লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৯
সামিরা আক্তার
**রাফসান অফিসের কাজে একটু ব্যাস্ত ছিলো একয়দিন। গাজীপুরের প্রজেক্ট টা নিয়ে একটু ঝামেলায় ছিলো।
আজ একটু ফ্রি হয়েছে। কয়দিন ধরে তার রাফিয়ার সাথে কথা হয় না। ভাবলো আজ কল করবে। এর মাঝে রাফিয়া নিজেই কল করলো। রাফসান রিসিভ করতই ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো রাফিয়ার সুখী সুখী চেহারা।
রাফসান বুকের ভিতর কেমন শান্তি অনুভব করলো। এই একটা জায়গাতে তার কোন ভুল হয় নি। জুনায়েদ কথা রেখেছে। তার বোন কে ভালো রেখেছে। রাফিয়াকে বললো- কেমন আছিস রাফু?? তোর শরীর কেমন??
– আমি ভালো আছি। তুমি আর চৈতালী ভালো আছো তো??
– আমরা ভালো আছি।
– তুমি যে ভালো আছো আমি বুঝতে পেরেছি ভাইয়া। তোমাকে বলেছিলাম চৈতালী ভালো মেয়ে। তোমাকে ভালো রাখবে। মিললো আমার কথা??
রাফসান মৃদু হাঁসলো। রাফিয়া আবার বললো- কাল চৈতালীর জন্মদিন। তোমার মনে আছে তো।
রাফসানের মনে ছিলো। গত ১৫ দিন চৈতালী ইনিয়েবিনিয়ে একথাই বলেছে তাকে। তাই অন্যরকম কিছু ভেবেছে রাফসান। সে রাফিয়া কে বললো- হুম মনে আছে।
ওপাশ থেকে রাফিয়া বললো- শোন ভাইয়া একদম নিরামিষ হয়ে থাকবে না। ওর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করবে।
-দেখি।
-দেখি না। করবে। একগাদা বকবক করতে লাগলো রাফিয়া।
**রাফসান শপিংমলে এসেছে। উদ্দেশ্য চৈতালীর জন্য কিছু কেনা। কিন্তু কি কিনবে তাই বুঝতে পারছে না। সে মেয়েদের জিনিস কখনো কিনে নাই। রাফিয়া নিজের আর জন্য একাই শপিং করতো।
১ বছরের সংসারে আফরিনও নিজেই শপিং করেছে। আচ্ছা রাফিয়া কে ফোন দিয়ে জানতে চাইবে কি কেনা যায়??
না থাক। রাফিয়া হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু জুনায়েদ দায়িত্ব নিয়ে পুরো দুনিয়া জানিয়ে দিবে।
তার থেকে বরং সে চৈতী নিয়ে এসে শপিং করবে ভেবে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।
আচমকা তার চোখ গেলো দোকানে পুতুলের গায়ে জরানো একটা শাড়ির দিকে।
লাল পাঁড়ের একটা সাদা শাড়ি। এক মুহূর্তর জন্য রাফসান চৈতালী কল্পনা করলো পুতুলের জায়গায়।
আচ্ছা চৈতীর কি এরকম শাড়ি আছে?? নাহ্ এরকম শাড়ি তো পড়তে দেখে নি ওকে।
রাফসান শাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। খুবই সিস্পল। আঁচল টা লাল। পাঁড় টাও লাল। শাড়ির জমিন টা সাদা। সাদা মধ্যে হালকা সুতার কাজ।
রাফসানের মনে হলো এই শাড়ি টা চৈতীর জন্যই তৈরি হয়েছে।
কোন কিছু চিন্তা না করেই শাড়িটা কিনে নিলো সে।
**রাফসান যখন ফিরলো তখন চৈতালী হাতে মেহেদী দিচ্ছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত বোধ করলো রাফসান। শাড়ি তো কিনে ফেললো এখন কি ভাবে দেবে??
রাফসানকে ওরকম করতে দেখে চৈতালী বললো- কিছু বলবে??
দু পাশে মাথা নাড়লো রাফসান। তারপর আচমকা শপিং ব্যাগটা চৈতালীর হাতে দিয়ে দ্রুত পায়ে বেড রুমে চলে গেলো সে।
মেহেদী দেওয়া হাতটা ধুয়ে এসে ব্যাগের ভিতর থেকে শাড়িটা বের করলো চৈতালী।
অজান্তেই তার মুখ দিয়ে বের হলো ওয়াও। তারপর শাড়ি দেওয়ার ধরণ মনে পড়তেই হেঁসে ফেললো সে।
**রাফসান চৈতালী কে নিয়ে একটা এতিমখানায় এসেছে। চৈতালী সারা রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলো তারা কই যাচ্ছে?
রাফসান একটাই উত্তর দিয়েছে গেলেই দেখতে পাবি। যদিও এতিমখানায় কেন এনেছে সে বুঝতে পারছে না।
এখানে এসে দেখছে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে।
সবার মুখে হাঁসি। রাফসান কাছে যেতেই ওকে ঘিরে ধরলো সবাই। বোঝা যাচ্ছে এখানে রাফসানের যাতায়াত আছে।
এতিম খানার এক পাশে দুটো গরু জবাই হয়েছে। বাচ্চারা চরম উৎসাহ নিয়ে গরু কাটা দেখছে। কেউ রান্নার জায়গা তে।
অনেকে আবার কাজও করছে। যেন আজ ওদের ঈদ।
চৈতালী ঘুরে ঘুরে ওদের দেখছিল। এর মাঝে রাফসান বললো- চৈতী।
-হুম। বলেই তাকালো চৈতালি।
– ভালো লাগছে তোর এখানে??
– খুব ভালো লাগছে। কিন্তু তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে?
– আজ আমরা ওদের সাথে খাবো তাই। আমি তো মাঝে মাঝেই খাই।
– তুমি যে মাঝে মাঝে খাও সেটা বোঝা যাচ্ছে। তবে আমি কিছু বুঝছি না।
রাফসান হাঁসলো। বললো – ওদিকে চল বলি।
এতিম খানার একপাশে গাছের ছায়ায় বসে চৈতালী বললো- এবার বলো।
রাফসান বললো-এই এতিমখানা তে আমি মাঝে মাঝেই ডোনেশন দেই। এজন্য আসতে হয়। আজ তোর জন্মদিন। তাই ভাবলাম এই খুশিটা এই এতিম বাচ্চাদের সাথে শেয়ার করি। তাই এই ব্যবস্থা।
– হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি তো ওদের বাইরে নিয়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে পারতে। তা না কারে….
– তা পারতাম। তাহলে একটা জিনিস মিস হয়ে যেতো। এই দেখ বাচ্চা গুলো কি খুশির সাথে গরু কাটা থেকে শুরু করে সব কাজে অংশ নিচ্ছে দেখেছিস। যেন পিকনিক পিকনিক ভাব। ব্যাপারটায় আলাদা মজা পাচ্ছে। এইটা রেস্টুরেন্টে গেলে হতো না তাই এ ব্যবস্থা।
চৈতালী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো রাফসানে দিকে। এই রাফসান কে সে আজ আবিষ্কার করলো।
**ওরা যখন এতিম খানা থেকে বিদায় নিলো তখন বিকেল গড়িয়েছে। গাড়িতে বসে চৈতালী প্রথম বললো- ধন্যবাদ তোমাকে। এত সুন্দর একটা দিন আমাকে গিফট করার জন্য।
জবাবে রাফসান মৃদু হাসলো।
চৈতালী হঠাৎ খেয়াল করলো গাড়ি বাসার দিকে যাচ্ছে না। বললো- বাসায় যাবে না?
– যাব একটু পর। এদিকে একটা সুন্দর জায়গা আছে ওখানেই যাচ্ছি।
চৈতালীরা যেখানে এসেছে সে জায়গাটা ভীষণ নিরিবিলি। সামনে একটা নদী। এখানে নদীর পাড়ে বেশ কয়েক জোড়া প্রেমিক যুগলকে দেখা গেলো বসে থাকতে।
চৈতালীর ও ইচ্ছে করলো ওভারে রাফসানের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে থাকতে।
কিন্তু লজ্জায় বলতে পারলো না ও। ওর যে আজকাল কি হয়েছে শুধু লজ্জা পাচ্ছে। কই আগে তো এরকম লজ্জা পেতো না সে।
রাফসান হঠাৎ ডেকে উঠলো বললো- চৈতী নৌকায় চড়বি??
লাফিয়ে উঠলো চৈতালী বললো -চড়বো।
রাফসান একটা নৌকা ভাড়া করলো। চৈতালী নৌকায় বসেই পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো। তারপর রাফসানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাঁসলো।
চৈতালীর এ হাঁসি বুকে গিয়ে ধক করে উঠলো রাফসানের। মনে হলো সময়টা এখানেই থেমে যাক।
রাফসান কি জানতে পারলো তার পাশে বসে চৈতালীও ঠিক একই দোয়া করছে।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ২০
সামিরা আক্তার
** শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় চলছে। এই তীব্র গরম আবার এই স্বস্তির বৃষ্টি।
এর মাঝে আরও ২ মাস কেটে গেছে। রাফসান চৈতালীর সম্পর্ক আরও সহজ হয়ে গেছে। দুজনেই দুজনের ভালবাসা বুঝতে পারে তবে দেয়াল ভেঙ্গে সামনে আগায় না কেউই।
রাফসানের আজ কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ায় বাসায় চলে এসেছে তাড়াতাড়ি। এমনিতেই ওর বাইরে সময় কাটানোর অভ্যাস কম। এক সময় প্রচুর বন্ধু বান্ধব থাকলেও সময়ের সাথে দূরে চলে গেছে সবাই। এখন একমাত্র জুনায়েদই কাছের বন্ধু। তাও সে দেশের বাইরে। তাই অফিস আর বাসা এটুকুই তার গন্তব্য।
রাফসান যখন বাসায় ফিরলো তখন মেঘে ছেয়ে গেছে চারপাশ। যেকোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। কলিং বেল বাজিয়ে না পেয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুললো সে।
আওয়াজ করে চৈতালী কে ডাকলো। চৈতালী সারা দিলো না।
রাফসান অবাক হলো। তারপর ভাবলো ওয়াশরুমে গেছে হয়তো। সে ডাইনিংয়ের সোফায় বসলো। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন চৈতালী এলো না তখন টনক নড়লো রাফসানের।
দ্রুত পায়ে বেড রুমে এলো কিন্তু চৈতালী কে পেলো না। ওয়াশরুম দেখলো সেখানে নেই। বারান্দা চেক করে বাকি রুমটাও চেক করলো সে। নেই চৈতালী।
রাফসানের মাথা ফাঁকা হয়ে গেলো। কই গেলো চৈতালী। ও কি কোন দরকারে বাইরে বের হয়েছে?? বের হলে আসবে কিভাবে? যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে। আর তাকেও তো কিছু বলে নি।
হঠাৎ বিছানার পাশে চৈতালীর ফোন টা নজরে এলো রাফসানের।
ফোন তো এখানেই তাহলে চৈতী কোথায়??
ছাঁদে যায়নি তো?? ছাদের কথা মাথায় আসতেই দ্রুত ছাদের দিকে গেলো সে।
** ছাঁদে আসতেই থমকে গেলো রাফসান। ততক্ষণে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর আকাশের দিকে মুখ করে দুহাত প্রসারিত করে সেই বৃষ্টি উপভোগ করছে চৈতালী।
চৈতালীর পরনে রাফসানের দেওয়া সেই লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি টা। যেটাতে রাফসানের কল্পনার চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে চৈতীকে।
লাল হাতাকাটা ব্লাউজের সাথে লাল পাঁড়ের এই সাদা শাড়ি। খোলা চুল, দুহাত ভর্তি সাদা চুড়ি, চোখে মোটা করে কাজল টানা, ঠোটে গাঢ় লিপিষ্টিক। মোহনীয় লাগছে ওকে।
কিন্তু সাদা চুড়ি পড়লো কেন?? লাল নেই না কি??
একটা শুকনো ঢোক গিললো রাফসান। মনে হলো এই ঠান্ডা আবওহাওয়াতেও সে ঘামছে।
আচ্ছা এই মেয়ের কি হাতা কাটা ছাড়া আর কোন ব্লাউজ নেই। চৈতীর এই রুপে যে খুন হচ্ছে রাফসান তা কি বুঝতে পারছে চৈতী??
আচমকাই বৃষ্টি জোরে আসতে শুরু করলো। চৈতালীর শরীরে লেপ্টে থাকা বৃষ্টির কণা গুলোকেও হিংসা হলো রাফসানের।
কিভাবে তার প্রেয়সী কে ছুয়ে আছে। কই সে তো ছুতে পারছে না।
হঠাৎ চৈতালী রাফসানকে দেখতে পেলো। ইশারায় ডাকতেই এগিয়ে গেলো রাফসান। তার কানে আর কিছু বাজছে না। সে চৈতালীর ডাক ছাড়া যেন আর কিছু শুনতে পাচ্ছে না।
চৈতালীর কাছে আসতেই রাফসান চৈতালীর দু গালে হাত রাখলো। চৈতালী একটু অবাক হলো সেও তাকালো রাফসানের দিকে। রাফসানের চোখে যেন আজ অন্য কিছু দেখতে পেলো সে।
রাফসান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে চৈতালীর ঠোটের দিকে। ঠোটে বিন্দু বিন্দু পানি কণা। আচমকা রাফসান চৈতালীর ঠোঁটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো।
রাফসানের এমন আক্রমনে ঘাবড়ে গেলো চৈতালী।
হঠাৎ একটা বজ্রপাতের শব্দে হুশ ফিরে আসে রাফসানের। চৈতালী কে ছেড়ে দিয়ে অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠলো – আই এ্যাম সরি চৈতী। আমি আসলে বুঝতে পারি নি। আমার সত্যি এরকম কোন ইচ্ছা ছিলো না।আমাকে ভুল বুঝিস না।
বলেই ছাঁদ থেকে যাবার জন্য পাঁ বাড়ালো সে। কিন্তু পিছনে টান অনুভব করতেই দেখলো চৈতালী তার শার্ট মুঠ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে ঘুরে দাঁড়াতেই মাথা তুলে তাকালো চৈতালী। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো অনেকহ্মণ।
মুখে কিছুই বলতে হলো না দুজনে বুঝে নিলো দুজনের মনের কথা, চোখের ভাষা।
আচমকা চৈতালী কে কোলে তুলে নিলো রাফসান। তারপর ছাদ ত্যাগ করে বাসায় এসে বেড রুমে প্রবেশ করলো তারা।
প্রকৃতিও বোধ হয় তাদের এই মিলন কে সাহ্মী হয়ে বৃষ্টির বেগ বাড়িয়ে দিলো। বাইরে এক বৃষ্টি। ভিতরে একজোড়া কপোত কপোতী সাহ্মী হলো প্রেমের বৃষ্টির। কিছু উষ্ণ নিঃশ্বাসের।
(ক্রমশ)লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ২১
সামিরা আক্তার
** রাফসান আর চৈতালীর দিন কাটছে আনন্দে। দুজনের মনেই নতুন প্রেমে পড়ার আনন্দ। আজকাল রাফসান চৈতালী কে ইউনিভার্সিটি তে ড্রপ করে দেয় আবার নিয়ে আসে।
কখনো বিকেলে ঘুরতে যায় আবার কখনো বা সিনেমা দেখতে।
চৈতালী কে এখন একদমই কাছ ছাড়া করতে চায় না রাফসান। জীবনে বহুদিন পর সে সুখের দেখা পেয়েছে। এখন এই সুখটুক উপভোগ করতে চায় শুধু
এর মাঝে চৈতালী ঘুরতে যাবার বায়না ধরেছিলো। তাও দেশের বাইরে কিন্তু চৈতালীর পার্সেপোর্ট না থাকায় সেটা তৈরী করতে দেওয়া হয়েছে। তাই যাওয়াও হয় নি। তবে রাফসান ভেবেছিলো দেশের মধ্যেই কোথাও একটা ঘুরে আসবে কিন্তু এর মাঝেই তার ব্যাস্ততা বেড়ে গেলো আর চৈতালী ও বলেছে সামনে তার ফাস্ট ইয়ার ফাইনাল পরীহ্মা। পরীক্ষা গুলো দিয়ে তারপর যাবে।
আজ চৈতালীর ক্লাস নেই। রাফসানের ও ব্যাস্ততা কমেছে। দুজনেই বাসায়। চৈতালী ইউটিউব দেখে কেক বানানোর চেষ্টা করছে।
এমন সময় কেউ এসে তার কোমড় জরিয়ে ধরে চুলে মুখ ডুবিয়ে দিলো। চৈতালী ঈষৎ কেপে উঠলো। এতদিনে এই ছোয়া তার চেনা। এই হাতের মালিক কে সে খুব ভালো করে জানে। তাই তার মতলবও বুঝতে দেরি হলো না।
– ছাড়ো তো দেখছো একটা কাজ করছি।
চৈতালী ছাড়ার কথা বললেও ছাড়ার কোন লহ্মণ দেখা গেলো না রাফসানের মধ্যে।
– কি হলো ছাড়ো।
– তুই আজকাল আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিস না চৈতী। বলে কোমড়টা আর একটু শক্ত করে ধরলো রাফসান।
রাফসানের কাজে হতাশ হলো চৈতালী। এই লোক ইদানিং পারলে ওর সাথে সবসময় লেপ্টে থাকে আর বলে কি না সে পাত্তা দিচ্ছে না।
– আচ্ছা আমি না হয় তোমাকে পাত্তা দেই না কিন্তু তুমি যে আমাকে তুই বলো সেটার কি হবে??
রাফসান একটু অপরাধী মুখ করে চাইলো। চৈতালী ওকে বার বার বলেছে ওকে তুই করে না বলতে। কিন্তু সে অভ্যাসবসতো বলে ফেলছে। বললো- একটু টাইম লাগবে চৈতী।
চৈতালী কথা বাড়ালো না। কেক টা ওভেনে দিয়ে সোফায় বসলো। আর রাফসান ওর কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। চৈতালী বললো – তুমি কখনো স্নো দেখেছো??
– দেখেছি।
– কোথায়??
– জার্মানিতে। রাফুর ওখানে গেছিলাম।
– আমার স্নো দেখার খুব ইচ্ছা জানো? তুমি আমাকে হানিমুনে সুইজারল্যান্ড নিয়ে যাবে। রাফিয়া আপু আমাকে বলেছে স্নো না কি কল্পনার চেয়ে বেশি সুন্দর।
– উহু ভুল বলেছে রাফু। স্নো সুন্দর কিন্তু তার চেয়ে বেশি সুন্দর আমাদের বাংলাদেশের বৃষ্টি। যে বৃষ্টিকে ঘিরে
রচিত হয়েছে কবিতা,গল্প, উপন্যাস, সিনেমা, মুভি, গান।
-তা ঠিক বলেছো। বৃষ্টি আসলেই সুন্দর, আমার কাছে মাদকতার মত।
-তবে বৃষ্টির চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আমি দেখেছি চৈতী। চৈতালী রাফসানের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকালো।
রাফসান বললো- আমি দেখেছি বৃষ্টিতে ভেজা এক সুন্দরী রমনীকে। লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি পড়া এক রমনী। খোলা চুলে দাঁড়িয়ে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাত প্রসারিত করে।
এই দৃশ্য দেখার সাথেই আমার মনে হলো হৃদয় টা আমার সাথে নেই। ওই রমনী ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
চৈতালীর হঠাৎ ভীষণই লজ্জা লাগলো। রাফসান যে ওর কথাই বলছে সেটা ও জানে। ও রাফসানের দিকে লাজুক মুখ নিয়ে তাকাতেই দেখলো রাফসান ঘোর লাগা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
এই দৃষ্টির মানে রাফসান জানে। ওর ওখান থেকে পালানোর জন্য ওঠে দাঁড়াতেই নিজেকে শূন্যে আবিষ্কার করলো।
রাফসান ওকে কোলে তুলে নিয়েছে। লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলো ও। এই লোকটা আজকাল একটু বেশিই রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছে।
** রাফসানের পাশে শুয়ে আছে চৈতালী। একটু আগের কথা চিন্তা করে আরেক দফা লজ্জা পেলো সে। রাফসানের মুখের দিকে তাকালো সে। লোকটার ডান চোখের ভ্রুতে একটা বড় তিল আছে। যার জন্য ওই জায়গাটা দেখতে ঘন কালো লাগে।
চৈতালী ওই খানে ঠাস করে একটা চুমু দিয়ে ওয়াশ রুমের দিকে দৌড় দিলো। চৈতালী যেতেই চোখ খুলে শব্দ করে হেঁসে ফেললো রাফসান।
** চৈতালীর পরীহ্মা শুরু হয়েছে। তাদের সিট পড়েছে মিরপুরে। প্রতিদিন গুলশান থেকে মিরপুর যেতে যেতে ওর অবস্থা খারাপ। রাস্তায় অতিরিক্ত যানজট। তারপর ইতিহাসের রসকষহীন পড়া। সব মিলিয়ে খারাপ অবস্থা।
পরীহ্মা গুলো গেলে বেঁচে যায় সে।
রাফসানের যত কাজই থাক চৈতালীর পরীক্ষার দিনগুলোতে কখনো একা ছাড়ে না ওকে। তাছাড়া রাফিয়া ফোন করে জানিয়েছে আর দুদিন পড়েই ওদের বিবাহবার্ষিকী।
রাফসানের মনে ছিলো না। ও একটু অবাক হয়েছে। চৈতীর সাথে তার জীবনের এক বছর কেটে গেলো সে জানতেই পারলো না।
অবশ্য রুটিনে দেখেছে চৈতালীর সেদিনও পরীক্ষা আছে। এই বিষয়টা নিয়ে একটু হতাশ রাফসান। দিনটা একটু অন্যরকম করে কাটানো যেতো। সেটা হবে না।
রাফসানের আজকাল নিজেকে টিনএজের মনে হয়। চৈতালী আশেপাশে থাকলেই নিজেকে ফুরফুরে লাগে।
তবে যেমন করেই হোক বিবাহবার্ষিকীর দিনটা একটু অন্যরকম করে কাটাবে ওরা।
(ক্রমশ)
–