বিচ্ছেদময় সুখ পর্ব -০২

#বিচ্ছেদময়_সুখ — [২]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
🚫অন্যত্র পোস্ট নিষিদ্ধ🚫
__________________

-‘ আপনি কাজে যাবার আগে বলেছিলেন আমাকে অপেক্ষা করার জন্য সঠিক সময়ের। আপনি ফিরে আসবেন। তাহলে তিশা কেনো আসলো আমাদের দু’জনের মাঝখানে? ‘

নেত্রপল্লব যুগল বন্ধ করে মনে এক বুক সাহস সঞ্চয় করে রুহিনকে বলে দিলাম কথাগুলো না জানি কি উত্তর দিবেন উনি। তবে মনের অ্যবক্ত কৌতুহল তো বাঁধ মানে না।

-‘ তোর কথার আগামা’থা কিছুই বুঝতে পারছি না মিরা।’

-‘ মানে আমি আপনাকে ভালোবাসি! আর আপনি তিশার সঙ্গে ওরকম জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো?’

কখনো সরাসরি রুহিনকে বলা হয়ে ওঠেনি ভালোবাসি! আমার করা ছেলেমানুষি গুলো দ্বারা উনাকে বুঝিয়েছি। আজকে বলে দিলাম মনের কোনে জমিয়ে থাকা অব্যাক্ত অনুভুতি গুলো। কি উত্তর দিবেন তিনি সেই প্রয়াসেই আছি।

-‘ মা’থা টা কি ঠিক হয়েছে না-কি পুরোটাই চলে গেছে?’

-‘ কিহ্! এসব কি বলছেন আপনি। আমি তো ভালোবাসি বললাম। ‘

-‘ এবার প্রতিত্তোরে যদি আমি বলি যে আমি তোকে ভালোবাসি না তখন কি হবে মিরা? ‘

রুহিনের কথা শুনে দৃষ্টি আমার স্থির হয়ে কেবল উনার মুখপানেই তাকিয়ে রইলাম! আপাততো কর্ন কুহুরে উনার বলা কথাই বেজে বেজ ওঠছে! উনি ধরতে বলছেন? মানে উনি আমাকে ভালোবাসেন না! মরিচীকার পিছনে ছুটছি আমি। কিন্তু কি করবো? বিচ্ছেদের দহন বড্ড কষ্টের, সেখানে আমার প্রণয় তো পূর্নতা লাভও করেনি এর আগেই বিচ্ছেদের সুর!

-‘ কিরে চুপ করে আছিস যে কিছু বল? ‘

-‘ কি বলবো? আমি সোজাসাপ্টা উত্তর দিন। ‘

-‘ তুই তিশার কথা বললি কেনো? তিশা তো তোরই ক্লাসমেট, একই কলেজে পড়িস তোরা। ইনফ্যাক্ট তিশাদের বাড়ি তোদের বাড়ির লাগোয়া তাহলে কি হয়েছে? ‘

এবার রা’গ ওঠে গেলো মনের ভেতর। আমি এখানে আসছি উনাকে আমার কথাগুলো বলতে আর উনি তিশাকে টে’নে নিয়ে আসছেন? উনার কথা শুনে মন খারাপ হয়েছিলো কিন্তু এখন তিশা কথা শুনে মন খারাপ উবে গিয়ে বিরক্তিকর লাগছে!

-‘ আমি আর তিশা এক হলাম না-কি? ‘

-‘ হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক, তুই আর তিশা এক হলি না-কি? তোকে তো লিপির সঙ্গে ছোটো থেকে দেখেছি। কেমন ছেলেমানুষ, ছটফটানি তুই আর তিশা কিন্তু তোর বয়সের হলেও অনেকটাই ম্যাচুয়েড্ এবং কথা বার্তাও সুন্দর। দেখতেও স্মার্ট! চলাফেরাও তেমন। তোর মতন গা রি রি করে না বুঝছিস?’

রুহিনের বলা কথাগুলো যেনো আ’গুনে ঘি ঢালার মতন পরিস্থিতি তৈরী হলো।

-‘ তো সোজাসাপটা বলে দিন না কি বলতে চান? তিশাকে কেনো জড়িয়ে ধরেছিলেন আপনি? ‘

-‘ তাতে তোর কি? ‘

-‘ বললাম না ভালোবাসি আপনাকে!’

এবার আর দুর্বল না হয়ে শক্ত হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম রুহিনের সামনে। বেশ ইচ্ছে হয়েছে উনার তিশার প্রসংসা করা তাই না? তিশাকে তো মজা দেখাবো এবার এই রুহিনের পালা হুহ্! আমিও দেখবো আমাকে ছেড়ে অন্য মেয়ের কাছে উনি কি করে যায়।

-‘ ভালোবাসা? সেটা তু*

-‘ মিরা কতক্ষণ আসলি? আয় রুমে আয় একটু শুনে যা। ‘

রুহিন কিছু একটা বলতে চাইছিলো কিন্তু রুহিনের মায়ের কারনে আর বলা হয়ে ওঠেনি উনার! আমিও চাচির পিছু পিছু চলে গেলাম চাচির রুমে।

-‘ বলো চাচি কিছু কি বলতে চাও? ‘

-‘ হ্যাঁরে শোন না, তুই আর লিপি তো বেস্ট ফ্রেন্ড দুই বাড়ির মধ্যে সম্পর্কটাও বেশ ভালো। আমি চাইছি রুহিনের বিয়ে দিতে! ‘

-‘ কিহ্! বিয়ে? তাও আবার রুহিন ভাইয়ার?’

-‘ হ্যাঁ শুনছিস না কেনো তুই? রুহিনই তো আমাকে বলেছে ও কাউকে পছন্দ করে তাই আমি চাইছি ওদোর বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিতে বুঝেছিস? আর তোকেও কিন্তু অনেক দায়িত্ব নিতে হবে। সবার আগে দাওয়াত তো আমি তোকেই দিলাম। আমার একমাত্র ছেলের বিয়ে বলে কথা বল? ‘

-‘ রুহিন ভাইয়া আসতে না আসতে এরই মধ্যে এতোকিছু ভেবে ফেললে? ‘

-‘ রুহিন এসেছে সেই সকালের দিকে এখন সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে বিকেল হয়ে পড়ছে। ও বলেছে আমাকে ও না-কি একজনকে ভালোবাসে আর তাকেই বিয়ে করবে, তবে নাম বলেনি বলেছে সেটা পরে বলবে।’

চাচির সামনে মুখে মিথ্যা হাসির রেখা ফুটিয়ে কথা বললাম আরো কিছুক্ষণ। মুখে রয়েছে হাসি কিন্তু ভেতরে ভেতরে দ’হ’ন য’ন্ত্র’ণা ভো’গ করছি কেবল আমি! সেই য’ন্ত্র’ণা যে কতোখানি কষ্টের সেটা যার হয় সে-ই বুঝে অন্য কেউ নয়। সকালের তিশার সঙ্গে উনাকে ওইভাবে দেখা আর চাচির কথা শুনে বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটা তিশা ছাড়া আর কেউ না! এসব যতোই ভাবছি, ততোই মনে হচ্ছে বুকের মধ্যে কেউ হা’তু’ড়ি পিটা’চ্ছে! তবুও উনার মুখ থেকে সবটা জানতে চাই। কিন্তু উনি ধোঁয়াশায় রাখছেন আমাকে। চাচি চলে গেলেন। আমি আবারো ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম পাশের সোফায় রুহিন বসে আছে। লিপি রুমেও নই ওর জন্যই অপেক্ষা করছি। এখানে যতো থাকবো, ততোক্ষণই চোখের সামনে রুহিনকে দেখতে পাবো আর কষ্ট হবে আমার। লিপির জন্য অপেক্ষা করতে না পেরে যেই না ওঠতে যাবো ওমনি দেখি দরজা দিয়ে তিশা ঢুকছে! বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে এই চাচির কথা শুনে রুহিনের জন্য কষ্ট হচ্ছে আবার তিশাকে দেখে সেটা কষ্টের বদলো তরতর করে বেড়ে রা’গে পরিনতো হচ্ছে! বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে আ’ট’কে আছি আমি। ওদিকে জিন্স, টপস পড়ে পটের বিবি সেজে ভে’টকা’তে ভে’ট’কাতে ঘরের ভেতর চলে এসেছে! কোনো ম্যার্নাস নেই আল্লাহ জানে। এসেই রুহিনের পাশে বসলো! সাহস দেখে আমি হতবাক রুহিনের বাড়িতে এসে আবার রুহিনের পাশাপাশিই বসেছে একদম। আবার দা’ত কে’লা’নো হচ্ছে!

-‘ কি রে তিশা? কখন এলি?’

-‘ এই তো একটু আগেই। শুনলাম রুহিন ভাইয়া এসেছে তাই আর কি দেখা করতে এসেছি। ‘

-‘ আচ্ছা তুই বোস আমি তোদের জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি। ‘

আমি কেবল চেয়ে চেয়ে তিশার কর্মকান্ড দেখে যাচ্ছি! কি মিথ্যা কথা সে নাকি রুহিনোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে অথচ সকালবেলা কি মধুর আলাপন! চাচি চা, নাস্তার টেবিলটা রাখলো ওদের সামনে আমাকেও খেতে বললেন কিন্তু আমি বসে রইলাম। তিশা চায়ের কাপ হাতে নিতেই দু’ষ্টু বুদ্ধি আসলো মা’থা’য় সঙ্গে সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সময় গ’রম চা ফেলে দিলাম ওর হাতে! ও ছ’ট’ফ’ট করছে। বেশ হয়েছে এবার দেখ কেমন লাগে! আমারও এমন ছ’ট’ফটানি, হয়েছে এতোক্ষণ!

-‘ স্যরি আমি দেখতে পাই নি রে। তুই বোস আমি ওষুধ আনছি। ‘

ছোটো থেকে এখানে যাতায়াত তাই এই বাড়ির আনাচে কানাচে সবটা আমি চিনি। ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসতে না আসতেই দেখি রুহিন নিজে তিশার হাত ধরে আছে। আমাকে দেখে তিশা হুড়মুড়িয়ে বাড়ি থেকে চলে গেলো! এদিকে আমার কেনো জানি কষ্ট পাবার বদলে ভীষন রা’গ হচ্ছে! উনি আমার বদলে অন্য কাউকে নিয়ে আহ্লাদ করছে!

-‘ ইচ্ছে করে করেছিস না এটা? ‘

-‘ কেনো আপনার কি তাতে? ‘

-‘ তিশা আমার কাছে এসেছে বলে জে’লা’স ফিল করছিস? ‘

-‘ বুঝবেন মজা কাকে বলে? যখন আমি থাকবো না আপনার কাছে হুহ্!’

-‘ আ’জ’গুবি মার্কা কথা বার্তা শোনার মতন সময় নেই আমার, বেরোতে হবে এক্ষুনি। ‘

-‘ কিন্তু তিশাকে কি আপনি ভালোবাসেন? সেটা তো বলে যাবেন স্পষ্ট করে? আমার উত্তর দিন? আরে চলে যাচ্ছেন কেনো?’

-‘রুহিন ভাইয়া কি বলার কথা বলছো মিরা মনি?’

পিছন ঘুরে দেখলাম তন্ময় ভাইয়া দাঁড়িয়ে রয়েছে ওনাকে দেখে ভ’য় লাগলো কিছু শুনে ফেলেন নি তো আবার।

-‘ এমনি কিছু না। ‘

-‘ তুমি কি পা’গ’ল হয়ে গেলে নাকি? একা একা কথা বলো!’

-‘ পা’গ’ল আপনার বউ হবে বুঝেছেন? আমি না। ‘

আমার কথা শুনে ভাবলেশ হীন ভাবে তন্ময় ভাইয়ার উত্তর,,

-‘ সে পা’গ’ল আছে আমার কাছে বুঝেছো তো? প্রতদিনই দেখি তাকে ইনফ্যাক্ট এখ*

উনার কথা শুনতে ভাল্লাগছে না! তাই কথা শেষ করতে না দিয়েই আমি বলে ফেললাম,,,

-‘ দু’জনই পা’গল হবেন!’

আমি কথাটা বলেই ওই রুম খেকে বেরিয়ে আসলাম। লিপির জন্য অপেক্ষা না করে। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না এই লোকটা কেনো আমার সঙ্গে এরকম করছে? উনি কি বুঝেন না? যাকে ভালোবাসি তার সঙ্গে অন্য একটি মেয়েকে দেখতে পেলে ঠিক কতোটা কষ্ট কয়? না-কি উনি তিশাকে ভালোবাসে? কোনটা সত্যি? সে সত্যি যা-ই হোক আমি তো ভালোবাসি তাকে। কিন্তু কাকে ভালোবাসবো যার মনে অন্য কারোর বিচরন? একি তার প্রতি আমার শুধুই পা’গলামি? এই এক তরফা ভালোবাসায় এতো কষ্ট কেনো? পরক্ষণেই মনে হলো চাচি তো বললো উনার বিয়ে! সেটার কথা জিগেস করতে তো একদমই ভুলে গেছি। এইবার জিগেস করবো উনার পছন্দের মানুষটি কে তারপর আমি সরে যাবো শুধু উনার মুখ থেকে একটিবার শোনার পালা। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি বাইরে উঁকি মে’রে দেখছি চাচি বসে আছে উনার পাশে, তাই রুমে যাবার সিদ্ধান্ত ক্যান্সেল করে দিলাম আপাততো। আজকের জন্য বিদায় আবার কালকে উদয় হবো। নিজের মনকে প্রস্তুত করতে হবে বাড়ি গিয়ে সবটা শোনার জন্য। সে উনি আমাকে ভালোবাসুক কিংবা নাই বাসুক সবটাই মেনে নিতে হবে আমাকে! নিজের কষ্ট নিজের কাছেই রেখে দিবো না হয়। তবুও জানতে তো হবে।

মিরা চলে যাবার পর এক জোড়া চোখ তার যাবার পানে সুক্ষ্ম নজরে তাকিয়ে আছে! মিরার অস্তিত্ব বিলীন হবার পরই সে এক অদ্ভুত হাসি হাসলো! যার অর্থ বোধহয় কেবল সেই পুরুষই জানে।

#চলবে?

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here