলা,বুক দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আস্ত রাক্ষস আমার ভাইটা।’
তনায়া আপু গালে হাত দিয়ে আফসোসের গলা টেনে বললো,
‘আমার আর বাবুর বিয়ে টা যে কবে হবে!!এখন আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’
সবার টিপ্পনী কথা শুনে আমি সুড়সুড় করে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম।আমার চলে আসাতেই সবাই যে হাসছে তা ঠিকই বুঝতে পারছি।আয়েসি ভঙিমা করে বসতেই আচমকাই ফোনের ম্যাসেজ টোন বেজে উঠলো।বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে ফোনটার দিকে তাকালাম। কারণ,আচমকাই ম্যাসেজের আওয়াজ পেয়ে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।একরাশ বিরক্তি নিয়ে ম্যাসেজ টা পড়েই আমি যেনো চমকে উঠলাম।কে দিয়েছে এই ম্যাসেজ!!
চলবে..