গল্পের নাম : #শ্রাবনের_মেঘ
লেখিকা : ফারিয়া
পর্ব : ৮
কল ধরতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠলো,
” মেঘরানী, নিজের ভাইকে পেয়ে এই ভাইটাকে ভুলে গিয়েছিস তাই না? ”
মেঘা হেসে বললো,
” জ্বী, আপনাকে ভুলে গিয়েছি। কিন্তু, আমার রাজ ভাইকে নয় হুহ। ”
রাজ বললো,
” হুহ, হয়েছে হয়েছে। তোর জন্য একটা খুশীর খবর আছে, আমি ঢাকায় যাবো। আমার পোস্টিং ঢাকায়, চাইলেই আমার বোনু মেঘরানীর সাথে দেখা করতে পারবো ”
মেঘা খুশী হয়ে কিছুক্ষন কথা বললো। আসলে রাজের কেউ নেই, চাচার বাড়িতে মানুষ হয়েছে সে৷ খুব ছোটবেলায় তার বাবা মা মা’রা যায়। চাচীর অ’ত্যা’চা’র এবং চাচাতো ভাইবোনদের দ্বারা মানসিক কষ্ট পেতে পেতে বড় হয়েছে সে। পাশের বাড়ির ছোট পিচ্চিটা যেদিন তাকে ভাই বলে ডেকেছিলো, যেনো তার প্রান জুড়িয়ে গিয়েছিলো৷ তখন থেকেই সেই পিচ্চি বোনটিকে আগলে রেখেছে রাজ, আদর করে তাকে মেঘরানী বলে ডাকতো। ওদের দেখে কেউ বুঝতেই পারতো না যে ওরা নিজের ভাইবোন নয়। খুব কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করে এখন চাকুরী করছে।
🍂
পরেরদিন সকালে, আজ সরকারি ছুটির দিন। শ্রাবন মেঘার বিয়ের ব্যাপারে আজ আলোচনা হবে। যেহেতু আহম্মেদ বাড়ির ছেলেমেয়েদের বিয়ে বলে কথা! অনুষ্ঠান তো হবেই৷ বিয়ের তারিখ একটু পেছানো হয়েছে, আজ শপিংয়ে যাবে ওরা৷ পরশু মেহেদী, তারপর গায়ে হলুদ এবং বাকি অনুষ্ঠান। কার্ডের অর্ডার দেওয়ার দ্বায়িত্ব পড়েছে শান্তর উপর। শান্ত কয়েক রকমের কার্ড এনে সবার সামনে রাখলো, আর বললো,
” দেখো তো, কোনটা বেশী ভালো হবে? ”
মেঘার চোখ গেলো কালো সাদার কম্বিনেশনে একটি কার্ডের দিকে। বিয়েতে সবারই বেলায় লাল বা নীল কিংবা গোলাপী রঙের কার্ড থাকে। তবে, বিয়ে তো একবারই হয়, তাই কিছুটা ইউনিক হলে মন্দ নয়। লজ্জা কাটিয়ে বললো,
” আচ্ছা এই কালো সাদা রঙের কার্ডটি কেমন হবে? ”
সবাই দেখলো সুন্দর, তাই যেহেতু শ্রাবন মেঘার বিয়ে তাই তারা আপত্তি জানালো না। বিকালে সবাই শপিংয়ে যাবে, শান্ত কিছুক্ষন পর কার্ড দিতে যাবে। কারণ, কার্ডের ব্যাপারে কথা বলেছে৷ ডেলিভারি দিতে বেশী সময় লাগবে না। ইফতি ফুলের ব্যাপারে এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের সাথে কথা বলতে যাবে৷ শ্রাবন অফিসে গিয়ে সবাইকে নেমন্তন্ন করতে যাবে৷ এক কথায় সবাই খুব ব্যস্ত, মেঘার কোনো কাজ নেই শুধু একঝাক স্বপ্ন বোনা ছাড়া।
🍂
শপিংয়ে বের হলো সবাই, প্রথমে মেহেদীর কাপড় কিনবে। কিছুক্ষন কেনাকাটা করে সবাই কফিশপে ঢুকলো, শ্রাবনের পছন্দে সব কিছু কেনা হয়েছে। কফিশপ থেকে বের হওয়ার সময় হঠাৎ মেঘা কারো সাথে থাক্কা খেলো। মেঘা ‘ সরি ‘ বললো, কিন্তু মেয়েটি চেচামেচি শুরু করে দিলো। শ্রাবন এগিয়ে গিয়ে দেখলো, মেয়েটি আর কেউ নয়৷ মেয়েটি হলো তার খালাতো বোন রিশা, পাশে একটি ছেলে। শ্রাবনকে দেখে রিশা চুপ হয়ে গেলো, আর বললো,
” ওহ, শ্রাবন তুমি এখানে কি করছো? ”
এই মেয়েটার কথা শুনলেই শ্রাবনের রাগ উঠে। দাতে দাত চেপে বললো,
” প্রথমত, আমি তোর বড়। তাই আমায় নাম বলে ডাকিস কোন সাহসে? আর এখানে অ’স’ভ্য এর মতো চেচামেচি করছিস কেনো ”
রিশা লজ্জা পেলো এবং বললো,
” ওহ আচ্ছা, সরি শ্রাবন ভাইয়া। আর দেখো না, এসব গাইয়া মেয়ে যে কোথা থেকে আসে বুঝি না। দেখে শুনে হাটতেও পারে না, দেখো না ধাক্কা দিয়ে আমার এতো দামী ড্রেসে কফি ফেলে দিয়েছে। ”
শ্রাবন মেঘার দিকে তাকালো এবং বললো,
” কি হয়েছে বলো তো মেঘরানী ”
মেঘা বললো,
” আসলে আমি দেখি নি উনাকে, আর উনিও পাশে কথা বলতে বলতে এসেছে। তাই উনি লক্ষ্য করেননি এবং আমিও নাহ। আমি সরি বলেছিলাম, কিন্তু উনি এমন শুরু করেছে ”
শ্রাবন রিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
” দোষটা ওর একার নাহ, এরপরের বার নিজেও দেখে শুনে চলবি। আর ভালো করে তাকিয়ে দেখ তো, তোর ড্রেসটা নাকি তার ড্রেসটা দামী? ”
রিশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, শ্রাবনের সাথে এই মেয়ের সম্পর্ক কি? ওর হয়ে এতো কথা কেনো বলছে? আর তাকিয়ে দেখলো, হ্যাঁ তার থেকেও মেঘার ড্রেসটা দামী। রিশা বলে উঠলো,
” কে এই মেয়ে শ্রাবন ভাইয়া? ”
শ্রাবন মেঘাকে এক হাতে জড়িয়ে বললো,
” আমার বউ, তোর ভাবি। জানি বলবি যে কবে বিয়ে করেছি, বিয়েটা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গিয়েছে। তোর খালামনিরাও জানতো না, তবে শান্ত ভাইয়া আজ হয়তো তোদের বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এসেছে। আমার বিয়েতে আসবি কিন্তু, নাচতে হবে তো। আর খালামনিকে বলিস, আমার সেই পুতুল মেঘার সাথেই আমার বিয়ে৷ ইফতির নিজের বোনের সাথে ”
শেষের কথাটা শুনে রিশা যেনো আকাশ থেকে পড়লো। শ্রাবন আর কিছু না বলে মেঘার হাত ধরে এগিয়ে গেলো। সবাই মিলে বাসায় চলে গেলো, আজ থেকে মেহমান আসা শুরু হবে। রহিমা বানু, নিশি, রাজ সবাইকে আজই এনেছে শ্রাবন। কারন, ছোট থেকে এরা মেঘার সবচেয়ে প্রিয় ছিল।
🍂
রিশা বাড়িতে যেতেই তানজিলা বেগম তাকে বললো,
” কই ছিলি তুই? কতোবার বললাম একটু তাড়াতাড়ি আয়। তুই জানিস কি হয়েছে? শ্রাবনে. ”
পুরো কথা শেষ করার আগেই রিশা বললো,
” হ্যাঁ, জানি। ”
তারপর একে একে সব ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে তানজিলা বেগম বললো,
” এটা কিভাবে হতে পারে? যেই মেয়ে এক বছর বয়সেই হারিয়ে গিয়েছিলো, সে কিভাবে ফিরতে পারে? না না, এই বিয়ে হতে দেওয়া যাবে না। সবকিছু আমার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। কালই আম বড় আপার বাড়িতে যাবো ”
রিশান সব শুনে বললো,
” কেনো যে তোমাদের মতো পরিবার পেয়েছি আম জানি না, মানুষের ভালো দেখতে পারো না? শ্রাবন ভাইয়াকে থাকতে দাও না তার মতো। কেনো শুধু শুধু তার পিছনে পড়েছে? আচ্ছা যদি আমার সাথে এমন হয়, তখন কি তোমাদের ভালো লাগবে? ”
তানজিলা বেগম ভাবলো, ছেলে কেনো তার মতো হয়নি? তার একটা কথাও শোনে না। বরং, তাকে বাধা দেয়। তিনি রেগে বললো,
” তুই চুপ কর, আমাদের মাঝে আসবি না। যা উপরে যা ”
রিশান জানে, তার মা, বোনকে বলে লাভ নেই। তাই চুপ করে রইলো, ভাবলো এবার অনেক হয়েছে। যাকে জানানো দরকার তাকেই জানাবে এবার।
🍂
মেঘা শ্রাবনের গিটারটা হাতে নিয়ে একটু বাজালো, শ্রাবন বললো,
” মেঘা! তুমি গিটার বাজাতে পারো? ”
মেঘা বললো,
” হ্যাঁ, কিছুটা। ”
শ্রাবন বললো,
” কার কাছে শিখেছো? ”
মেঘা বললো,
” কেনো? রাজ ভাইয়ার কাছে। ভাইয়ার পুরো পরিচয় জানেন না? এটা তাহলে সিক্রেট থাকুক। সামনে থেকেই দেখবেন এবার। রাজ ভাইয়ার গিটার ছিলো, নিজে কষ্ট করে কিনেছিলো। তার কাছেই শিখেছি। ”
শ্রাবন বললো,
” আচ্ছা মেঘপরী, গিটারে একটা গান শোনাবে? ”
মেঘা লজ্জা পেলো, বললো,
” না গান নয়, সুর করে দেবো। আপনি গাইবেন? ”
শ্রাবন সম্মতি জানালো, মেঘা সুর তুলতেই শ্রাবন গেয়ে উঠলো,
” Dewane hum nehi ho te he
Dewani rat aati hea
Mohabbat ki nehi jati
Mohabbat aj ati hea
Kisi ki aakhon se ”
এতোটুকু গাইলো আর বললো,
” কাল সব কাজিনরা আসবে মেঘপরী, কাল এই গানটা তুমি আমি মিলে গাইবো। ”
চলবে