লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পর্ব -১৩+১৪+১৫

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
* পর্ব ১৩
সামিরা আক্তার

রাতে ঘুমানোর সময় চৈতালী যখন বুঝলো রাফসান অন্য রুমে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন সে বলে উঠলো -আমি একা ঘুমাতে পারবো না।
– মানে?? তুই বাড়িতে একা ঘুমাতি না?
– না। আমার সাথে ময়ূরী আপা থাকতো। আমার ভয় লাগে।
যদিও এটা ডাহা মিথ্যা কথা। চৈতালী একা থাকতে পছন্দ করে। ওর রুমে কেউ না বলে ঢুকলেও ওর রাগ হয়। আর অন্য কারো সাথে বেড শেয়ার করার কথা চিন্তা করলেই ওর মাথা ঘুরায়। কিন্তু এখন মিথ্যা কথা বলা ছাড়া উপায় নাই।
– আমি ফ্লোরে ঘুমাতে পারি না আমার শরীর ব্যাথা হয়ে যায়। আর সোফাতেও কম্ফোর্ট ফিল করি না। বলে উঠলো রাফসান।
– তোমাকে কেউ ফ্লোরে বা সোফায় ঘুমাতে বলেছে??
– তাহলে কি তুই ঘুমাবি??
– কি!! এক প্রকার চেঁচিয়ে উঠলো চৈতালী। তোমার কি মনে হয় এখানে ইন্ডিয়ান সিরিয়াল চলছে??
-তাহলে??
– আমরা দুজনেই খাটে ঘুমাবো।
লাফিয়ে তিন হাত পিছিয়ে গেলো রাফসান। এই মেয়ের আসলেই মাথা খারাপ। এর সাথে কথা বলাই বেকার। মুখে বললো- অসম্ভব তুই একাই ঘুমাবি।
তেঁতে উঠলো চৈতালী। বললো – আর রাতে যদি আমি ভয়ে হার্ট এট্যাক করি? তার দায়ভার কে নিবে? তুমি?জানো না আমার বাবা মায়ের আমি একটাই মেয়ে।

রাফসান হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিলো। তার ঠিক কি করা উচিত সে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে তার হাঁত পা ছাড়িয়ে কাঁদতে মন চাইছে।
অন্যদিকে রাফসান কে নাস্তানাবুদ করতে পেরে খুশিতে আটখানা চৈতালী। কিন্ত মুখখানা স্বাভাবিক করে বললো- আরে তুমি এত হাইপার কেন হচ্ছো বলো তো?? নিজের বিয়ে করা বউয়ের পাশেই তো ঘুমাবে।

এতহ্মণে সামলে রাখা মেজাজটা এবার আর সামলাতে পাড়লো না রাফসান। দাঁতে দাঁত চেপে বললল- একদম বউ বউ করবি না।
– কেন?? বউ বউ করলে কি হবে? তোমার সাথে তো আমার বিয়ে হয়েছে। আমি তো তোমার বউই হই। তাহলে বউ বউ করবো না কেন?
– একদম থাপ্পড় দিয়ে গাল লাল করে দেবো। আমার বয়স জানিস??
– থাপ্পড় দিয়েই দেখো? একদম গুলশান থানায় গিয়ে তোমার নামে বধু নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিবো।

রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো। এইটা কি মেয়ে না বিচ্ছু। এইরকম সাংঘাতিক মেয়ে তাদের বংশে আছে ভাবতেই মাথা ঘুরালো তার। হতাশ হয়ে খাটে বসে পড়লো সে।তারপর ঠান্ডা গলায় বললো- চৈতী তোর বয়স আর আমার বয়স জানিস?
– জানি। না জানার কি হলো? আর কথা হচ্ছে খাঁটে শোয়া নিয়ে। এখানে বয়সের হিসাব এলো কেন??
– তুই কি চাইছিস চৈতী??
-আপাতত এটাই যে এখানে ঘুমাও।
– তারপর??
– তারপর মানে??
– তারপর তুই সারাজীবন আমার সাথেই থাকবি??
চৈতালী বুঝলো রাফসান সিরিয়াস প্রসঙ্গে চলে গেছে। সাবধানে কথা বলতে হবে।বললো
– তো কোথায় যাব? তুমি আমার স্বামী। তোমার কাছেই তো থাকবো।
– চৈতী তুই বাচ্চা মেয়ে। তোর বয়স এখনও আঠারো হয় নাই। আমার মত একটা আধবুড়ো লোকের সাথে তোর বিয়ে হয়েছে তোর খারাপ লাগছে না?

এবার মেজাজ হারালো চৈতালী। বললো-বাচ্চা মেয়ে মানে? ১৭ বছরে কেউ বাচ্চা থাকে না। তাছাড়া আর ৫ মাস পড়েই আমার বয়স ১৮ হবে। আর..
-আর কি?? বলে উঠলো রাফসান।
চৈতালী একটু লজ্জা পাওয়ার ভান করলো। তারপর বললো- আর আমার আধবুড়ো বর পছন্দ। আমার এই আধবুড়ো বর রাজি থাকলে সামনের বছরই আমি তাকে বাচ্চার বাবা বানিয়ে দেবো।

রাফসান এবার কাঁশতে শুরু করলো। কাঁশতে কাঁশতে চোখমুখ লাল হয়ে গেলো। চৈতালী দৌড়ে পানির বোতল এনে এগিয়ে দিলো। রাফসান পানি খেয়ে একটু শান্ত হলো। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো- আমার চোখের সামনে থেকে যা।

চৈতালী তখন ও লজ্জা পাওয়ার ভান ধরে আছে। তাই লাজুক স্বরে বললো- যাচ্ছি না। তবে শুয়ে পড়ছি। তুমিও শুয়ে পড়ো। আর শোনো বলেই রাফসান কে ডাকলো চৈতালী।
রাফসান তাকাতেই চৈতালী বললো- আমার কিন্তু অনেক গুলো বাচ্চার শখ। তাই আমরা বছর বছর বাচ্চা নিবো। এই ধরো একটা হেটে বেড়াবে, একটা কোলে থাকবে, একটা পেটে থাকবে। বলেই মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়লো সে।
বিস্ফারিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো রাফসান। এবার ও কাশতেও ভুলে গেছে।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৪
সামিরা আক্তার

রাফসান দুহাতে কপাল চেপে ধরে জিমে বসে আছে। কাল রাতে তার একটুও ঘুম হয় নাই। চৈতালী বার বার তাকে জরিয়ে ধরেছে। গায়ের উপর পা তুলে দিয়েছে। মোট কথা সারা রাত জ্বালিয়েছে।
রাফসান বেশ বুঝতে পারছে এসব চৈতালীর ইচ্ছাকৃত কাজ। কাল রাতের কথা শোনার পর ও বুঝে গেছে চৈতালী এত সহজে তার ঘাড় থেকে নামবে না।
রাফসান এটা বুঝতে পারছে না চৈতী কেন নিজের ভালো টা বুঝতে পারছে না। তার অন্যকিছু ভাবতে হবে।

চৈতালী আজ রাফসানের পছন্দের নাস্তা বানাচ্ছে। আজ সকালে সে বড়মার থেকে ফোন দিয়ে রাফসানের পছন্দ জেনে নিয়েছে। রান্নাটা সে ভালই পারে। চৈতালী ঠিক করেছে এখন থেকে রাফসান কে আর লতাপাতা খেতে দিবে না। এজন্য বুয়া কে রাফসানের জন্য আলাদা নাস্তা বানাতে দেয় নি।

রাফসান যখন বাসায় আসলো চৈতালী তখন টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে। রাফসান কে ডেকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বললো।
রাফসান একবার চৈতালীর দিকে তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিলো। কি আশ্চর্য মেয়ে টি-শার্ট, প্লাজু পড়বি ভালো কথা ওড়না পড়বি না কেন?? অসভ্য মেয়ে।

পরহ্মণেই ভাবলো চৈতী ওড়না না পড়লে রাফসানের কি?? রাফসান এত কিছু দেখবে কেন?? তাহলে কি রাফসান চৈতীকে অন্য নজরে দেখতে শুরু করেছে??
ভেবেই আতকে উঠলো। তারপর বললো- চৈতী আমার কাজিন আর কিছু না।

নাস্তার টেবিলে একটু অবাক হলো রাফসান। নাস্তায় লুচি, চিকেন কষা, সুজির হালুয়া আর জুস। রাফসান অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। বললো- আমার নাস্তা বানায় নি বুয়া??
– আমি নিষেধ করেছি। বলে উঠলো চৈতালী।
-কেন??
– কারণ তুমি এইগুলা খাবে।
রাফসান একটু চুপ করে শান্ত গলায় বললো- আমি এত ভারী খাবার দিয়ে ব্রেকফাস্ট করি না চৈতী।
বলেই উঠে যাচ্ছিলো। চৈতালী বুঝলো রাফসান ওর সাথে কথা বাড়াতে চাইছে না। আর খাবে ও না। এখন ওর করা উচিত। এইভাবে ফেল মারলে তো হবে না।
আচমকা চৈতালী কেঁদে দিলো। ও জানে এটাই ওর এই মুহুর্তে শেষ অস্ত্র।

রাফসান চৈতালী কে কাঁদতে দেখে পুরোই বোকা বনে গেল। এই বিচ্ছু মেয়ে আবার কাঁদেও। কিন্তু মুখে বললো- কি হলো?? কাঁদছিস কেন?
– কাঁদবো না তো কি করবো?? তুমি আমাকে অপমান করেছো।
– আমি!!!!?? কিভাবে??
– আমি এত কষ্ট করে রান্না করলাম আর তুমি খেলে না। এটা অপমান ছাড়া আর কি?
আমি এখন বড় আব্বু কে ফোন করে বলবো তুমি আমাকে থাপ্পড় মেরেছো।
– মিথ্যা কেন বলবি??
– না খেলে মিথ্যাই বলবো।

রাফসান হাত মুঠ করে ধরে রাগ কন্ট্রোল করলো। তারপর খেতে বসলো। এতহ্মণে চৈতালী জয়ের একটা হাঁসি দিলো।
রাফসান খাচ্ছিলো। হঠাৎ চৈতালী বলে উঠলো – তুমি এত আনরোমান্টিক কেন??
রাফসান কেঁশে উঠলো। এই মেয়ে এখন আবার কি রোমান্টিক কথা বলবে কে জানে।
রাফসানের কাছ থেকে জবাব না পেয়ে চৈতালী হতাশ হলো। এই লোক আজ এত কম কথা বলছে কেন??

তারপর আবার বললো- রাফসান ভাই
-হু
– রান্না কেমন হয়েছে??
– ভালো।
চৈতালী পুনরায় হতাশ হলো। এই লোক কথা না বললে কথা আগাবে কি ভাবে? কাল রাতে কি ও বেশি বেশি করে ফেলেছে? কিন্তু কাল তো এই লোক ওর সাথে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করলো। চৈতালি এক মুহূর্ত ভাবলো তারপর বললো- তুমি একাই খাচ্ছো আমাকে তো বললেও না।
রাফসান একটু গিল্টি ফিল করলো। আসলেই তো। তারপর বললো- তোকে কে বসে থাকতে বলেছে? তুই ও খা।
– তুমি আমাকে খাইয়ে দাও।
রাফসান একটু হকচকিয়ে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- তোর হাতে কি সমস্যা? নিজে হাতে খা।
– না আমি তোমার হাতেই খাব। আমি তোমার একটামাত্র বউ। তুমি আমাকে কোথায় নিজ থেকে খাইয়ে দেবে তা না। তুমি আমাকে না খাইয়ে দিলে আমি আজ খাবই না।
রাফসান চৈতালীর কথার উত্তর না দিয়ে খাবার এনে চৈতালীর মুখের সামনে ধরলো। ও বুঝে গেছে এই মেয়ের সাথে জোরাজুরি করে লাভ নেই। শুধু শুধু সময় নষ্ট। বলেছে যখন তখন খাবেই।

চৈতালী হাঁ হয়ে আছে। এত তাড়াতাড়ি কাজ হয়ে যাবে সে ভাবে নি। সেও কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।
খাওয়ার শেষে চৈতালী একটা অভাবনীয় কাজ করে বসলো। ঠাস করে রাফসানের গালে একটা চুমু দিয়ে দৌড় দিলো।
রাফসান একদম ফ্রিজ হয়ে গেলো। পানি খাবার জন্য গ্লাস হাতে নিয়েছিলো সে সেটা হাত থেকে পড়ে খন্ড খন্ড হয়ে গেলো।

রাফসান কে জ্বালিয়ে চৈতালীর দিন বেশ কেটে যাচ্ছিলো। এর মধ্যে সে রাফসান কে নিয়ে গিয়ে অনার্সে ভর্তির আবেদন করে এসেছে। যদিও রাফসান যেতে চায় নি। ড্রাইভার নিয়ে যেতে বলেছে। কিন্তু চৈতালী কান্না কাটি করার কারণে রাফসান নিজেই ওর সাথে গিয়েছিল।
বলা বাহুল্য রাফসান কিছু না শুনলেই চৈতালী মরা কান্না শুরু করে। যার কারণে রাফসানের সেই কাজ করতেই হয়। এমনকি তেল মসলা যুক্ত খাবারও খায় মাঝে মাঝে।
খাওয়ার ব্যাপারে সে চৈতালীর সাথে খুব একটা আপোষ করে না।
এভাবেই খুনসুটি আর কথা কাটাকাটির মধ্য দিয়ে ১৫ দিন চলে গেলো।

রাতে রাফসান শুয়ে পরার পর চৈতালী কে বললো
– কাল মা আসছে।
চৈতালী কিছু একটা ভাবছিল। রাফসানের কথা কানে আসতেই সে রাফসান কে জরিয়ে ধরে বললো – সত্যি?
– হুম। বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো রাফসান।

চৈতালীর করা সবচেয়ে বিরক্তিকর কাজ হলো জরিয়ে ধরা। কিন্তু রাফসান জানে ওকে বলে কোন লাভ নেই।
বললে আরও বেশি করবে।
বরং আজকাল যখন তখন জ্বরিয়ে ধরে। আর হুটহাট চুমু খায়।
এই জায়গা রাফসান নির্যাতিত পুরুষ। কিছু বলার নেই। বললেই কেঁদে কেটে একশেষ।

কিছু একটা ভেবে বললো – চৈতী
– হুম।
– তুই এবার মা বাবার সাথে চলে যাবি।
-দেখি।
রাফসান জানে চৈতালী যাবে না। শুধু শুধু বলা।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৫
সামিরা আক্তার

ভিডিও কলে হা হা করে হাঁসছে জুনায়েদ। রাফসান বিরক্তি নিয়ে ল্যাপটপের দিকে তাকালো। অফিসে কাজের ফাঁকে বন্ধুকে কল দিয়ে একটু দুঃখের কথা শেয়ার করছিল সে।
কোথায় বন্ধুর দুঃখে দুঃখিত হবে তা না হাঁসছে। দাঁতে দাঁত চেপে বললো- শালা হাঁসবি না। সেদিনের মেয়ে শুক্রবারে শুক্রবারে যার বয়স ৮ দিন। সেই মেয়ে আমাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে আর তুই হাঁসিস??

জুনায়েদ এবার দ্বিগুণ জোরে হাঁসতে শুরু করলো। রাফসান রক্তচহ্মু নিয়ে জুনায়েদের দিকে তাকালো।জুনায়েদ নিজেকে সামলে নিয়ে বললো – আচ্ছা হাঁসতেছি না। এবার বল।
– বলবো মানে?? এতহ্মণ কি বললাম??
– আমি তো কোন সমস্যা দেখি না। চৈতালী ভালো মেয়ে। তাছাড়া ও যদি মানতে পারে তোর সমস্যা কোথায়? বলে উঠলো জুনায়েদ।

জুনায়েদের কথার উত্তর না দিয়ে রাফসান বললো- আজ বিকেলে মা বাবা আসবে। ওদের সাথে চৈতালীকে যেভাবেই হোক পাঠাতে হবে। একটা বুদ্ধি দে।
– অসম্ভব।
– কেন?? রাফসান জানতে চাইল।

-আমি তোকে বৌ তাড়ানোর বুদ্ধি দিয়ে নিজে বৌ ছাড়া হবো না কি? তোকে বুদ্ধি দিয়েছি শুনলে রাফিয়া আমাকে ডিভোর্স দিতে এক সেকেন্ড চিন্তা করবে না।তাছাড়া এই বদবুদ্ধি আমি তোকে দেবোই কেন??

-যাহ তোদের কাউকে লাগবে না। আমার সমস্যা আমি সমাধান করবো।

– জীবন সবাইকে দ্বিতীয় বার সুযোগ দেয় না রাফসান। তোকে দিয়েছে। কাজে লাগা। হেলায় হারাস না।
জুনায়েদের সাথে অন্যান্য কথা বলে কল কাটলো রাফসান। বাসায় যেতে হবে। এতহ্মণে নিশ্চয়ই মা-বাবা চলে এসেছে।

**আয়শা বেগমের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে চৈতালী। এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। চৈতালী বললো
– বড়মা তোমার ছেলে এসেছে বোধহয়। বলেই দৌড়ে গেল।
আয়শা একটু অবাক হলেন। রাফসানের প্রতি চৈতালীর উদাসীনতা নেই বললেই চলে। বরং রাফসান ঘরে আসায় চোখমুখ চকচক করছে। মাত্র ১৫ দিনে এত পরিবর্তন তিনি আশা করেন নি। তার বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেলো মনে হলো।
চৈতালীর এখন কম বয়স। রাফসান তাকে ভালবাসা দিয়ে যেভাবে গড়ে তুলবে সে ওভাবেই গড়ে উঠবে। এবয়সী মেয়েরা যে ভালবাসার কাঙাল।
এখন রাফসানের দিকটা কি রকম তাই দেখার বিষয়।

আয়শার ভাবনার মাঝখানে রাফসান এসে তাকে জরিয়ে ধরলো। তিনি ছেলের মুখের দিকে তাকালেন। কি রাজপুত্রের মত ছেলে তার। এখন দিন দিন যেন বেশী সুন্দর হচ্ছে। কারো নজর না লাগুক।

– মা কেমন আছ? বলে উঠলো রাফসান।
– ভালো আছি। তোরা ভাল থাকলে আরও ভাল থাকবো।
– বাবাকে দেখছি না।
– বড়আব্বুর কাজ আছে। তাই বড়মা কে দিয়ে চলে গেছে। আবার নিতে আসবে। উত্তর দিলো চৈতালী।
-ওহ। বলেই মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো রাফসান। পরম মমতায় ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন আয়শা।

-উঃ ঢং দেখলে বাঁচি না। ভেংচি দিলো চৈতালী। এরকম দামড়া ছেলেকে মাথায় হাত বুলানোর কি হলো?

রাফসান কোন জবাব দিলো না। আায়শা হেঁসে বললেন- আয় তোকেও দেই।
চৈতালী ও গিয়ে রাফসানের পাশে শুয়ে পরলো। দুজনের দিকে তাকিয়ে খুশিতে চোখে পানি এসে গেল আয়শা বেগমের।

রাতে খাবার টেবিলে রাফসান কে স্বাভাবিক খাবার খেতে দেখে কেঁদে ফেললো আয়শা। তিনি ভুনা খিচুড়ি আর গরুর মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছিলেন। রাফসান খাবে জানলে আরও অনেক কিছু বানাতেন। তবে কাল এই ভুল করবেন না। সারাদিন ছেলের পছন্দের খাবার বানাবেন।
ছেলেকে কতদিন মন মত খাওয়ান না।

**রাতে শোয়ার সময় আয়শা কে নিয়ে অন্য রুমে চলে গেলো চৈতালী। রাফসান আজ একা ঘুমাবে। ভিতরে ভিতরে খুশিতে ডগমগ করতে লাগলো সে। আজ অনেকদিন পর সে শান্তির ঘুম দেবে। একয়দিন তো এক প্রকার আতঙ্কে ছিলো যে এই বুঝি জরিয়ে ধরলো, এই বুঝি চুমো দিলো।

তবে রাফসানের এই খুশি বেশিহ্মন স্থায়ী হলো না। এপাশ ওপাশ করলে ঘুম আসলো না। মনে হলো কিছু একটা মিসিং। আড়চোখে চৈতালীর ফাঁকা জায়গাটা দেখে বুকের ভিতর কেমন ধক করে উঠলো।
তবে কি সে চৈতালী কেই মিস করছে??
না না এ হতে পারে না। বলে নিজেকে শাসালো সে।
তারপর আরও দুই ঘন্ট ঘুমানোর চেষ্টা করলো। না পেরে উঠে বসলো। নিজেকে কেমন অসহায় লাগলো।
এই ফাজিল মেয়ে ১৫ দিনেই তার অভ্যাস বদলে দিয়েছে।
টেবিলে পানি খাওয়ার জন্য জগ হাতে নিতেই দেখলো পানি নেই।
রাফসান হতাশ হলো। আজকাল তার সব কাজ চৈতালীই করে৷ তাই সে এসবে নজর দেয় না। তাই পানির জগে পানি আনার কথাও মনে নেই। অথচ আগে সব দিকে খেয়াল থাকতো তার।

রাফসান গুটি গুটি পায়ে আয়শা বেগমের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। কতহ্মণ দাঁড়িয়ে থাকলো দরজার সামনে। তারপর মনের সাথে যুদ্ধ করেই নক করলো দরজায়।
চৈতালী ঘুমিয়ে গেছে। আয়শা দরজা খুলে ছেলেকে দেখে অবাক হলেন। বললেন- ঘুমাস নি??
রাফসান ইতস্তত বোধ করলো। কি বলবে মাকে সে?? চৈতালী কে মিস করছে? ধুর কেন যে এলো।
তারপর বললো- না মানে এমনি এসেছিলাম।
বলেই সোফায় বসলো সে। আড়চোখে তাকাল চৈতালীর দিকে। ফাজিল মেয়ে। তার অভ্যাস বদলে দিয়ে নিজে তো ঠিকই ঘুমাচ্ছে।

আয়শা ছেলেকে লহ্ম করছিলেন। বললেন – অনেক রাত হয়েছে বাবা। ঘুমা গিয়ে।
– চৈতী এখানেই থাকবে? আনমনে বলে ফেললো রাফসান।
– কি বললি??
– না কিছু না। ওই চৈতী আমার ল্যাপটপের চার্জার কই রাখছে তাই জানতে এসেছিলাম।বলেই দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বের হলো সে।

ছেলে বের হতেই হেঁসে ফেললেন আয়শা। পরিবর্তন শুধু চৈতালীর না রাফসানের ও হয়েছে। এজন্যই বলে মেয়ে মানুষ সব পারে। রাফসানের বাবাও বলেছিলো আগুন আর মোম পাশাপাশি থাকলে এমনি গলবে।
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here