#জানি_তুমি_ফিরবে
[৮ম পর্ব]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
ধ্রুবর মৃত লাশ নিয়ে চলে গেলো তার শেষ গোসল দেওয়ার জন্য। গোসল দিয়ে ধ্রুবকে দাফনের কাপড় পড়িয়ে সবার সামনে নিয়ে আসা হলো। ধ্রুবর মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। সবাই ধ্রুবকে শেষ দেখা দেখছে। ধ্রুবর সব বন্ধুরা ধ্রুব কে দেখলো। তিশার আব্বুও ধ্রুবকে দেখে তার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো। এঁকে একে সবাই দেখে সরে গেলো। এবার মিজান সাহেব তার স্ত্রীকে নিয়ে আসলেন। মিজান সাহেব নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করেও আর সে নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারলেন না। ছেলের লাশের সামনে বসে কান্না করতে শুরু করে দিলো। তারপর সে ধ্রুবর মুখের উপরে হাত ভুলিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এবার তিশাকে নিয়ে আশা হলো ধ্রুবর লাশের সামনে। তিশা অঝোরে কান্না করতে থাকে ধ্রুবর লাশের সামনে। এবার ধ্রুবর লাশ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় হয়েছে। ধ্রুবর জানাজার জন্য ধ্রুবকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তিশার সামনে থেকে। তিশা খাট ধরে কান্না করতে থাকে। আর সবাইকে বাধা দিতে থাকে। তিশার পাগলামি দেখে সবাই আরো বেশি কান্নায় ভেঙে পড়ে। তিশার মা তিশাকে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকে। কিন্তু তিশা কারোর কথা কানে না তুলেই খাট ধরে কান্না করতে থাকে। অবশেষে সবার জোরাজোরিতে তিশার হাত সরিয়ে ধ্রুবকে নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে এমন সময় তিশার আম্মু বলল — তিশা মা ধ্রুবর অপারেশন মনে হয় শেষ হয়েছে ডাক্তার বের হয়ে আসছে।
তিশা তার মায়ের মুখে এমন কথা শুনে সে বুঝতে পারে সে এতক্ষণ খারাপ একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিলো। তিশা নিজের চোখ খুলে দেখে সে এখনো হাসপাতালের মধ্যেই আছে। তিশার বুক অনেকটাই হালকা হয়ে গেলো। আর ডাক্তার ও মাত্র বের হয়ে আসলো। সবাই অপারেশন রুমের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। তিশা এবার তাড়াতাড়ি করে ডাক্তারের কাছে চলে গেলো।
মিজান সাহেব ডাক্তারকে বলল — ডাক্তার ওর এখন কি অবস্থা?
ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। সেটা দেখে তিশা অনেক ভয় পেয়ে গেলো। তিশার বুকের ভিতর হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। তিশা বলল — কি হলো আপনি চুপ করে আছেন কেন?
এবার ডাক্তার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। রুগী অনেক টাই সুস্থ আছে। তবে পুরাপুরি ঠিক হতে সময় লাগবে। ঠিকঠাক ভাবে দেখাশোনা করলেই হবে। আর আপনার চাইলে কালকেই রোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।
ডাক্তারের কথা শুনে সবার মুখেই একটা হাসি ফুটে উঠলো। তিশার বুক থেকেও মনে হলো একটা ফাথর সরে গিয়েছে। তিশা সুস্থির একটা নিশ্বাস নিলো। আর তার সব ভয় কেটে গেলো।
— রোগীকে কেবিনে শিপ্ট করা হবে কিছুক্ষণের মধ্যে। তারপর আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন। আর হ্যাঁ রোগীকে বাসায় নেওয়ার সময় আমরা একটা নার্স দিয়ে দেবো রোগীর খেয়াল রাখার জন্য।
তিশা বলল — কোনো নার্স লাগবেনা। আমি ওনার দেখাশোনা করতে পারবো ঠিক ভাবে।
— ওহ তাহলে তো আরো ভালো। সমস্যা নাই কিছুদিন পর পর হাসপাতালে নিয়ে আসলেই হবে।
মিজান সাহেব বলল — ধন্যবাদ ডাক্তার সাহেব।
— ধন্যবাদ দেওয়ার মতো কিছু নেই। ধন্যবাদ দিলে আল্লাহকে দিন। তানি না চাইলে আমরা তো কিছুই করতে পারতাম না। আমরা তো উছিলা মাত্র।
তারপর ডাক্তার ওখান থেকে চলে গেলো। সবার মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এখন সবাই অনেক খুশি।
কিছুক্ষণ পরেই ধ্রুবকে কেবিনে শিপ্ট করা হলো। অনেক্ষন পরে ধ্রুবর জ্ঞান ফিরে আসলো। এর পর সবাই ধ্রুবর সাথে গিয়ে দেখা করলো। তিশা এক কোণে দাঁড়িয়ে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে রইলো। সবাই কেবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলো। এবার তিশা ধ্রুবর দিকে এগিয়ে গেলো। ধ্রুবর পাশে গিয়ে বসলো।
তিশা ধ্রুবকে বলল — এখন কেমন আছেন আপনি?
— একটু ভালো। কিন্তু আমার পায়ে কি হইছে আমি আমার পা নাড়াতে পারছিনা কেন?
— আপনি পায়ে ব্যাথা পেয়েছেন। চিন্তা করবেন না ডাক্তার বলছে কয়েক দিন রেস্ট করলেই আপনি ঠিক হয়ে যাবেন।
এর মধ্যে মিজান সাহেব খাবার নিয়ে চলে আসলেন। মিজান সাহেব খাবার নিয়ে এসে তিশাকে বলল — তিশা তুই ধ্রুবকে এই খাবার গুলো খাইয়ে দিয়ে এই ওষুধ গুলো খাইয়ে দিস।
— ঠিক আছে বাবা।
তারপর মিজান সাহেব বের হয়ে চলে গেলেন। এবার তিশা নিজের হাতে খাবার নিয়ে ধ্রুবর দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু ধ্রুব তিশার হাত থেকে খাবার খাইতে চাইছে না। তখন তিশা বলল — এমন করছেন কেন আপনি? খাবার না খেলে সুস্থ হবেন কি ভাবে? হা করেন বলছি।
ধ্রুব আর কোনো কথা না বলে হা করলো তারপর তিশা ধ্রুবকে খাইয়ে দিতে থাকে। ধ্রুব বার বার তিশার দিকে তাকিয়ে থাকে। তিশা সেদিকে নজর না দিয়ে ধ্রুবকে খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে ধ্রুবকে ওষুধ খাইয়ে দিলো তিশা। তিশার শাড়ির আঁচল দিয়ে ধ্রুবর মুখ মুছে দিলো। ধ্রুব কিছু না বলে শুধুই তিশার এসব দেখছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ধ্রুব হারিয়ে যায় ঘুমের দেশে। তারপর তিশা ধ্রুবর কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। দেখতে দেখতে রাত ও অনেক বেড়ে যাচ্ছে। তখন তিশা সবাইকে বলল — তোমরা সবাই বাসায় চলে যাও। আমি ওনার কাছে আছি।
মিজান সাহেব বলল — তুই একা থাকবি?
— হুম। তোমরা চলে যাও রাত অনেক হচ্ছে। নাহলে তোমরাও আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তারপর সবাই বাসায় চলে যায়। তিশা একাই থেকে যায় ধ্রুবর কাছে। তিশা ধ্রুবর কেবিনে ঢুকে দেখে ধ্রুব ঘুমিয়ে আছে। তিশা একটা চেয়ার নিয়ে ধ্রুবর সামনে এসে বসে থাকে। আর ধ্রুবর একটা হাত ধরে বসে থাকে তিশা। দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেলো। কিন্তু তিশা এখনো ঘুমালো না। ধ্রুবর দিকেই তাকিয়ে রইলো। একটা সময় নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে তিশা। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। কিন্তু তিশা এখনো ঘুমাচ্ছে। ধ্রুব চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে তিশা তার একটা হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে এখনো। ধ্রুবর আর বুঝতে বাকি রইলোনা যে মেয়েটা সারা রাত তার পাশেই বসে ছিলো। ঘুমায় নি সারা রাত। তাই এখন ঘুমিয়ে পড়ছে। ধ্রুব তিশাকে না ডেকে তিশার হাত থেকে নিজের হাত সরানোর চেষ্টা করতেই তিশার ঘুম ভেঙে গেলো। তিশা তাড়াতাড়ি করে দাড়িয়ে গিয়ে ধ্রুবর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল — আপনি কখন উঠলেন?
— এইতো মাত্র।
— আমাকে ডাকেন নি কেন? কিছু লাগবে আপনার?
ধ্রুব এই প্রথম তিশাকে নিজে থেকে বলল — আমি ওয়াশরুমে যাবো।
— আচ্ছা চলুন।
তারপর তিশা ধ্রুবকে ধরে সিটের উপর থেকে নামালো। এর ধ্রুব তিশার কাধের উপরে ভর দিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর চলে গেলো।
তিশা ধ্রুবকে বলল — আপনার হলে আমাকে ডাক দিবেন।
তারপর ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে তিশাকে ডাকলো। তারপর তিশা ধ্রুবকে আবার তার সিটের উপর শুইয়ে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে খাবার নিয়ে চলে আসে মিজান সাহেব। তিশা আর ধ্রুবর জন্য। এবার তিশা ধ্রুবকে খাইয়ে দিতে থাকে। ধ্রুব তিশাকে বলল — আপনি খাবেন না? কাল রাত থেকেই তো মনে হয় আপনি কিছুই খেলেন না!
— আপনি আগে খাওয়া শেষ করুন তারপর আমি খাবো।
এবার ধ্রুব খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেয়ে নিলো। ওষুধ খেয়ে ধ্রুব আবার ঘুমিয়ে পড়লো। এবার তিশা নিজে খাবার খেয়ে ধ্রুবর পাশে বসে রইলো। মিজান সাহেব তিশার কাছে এসে বলল — তিশা তুই বাসায় যা। আমি ধ্রুবর কাছে আছি। তুই তো কাল থেকেই একি শাড়ি পড়ে আছিস। যা ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে আয়। তুই আশা অব্দি আমি ধ্রুবর কাছেই থাকবো।
— ঠিক আছে বাবা। ওনার খেয়াল রাখবেন কিন্তু।
— ঠিক আছে রাখবো। এবার তুই যা।
তারপর তিশা বাসায় চলে গেলো।
চলবে??