#চৈত্রের_বিকেল
#পর্ব_৮ (অন্তিম পর্ব)
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
________________
‘এত ভালো কেন দেখতে বল,
তোকে পেলে দুনিয়া অচল।
আমি জেগে থাকি তোরই জন্যে রোজ।
ধীরে ধীরে ধরা পড়বি আয়
তোকে বেঁধে নেব ইশারায়,
কি যে অবস্থা আমার একটু বোঝ!
আজই মনটা থাকে,
তোরই আঁকে-বাঁকেতে
তিলে তিলে যায়, মরে কি বেঘোরে,
তোকে বলে বোঝানো দায়!
হাওয়ারা চুপি চুপি কানে বলে গেলো তুই আমার,
ফেরারি মন কেন শুধু বলে তুই আমার।’
কাব্যর গান গাওয়া শেষ হলে চৈত্রী আড়চোখে একবার তাকাল। কেমন জানি লজ্জা লাগছে তার। কাব্যর চোখেমুখে এক রকম মাদকতা রয়েছে। চেত্রী স্পষ্ট খেয়াল করেছে এটা। দমকা হাওয়ায় চুলগুলো উড়ে মুখের ওপর এসে বিরক্ত করছিল ভীষণ। চৈত্রী চুলগুলোকে কানের পিঠে গুঁজে দিলো।
কাব্য বাধা দিয়ে বলল,’চুলগুলোকে আটকাচ্ছ কেন? ওদের উড়তে দাও।’
‘বিরক্ত লাগছিল।’
কাব্য হাসে। মুচকি হেসে বলে,’সে তো প্রথম প্রথম আমাকেও তোমার বিরক্ত লাগত। মানিয়ে তো নিয়েছ তাই না?’
‘এমনভাবে বলছেন কেন? আপনি বিরক্ত করতেন বলেই তো বিরক্ত লাগত।’
‘আচ্ছা বেশ, মানলাম। এখনও কি বিরক্তিকর আমিটাকে বিরক্ত লাগে তোমার?’
‘উঁহু!’
‘চৈত্র তুমি ভীষণ কিপটে জানো?’
চৈত্রী চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে তাকাল কাব্যর দিকে। চোখের ভাষায় উত্তর পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা। কাব্য সামনে দৃষ্টি রেখে বলল,
‘সকালে হাতটা ধরতে চাইলাম। দিলে না। এখন গানের ভাষায় নিজের মনের কথা জানালাম, সেখানেও কোনো রেসপন্স করলে না। তুমি এমন কেন?’
কথাগুলো বলা শেষ করে পাশে বসে থাকা চৈত্রীর দিকে তাকাল কাব্য। চৈত্রী এতক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার সে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েছে। দুজনে বর্তমানে আছে বিশাল নদীর বুকে, নৌকার মাঝে। মাঝি তার দক্ষ হাতে বৈঠা চালাচ্ছে। নীরব, শীতল নদীর বুকচিরে বয়ে চলেছে ডিঙি নৌকাটি। বিকেলের শীতল বাতাসে মনোরম পরিবেশটিকে আরও মোহনীয় করে তুলেছে সময়। সকালে চৈত্রী হাত বাড়াতে গিয়েও পারেনি। সেই সময়েই রুহানিয়া, জিহাদ আর তিতাস চলে এসেছিল। কাব্যর আবদার বেমালুম ভুলে গিয়ে চৈত্রী দৌঁড়ে গিয়ে রুহানিয়াকে জড়িয়ে ধরেছিল। বাড়ি ফেরার পথেও কাব্যর সাথে তেমন করে কোনো কথা হয়নি। বাড়িতে আসার পর চৈত্রীর সেটা খেয়াল হয়েছে এবং আর কোনো কিছু না ভেবেই সে কাব্যকে ফোন করেছিল।
ছোট্ট আবদারটিকে উপেক্ষা করে যাওয়াতে কাব্যর ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। একটু আধটু অভিমানও হয়েছিল বৈকি। কিন্তু সে তো আর চৈত্রীর মতো তার অভিমানগুলো বুঝিয়ে দিতে পারে না। মন খারাপ করে বসে থাকতে পারে না। তাই যতটা পেরেছে পথে সবার সাথে স্বাভাবিক থেকেছে। হেসে কথা বলেছে। এমনকি জ্বরও তখন তাকে কাবু করতে পারেনি। তবে তার মন বলছিল বাড়ি ফিরে চৈত্রী নিশ্চয়ই তাকে ফোন করবে। তার মনের কথা সত্যি হয়। সত্যিই চৈত্রী তাকে ফোন করেছিল। যার দরুণ কাব্যর ঠোঁটের কোণে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছিল। দুজনেই কথা বলে ঠিক করেছিল আজ বিকেলে দেখা করবে।
চৈত্রী মনে মনে অতীতের কথাগুলো ভাবছিল। এবার সে জিন্স হাঁটুর নিচ অব্দি ভাঁজ করে নিয়ে পানিতে পা নামাল। কাব্য আঁৎকে উঠে বলল,
‘কী করছ?’
চৈত্রী কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলল,’ভয় পাচ্ছেন কেন? পানিতে নামব না।’
‘যদি পড়ে যাও? পা উঠিয়ে বসো।’
‘পড়ে গেলে আপনি তুলবেন।’
‘সবসময় মজা ভালো লাগে না চৈত্র। প্লিজ পা উঠিয়ে বসো। নৌকা দুলছে দেখেছ? প্লিজ চৈত্র!’
চৈত্রী কাব্যর কপালে হাত রেখে বলল,’ওমা! এমন করছেন কেন? জ্বর বেড়েছে বুঝি?’
কাব্য স্তব্ধ হয়ে গেল। এমনভাবে চৈত্রীর আদুরে ছোঁয়া সে প্রথম পেল। পিঠের মেরুদণ্ড দ্বারা মনে হলো শীতল এক হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর ঢিপঢিপ আওয়াজ হচ্ছে। অজানা এক ভালোলাগার সমুদ্রের অতলে ডুবে যাচ্ছে সে। স্থির দৃষ্টি চৈত্রীর মুখের দিকে নিবদ্ধ। কাব্যর খুব করে ইচ্ছে করছিল চৈত্রীর হাস্যোজ্জ্বল দু’চোখের পাতায় হালকা করে চুমু খেতে। ততক্ষণে চৈত্রী হাত সরিয়ে নিয়েছে। কল্পনার রাজ্য থেকে কাব্য তখনও নিস্তার পায়নি। চৈত্রী দুষ্টুমি করে পানি ছিটিয়ে দিলো কাব্যর মুখে। কাব্য হকচকিয়ে উঠে। কিছু বলার পূর্বেই দেখে চৈত্রী পানি থেকে এখনও পা উঠায়নি। উলটো পানিতে পা দিয়ে ঝাপাঝাপি করছে। এতে পানিতে অদ্ভুত ঝুপঝুপ, কলকলানির মতো শব্দ হচ্ছে। চৈত্রীকে এভাবে প্রাণোচ্ছল দেখতে যেমন ভালো লাগছিল, তেমনই পানির এই অদ্ভুত শব্দও ভালো লাগছিল। এত ভালোলাগার মাঝেও কাব্যর মনের ভয় কাটেনি। সে বারবার অনুনয় করে বলছে,
‘প্লিজ পা উঠিয়ে বসো না চৈত্র! কেন কথা শুনছ না?’
চৈত্রী তখনও পা দিয়ে পানিতে শব্দ করছিল। এবার সে নিজের একটা হাত কাব্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
‘এতই যখন ভয়! ঠিক আছে, আপনি তবে আমার হাত ধরে রাখুন। তাহলে নিশ্চয়ই আমার আর পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না?’
চৈত্রীর নিঃসঙ্কোচে বলা কথাগুলোর মাঝে বারবার তলিয়ে যাচ্ছিল কাব্য। তবে সুযোগ হাত ছাড়া করল না। শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় চৈত্রীর হাত চেপে ধরে বসে রইল। নিজের প্রাণের বিনিময়ে হলেও এই মেয়েটিকে তার আগলে রাখতে হবে। কাব্যর এমন নিস্তব্ধতায় চৈত্রী মুচকি হেসে বলল,
‘আচ্ছা তখন জিজ্ঞেস করলেন আমি এমন কেন! আমি আসলে কেমন?’
‘তুমি জানো না?’
‘উঁহু!’
‘তুমি একটা নিরামিষ।’
‘তাই? তাহলে আর উপায় কী?’
‘উপায় একটাই।’
‘শুনি কী উপায়?’
‘আমায় বিয়ে করে নাও। তোমায় আমিষ বানানোর দায়িত্ব আমার।’
‘কী!’
কাব্য ভয় পেয়ে যায়। চৈত্রী এমন রিয়াক্ট করছে কেন? আবার রেগে না যায় মেয়েটা! সে কথা পালটে বলল,
‘আরে মজা করেছি।’
বরং এবারই যেন চৈত্রীর মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। সে নতমুখে বলল,
‘মজা করে বলেছেন?’
কাব্য পড়ল বিপাকে। সে না জানি কী বলবে আর চৈত্রী যে কেমন রিয়াক্ট করবে। তাই সে চুপ করে থাকাকেই শ্রেয় মনে করল। চৈত্রী ফের বলল,
‘চুপ করে আছেন কেন? আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি।’
‘তুমি এমন রিয়াক্ট করছ কেন?’
‘আমি কোনো রিয়াক্ট করিনি। আপনি বলুন।’
‘কী বলব?’
‘আমি যা জানতে চেয়েছি।’
‘তুমি কী জানতে চেয়েছ?’
চৈত্রী অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,’মজা করছেন আপনি আমার সাথে?’
‘তা একটু করছি অবশ্য।’
চৈত্রী হাত ছাড়িয়ে নিলো কাব্যর হাত রেখে। রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ তার। পানিতে ঝাপ দেবে কিনা বুঝতে পারছে না। ঝাপ দিলে মৃ’ত্যুও হতে পারে। কারণ সে সাঁতার জানে না। চৈত্রীর হুট করে এমন রেগে যাওয়াতে কাব্যও ভয় পাচ্ছে। জেদের বশে সত্যি সত্যিই আবার পানিতে না ঝাপ না দেয়! কাব্য একটু এগিয়ে গিয়ে চৈত্রীর কাছে বসল। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চৈত্রীর দু’হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিল। থুঁতনি রেখেছে চৈত্রীর কাঁধে। মুহূর্তেই যেন জমে গেল চৈত্রী। একটু আগে মাথায় আসা উলটা-পালটা সকল চিন্তা যেন হঠাৎ করেই তল্পিতল্পা নিয়ে কোথায় পালিয়ে গেছে।
কাব্য মিহিকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,’আমার বউ হবে চৈত্র?’
চৈত্রী ঘাড় ঘুরিয়ে একবার তাকাল কাব্যর দিকে। কেন জানি তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এ কান্না দুঃখের নয়; সুখের। কতশত ভালোবাসার প্রস্তাব সে পেয়েছে। কতভাবেই না একেকজন প্রপোজ করেছে। কিন্তু কাব্যর মতো এমন করে কেউ কখনো বলেনি ‘আমার বউ হবে চৈত্র?’ ইশ! ছোট্ট একটা লাইন। কিন্তু মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সকল সুখ, আনন্দ, উচ্ছ্বাস কেবল মাত্র এই লাইনটিতেই আটকে আছে। সে তার চোখের পানি সংবরণ করতে পারল না। টুপ করে দু’ফোটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়ল কাব্যর হাতে।
চৈত্রী মুখে কোনো উত্তর দেয়নি। তবে কাব্য তার উত্তর পেয়ে গেছে। সে চৈত্রীর মাথায় আলতো করে চুমু খেয়ে বলল,
‘আজকের বিকেলটা আমি তোমাকে উৎসর্গ করলাম চৈত্র। আজকের বিকেলটা শুধুই তোমার নামে। চৈত্রের বিকেল!’
ভালোলাগা, ভালোবাসার আবেশে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছে চৈত্রী। সে কোনো রকম কথা বলল না। নৌকায় ঘোরা শেষ করে অন্য কোথাও যায়নি আর। বাড়িতে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বের হয়েছিল। দেরি হয়ে গেলে সমস্যা হতে পারে। কাব্য চৈত্রীকে বাড়ির একটু আগ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে। যতক্ষণ চৈত্রীকে দেখা গিয়েছে ততক্ষণ দাঁড়িয়েই ছিল। শেষ সীমানায় গিয়ে চৈত্রী একবার পিছু ফিরে তাকায়। চোখে-মুখে লাজুকতার হাসি। তারপর দৌঁড়ে চলে যায় বাড়ির ভেতর। কাব্য নিজেও মুচকি হাসে চৈত্রীর এহেন অবস্থা দেখে।
.
.
বাড়িতে ফিরে বাবার মুখোমুখি হতে হয় চৈত্রীকে। তখনও তার চোখে-মুখে হাসির ছোঁয়া। বাবার থমথমে মুখটা দেখে হাসি কিছুটা নিভল। কেমন যেন ইতস্তত ভাব। বাবাকে এড়িয়ে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় চৈত্রী। সে সময়ে বাবার গম্ভীর কণ্ঠস্বর শুনে দাঁড়িয়ে পড়ল চৈত্রী।
‘এদিকে আসো।’ বললেন আনিস ইসলাম।
চৈত্রী বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মাথা নত তার। ভয় ভয় হচ্ছে। সামনের সোফায় বসে আছেন আনিস ইসলাম। কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে জেসমিন বেগম আর রুহানিয়া।
আনিস ইসলাম মেয়ের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলেন,’কোথায় গিয়েছিলে?’
‘প্রাইভেট পড়তে।’ মিথ্যেটা বলতে গিয়ে কণ্ঠস্বর কিছুটা কেঁপে উঠল চৈত্রীর।
আনিস ইসলাম ধমকে উঠলেন। হুংকার দিয়ে বললেন,
‘তোমাস সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমার সামনেই দাঁড়িয়ে তুমি অনায়াসে মিথ্যা বলে যাচ্ছ। একটুও ভয় করছে না তোমার?’
চৈত্রী ভয়ে কেঁপে ওঠে। জেসমিন বেগম তার স্বামীকে জিজ্ঞেস করেন,
‘কী হয়েছে? বকাবকি কেন করছ? ও তো প্রাইভেটেই গিয়েছিল।’
‘তুমি দেখেছ ও প্রাইভেট পড়তে গেছে? প্রাইভেটের নাম করে অন্য ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায়।’
জেসমিন বেগম এবং রুহানিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চৈত্রীর মাথা তখনও নত। চোখ দুটো ছলছল করছিল। আনিস ইসলাম আবার ধমক দিয়ে বললেন,
‘ছেলেটা কে?’
চৈত্রী কেঁদে ফেলে। কথা বলতে পারছে না কোনো। আনিস ইসলাম ফের বললেন,
‘কাঁদছ কেন এখন? আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। খবরদার! মিথ্যে কোনো গল্প শোনানোর চেষ্টা করবে না। আমি স্পষ্ট দেখেছি তুমি নৌকায় একটা ছেলের সাথে ঘুরছিলে। সেই ছেলেটা কে আমি জানতে চাচ্ছি।’
চৈত্রী প্রথমে মুখ না খুললেও পরে ধমকের পর ধমক খেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
‘কাব্য!’
‘কাব্য? মানে শুভ্রর বন্ধু?’
চৈত্রী উপর-নিচ মাথা ঝাঁকায়। তিনি রুহানিয়াকে বললেন চৈত্রীকে রুমে নিয়ে যেতে। এরপর কল দিলেন শুভ্রকে।
রুমে গিয়ে অঝোরে কাঁদতে থাকে চৈত্রী। রুহানিয়া ও-কে জড়িয়ে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে। তার নিজের মনেও অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কাব্যর সাথে চৈত্রীর সম্পর্ক হয়েছে অথচ এটা সে বুঝতেই পারেনি! জিহাদের ফোন আসে মিনিট দশেক পরে। চৈত্রীকে জড়িয়ে ধরে রেখেই ফোন রিসিভ করল রুহানিয়া। ওপাশ থেকে জিহাদ ব্যস্তভঙ্গিতে বলল,
‘বাড়িতে কি কিছু হয়েছে?’
রুহানিয়া উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করল,’কেন?’
‘চৈত্রীর বাবা শুভ্রকে ফোন দিয়ে অনেক রাগারাগি করেছে। অফিস ছুটির পর কাব্যকে নিয়ে বাসায় যেতে বলেছে। শুভ্র ফোন দিয়ে জেরা করে আমাদের সাথেও রাগারাগি করছে। কী হয়েছে তুমি কি জানো কিছু?’
‘সবটা জানিনা। চৈত্রী প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিল। মাত্র বাসায় ফিরেছে। কাকা নাকি দেখেছে কাব্যর সাথে নৌকায় ঘুরতে। চৈত্রীও স্বীকার করেছে। এরচেয়ে বেশি কিছু জানিনা। তুমি কাব্য ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো।’
‘কাব্য বাসায় নেই। আসতেছে। আসুক আগে। তারপর সবটা শুনছি।’
‘সন্ধ্যায় কি তোমরা আসবে?’
‘দেখি কাব্য আসুক আগে।’
‘ঠিক আছে।’
ফোন রেখে রুহানিয়া চৈত্রীকে শান্ত করার চেষ্টা করে চলেছে। তবে হ্যাঁ, কোনো রকম জেরা কিংবা প্রশ্ন করেনি। শান্ত হলে চৈত্রী নিজে থেকেই সবটা বলবে।
চৈত্রীর মুখে সবটা শোনার পূর্বেই কোনো রকম বলা কওয়া ছাড়াই মিনিট বিশেকের মধ্যেই বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়েছে শুভ্র, কাব্য, জিহাদ আর তিতাস। ওদের সামনে গম্ভীর হয়ে বসে আছেন আনিস ইসলাম। তিনি সরাসরি কাব্যর দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,
‘কবে থেকে আমার মেয়ের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক?’
কাব্য ভেতরে ভেতরে ভীষণ ঘাবড়ে গেলেও আনিস ইসলামের সামনে সহজ থাকার চেষ্টা করল। বলল,
‘আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়নি…’
‘মিথ্যে বলছ কেন? আমি নিজে দেখেছি তোমাদের নৌকায় ঘুরতে। নাকি ধরা পড়ে এখন সবকিছু অস্বীকার করতে চাইছ?’
‘জি না আঙ্কেল। আমি সম্পূর্ণ কথাটি এখনো বলতেই পারিনি। এ কথা সত্য যে, আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক হয়নি। তবে আমি চৈত্রীকে ভালোবাসি।’
‘চৈত্রী তোমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোটো। এত মেয়ে থাকতে চৈত্রীকেই কেন তুমি ভালোবাসো? উত্তরটা আমি জানি, শুধুমাত্র টাইমপাস করার জন্য। তুমি শুভ্রর বন্ধু। সেই হিসেবে এই বাসায় তোমার যাতায়াত আমি সহজভাবেই নিয়েছিলাম। তাই বলে আমার মেয়ের সাথে ভালোবাসার নাটক করে ওর জীবনটা নষ্ট করে দেবে এটা তো একজন বাবা হয়ে আমি মেনে নেব না।’
কয়েক সেকেণ্ড নিরব থাকল কাব্য। তারপর দৃঢ়তার সঙ্গে বলল,’আপনার কেন মনে হচ্ছে আমি চৈত্রীর সাথে টাইমপাস করব? আমি সত্যিই ও-কে ভালোবাসি। আপনি যদি চান, যখন-তখন আমি ও-কে বিয়ে করতেও রাজি।’
‘চৈত্রী রাজি?’
এই পর্যায়ে কাব্য চুপ হয়ে যায়। বড্ড দোটানায় আছে সে। চৈত্রীর মনের ভাব সম্পর্কে অবগত সে। কিন্তু বাবার ভয়ে যদি চৈত্রী এখন রাজি না হয় তবে? এতসব অনিশ্চয়তা থাকার পরও কাব্য দমে গেল না। সে পূর্বের দৃঢ়তার সঙ্গেই বলল,
‘আমি জানিনা সঠিক। তবে ও রাজি হলে আমি সর্বদাই প্রস্তুত বিয়ের জন্য।’
‘তোমার বাবা-মাকে আনতে পারবে?’
কাব্য এক বাক্যে বলে দেয়,’হ্যাঁ।’
‘ঠিক আছে। তবে তাই হোক। দু’দিন সময় দিলাম তোমায়। তোমার বাবা-মাকে নিয়ে আমার বাসায় হাজির হবে। দেখি কতটুকু ভালোবাসো তুমি আমার মেয়েকে।’
‘দু’দিন সময় লাগবে না। আমি কাল সকালেই বাবা-মাকে নিয়ে আসব। আপনি যদি চান আজও সম্ভব। তিন ঘণ্টার মধ্যে হাজির হবো আমার পরিবারকে নিয়ে।’
আনিস ইসলাম কাব্যর এতটা কনফিডেন্স দেখে আর কী বলবেন বুঝতে পারছেন না। তিনি নিরবে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,
‘এত তাড়াহুড়া করার দরকার নেই। কালই নিয়ে আসো। ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিও।’
_______________
রাত্রি ১২টার বোধ হয় বেশিই বাজে। দু’চোখের পাতায় ঘুম নেই চৈত্রীর। কেঁদেকেটে চোখ দুটো ফুলিয়ে ফেলেছে। কাব্যর উপস্থিতি টের পেয়েও কাছে যেতে পারেনি। তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ জানেও না সে। শুধু রুহি আপুর থেকে শুনেছিল কাল নাকি কাব্য ওর পরিবারকে নিয়ে এই বাড়িতে আসবে। মনের ভেতর ভীষণ ভয় কাজ করছে। সত্যি সত্যিই কাব্য আসবে তো?
চিন্তার প্রহরের অন্তিম সময়ের পূর্বেই রুমের লাইট জ্বলে ওঠে। মাথা সামান্য উঁচু করে চৈত্রী দেখতে পায় জেসমিন বেগমকে। তার হাতে খাবারের প্লেট। রুমের লাইট জ্বলতে দেখেই বোধ হয় রুহানিয়া বারান্দা থেকে রুমে এসে। তার হাতে ফোন। হয়তো জিহাদ ভাইয়ার সাথে কথা বলছিল। চৈত্রী আবার শুয়ে পড়ল। জেসমিন বেগম তখন চৈত্রীর হাত টেনে বললেন,
‘উঠ। খাবি চল।’
চৈত্রী ভাঙা গলায় বলল,’খাব না।’
‘খাবি না মানে কী? খাবার কী দোষ করেছে?’
চৈত্রী চুপ করে রইল। টেবিলের ওপর খাবারের প্লেটটি রেখে মেয়েকে টেনে তুললেন জেসমিন বেগম। প্লেট হাতে নিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বললেন,
‘যত যা-ই হয়ে যাক না কেন, কখনো খাবারের সাথে রাগ করবি না। তাছাড়া এখানে তো অন্য কারও দোষ দেখছি না আমি। তুই আমায় মিথ্যে বলে প্রেম করতে যাস!’
চৈত্রীর গলা ধরে আসছে। চোখ ভারী হয়ে গেছে অশ্রুতে। জেসমিন বেগম ভাতের লোকমা মুখের সামনে ধরে বললেন,
‘কান্নাকাটি পরে করবি। আগে হা কর। হা কর বলছি!’
মৃদু ধমক শুনে খাবার মুখে নিলো চৈত্রী। সেই সাথে তার চোখ থেকে টপটপ করে পানিও পড়ছে। জেসমিন বেগম বললেন,
‘কাঁদছিস কেন? প্রেম করতে গেলে বাবা-মায়ের কাছে একটু-আধটু মিথ্যা বলা লাগেই। আমিও বলেছিলাম।’
চৈত্রী এবার একইসাথে অবাকও হলো। রুহানিয়াও এগিয়ে এলো কাহিনি কী শোনার জন্য। জেসমিন বেগম বললেন,
‘তোরা এভাবে কেন তাকিয়ে আছিস? তোর বাবার সাথে যখন আমার সম্পর্ক হয় তখন আমি অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলাম। তোর বাবা ছিল আমার মামাতো ভাইয়ের বন্ধু। সেখান থেকেই পরিচয়। তারপর ভার্সিটিতে দেখা, চিঠি আদান-প্রদান। মুঠোফোনে অল্পসল্প কথাবার্তা বলতাম লুকিয়ে লুকিয়ে। একদিন তো তোর মতোই বাবার কাছে ধরা খেয়ে গেলাম। সেকি বকাঝকা! তোর নানা ঐ মুহূর্তে আমায় অন্য জায়গায় বিয়ে দেবে বলে মনস্থির করল। আমার মামাতো ভাই তখন তোর বাবাকে এই খবর দিয়েছে। তোর বাবা তক্ষুনি আমার বাবার পায়ে ধরে আমায় ভিক্ষা চেয়েছে। কান্নাকাটি করেছে।’
এটুকু বলে থামলেন তিনি। চৈত্রী অস্ফুটস্বরে বলল,’তারপর?’
‘তারপর আর কী! বাবা রাগী হলেও মন নরম ছিল। তোর বাবার কান্নাকাটিতে গলে গেছিল। পরে দুই পরিবার মিলে পরেরদিনই আমাদের বিয়ে দিয়ে দেয়। আমার কী মনে হয় জানিস? তোর বাবাও বোধ হয় এটাই করবে।’
ঘটনা ঘটল ভিন্ন। সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল চৈত্রী। সেই সময়ে গম্ভীরভাবে রুমে প্রবেশ করলেন আনিস ইসলাম। একবার মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। বললেন,
‘আজ তোমার কলেজে যেতে হবে না।’
কেন যেতে হবে না এই প্রশ্নটি চৈত্রী মনে মনে করলেও মুখে করতে পারল না। সে নিরবে হিজাবের পিন খুলছিল। কাব্য কি আজ সত্যিই আসবে কিনা জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল খুব। গতকাল বাবা ফোন নিয়ে গেছে। কাব্য বেশ কয়েকবার রুহানিয়াকে ফোন করেছিল রাতে। চৈত্রী ঘুমিয়ে থাকায় আর জাগাতে বলেনি। সে কলেজের ইউনিফর্ম বদলানোর জন্য রুমের দরজা লাগাচ্ছিল তখন আনিস ইসলামের কণ্ঠে শুনতে পেল,
‘আমি ঠিক করেছি, চৈত্রীকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেবো।’
কাঁধে কারও স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকাল চৈত্রী। রুহানিয়া আশ্বস্ত করে বলল,
‘ভেঙে পড়িস না। কাব্য ভাইয়া আসতেছে।’
রুমের দরজা লক করতে করতে চৈত্রী বলল,’বাবা কী বলেছে শুনেছ?’
‘শুনেছি। বলুক। আগে কাব্য ভাইয়া তার পরিবার নিয়ে এখানে আসুক। কথাবার্তা বলে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবে।’
চৈত্রী নিরাশ হয়ে বলল,’বাবা বোধ হয় আমাদের সম্পর্ক মেনে নেবে না।’
বাড়ির সকলকে অবাক করে দিয়ে সকাল দশটা নাগাদ কাব্য ওর বাবা-মাকে নিয়ে চৈত্রীদের বাসায় আসে। সঙ্গে প্রতিবারের মতো এবারও জিহাদ, তিতাস আর শুভ্র রয়েছে। প্রথম প্রথম শুভ্র বিষয়টা মেনে নিতে পারেনি। রাগ করেছিল ভীষণ। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে মানতে বাধ্য হয়েছে। তাছাড়া কাব্য তার খুব কাছের বন্ধুর। ওর ভালো, খারাপ সবটাই জানা আছে। সেই হিসেব কষলে কাব্য অবশ্যই চৈত্রীর জন্য নির্ভরযোগ্য ছেলে। একজন ভাই হিসেবে বোনের জন্য এমন জীবনসঙ্গী কেউই পায়ে ঠেলে দেবে না। বন্ধুত্বের খাতিরে হোক কিংবা বোনের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই হোক; শুভ্র সত্যটাকে সমর্থন করেছিল। তাই সেও চায় কাব্যর জীবনে চৈত্রী আসুক।
জেসমিন বেগম আপ্যায়নের ত্রুটি করলেন না একদম। কাব্যর বাবা-মা ছেলের সাফাই গাইলেন না বরং চৈত্রীকে খুব করে চাইলেন। সাফাই যা গাওয়ার শুভ্র-ই গেয়েছে। আনিস ইসলাম খুব একটা কথাবার্তা বলেননি। তিনি যতটা পেরেছেন নীরবই থেকেছেন। দরজার আড়াল থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কথোপকথন শোনার বৃথা চেষ্টা করছিল চৈত্রী। এক পর্যায়ে আনিস ইসলাম কাব্যর বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন,
‘আমাদের মেয়ে এখনও বেশ ছোটো! মাত্র কলেজে উঠেছে। অভাব-অনটন তেমনভাবে আমাদের গ্রাস করেনি বলে মেয়েকে আমরা অনেকটা পুতু্লের মতো করেই বড়ো করেছি। এখন বিয়ের পরও যে পুতুলের মতো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে এটা তো হয় না। ও এখনও রান্নাবান্না, সংসারের কোনো কিছুই বোঝে না। জানে না। বুঝতেই পারছেন আমি কী বলতে চাচ্ছি।’
কাব্যর বাবা কবির রহমান বললেন,’ভাই সাহেব, আপনি যা বললেন তার সবই সত্য। কিন্তু আমরা তো শুধু আমাদের ছেলের জন্য বউ নিতে আসিনি। আমরা একটা মেয়েও নিতে এসেছি আমাদের জন্য। আমার দুই ছেলে। ছোটো ছেলে রাজশাহী থেকে পড়াশোনা করে। মেয়ের অভাব আমার সংসার জীবনের শুরু থেকেই। চৈত্রী হবে আমার বড়ো মেয়ে। আহ্লাদ, আদর কোনো কিছুরই কমতি আমরা রাখব না। তাছাড়া নিজের ছেলে বলেও বলছি না, এটা সত্যই যে আমার ছেলেদের মতো ছেলে হয় না। সত্য বলছি নাকি মিথ্যা বলছি যাচাই করার জন্য একদিন সময় করে আমার বাসায় চলুন। এলাকায়, লোকজনের থেকে খোঁজ-খবর নিন। যদি কোনো খারাপ রিপোর্ট পান আমার ছেলেকে আমি নিজে বলব চৈত্রীর জীবন থেকে সরে যেতে।’
শুভ্র কবির রহমানকে সমর্থন করে বলল,’আঙ্কেল কিন্তু ঠিক কথাই বলেছে কাকা। পড়াশোনার জন্য কলেজ লাইফ থেকেই আমি ঢাকায় থেকেছি। সেখান থেকেই কাব্য, জিহাদ, তিতাস আর আমি বন্ধু। একসাথে কলেজ লাইফ, ভার্সিটি লাইফ পার করেছি। এখন একসাথে একটা কোম্পানীতে জবও করছি। সেই হিসেব করতে গেলে আমিও কিন্তু ওদেরকে কম ভালো চিনিনা! কাব্য,জিহাদ যদি খারাপই হতো তাহলে নিশ্চয়ই আমি ভাই হয়ে চাইতাম না ওরা আমার বোনদের জীবনে থাকুক। আমি এতটুকু শিওরিটি দিতে পারি, রুহি কিংবা চৈত্রী বিয়ের পর কখনোই অসুখী হবে না। এখন বাকিটা আপনার ইচ্ছে কাকা।’
উত্তরের জন্য সম্মুখের প্রতিটি ব্যক্তি চাতক পাখির ন্যায় তাকিয়ে রয়েছে আনিস ইসলামের মুখের দিকে। তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না কী বলবেন। একটা সময়ে তিনিও ভালোবেসেছিলেন। তিনিও কাউকে হারানোর ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছিলেন। সেই মেয়েটিই আজ চৈত্রীর মা। তিনি জানেন, হারানোর ভয় কতটা প্রবল হয়। কীভাবে ভেতর থেকে একটা মানুষকে ভেঙেচূড়ে দিতে পারে। অতীতের সেই স্থানে আজ নিজেকে দাঁড় করিয়ে তিনিও পারলেন না কাব্যকে ফিরিয়ে দিতে। তিনি শুধু জেসমিন বেগমকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘চৈত্রী রাজি?’
জেসমিন বেগম হাসি মুখে মাথা দুলিয়েছেন। আনিস ইসলাম নড়েচড়ে বসে বলেন,
‘তাহলে আর কী! ছেলে রাজি, মেয়ে রাজি। ছেলের পরিবার রাজি। তাহলে মেয়ের পরিবার আর কী আপত্তি করবে?’
প্রত্যেকের চোখ-মুখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। তিনি কাব্যর হাস্যোজ্জ্বল মুখটির দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘তবে একটা কথা!’
কাব্য উৎসুক হয়ে জানতে চাইল,’কী কথা?’
‘বিয়ে হবে চৈত্রীর ইন্টার পরীক্ষা শেষ হলে। এখন শুধু এঙ্গেজমেন্ট হবে। যদি চৈত্রীর ইন্টারের রেজাল্ট খারাপ হয়, তাহলে কিন্তু এই বিয়ে ক্যান্সেল।’
কাব্য কনফিডেন্সের সাথে বলল,’আমার জন্য ওর পড়াশোনার কোনো ক্ষতি হবে না। ওর ভালো রেজাল্ট করার দায়িত্বও আমিই নিলাম।’
বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠল,’আলহামদুলিল্লাহ্।’
সবাই একসাথে মিষ্টিমুখ করল। আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো আগামী শুক্রবার ঘরোয়াভাবে শুধু নিকটস্থ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে এঙ্গেজমেন্ট হবে। রুহানিয়া যখন ঘরে গিয়ে চৈত্রীকে এই খবরটা দিলো চৈত্রী খুশিতে কেঁদেই ফেলেছে। বিশ্বাসই করতে পারেনি, বাবা এত সহজে সম্পর্কটা মেনে নেবে। মনের ভেতর রঙ-বেরঙের প্রজাপতি উড়ছে যেন!
কাব্যরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বাড়িতে খুশির ধুম পড়ে গেল। মনের খুশিতে চৈত্রী যখন একা একা লাফাচ্ছিল, নাচছিল তখন আনিস ইসলাম রুমে প্রবেশ করেন। বিব্রতভাব তার চোখে-মুখে। চৈত্রী তখনও ভয় পাচ্ছিল।
আনিস ইসলাম চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বললেন,’ঠিক আছে, আমি পরে আসছি।’
চৈত্রী বাধা দিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল,’পরে কেন আব্বু? এখনই আসো না!’
‘শিওর?’
‘হ্যাঁ।’
আনিস ইসলাম মেয়ের সামনে এসে দাঁড়ালেন। গম্ভীর মুখে এখন হাসির ছোঁয়া। চৈত্রীর মনটা আরও ভালো হয়ে গেল। তিনি চৈত্রীর মাথায় হাত রেখে বললেন,
‘তুমি খুশি তো?’
লজ্জায় হোক কিংবা ভয়ে হোক; চৈত্রী কোনো উত্তর দিতে পারল না। মাথা নত করে রাখল। আনিস ইসলাম মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘বাবাকে আর ভয় পেতে হবে না। আমি সবসময়ই চাই তুমি ভালো থাকো। তোমার হাসিতেই আমি প্রাণ খুঁজে পাই। জীবনে প্রথম ভালোবাসা হলেও তুমি কোনো ভুল মানুষের পাল্লায় পড়োনি; বরং সঠিক মানুষ খুঁজে নিয়েছ। তাই আমারও আর বাধা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। ভুল কাউকে ভালোবাসলে অবশ্যই আমি এই সম্পর্ক মেনে নিতাম না। এতে যদি তোমার চোখে খারাপও হতাম, তাতেও আমি এই সম্পর্কে রাজি হতাম না। ছেলে-মেয়েদের ভালোর জন্য মাঝে মাঝে খারাপ হতে আপত্তি নেই। সে যা হোক, ঐ খারাপ হওয়াটা আমার প্রয়োজন পড়েনি। তবে একটা কথা মা, পড়াশোনাটা ঠিকমতো কোরো। এমনকি বিয়ের পরেও পড়াশোনা নিয়ে কোনো রকম হেলাফেলা কোরো না। আমি অনেক মেয়ে দেখেছি যারা সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও শুধুমাত্র নিজেদের গাফিলতিতে পড়াশোনাটা আর করেনি। এই একই ভুল তুমি কখনো কোরো না। ইন্টার পর্যন্ত আমার কাছে রেখেই তোমাকে পড়াব। বাকিটা কিন্তু তোমার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে। তখন কিন্তু আমার জোর, কর্তৃত্ব তোমার ওপর খাটবে না। আমার খুব ইচ্ছে ছিল তুমি গ্রাজুয়েট কমপ্লিট করবে। এরপর তোমাকে বিয়ে দেবো। কিন্তু তুমি যখন সম্পর্কে জড়িয়েই পড়েছ তখন আমিও আর চাই না তোমাকে আটকে রাখতে। আমি চাই না আমার মেয়ে কোনো ভুল পথে পা বাড়াক। তবে মনে রেখো, পড়াশোনাই কিন্তু তোমাকে তোমার একটা পরিচয় তৈরি করতে সাহায্য করবে। তাই যত যাই হোক জীবনে, পড়াশোনাটা ছেড়ো না। এটা বাবা হয়ে তোমার কাছে আমার অনুরোধ। কঠিন বিপদের সময়ও যেন ভেঙে না গিয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারো আমি এটাই চাই।’
বাবার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিল চৈত্রী। মাথা তুলে গালে চুমু খেয়ে বলে,
‘আমি তোমার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব আব্বু।’
খুশি হয়ে পরম মমতায় মেয়ের কপালে চুমু খেলেন আনিস ইসলাম।
________
‘বুঝলি মামা, শেষমেশ কাব্যও ছক্কাটা মেরে দিলো।’
হাসতে হাসতে জিহাদের উদ্দেশ্যে বলল তিতাস। জানালার পাশের সিটে বসে চৈত্রীর সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত কাব্য। জিহাদ ও-কে খোঁচা মেরে বলে,
‘আরে বাপরে বাপ! ওর বাসায়ই তো যাচ্ছি নাকি? তখন কি কথা বলা যাবে না? এঙ্গেজমেন্ট হয়ে যাক। তারপর মন-প্রাণ ভরে কথা বলিস।’
কাব্য ফোনটা কান থেকে নামিয়ে বলল,’বিয়ে ঠিক হওয়ার সময় শ্বশুর মশাই কী শর্ত জুড়ে দিয়েছে শুনিসনি? মাঝখানের দুটো দিন মেপে মেপে কথা বলেছি। চৈত্র কথা বলার বায়না করলেই ধমকে ধমকে পড়তে বসিয়েছি। আজকের দিনটা পড়া থেকে ওর ছুটি। তাই অল্প একটু সময়ও অপচয় করছি না বুঝলি? তাছাড়া দু’দিনের জমিয়ে রাখা অনেক কথা আছে, যেগুলো সামনা-সামনি বললেও শেষ হবে না।’
তিতাস বলল,’ঠিক আছে। বল তাহলে। তোদেরই তো দিন।’
কাব্য বাঁকা হেসে বলল,’মন খারাপ করিস না। তোর দিশাও এসেছে ওর বাসায়।’
কাব্য ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জিহাদ চোখ পাকিয়ে তিতাসকে জিজ্ঞেস করে,
‘কিরে আমার শালিকার সাথে তোর কী চলছে?’
‘আরে কিছুই না! কাব্য মজা করেছে।’
‘মজা করে দিশার কথাই কেন বলবে? শেষমেশ তুইও…’
‘আরে তেমন কিছুই না ভাই। এমনিই একটু-আধটু ভাল্লাগে আরকি!’
‘ওই একটু-আধটু থেকেই আমি, কাব্য ফেঁসেছি। এখন দেখছি তুইও একই পথে হাঁটছিস। শুভ্র জানলে কানে ধরবে। জীবনেও আর কোনো বন্ধুকে ওর বাসায় নিয়ে যাবে না।’
ওর কথা শুনে তিতাস শব্দ করে হাসছে। হাসতে হাসতে বলে,’মন্দ কী? এই সুযোগে চার বন্ধুর বন্ধন আরও দৃঢ় হবে।’
‘তার মানে সত্যি সত্যিই তুই দিশার পেছনে পড়েছিস?’
‘না মানে, ফেসবুকে একটু একটু কথা হয়।’
‘ওরে আল্লাহ্! এতদূর? খবরদার! এখন প্রপোজ করিস না ভুলেও। কেউ জানতে পারলে শেষমেশ আমার সাথে রুহির বিয়েটা হবে কিনা সন্দেহ।’
তিতাস হেসে বলল,’চিল! চাপ নিস না। জানবে না কেউ। এটলিস্ট তোর বিয়ের আগে আর কেউ জানবে না।’
কাব্য ফোন রেখে বলল,’কিন্তু আমি জেনে গেছি।’
‘তুই তো আগেই সব জানিস। কথা বলা শেষ?’
‘না। ওর জন্যই রাখতে হলো। এখন নাকি রেডি হবে।’
‘ধৈর্য ধরো বৎস! আর তো মাত্র কিছুক্ষণ বাকি।’
.
সমুদ্র ওর বাবা-মায়ের সাথে আজ সকালেই চৈত্রীদের বাসায় এসেছে। বাড়িতে ঢুকেই সে সর্বপ্রথম চৈত্রীর রুমে ছুটে এসেছে। দিশা আর রুহানিয়া মিলে তখন চৈত্রীকে সাজাচ্ছিল। সমুদ্র তখন প্রশ্ন করেনি কোনো। খাটের ওপর চুপটি করে বসে চৈত্রীর সাজসজ্জা দেখছিল। দিশা দুষ্টুমি করে সমুদ্রকে জিজ্ঞেস করল,
‘সমুদ্র বাবু চৈত্রীকে কেমন লাগছে বলো তো?’
সমুদ্র দু’হাত প্রসারিত করে বলল,’আমার সুইটহার্টকে এত্তগুলো সুন্দর লাগছে।’
‘আর শাড়িটা?’
‘শাড়িটাও সুন্দর।’
‘শাড়িটা কে দিয়েছে জানো?’
‘কে?’
‘কাব্য ভাইয়া।’
‘ওয়াও! কাব্য ভাইয়ার চয়েজ অনেক সুন্দর। তার সাথে কথা হলে আমার হয়ে থ্যাঙ্কিউ বলে দিও।’
রুহানিয়া এই পর্যায়ে হেসে বলল,’আসলেই কাব্য ভাইয়ার পছন্দ অনেক সুন্দর। সে কিন্তু তোমার পছন্দের আরও একটা জিনিস পছন্দ করে বসে আছে জানো?’
‘বলো কী?’
‘সত্যিই বলছি!’
‘তার মানে কাব্য ভাইয়ার পছন্দ আর আমার পছন্দ এক? ইয়ে! তাহলে তো বলতেই হবে আমার পছন্দ অনেক ভালো!’
দিশা আর রুহানিয়া হাসল শুধু, কিছু বলল না। কাব্যরা এসেছে শুনে সমুদ্র এবং আরও বাচ্চারা দৌঁড়ে ড্রয়িংরুমে গেছে। বাড়িতে আজ দুই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন ছাড়া বাইরের কোনো মানুষ নেই। কাব্য পার্পল রঙের একটা পাঞ্জাবি পরেছে। চৈত্রীকেও সে এই রঙের শাড়ি-চুড়ি, গানের দুল কিনে পাঠিয়েছে। সবাই যখন কথা বলায় ব্যস্ত কাব্য তখন দিশাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল,
‘চৈত্র কোথায়?’
দিশা ইশারা বুঝতে না পেরে কাছে এলো। ফিসফিস করে বলল,
‘কী বললেন? বুঝিনি।’
কাব্যও ফিসফিস করে বলল,’চৈত্র কোথায়?’
‘ও তো ঘরে।’
‘একটু দেখা করিয়ে দাও না!’
‘একটু পর তো এমনিতেই দেখা হবে। এখন আবার কেন?’
‘প্লিজ!’
দিশা আশেপাশে একবার তাকিয়ে বলল,’ঠিক আছে। তবে বেশিক্ষণ কথা বলা যাবে না কিন্তু।’
‘ওকে, ওকে।’
চৈত্রীর রুমের সামনে গিয়ে দিশা বলল,’ভেতরেই আছে চৈত্রী। আমি দাঁড়াচ্ছি এখানে।’
কাব্য হেসে বলল,’থ্যাঙ্কিউ শালিকা।’
‘থ্যাঙ্কিউতে কাজ হবে না। আমার গিফ্ট লাগবে।’
‘সময়মতো পেয়ে যাবে।’ বলে কাব্য রুমে ঢুকল।
তিতাস তখন দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। দিশা গম্ভীরমুখে বলল,
‘এখন ভেতরে যাওয়া যাবে না।’
‘জানি। তাছাড়া ভেতরে আমারও কোনো কাজ নেই। তুমি একা একা পাহারা দিচ্ছ। তাই ভাবলাম আমিও তোমাকে সঙ্গ দিই।’
‘দরকার নেই। চলে যান আপনি।’
‘তুমি কি কোনো কারণে রেগে আছো আমার ওপর?’
‘আপনি রাগ করার মতো কোনো মানুষ নাকি? তাছাড়া আপনার ওপর তো রাগ করবে পাপিয়া!’
তিতাস ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,’পাপিয়াকে তুমি চেনো কীভাবে?’
‘এইতো! আসল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছি তাই না? আপনি কি ভেবেছিলেন সত্যিটা আমি জানতে পারব না? দিশার থেকে কিছু লুকানো অত সহজ নয়। কমেন্ট দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছে।’
‘আরে বাপ! তুমি শুধু শুধু ভুল বুঝছ। পাপিয়ার সাথে আমার কিছু নেই। ও আমাদের কলিগ।’
‘খবরদার! মিথ্যে বলবেন না।’
‘তিন সত্যি। আমি মিথ্যে বলছি না। তাছাড়া ও বিবাহিত। কমেন্টে হয়তো ফাইজলামি করেছে। বিশ্বাস না হলে তুমি কাব্য, জিহাদ, শুভ্র ওদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো।’
দিশা ভেংচি কেটে বলল,’ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমি তো কিছু মনে করিনি। এমনিই বললাম আরকি!’
দিশার মিথ্যে শুনে তিতাস মাথা দুলিয়ে হাসল।
কাব্য রুমে প্রবেশ করে দেখল বারান্দার দরজার সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আছে চৈত্রী। বারান্দার দরজা চাপানো। কাব্যকে দেখামাত্র চৈত্রী উঠে দাঁড়াল। দু’হাত প্রসারিত করে বাধা দিয়ে বলল,
‘এখন বারান্দায় যাওয়া যাবে না।’
কাব্য বিস্ময় নিয়ে বলল,’কেন? বারান্দায় কী?’
‘জিহাদ ভাইয়া আর রুহি আপু পার্সোনাল কথা বলছে। আপনার প্রবেশ নিষেধ এখন।’
কাব্য এগিয়ে গেল। চৈত্রীর কোমরে ধরে কাছে এনে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ওদেরকে তো আমার দরকারও নেই। আমি তো এসেছি তোমার কাছে।’
চৈত্রীর দু’হাত কাব্যর বুকের ওপর। চোখে-মুখে অস্বস্তির ছাপ। কাব্য নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে চৈত্রীর দিকে। সে আবেশিত কণ্ঠে বলল,
‘তোমায় শাড়িতে এত দারুণ কেন লাগে চৈত্র? দ্বিতীয়বারের মতো আমি ঘায়েল হয়ে গেলাম।’
চৈত্রী দু’হাতে কাব্যকে ঠেলে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে। ফিসফিস করে বলছে,
‘ছাড়ুন। কেউ রুমে এসে দেখে ফেললে খবর হয়ে যাবে।’
‘কিচ্ছু হবে না। বাইরে তিতাস আর দিশা আছে।’
‘আপনি ওদেরকে পাহারা দিতে রেখেছেন?’
‘হ্যাঁ, রেখেছি। তুমি যে জিহাদ আর রুহিকে পাহারা দিচ্ছিলে।’
চৈত্রী এবার শব্দ করে হেসে ফেলে। কাব্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে বলে,
‘ওভাবে হেসো না চৈত্র! নিজেকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।’
রুমে তখন হুড়মুড় করে দিশা প্রবেশ করে। পেছনে তিতাস। না দেখে ভয়েই কাব্য বারান্দায় প্রবেশ করে। ওদিকে জিহাদ আর রুহানিয়া হাত ধরে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল। কাব্যর হঠাৎ আগমনে দুজনে দু’দিকে ছিটকে দাঁড়ায়। সব মিলিয়ে বিতিচ্ছিরি এক ঘটনা! দিশা হড়বড়িয়ে বলা শুরু করে,
‘স্যরি, স্যরি দুই দুলাভাই। কাকি এক্ষুণী চৈত্রীকে নিয়ে যেতে বলেছে। আমি রুমে না ঢুকলে কাকিই চলে আসতো। রুহি আপু তাড়াতাড়ি আসো।’
রুহিও আর দাঁড়াল না। কাব্যর সামনে লজ্জা লাগছে খুব। তাই দিশা বলা মাত্রই সে দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কাব্য আর জিহাদের মুখখানা দেখে তিতাস হেসেই কুটিকুটি।
কিছুক্ষণ বাদে ওরা তিনজনও ড্রয়িংরুমে যায়। এখন আংটি বদল হবে। চৈত্রী আর কাব্য পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। তিতাস ক্যামেরায় ওদের ছবি তুলল বেশ কয়েকটা। আংটি পরানো শেষ হলে সমুদ্র জিজ্ঞেস করল,
‘মামনী, আমিও আংটি পরব।’
মামি সমুদ্রর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,’তুমি যখন বড়ো হবে তখন তোমার বিয়ে ঠিক করব আমরা। তোমারও তখন এঙ্গেজমেন্ট হবে।’
‘কিন্তু আমি তো বড়ো হয়ে সুইটহার্টকে বিয়ে করব। কাব্য ভাইয়া তাহলে সুইটহার্টকে আংটি পরাল কেন?’
শুভ্র হেসে বলল,’তোর সুইটহার্ট এখন থেকে কাব্যর অর্ধেক বউ বুঝেছিস? পরীক্ষা শেষ হলেই তোর সুইটহার্টকে কাব্য একেবারে নিয়ে যাবে।’
বাকিরা সবাই হাসছে। সমুদ্র গাল, নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে। সে রেগে গেছে। চিৎকার করে বলছে,
‘আমার বউকে কাব্য ভাইয়া কেন নেবে?’
এবার তার রাগ পরিণত হয়েছে কান্নায়। সে ফ্লোরে বসে হাত-পা ছুঁড়ে কান্না করছে আর বলছে,
‘আমার সুইটহার্টকে কাব্য ভাইয়া কেন বিয়ে করবে? সুইটহার্ট তো আমার। আমি এখন বড়ো হয়ে কাকে বিয়ে করব!’
ওর কান্নাই থামাবে নাকি হাসবে কেউ বুঝতে পারছে না। সমুদ্র বারবার কাঁদতে কাঁদতে একই কথা বলে চলেছে,’আমি কাকে বিয়ে করব এবার!’
(সমাপ্ত)
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।
‘আমার একলা আকাশ’ পড়ে যারা হাপুশ নয়নে কেঁদেছেন, যাদের মন বিষন্ন ও ভারী হয়ে উঠেছিল তাদেরকে আমার ‘চৈত্রের বিকেল’ নামক ছোটো গল্পটি উৎসর্গ করলাম।]