#তুমি_আছো_তুমি_রবে ( উপন্যাস)
#পর্বঃ২২ (অন্তিম পর্ব) #রেহানা_পুতুল
আমি আসব ভিতরে?
না কেউ আসার প্রয়োজন নেই। শুধু ঝিনুকের মা আসুন আমার সাথে।
একদম হাউমাউ করে কাঁদবেননা বলছি। শুধু আপনার মেয়ের হাতের তালুটা আলতো করে ধরে রাখুন। মনে মনে আল্লাহকে ডাকুন।
ঝিনুকের সিটের নিচে মেঝেতে বসার নির্দেশ দিয়ে বললেন ডাক্তার।
ঝিনুকের মা পারুল সদ্য মা হারা পাখির ছানার মতো কাঁপতে কাঁপতে বসে পড়ল নিচে৷ ঝিনুকের হাতের তালুর উপরে অতি সযতনে মায়ের প্রাণ উজাড় করা পরশ বোলাতে লাগল। নিজের জীবনের বিনিময়ে মেয়ের জীবন ফিরে পেতে প্রার্থনায় নিমগ্ন তিনি।
তার কানে আসছে ডাক্তারদের কথা। তারা বলাবলি করছে, পৃথিবীতে মা হলো সন্তানের জন্য সুপার পাওয়ারের মতো। মায়ের দোয়া আল্লাহ অনেকসময় কবুল করেন। এমন নজির কিন্তু রয়েছে। কথার সাথে অন্য ডাক্তাররাও সম্মতি জানাচ্ছে। তারা ঝিনুকের পালস চেক করছে অনবরত। অজ্ঞান হয়ে আছে ঝিনুক। জ্ঞান ফেরার নামমাত্র নেই। রক্ত তিনব্যাগ শেষ হয়ে চার নাম্বার ব্যাগ চলছে। যদিও খুব ধীরে ধীরে যাচ্ছে রক্ত শরীরে। আরেক হাতে স্যালাইন চলছে। তাও ধীরে ধীরে টানছে। মুখের একপাশ কাটা গিয়েছে বেশ। সেটা সেলাই করে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
সকাল হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালের চারপাশের বিভিন্ন গাছের ডালে বসে থাকা কাকেদের অস্থিরভাবে কা কা কলরব শুরু হয়ে গিয়েছে। হাসপাতাল জুড়ে শত শত রোগীর নিকটজনের হায়হুতাশের বেহিসেবী চিৎকার শুরু হয়ে গিয়েছে। ঝিনুকের মা মেয়ের মুখের উপরে তীর্থের কাকের ন্যায় চেয়ে আছেন। ডাক্তারগণ হতাশ হয়ে প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
ঝিনুকের মাকে ডাক্তার এবার নির্দেশ দিলেন,
আপনি উনার কানের কাছে মুখটা নেন। আস্তে করে আপনার মতো করে ডাকতে থাকুন।
ঝিনুকের মা এতসময় এটাই চেয়েছে একান্ত করে। কিন্তু ভয়ে বলতে পারছেনা। পরে না আবার হিতে বিপরীত হয়।
ঝিনুক…মা…ওওও..ঝিনু…মারে…মাআআ.. শুনতে পাচ্ছিস..আমি তোর পারুল মা…তাকা..মা। মায়ের দিকে একবার ফিরে চা।
ঝিনুকের মায়ের আকুল করা নিরব অশ্রুবিলাপ দেখে ডাক্তাররা টিস্যু দিয়ে নিজেদের ভেজা চোখ মুছে নিলেন। অনান্য সিটের রোগীর লোকজনগুলোও চোখের পানি ছেড়ে দিল।
এমন ডাকতে ডাকতে বহু সময় কেটে গেলো। আকস্মিকভাবে ঝিনুকের মা টের পেলেন তার এক হাত দিয়ে ধরে রাখা ঝিনুকের দূর্বল হাতখানি মৃদু নড়ে উঠল। তিনি চোখ নামিয়ে মেয়ের হাতের দিকে তাকালেন। ডাক্তার বসা থেকে উঠে এলেন মুহুর্তেই। ঝিনুকের নড়ে উঠা হাতখানি ধরলেন।
অন্য ডাক্তারদের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় করে বললেন,জ্ঞান ফিরেছে। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। ঝিনুকের মাকেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে ভুল করলেন না ডাক্তাররা।
ডাক্তার বাইরে গিয়ে সবাইকে জানালেন আপনাদের পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। মায়ের ডাক বিফলে যায়নি। তবে এখনো অনান্য জটিলতা রয়েছে। আপনারা কেবিনের ব্যবস্থা করতে পারেন এবার। কিন্তু কেবিন পেয়ে আরামে রোগীর কানের কাছে অতিরিক্ত কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকবেন।
বারান্দায় কাত চিৎ হয়ে মরার মতো পড়ে থাকা সবাই উঠে দাঁড়ালো। দুইহাত তুলে সবাই আল্লাহর দরবারে অশ্রুমাখা চোখে লাখো শুকরিয়া আদায় করলেন।
এ ভিতরে ঝিনুকের প্রাণের বিনিময়ে তার বাবা একটি গরু মানত করেছেন। তার শশুর নিজের গ্রামে একটি মাদ্রাসা স্থাপন করবেন নিয়ত করেছেন। আরশাদ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। বোন জিনিয়া দুইটা ছাগল সদকা দিবে বলে ঠিক করেছে। কারণ ঝিনুকের দুই বন্ধু দূর্ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়েছেন তাদেরকে।
কেবিন নেওয়া হয়ে গিয়েছে একদিনের মধ্যেই। পরেরদিন বিকেলে স্ট্রেচারে করে ঝিনুককে কেবিনে নিয়ে গেল। ঝিনুক কিন্তু এখন অবধি চোখের পাতা মেলতে পারেনি। কিন্তু কানে শুনতে পাচ্ছে ক্ষীণভাবে। আর মাঝে মাঝে হাত নাড়াচাড়া করছে। আরো দুদিন পরে ঝিনুক তার ক্ষীণকায় মুদিত আঁখিপল্লব মেলে ধরলো। প্রথমে মায়ের মুখখানি দেখেই চোখের পানি ছেড়ে দিল। তারকাছে পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন আর নির্ভরতা হল তার মা।
একে একে বাকি সবার মুখ দেখতে পেলো ঝিনুক। আরশাদের দিকে নিমীলিত নয়নে তাকালো। আরশাদ করুণ চোখে চাইলো। বোবা ভাষায় ঝিনুককে বুঝিয়ে দিল, তুমি ছাড়া আমি বিরানভূমি। নিঃস্ব।
এভাবে হাসপাতালের কেবিনে পুরো একমাস ঝিনুককে থাকতে হয়েছে। সবার আসাযাওয়া, অসীম সেবাযত্নে, ডাক্তারদের মনোযোগী সুচিকিৎসায় ঝিনুক আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠলো।
আজ ঝিনুকের রিলিজ হওয়ার দিন। তার বাবা মাও উপস্থিত রয়েছে। আরশাদ দৌড়ঝাঁপ করে রিলিজের সব কাগজপত্র ঠিক করল।
আরশাদের সাথে জামান খান ও ঝিনুকের বাবা পরশ ও রয়েছে। হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে চেয়েছে সে। কিন্তু কিছুতেই জামান খান তা হতে দিলেন না। বললেন ঝিনুকের স্থানে যদি আরিশা হতো। আমি যা করতাম এখন তাই করছি। ঝিনুক আর আরিশাকে আমি একচোখেই দেখি পরশ ভাই। দুইচোখে নয়। বলে পরশের কাঁধে ভ্রাতৃত্বের হাত রাখলেন।
ডাক্তার থেকে প্রেসক্রিপশনের ঔষধগুলো খাওয়ার নিয়ম বুঝে নিলো আরশাদ। ডাক্তার তিনজনের দিকে চোখ তুলে চাইলেন। বললেন আপনাদের জন্য একটা স্যাড নিউজ আছে। হাসিমুখে মেনে নেয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।
উনি মা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন চিরদিনের জন্য। উপর ওয়ালার হুকুম থাকলে কি না হয়। সে হিসেবে যদি কখনো হয় তা হবে আপনাদের জন্য সারপ্রাইজড।
এছাড়া আর কোন সমস্যা নেই। আরো তিনমাস রেস্টে রাখবেন উনাকে। ঘরের কোন ভারি কাজ যেন না করে।
আরশাদ, তার বাবা, ও ঝিনুকের বাবার চোখেমুখে প্রবল উৎকন্ঠার ছাপ ভেসে উঠলো।
আরশাদ আর জামান খানের যতটা মন খারাপ হলো। তার চেয়ে বেশি মন খারাপ হলো ঝিনুকের বাবার। তার মুখে গাঢ় বিষাদ ফুটে উঠল।
তারা ডাক্তারের সামনে থেকে উঠে গেল। জামান খান ঝিনুকের বাবার হাত ধরে আন্তরিকতাপূর্ণ গলায় বলল,
ভাবছেন, আমার মেয়ের রিজিক উঠে গেল বুঝি। জামাই আরেক বিয়ে করবে সন্তানের জন্য। একদম না পরশ ভাই। বললাম না ঝিনুক আর আরিশা আমার কাছে একই। ঝিনুক আছে ঝিনুক রবে আরশাদের একমাত্র স্ত্রী হয়ে।
পরশ পকেট থেকে রুমাল বের করে ভেজা চোখ ঢলে মুছে নিল।
ঝিনুককে বাসায় নিয়ে আসল। তিনমাস শেষ হয়ে গেল। পুরোপুরি সুস্থ এখন ঝিনুক। ঝিনুককে এখন ভার্সিটিতে আরশাদ নিয়ে যায়। আবার গিয়ে নিয়ে আসে। কথায় আছে যাকে কুমিরে কামড় দেয়। সে ঢেঁকি
দেখলেও ভয় পায়।
শরতের এক স্নিগ্ধ বিকেল। শুভ্র মেঘেদের আনোগোনা সারা আকাশের বিশালতা জুড়ে। নরম তুলোর ন্যায় মেঘপুঞ্জগুলো যেন সুখের মহড়া দিচ্ছে। এক ঝাঁক অচেনা পাখি দল বেঁধে উড়ে উড়ে কোন দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। ঝিনুক মন খারাপ করে আকাশ পানে চেয়ে আছে।
হঠাৎ ঘাড়ের পিছনের খোলা অংশে শিরশির অনুভূত হলো। চমকে ঘাড় ঘুরালো। ওহ! তুমি ঘাড়ে এমন করলে?
কেন অন্য কারো করার কথা নাকি? স্মিত হেসে বলল আরশাদ।
ফাজলামি করবেন না। এমনিতেই মন খারাপ আমার।
কারণ শুনব। ভিতরে আস। মশা ঢুকলো যে। ঝিনুক ভিতরে এলো।
ঝিনুক ভিতরে এসে বসলো। আরশাদ ঝিনুকের মুখের একপাশে খেলতে থাকা অবাধ্য চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিল। কাটা দাগটা এখনো
জ্বলজ্বল করে বয়ে বেড়াচ্ছে সেই দুঃসহ লোমহর্ষক নিষ্ঠুর স্মৃতি। আরশাদ লম্বালম্বি হয়ে কাটা দাগের উপরে অগনিত চুমু খেল।
এবার বল মন খারাপ কেন?
ঝিনুক মাথা নিচু করে বলল,
বলতে লজ্জা ও করছে না বলেও পারছিনা। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হলো। আমরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছি। কোন উপায় ও অবলম্বন করছিনা। কিন্তু….বুঝেছেনতো। নাহ আমার এখনো ইচ্ছে নেই । আগে পড়াশোনা শেষ হোক। কিন্তু কৌতুহল কাজ করছে।
একবার চেকআপের জন্য কোন গাইনী ডাক্তারের কাছে যাব কিনা ভাবছি। আরশাদ থতমত খেয়ে গেল। তবুও সত্যিটা জানার অধিকার ঝিনুকের রয়েছে। ঝিনুকের মাথাকে বুকে চেপে ধরে, ধরা গলায় বলল, তুমি কোনদিন মা হতে পারবেনা বলে বিস্তারিত জানালো।
ঝিনুক চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিল। আরশাদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি এ সস্তা জীবন চাইনা। আপনি একটা কিছু আল্লার দোহাই লাগে। আমাকে বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করান। একটা মেয়ের নারীজীবনের পূর্ণতা আর সার্থকতা সেখানেই যখন সে মা হয়। মা ডাক শুনে। তার বুক পিঠ জুড়ে থাকে আধো আধো বোলে মা ডাকা নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুটি। আমি এ নিঃসঙ্গ জীবন চাইনা। আমি মরে যেতে চাই। কেন বাঁচিয়ে তুললেন আমাকে।
আছড়ে পিছড়ে কাঁদতে লাগল ঝিনুক।
বাকি সবাই ছুটে এলো ঝিনুকের কাছে। ঝিনুকে জোবেদা বেগমকে ঝাপটে ধরে করুণ আকুতিতে কাঁদতে থাকলো। অনেকক্ষণ ধরে সবাই তাকে অনেকভাবে অনেক উদাহরণ দিয়ে কোনরকম বোঝাতে সক্ষম হলো। কিছুসময় পর ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,
মা, বাবা,আপনারা চাইলে উনাকে আবার বিয়ে করাতে পারেন। তা না হলে সবাই দশকথা শোনাবে মুখের উপর। আমি চলে যাব। আপনাদের সংসারে আমি বোঝা হয়ে থাকবনা।
সবাই রেগে গেল ঝিনুকের উপরে।
তার শ্বাশুড়ি বলল, এতসময় কারে কি বোঝালাম । আমাদের ঘরের বউ হয়ে তুমি আছো তুমিই রবে। দ্বিতীয় কারো আগমন আমরা দম থাকতে প্রয়োজন মনে করিনা। খোদা চাইলে এমনিতেই হবে। এখনো সময় আছে। এত ভেঙ্গে পড়না বলছি। ধমকের সুরে বললেন জোবেদা খানম। মানুষের কথার নিকুচি করি আমরা।
রাতে ঝিনুক ভাত খেলনা মন খারাপ করে। আরশাদ নিজে হাতে খাওয়ানোর জন্য দই মাখা ভাত নিয়ে এলো। ঝিনুক খেলইনা।
এতগুলো দইমাখা ভাত ফেলে দিব বউ? দইয়ের যে দাম। খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি হয় জান? এমনিতে কি কেউ ছয় রকম ভিটামিনে ভরপুর খাঁটি দুধ খাওয়ায়?
ঝিনুক গাল কাত করে,
তো আমি কি করবো?
কি করবো মানে আমাকে খাইয়ে দাও।
ঝিনুক উপায়হীন হয়ে আরশাদের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাতে দই মাখা ভাতগুলো খাইয়ে দিলো। আরশাদ ঝিনুকের হাতের কবজি চেপে ধরলো। একটা একটা করে দই লেগে থাকা ঝিনুকের পাঁচ আঙ্গুল পুরোটা চুষে খেল।
আপনি কবে থেকে এত কিপ্টুস হলেন?
উফফস! নিজে মনে হয় কত উদার! অন্য হাজবেন্ডড়া দুইমাসে যা পায় বউর থেকে আমি এত বছরের পর বছর গিয়েও তা পাইনি।
ঝিনুক মনে মনে,আসলে ঠিকই বলছে। বেচারা। আমার কি দোষ। কালে কালে সময় বয়ে গেল।
জামান খান পুত্রকে আদেশ দিলেন,বউমাকে নিয়ে আমাদের পরিচিত বাংলো থেকে ঘুরে আয়। ওয়েদার চেঞ্জ হলে মন মেজাজ চনমনে হয়ে যাবে দেখিস। গ্রামে যেতে এখন দেরি আছে।
বাবা ঠিকই বলছে এই ভেবে আরশাদ একসপ্তাহ পর ঝিনুককে নিয়ে ঢাকার অদূরে।
জোছনামাখা মায়াবী রাত। একলা আকাশটার সঙ্গী হলো রূপোলী থালার মতো চাঁদটা। তাদের পাহারা দিয়ে যাচ্ছে তারাগুলো। বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে হাস্নাহেনা ফুলের মাধকতাময় সুবাস। ঝিঁঝিঁপোকার নাচন দেখে আরশাদ বলল, দেখ কি অদ্ভুত সুন্দর! কি পিনিক তাইনা ঝিনুক। ঝিনুক মনমরা সুরে হুমম বলল।
এখনো সেই এক কাহিনী নিয়ে মন ভার? আসো রাতের এই পবিত্রতাকে সাক্ষী রেখে শপথ করি।
কিসের?
দুজন একসাথে বুড়োবুড়ি হওয়ার।
তুমি আছো তুমিই রবে এই জীবনে মরণে। এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই দুজনে আসো।
ঝিনুক আনমনে হেসে উঠলো শুনে।
চাঁদের আলোয় দাঁড়িয়ে ঝিনুককে বাহু বন্ধী করে নিলো আরশাদ। শোন,নিঃসন্তান থাকলে আমি যতটা আঘাত পাব। তারচেয়ে তুমি আমার জীবন থেকে চলে গেলে অনেক বেশী কষ্ট পাব। এবার বোঝ। সেটা মেনে নিতে পারব। কিন্তু আরশাদের জীবনে ঝিনুক নেই। এটা মানতে পারবনা।
ঝিনুক মনে মনে,এত ভালোলাগছে কেন আজ এই মানুষটাকে। এতটা ভালোবাসে কিভাবে কেউ কাউকে।
পরিতাপের নিঃশ্বাস ছাড়লো ঝিনুক। শব্দ করেই বলল ঝিনুক। জীবন তৃপ্তি দেয় যতটুকু অতৃপ্তি দেয় তারচেয়েও বেশী। তাইনা?
ওহ নো। হানিমুনে আসলাম। এত দর্শন শুনতে ভালোলাগছেনা। কোথায় মজা মাস্তি করব। হুহু।
ঝিনুকের কানের লতিতে আস্তে কামড় বসিয়ে দিলো আরশাদ। ফিসফিস করে বলল আসো আজরাত থেকে ফাইনাল খেলা শুরু করি। এরপর বছর বছর বাচ্চাকাচ্চা পয়দা হতে থাকবে। এগারোজন হলে ফুটবল টিম গঠন করা যাবে। তুমি হবে রেফারি।
ঝিনুক আরশাদের বুকে কিলঘুঁষি মারতে লাগলো। আপনি একটা ইম্পসিবল।
বাংলোর বারান্দা জুড়ে লুটোপুটি খাওয়া জোছনার আলো ঠিকরে পড়ছে দুজন মানবী মানবীর মুখে।
পৃথিবীর বুকে নিঃসন্তান এক সুখী দম্পতি তারা। দুজনের অনাগত জীবনের খাঁ খাঁ শূন্যতার সমান্তরালে বয়ে যাবে আরশাদ ও ঝিনুক নামের দুটো প্রাণ। জীবন দেয় যতটুকু কেড়ে নেয় তার চেয়েও বেশী কিছু।
**সমাপ্ত** ( ।)