ইট পাটকেল পর্ব -৪১+৪২

#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪১

আশিয়ানের সামনে মিটমিট করে হাসছে লারা। লারার বাবার মুখেও ক্রুর হাসি। আশিয়ান ভ্রু কুচকে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। আশমিনের নিষেধ না থাকলে এতক্ষণে এদের লীলাখেলা সাঙ্গ হয়ে যেতো। আশিয়ান দু দিকে মাথা ঝাকিয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করলো। মাথা হালকা উচু করে অসহায় গলায় বলল,

— এভাবে হেসো না লারা সোনা।আমার চুলকানি হয়।হাত নিশপিশ করে। তোমার ড্রাকুলার মতো মুখটা ভেঙে দিতে ইচ্ছে করে তো সোনা। আমি আবার মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না বাবু। এই রট চলবে তো?(হাতের রট টা দেখিয়ে)

লারা মুখটা পাংসুটে হয়ে গেলো। আশিয়ান কে বুঝতে না দিয়ে মুচকি হেসে বললো,

— আমাকে তুমি কিছুই করতে পারবে না। আমাদের গায়ে একটা টোকা লাগলেও তোমার সৎ মায়ের মাথা ঝাঝরা করে দিবে।

আশিয়ান অলস হাই তুললো। এই মুহুর্তে রাগের মাত্রা তার আকাশসম। হাতের রট টা এদিক সেদিক ঘুরিয়ে হুট করেই লারার বাবার গায়ে নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে আঘাত করা শুরু করলো। আচমকা আক্রমনে লারার বাবা দিশা হারিয়ে ফেললো। কয়েক সেকেন্ড পর আর্তনাদ করে উঠলো সে।লারা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আশিয়ানের দিকে। হুশ ফিরতেই সে চিৎকার করে আশিয়ান কে থামতে বললো। হুমকি দিয়ে বলল,

— পাপা কে ছেড়ে দাও আশিয়ান। কেন নিজের ধ্বংস ডেকে আনছো? কাদের সাথে লাগতে যাচ্ছো সে ধ্যান আছে? ওরা তোমাকে শেষ করে দিবে। আমাদের সাথে হাত মেলাও। নিজের প্রতিশোধ ও নিতে পারবে। সমস্ত সম্পত্তিও তোমার হয়ে যাবে।

আশিয়ান থেমে গেলো। হাপাতে হাপাতে ঘাড় বাকা করে লারার দিকে তাকালো। লারা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে আশিয়ানের দিকে। হাত পা থরথর করে কাপছে। আশিয়ান লারার ঘামে ভিজে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ক্রুর হাসলো। রড টা নিচে ফেলে আহ্লাদী গলায় বলল,

— ভয় পেয়ো না সোনা। আমি ভালো ছেলে। তোমার কথা শুনে একটু হাত চালাতে ইচ্ছে হয়েছিল। আমি কিন্তু বেশি জোরে মা*রি নি।

কিছুক্ষণ জোরে শ্বাস নিয়ে দাতে দাত চেপে বলল

— তোমার আমাকে ভিখারি মনে হয় বাবু! আমাকে চেনো না? হু? আমি কাওকে ভয় পাই? আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে আমাকে ধ্বংস করার? আর বাকি রইলো মিসেস শিকদারের কথা,তাকে নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। মরলো কি বাচলো আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু তোমাদের কি হবে জান? আমি তো তোমাদের ছোট ছোট পিস করবো। তখন তোমাদের কে বাচাবে সোনা? এর চেয়ে ভালো তাদের ঠিকানা টা আমাকে দিয়ে দাও বাবু। (ঠোঁট উচু করে চুমু দেখিয়ে)

লারা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে রইলো আশিয়ানের দিকে। তার বাবার অবস্থা করুণ। মনে হয় না বেশিক্ষণ বেচে থাকবে।

আশিয়ান লারা কে চুপ থাকতে দেখে আফসোসের স্বরে বলল,

— ভাইয়ের হাতের আদর খেতে চাইছো বুঝি? আহা সোনা! আমি ও কিন্তু কম আদর করতে জানি না। টেস্ট করতে চাও?

~~

আশমিন আই সি ইউর সামনে দাড়িয়ে আছে। সুখ কে সামলানো মুশকিল হয়ে পরেছে তাদের জন্য। মায়া বেগম থাকলে অবশ্য সুখকে সামলাতে পারতো। আশমিনের বুক ভাড় হয়ে এলো মায়া বেগমের কথা মনে হতেই। এই মানুষ টাকে সে অকারণেই ভালবাসে। মানুষ টাও তাকে আগলে রেখেছিলো নিজের ছেলের মতো। আজ সেই মানুষটাই নেই। সুখ কে লুবানা সামলাচ্ছে। আজ সকালে সে কানাডা থেকে ফিরেছে। আরো কিছুদিন থাকার কথা ছিল।কিন্তু এই পরিস্থিতি তে সে কোন ভাবেই দূরে থাকতে পারে নি। লুবানা তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে গিয়ে বসলো। আশমিন নূরের কেবিনের সামনে এখনো দাঁড়িয়ে। আমজাদ চৌধুরী এখন মোটামুটি সুস্থ।তাকে নরমাল কেবিনে সিফট করা হয়েছে। কিন্তু নূরের অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। আশমিন নূরের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় আছে। লারার সাথে কথা বলা আর না বলা সমান সে জানে। উপরমহলের কারোর হাত আছে এতে সে নিশ্চিত। তারা মাফিয়াদের ব্যবহার করেছে তারা। তার জালে সবগুলো আটকে। শুধু জাল গুটিয়ে আনার অপেক্ষা। ততক্ষণ তারা নিজেদের মুক্ত ভেবে সাতার কাটতে থাকুক। এখন পরিবার থেকে এক মুহুর্ত ও দূরে থাকা সম্ভব নয়। সব সময় সে এখানেই থাকবে। তার আপন মানুষ গুলো চোখের সামনে রাখবে সবসময়। হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য সর্বত্র র‍্যাব আর ডিবি সদস্যদের মোতায়ন করা হয়েছে। তবে আশমিন কাওকে ভরসা করছে না।সর্ষের মধ্যেই ভুত আছে। তাই হাসপাতাল থেকে একপা ও নড়ছে না সে। পরিবার ই যদি না থাকে প্রতিশোধ নিয়ে কি হবে! সবগুলো কে হাজার ভাগ করলেও তো তাদের ফিরে পাওয়া যাবে না।

— স্যার লারার বাবা মা*রা গেছে।

আশমিন কিছু বললো না। দরজার ছোট্ট গ্লাস দিয়ে নূরের উপর চোখ রেখেই বললো,

— টু*করো টু*করো করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দাও। অবশ্যই লারার সামনে করবে।

সানভি দেড়ি করলো না। দ্রুত প্রস্থান করলো। অমি পাখির কাছেই সারাদিন থাকে। দুই ঘন্টা অফিস সামলে বাকি সময়টা পাখির কেবিনেই কাটিয়ে দেয়। নূরের জন্য এখন আশমিন আছে। সে ও প্রয়োজনে সাহায্য করে আশমিন কে। রাতে আশমিন দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে পাখির কেবিনে শুয়ে পড়ে।পাখির বেড অবশ্য আলাদা। সবার সময় গুলো দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

আশমিন আগের থেকে আরো বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। যাদের সাথে তার মনের কথা গুলো খুলে রাখে তারা কেউ ই তো কথা বলার অবস্থায় নেই। এখন আশমিনের সামনে একটা শব্দ করতেও সবাই ভয় পায়।

পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী আশমিনের বাসায় কয়েকজন মাফিয়া এক হয়ে প্ল্যান মাফিক আক্রমণ করেন। আশমিনের জন্য তাদের কয়েকশ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকেই তারা আশমিনের পরিবারের উপর আক্রমণ করে। সিকিউরিটি তে থাকা কয়েকজন পুলিশ কে হাত করে বাড়ির ভিতরে ঢুকে তারা। জড়িত থাকা পুলিশ সদস্যরা বাকিদের খাবারের সাথে বিষ দিয়ে মেরে ফেলে। কয়েকজন বাচলেও সবাই বাচতে পারেনি। ওই নারী চক্র কে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের রিপোর্ট শুনে আশমিন কিছু বললো না। ইশারায় তাদের বেরিয়ে যেতে বলল। অমি ক্লান্ত গলায় বলল,

— ওদের পুলিশ কাস্টাডিতে রাখা যাবে না স্যার। কামিনী ম্যামের বিষয় টা তাহলে সামনে চলে আসতে পারে।

আশমিন চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইলো। এর মধ্যেই একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো,

— স্যার,,ম্যামের জ্ঞান ফিরেছে।

আশমিন দ্রুত পায়ে চলে গেলো নূরের কেবিনে। নূর চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে। কয়েকদিনে পুতুলের মতো মুখটা কেমন কালো হয়ে গেছে। কেউ দেখলে বলবে না এই মেয়েটা দুধের মতো ফর্সা। আশমিন নিচু হয়ে নূরের কপালে চুমু খেলো। নূরের চোখের দিকে তাকিয়ে আস্বস্ত গলায় বলল,

— আমাদের মেয়েরা ঠিক আছে। এখন শুধু তুমি ঠিক হয়ে যাও। আমি তোমার চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছি বউ।

নূর ঠোঁট হালকা বাকা করে ফেললো। কপালে ভাজ ফেলে পুনরায় চোখ বুজে রইলো। শরীর ব্যথায় অবশ হওয়ার জোগাড়। কথা বলার অবস্থায় নেই। নাহলে দু কথা শুনিয়ে দিতো।

আশমিন একটা চেয়ার টেনে নূরের হাত ধরে বসে পরলো। পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে নূরের হাতটা নিজের গালে লাগিয়ে বসে রইলো।

— নূর (কোমল স্বরে)।

নূর নিজের চোখ দুটো টেনে খুলে আশমিনের দিকে তাকালো। আশমিন শান্ত চোখে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।

— আমি খুব অভাবি নূর। একেবারে ভিখারির মতো অভাবি।আমার জীবনে ভালবাসা, স্নেহ,যত্ন এগুলো করার মতো কখনোই কেউ ছিল না। আমি বড্ড লোভী জানো? আমার একটা পরিবারের বড় লোভ নূর। ভালবাসার কাঙ্গাল আমি। আগে আমার কোন পরিবার ছিল না। এখন তোমরা আছো। তুমি আছো,আমার মেয়েরা আছে। তোমাদের ছাড়া আমি শূন্য বরাবর। আমার জন্য হলেও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। কষ্ট হবে।যন্ত্রণা হবে। তুমি মনের জোর হারিয়ে ফেলো না। আমি আছি তোমার পাশে।তুমি আমার ভালবাসা,আমার স্বপ্ন, আমার বাবুদের আম্মু। আমার তোমাকে চাই।আমার বুকে চাই। খুব দ্রুত টুইনস ছেলের বাবা হতে চাই। আমার প্রেম পেলে আমি কি করবো বলো? তুমি ছাড়া কি আমার আর কেউ আছে? দুই সেকেন্ডের জন্য অক্সিজেন মাক্সটা খুলে একটা চুমু খাবো।রাগ করো না। নিঃশ্বাস টা একটু আটকে রাখো বউ। আজ আটদিন হয়ে গেছে চুমু খাই না।
#ইট_পাটকেল
#সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_৪২

আশমিন সত্যি সত্যি ই অক্সিজেন মাক্স খুলে নূরের ঠোঁটে চুমু খেলো। নূর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো আশমিনের দিকে। আশমিন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে মাক্সটা আবার ঠিকঠাক লাগিয়ে দিলো। নূরের কপালে চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বললো,

— চিন্তা করো না। তুমি খুব তারাতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমরা সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছি। তোমার সুখ পাখি তোমার পথ চেয়ে বসে আছে নূর। সুস্থ হয়ে আমাদের কাছে ফিরে এসো। আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।

আশমিন কথা শেষ করে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেই একজন নার্স এসে নক করলো। আশমন ভ্রু কুচকে তাকালো সেদিকে। নার্সটি কাচুমাচু করে বললো,

— স্যার ডক্টর চেকআপ করতে আসবে এখন। ম্যাম কে ড্রেসিং করতে হবে।

আশমিন অসহায় চোখে তাকালো নূরের দিকে। নূরের যন্ত্রণার কথা চিন্তা করে তার বুকের ব্যথা বাড়তে লাগলো। ডক্টর তাকে টেনশন করতে পুরোপুরি নিষেধ করেছে। অথচ তার মাথায় দেশের টেনশন, জনগণের টেনশন,দলের টেনশন,বউয়ের টেনশন,বাবা আর মেয়েদের টেনশন। মন্ত্রী হয়ে সে টেনশন করবেনা এটা কিভাবে হতে পারে! আশমিন সব চিন্তা বাদ দিয়ে নূরের দিকে গভীর চোখে তাকালো৷ যন্ত্রণায় নীল হয়ে যাওয়া মুখটায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় বললো,

— ভয় পেয় না বউ। খারাপ সময় কেটে যাবে। যন্ত্রণা কমে ঘা ও শুকিয়ে যাবে। তবে যারা এইকাজ করেছে তারাও এই পৃথিবী থেকে উধাও হয়ে যাবে। আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে। আমাদের দিকে তাকিয়ে এই খারাপ সময় টুকু সহ্য করে নাও। বিশ্বাস করো, যদি সম্ভব হতো তাহলে তোমার সকল যন্ত্রণা আমি নিয়ে নিতাম। তোমাকে এভবে দেখা আমার কাছে এর চেয়ে হাজার গুন বেশি যন্ত্রণার।

নূর মলিন হাসলো। চোখ বুজে আশমিন কে আশ্বস্ত করলো সে ঠিক আছে।

আশমিন নূরের কপালে আরেকবার চুমু খেয়ে কেবিন ত্যাগ করলো। নূরের কষ্ট সহ্য করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে থাকলে হয়তো নিজেই আবার অসুস্থ হয়ে যাবে।

আশমিন আমজাদ চৌধুরীর কেবিনে ঢুকে তার বেডের পাশে বসে পরলো। আমজাদ চৌধুরী আধসোয়া হয়ে বসে আছে। আশমিন কে দেখে নড়েচড়ে বসলো আমজাদ চৌধুরী। আশমিন আমজাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলল,

— কেমন আছো আব্বু?

আমজাদ চৌধুরী শান্ত গলায় বললো,

— ভালো।

আশমিন তপ্ত শ্বাস ফেললো। দৃষ্টি নিচের দিকে রেখে মলিন গলায় বলল,

— মায়া আন্টির দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে আব্বু৷ বডি ডিকোমপোজড হওয়া শুরু হয়েছে।

আশমিনের কথা শুনে আমজাদ চৌধুরী চমকে তাকালেন। সবার সুস্থতার খবর পেলেও মায়া বেগমের কোন খবর কেউ তাকে বলে নি। আমজাদ চৌধুরী সানভির কাছে জানতে চেয়েছিল কয়েকবার।সানভি বারবার এড়িয়ে গেছে।

— খারাপ লাগছে আব্বু?

আমজাদ চৌধুরী নিজেকে সামলে চোখ সরিয়ে নিলো। তার খারাপ লাগছে মায়া বেগমের জন্য।

— লাগা উচিত। সত্যিকার অর্থে স্ত্রী সে ই ছিল তোমার। মিসেস চৌধুরী ছিল নামে মাত্র। অথচ দেখো,মিসেস চৌধুরী তোমার সাথে যা করেছে তুমিও ঠিক একই কাজ মায়া আন্টির সাথে করলে৷ সে তার স্বামীর বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ নিয়েই দুনিয়া ছেড়েছে। অন্তত পক্ষে তার জন্য দু ফোটা চোখের পানি ফেলতে পারো। বাড়িতে একটা কুকুর থাকলেও মানুষের তার উপর মায়া জমে যায়। তিনি একজন মানুষ ছিলেন আব্বু। আমরা তাকে ভালবাসা তো দূর। একজন মানুষ হিসেবে সম্মান টুকু ও করতে পারিনি। অথচ আমাদের জন্য সে নিজের জীবন টা দিয়ে দিলো! এতো ঋণ কিভাবে শোধ করবো আব্বু?

আমজাদ চৌধুরী নিশ্চুপ হয়ে আছে। কিছু বলার নেই তার। সে মায়া বেগমের সাথে কখনো ভালো করে কথাও বলেনি। সব সময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। অথচ মায়া বেগম তার সব দায়িত্ব পালন করেছে। তার বকার আগেই সব কিছু তার সামনে হাজির করেছে। অথচ তার পরিবর্তে সে বার বার তাকে অপমান করেছে।

আশমিন আর কিছু বললো না। নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। আশমিন বেরিয়ে যেতেই আমজাদ চৌধুরীর চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি বেরিয়ে এলো।

আশমিন অমি কে নিয়ে বেরিয়ে গেল আশিয়ানের আস্তানার দিকে। আশিয়ান নাফিসা শিকদারের খোজ পেয়েছে কাল। আজ আশমিন যাবে সেখানে।

কোন রকম সিকিউরিটি ছাড়া সবার চোখের আড়ালে বেড়িয়েছে আশমিন। যেখানে যাবে সেখানে সরকারি সিকিউরিটি নেয়া মানে শত্রুর কানে নিজ দায়িত্বে খবর পৌঁছে দেয়া। আশমিন বেরিয়ে যেতেই অমি সামনে দিয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো।

আশিয়ান সিগারেটে টান দিয়ে লারার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উচু করলো। লারার অবস্থা পানি বিহীন মাছের মতো। দুই দিন গলায় খাবার তো দূর পানিও জোটেনি। আশিয়ান সিগারেট নিচে ফেলে পা দোলাতে লাগলো। তার যখন মেজাজ খারাপ থাকে তখন সে অস্বাভাবিক ভাবে পা দোলায়। আশিয়ান পা থামিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

— শোন জান,,আমি তোমাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। ভাই আসছে বুঝলে? ভাই যখন তোমাকে আদর করবে আমার কিন্তু তখন সহ্য হবে না। আমি আবার খুব পজেসিভ। রেগে তোমাকে একটু মা*রধর করলে রাগ করবেনা কিন্তু। ঠিক আছে সোনা?

লারা নিভু নিভু চোখে তাকালো আশিয়ানের দিকে। আশিয়ান সিরিয়াস ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। যেন প্রেমিকার প্রতারণার অপেক্ষায় আছে। কখন প্রেমিকা প্রতারণা করবে আর কখন সে হাত চালাবে।

— তুমি আমার ভালোবাসা বুঝলা না জানস। (শয়তানি হেসে)

ঠিক আধঘন্টা পরে আশমিন এসে হাজির হলো দ্রুত পায়ে এসে সোজাসুজি লারার সামনে বসে পরলো। লারার জ্ঞান নেই। আশমিন বিরক্ত হলো। হাক ডেকে সানভি কে ডাকলো,

— সান,,,বেইবি কে তুলে দাও। কতো দিন তার সুরেলা গলায় কথা শুনি না। শুনতে ইচ্ছে করছে তো।

সানভি ক্লান্ত পায়ে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে এলো। লারার বাবার লাশ গুম করে এখানেই থেকে গিয়েছে সে। আশিয়ানের বিশ্বাস নেই। কখন আবার লারা কেও মে*রে দেয় ঠিক নেই। আশিয়ান কে তার সুস্থ মানুষ মনে হয় না। অনেকটা সাইকো ভাব আছে তার মধ্যে।

সানভি ঢুলু ঢুলু পায়ে এক বালতি পানি এনে লারার দিকে ছুড়ে মারলো। কয়েক সেকেন্ড পর লারা পিটপিট করে চোখ খুললো।

— লারা বেইবিইইই!এ কি অবস্থা তোমার? আহা! কি নির্দয় ওরা। তাই বলে এভাবে মারবে? গালের একপাশে তো এখনো দাগ ই পরেনি ভালো করে।
বলতে বলতেই ঠাটিয়ে এক চড় বসালো মহিলা গার্ড। আশমিন তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। হাসিহাসি মুখ করে বললো,

— এ জন্যই তোমাকে এতো ভাল লাগে জেনি। না বলতেই সব বুঝে যাও।

অমি নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করছে। আশিয়ান নিজের আধখাওয়া কোল্ডড্রিংকের ক্যান টা এগিয়ে দিলো। অমি সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। চোখ লারার উপর স্থির রেখেই হাত বারিয়ে ক্যান টা নিলো। লারার ঠোঁট ফেটে র*ক্ত বের হচ্ছে। আশমিন চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে লারার দিকে। শুভ্র মুখ খানা লাল হতে শুরু করেছে। লারার অবস্থা প্রচন্ড খারাপ। আশমিন তিন আঙুলের সাহায্যে লারার গাল চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বললো,

— তোর সাথে আর কে ছিল ? সোজাসাপটা জবাব দিবি।কোন হাংকিপাংকি না। নাহলে তোকে জ্যন্ত টুক*রো টুক*রো করবো। মাইন্ড ইট।

লারা শুধু ঠোঁট নেড়ে কয়েকজন পুলিশ আর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী গোলাম ইশতিয়াকের নাম বললো। আশমিন লারার গাল ছেড়ে দিলো। আশিয়ানের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বললো,

— একে জ্যন্ত পু*তে দে। কার কলিজায় হাত দিয়েছে তা ওকে প্রতি মুহুর্তে বুঝিয়ে দিবি।

আশিয়ান মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো। সানভি আর অমি নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে। আশমিন সানভি কে আশিয়ানের সাথে থাকতে বলে অমি কে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

গাড়ি তে বসে রাগে ফুসছে আশমিন। সবগুলো কে নিজ হাতে কাফন পড়াবে সে। অমির দিকে তাকিয়ে নিজের পরিকল্পনা ঠিকঠাক ভাবে বুঝিয়ে দিলো আশমিন। অমি সহজ গলায় বলল,

— তারা সবাই খুব বড় মাপের মানুষ স্যার। ঝামেলা হতে পারে। আপনি এখনো শপথ গ্রহন করেন নি। একটু অপেক্ষা করা যেত না?

— না অমি।শত্রুকে বাচিয়ে রাখতে নেই। সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে আসবে। এবার নাহয় তাদের বিনাশ হোক। প্রশ্ন যখন পরিবারের আশমিন জায়িন চৌধুরী তখন ক্ষমতার ধার ধারে না।

চলবে,

(।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here