#বিচ্ছেদময়_সুখ — [৮]
মুনিয়া মিরাতুল নিহা
🚫( অন্য কোথাও পোস্ট নিষিদ্ধ(🚫
__________________________
-‘ আপনি যে আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না তন্ময় ভাইয়া! ‘
মীরা আর তন্ময় পাশাপাশি হাঁটছিলো। মীরার আকস্মিক প্রশ্নে তন্ময় থমকে দাঁড়ায়।
-‘ সে তুমি ভালোবাসো আর নাই বাসো মিরামনি আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট তোমাকে আমার প্রতি আকৃষ্ট করতে। ‘
তন্ময়ের কথা শুনে ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস! উনার প্রতি কি আকৃষ্ট হবো নতুন করে? আমার মন তো পড়ে আছে কেবল একটি মাত্র মানুষের দিকে। বাড়িতে পৌঁছালাম তন্ময়ও চলে গেলো রাস্তার পাশ ঘেঁষে। বাড়িতে ঢুকতেই দেখতে পেলাম মা অনলাইনে কিছু একটা দেখছে।
-‘ এই দেখ মীরা এই শাড়িগুলো কতো সুন্দর আর গায়ে দিলে না জানি কতোটা সুন্দর লাগবে। আমি এক্ষুনি তোর জন্য অর্ডার করছি। বেশ লাগবে তোকে পড়লে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে একেবারে সবার। ‘
এই মানুষগুলো কতোটা খুশি আমার বিয়ে নিয়ে, কিন্তু আমি তো বিন্দুমাত্র ও খুশি তো দূরের থাক এই বিয়েতে সম্মতিই নেই আমার এই কথাগুলো ওদের বলে কি করে কষ্ট দিই? যদিও বা রুহিন আমার সঙ্গে থাকতে চাইতো! ওনার কাছে ওনার ভাইই সবকিছু। আমার কোনো মূল্য নেই। উনার জন্য নিজের বাবা মা’কে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। বরংচ উনারই প্রিয় ভাইকে বিয়ে করে উনার চোখের সামনেই আমি সংসার করবো তন্ময়ের সঙ্গে! তখন দেখবেন উনি ঠিক কি রকম দ’হন যন্ত্রনা হয়! বলা সহজ কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। উনি বলেন আমি তন্ময়ের সঙ্গে থাকলে সুখী থাকবো এটা কি রকম সুখ? যে সুখ বিচ্ছেদ বয়ে আনে? এরকম #বিচ্ছেদময়_সুখ তো আমি কখনোই চাই নি! তবে উনি যা করেছেন আমার সঙ্গে উনি একদিন না একদিন ঠিকই বুঝবে সবটা তবে ততদিনে না দেরি হয়ে যায়।
————————–
চোখের পলকে অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেছে। কলেজ সেড়ে বাসায় যাবার জন্য হাঁটছি। তখুনি মাথার উপর আকাশ গুরুগম্ভীর ভাবে গর্জন করে ওঠলো! চারদিক কালো অন্ধকারে ছেঁয়ে গেছে! কেউ বলবে না এখন বিকেলবেলা চারিপাশ দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। প্রকৃতি জানান দিচ্ছে এক্ষুনি তার আরো একটি রূপের আলামত ঘটবে। প্রকৃতির এইরকম অবস্থা দেখে লোকজনও তার নীড়ে ফিরেছে। বাড়ি যেতে এখনো অনেকটা পথ বাকি আছে। এরই ভিতরে ঝুমঝুমিয়ে বৃষ্টি এসে পড়লো! উপায়ন্তর না পেয়ে রাস্তা থরকে দূরে মেইনরোডের পাশে একটা ভাঙাচোরা দোকানের নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে। ইচ্ছে মতন বৃষ্টি হচ্ছে, অন্য সময় হলে এই আমি খোলা আকাশের বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে পড়তাম কিন্তু আজকে চুপচাপ ভাবে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণের ভেতর গায়ে একটা বিশ্রী গন্ধ এসে ঠেকলো , উৎপত্তি খুঁজতেই পিছন ফিরে তাকালাম সেখানে কয়েকটি ছেলে বসে আছে। আমাকে দেখতে পেয়ে হাতের মধ্যে থাকা জিনিশটি লুকিয়ে ফেললো! আমি সেখান থেকে আরো একটু দূরে এসে দাঁড়ালাম। ঠেকায় পড়েছি নয়তো এখানেও দাঁড়াতাম না। বৃষ্টির বেগ প্রবল ভাবে বাড়ছে, গায়ে ছিটে এসে পড়ছে আরো একটু ভেতরে যাবো সে উপায়ও নেই। ওই ছেলেগুলা এবার বসা থেকে এসে আমার থেকে একটু খানি দুরত্ব বজায় রেখে। আশেপাশে লোকজনও নেই বৃষ্টির কারনে। আমি সামনের দিকে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎই একটা ছেলে আমার দিকে হাত বাড়াচ্ছিলো কিন্তু ছুঁতে পারেনি! এর আগেই আমার পাশ ঘেঁসে এসে দাঁড়ালো সেই ব্যাক্তি! রুহিন দাঁড়িয়ে আছে আমার পাশে। বুঝলাম না এই সময় উনি আসলেন কোথা থেকে? যার থেকে পালাই পালাই করি সেই উনার কাছরই কেনো ধরা খাই বারংবার?
এই ক’দিন যথাসম্ভব নিজেকে রুহিনের থেকে আলাদা করে রেখেছি। উনি যে পথ দিয়ে হাঁটতেন সে পথের ছাঁয়াও যেতাম না আমি! এই ক’টা দিন ছটফট করেছি একটা নজর উনাকে দেখতে না পেয়ে কিন্তু তবুও নিজেকে দমিয়ে রেখেছি উনার কাছ থেকে। আগে লিপিদের বাড়িতে গিয়ে দিনের অর্ধেক সময়ই পড়ে থাকতাম শুধু ওই মানুষটাকে একটি পলক দেখে তৃষ্ণা মিটাবার জন্য। অথচ আজকে তার থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে আছি এটা কতোটা কষ্টকর সেটা কেবল আমিই উপলব্ধি করতে পারছি।
-‘ কেমন আছো মীরা?’
কতোদিন পর সেই চিরচেনা গলার কন্ঠস্বরের আওয়াজ শুনতে পেলাম! কিন্তু মনের চাপা অভিমানের পাথরটা যে বড্ড বেশি যার জন্য ওনার সঙ্গে কথাও বলতে চাইছি না।
-‘ আমি এই পথ ধরেই বাসায় যাচ্ছিলাম। বৃষ্টির কারনে তোমার মতন এসে দাঁড়িয়েছি। ‘
এবারো আমি কোনো প্রতিত্তোর করলাম না! চুপ করে রইলাম। কিন্তু উনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমি সেটা উপেক্ষা করতে পারলাম না, ভালোবাসি তো উনাকে! এক পলক তাকালাম মানুষটার দিকে, সে মুখে হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উনি যেরকম আমার দিক পানে চেয়ে মিথ্যা হাসি হাসছে তেমনি করে আমি হাসতে পারলাম না। কেনো জানি হুট করেই উনার সামনে চোখের অশ্রুগুলা গড়িয়ে পড়লো। আমি তো দুর্বল হতে চায়নি তবুও এই মানুষটার সামনে নিজেকে আটকাতে পারি না। এবার আর চোখের পানি গুলা মুছলাম না, শক্ত হয়েই দাঁড়িয়ে রুহিনের দিকে তাকিয়ে আছি! আমার চোখ পানি দেখে রুহিনের ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা মিথ্যা হাসিও মিইয়ে গেলো! উনিও কেনো জানি ওনার দু হাত দিয়ে উল্টোদিক ফিরে চোখমুখ ধরে আছে! আমিও পাশ ফিরলাম! এই বিচ্ছেদ তো ওনার জন্যই? তাহলে এখন কেনো আমার চোখে পানি দেখে উনি উল্টোদিক ফিরে আছে? সবে তো মাত্র শুরু আরো কতো কিছু দেখতে হবে। আমার পক্ষে আর এখানে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। হাঁটার উদ্দেশ্য নিতেই দেখি তন্ময় ছাঁতা নিয়ে এখানেই আসছে!
-‘ আপনি এখন এইখানে? কি করে এলেন?’
-‘ আরেহ্ বাড়ি থেকে ফোন করছিলো আন্টি তুমি আমাদের বাসায় এসেছো কি-না? আসলে বৃষ্টি হচ্ছে তো তাই ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন, পরে যখন বললাম তুমি আসোনি উনি চিন্তা করছিলেন তাই আমি এগিয়ে দেখতে এলাম। চলো ছাতা এনেছি বাড়ি যাওয়া যাক?’
আমি তন্ময়ের সঙ্গে বাড়িতে চলে গেলাম। যাবার সময় উঁকি মে’রে দেখলাম সেই দোকানটায় রুহিন আছে কি-না? কিন্তু রুহিনের কোনো দেখা পেলাম না! হয়তো এভাবেই আমাদের দেখা হবে কোনো না কোনো ভাবে আর আজকের মতন তন্ময়ের সঙ্গে আমি চলে যাবো!
মীরা আর তন্ময় চলে যেতেই রুহিন আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো। তখন মীরার সামনে কাঁদতে চায়নি সে-ও নিজেকে কঠোর করে রেখেছিলো কিন্তু মীরার চোখের পানি দেখে নিজেকে সামলাতে পারেনি আর! চোখ দু’টো ফে’টে যেনো পানি আসতে চাইছে সেটা রুহিনের অনিচ্ছা সত্বেও! তাই মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলো। সে চায় না তার ভাইয়ের নতুন জীবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে তাইতো বরাবরের মতনই সে আড়াল হয়ে গেলো! কিন্তু সে কি জানে? তাকে-ও খুঁজছিলো দূর থেকে কোনো ভালোবাসায় সিক্ত রমনীর চোখ!
—————————
সকাল সকাল মা তাড়া দিচ্ছে বিয়ের শপিং করার জন্য! আর বেশিদিন না দিন কয়েক পেরোলেই আমি তন্ময়ের হয়ে যাবো! রাত পোহালেই গায়ে হলুদ তারপর বিয়ে। তন্ময়, লিপি সবাই-ই গাড়ি নিয়ে এসেছে আমাদেে বাসায়। আমি রেডি হয়ে বেরোলাম। গাড়িতে ওঠার সময়ই আবারো সেই মানুষটিকে দেখতে পেলাম! বুঝতে পারি না বারবার তাকে কেনো আমার সামনে আসতে হবে? নিজেই তো দূরে থাকার উপায় করে চলে গেছিলো। তন্ময় রুহিনের পাশে বসেছে, আমি আর লিপি পিছনের সিটে বসে আছি। বসে আছি বললে ভূল হবে আমার চোখজোড়া ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা সেই রুহিনের দিকেই চলে যাচ্ছে বারংবার! কি করে বোঝাবো এই কষ্টের পরিমাপ?
#চলবে?
[