ইট পাটকেল পর্ব -৩৭+৩৮

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৭

সকাল সকাল রান্নাঘরে ব্যস্ত সময় পার করছে নূর।আজ নাফিসা শিকদার আসবে এই বাড়িতে। মায়ের জন্য নিজের হাতে রান্না করছে নূর।আশমিন শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। মায়ের জন্য মনে এতো ভালবাসা থাকে বুঝি?তবে তার নেই কেন? মা নামক অনুভূতি গুলো তার কাছেই কেন ভোতা মনে হয়? দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নূরের কাছে গিয়ে দাড়ালো আশমিন। কিচেনের সবাই আশমিন কে দেখে সরে গেলো।

— অসুস্থ শরীরে এভাবে লাফালাফি করছো কেন নূর? এসব করার জন্য মানুষ আছে।রুমে গিয়ে রেস্ট করো।

নূর আশমিনের দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসলো। উৎফুল্ল গলায় বলল,

— এই দেখুন, আমি বাঙালি খাবার রান্না করছি।আসলে আম্মু কি খেতে পছন্দ করে বুঝতে পারছি না। আম্মু কে নিয়ে কোন কিছু আমার খুব একটা মনে নেই।(উদাস গলায়)।তাই এগুলো ই করলাম।এতো দিন দেশের বাইরে থেকে আম্মু নিশ্চয়ই এই খাবার গুলো মিস করেছে।আপনি একটু টেস্ট করে বলুন তো কেমন হয়েছে।

আশমিন যেন হিংসায় জ্বলে গেলো। তার জন্য তো কোনদিন রান্না করে নি।এখন শ্বাশুড়ির জন্য রান্না করে তাকে দিয়ে টেস্ট করাচ্ছে! কি হৃদয়হীন মহিলা!

আশমিন গমগমে গলায় বলল,

— ভালো হয়নি।দেখতেই বিদঘুটে লাগছে।তুমি রুমে যাও। শেফ রান্না করে দিবে।

নূর ভ্রু কুচকে ফেললো। খাবার গুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে চিন্তিত গলায় বলল,

— কি বলছেন!আসলেই খারাপ দেখাচ্ছে? আমি কতো কষ্ট করে রান্না করলাম! আমার রান্না তো খারাপ হয় না। আমি বরং আবার রান্না করি।

আশমিন চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। নূর আবার নতুন উদ্যমে রান্না শুরু করেছে। আশমিনের মন চাইলো এই মেয়ে কে নিয়ে হাত পা বেধে সুইমিংপুলে ফেলে দিতে। সে তার শ্বাশুড়ি কে হিংসে করছে!লোকে শুনলে কি বলবে? তাকে তো নিম্নমানের হিংসুটে বলে আখ্যায়িত করবে। ছেহঃ

নূর একবার আড়চোখে আশমিনের দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিলো। মনে মনে বিস্তর পরিকল্পনা করে ফেললো আশমিন কে জ্বালানোর।

নাফিসা শিকদার নূর মঞ্জিলে পৌছালো বেলা সারে এগারোটায়। আশমিন গেট থেকে এগিয়ে আনলো তাকে। ছলছল চোখে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে সে।আজ কতগুলো বছর পরে এ বাড়িতে তার আগমন হয়েছে। কিন্তু তার সবচেয়ে কাছের মানুষ টা ই আর নেই।চোখ থেকে কয়েক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরলো নাফিসা শিকদারের।

ড্রয়িং রুমে বাচ্চাদের নিয়ে বসে আছে নূর। তার অস্থির দৃষ্টি দরজাতেই নিবদ্ধ।নাফিসা শিকদার কে হুইল চেয়ারে দেখেই ছুটে গেলো তার কাছে।মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে শব্দ করে কেদে ফেললো নূর। নাফিসা শিকদার আগলে ধরলো মেয়েকে।মাথায় হাত বুলিয়ে সে ও অশ্রু ঝরাচ্ছে। আশমিন চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। মা মেয়ের মিলন দেখে বুকে প্রশান্তির সাথে সাথে আবার ও হিংসা উকি দিলো।তার সাথেও তো কতদিনের বিচ্ছেদ ছিল।কই,তাকে তো এভাবে গলা জরিয়ে ধরে নাকের পানি চোখের পানি ঝরায় নি! উল্টো আরেকজনের ঘাড়ে তাকে তুলে দিতে উঠে পরে লেগেছিলো। সে হিসেবে তার ও একটা ঝাপ্পি পাওনা আছে।আজ তা আদায় করে নিতে হবে। আশমিন ঘড়ির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে তার রাজকন্যা দের কাছে চলে গেলো। সুখ হাত পা নাড়িয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করছে।পাখি এক হাত মুখে ঢুকিয়ে পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। আশমিন সুখ কে কোলে তুলে নিলো। পাখি সেদিকে তাকিয়ে আবার নিজের হাত খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। সুখ কে কিছুক্ষণ আদর করে পাখিকে কোলে নিয়ে ও কিছুক্ষণ আদর করলো আশমিন। ঘড়িতে আবার চোখ বুলিয়ে মা মেয়ের গলা জড়াজড়ি দেখলো।আমজাদ চৌধুরী কান্নার শব্দে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে। মায়া বেগম রান্নাঘরের এক কোনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সানভি মায়া বেগমের লাগেজ নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। আশমিন রাফসান শিকদারের রুমে লাগেজ রাখতে বলে নূরের কাছে গেলো। শান্ত গলায় বললো,

— মামি মা অনেক দূর থেকে এসেছে নূর। তাকে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করতে দাও।তারপর যতখুশি কেদো।চাইলে প্রতিদিন এক ঘন্টা করে কাদতে পারো।এখন আমাদের খেতে দাও।

নূর নাফিসা শিকদার কে ছেড়ে খাবার বারতে চলে গেলো। আশমিনের বাকা কথার শোধ পরেও নেয়া যাবে।

আশমিন সুখ পাখি কে নাফিসা শিকাদের কোলে দিলো।নাতনিদের দেখে আবার ও চোখ ভরে এলো তার। আমজাদ চৌধুরী আর নাফিসা শিকদারের সামনে গেলো না লজ্জায়।নিঃশব্দে নিজের রুমে চলে গেলো সে। মায়া বেগম খাবার গরম করার দায়িত্ব নিজে নিয়ে নূর কে পাঠিয়ে দিলো নাফিসা শিকদার কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করতে।
নূর বিনাবাক্যে চলে গেলো নাফিসা শিকদার কে ফ্রেশ হতে সাহায্য করতে।

সারাদিন মায়ের কাছে ই ছিল নূর।আশমিন বাসায় এসেছে রাত আট টায়। এখন রাত এগারো টা বাজে নূরের আসার খবর নেই।মেজাজ চরম খারাপ হলো আশমিনের। নাফিসা শিকদারের রুমে গিয়ে দেখলো মেয়েদের নিয়ে নাফিসা শিকদারের পাশেই শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছে নূর। মেয়েরা ও মায়ের পাশে আরামসে ঘুমাচ্ছে। নাফিসা শিকদার বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আশমিন মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো। মেয়েদের কোলে নিয়ে বললো,,

— আমি বউ মেয়ে ছাড়া ঘুমাতে পারি না। মেয়েদের রেখে বউ কে নিতে আসছি।

নাফিসা শিকদার শব্দ করে হেসে ফেললো। আশমিন মেয়েদের নিয়ে বেরিয়ে গেছে। মেয়েদের রেখে নূর কে ও নিয়ে এলো রুমে। নাফিসা শিকদার হাসলেন। মেয়ে তার আশমিনের সাথে সুখেই আছে।

নির্বাচন নিয়ে ভিষণ ব্যস্ত আশমিন। দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে আশমিন। গত বার রাফসান শিকদার তার মাথার উপর ছায়ার মতো ছিল।কোন ঝড় ঝাপটা তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। কিন্তু এবার সেই বৃক্ষের ছায়া তার মাথার উপর নেই। সব কিছু সামলে হিমসিম খাওয়ার অবস্থা। কিছু দিন যাবত পদ ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি আসছে। দলের উচ্চপদস্থ নেতারা আস্বস্ত করলেও কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়।রাজনীতি তে হাত নোংরা হবে এটা স্বাভাবিক। আশমিন এর শেষ দেখে ছাড়বে।
মিটিং মিছিল নিয়ে ব্যস্ত থাকায় নূর আর মেয়েদের সময় দিতে পারছে না ঠিক মতো। সকালে বাসার থেকে বের হলে একেবারে মধ্যরাতে ফিরতে হয়। নূর কে নিয়ে কিছুটা চিন্তিত সে।লুবানার চোখের অপারেশনের জন্য তাকে কানাডা পাঠানো হয়েছে। অমি অফিস সামলে আবার নূরের দিকে ঠিক করে সময় দিতে পারছে না। আশিয়ান কে বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না আশমিন। তাই তাকে এসবে জরানো ঠিক মনে করছে না।কয়েক দিন হলো নূর অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। ম*রার উপর খারার ঘা হয়ে আবিস্কার হয়েছে তানভীর। নূরের চারিদিকে মৌমাছির মতো ঘুরঘুর করতে থাকে। নির্বাচনের ঝামেলা টা মিটে গেলেই মৌমাছির পাখনা ভেঙে দিবে সে।

আশমিনের বাসায় এলো রাত আড়াই টায়।নূর তখনো জেগে। মেয়েদের নিয়ে এদিক সেদিক হাটাহাটি করছে।একজন কে ঘুম পারালে আরেকজন জেগে যায়। আকিকা দিয়ে মেয়েদের নাম রেখেছে আশমিন।একজনের নাম নুরাইসা জায়িন চৌধুরী সখ।আরেকজনের নাম নুবাইতা জায়িন চৌধুরী পাখি। অবশেষে নূরের পছন্দ করা নাম ই তাকে রাখতে হয়েছে।সে ও মনে মনে ষড়যন্ত্র করে রেখেছে।যতদিন নিজের পছন্দ মতো নাম সে রাখতে পারবে না ততদিন সে বাবা হওয়ার প্রসেস বন্ধ করবে না। এতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে চায়নার সমান হয়ে যাক। তাতে কিছু যায় আসে না। দেশের একজন গণ্যমান্য মন্ত্রী হয়ে তার এমন ভাবনা যথেষ্ট লজ্জাজনক। কিন্তু তার ই বা কি করার আছে! বউ কে বাগে আনার এই একটা ই রাস্তা।

আশমিন ক্লান্ত পায়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। আজ সারাদিন পেটে বিশেষ কিছু পরেনি।ব্যস্ততার দরুন খাওয়া দাওয়া হচ্ছে না ঠিক মতো।মেয়েকে দোলনায় শুয়িয়ে আশমিনের দিকে তাকিয়ে নিজেই নূর গেলো খাবার গরম করতে।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৩৮

বলিষ্ঠ শরিরে শুভ্র পাঞ্জাবি জড়িয়ে নিজেকে পরিপাটি করছে আশমিন। পাঞ্জাবীর উপর কটি পরে শেষ বারের মতো নিজেকে দেখে নিলো সে। আজ নির্বাচন।সারাদিন ব্যস্ত থাকবে সে। ড্রেসিং টেবিলে থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েদের দিকে তাকালো আশমিন। সুখ পাখি তার দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করছে। আশমিন হালকা হাসলো। মেয়েদের কাছে গিয়ে তাদের কপালে চুমু খেয়ে কোলে তুলে নিলো। দুই মেয়েই বাবার কোলে উঠে বুকে মাথা মিলিয়ে চুপটি করে আছে। আশমিন তাদের মন ভরে আদর করে মায়া মায়া নজরে তাকালো। মেয়ে দুটো কে দেখলে তার বুকটা প্রশান্তি তে ভরে যায়। আশমিন সারাজীবন ই ভালবাসার কাঙাল। ছোট থেকেই সবার সাথে দূরত্ব তার। মায়ের ভালবাসা আর এই জীবনে পাওয়া হবে না। এখন তার একমাত্র ভালো থাকার উপায় এই রাজকন্যারা। আজকাল নূর কে বুঝতে পারে না আশমিন। নূরের ভালবাসার গভিরতা বোঝার ক্ষমতা হয়তো তার হয়নি। কিন্তু নূরের নির্লিপ্ততা ভীষণ কষ্ট দেয় আশমিন কে। তার ভালবাসায় তো কোন কমতি নেই। তবে কেন এত অবহেলা!

মেয়েদের মেড এর কাছে রেখে আশমিন বেরিয়ে গেল। বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করবে আজ।

নূর নিজ হাতে রান্না করছে আশমিনের জন্য। আশমিনের জন্য আজ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। নূর নিজেদের সমস্ত গার্ড কে আশমিনের সিকিউরিটির জন্য নিযুক্ত করেছে। আশমিন এই সম্পর্কে কিছু জানে না। নূর ই তাকে কিছু জানায় নি। তাদের সুরক্ষায় নিযুক্ত থাকা গার্ড আজ তাদের সাথে থাকবে না জানলে শত্রুরা যেকোন সময় আক্রমণ করতে পারে। আশমিন জানলে কখনো ই রাজি হবে না। উল্টো নূরের উপর রেগে যাবে।

আশমিন নিচে নেমে নূর কে কোমড় বেধে রাধতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেললো। আজকে আবার কার জন্য রান্না করছে! সার্ভেন্ট একটা ও নেই আশে পাশে। আশমিন চারিদিকে চোখ বুলিয়ে ধীর পায়ে নূরের পিছনে গিয়ে দাড়ালো। নূরের ঘর্মাক্ত মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— এতো আয়োজন কার জন্য?

নূর চমকে কেপে উঠলো। পাশে আশমিনের অস্তিত্ব অনুভব করে মৃদু হেসে ফিচলে গলায় বলল,

— আছে স্পেশাল কেউ। আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ সে। যাকে এই পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি।(লাজুক গলায়)

আশমিন জ্বলে উঠলো। কটমট করে তাকালো নূরের দিকে। হেচকা টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কোমড় খামচে ধরলো। নূরের মুখ থেকে হালকা আর্তনাদ করে উঠলো। আশমিন সেদিকে পাত্তা দিলো না। সে ভয়ংকর চোখে তাকিয়ে ক্রুর হাসলো। নূর কে নিজের সাথে আরেকটু চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো,

— তাই নাকি সোনা? তা তোমার সেই ভালবাসার মানুষ টিকে আমাকেও একটু দেখাও। আমিও দেখি আমার বউয়ের মনে কে ডায়নাসরের মতো উড়ে বেরাচ্ছে। তার পাখনার সাথে আমার বউয়ের পাখনা গুলো ও তো ভাঙতে হবে তাই না। স্বামী হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে না? আমি খুবই কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। আমি জানি কিভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে হয়। বউ বেশি ফুরুৎ ফুরুৎ করে উড়লে তাকে কিভাবে খপ করে মুঠোয় ভরতে হয় তা ও আমি ভালো করেই জানি। বেশি উড়ো না ময়না। তাহলে ময়না থেকে কাকাতুয়া বানাতে আমার বেশি সময় লাগবে না। মনে রাখবে,একটি ভুল নয় মাসের কান্না হতে পারে।

শেষের কথা টা গম্ভীর গলায় বলল আশমিন। নূর বাকা হেসে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কোমড়ের পাশটা মনে হয় নখ দেবে রক্তাক্ত হয়ে গেছে। জ্বলছে খুব। নূর বাকা হাসি প্রসারিত করে আশমিনের গলা জরিয়ে ধরলো। গা জ্বালানি হাসি দিয়ে লাজুক গলায় বলল,

— সে তো আছে আমার মনে বাবুর আব্বু। তার কথা ভাবলেই তো আমার লজ্জা লাগছে। দেখুন আমার গাল দুটো লাল হয়ে আছে। ইসস,,সে যে কি সব দুষ্টু দুষ্টু কাজ করেনা! আমি তো মুখেই আনতে পারবো না। আপনি প্লিজ তার কথা জানতে চেয়ে আমার লুকানো ভালবাসা জাগিয়ে দিবেন না।

কথা গুলো বলেই দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেললো নূর। আশমিন ভেবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কোমড়ে খামচে রাখা হাত টি ও শিথিল হয়ে এলো। কপালে ভাজ ফেলে গমগমে গলায় বলল,,

— সকাল সকাল নেশা করেছো কেন? তুমি তো এমন ছিলে না!তোমার লজ্জা করলো না দুই বাচ্চার মা হয়ে সকাল সকাল মাতলামি করতে। ইটস ইঞ্জুরিয়াস ফর হেলথ নূর। মেয়েরা কি শিখবে তোমার কাছ থেকে? সকাল সকাল মাতলামি? আমি এখন বের হবো এটা তো মাথায় রাখতে পারতে। বউ মাতলামি করছে আর আমি তার ফায়দা লুটে নিতে পারছি না! তুমি কতো নিষ্ঠুর!

নূর ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো আশমিন থেকে। ভুনা খিচুড়ি নাড়তে নাড়তে নিজেকেই কয়েকদফা গালি দিলো। এমন ইতর লোকের সাথে সংসার করার চেয়ে বনভাসে গিয়ে বাঘকে গান শোনানো সহজ।অসহ্য মানুষ একটা!

নূরের রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে এক ভ্রু উচু করে বাকা হাসলো আশমিন। হুহ তাকে জ্বালাতে আসে। বাচ্চা কাচ্চার মা যত্তসব। নূর ভুনা খিচুড়ির সাথে গরুর কালো ভুনা আর ইলিশ মাছ ভাজা রাখে টেবিলে। আশমিন নিজের প্লেটে খাবার নিয়ে নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। নূর তার পাশের চেয়ারেই মুখ ফুলিয়ে বসে। আশমিন আড় চোখে একবার তাকিয়ে নূর কে ও খাইয়ে দিতে লাগলো। নূর কিছু না বলে নিঃশব্দে খেয়ে যাচ্ছে। দুজনের খাওয়া শেষ হতেই আশমিন হাত ধুতে বেসিনে চলে গেলো। নূর অপেক্ষা করছে আশমিনের ফিরে আসার। টিস্যু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে আশমিন নূরের সামনে এসে দাড়ালো। টেবিল থেকে আরেক গ্লাস পানি খেয়ে আফসোসের স্বরে বললো,,

— আহা!তোমার ভালবাসার মানুষের খাবার তো সব তুমি ই খেয়ে ফেললে। কি পেটুক তুমি! এখন ওই বেচারি কি খাবে?

আশমিনের অভিনয় দেখে গা জ্বলে গেলো নূরের। দাতে দাত চেপে মুখটা,হাসি হাসি করে এগিয়ে গেলো আশমিনের কাছে। খুলে রাখা পাঞ্জাবীর অতিরিক্ত বোতাম টা লাগিয়ে মুচিকি হেসে মায়া মায়া চোখে তাকালো আশমিনের দিকে। হুট করেই বুকের বা পাশে দাত বসিয়ে দিল নূর। আশমিন মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। মেয়ে টা কি সব পাগলামি করে! নুর কামড় দেয়া শেষ হতেই আশমিন মুখটা গম্ভীর করে ফেললো। শান্ত গলায় বললো,

— একটা কামড় ও ঠিক করে দিতে পারো না বউ। আজ রাতে আমি তোমাকে কামড়ের প্রকারভেদ শিখাবো। উদাহরণ সহ। তৈরি থেকো সোনা।

আশমিন নূর কে জরিয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে গেল। নূর হতাশ চোখে আশমিনের যাওয়া দেখলো। আজ তার কপালে দুঃখ আছে।

আমজাদ চৌধুরী অনেক আগেই পার্টি অফিসে চলে এসেছেন।ছেলের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে এভাবে বসে থাকতে পারে না সে। তাই সকাল সকাল ই দলের ছেলেদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। আশমিন আসতেই সানভি তার কাছে এসে দাড়ালো। আশমিন চেয়ারে বসতে বসতে বললো,

— সব কিছু ঠিক আছে তো সান?কোন কেন্দ্রে সমস্যা হয় নি তো?

সানভি হড়বড় করে বললো,

— কেন্দ্র গুলো তে বিরোধী দলের লোকেরা ওঁৎ পেতে আছে স্যার। আজ ওরা ঝামেলা করবেই।আমাদের ছেলেরা ও,আছে। কোন ঝামেলা করতে আসলে সব কয়টা কে সাইজ করে দিবে। আর একটা কথা, (কিছুটা আমতা আমতা করে) তারা আজ আপনার উপর হামলা করার পরিকল্পনা করে রেখেছে স্যার। যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে। আমি সব কিছু আগে থেকেই সেট করে রেখেছি। আমাদের যে কেন্দ্র থেকে পরিদর্শন শুরু করার কথা আমরা তা না করে দুরের কেন্দ্র গুলো থেকে শুরু করবো। এটা আমি ছাড়া আর কেউ জানে না স্যার। আমরা এখুনি বের হবো। অমি আছে ওখানে।বাহাদুর আমাদের সাথে থাকছে।

আশমিন মনোযোগ দিয়ে শুনলো।আজ কোন রিস্ক নেয়া যাবে না। একবার ক্ষমতা হাতে চলে এলে তখন সব-কয়টা কে বাদর নাচ করানো যাবে। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর সাথে দেখা করে তাকে অফিসেই থাকতে বললো। কিছু কথা বুঝিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে পারল সানভির সাথে। গাড়ি তে বসে সানভির চিন্তিত চেহারা দেখে গম্ভীর গলায় বলল,,

— চিন্তা করো না সান,তোমার স্যার উপরে আল্লাহ তারপর নিচে বউ ছাড়া আর কাউকে ভয় পায় না। বিসমিল্লাহ বলে যাত্রা শুরু কর।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here