#রিমঝিম
#শতাব্দী_নাওয়ার ।
২য় পর্ব।
ঝুমঝুম হঠাৎ করে আঁতকে উঠলো।খেয়াল করলো,এ মাসে এখনো তার পিরিয়ড হয়নি।ডেইটের অনেক দিন পাড় হয়ে গেছে।আবার মাথা ঘুরছে,বমি বমি লাগছে।তবে কি….
এসব ভাবতে ভাবতে ঝুমঝুম ওর এক বান্ধবীকে ফোন দিয়ে বল্লো, একটা প্রেগন্যানসি টেস্ট কাঠি নিয়ে আসিস তো।
আমার এক ভাবীর লাগবে।তাড়াতাড়ি নিয়ে আসিস।
দুপুর হয়ে গেছে।
ঝুমঝুমকে বিয়ের সাজে সাজানো হচ্ছে।কনের সাজে ঝুমঝুমকে অপূর্ব লাগছে।এমনিতেই ঝুমঝুম দেখতে খুব সুন্দরী,তার উপর বিয়ের সাজ,বিয়ের সাজে মেয়েদের সৌন্দর্য এমনিতেই আরো বেড়ে যায়।
ঝুমঝুমের বান্ধবী পার্লার থেকে সেজে কেজে তারপর প্রেগন্যান্সি টেস্টের কাঠি নিয়ে হাজির হয়।
ঝুমঝুম কাঠিটা নিয়ে সোজা বাথরুমে ঢুকে।
টেস্ট করতেই ঝুমঝুম লাল বর্ণের দুটো স্পষ্ট রেখা দেখতে পায়।
ঝুমঝুমের আর বুঝতে বাকি রইলোনা,ঝুমঝুম প্রেগন্যান্ট।ও রনকের সন্তানের মা হতে চলেছে।
কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলোনা।
দিশাহারা হয়ে রনক কে ফোন দিতে লাগলো।রনকের মোবাইল বন্ধ,কল যাচ্ছেনা।বার বার ট্রাই করে যাচ্ছে।
কিন্তু রনকের মোবাইলে কল যাচ্ছেনা।
যাবেই বা কি করে,ঝুমঝুমের সেদিনের মেসেজ টা দেখা মাত্রই রনক কষ্ট সহ্য করতে না পেরে মোবাইল টা আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলে।
এদিকে বর পক্ষ এসে গেছে।
ঝুমঝুম বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটা চিঠি লিখে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়,
”মা এবং বাবা,আমাকে তোমরা ক্ষমা করো।আমার পক্ষে এই বিয়ে করা সম্ভব না।তাই আমি চলে যাচ্ছি,ভেবোনা।
আমি কারো হাত ধরে পালাচ্ছিনা।আমি একাই অজানা পথে পা বাড়ালাম,তোমরা ভালো থেকো,ইতি তোমাদের মেয়ে”
কেটে যায় ৫টা বছর।
যে যার মত যার যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত।জিহান বিয়ে করে বউ নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে।বাবা মা তাদের অন্য সন্তান বুকে নিয়ে বেঁচে আছে।ঝুমঝুম বিয়ে করে স্বামী নিয়ে ভালো আছে,এই চিন্তা করে রনক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ভালো আছে।
কিন্তু ঝুমঝুম?ঝুমঝুম কোথায়?ও কি ভালো আছে?ওর পেটের সন্তান টা কেমন আছে?সন্তানটা কি পৃথিবীর মুখ দেখেছে?
নাকি দেখেনি?নাকি সন্তান্টাকে পেটে নিয়েই ঝুমঝুম এই পৃথিবীর মানুষের কটু কথা থেকে বাঁচতে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে?
কারো জানা আছে?কারো জানা নেই।
রনকের মা খুব অসুস্থ,তাই ডাক্তার রনককে তার মাকে নিয়ে ঢাকা গিয়ে ভালো কোন ডাক্তার দেখাতে বলেছে।তাই রনক আজ ঢাকার একটি হসপিটালে তার মাকে নিয়ে এসেছে।সিরিয়াল লিখিয়ে,মা কে নিয়ে বসে আছে।ডাক পড়লেই মা কে নিয়ে ডাক্তারের রুমে ঢুকবে।
হঠাৎ করেই রনকের চোখ পড়ে একটা মেয়ের উপর।মেয়েটা পুতুলের মত সুন্দর।
বসে আছে একটা চেয়ারে।আনুমানিক চার বছর হবে মেয়েটার।
মেয়েটার হাতের পুতুল টা নিচে পড়ে গেছে,তাই ওটা উঠানোর চেষ্টা করছে মেয়েটা।রনক দৌড়ে গিয়ে পুতুল টা তুলে মেয়েটার হাতে দেয়।মেয়েটা মুচকি একটা হাসি দিয়ে রনককে ইশারায় ধন্যবাদ জানায়।
*নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ: “নিঃস্বার্থ ভালোবাসা”*
রনক চমকে উঠে মেয়েটার হাসি দেখে,মেয়েটার হাসিটা ঠিক ঝুমঝুমের মত।আর চোখ দুটো একদম রনকের মত।
রনক মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে,তুমি এখানে কেন?
মেয়েটা ডাক্তারের চেম্বার দেখিয়ে দেয় আঙুল দিয়ে।
রনক জিজ্ঞেস করে,তোমার সাথে আর কেউ আসেনি?
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
রনক জিজ্ঞেস করে কোথায় সে?
মেয়েটা রাস্তা দেখিয়ে দেয়।
রনক মনে মনে ভাবে,এত সুন্দর নিষ্পাপ মেয়েটা।অথচ কথা বলতে পারেনা।আল্লাহ্ লিলা বোঝা বড় দায়।
মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,তুমি এখানেই বসে থাকো কোথাও যেওনা।
মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে।
আর রনক চলে যায় ওর মায়ের কাছে।
মাকে মেয়েটাকে দেখিয়ে বলতে থাকে আর আফসোস করতে থাকে যে,মেয়েটা কথা বলতে পারেনা।
হঠাৎ করেই রনক দেখে মেয়েটা কোথায় যেন দৌড়ে যাচ্ছে।
আর রনকও ওর মাকে বসিয়ে রেখে মেয়েটার পেছনে ছুটছে।কিছু দূর যেতেই রনকের বুকের ভেতর ধক করে উঠে।
মেয়েটা সাদা আর কালো রঙের থ্রী পিচ পরা একটা মেয়েকে আম্মু বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে।
রনকের বুঝতে আর বাকি নেই সাদা কালো থ্রি পীচ পরা জরিয়ে ধরা মেয়েটা যে পিচ্চি মেয়েটার মা।
আর মেয়ের মা টা যে রনকের চির চেনা ভালবাসা।তারই ঝুমঝুম।ঝুমঝুম ওর মেয়েকে কোলে নিয়ে আদর করছে,চুমু খাচ্ছে।
হঠাৎ করেই ঝুমঝুম এর চোখ পড়ে রনকের দিকে।হাসি ভরা মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে যায়।চোখ দুটো জলে ভরে যায়।
দুজনই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ ভিজে যাচ্ছে দুজনেরই।কতটা দিন পর দেখা তাদের।ঠোঁট দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছেনা কারোই।
অথচ মনে মনে বলছে ঠিকই।
-খুব ভালো আছো তাইনা?স্বামী সংসার নিয়ে।মেয়ের মাও হয়েছো।
-খুব ভালো আছি।তুমিও কত স্মার্ট হয়েছো।বিয়ে করে বউ নিয়ে ভালোই আছো বোঝা যাচ্ছে।
কিন্তু কেউ কারো কোন কথা শুনতে পারছেনা।কারণ মনে মনে বলা কথা গুলো বাইরে থেকে যে শোনা যায়না।
পুতুল মেয়েটার ডাকে দুজনের নীরবতা ভাঙে।
আম্মু আম্মু আমার আইসক্রিম দাও।
এই যে মা তোমার আইসক্রিম।এই নাও।
রনক-তুমি কথা বলতে পারো?
ঝুমঝুম-পারবেনা কেন?
রনক-না মানে,ওর সাথে আমি একটু আগে কথা বলেছি।ও মুখে কিছু বলেনি।ইশারায় সব বলেছে।তাই ভাবলাম…
ঝুমঝুম-মুখে কিছু বলোনি কেন মা?
-তুমিই না বলেছো অপরিচিত কারো সাথে কথা বলবেনা।অপরিচিত কেউ কিছু দিলে নিবেনা।তাই আমি ইশারায় বলেছি।কথা বলিনি।
ঝুমঝুমঃপাগলী মেয়ে আমার।
-আম্মু জানো,আংকেল টা খুব ভালো।আমার পুতুল পড়ে গিয়েছিলো,সে তুলে দিয়েছেন।
এদিকে এক নার্স এসে রনক কে ডাকে,আপনার মা আপনাকে খুঁজছে।আপনার মায়ের সিরিয়াল এসেছে চলুন।
আসি,ভালো থেকো,সুখী হও বলে,আর মেয়েটার গালে একটা চুমু দিয়ে রনক ওর মায়ের কাছে চলে যায়।
ঝুমঝুমও ওর মেয়েকে নিয়ে যেই ডাক্তারকে দেখাবে সেই ডাক্তারের চেম্বারের সামনে চলে যায়।ঝুমঝুমের মেয়ের সকাল থেকে হঠাৎ পেটে ব্যথা তাই ঝুমঝুম ওর মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসেছে।
দুজনের ডাক্তার দেখানোই শেষ।
বাসায় ফিরে যাবার সময় ঝুমঝুমের মেয়েটা ঝুমঝুমকে বলে-আম্মু।
ঝুমঝুম-কি মা?
-ওই যে দেখো আংকেল টা।আমি আংকেল টাকে একটা চুমু দিয়ে আসি?তুমি আমাকে চুমু দিয়ে না বলো,চুমু দিলে চুমু দিতে হয়?আংকেল তো আমাকে চুমু দিয়েছে,আমিতো দেইনি।আমি একটা চুমু দিয়ে আসি?
ঝুমঝুম-আচ্ছা যাও।কিন্তু চুমু দিয়ে বাই বলেই চলে আসবে।দেরি করবেনা কেমন?
-আচ্ছা আম্মু।উম্মাহ।
-উম্মাহ্ বাবুই।
-আংকেললল,
-এই যে মামুনি,তোমরা এখনো যাওনি?
-উঁহু যাইনি,এখনি চলে যাবো।ইনি কে?
-ইনি আমার মা।
-ও আচ্ছা,কেমন আছো দাদুভাই?
-ভালো আছি দাদু ভাই,তুমি কেমন আছো?
-আমিও ভালো আছি।আচ্ছা আমার বেশি সময় নেই,আংকেল তাড়াতাড়ি একটু বসো তো।
-বসবো কেন?
-আরে বসোই না।
-আচ্ছা বসলাম।
-উম্মাহ! আসি টা টা।
-এই দাঁড়াও দাঁড়াও!তোমার নাম টাই তো জানা হলোনা।
-আমার নাম?
আমার নাম….
চলবে…